14. ইল্‌ম অধ্যায়

【1】

ইল্মের ফযীলত

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْمَاً ﴾ ﴿ অর্থাৎ, বল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। (ত্বা-হা ১১৪) তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্যত্র বলেন, ﴿قُلْ هَلْ يَسْتَوي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ ﴾ অর্থাৎ, বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (যুমার ৯) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন, ﴿يَرْفَعِ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا العِلْمَ دَرَجَاتٍ﴾ অর্থাৎ, যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (মুজাদালা ১১)। তিনি অন্য জায়গায় বলেন, ﴿إنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ العُلَمَاءُ﴾ অর্থাৎ, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (ফাত্বের ২৮) আর এ কথা বিদিত যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ইল্ম অনুসন্ধান করা প্রত্যেক (নর-নারী) মুসলিমের জন্য আবশ্যক।” (সঃ জামে’২৯১৩, সঃ তারগীব ৭২) মুআবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী ৭১, ৩১১৬, ৭৩১২, মুসলিম ২৪৩৬, ২৪৩৯, ইবনে মাজাহ) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কেবল দু’জন ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। আর সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা ক’রে থাকে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ৭৩, ১৪০৯, মুসলিম ১৯৩৩) আবূ মূসা (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা যমীনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সব্জি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারী ৭৯, মুসলিম ৬০৯৩) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলী (রাঃ) কে সম্বোধন করে বললেন, “আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ সৎপথ দেখান, তবে তা (আরবের মহামূল্যবান) লাল উট অপেক্ষা উত্তম হবে।” (বুখারী ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ৬৩৭৬) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথ অবলম্বন করে চলে যাতে সে ইল্ম (শরয়ী জ্ঞান) অণ্বেষণ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দেন। যখনই কোন একদল মানুষ আল্লাহর গৃহসমূহের কোন এক গৃহে (মসজিদে) সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং আপোসে তা অধ্যয়ন করে তখনই ফিরিশতাবর্গ তাদেরকে পরিবেষ্টিত করে নেন, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, করুণা তাদেরকে আচ্ছাদন করে নেয় এবং তাদের কথা আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশতাবর্গের মধ্যে আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল পশ্চাদ্বর্তী করেছে, তাকে তার বংশ অগ্রবর্তী করতে পারে না।” (মুসলিম ৭০২৮, বুখারী শিরোনামে, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, হাকেম) উক্ত রাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, সে তার অনুসারীদের সমতুল্য নেকীর অধিকারী হবে; তাতে তাদের নেকীর কিছুই হ্রাস পাবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০) উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব রকম আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; সাদকাহ জারিয়াহ (বহমান দান খয়রাত, মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) অথবা ইল্ম (জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দু’আ করতে থাকে।” (মুসলিম ৪৩১০ প্রমুখ) আবু হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল ও পুণ্যকর্মসমূহ হতে নিশ্চিতভাবে যা এসে তার সাথে মিলিত হয় তা হল; সেই ইল্ম, যা সে শিক্ষা করে প্রচার করেছে অথবা নেক সন্তান যাকে রেখে সে মারা গেছে, অথবা কুরআন শরীফ যা সে মীরাসরূপে ছেড়ে গেছে, অথবা মসজিদ যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে, অথবা মুসাফিরখানা যা সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে, অথবা পানির নালা যা সে (সেচ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে) প্রবাহিত করে গেছে, অথবা সাদকাহ যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে এসব কর্মের সওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার সাথে এসে মিলিত হবে।” (ইবনে মাজাহ ২৪২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৩৪৪৮, ইবনে খুযাইমাহ ২৪৯০ ভিন্ন শব্দে, সহীহ তারগীব ১০৭) উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “পৃথিবী অভিশপ্ত এবং অভিশপ্ত তার সকল বস্তু। তবে আল্লাহর যিকর ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়, এবং আলেম (দ্বীন শিক্ষক) ও তালেবে ইলম (দ্বীন শিক্ষার্থী অভিশপ্ত) নয়।” (তিরমিযী ২৩২২, ইবনে মাজাহ ৪১১২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭০৮, সহীহ তারগীব ৭০) আবূ উমামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আলেমের ফযীলত আবেদের উপর ঠিক সেই রূপ, যেরূপ আমার ফযীলত তোমাদের উপর।” তারপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন, তাঁর ফিরিশতাকুল, আসমান-যমীনের সকল বাসিন্দা এমনকি গর্তের মধ্যে পিপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানবমন্ডলীর শিক্ষাগুরুদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দু’আ করে থাকে।” (তিরমিযী ২৬৮৫, সঃ তারগীব ৭৭) উবাদাহ বিন স্বামেত (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সে ব্যক্তি আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান দেয় না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার চেনে না।” (আহমাদ ২২৭৫৫, ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৯৫) হুযাইফাহ বিন ইয়ামান (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ইলমের (শরয়ী জ্ঞানের) মর্যাদা ইবাদতের মর্যাদা অপেক্ষা উচ্চতর। আর তোমাদের শ্রেষ্ঠতম দ্বীন হল সংযমশীলতা। (পরহেযগারী; অর্থাৎ, সর্বপ্রকার অবৈধ, সন্দিগ্ধ ও ঘৃণিত আচরণ, কর্ম ও বস্তু থেকে নিজেকে সংযত রাখা।) (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৩৯৬০, বাযযার ২৯৬৯, সহীহ তারগীব ৬৫) মুআয বিন আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন ইল্ম শিক্ষা দেয়, তার জন্য রয়েছে সেই ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব, যে সেই ইল্ম অনুযায়ী আমল করে। এতে আমলকারীরও সওয়াব কিঞ্চিৎ পরিমাণ হ্রাস হবে না।” (ইবনে মাজাহ ২৪০, সহীহ তারগীব ৭৬) আবূ দার্দা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে, যাতে সে জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর ফিরিশতাবর্গ তালেবে ইলমের জন্য তার কাজে প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি বিছিয়ে দেন। অবশ্যই আলেম ব্যক্তির জন্য আকাশ-পৃথিবীর সকল বাসিন্দা এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আবেদের উপর আলেমের ফযীলত ঠিক তেমনি, যেমন সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জের উপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত। উলামা সম্প্রদায় পয়গম্বরদের উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইল্মের (দ্বীনী জ্ঞানভান্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে পর্যাপ্ত অংশ লাভ করল।” (আবু দাঊদ ৩৬৪৩, তিরমিযী ২৬৮২, ইবনে মাজাহ ২২৩, ইবনে হিব্বান ৮৮, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৬৯৬, সহীহ তারগীব ৬৭) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির শ্রীবৃদ্ধি করুন, যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে (আমার কোন) হাদীস শুনে যথাযথরূপে হুবহু অপরকে পৌঁছে দেয়। কেননা, যাকে হাদীস বর্ণনা করা হয় এমনও হতে পারে যে, সে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও স্মৃতিধর।” (আবূ দাঊদ ৩৬৬২, তিরমিযী ২৬৫৬, ইবনে মাজাহ ২৩০, ইবনে হিব্বান, সহীহ তারগীব ৮৩) আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (হজ্জের খুতবায়) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে (এই বাণী বা ইল্ম) পৌঁছে দেয়। সম্ভবতঃ উপস্থিত ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাছে তা পৌঁছে দেবে, যে তার থেকে বেশী স্মৃতিধর।” (বুখারী ৬৭, ১০৪, ১০৫, মুসলিম ৪৪৭৭) আবূ যায়েদ আমর ইবনে আখত্বাব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন, অতঃপর মিম্বরে চড়ে ভাষণ দিলেন। শেষ পর্যন্ত যোহরের সময় হয়ে গেল। সুতরাং তিনি নীচে নামলেন ও নামায পড়লেন। তারপর আবার মিম্বরে চাপলেন (ও ভাষণ দানে প্রবৃত্ত হলেন) শেষ পর্যন্ত আসরের সময় হয়ে গেল। তিনি পুনরায় নীচে অবতরণ করলেন ও নামায পড়লেন। অতঃপর তিনি আবার মিম্বরে উঠলেন এবং খুতবা পরিবেশনে ব্রতী হলেন, শেষ পর্যন্ত সূর্য অস্ত গেল। সুতরাং অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে সমস্ত বিষয়গুলি তিনি আমাদেরকে জানালেন। অতএব আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বড় জ্ঞানী, যিনি এসব কথাগুলি সবার চাইতে বেশি মনে রেখেছেন।’ (মুসলিম ৭৪৪৯) স্বাফওয়ান বিন আস্সাল মুরাদী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এলাম। তিনি মসজিদে তাঁর এক লাল রঙের চাদরে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ইল্ম অন্বেষণ করতে এলাম।’ আমার এ কথা শুনে তিনি বললেন, “ইল্ম অন্বেষী (দ্বীন শিক্ষার্থী) কে আমি স্বাগত জানাই। অবশ্যই ইল্ম অন্বেষীকে ফিরিশতাগণ তাঁদের পক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করে নেন। অতঃপর একে অন্যের উপর আরোহণ করেন। অনুরূপভাবে তাঁরা নিম্ম আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যান। এতদ্বারা তাঁরা তার ঐ ইল্ম অন্বেষণের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকেন।” (আহমাদ ১৮০৯৩, ত্বাবারানী ৭১৯৬, ইবনে হিব্বান, হাকেম, ইবনে মাজাহ ২২৬ ভিন্ন শব্দে, সহীহ তারগীব ৭১) আবু উমামা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কেবলমাত্র কল্যাণমূলক কিছু (দ্বীন) শিক্ষা করা অথবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মসজিদের প্রতি যাত্রা করে, তার জন্য (তার আমলনামায়) এক পূর্ণ হজ্জের সমপরিমাণ নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়।” (ত্বাবারানী ৭৩৪৬, সহীহ তারগীব ৮৬) আবু হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে আসে, এবং তার উদ্দেশ্য কেবল কল্যাণমূলক (দ্বীনী ইল্ম) শিক্ষা করা অথবা দেওয়াই হয়, তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদায় সমুন্নত হয়। আর যে ব্যক্তি এ ছাড়া ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে আসে, সে সেই ব্যক্তির সমতুল্য যে পরের আসবাব-পত্রের প্রতি তাকিয়ে থাকে।” (ইবনে মাজাহ ২২৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৬৯৮, সহীহ তারগীব ৮২) কা’ব বিন মালিক (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০) জাবের (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা উলামাগণের সাথে তর্ক-বাহাস করার উদ্দেশ্যে ইল্ম শিক্ষা করো না, ইল্ম দ্বারা মূর্খ লোকেদের সাথে বাগ্‌বিতণ্ডা করো না এবং তদ্বারা আসন, পদ বা নেতৃত্ব) লাভের আশা করো না। কারণ, যে ব্যক্তি তা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (ইবনে মাজাহ ২৫৪, ইবনে হিব্বান ৭৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭১, সহীহ তারগীব ১০১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন এমন ইল্ম অন্বেষণ করে যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা হয়, যদি তা সে কেবলমাত্র পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যেই অন্বেষণ করে তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না।” (আহমাদ ৮৪৫৭, আবু দাঊদ ৩৬৬৬, ইবনে মাজাহ ২৫২, ইবনে হিব্বান ৭৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৬০, তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনে মাজাহ ২৬৪, ইবনে হিব্বান, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৪৩, হাকেম অনুরূপ।) ইবনে মাজার এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি তার সংরক্ষিত (ও জানা) ইল্ম গোপন করবে, সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন মুখে আগুনের লাগাম দেওয়া অবস্থায় হাযির করা হবে।” (ইবনে মাজাহ ২৬১, সহীহ তারগীব ১১৫) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইল্ম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইল্ম তুলে নেবেন (অর্থাৎ, আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ৭৩০৭, মুসলিম ৬৯৭১) ইবনে মসঊদ (রাঃ) ‘তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন তোমাদেরকে ফিতনা-ফাসাদ গ্রাস করে ফেলবে? যাতে শিশু প্রতিপালিত (বড়) হবে এবং বড় বৃদ্ধ হবে, (তা সকলের অভ্যাসে পরিণত হবে) আর তাকে সুন্নাহ (দ্বীনের তরীকা) মনে করা হবে। পরন্তুতার যদি কোনদিন পরিবর্তন সাধন করা হয় তাহলে লোকেরা বলবে, ‘এ কাজ গর্হিত!’ তাঁকে প্রশ্ন করা হল, ‘(হে ইবনে মসঊদ!) এমনটি কখন ঘটবে?’ তিনি বললেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে আমানতদার লোক কম হবে ও আমীর (বা নেতার সংখ্যা) বেশী হবে, ফকীহ (বা প্রকৃত আলেমের সংখ্যা) কম হবে ও ক্বারী (কুরআন পাঠকারীর) সংখা বেশী হবে, দ্বীন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে এবং আখেরাতের আমল দ্বারা পার্থিব সামগ্রী অনুসন্ধান করা হবে।’ (আব্দুর রাযযাক ২০৭৪২, ইবনে আবী শাইবা ৩৭১৫৬, সহীহ তারগীব ১১১)

【2】

ইল্ম লেখার গুরুত্ব

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট যা কিছু শুনতাম, সবই লিখে নিতাম মুখস্থ করার উদ্দেশ্যে। অতঃপর কুরাইশদের কিছু লোক আমাকে (লিখতে) নিষেধ করলেন আর বললেন, ‘আপনি সব কিছুই লেখেন যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট শুনেন তিনি তো একজন মানুষ, রাগান্বিত অবস্থায়ও বলেন এবং খুশী অবস্থায়ও বলেন।’ সুতরাং আমি লেখা থেকে বিরত থাকি অতঃপর আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর আঙুল দ্বারা নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তুমি লেখো যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম এ (মুখ) হতে সত্য ছাড়া অন্য কিছুই বের হয় না। (আহমাদ ৬৫১০, আবু দাউদ ৩৬৪৬, হাকেম ৩৫৭, ইবনে আবী শায়বা ২৬৪২৮, দারেমী ৪৮৪)

【3】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নামে মিথ্যা বলা

আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২) সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী ১০৯) মুগীরাহ বিন শু’বাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের একজন।” (মুসলিম, সহীহুল জামে’ ৬১৯৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে, যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬) উক্ত আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)

【4】

ফতোয়া সম্বন্ধে

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে যে ইল্ম দান করেছেন তা তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মত তুলে নেবেন না। বরং ইল্ম-ওয়ালা (বিজ্ঞ) উলামা তুলে নিয়ে ইল্ম তুলে নেবেন। এমতাবস্থায় যখন কেবল জাহেলরা অবশিষ্ট থাকবে, তখন লোকেরা তাদেরকেই ফতোয়া জিজ্ঞাসা করবে। ফলে তারা নিজেদের রায় দ্বারা ফতোয়া দেবে, যাতে তারা নিজেরা ভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ১০১, ৭৩০৭, মুসলিম ৬৯৭১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুলকর্ম করে) তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮) আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন ইল্ম (জ্ঞান) গোপন করে, কিয়ামতে আল্লাহ তার মুখে আগুনের লাগাম দেবেন।” (হাকেম ৩৪৬, ইবনে হিব্বান ৯৬) ওয়াবেস্বাহ বিন মা’বাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তুমি তোমার হৃদয়ের কাছে ফতোয়া নাও, যদিও মুফতীরা তোমাকে ফতোয়া দিয়েছে।” (তারীখুল কাবীর বুখারী, আহমাদ ১৮০০১, দারেমী ২৫৩৩, সহীহুল জামে’ ৯৪৮)

【5】

স্বঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ

(লৌকিকতার বশবর্তী হয়ে অথবা সুনাম ও প্রশংসার লোভে সাধ্যাতীত বা কষ্টসাধ্য) এমন কাজ করা বা কথা বলা নিষিদ্ধ, যাতে কোন মঙ্গল নেই। আল্লাহ পাক বলেন, ﴿قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ﴾ অর্থাৎ, বল, আমি উপদেশের জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সূরা স্বাদ ৮৬) উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।’ (বুখারী ৭২৯৩) মাসরূক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন ‘হে লোক সকল! যে ব্যক্তির কিছু জানা থাকে, সে যেন তা বলে। আর যার জানা নেই, সে যেন বলে, ‘আল্লাহই ভালো জানেন।’ কারণ তোমার অজানা বিষয়ে ‘আল্লাহই ভালো জানেন’ বলাও এক প্রকার ইল্ম (জ্ঞান)। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে বলেছেন, “বল, আমি উপদেশের জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা সা’দ ৮৬)। (বুখারী ৪৮০৯, মুসলিম ৭২৪৪)

【6】

ইল্ম অনুযায়ী আমল

উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের মুনাফিকদের অধিকাংশ হল ক্বারীর দল।” (আহমাদ ১৭৩৬৭, ত্বাবারানী ১৪২৫৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৬৯৬০, সঃ জামে’ ১২০৩) আবূ বার্যাহ আসলামী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “কিয়ামতের দিন ততক্ষণ পর্যন্ত কোন বান্দার পা সরবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তার আয়ু কী কাজে ব্যয় করেছে, তার ইল্ম দ্বারা কী আমল করেছে, তার সম্পদ কোথা হতে অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে, তার দেহ কোথায় ধ্বংস করেছে?---এসব সম্পর্কে। (তিরমিযী ২৪১৭, দারেমী ৫৩৭, সহীহুল জামে’৭৩০০)

【7】

ইল্মের নামে অর্থোপার্জন

আবূ সাঈদ খুদরী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮) আবু দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২) উবাই বিন কা’ব আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “এই উম্মতকে স্বাচ্ছন্দ্য, সমুন্নতি, দ্বীন সহ সুউচ্চ মর্যাদা, দেশসমূহে তাদের ক্ষমতা বিস্তার এবং বিজয়ের সুসংবাদ দাও। কিন্তু যে ব্যক্তি পার্থিব কোন স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরকালের কর্ম করবে তার জন্য পরকালে প্রাপ্য কোন অংশ নেই।” (আহমাদ ২১২২৪, ইবনে মাজাহ, হাকেম, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান ৬৮৩৩ ইবনে হিব্বান ৪০৫, সহীহ তারগীব ২১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।” (আবু দাঊদ ৩৬৬৬, আহমাদ ৮৪৫৭, ইবনে মাজাহ ২৫২, ইবনে হিব্বান ৭৮)