50. মুনাফিক ও তাদের হুকুম
মুনাফিক ও তাদের হুকুম
যায়দ ইব্নু আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম। সফরে এক কঠিন অবস্থা লোকেদেরকে গ্রাস করে নিল। তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উবাই তার সাথী-সঙ্গীদেরকে বলল, “আল্লাহ্র রাসূলের সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ তারা সরে পড়ে যারা তার আশে পাশে আছে।” সে এও বলল, “আমরা মাদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই।” (এ কথা শুনে) আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলাম এবং তাঁকে এ সম্পর্কে জানালাম। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উবাইকে ডেকে পাঠালেন। সে অতি জোর দিয়ে কসম খেয়ে বলল, এ কথা সে বলেনি। তখন লোকেরা বলল, যায়দ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে। তাদের এ কথায় আমার খুব দুঃখ হল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা আমার সত্যতার পক্ষে আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “যখন মুনাফিকরা তোমার কাছে আসে।” এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন, যাতে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, “কিন্তু তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল।” আল্লাহ্র বানীঃ “দেয়ালে ঠেস লাগানো কাঠ সদৃশ”- (সুরাহ মুনাফিকুন ৬৩/৪) (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৪৯০৩; মুসলিম ৫০ হাঃ ২৭৭২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উবাইকে দাফন করার পর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার (ক্ববরের) নিকট এলেন এবং তাকে বের করলেন। অতঃপর তার উপর স্বীয় থুথু প্রক্ষেপ করলেন, আর নিজের জামাটি তাকে পরিয়ে দিলেন।* (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ১২৭০; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১, হাঃ ৬৭৭৩) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উবাই (মুনাফিক সর্দার)-এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি সেটা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইচ্ছে করি। আর আপনি তার জানাযা পড়বেন এবং তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ আমাকে খবর দিও, আমি তার জানাযা আদায় করব। তিনি তাঁকে খবর দিলেন। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা আদায়ের ইচ্ছে করলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আল্লাহ্ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা আদায় করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেনঃ আমাকে তো দু’টির মধ্যে কোন একটি করার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন ......... (যার অর্থ) “আপনি তাদের (মুনাফিকদের) জন্য মাগফিরাত কামনা করুন বা মাগফিরাত কামনা না-ই করুন (একই কথা) আপনি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেন; কখনো আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করবেন না” (সূরাহ আত্ তাওবাহ ৯/৮০)। কাজেই তিনি তার জানাযা পড়লেন, অতঃপর নাযিল হলঃ (যার অর্থ) “তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করলে আপনি তাদের জানাযা কক্ষণও আদায় করবেন না” (সূরাহ আত্তাওবাহ ৯/৮৪)। (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ১২৬৯; মুসলিম ৫০ হাঃ ২৭৭৪) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কা‘বার কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল অধিক; কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের কি ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ্ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যক্তি বলল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না..... ( হা মীম সিজদাহঃ ২২; আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। (বুখারী পর্ব ৬৫, অধ্যায় ২, হাদীস নং ৪৮১৭;) যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যাত্রা করে তাঁর কতিপয় সাথী ফিরে আসলে একদল লোক বলতে লাগল, আমরা তাদেরকে হত্যা করব, আর অন্য দলটি বলতে লাগলো, না, আমরা তাদেরকে হত্যা করব না। এ সময়ই (তোমাদের হল কী, তোমরা মুনাফিকদের ব্যাপারে দু’দল হয়ে গেলে?) (সূরাহ আন-নিসা ৪/৮৮) আয়াতটি নাযিল হয়। (বুখারী পর্ব ২৯, অধ্যায় ১০, হাদীস নং ১৮৮৪; মুসলিম অধ্যায় ৫০, হাঃ ২৭৭৬) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হতেন তখন কিছু সংখ্য মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসলে তাঁর কাছে শপথ করে ওজর পেশ করত এবং যে কাজ করেনি সে কাজের জন্য প্রশংসিত হতে পছন্দ করত। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল ......... “তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে” (সূরাহ আল ইমরান ৩/১৮৮)। [বুখারী পর্ব ৬৫, অধ্যায় ১৬, হাদীস নং ৪৫৬৭; মুসলিম ৫০, হাঃ ২৭৭৭] ‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস মারওয়ান (রহ.) তাঁর দারোয়ানকে বললেন, হে নাফি‘! তুমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বল, যদি প্রাপ্ত বস্তুতে আনন্দিত এবং করেনি এমন কাজ সম্পর্কে প্রশংসিত হতে আশাবাদী প্রত্যেক ব্যক্তিরই শাস্তি প্রাপ্য হয় তাহলে সকল মানুষই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা তোমাদের মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহূদীদেরকে ডেকে একটা বিষয় জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাতে তারা সত্য গোপন করে বিপরীত তথ্য দিয়েছিল। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের দেয়া উত্তরের বিনিময়ে প্রশংসা অর্জনের আশা করেছিল এবং তাদের সত্য গোপনের জন্যে আনন্দিত হয়েছিল। তারপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) পাঠ করলেন- ............ “স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আহলে কিতাবের, তোমরা মানুষের কাছে কিতাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা সে প্রতিশ্রুতি নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল এবং তার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহণ করল। সুতরাং তারা যা বিনিময় গ্রহণ করল কত নিকৃষ্ট তা! তুমি কখনও মনে কর না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা আযাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সূরাহ আল ইমরান ৩/১৮৭-১৮৮)। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৪৫৬৮; মুসলিম ৫০ হাদিস নং ২৭৭৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারাহ ও সূরা আল-ইমরান শিখে নিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য সে অহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬১৭; মুসলিম ৫০ হাঃ ২৭৮১)
ক্বিয়ামাত, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন একজন খুব মোটা ব্যক্তি আসবে; কিন্তু সে আল্লাহ্র কাছে মশার পাখার চেয়ে ক্ষুদ্র হবে। তারপর তিনি বলেন, পাঠ করো, “ক্বিয়ামাত দিবসে তাদের কাজের কোন গুরুত্ব দিব না। * পুণ্য মনে করে তারা যে সকল কর্ম করেছে, সেগুলো কোন কাজে আসবে না। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৪৭২৯; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৮৫) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদী আলিমদের থেকে এক আলিম রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করলেন, তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুষ্টিটে থাকবে, আর আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। মাহাত্ম্য তাঁরই, তারা যাদেরকে তাঁর শারীক করে তিনি তাদের বহু উর্ধেব। (সূরাহ যুমারঃ ৬৭) [বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৮১১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৮৬] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (ক্বিয়ামাতের দিন) আল্লাহ্ তা‘আলা যমীনকে আপন মুঠোয় আবদ্ধ করবেন আর আকাশকে ডান হাত দিয়ে লেপটে দিবেন। এরপর তিনি বলবেনঃ “আমি বাদশাহ্, দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?” (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৬৫১৯; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৮৭) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বিয়ামাতের দিন পৃথিবীটা তাঁর মুঠোতে নিয়ে নেবেন। আসমানকে তাঁর ডান হাতে জড়িয়ে বলবেন; বাদশাহ্ একমাত্র আমিই। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৭৪১২; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৮৭)
পুনরুত্থান ও পুনর্জীবন এবং ক্বিয়ামাতের দিন যমীনের বর্ণনা।
সাহ্ল ইব্নু সা‘দ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামাতের দিন মানুষকে এমন স্বচ্ছ শুভ্র সমতল যমীনের ওপর একত্রিত করা হবে সাদা গমের রুটি যেমন স্বচ্ছ-শুভ্র হয়ে থাকে। সাহ্ল বা অন্য কেউ বলেছেন, তার মাঝে কারও কোন কিছুর চিহ্ন বিদ্যমান থাকবে না। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৬৫২১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ২, হাঃ ২৭৯০)
জান্নাতীদের আপ্যায়ন।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সমস্ত যমীন একটি রুটি হয়ে যাবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা বেহেশতীদের মেহমানদারীর জন্য তাকে স্বহস্তে তুলে নেবেন। যেমন তোমাদের মাঝে কেউ সফরের সময় তার রুটি হতে তুলে নেয়। এমন সময় একজন ইয়াহূদী এলো এবং বলল, হে আবুল কাসিম! দয়াময় আপনাকে বারাকাত প্রদান করুন। কিযামতের দিন বেহেশতবাসীদের আতিথেয়তা সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। লোকটি বলল, (সেই দিন) সমস্ত ভূ-মণ্ডল একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন (লোকটিও সেরূপই বলল)। এবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন। এমনকি তাঁর চোয়ালের দাঁতসমূহ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেনঃ তবে কি আমি তোমাদেরকে (সেই রুটির) তরকারী সম্পর্কে বলব না? তিনি বললেনঃ তাদের তরকারী হবে বালাম এবং নুন। সাহাবাগণ বললেন, সে আবার কি? তিনি বললেনঃ ষাঁড় এবং মাছ। এদের কলিজার গুরদা থেকে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৬৫২০; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৩, হাঃ ২৭৯২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনত তবে গোটা ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান আনত। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৫২ হাদীস নং ৩৯৪১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৩, হাঃ নং ২৭৯৩)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “রূহ” সম্পর্কে ইয়াহূদীদের জিজ্ঞাসা ও আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।” (সূরাহ বানী ইসরাঈল ১৭/৮৫)
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, ‘তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর।’ আর একজন বলল, ‘তাঁকে কোন প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোন জবাব দিবেন যা তোমরা পছন্দ করোনা।’ আবার কেউ কেউ বলল, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই।’ অতঃপর তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আবুল কাসিম! রূহ কী?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেনঃ “তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশের অন্তর্ভুক্ত। এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে।” (সূরাহ আল-ইসরা ১৭/৮৫) (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ১২৫; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৭৯৪) খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলীয়্যাতের যুগে আমি কর্মকারের পেশায় ছিলাম। ‘আস ইবনু ওয়াইলের কাছে কিছু পাওনা ছিল। আমি তার কাছে তাগাদা করতে গেলে সে বলল, যতক্ষণ তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার না করবে ততক্ষণ আমি তোমাকে তোমার পাওনা দিব না। আমি বললাম, আল্লাহ তোমাকে মৃত্যু দিয়ে তারপর তোমাকে পুনরুত্থিত করা পর্যন্ত আমি তাঁকে অস্বীকার করব না। সে বলল, আমি মরে পুনরুত্থিত হওয়া পর্যন্ত আমাকে অব্যাহতি দাও। শীগগীরই আমাকে সম্পদ ও সন্তান দেয়া হবে, তখন আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হলঃ “তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবেই” (সূরাহ মারইয়াম ১৯/৭৭-৭৮)। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ২৯ হাদীস নং ২০৯১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৭৯৫)
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যখন আপনি তাদের মধ্যে আছেন।” (সূরাহ আনফাল ৮/৩৩)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আবূ জাহিল বলেছিল “হে আল্লাহ! যদি এ কুরআন তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয় তাহলে আমাদের উপর আসমান থেকে প্রস্তর বর্ষণ কর অথবা দাও আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” এরপর অবতীর্ণ হল -- আর আল্লাহ্ তো এরূপ নন যে, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন অথচ আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন এবং আল্লাহ্ এমনও নন যে, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন এমন অবস্থায় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর তাদের এমন কী আছে যে জন্য আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দেবেন না, অথচ তারা মাসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করে?” (সূরা আনফাল ৮/৩২-৩৪) (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৪৬৪৯; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৫ হাঃ ২৭৯৬)
ধোঁয়া
মাসরূক (রহ.) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেন, অবস্থা এ জন্য যে, কুরাইশরা যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফরমানী করল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দু‘আ করলেন, যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়ে। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হ’ল যে, তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মধ্যে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা ছেয়ে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ মাস্তি।” বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট (কাফিরদের পক্ষ থেকে) এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দু‘আ করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি [রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, মুদার গোত্রের জন্য দু‘আ করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর তিনি বৃষ্টির জন্য দু‘আ করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন অবতীর্ণ হল, তোমরা তো তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। যখন তাদের সচ্ছলতা ফিরে এলো, তখন আবার নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেব”। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন। [বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৮২১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৭৯৮]
চন্দ্র খণ্ডন।
‘আবদুল্লাহ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৩৬৩৬; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৮০০) আনাস (ইব্নু মালিক) (রাঃ) মাক্কাহবাসী কাফিররা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিদর্শন দেখানোর জন্য বললে তিনি তাদেরকে চাঁদ দু’ভাগ করে দেখালেন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৩৬৩৭; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৮০২) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে চাঁদ দু’খণ্ড হয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৩৬৩৮; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৮০৩)
আঘাতে আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে আর কেউ অধিক ধৈর্যশীল নয়।
আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কষ্টের কথা শোনার পর আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে অধিক ধৈর্যধারণকারী কেউ বা কোন কিছুই নেই। লোকেরা তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে; এরপরও তিনি তাদের বিপদ মুক্ত রাখেন এবং রিযক দান করেন। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭১ হাদীস নং ৬০৯৯; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ৯, হাঃ ২৮০৪)
যমীন ভর্তি স্বর্ণ মুক্তিপণের বদলে কাফিরদের (জাহান্নাম থেকে মুক্তি) চাওয়া।
আনাস (রাঃ) আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞেস করবেন, যদি পৃথিবীর ধন-সম্পদ তোমার হয়ে যায়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে? সে উত্তর দিবে, হাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদাম (‘আ.)-এর পৃষ্ঠে ছিলে, তখন আমি তোমার নিকট এর থেকেও সহজ একটি জিনিস চেয়েছিলাম। সেটা হল, তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা না মেনে শির্-ক করতে লাগলে। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৩৩৪; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৮০৫)
কাফিরদেরকে (ক্বিয়ামাতের দিন) মুখের ভরে একত্রিত করা হবে।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিয়ামাতের দিন কাফেরদের মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করা হবে? তিনি বললেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দু’পায়ের উপর চালাতে পারছেন, তিনি কি ক্বিয়ামাতের দিন মুখে ভর করে তাকে চালাতে পারবেন না? ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই, আমার রবের ইজ্জতের কসম! (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৪৭৬০; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১১, হাঃ ২৮০৬)
মু’মিনের দৃষ্টান্ত হল সতেজ বৃক্ষের ন্যায়, কাফিরের দৃষ্টান্ত হল পাইন গাছের মত।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির উপমা হল, সে যেন শস্যক্ষেত্রের কোমল চারাগাছ। যে কোন দিক থেকেই তার দিকে বাতাস আসলে বাতাস তাকে নুইয়ে দেয়। আবার যখন বাতাসে প্রবাহ বন্ধ হয় তখন তা সোজা হয়ে দাঁড়ানো বৃক্ষের ন্যায়, যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছে করেন ভেঙ্গে দেন। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪৪; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৮০৯) কা’ব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির উদাহরণ হল সে শস্যক্ষেত্রের নরম চারা গাছের ন্যায়, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেকবার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের উদাহরণ, সে যেন ভূমির উপর কঠিনভাবে স্থাপিত বৃক্ষ, যাকে কোন ক্রমেই নোয়ানো যায় না। অবশেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উৎপাটিত হয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪৩; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৮১০)
মু’মিনের দৃষ্টান্ত খেজুর গাছের দৃষ্টান্তের ন্যায়।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা বললেনঃ গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ, তোমরা আমাকে অবগত কর ‘সেটি কী গাছ?’ তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করতে লাগল। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার ধারণা হল, সেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু আমি (ছোট থাকার কারণে) তা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সাহাবীগণ (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কী গাছ?’ তিনি বললেনঃ ‘তা হচ্ছে খেজুর গাছ।’ (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬১; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১৫ হাঃ ২৮১১)
কেউ তার সৎকর্ম দ্বারা জান্নাতে যাবে না বরং (যাবে) আল্লাহ তা‘আলার রহমতে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের ‘আমাল নাজাত দেবে না। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমারা যথারিথী ‘আমাল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহ্র ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পোঁছাবে। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৬৪৬৩; মুসলিম ৫০ মধ্য পন্থা ১৭, হাঃ ২৮১৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ তোমরা ঠিক ঠিকভাবে মধ্যম পন্থায় ‘আমাল করতে থাক। আর সুসংবাদ নাও। কিন্তু (জেনে রেখো) কারো ‘আমাল তাকে জান্নাতে নেবে না। তাঁরা বললেন, তবে কি আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে মাগফিরাত ও রহমতে ঢেকে রেখেছেন। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৬৪৬৭; মুসলিম ৫০ মধ্য পন্থা ১৭ হাঃ ২৮১৮)
বেশি বেশি সৎকর্ম ও ‘ইবাদাতে প্রচেষ্টা করা।
মুগীরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রি জাগরণ করে সলাত আদায় করতেন; এমনকি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দু’পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাঁকে বলা হল, এত কষ্ট কেন করছেন? তিনি বলতেন, তাই বলে আমি কি একজন শুকরগুযার বান্দা হব না? (বুখারী পর্ব ১৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ১১৩০; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৮১৯)
দ্বীনের নাসীহাত ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।
আবূ ওয়াইল (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বলল, ‘হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার ইচ্ছে জাগে, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বাধা দেয় তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি খেয়াল রাখি, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্লান্তির আশংকায় আমাদের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতেন। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৭০; মুসলিম ৫০ অধ্যায় ১৯ হাঃ ২৮২১)