12. কুরআন অধ্যায়

【1】

কুরআন পাঠের ফযীলত

আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে।” (মুসলিম ১৯১০) জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, “এই কুরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী; তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। (কুরআন) সত্যায়িত প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে নিজ সামনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পিছনে রাখবে, সে ব্যক্তিকে সে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে।” (ইবনে হিব্বান ১২৪, সঃ তারগীব ১৪২৩) আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, তা কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীদের জন্য সুপারিশকারীরূপে উপস্থিত হবে। তোমরা দুই জ্যোতির্ময় সূরা; বাক্বারাহ ও আ-লে ইমরান পাঠ কর। কারণ উভয়েই মেঘ অথবা উড়ন্ত পাখীর ঝাঁকের ন্যায় কিয়ামতের দিন উপস্থিত হয়ে তাদের পাঠকারীদের হয়ে (আল্লাহর নিকট) হুজ্জত করবে। তোমরা সূরা বাক্বারাহ পাঠ কর। কারণ তা গ্রহণ করায় বরকত এবং বর্জন করায় পরিতাপ আছে। আর বাতেলপন্থীরা এর মোকাবেলা করতে পারে না।” মুআবিয়াহ বিন সাল্লাম বলেন, ‘আমি শুনেছি যে, বাতেলপন্থীরা অর্থাৎ যাদুকরদল।’ (মুসলিম ১৯১০) ইবনে মাসঊদ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি চায় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে (অধিক) ভালবাসুক (অথবা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাকে ভালবাসুন), সে যেন কুরআন দেখে পাঠ করে।” (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২২১৯, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৩৪২) নাউওয়াস বিন সামআন কিলাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন কুরআনকে হাজির করা হবে এবং আহলে কুরআনকেও; যারা তার মুতাবেক আমল করত। যার সর্বাগ্রে থাকবে সূরা বাক্বারাহ ও আ-লে ইমরান।” আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সূরা দুটি যেরূপ হাজির হবে তার) তিনটি উদাহরণ দিয়েছেন, আমি এখনও ভুলে যাইনি; তিনি বলেছেন, “যেন সে দুটি দুই খন্ড মেঘ অথবা কালো ছায়া যার মাঝে থাকবে দীপ্তি, অথবা যেন উড়ন্ত পাখীর ঝাঁক; উভয়ে¬ই তাদের সপক্ষে (পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর নিকট) হুজ্জত করবে।” (মুসলিম ১৯১২) উষমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিখে অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ৫০২৭-৫০২৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মানবমন্ডলীর মধ্য হতে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট লোক আছে; আহ্লে কুরআন (কুরআন বুঝে পাঠকারী ও তদনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তিরাই) হল আল্লাহর বিশেষ ও খাস লোক।” (আহমাদ ১২২৭৯, নাসাঈ, বাইহাক্বী, হাকেম, সহীহুল জামে ২১৬৫) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআনের (শুদ্ধভাবে পাঠকারী ও পানির মত হিফযকারী পাকা) হাফেয মহাসম্মানিত পুণ্যবান লিপিকার (ফিরিশতাবর্গের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি (পাকা হিফয না থাকার কারণে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব।” (একটি তেলাঅত ও দ্বিতীয়টি কষ্টের দরুন।) (বুখারী ৪৯৩৭, মুসলিম ১৮৯৮) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআন পাঠকারী মুমিনের উদাহরণ হচ্ছে ঠিক বাতাবী লেবুর মত; যার ঘ্রাণ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মু’মিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক খেজুরের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ তো নেই, তবে স্বাদ মিষ্ট। (অন্যদিকে) কুরআন পাঠকারী মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধিময় (তুলসী) গাছের মত; যার ঘ্রাণ উত্তম, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক মাকাল ফলের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ নেই, স্বাদও তিক্ত।” (বুখারী ৫০২০, মুসলিম ১৮৯৬) উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মহান আল্লাহ এই গ্রন্থ (কুরআন মাজীদ) দ্বারা (তার উপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান এবং এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতন সাধন করেন।” (মুসলিম ১৯৩৪) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দু’জনের ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা সিদ্ধ। (১) যাকে আল্লাহ কুরআন (মুখস্থ করার শক্তি) দান করেছেন, সুতরাং সে ওর (আলোকে) দিবা-রাত্রি পড়ে ও আমল করে। (২) যাকে আল্লাহ তাআলা মালধন দান করেছেন এবং সে (আল্লাহর পথে) দিন-রাত ব্যয় করে।” (বুখারী ৫০২৫, মুসলিম ১৯৩০) বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা একটি লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল। তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিল। মেঘটি লোকটির নিকটবর্তী হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চকতে আরম্ভ করল। অতঃপর যখন সকাল হল তখন লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি বললেন, “ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবতীর্ণ হয়েছে।” (বুখারী ৫০১১, মুসলিম ১৮৯২) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ)এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে। আর একটি নেকী, দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ।” (অর্থাৎ, তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।) (তিরমিযী ২৯১০, হাসান) তামীম দারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাত্রির কিয়াম (নামাযের) সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।” (আহমাদ ১৬৯৫৮, নাসাঈর কুবরা ১০৫৫৩, ত্বাবারানী ১২৩৮, দারেমী ৩৪৫০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৬৪৪) ফায্বালাহ বিন উবাইদ (রাঃ) ও তামীম দারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ‘ক্বিন্তার’ পরিমাণ সওয়াব লেখা হবে। ‘ক্বিন্তার’ পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ। (ত্বাবারানীর কাবীর ১২৩৯, আওসাত্ব ৮৪৫১, সঃ তারগীব ৬৩৮) আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বললেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কি এ কথা পছন্দ করে যে, সে যখন তার ঘরে ফিরে যাবে তখন বড় বড় হৃষ্টপুষ্ট তিনটি গাভিন উষ্ঠ্রী পাবে?” আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “নামাযের মধ্যে তোমাদের কারো তিনটি আয়াত পাঠ করা তিনটি বড় বড় হৃষ্টপুষ্ট গাভিন উষ্ঠ্রী অপেক্ষা উত্তম!” (মুসলিম ১৯০৮) আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “কিয়ামতের দিন কুরআন উপস্থিত হয়ে বলবে, ‘হে প্রভু! ওকে (কুরআন পাঠকারীকে) অলংকৃত করুন।’ সুতরাং ওকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। পুনরায় কুরআন বলবে, ‘হে প্রভু! ওকে আরো অলংকার প্রদান করুন।’ সুতরাং ওকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। অতঃপর বলবে, ‘হে প্রভু! আপনি ওর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।’ সুতরাং আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘তুমি পাঠ করতে থাক আর মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক।’ আর প্রত্যেকটি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব বৃদ্ধি করা হবে।” (তিরমিযী ২৯১৫, হাকেম ২০২৯, দারেমী ৩৩১১, সহীহুল জামে ৮০৩০) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পবিত্র কুরআনের পাঠক, হাফেয ও তার উপর আমলকারীকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, ‘তুমি কুরআন কারীম পড়তে থাক ও চড়তে থাক। আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাক, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। কেননা, (জান্নাতের ভিতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে, যেখানে তোমার শেষ আয়াতটি খতম হবে।” (আবূ দাঊদ ১৪৬৬, তিরমিযী ২৯১৪, হাসান) আবু সাঈদ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআন তেলাঅতকারী যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাকে বলা হবে, ‘(কুরআন) পাঠ কর ও (জান্নাতের) মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক। সুতরাং সে পাঠ করবে এবং প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদায় উন্নীত হবে। এইভাবে সে তার (মুখস্থ করা) শেষ আয়াতটুকুও পড়ে ফেলবে।” (আহমাদ ১১৩৬০, ইবনে মাজাহ ৩৭৮০, সহীহুল জামে ৮১২১)

【2】

কুরআন মাজীদ সযত্নে নিয়মিত পড়া ও তা ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“এই কুরআনের প্রতি যত্ন নাও। (অর্থাৎ, নিয়মিত পড়তে থাক ও তার চর্চা রাখ।) সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায়।” (অর্থাৎ, অতিশীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।) (বুখারী ৫০৩৩, মুসলিম ১৮৮০) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআন-ওয়ালা হল বাঁধা উট-ওয়ালার মত। সে যদি তা বাঁধার পর তার যথারীতি দেখাশোনা করে, তাহলে বাঁধাই থাকবে। নচেৎ ঢিল দিলেই উট পালিয়ে যাবে।” (বুখারী ৫০৩১, মুসলিম ১৮৭৫) উকবাহ বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর কিতাব শিক্ষা কর, (পাঠ করার মাধ্যমে) তার যত্ন কর, তা ঘরে রাখ এবং সুরেলা কণ্ঠে তা তেলাঅত কর। কারণ, উট যেমন রশির বন্ধন থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায়।” (আহমাদ ১৭৩১৭, দারেমী ৩৩৪৯, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩২৮৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কারো এ কথা বলা নিকৃষ্ট যে, ‘আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং তাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।” (বুখারী ৫০৩৯, মুসলিম ১৮৭৭)

【3】

সুললিত কণ্ঠে কুরআন পড়া মুস্তাহাব। মধুরকণ্ঠের কারীকে তা পড়ার আবেদন করা ও তা মনোযোগ সহকারে শোনা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “মহান আল্লাহ এভাবে উৎকর্ত হয়ে কোন কথা শোনেন না, যেভাবে সেই মধুরকণ্ঠী পয়গম্বরের প্রতি উৎকর্ত হয়ে শোনেন, যিনি মধুর কণ্ঠে উচ্চ স্বরে কুরআন মাজীদ পড়তেন।” (বুখারী ৫০২৪, মুসলিম ১৮৮৩) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, “তোমাকে দাউদের সুললিত কণ্ঠের মত মধুর কণ্ঠ দান করা হয়েছে।” (বুখারী ৫০৪৮, মুসলিম ১৮৮৭-১৮৮৮) মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, “যদি তুমি আমাকে গত রাতে তোমার তেলাঅত শোনা অবস্থায় দেখতে (তাহলে তুমি কতই না খুশি হতে)!” বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এশার নামাযে সূরা ‘অততীন অযযাইতূন’পড়তে শুনেছি। বস্তুতঃ আমি তাঁর চেয়ে মধুর কণ্ঠ আর কারো শুনিনি।” (বুখারী ৭৬৯, ৭৫৪৬, মুসলিম ১০৬৭) আবূ লুবাবাহ বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিষ্ট স্বরে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের মধ্যে নয়।” (অর্থাৎ আমাদের ত্বরীকা ও নীতি-আদর্শ বহির্ভূত।) (আবূ দাঊদ ১৪৭৩, উত্তম সূত্রে) বারা’ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের (সুমিষ্ট) শব্দ দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্যমন্ডিত কর। কারণ, মধুর শব্দ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।” (হাকেম ২১২৫, দারেমী ৩৫০১, সঃ জামে’ ৩৫৮১) ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কুরআন পাঠে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আওয়াজ কার?’ উত্তরে তিনি বললেন, “তার, যার কুরআন পাঠ করা শুনে মনে হয়, সে আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।” (যুহদ, ইবনুল মুবারক, দারেমী ৩৪৮৯, ত্বাবারানী ৬৭৩) উকবাহ বিন আমের জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সশব্দে কুরআন তেলাঅতকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মত এবং নিঃশব্দে তেলাঅতকারী গোপনে দানকারীর মত।” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, সঃ জামে’ ৩১৫০) ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই নামাযী তাঁর সুমহান প্রভুর কাছে মুনাজাত করে। অতএব তার লক্ষ্য করা উচিত, সে কি দিয়ে তাঁর কাছে মুনাজাত করছে। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের কাছে উচ্চস্বরে কুরআন না পড়ে।” (আহমাদ, ত্বাবারানী, সহীহ আবূ দাঊদ ১২০৩, সহীহুল জামে’ ১৯৫১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “(হে ইবনে মাসঊদ!) আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, “অপরের মুখ থেকে (কুরআন পড়া) শুনতে আমি ভালবাসি।” সুতরাং তাঁর সামনে আমি সূরা নিসা পড়তে লাগলাম, পড়তে পড়তে যখন এই (৪১) আয়াতে পৌঁছলাম---যার অর্থ, “তখন তাদের কী অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?” তখন তিনি বললেন, “যথেষ্ট, এখন থাম।” অতঃপর আমি তাঁর দিকে ফিরে দেখি, তাঁর নয়ন যুগল অশ্রু ঝরাচ্ছে। (বুখারী ৪৫৮২, মুসলিম ১৯০৩-১৯০৫)

【4】

বিশেষ বিশেষ সূরা ও আয়াত পাঠ করার উপর উৎসাহ দান

আবূ সাঈদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা আমি মসজিদে নামায পড়ছিলাম। এমতাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন। আমি সাড়া দিলাম না। অতঃপর নামায শেষ করে তাঁর নিকট এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি নামায পড়ছিলাম।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ কি বলেননি যে, তোমরা আল্লাহ ও রসূলের আহ্বানে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে (রসূল) ডাকে---?’ (সূরা আনফাল ২৪) অতঃপর) তিনি আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যে আমাকে বললেন, তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা ফাতেহা)। এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানী’ (অর্থাৎ, নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে।” (বুখারী ৪৪৭৪) আবু হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘উম্মুল কুরআন’ (কুরআনের জননী) সম্পর্কে বলেছেন, “এটাই হল (সেই সূরা হিজরের ৮৭ আয়াতে উল্লেখিত আমাকে প্রদত্ত) সপ্তপদী (সূরা) যা নামাযে পুনঃপুনঃ আবৃত্ত হয় এবং সেটাই হল মহা কুরআন।” (বুখারী ৪৭০৪) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল।” (বুখারী ৫০১৩, ৬৬৪৩, ৭৩৭৪) অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাঁদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ (অর্থাৎ, কেউ পারবে না।) তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ’ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল।” (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (ঐ ৫০১৫) উক্ত সাহাবী (রাঃ) উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।” (বুখারী ৫০১৩, ৬৬৪৩, ৭৩৭৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।” (মুসলিম ১৯২৪-১৯২৫) আনাস বিন মালিক (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘ক্বুল ইয়া-আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’ পাঠ করবে, তার এক চতুর্থাংশ কুরআন পাঠের সমান সওয়াব লাভ হবে। আর যে, ব্যক্তি ‘ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ পাঠ করবে তার এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সমান সওয়াব লাভ হবে।” (তিরমিযী ২৮৯৩, সহীহুল জামে’৬৪৬৬) মুআয বিন আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি ‘ক্বুল হুঅল্লা-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে এক মহল নির্মাণ করবেন।” এ কথা শুনে উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আমরা বেশি বেশি করে পড়ব হে আল্লাহর রসূল!’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “আল্লাহও বেশি দানশীল ও বেশি পবিত্র।” (আহমাদ ১৫৬১০, প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৮৯) আবু হুরাইরা (রাঃ) একদা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে (একস্থানে) আগমন করলাম। তিনি এক ব্যক্তির নিকট শুনলেন, সে ‘ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ পড়ছে। অতঃপর তিনি বললেন, “অনিবার্য।” আমি বললাম, ‘কি অনিবার্য?!’ তিনি বললেন, “জান্নাত।” (তিরমিযী ২৮৯৭) আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি এই (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি।’ তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” (তিরমিযী ২৯০১ হাসান সূত্রে, বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে ৭৭৫ এর আগে) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে এক (জিহাদের) সৈন্যদলের সেনাপতিরূপে প্রেরণ করলেন। সে তাদের নামাযে ইমামতিকালে প্রত্যেক সূরার শেষে ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ যোগ করে ক্বিরাআত শেষ করত। যখন তারা ফিরে এল তখন সে কথা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করল। তিনি বললেন, “তোমরা ওকে জিজ্ঞাসা কর, কেন এমনটি করে?” সুতরাং তারা ওকে জিজ্ঞাসা করলে লোকটি বলল, ‘কারণ, সূরাটিতে পরম দয়ালু (আল্লাহর) গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি ওটাকে (বারবার) পড়তে ভালোবাসি।’ একথা শুনে তিনি বললেন, “ওকে সংবাদ দাও যে, আল্লাহ আযযা অজাল্ল্ও ওকে ভালো বাসেন।” (বুখারী ৭৩৭৫ , মুসলিম ৮১৩) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বললেন, “তুমি কি দেখনি, আজ রাত্রে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার অনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিন নাস।” (মুসলিম ১৯২৭, তিরমিযী ২৯০২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ব ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন।’ (তিরমিযী ২০৫৮, হাসান) বর্ণনাকারী একদা ইবনে আবেস জুহানী (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে ইবনে আবেস! আমি তোমাকে উত্তম ঝাড়-ফুঁকের কথা বলে দেব না কি, যার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনাকারীরা আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে?” তিনি বললেন, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে রাসূলাল্লাহ!’ তিনি ফালাক ও নাস সূরা দুটিকে উল্লেখ করে বললেন, “এ সূরা দুটি হল মুআব্বিযাতান (ঝাড়-ফুঁকের মন্ত্র)।” (আহমাদ ১৫৪৪৮, ১৭২৯৭, নাসাঈ কুবরা ৭৮৪৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা ক’রে দেওয়া হবে, সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মুল্ক’ (সূরা মুল্ক)।” (আবূ দাঊদ ১৪০২, তিরমিযী ২৮৯১, হাসান) আবূ দার্দা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের (ফিৎনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে।” অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। (মুসলিম ১৯১৯-১৯২০) আবু সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহফ পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য দুই জুমআর মধ্যবর্তী কাল জ্যোতির্ময় হয়ে যায়।” (হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জামে’৬৪৭০) ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শয়ন করার আগে শুরুতে তসবীহ (সুবহা-না, সাব্বাহা, য়্যুসাব্বিহু, ও সাব্বিহ)বিশিষ্ট (বানী ইসরাঈল, হাদীদ, হাশর, সাফ্ফ, জুমুআহ, তাগাবুন, ও আ’লা এই সাতটি) সূরা পাঠ করতেন। তিনি বলেন, “ঐ সূরাগুলির মধ্যে এমন একটি আয়াত নিহিত আছে যা এক হাজার আয়াত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (আহমাদ ১৭২৯২, আবূ দাঊদ ৫০৫৭, তিরমিযী ২৯২১) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “অবশ্যই প্রত্যেক বস্তুরই চূড়া আছে; আর কুরআনের চূড়া হল সূরা বাক্বারাহ।” (হাকেম২০৬০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৮৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না। কেননা, যে বাড়িতে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।” (মুসলিম ১৮৬০) (অর্থাৎ সুন্নাত ও নফল নামায তথা পবিত্র কুরআন পড়া ত্যাগ করে ঘরকে কবর বানিয়ে দিয়ো না। যেহেতু কবরে এ সব বৈধ নয়।) উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরআন)এর ভিতর তোমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?” আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরর্সী।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, “আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক।” (মুসলিম ১৯২১) (অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, (একবার) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে রমযানের যাকাত (ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ (আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে পেশ করব।’ সে আবেদন করল, ‘আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুণ অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট হাযির হলাম।) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে।” আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুরূপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীঁক্ষায় থাকলাম। সে (পূর্ববৎ) এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে পেশ করব।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী, পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না।’ সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “আবূ হুরাইরা! গত রাত্রে তোমার বন্দী কিরূপ আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তান-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে।” সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে) আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, “এবারে তোকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে হাযির করবই। এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার। ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস।” সে বলল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন।’ আমি বললাম, ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করে (ঘুমাবে)। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর কাছে গেলাম।) তিনি আমাকে বললেন, “তোমার বন্দী কী আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে বলল, “আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন।” বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সে শব্দগুলি কী?” আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, “যখন তুমি বিছানায় (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে।” সে আমাকে আরো বলল, “তার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসবে না।” (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, “শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?” আমি বললাম, ‘জী না।’ তিনি বললেন, “সে শয়তান ছিল।” (বুখারী ২৩১১) আবু উমামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পশ্চাতে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না। (নাসাঈ কুবরা ৯৯২৮, ত্বাবারানী ৭৫৩২, সহীহুল জামে ৬৪৬৪) আবূ মাসঊদ বদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সে দু’টি যথেষ্ট হবে।” (বুখারী ৪০০৮, মুসলিম ১৯১৪-১৯১৬) বলা হয়েছে যে, সে রাতে অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। অথবা তাহাজ্জুদের নামায থেকে যথেষ্ট হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা জিবরীল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরীল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয়নি। ওদিক দিয়ে একজন ফিরিশতা অবতীর্ণ হল। এই ফিরিশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে, ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি।’ সুতরাং তিনি এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম জানিয়ে বললেন, “আপনি দু’টি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। (সে দু’টি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্বারার শেষ আয়াতসমূহ। ওর মধ্য হতে যে বর্ণটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে।” (মুসলিম ১৯১৩)

【5】

কুরআন পঠন-পাঠনের মাহাত্ম্য

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর গ্রন্থ (কুরআন) পাঠ করে, তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে অধ্যয়ন করে, তাহলে তাদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং তাদেরকে তাঁর রহমত ঢেকে নেয়, আর ফিরিশতাবর্গ তাদেরকে ঘিরে ফেলেন। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর নিকটস্থ ফিরিশতামন্ডলীর কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (মুসলিম ৭০২৮, আবূ দাঊদ ১৪৫৭) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা সুফ্ফাহ (মসজিদে নববীর এক বিষেশ মন্ডপ; যাতে দরিদ্র মুহাজিরগণ অবস্থান করতেন সেই স্থানে) ছিলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গৃহ হতে বের হয়ে আমাদের নিকট এসে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে পছন্দ করে যে, প্রত্যহ বুত্বহান (মদীনার নিকটবর্তী একটি জায়গা) অথবা আক্বীক্ব (মদীনার এক উপত্যকা) গিয়ে দুটি করে বড় বড় কুঁজবিশিষ্ট উট্নী নিয়ে আসবে; যাতে কোন পাপ ও নাহক কারো অধিকার হরণও হবে না?” আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এতো আমাদের প্রত্যেকেই পছন্দ করে।’ তিনি বললেন, “তাহলে সে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাব থেকে দুটি আয়াত শিক্ষা অথবা (বুঝে) মুখস্থ করে না কেন? এটাই দুটি উষ্ট্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ! অনুরূপ ৩টি আয়াত ৩টি উষ্ট্রী, ৪টি আয়াত ৪টি উষ্ট্রী এবং এর চেয়ে অধিক সংখ্যক আয়াত ঐরূপ অধিক সংখ্যক উষ্ট্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ!” (মুসলিম ৮০৩) আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রঃ) ‘আমাদেরকে আমাদের ওস্তাদগণ বর্ণনা করেছেন যে, যাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ছাত্র ছিলেন তাঁরা দশটি আয়াত শিখলে ততক্ষণ পর্যন্ত আর আগে বাড়তেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ দশ আয়াতের বর্ণিত ইল্ম ও আমল শিক্ষা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইল্ম ও আমল উভয়ই (একই সময়ে) শিক্ষা করেছি।’ (আহমাদ ২৩৪৮২) বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) কে এক ব্যক্তি বলল, ‘আমি এক রাকআতে মুফাস্স্বাল (সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত অংশ) পাঠ করি।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘কবিতা আওড়ানোর মত পড়? কিছু সম্প্রদায় আছে যারা কুরআন পড়ে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠের নিচে নামে না। আসলে সেই কুরআন পাঠ কাজে দেবে, যা হৃদয়ে এসে গেঁথে যাবে এবং তা পাঠকারীকে উপকৃত করবে---।’ (বুখারী ৭৭৫, মুসলিম ১৯৪৫) আব্দুল্লাহ বিন আমর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সে ব্যক্তি কুরআন বুঝে না, যে তিন দিনের কম সময়ে তা খতম করে।” (আবূ দাঊদ ১৩৯৬, তিরমিযী ২৯৪৯, ইবনে মাজাহ প্রমুখ, সহীহুল জামে’ ৭৭৪৩) আমর বিন হাযম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আর পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে।” (মালিক ৪৬৮, ইরওয়াউল গালীল ১২২) মুসআব বিন সা’দ বিন আবী অক্কাস আমি সা’দ বিন আবী অক্কাসের জন্য মুসহাফ ধারণ করতাম। একদা আমি চুলকালাম। তা দেখে সাদ বললেন, সম্ভবতঃ তুমি তোমার প্রস্রাব-দ্বার স্পর্শ করলে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি ওঠো এবং ওযূ করে এসো। অতঃপর আমি উঠে ওযূ করে এলাম। (মুআত্ত্বা, বাইহাক্বী, ইরওয়াউল গালীল ১/১৬১) বর্ণনাকারী একদা উমার (রাঃ) এক সম্প্রদায়ের নিকট এলেন; তখন তারা কুরআন পড়ছিল। সেখান থেকে তিনি (পেশাব অথবা পায়খানার) প্রয়োজনে গেলেন এবং কুরআন পড়তে পড়তে ফিরে এলেন। তা দেখে এক ব্যক্তি তাঁর উদ্দেশ্যে বলল, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! ওযূ না করেই আপনি কুরআন পাঠ করছেন?’ তার এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘তোমাকে এ ফতোয়া কে দিয়েছে (যে, বিনা ওযূতে কুরআন পড়া যাবে না)? (ঝুটা নবী) মুসাইলিমাহ নাকি?’ (মুআত্ত্বা ৪৬৯) আব্দুর রহমান বিন জুবাইর বিন নুফাইর তিনি তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা নুফাইর থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করো না এবং আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশ দ্বারা কিছু অংশকে মিথ্যাজ্ঞান করো না। আল্লাহর কসম! মুমিন কুরআন নিয়ে বিতর্ক করলে পরাজিত হবে এবং মুনাফিক কুরআন নিয়ে বিতর্ক করলে বিজয়ী হবে।” (ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৪৪৭) যিয়াদ বিন হুদাইর একদা আমাকে উমার (রাঃ) বললেন, هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الْأِسْلَامَ قُلْتُ لَا قَالَ يَهْدِمُهُ زِلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكَمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّيْنَ ‘তুমি জান কি, ইসলামকে কিসে ধ্বংস করবে?’ আমি বললাম, ‘জী না।’ তিনি বললেন, ‘ইসলামকে ধ্বংস করবে আলেমের পদস্খলন, কুরআন নিয়ে মুনাফিকের বিতর্ক এবং ভ্রষ্টকারী শাসকদের রাষ্ট্রশাসন।’ (দারেমী ২১৪) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার অসীলায় জান্নাত প্রার্থনা কর, সেই জাতি আসার পূর্বে, যারা তার অসীলায় দুনিয়া প্রার্থনা করবে। কুরআন তিন শ্রেণীর লোক শিক্ষা করবে; কিছু লোক তা নিয়ে ফখর করে বেড়াবে, কিছু লোক তার মাধ্যমে পেট চালাবে এবং কিছু লোক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তা তেলাঅত করবে।” (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৫৮) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে (সূরা মারইয়্যামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “ষাট বছর পর কিছু অপদার্থ পরবর্তীগণ আসবে, তারা নামায নষ্ট করবে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হবে; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর এক জাতি আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠের অক্ষকাস্থি পার হবে না। (হৃদয়ে জায়গা পাবে না।) কুরআন তিন ব্যক্তি পাঠ করে; মু’মিন, মুনাফিক ও ফাজের।” বর্ণনাকারী বাশীর বলেন, আমি অলীদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওরা তিন ব্যক্তি কে কে?’ তিনি বললেন, ‘মুনাফিক তা অস্বীকার করে, ফাজের তার অসীলায় পেট চালায় এবং মু’মিন তার প্রতি ঈমান রাখে।’ (আহমাদ ১১৩৬০, হাকেম ৩৪১৬, ৮৬৪৩, সিলসিলাহ সহীহাহ ১/২৫৭) জাবের (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের নিকট বের হয়ে সূরা রহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ নীরব বসে তেলাঅত শুনছিলেন। তিনি বললেন, “যে রাত্রে আমার নিকট জিনের দল আসে, সে রাত্রে আমি উক্ত সূরা ওদের নিকট পাঠ করলে ওরা সুন্দর জওয়াব দিচ্ছিল। যখনই আমি পাঠ করছিলাম, (অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার কর?) তখনই তারাও এর জওয়াবে বলছিল, অর্থাৎ, তোমার নেয়ামতসমূহের কোন কিছুকেই আমরা অস্বীকার করি না হে আমাদের প্রতিপালক! (তিরমিযী ৩২৯১, সিঃ সহীহাহ ২১৫০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আদম-সন্তান যখন সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করে, তখন শয়তান সরে গিয়ে কাঁদে ও বলে, ‘হায় আমার দুর্ভোগ! আদম-সন্তান সিজদা করতে আদিষ্ট হয়ে সিজদা করেছে, ফলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েও তা করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম!” (মুসলিম ২৫৪)

【6】

কুরআনের তাফসীর

আদী বিন হাতেম (রাঃ) একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলাম। তখন আমার ঘাড়ে সোনার ক্রুশ ছিল। তা দেখে তিনি বললেন, “হে আদী! এই প্রতিমা তোমার নিকট থেকে খুলে ফেল।” শুনলাম তিনি সূরা তাওবার এই আয়াত পাঠ করলেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللهِ অর্থাৎ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পন্ডিত-পুরোহিতদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (তাওবাহঃ৩১) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখে উক্ত আয়াত শুনে আরজ করলাম যে, ইয়াহুদী-নাসারারা তো নিজেদের আলেমদের কখনো ইবাদত করেনি, তাহলে এটা কেন বলা হয়েছে যে, তারা তাদেরকে ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছে? তিনি বললেন, “এ কথা ঠিক যে, তারা তাদের ইবাদত করেনি। কিন্তু এটা তো সঠিক যে, তাদের আলেমরা যা হালাল করেছে, তাকে তারা হালাল এবং যা হারাম করেছে,তাকে তারা হারাম বলে মেনে নিয়েছে। আর এটাই হল তাদের ইবাদত করা।” (তিরমিযী ৩০৯৫) আদী বিন হাতেম (রাঃ) حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ অর্থাৎ, তোমরা পানাহার কর; যতক্ষণ কালো সুতা (রাতের কালো রেখা) হতে ঊষার সাদা সুতা (সাদা রেখা) স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। (বাক্বারাহ ঃ ১৮৭) উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি (মাথায় রুমালের উপর ব্যবহার্য) একটি সাদা ও একটি কালো মোটা রশি (বালিশের নিচে) রাখলেন। রাত্রি হলে তিনি লক্ষ্য করলেন, কিন্তু (কোনটা সাদা ও কোনটা কালো) তা স্পষ্ট হল না। সকাল হলে তিনি এ কথা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে উল্লেখ করলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার বালিশ তাহলে খুবই বিশাল! কালো সুতা ও সাদা সুতা তোমার বালিশের নিচে ছিল?!” (বুখারী ৪৫০৯) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তার মানে হল, রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতা।” (বুখারী ১৯১৬, মুসলিম ২৫৮৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করেছে এবং তাদের বিশ্বাসকে যুলুম (শির্ক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (আন্আমঃ ৮২) ‘এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হল, তখন মুসলিমদের নিকট বিষয়টি কঠিন মনে হল। বলল, ‘আমাদের মধ্যে কে আছে যে নিজের উপর যুলুম (অন্যায় বা পাপ) করে না?’ তা শুনে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (তোমরা যে যুলুম মনে করছ) তা নয়। বরং তা (সবচেয়ে বড় যুলুম) কেবলমাত্র শির্ক। তোমরা কি পুত্রকে সম্বোধন করে লুকমানের উক্তি শ্রবণ করনি? (তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন), يَا بُنَيَّ لاَ تُشْرِكْ باِللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ অর্থাৎ, হে বৎস্য! আল্লাহর সাথে শির্ক করো না, নিশ্চয় শির্ক বড় যুলুম। (বুখারী ৬৯৩৭, মুসলিম ৩৪২) বর্ণনাকারী একদা য়্যা’লা বিন উমাইয়া (রাঃ) উমার (রাঃ) কে বলেন, কী ব্যাপার যে, লোকেরা এখনো পর্যন্ত নামায কসর পড়েই যাচ্ছে, অথচ মহান আল্লাহ তো কেবল বলেছেন যে, “যখন তোমরা ভূপৃষ্ঠে সফর কর, তখন তোমরা নামায সংক্ষেপ করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; যদি তোমরা এই আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে বিব্রত করবে।” আর বর্তমানে তো ভীতির সে অবস্থা অবশিষ্ট নেই? উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, যে ব্যাপারে তুমি আশ্চর্যবোধ করছ, আমিও সেই ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এ কথার উল্লেখ করলে তিনি বললেন, “এটা তোমাদেরকে দেওয়া আল্লাহর একটি সদকাহ। সুতরাং তোমরা তাঁর সদকাহ গ্রহণ কর।” (আহমাদ, মুসলিম ১৬০৫, মিশকাত ১৩৩৫) আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কুরআনের ব্যাখ্যার উপর লড়বে, যেমন আমি ওর অবতরণের উপর লড়ছি।” (মুসনাদে আহমাদ ১১২৮৯, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)