7. জুমু‘আর বর্ণনা
জুমু‘আহ্র বর্ণনা
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমু‘আহ’র সলাতে আসলে (তার পূর্বে) সে যেন গোসল করে। (বুখারী পর্ব ১১: /২ হাঃ ৮৭৭, মুসলিম ৭/৭, হাঃ ৮৪৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জুমু‘আহ’র দিন দাঁড়িয়ে খুত্বা দিচ্ছিলেন, এ সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবী এলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনতে পেয়ে শুধু উযূ করে নিলাম। ‘উমার (রাঃ) বললেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের আদেশ দিতেন। (বুখারী পর্ব ১১ : /২ হাঃ ৮৭৮, মুসলিম ৭, হাঃ ৮৪৫)
জুমু‘আহ্র দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের উপর গোসল ওয়াজিব এবং এ ব্যাপারে যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বর্ণনা।
আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুমু‘আহ’র দিন প্রত্যেক সাবালকের (মুসলিমের) গোসল করা ওয়াজিব। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬১ হাঃ ৮৫৮, মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা হতেও জুমু‘আহ’র সলাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ হতে ঘাম বের হত। একদা তাদের একজন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে। (বুখারী পর্ব ১১ : /১৫ হাঃ ৯০২, মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৭) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সা‘ঈদ (রহ.) তিনি আমরাহ (রহ.)-কে জুমু‘আহ’র দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আমরাহ (রহ.) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমু‘আহ’র জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাঁদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬ হাঃ ৯০৩, মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৭)
জুমু‘আহ্র দিন সুগন্ধি লাগানো ও মেসওয়াক করা।
‘আমর ইব্নু সুলাইম আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আহ’র দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা ওয়াজিব। আর মিস্ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। (বুখারী পর্ব ১১: /৩ হাঃ ৮৮০, মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৬) তাঊস (রহ.) তিনি ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন, জুমু‘আহ’র দিন গোসল সম্বন্ধে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পরিবার পরিজনের সঙ্গে অবস্থান করতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তেল ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, আমি তা জানি না। (বুখারী পর্ব ১১ : /৬ হাঃ ৮৮৫, মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহ্র হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনে একবার সে যেন গোসল করে। (বুখারী পর্ব ১১ : /১২ হাঃ ৮৯৮, মুসলিম ৭/২, হাঃ ৮৪৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহ’র দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সলাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুত্বাহ প্রদানের জন্য বের হন তখন মালায়িকা (ফেরেশতামণ্ডলী) যিক্র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (বুখারী পর্ব ১১ : /৪ হাঃ ৮৮১, মুসলিম ৭/২, হাঃ ৮৫০)
জুমু‘আহ্র দিন খুৎবাহ চলাকালীন চুপ থাকা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আহ’র দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্বা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি বেহুদা কথা বললে। (বুখারী পর্ব ১১ : /৩৬ হাঃ ৯৩৪, মুসলিম ৭/৩, হাঃ ৮৫১)
জুমু‘আহ্র দিনে (দু‘আ কবূল হওয়ার) নির্দিষ্ট একটি সময়।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আহ’র দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সলাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারী পর্ব ১১ : /৩৭ হাঃ ৯৩৫, মুসলিম ৭/৪, হাঃ ৮৫২)
জুমু‘আহ্র দিনে; এ উম্মাতকে পথের নির্দেশ দান
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন সবশেষে হলেও কিয়ামাত দিবসে আমরা অগ্রগামী। কিন্তু, অন্যান্য উম্মাতগণকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এ দিন তারা মতবিরোধ করেছে। তাই ইয়াহূদীদের মনোনীত শনিবার, খ্রিস্টানদের মনোনীত রবিবার। (বুখারী পর্ব ৬০ : /৫৪ হাঃ ৩৪৮৬, মুসলিম ৭/৬ হাঃ ৮৫৫)
সূর্য ঢলে যাওয়ার সাথে সাথেই জুমু‘আহ্র সলাতের সময়।
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি আরো বলেছেন, জুমু‘আহ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলা (দুপুরের শয়ন ও হাল্কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম। (বুখারী পর্ব ১১ : /৪০ হাঃ ৯৩৯, মুসলিম ৭/৯, হাঃ ৮৫৯) ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রহ.) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু‘আহ্র সলাত আদায় করে যখন বাড়ি ফিরতাম তখনও প্রাচীরের ছায়া পড়ত না, যে ছায়ায় আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৩৫ হাঃ ৪১৬৮, মুসলিম ৭/৯, হাঃ ৮৬০)
সলাতের পূর্বে দু’ খুতবাহ্র বর্ণনা এবং এ দুয়ের মাঝে বসা।
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুত্বাহ দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক। (বুখারী পর্ব ১১: /২৭ হাঃ ৯২০, মুসলিম ৭/১০, হাঃ ৮৬১)
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “যখন তারা দেখল ব্যবসায় ও কৌতুক তখন তারা তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেল।” (সূরাহ জুমু‘আহ ৬২/১১)
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে (জুমু‘আর) সলাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত অধিক মনোযোগী হলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ .............. “এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল। তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল” -(জুমু‘আহঃ ১১)। (বুখারী পর্ব ১১ : /৩৮ হাঃ ৯৩৬, মুসলিম ৭/১১, হাঃ ৮৬৩)
সলাত ও খুৎবাহ সংক্ষিপ্ত করা।
ইয়া‘লা (রাঃ) এর পিতা তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে তিলাওয়াত করতে শুনেছেন, “আর তারা ডাকবে, হে মালিক।” (যুখরুফ : ৭৭) (বুখারী পর্ব ৫৯ : /৭ হাঃ ৩২৬৬, মুসলিম ৭/১৩ হাঃ ৮৭১)
ইমামের খুৎবাহ চলাকালীন তাহিয়াতুল মাসজিদ আদায় করা।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক জুমু‘আহ’র দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বাহ দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সলাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না, তিনি বললেনঃ উঠ, দু’ রাক‘আত সলাত আদায় কর।(বুখারী পর্ব ১১ : /৩৩ হাঃ ৯৩১, মুসলিম ৭/১৪ হাঃ ৮৭৫) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর খুত্বাহ প্রদানকালে ইরশাদ করলেনঃ তোমরা কেউ এমন সময় মাসজিদে উপস্থিত হলে, যখন ইমাম (জুমু’আহ্র) খুত্বা দিচ্ছেন, কিংবা মিম্বরে আরোহণের জন্য (হুজরাহ হতে) বেরিয়ে পড়েছেন, তাহলে সে তখন যেন দু’ রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। (বুখারী পর্ব ১৯ : /২৫ হাঃ ১১৭০, মুসলিম ৭/১৪ হাঃ ৮৭৫)
জুমু‘আহ্র দিন (সলাতে) কী পড়বে?
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আহ’র দিন ফাজরের সলাতে .............. এবং .............. এ দু’টি সূরাহ তিলাওয়াত করতেন। (বুখারী পর্ব ১১ : /১০ হাঃ ৮৯১, মুসলিম ৭/৬৪, হাঃ ৮৮০)