8. ঈদাইন বা দু’ ঈদের সলাত
ঈদাইন বা দু’ ঈদের সলাত
ইব্নু জুরাইজ (রহ.) হাসান ইব্নু মুসলিম (রহ.) তাঊস (রহ.) এর মাধ্যমে ইব্নু ‘আববাস (রাঃ)বর্ণনা করেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র, ‘উমার ও উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে ঈদুল ফিত্রে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা খুত্বাহ্র পূর্বে সলাত আদায় করতেন, পরে খুত্বাহ দিতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইঙ্গিতে (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ .............. “হে নাবী! যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়‘আত করতে আসেন..... -(মুমতাহিনাঃ ১২)। এ আয়াত শেষ করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এ বায়‘আতের উপর আছ? তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান (রহ.) জানেন না, সে মহিলা কে? অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সাদাকাহ কর। সে সময় বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন নারীগণ তাঁদের ছোট-বড় আংটিগুলো বিলাল (রাঃ)-এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। ‘আবদুর রায্যাক (রহ.) বলেন, .............. হলো বড় আংটি যা জাহিলী যুগে ব্যবহৃত হতো। (বুখারী পর্ব ১৩ : /১৯ হাঃ ৯৭৯, মুসলিম ৮/১, হাঃ ৮৮৪) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী ঈদুল ফিত্রের দিন দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন, পরে খুত্বাহ দিলেন। খুত্বাহ শেষে নেমে নারীদের নিকট আসলেন এবং তাঁদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ)-এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। এতে নারীগণ দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন। (বুখারী পর্ব ১৩ : /১৯ হাঃ ৯৭৮, মুসলিম পর্ব ৮ হাঃ ৮৮৫) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) ও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ঈদুল ফিতরের সলাতে কিংবা ঈদুল আযহার সলাতে আযান দেয়া হত না। (বুখারী পর্ব ১৩ : /৭ হাঃ ৯৬০, মুসলিম হাঃ ,) রাবী আমাকে ‘আতা (রহ.) বলেছেন যে, ইব্নু যুবায়র (রাঃ) এর বায়‘আত গ্রহণের প্রথম দিকে ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিত্রের সলাতে আযান দেয়া হতো না। এবং খুত্বাহ দেয়া হতো সলাতের পরে। (বুখারী পর্ব ১৩ : /৭ হাঃ ৯৫৯, মুসলিম হাঃ ,) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর এবং ‘উমার (রাঃ) উভয় ঈদের সলাত খুত্বাহর পূর্বে আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ১৩ : /৮ হাঃ ৯৬৩, মুসলিম হাঃ ,) আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সলাত। আর সলাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছে করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছে করতেন তবে তা জারি করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মাদীনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিত্রের উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বার দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইব্নু সাল্ত (রাঃ) তৈরি করেছিলেন। মারওয়ান সলাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুত্বাহ দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহ্র কসম! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সা‘ঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সলাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুত্বাহ সলাতের পূর্বেই দিয়েছি। (বুখারী পর্ব ১৩ : /৬ হাঃ ৯৫৬, মুসলিম হাঃ ৮৮৯)
দু’ ঈদে ঈদের মাঠে মহিলাদের গমন এবং পুরুষ থেকে দূরে থেকে খুত্বাহ শ্রবণ করার বর্ণনা।
উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিবসে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন নারীদের বের করে আনার আদেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলমানদের জামা‘আত ও দু‘আয় অংশ গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী নারীগণ সলাতের জায়গা হতে দূরে অবস্থান করবে। এক মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া। (বুখারী পর্ব ৮ : /২ হাঃ ৩৫১, মুসলিম ৮/১ হাঃ ৮৯০)
ঈদের দিনে খেলাধূলার ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে যেগুলোতে অপরাধ নেই।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবূ বকর (রাঃ) এলেন তখন আমার নিকট আনসারী দু’টি মেয়ে বু‘আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে গান গাইছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাধারী গায়িকা ছিল না। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ বাক্র! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দ। (বুখারী পর্ব ১৩ : /৩ হাঃ ৯৫২, মুসলিম ৮/৪ হাঃ ৮৯২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু‘আস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বাকর (রাঃ) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ) বাজানো হচ্ছে (তাও আবার) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট! তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ওকে ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত দিলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, অতঃপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তাঁর গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করছিলে তা করতে থাক, হে বনূ আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি (দেখা) শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও। (বুখারী পর্ব ১৩ : /২ হাঃ ৯৪৯, ৯৫০, মুসলিম ৮/৪, হাঃ ৮৯২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার একদল হাব্শী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্শা নিয়ে খেলা করছিলেন। এমন সময় ‘উমার (রাঃ) সেখানে এলেন এবং হাতে কংকর তুলে নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ‘উমার! তাদের করতে দাও। আলী......মা‘মার (রহ.) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, (এ ঘটনা) মাসজিদে ঘটেছিল। (বুখারী পর্ব ৫৬ : /৮৯ হাঃ ২৯০১, মুসলিম ৮/৪ হাঃ ৮৯৩)