6. মুসাফির ব্যক্তির সলাত ও তা ক্বসর করার বর্ণনা
মুসাফির ব্যক্তির সলাত ও তা ক্বসর করা।
উম্মু’ল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দু’ রাক’আত করে সলাত র্ফায করেছিলেন। পরে সফরের সলাত আগের মত রাখা হয় আর মুকীম অবস্থার সলাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ৮ : /১ হাঃ ৩৫০, মুসলিম ৬/১, হাঃ ৬৮৫) হাফ্স ইব্নু আসিম (রাযি) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) বলেন, কোন এক সফরে আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্যে থেকেছি, সফরে তাঁকে নফল সলাত আদায় করতে দেখিনি এবং আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (আহযাবঃ ২১১) (বুখারী পর্ব ১৮ : /১১ হাঃ ১১০১) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাদীনায় যুহরের সলাত চার রাক’আত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় ‘আসরের সলাত দু’ রাক’আত আদায় করেছি। (বুখারী পর্ব ১৮ : /৫ হাঃ ১০৮৯, মুসলিম ৬/১ হাঃ ৬৯০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনাহ ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি দু’রাক’আত, দু’রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস (রাঃ)-কে বললাম, আপনারা মাক্কাহ্য় কত দিন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা সেখানে দশ দিন ছিলাম। (বুখারী পর্ব ১৮ : /১ হাঃ ১০৮১, মুসলিম ৬/১ হাঃ ৬৯৩)
মিনায় সলাত ক্বসর করা।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র এবং ‘উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাক’আত সলাত আদায় করেছি। ‘উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গেও তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু’রাক’আত আদায় করেছি। অতঃপর তিনি পূর্ণ সলাত আদায় করতে লাগলেন। (বুখারী পর্ব ১৮ : /২ হাঃ ১০৮২, মুসলিম ৬/২ হাঃ ৬৯৪) হারিসাহ ইব্নু ওয়াহ্ব খুযা’য়ী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে মিনাতে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। এ সময় আমরা আগের তুলনায় সংখ্যায় বেশি ছিলাম এবং অতি নিরাপদে ছিলাম। (বুখারী পর্ব ২৫ : /৮৪ হাঃ ১৬৫৬, মুসলিম ৬/২ হাঃ ৬৯৬)
বৃষ্টির কারণে আবাসস্থলে সলাত আদায় করা।
নাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, ইব্নু ‘উমার (রাঃ) একদা তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে সলাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে সলাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- “প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে সলাত আদায় করে নাও।” (বুখারী পর্ব ১০ : /৪০ হাঃ ৬৬৬, মুসলিম ৬/৩ হাঃ ৬৯৭) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত। তিনি তাঁর মুয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, “সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম” তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সলাত আদায় কর। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তা করেছেন। জুমু’আহ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি, তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে। (বুখারী পর্ব ১১ : /১৪ হাঃ ৯০১, মুসলিম ৬/৩ হাঃ ৬৯৯)
সফরে যানবাহনের উপর নফল সলাত বৈধ মুখ যে দিকেই থাক।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে ফার্য সলাত ব্যতীত তাঁর সওয়ারী হতেই ইঙ্গিতে রাতের সলাত আদায় করতেন। সওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিত্র আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ১৪ : /৬ হাঃ ১০০০ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০০) ‘আমির (ইব্নু রাবী’আহ) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সলাত আদায় করতে দেখেছেন। (বুখারী পর্ব ১৮ : /১২ হাঃ ১১০৪ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০০) আনাস ইব্নু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) যখন শাম (সিরিয়া) হতে ফিরে আসছিলেন, তখন আমরা তাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করার জন্য এগিয়ে এসেছিলাম। আইনুত্ তাম্র (নামক) স্থানে আমরা তাঁর সাক্ষাৎ পেলাম। তখন আমি তাঁকে দেখলাম গাধার পিঠে (আরোহী অবস্থায়) সামনের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন। অর্থাৎ কিব্লার বাম দিকে মুখ করে। তখন তাঁকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনাকে তো দেখলাম কিব্লা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, যদি আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে না দেখতাম, তবে আমিও তা করতাম না। (বুখারী পর্ব ১৮ : /৬ হাঃ ১০৯১ মুসলিম ৬/৪ হাঃ ৭০৩)
সফরে দু’ সলাত একত্রে আদায় বৈধ।
’আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি সফরে ব্যস্ততার কারণে তিনি মাগরিবের সলাত বিলম্বিত করেছেন, এমনকি মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছেন। অপর এক সূত্রে সালিম (রহঃ) বলেন, ইব্নু ‘উমার (রাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। সালিম (রহঃ) আরও বলেন, ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তাঁর স্ত্রী সাফীয়্যাহ বিন্ত আবূ উবাইদ-এর দুঃসংবাদ পেয়ে মাদীনা প্রত্যাবর্তনকালে মাগরিবের সলাত বিলম্বিত করেন। আমি তাঁকে বললাম, সলাতের সময় হয়ে গেছে। তিনি বললেন, চলতে থাক। আমি আবার বললাম, সলাত? তিনি বললেন, চলতে থাক। এমনকি (এভাবে) দুই বা তিন মাইল অগ্রসর হলেন। অতঃপর নেমে সলাত আদায় করলেন। পরে বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সফরের ব্যস্ততার সময় এরূপভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছি। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আরো বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, সফরে যখনই তাঁর ব্যস্ততার কারণ ঘটেছে, তখন তিনি মাগরিবের সলাত (দেরী করে) আদায় করেছেন এবং তা তিন রাক’আতই আদায় করেছেন। মাগরিবের সালাম ফিরিয়ে কিছু বিলম্ব করেই ‘ইশার ইকামাত দেয়া হত এবং দু’রাক’আত আদায় করে সালাম ফিরাতেন। কিন্তু ‘ইশার পরে গভীর রাত না হওয়া পর্যন্ত (নফল) সলাত আদায় করতেন না। (বুখারী পর্ব ১৮ : /৬ হাঃ ১০৯২ মুসলিম ৬/৫ হাঃ ৭০৩) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহ্রের সলাত বিলম্বিত করতেন। অতঃপর অবতরণ করে দু’ সলাত একসাথে আদায় করতেন। আর যদি সফর শুরু করার পূর্বেই সূর্য ঢলে পড়তো তাহলে যুহ্রের সলাত আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে চড়তেন। (বুখারী পর্ব ১৮ : /১৬ হাঃ ১১১২, মুসলিম ৬/৫, হাঃ ৭০২)
বাড়িতে অবস্থানকালে দু’ সলাত একত্রে আদায়।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আট রাক’আত একত্রে (যুহ্র ও আসরের) এবং সাত রাক’আত একত্রে (মাগরিব-’ইশার) সলাত আদায় করেছি। (তাই সে ক্ষেত্রে যুহ্র ও মাগরিবের পর সুন্নাত আদায় করা হয়নি।) ‘আমর (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ্ শা’সা! আমার ধারণা, তিনি যুহ্র শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ‘ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৩০ হাঃ ১১৭৪, মুসলিম ৬/৬, হাঃ ৭০৫)
সলাত শেষে ডান ও বাম উভয় দিক দিয়েই মুখ ফিরিয়ে বসা বৈধ।
আসওয়াদ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ (ইব্নু মাসঊদ) (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন স্বীয় সলাতের কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হল, শুধুমাত্র ডান দিকে ফিরা আবশ্যক মনে করা। আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি। *ইকামত হয়ে গেলে কোন নাফল সলাত আদায় করা যাবেনা, এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় অনেকে ইকামত হয়ে যাবার পরও নফল সলাত আদায় করতে থাকেন। বিশেষ করে ফাজরের সলাত চলাকালীন সময়ে অনেককেই দেখা যায় সুন্নাত দু’রাকাত সলাত আদায় করতে। ফাজরের জামা’আত চলতে থাকলে ঐ জামা’আতে শামীল না হয়ে তাড়াহুড়ো করে সুন্নাত পড়ে জামা’আতে শামিল হয়া হাদীসের বিরোধিতা করার সামিল। প্রমাণ নিম্নের হাদীসগুলোঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সারজাস বলেন, এক ব্যক্তি এল। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ফজরের সলাতে ছিলেন। ফলে লোকটি দু’রাক’আত আদায় করে জামা’আতে প্রবেশ করল। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সলাত শেষ করে তাকে বললেন, ওহো অমুক! সলাত কোনটি! যেটি আমাদের সঙ্গে আদায় করলে সেটি না যেটি তুমি একা আদায় করলে? (নাসায়ী মাবসুত ১ম খণ্ড ১০১ পৃষ্ঠা লাহোরী ছাপা) নাবী বলেছেন, যখন ফারয সলাতে তাকবীর দেয়া হয়ে যায় তখন ফারয সলাত ব্যতীত অন্য কোন (নাফল বা সুন্নাত) সলাত হবে না। (মুসলীম, মিশকাত ৯৬ পৃষ্ঠা) হানাফী ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, সুন্নাত না আদায় করে জামা’আতেই ধুকতে হবে। (মাসবুত ১ম খণ্ড ১৬৭ পৃষ্ঠা) ফাজরের সুন্নাত সলাত ছুটে গেলে ফারয সলাত আদায়ের পর পরই পড়ে নিবে অথবা কোন জরুরী প্রয়োজন থাকলে এ দু’রাক’আত সলাত সুর্যোদয়ের পরেও পড়তে পারবেন। (তিরমিযী ১ম খণ্ড) (বুখারী পর্ব ১০ : /১৯৫ হাঃ ৮৫২, মুসলিম ৬/৭, হাঃ ৭০৭)
ইক্বামাত আরম্ভ হওয়ার পর নফল সলাত আরম্ভ করা অপছন্দনীয়।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মালিক ইব্নু বুহাইনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। অন্য সূত্রে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ‘আবদুর রহমান (রহঃ)....হাফ্স ইব্নু আসিম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মালিক ইব্নু বুহাইনা নামক আয্দ গোত্রীয় এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি যে, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতে দেখলেন। তখন ইক্বামাত হয়ে গেছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন, লোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ফাজর কি চার রাক’আত? ফাজর কি চার রাক’আত?* (বুখারী পর্ব ১০ : /৩৮ হাঃ ৬৬৩, মুসলিম ৬/৯, হাঃ ৭১১)
তাহিয়াতুল মাসজিদ দু’ রাক’আত আদায় করা বাঞ্ছনীয় এবং তা আদায়ের পূর্বে বসা অপছন্দনীয় এবং যে কোন সময় তা পড়া বৈধ।
আবূ কাতাদাহ্ সালামী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। (বুখারী পর্ব ৮ : /৬০ হাঃ ৪৪৪, মুসলিম ৬/১০, হাঃ ৭১৪)
সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মাসজিদে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করা মুস্তাহাব।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এলেন এবং বললেন, জাবির? আমি বললাম, জী। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অবস্থা কী? আমি বললাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। আমি পরের দিন মাসজিদে নাববীতে গিয়ে তাঁকে দরজার সামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এখন এলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার উটটি রাখ এবং মাসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সলাত আদায় কর। আমি মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত আদায় করলাম। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৩৪ হাঃ ২০৯৭, মুসলিম ৬/১১, হাঃ ৭১৫)
চাশতের সলাত মুস্তাহাব এবং তার সর্বনিম্ন পরিমাণ দু’ রাক’আত। সর্বোচ্চ পরিমাণ আট রাক’আত, মধ্যম পরিমাণ চার বা ছয় রাক’আত এবং এই সলাত সংরক্ষণের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ‘আমাল করা পছন্দ করতেন, সে ‘আমাল কোন কোন সময় এ আশঙ্কায় ছেড়েও দিতেন যে, সে ‘আমাল করতে থাকবে, ফলে তাদের উপর তা ফার্য হয়ে যাবে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাশ্তের সলাত আদায় করেননি। আমি সে সলাত আদায় করি। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৫ হাঃ ১১২৮, মুসলিম ৬/১৩, হাঃ ৭১৮) * আয়িশাহ (রাঃ) এ কথা তাঁর জানা অনুসারে বলেছেন। উম্মু হানী (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চাশ্ত আদায় প্রমাণিত আছে। ইব্নু আবূ লায়লা (রহঃ) উম্মু হানী (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্নের সলাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি [উম্মে হানী (রাঃ)] বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর থেকে সংক্ষিপ্ত কোন সলাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ’ ও সাজদাহ্ পূর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৩৩ হাঃ ৩৫৭, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৩৩৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খলীল ও বন্ধু (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হল) (১) প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম (পালন করা), (২) সলাতুয্-যোহা (চাশ্ত এর সলাত আদায় করা) এবং (৩) বিত্র (সলাত) আদায় করে শয়ন করা। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৩৩, হাঃ ১১৭৮, মুসলিম ৬/১৩, হাঃ ৭২১)
ফাজ্রের দু’ রাক’আত সলাত মুস্তাহাব এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান।
হাফসা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মুআয্যিন সুব্হে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতোথ- জামা’আত দাঁড়ানোর পূর্বে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষেপে দু’রাক’আত সলাত আদায় করে নিতেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১২ হাঃ ৬১৮, মুসলিম ৬/১৪, হাঃ ৭২৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’ রাক’আত সলাত সংক্ষেপে আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১২ হাঃ ৬১৯, মুসলিম ৬/১৪, হাঃ ৭২৪) আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’ রাক’আত সলাত এতো সংক্ষেপে আদায় করতেন যে আমি মনে মনে বলতাম, তিনি কি সুরাহ ফাতিহা পাঠ করেছেন? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’ রাক’আত সলাত সংক্ষেপে আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /২৮ হাঃ ১১৬৫, মুসলিম পর্ব ৬/১৪ হাঃ ৭২৪) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কোন নফল সলাতকে ফাজরের দু’রাক’আত সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন না। (বুখারী পর্ব ১৯ :/২৭ হাঃ ১১৬৩, মুসলিম পর্ব ৬ :/১৪, হাঃ ৬২৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, । (বুখারী পর্ব ১৯ : /২৭ হাঃ ১১৬৩, মুসলিম হাঃ ,)
ফার্জ সলাতের আগে ও পরে সুন্নাতে রাতেবা বা নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত ও তার সংখ্যা।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে যুহরের পুর্বে দু রাক’আত, যুহরের পর দু’রাক’আত, মাগরিবের পর দু’রাক’আত, ‘ইশার পর দু’রাক’আত এবং জুমু’আহ্র পর দু’রাক’আত সলাত আদায় করছি। তবে মাগরিব ও ‘ইশার পরের সলাত তিনি তাঁর ঘরে আদায় করতেন। ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আরও বলেন, আমার বোন (উম্মুল মু’মিনীন) হাফসাহ (রাঃ) আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাযর হবার পর সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত সলাত আদায় করতেন। (ইব্নু ‘উমার (রাঃ) বলেন,) এটি ছিল এমন একটি সময়, যখন আমরা কেউ নাবী -এর খিদমতে হাযির হতাম না। ইব্নু আবু যিনাদ (রহঃ) বলেছেন, মূসা ইব্নু উক্বা (রাঃ) নাফি’ (রহঃ) হতে ‘ইশার পরে তাঁর পরিজনের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /২৯ হাঃ ১১৭৩, মুসলিম ৬/১৫, হাঃ ৭২৯)
নফল সলাত দাঁড়িয়ে, বসে এবং একই সলাতের কিছু দাঁড়িয়ে ও বসে পড়া বৈধ।
মু’মিনদের মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাতের কোন সলাতে আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বসে কিরা’আত পড়তে দেখিনি। অবশ্য শেষ দিকে বার্ধক্যে উপনীত হলে তিনি বসে কিরা’আত পড়তেন। যখন (আরম্ভকৃত) সূরার ত্রিশ চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকত, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সে পরিমাণ কিরা’আত পড়ার পর রুকূ’ করতেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১৬ হাঃ ১১৪৮, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৭৩১) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে সলাত আদায় করতেন। বসেই তিনি কিরা’আত পাঠ করতেন। যখন তাঁর কিরা’আতের প্রায় ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করতেন, অতঃপর রুকূ’ করতেন; পরে সাজদাহ্ করতেন। দ্বিতীয় রাকা’আতেও অনুরূপ করতেন। সলাত শেষ করে তিনি লক্ষ্য করতেন, আমি জাগ্রত থাকলে আমার সাথে বাক্যালাপ করতেন আর ঘুমিয়ে থাকলে তিনিও শুয়ে পড়তেন। (বুখারী পর্ব ১৮ : /২০ হাঃ ১১১৯, মুসলিম ৬/১৬, হাঃ ৭৩১)
রাতের সলাত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের সলাতের সংখ্যা এবং বিত্রের সলাত এক রাক’আত ও এক রাক’আত সলাত সহীহ।
আবূ সালামাহ ইব্নু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) এগার রাক’আতের অধিক সলাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাক’আত সলাত আদায় করতেন। তুমি সেই সলাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক’আত সলাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক’আত (বিত্র) সলাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (একদিন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কি বিত্রের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১৬ হাঃ ১১৪৭, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা তের রাক’আত সলাত আদায় করতেন, বিত্র এবং ফাজরের দু রাক’আত (সুন্নাত)ও এর অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১০ হাঃ ১১৪০, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৮) আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত কেমন ছিল? তিনি বলেন, তিনি প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তাঁর শয্যায় ফিরে যেতেন, মুআয্যিন আযান দিলে দ্রুত উঠে পড়তেন, তখন তাঁর প্রয়োজন থাকলে গোসল করতেন, অন্যথায় উযূ করে (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যেতেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১৫ হাঃ ১১৪৬, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৯) মাসরূক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন্ আমলটি সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল? তিনি বললেন, নিয়মিত ‘আমল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন? তিনি বললেন, যখন মোরগের ডাক শুনতে পেতেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩২, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি আমার নিকট ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ই সাহ্রীর সময় হতো। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৭ হাঃ ১১৩৩, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে) বিত্র আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহ্রীর সময় তিনি বিত্র আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ১৪ : /২ হাঃ ৯৯৬, মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৪৫)
রাতের সলাত দু’ রাক’আত দু’ রাক’আত এবং বিত্র শেষ রাতে এক রাক’আত।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ রাতের সলাত দু’ দু’ (রাক’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফাজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সলাত আদায় করল, তা তার জন্য বিত্র হয়ে যাবে। (বুখারী পর্ব ১৪ : /১ হাঃ ৯৯১, মুসলিম ৬/২০, হাঃ ৭৪৯) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিত্রকে তোমাদের রাতের শেষ সলাত করবে। (বুখারী পর্ব ১৪ : /৪ হাঃ ৯৯৮, মুসলিম ৬/২০, হাঃ ৭৫১)
শেষ রাতে দু’আ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং সে সময় কবূল হওয়া।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকা কালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১৪ হাঃ ১১৪৫, মুসলিম ৬/২৩, হাঃ ৭৫৮)
রমাযানের রাতের ক্বিয়ামের বা ‘ইবাদাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান আর তা হচ্ছে (কিয়ামু রমাযান) তারাবীহ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদাত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ২৭ : /২৭ হাঃ ৩৭, মুসলিম ৬/২৫, হাঃ ৭৬০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন একরাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সলাত আদায় করলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চেয়ে অধিক সংখ্যক সহাবী একত্রিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মাসজিদে লোকসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এবং সহাবীগণ তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলেন। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসুল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফাজরের সলাতের জন্য বের হলেন এবং ফাজরের সলাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। অতঃপর আল্লাহ্র হামদ ও সানা বর্ণনা করেন। অতঃপর বললেনঃ আম্মা বা’দ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফার্য করে দেয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়। (বুখারী পর্ব ১১ : /২৯ হাঃ ৯২৪, মুসলিম ৬/২৫, হাঃ ৭৬১)
রাতের সলাতে দু’আ এবং রাতে সলাতে দণ্ডায়মান হওয়া।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি মাইমূনাহ (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটালাম। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে তাঁর প্রয়োজনাদি সেরে মুখ-হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জেগে উঠে পানির মশকের নিকট গিয়ে এর মুখ খুললেন। এরপর মাঝারি রকমের এমন অযূ করলেন যে, তাতে অধিক পানি লাগালেন না। অথচ পুরা ‘উযূই করলেন। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করতে লাগলেন। তখন আমিও জেগে উঠলাম। তবে আমি কিছু দেরী করে উঠলাম। এজন্য যে, আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তিনি আমার অনুসরণকে দেখে ফেলেন। যা হোক আমি অযূ করলাম। তখনও তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন। সুতরাং আমি গিয়ে তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমার কান ধরে তাঁর ডান দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিলেন। এরপর তাঁর তেরো রাক’আত সলাত পূর্ণ হলো। অতঃপর তিনি আবার কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডাকাতেও লাগলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমালে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন অযূ না করেই সলাত আদায় করলেন। তাঁর দু’আর মধ্যে এ দু’আও ছিলঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে-বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন। কুরায়ব (রহঃ) বলেন, এ সাতটি আমার তাবূতের মত। এরপর আমি ‘আব্বাসের পুত্রদের একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করলেন এবং রগ, গোশ্ত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করলেন এবং আরো দু’টির কথা উল্লেখ করেন। (বুখারী পর্ব ৮০ : /১০ হাঃ ৬৩১৬, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর খালা। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি বিছানার প্রশস্ত দিকে শুলাম এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শুলেন; আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। অতঃপর সূরা আলু-’ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক হতে সুন্দরভাবে উযূ করলেন। অতঃপর সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করেছেন তদ্রুপ করলাম। তারপর গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিয়ে ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর বিতর আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর নিকট মুয়ায্যিন এলে তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন। তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফাজরের সলাত আদায় করলেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৬ হাঃ ১৮৩, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত ছিল তের রাক’আত অর্থাৎ রাতে। (তাহাজ্জুদ ও বিত্রসহ)। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১০ হাঃ ১১৩৮, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৪) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে যখন তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করতেন, তখন বলতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্! সব প্রশংসা একমাত্র আপনারই, আসমান ও যমীনের তত্ত্বাবধায়ক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব স্তুতি। আসমান ও যমীন এবং এসবের মধ্যকার সবকিছুর প্রতিপালক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান যমীন ও এগুলোর মধ্যকার সব কিছুর নূর আপনিই। আপনি হক, আপনার বাণী হক, আপনার ওয়াদা হক, আপনার সাক্ষাৎ হক, জান্নাত হক, জাহান্নাম হক এবং ক্বিয়ামাত হক। ইয়া আল্লাহ্! আপনারই উদ্দেশে আমি ইসলাম কবূল করেছি এবং আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি, তাওয়াক্কুল করেছি আপনারই ওপর, আপনারই কাছে বিবাদ হাওয়ালা করেছি, আপনারই কাছে ফায়সালা চেয়েছি। তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের গুপ্ত ও প্রকাশদ্য এর্ব যা আপনি আমার চেয়ে অধিকজ্ঞাত তাই সবই মাফ করে দিন। আপনি ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ্ নেই। (বুখারী পর্ব ৯৭ : /৩৫ হাঃ ৭৪৪২, মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৯)
রাতের সলাতে কিরাআত লম্বা করা মুস্তাহাব।
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাতে আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছে করে ফেলেছিলাম। (আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন) আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ইচ্ছে করেছিলেন? তিনি বললেন, ইচ্ছে করেছিলাম, বসে পড়ি এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইক্তিদা ছেড়ে দেই। (বুখারী পর্ব ১৯ : /৯ হাঃ ১১৩৫, মুসলিম ৬/২৭, হাঃ ৭৭৩)
ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে যে সকাল পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি ঘুমাল।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হল, যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। তখন তিনি বললেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বললেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে। (বুখারী পর্ব ৫৯ : /১১ হাঃ ৩২৭০, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৪) ‘আলী ইব্নু আবূ তালিব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে তাঁর কন্যা ফাতিমাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেনঃ তোমরা কি সলাত আদায় করছ না? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহ্ তা’আলার হাতে রয়েছে। তিনি যখন আমাদের জাগাতে মরযী করবেন, জাগিয়ে দিবেন। আমরা যখন একথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোন প্রত্যুত্তর করলেন না। পরে আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে করাঘাত করছিলেন এবং কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেনঃ .............. “মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়”- (আল-কাহাফঃ ৫৪) (বুখারী পর্ব ১৯ : /৫ হাঃ ১১২৭, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহ্কে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়, পরে উযূ করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়, অতঃপর সলাত আদায় করলে আর একটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয়, প্রফুল্ল মনে ও নির্মল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১২ হাঃ ১১৪২, মুসলিম ৬/২৮, হাঃ ৭৭৬)
নফল সলাত বাড়িতে আদায় করা মুস্তাহাব এবং তা মাসজিদে জায়িয।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সলাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিবে না। (বুখারী পর্ব ৮ : /৫২ হাঃ ৪৩২, মুসলিম ৬/২৯, হাঃ ৭৭৭) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র করে, আর যে ব্যক্তি যিক্র করে না, তাদের দু’জনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের। (বুখারী পর্ব ৮০ : /৬৬ হাঃ ৬৪০৭, মুসলিম ৬/২৯, হাঃ ৭৭৯) যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি (বুস্র ইব্নু সা’ঈদ (রহঃ) বলেন, মনে হয়, (যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) কামরাটি চাটাই তৈরি ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সলাত আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের নিকট এসে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সলাত আদায় কর। কেননা, ফার্য সলাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সলাত আদায় করে তা-ই উত্তম। (বুখারী পর্ব ১০ : /৮১ হাঃ ৭৩১, মুসলিম ৬/২৯, ৭৮১)
কোন ব্যক্তি সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্র আযকার এলোমেলো হলে তার প্রতি শুয়ে যাওয়া অথবা বসে যাওয়ার নির্দেশ যে পর্যন্ত না ঐ অবস্থা কেটে যায়।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে) প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, দু’টি স্তম্ভের মাঝে একটি রশি টাঙানো রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ রশিটি কী কাজের জন্য? লোকেরা বললো, এটি যায়নাবের রশি, তিনি (‘ইবাদাত করতে করতে) অবসন্ন হয়ে পড়লে এটির সাথে নিজেকে বেঁধে দেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেনঃ না, ওটা খুলে ফেল। তোমাদের যে কোন ব্যক্তির প্রফুল্লতা ও সজীবতা থাকা পর্যন্ত ইবাদাত করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন যেন সে বসে পড়ে। (বুখারী পর্ব ১৯ : /১৮ হাঃ ১১৫০, মুসলিম ৬/৩১, হাঃ ৭৮৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইনি কে?’ আয়িশাহ (রাঃ) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সলাতের উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহ্র শপথ! আল্লাহ্ তা’আলা ততক্ষণ পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহ্র নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে। (বুখারী পর্ব ২ : /৩২ হাঃ ৪৩, মুসলিম ৬/৩১ হাঃ ৭৮৫) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন ঘুমের আমেজ চলে না যাওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে নেয়। কারণ, যে তন্দ্রাবস্থায় সলাত আদায় করে সে জানে না যে, সে কি ইসতিগফার করছে নাকি নিজেকে গালি দিচ্ছে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫৩ হাঃ ২১২, মুসলিম ৬/৩১, হাঃ ৭৮৬)
কুরআন বার বার পাঠ করার নির্দেশ আর এ কথা বলা অপছন্দনীয় যে আমি অমুক অমুক সূরাহ ভুলে গেছি কিন্তু এ কথা বলা জায়িয যে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ক্বারীকে রাতে মসজিদে কুরআন মাজীদ পাঠ করতে শুনলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সূরাহ থেকে ভুলতে বসেছিলাম। (বুখারী পর্ব ৬৬: /২৭ হাঃ ৫০৪২, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৮৮) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /২৩ হাঃ ৫০৩১, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৮৯) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক, কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়। (বুখারী পর্ব ৬৬: /২৩ হাঃ ৫০৩২, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৯০) আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহ্র কসম! যার কবজায় আমার জীবন! কুরআন বন্ধনমুক্ত উটের চেয়েও দ্রুত বেগে দৌড়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৬৬: /২৩ হাঃ ৫০৩৩, মুসলিম ৬/৩৩, হাঃ ৭৯১)
সুমধুর কণ্ঠে কুরআন পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ কোন নাবীকে ঐ অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন, আর তা কুরআন তিলাওয়াত যথেষ্ট। রাবী বলেন, এর অর্থ সুস্পষ্ট করে আওয়াজের সাথে কুরআন পাঠ করা।(বুখারী পর্ব ৬৬ : /১৯ হাঃ ৫০২৩, মুসলিম ৬/৩৪, হাঃ ৭৯৬) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ মূসা! তোমাকে দাউদ (‘আ.)-এর সুমধুর কন্ঠ দান করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /৩১ হাঃ ৫০৪৮, মুসলিম ৬/৩৪, হাঃ ৭৯৩)
মাক্কাহ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূরাহ ফাতহ্ পড়ার বর্ণনা।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি ‘তারজী’* করে সূরাহ ফাত্হ তিলাওয়াত করছেন। বর্ণনাকারী মু‘আবিয়া ইবনু কুররা (রহ.) বলেন, যদি আমার চারপাশে লোকজন জমায়েত হওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তা হলে ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তিলাওয়াত বর্ণনা করতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলাওয়াত করতাম। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৪৮ হাঃ ৪২৮১, মুসলিম ৬/৩৫ হাঃ ৭৯৪)
কুরআন পাঠের সময় প্রশান্তি অবতীর্ণ হওয়া।
বার‘আ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, এক সাহাবী সূরা কাহ্ফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ্র দরবারে দু’আ করলেন। তখন তিনি দেখলেন, একখণ্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে দিয়েছে। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। তখন তিনি বললেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করবে। এটা তো প্রশান্তি ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৬১৪, মুসলিম ৬/৩৬ হাঃ ৭৯৫) উসাইদ ইব্নু হুযাইর (রাঃ) একদা রাত্রে তিনি সুরা আল-বাকারাহ পাঠ করছিলেন। তখন তাঁর ঘোড়াটি তারই পাশে বাঁধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি ভীত হয়ে লাফ দিয়ে উঠল এবং ছুটাছুটি শুরু করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন তখনই ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ শুরু করলেন। ঘোড়াটি আগের মত করল। যখন পাঠ বন্ধ করলেন ঘোড়াটি শান্ত হল। আবার পাঠ আরম্ভ করলে ঘোড়াটি আগের মত করতে লাগল। এ সময় তার পুত্র ইয়াহইয়া ঘোড়াটির নিকটে ছিল। তার ভয় হচ্ছিল যে, ঘোড়াটি তার পুত্রকে পদদলিত করবে। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলেন। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উক্ত ঘটনা বললেন। ঘটনা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ইব্নু হুযইর (রাঃ)! তুমি যদি পাঠ করতে, হে ইব্নু হুযইর (রাঃ)! তুমি যদি পাঠ করতে। ইব্নু হুযয়র আরয করলেন, আমার ছেলেটি ঘোড়ার নিকট থাকায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম হয়ত বা ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করবে, সুতরাং আমি আমার মাথা উপরে উঠাতেই মেঘের মত কিছু দেখলাম, যা আলোর মত ছিল। আমি যখন বাইরে এলাম তখন আর কিছু দেখ্লাম না। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান, ওটা কী ছিল? বললেন, না। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা ছিল মালাইকাহ। তোমার তিলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে তারাও ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখতে পেত। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /১৫ হাঃ ৫০১৮, মুসলিম ৬/৩৬, হাঃ ৭৯৬)
কুরআনের হাফিযের ফাযীলাত।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারী মু’মিনের দৃষ্টান্ত কমলালেবুর ন্যায়, যার ঘ্রাণও উত্তম স্বাদও উত্তম। যে মু’মিন কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায়, যার কোন সুঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে তার দৃষ্টান্ত রায়হানার ন্যায়, যার সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হন্যালাহ্ ফলের ন্যায়, যার সুঘ্রাণও নাই, স্বাদও তিক্ত। (বুখারী পর্ব ৭০ : /৩০ হাঃ ৫৪২৭, মুসলিম ৬/৩৭ হাঃ ৭৯৭)
কুরআনের যে অভিজ্ঞ এবং এটা শিক্ষার জন্য যে লেগে থাকে তার মর্যাদা।
‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, কুরআনের হাফেয পাঠক, লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কুরআন মাজীদ পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার লাভ করবে। (বুখারী পর্ব ৬৫: /৮০ হাঃ ৪৯৩৭, মুসলিম ৬/৩৮ হাঃ ৭৯৮)
নৈপুণ্য ও মর্যাদাবান ব্যক্তির নিকট কুরআন পাঠ উত্তম যদিও পাঠক শ্রোতার চেয়ে উত্তম।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই ইব্নু কা‘ব (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহ “সূরাيَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمْ তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করেছেন। উবাই ইব্নু কা‘ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ কি আমার নাম করেছেন? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ : /১৬ হাঃ ৩৮০৯, মুসলিম ৬/৩৯, হাঃ নং ৭৯৯)
কুরআন পাঠ শ্রবণের মর্যাদা এবং হাফিযদের নিকট থেকে পড়া শুনতে চাওয়া এবং তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা ও গবেষণা করার মর্যাদা।
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করবো; অথচ আপনারই ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি তখন সূরাহ নিসা পাঠ করলাম, এমনকি যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ “অতঃপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কী করবে।” তখন তিনি আমাকে বললেন, “থাম!” আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) দু’চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /৩৫ হাঃ ৫০৫৫, মুসলিম ৬/৪০ হাঃ ৮০০) আলক্বামাহ (রহ) তিনি বলেন, আমরা হিম্স শহরে ছিলাম। এ সময় ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূরাহ ইউসুফ তিলাওয়াত করলেন। তখন এক ব্যক্তি বললেন, এ সূরাহ এভাবে নাযিল হয়নি। এ কথা শুনে ইব্নু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এ সূরাহ্ তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দরভাবে পাঠ করেছ। এ সময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বললেন, তুমি আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা এবং মদ পান করার মত জঘন্যতম অপরাধ এক সাথে করছ? এরপর তিনি তার ওপর হদ (অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি) জারি করলেন। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /৮ হাঃ ৫০০১, মুসলিম ৬/৪০ হাঃ ৮০১)
সূরাহ ফাতিহা ও সূরাহ আল-বাক্বারাহ্র শেষ অংশের মর্যাদা এবং সূরা আল-বাক্বারাহ্ শেষ দু’ আয়াত পড়ার প্রতি উৎসাহ দান।
বাদরী সাহাবী আবূ মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সূরাহ্ বাকারাহ্র শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সূরাহ্ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। ‘আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, পরে আমি আবূ মাস‘উদের সাথে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করলেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /১২ হাঃ ৪০০৮, মুসলিম ৬/৪৩, হাঃ ৮০৭)
কুরআন নিজে চর্চাকারী ও অন্যকে শিক্ষাদানকারীর মর্যাদা এবং ঐ ব্যক্তির মর্যাদা যে কুরআনের হিকমাত, যেমন ফিক্হ ইত্যাদি শিক্ষা করে এবং তদনুযায়ী ‘আমাল করে ও তা শিক্ষা দেয়।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, দু’টি বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা কিতাবের জ্ঞান দান করেছেন এবং তিনি তার থেকে গভীর রাতে তিলাওয়াত করেন। দ্বিতীয়ত, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-রাত দান-খায়রাত করতে থাকেন। (বুখারী পর্ব ৯৭ : /৪৫ হাঃ ৫০২৫, মুসলিম ৬/৪৭ হাঃ ৮১৫) ‘আবদুল্লাহ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেবল দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা বৈধ; (১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; (২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রজ্ঞা দান করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। (বুখারী পর্ব ৩ : /১৫ হাঃ ৭৩, মুসলিম ৬/৪৭ হাঃ ৮১৬)
কুরআন সাত রকম পঠনে নাযিল হয়েছে এবং এর অর্থের বর্ণনা।
‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হিশাম ইব্নু হাকীম (রাঃ)-কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় সূরাহ্ ফুরক্বান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তাঁর কিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারণে সলাতের মাঝে আমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। অতঃপর সে সালাম ফিরালে আমি চাদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরাহ্ যেভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারণ, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরাহ্ ফুরকান যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। অতঃপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে ‘উমার! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর। (বুখারী পর্ব ৪৪ : /৪ হাঃ ৪৯৯২, মুসলিম ৬/৪৮ হাঃ ৮১৮) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জিব্রীল (‘আ.) আমাকে এক আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন পাঠ করে শুনিয়েছেন। কিন্তু আমি সব সময় তাঁর নিকট বেশি ভাষায় পাঠ শুনতে চাইতাম। শেষতক তা সাতটি আঞ্চলিক ভাষায় সমাপ্ত হয়। (বুখারী পর্ব ৫৯ : /৬ হাঃ ৩২১৯, মুসলিম ৬/৪৮ হাঃ ৮১৯)
কুরআন তারতিল সহ (ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে) পাঠ করা এবং ‘হায্যা’ থেকে বিরত থাকা, ‘হায্যা’ হচ্ছে তাড়াহুড়া করে পড়া এবং এক রাক‘আতে একাধিক সূরাহ পড়া বৈধ।
আবূ ওয়াইল (রহ.) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, গতরাতে আমি মুফাস্সাল সূরাগুলো এক রাক‘আতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি বললেন, তাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরস্পর সমতুল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেন, সেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাস্সাল সূরাসমূহের বিশটি সূরার কথা উল্লেখ করে বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাক‘আতে এর দু’টি করে সূরা পড়তেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১০৬ হাঃ ৭৭৫, মুসলিম ৬/৪৯ হাঃ ৮২২)
কিরাআত সম্পর্কিত।
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /৫৪ হাঃ ৪৮৭০, মুসলিম ৬/৫০ হাঃ ৮২৩) ইব্রাহীম (রহ.) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর কতিপয় সাথী আবু দ্দারদা (রাঃ)-এর কাছে আগমন করলেন। তিনিও তাদেরকে তালাশ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর কিরাআত অনুযায়ী কে কুরআন পাঠ করতে পারে। আলক্বামাহ (রহ) বললেন, আমরা সকলেই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস কররেন, তোমাদের মধ্যে সবচাইতে ভাল হাফিয কে? সকলেই আলকামার প্রতি ইঙ্গিত করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদকে == কীভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামাহ্ (রহ.) বললেন, আমি তাকে == (ব্যতীত) পড়তে শুনেছি। এ কথা শুনে আবুদ্দারদা (রাঃ) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক, আমিও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবেই পড়তে শুনেছি। অথচ এসব (সিরিয়াবাসী) লোকেরা চাচ্ছে, আমি যেন আয়াতটি {وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى} পড়ি। আল্লাহ্র কসম! আমি তাদের কথা মানবো না। (বুখারী পর্ব ৬৫ : ৯২ হাঃ ৪৯৪৪, মুসলিম ৬/৫০ হাঃ ৮২৪)
যে সমস্ত সময়ে সলাত আদায় নিষিদ্ধ।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি-আমার নিকট যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন ‘উমার (রাঃ)-আমাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /৩০ হাঃ ৫৮১, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৬) আবূ সাঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ফাজরের পর সূর্য উদিত হয়ে (একটু) উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সলাত নেই। (বুখারী পর্ব ৯ : /৩১ হাঃ ৫৮৬, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সলাত আদায়ের ইচ্ছা করো না। (বুখারী পর্ব ৯ : /৩০ হাঃ ৫৮৩, মুসলিম ৬/৫১, হাঃ ৮২৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সূর্যের এক কিনারা উদিত হবে, তখন তা পরিস্কারভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় বন্ধ রাখো। আবার যখন সূর্যের এক কিনারা অস্ত যাবে, তখন তা সম্পূর্ন অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা সলাত আদায় বন্ধ রাখ। (বুখারী পর্ব ৫৯ : /১১ হাঃ ৩২৭২, মুসলিম ৬/৫১ হাঃ ৮২৮)
ঐ দু’ রাক‘আতের পরিচয় যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের পর আদায় করতেন।
কুরাইব (রহ.) ইব্নু ‘আব্বাস, মিসওয়ার ইব্নু মাখরামা এবং আবদুর রহমান ইব্নু আযহার (রাঃ) তাঁকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাঁকে আমাদের সকলের তরফ হতে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দু’রাক‘আত সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। তাঁকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দু’রাক‘আত আদায় করেন, অথচ আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দু’রাক‘আত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) সংবাদে আরও বললেন যে, আমি ‘উমার ইব্নু খাত্তাব(রাঃ)-এর সাথে এ সলাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম। কুরাইব (রহ.) বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে তাঁদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস কর। [কুরাইব (রহ.) বলেন] আমি সেখান হতে বের হয়ে তাঁদের নিকট গেলাম এবং তাঁদেরকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, আমিও নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা নিষেধ করতে শুনেছি। অথচ অতঃপর তাঁকে ‘আসরের সলাতের পর তা আদায় করতেও দেখেছি। একদা তিনি আসরের সলাতের পর আমার ঘরে তাশরীফ আনলেন। তখন আমার নিকট বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাঁদীকে এ বলে তাঁর নিকট পাঠালাম যে, তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, উম্মে সালামাহ (রাঃ) আপনার নিকট জানতে চেয়েছেন, আপনাকে (আসরের পর সলাতের) দু’রাক‘আত নিষেধ করতে শুনেছি; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন? যদি তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকবে, বাঁদী তা-ই করল। তিনি ইঙ্গিত করলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সলাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ উমায়্যাহ্র কন্যা! আসরের পরের দু’রাক‘আত সলাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছ। আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার নিকট এসেছিল। তাদের কারণে যুহ্রের পরের দু’রাকা‘আত আদায় করা হতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দু’রাক‘আত সে দু’রাক‘আত। (বুখারী পর্ব ২২ : /৮ হাঃ ১২৩৩, মুসলিম ৬/৫৪, হাঃ ৮৩৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’রাক‘আত সলাত আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তাহলো ফাজরের সলাতের পূর্বের দু’রাক‘আত ও ‘আসরের পরের দু’রাক‘আত। (বুখারী পর্ব ৯: /৩৩ হাঃ ৫৯২, মুসলিম ৬/৫৪ হাঃ ৮৩৫)
মাগরিব সলাতের পূর্বে দু’ রাক‘আত সলাত মুস্তাহাব।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, মুআযযিন যখন আযান দিতো, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের মধ্যে কয়েকজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) খুঁটির নিকট গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগিরবের পূর্বে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইকামাতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না। উসমান ইব্নু জাবালাহ ও আবূ দাঊদ (রহ.) শু‘বা (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৪ হাঃ ৬২৫, মুসলিম ৬/৫৫, হাঃ ৮৩৭)
প্রত্যেক আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে সলাত।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মুগাফফাল মুযানী (রাযি রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সলাত রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন, (তারপর বলেন) যে চায় তার জন্য। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬ হাঃ ৬২৪, মুসলিম ৬/৫৬, হাঃ ৮৩৮)
সলাতুল খাউফ বা ভয়ের সলাত।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদলকে সাথে নিয়ে সলাত আদায় করেছেন। অন্যদরকে রেখেছেন শত্রুর মুকাবিলায়। তারপর সলাতরত দলটি এক রাক‘আত আদায় করে শত্রুর মুকাবিলায় নিজ সাথীদের স্থানে চলে গেলেন। অতঃপর অন্য দলটি আসলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিয়ে এক রাক‘আত সলাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁরা তাদের বাকী আরেক রাক‘আত আদায় করলেন এবং শত্রুর মুকাবিলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার আগের দলটি এসে তাদের বাকী রাক‘আতটি পূর্ণ করলেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩৩, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৩৯) সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (সলাতুল খাওফে) ইমাম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন। একদল থাকবেন তাঁর সাথে এবং অন্যদল শত্রুদের মুখোমুখী হয়ে তাদের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। তখন ইমাম তাঁর পেছনের একদল নিয়ে এক রাক‘আত সলাত আদায় করবেন। এরপর সলাতরত দলটি নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে রুকূ ও দু’ সাজদাসহ আরো এক রাক‘আত সলাত আদায় করে ঐ দলের স্থানে গিয়ে দাঁড়াবেন। এরপর তারা এলে ইমাম তাদের নিয়ে এক রাক‘আত সলাত আদায় করবেন। এভাবে ইমামের দু’রাক‘আত সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। আর পিছনের লোকেরা রুকূ‘ সাজদাসহ আরো এক রাক‘আত সলাত আদায় করবেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩১, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৪১) সলিহ ইবনু খাওয়াত (রাঃ) রায়ী এমন একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সাথে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাক‘আত সলাত আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুক্তাদীগণ তাদের সলাত পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাক‘আত আদায় করে স্থির হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদীগণ তাদের নিজেদের সলাত সম্পূর্ণ করলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১২৯, মুসলিম ৬/৫৭, হাঃ ৮৪২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেছেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াদার বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে গাছের সাথে লটকানো নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরবারীখানা হাতে নিয়ে তা তাঁর উপর উঁচিয়ে ধরে বলল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বললেন, না। এরপর সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? তিনি বললেন, আল্লাহ। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলেন। এরপর সলাত আরম্ভ হলে তিনি সাহাবীদের একটি দলকে নিয়ে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তারা এখান থেকে সরে গেলে অপর দলটি নিয়ে তিনি আরো দু’রাক‘আত নামায আদায় করলেন। এভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হল চার রাক‘আত এবং সাহাবীদের হল দু’রাক‘আত সলাত। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৩১ হাঃ ৪১৩৬, মুসলিম ৬/ ৫৭ হাঃ ৮৪৩)