17. হক ও অধিকার অধ্যায়
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অধিকার, তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ, তার মাহাত্ম্য ও শব্দাবলী
আল্লাহ তাআলা বলেন, إنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيماً নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। (সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত) আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র আ’স (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশটি রহমত (করুণা) অবতীর্ণ করবেন।” (মুসলিম ৮৭৫ নং) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা জুমআর দিন আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়। যেহেতু ক্ষণকাল পূর্বে জিবরীল তাঁর প্রতিপালক আয্যা অজাল্লার নিকট থেকে আগমন ক’রে বললেন, ‘(হে নবী!) পৃথিবীর বুকে যে কোন মুসলিম তোমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আমি তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করব এবং আমার ফেরেশতাবর্গ তার জন্য ১০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” (ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব ১৬৬২ নং) আনাস বিন মালিক (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, (তার বিনিময়ে) সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ মোচন করেন এবং তাকে দশটি মর্যাদায় উন্নীত করেন।” (নাসাঈ ১২৯৭) আমের বিন রাবীআহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে খুতবায় বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আমার উপর যত দরূদ পাঠ করবে, ফেরেশতা তার জন্য তত ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবেন। সুতরাং বান্দা চাহে তা কম করুক অথবা বেশী করুক।” (আহমাদ ১৫৬৮০, ইবনে মাজাহ ৯০৭, সহীহ তারগীব ১৬৬৯ নং) আবূ উমামাহ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “---যে ব্যক্তি যত বেশী আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি (বেহেশতী) মর্যাদায় তত বেশী আমার নিকটবর্তী হবে।” (বাইহাক্বী, সহীহ তারগীব ১৬৭৩ নং) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।” (তিরমিযী ৪৮৪ নং, হাসান, সঃ তারগীব ১৬৬৮, সঃ মাওয়ারিদ ২০২৭ নং) ইবনে আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়তে ভুল করল, সে আসলে বেহেশ্তের পথ ভুল করল।” (ইবনে মাজাহ ৯০৮, ত্বাবারানী ১২৬৪৮, সহীহ তারগীব ১৬৮২ নং) আওস ইবনে আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম ক’রে দিয়েছেন।” (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাঊদ ১৫৩৩ নং, বিশুদ্ধ সানাদ) মালিক বিন হাসান বিন মালিক বিন হুয়াইরিষ তাঁর পিতা তিনি (হাসান) তাঁর (মালেকের) পিতামহ (মালিক বিন হুয়াইরিষ) হতে বর্ণনা করে বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বরে চড়লেন। প্রথম ধাপে চড়েই বললেন, “আমীন।” অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে চড়ে বললেন, “আমীন” অনুরূপ তৃতীয় ধাপেও চড়ে বললেন, “আমীন।” অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বললেন, “আমার নিকট জিবরীল উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রমযান পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না আল্লাহ তাকে দূর করেন।’ তখন আমি (প্রথম) ‘আ-মীন’ বললাম। তিনি আবার বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাকে দোযখে যেতে হবে, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (দ্বিতীয়) ‘আ-মীন’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘যার নিকট আপনার (নাম) উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (তৃতীয়) ‘আমীন’ বললাম।” (ইবনে হিব্বান ৪০৯, ৯০৭, সহীহ তারগীব ৯৮২ নং) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ, ‘স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলল না।) (তিরমিযী ৩৫৪৫ নং, হাসান) উক্ত রাবী তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং) উক্ত রাবী তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে কোন ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” (আবূ দাঊদ ২০৪৩, বিশুদ্ধ সানাদ) (এর ধরন আল্লাহই জানেন। অবশ্য এর অর্থ এ নয় যে, সরাসরি তিনি শুনতে পান বা তাঁর জবাব কেউ শুনতে পায়।) সুহাইল একদা (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।’ (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পৃথিবীতে মহান আল্লাহর ভ্রমণরত বহু ফেরেশতা রয়েছেন, যাঁরা আমার উম্মতের নিকট হতে আমাকে সালাম পৌঁছে দেন।” (আহমাদ ৩৬৬৬, ৪২১০, ৪৩২০, নাসাঈ ১২৮২, ইবনে হিব্বান ৯১৪, সঃ তারগীব ১৬৬৪ নং) আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।” (তিরমিযী ৩৫৪৬ নং, হাসান সহীহ) আবূ যার্র (রাঃ) একদা বের হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এলাম। তিনি বললেন, “তোমাদেরকে কি বলে দেব না, সবচেয়ে বড় বখীল কে?” সকলে বলল, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না, সেই হল সব চাইতে বড় বখীল।” (ইবনে আবী আস্বেম, সহীহ তারগীব ১৬৮৪ নং) ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দু’আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ ক’রে দু’আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।” (আবু দাঊদ ১৪৮৩, তিরমিযী ৩৪৭৭ নং) উমার (রাঃ) ও আলী (রাঃ) ‘প্রত্যেক দুআ ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও যমীনের মাঝে লটকে থাকে, (আকাশে ওঠে না বা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না) যতক্ষণ না নবীর উপর দরূদ পাঠ করা হয়।’ (তিরমিযী ৪৮৬, ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব ১৬৭৫, ১৬৭৬ নং) আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায়ই এমন কোন মজলিসে বসে যেখানে তারা মহান আল্লাহর যিক্র করে না এবং নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরূদ পাঠ করে না, সেই সম্প্রদায়েরই ক্ষতিকর পরিণাম হবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে আযাব দেবেন, নচেৎ ইচ্ছা করলে মাফ করে দেবেন।” (আবূ দাউদ ৪৮৫৮, সহীহ তিরমিযী ২৬৯১, বাইহাকী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, সিলসিলাহ সহীহাহ ৭৪, আর হাদীসের শব্দাবলী তিরমিযীর।) আবূ মুহাম্মাদ কা’ব ইবনে উজরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) আমাদের নিকট এলেন। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ ‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’ যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ তথা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযেল কর; যেমন বরকত নাযেল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।” (বুখারী ৩৩৭০, ৬৩৫৭, মুসলিম ৯৩৫) আবূ মাসঊদ বদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সা’দ ইবনে উবাদা (রাঃ) এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এলেন। বাশীর ইবনে সা’দ তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আমাদেরকে আপনার প্রতি দরূদ পড়তে আদেশ করেছেন, কিন্তু কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিরুত্তর থাকলেন। পরিশেষে আমরা আশা করলাম, যদি (বাশীর) তাঁকে প্রশ্ন না করতেন (তো ভাল হত)। ক্ষণেক পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমরা বলো, ‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ তথা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। আর তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযেল কর; যেমন বরকত নাযেল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়। আর সালাম কেমন, তা তো তোমরা জেনেছ।” (মুসলিম ৯৩৪, আবূ দাঊদ ৯৮২, তিরমিযী ৩২২০ নং) আবূ হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলো, “আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। এবং তুমি মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত । (বুখারী ৩৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম ৯৩৮ নং)
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন, وَوَصَّيْنَا الأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً অর্থাৎ, আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি। (সূরা আনকাবূত ৮ আয়াত) তিনি আরো বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيماً وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيراً অর্থাৎ, তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভর্ৎসনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, وَوَصَّيْنَا الأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْك অর্থাৎ, আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী কষ্টের পর কষ্ট বরণ ক’রে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তার স্তন্যপান ছাড়াতে দু’বছর অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (সূরা লুকমান ১৪ আয়াত) আবূ আব্দুর রাহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন্ আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কোন্টি?’ তিনি বললেন, “পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কোন্টি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী ৫২৭ নং, মুসলিম ২৬২ নং, তিরমিযী, নাসাঈ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন সন্তান (তার) পিতার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। কিন্তু সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাসরূপে পায় এবং তাকে কিনে মুক্ত ক’রে দেয়। (তাহলে তা পরিশোধ হতে পারে।)” (মুসলিম ৩৮৭২ নং) উক্ত সাহাবী (রাঃ) তিনি বলেন, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা।” সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা।” সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা।” সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, “তোমার বাপ।” (বুখারী ৫৯৭১, মুসলিম ৬৬৬৪ নং) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘হে আল্লাহর রসূল! সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাপ, তারপর যে তোমার সবচেয়ে নিকটবর্তী।” (মুসলিম ৬৬৬৫ নং) উক্ত সাহাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল; একজনকে অথবা দু’জনকেই। অতঃপর সে (তাদের খিদমত ক’রে) জান্নাত যেতে পারল না।” (মুসলিম ৬৬৭৪ নং) মালিক বিন হাসান বিন মালিক বিন হুয়াইরিষ তাঁর পিতা তিনি (হাসান) তাঁর (মালেকের) পিতামহ (মালিক বিন হুয়াইরিষ) হতে বর্ণনা করে বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বরে চড়েন। প্রথম ধাপে চড়েই বললেন, “আমীন।” অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে চড়ে বললেন, “আমীন” অনুরূপ তৃতীয় ধাপেও চড়ে বললেন, “আ-মীন।” অতঃপর তিনি (এর রহস্য ব্যক্ত করে) বললেন, “আমার নিকট জিবরীল উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রমযান পেল অথচ পাপমুক্ত হতে পারল না আল্লাহ তাকে দূর করেন।’ তখন আমি (প্রথম) ‘আ-মীন’ বললাম। তিনি আবার বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে জীবিতাবস্থায় পেল অথচ তাকে দোযখে যেতে হবে, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (দ্বিতীয়) ‘আ-মীন’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘যার নিকট আপনার (নাম) উল্লেখ করা হয় অথচ সে আপনার উপর দরূদ পাঠ করে না, আল্লাহ তাকেও দূর করুন।’ এতে আমি (তৃতীয়) ‘আমীন’ বললাম।” (ইবনে হিব্বান ৯০৭, সহীহ তারগীব ৯৯৬ নং) ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়ে দেখবেন না; পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষবেশিনী বা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারিণী মহিলা এবং মেড়া পুরুষ; (যে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের চরিত্রহীনতা ও নোংরামিতে চুপ থাকে এবং বাধা দেয় না।) আর তিন ব্যক্তি বেহেশ্তে যাবে না; পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।” (আহমাদ ৬১৮০, নাসাঈর কুবরা ২৩৪৩, হাকেম ২৫৬২, সহীহুল জামে’ ৩০৭১ নং) আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনুল আস (রাঃ) এক ব্যক্তি আল্লাহর নবীর নিকট এসে বলল, ‘আমি আপনার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে নেকী পাওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত এবং জিহাদের বায়আত করছি।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কি কেউ জীবিত আছে?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ; বরং দু’জনই জীবিত রয়েছে।’ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে নেকী পেতে চাও?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে তাদের খিদমত কর।” (বুখারী ৫৯৭২, মুসলিম ৬৬৭১, আর শব্দগুলি মুসলিমের) উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে জিহাদ করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, “তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছে?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “অতএব তুমি তাদের (সেবা করার) মাধ্যমে জিহাদ কর।” (বুখারী ৩০০৪, মুসলিম ৬৬৬৮ নং) মুআবিয়া বিন জাহেমাহ সুলামী একদা জাহেমাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি জিহাদ করব মনস্থ করেছি, তাই আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, “তোমার মা আছে কি?” জাহেমাহ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, “তাহলে তুমি তার খিদমতে অবিচল থাক। কারণ, তার পদতলে তোমার জান্নাত রয়েছে।” (আহমাদ ১৫৫৩৮, নাসাঈ ৩১০৪, ইবনে মাজাহ ২৭৮১, বাইহাক্বী ১৮২৮৮, হাকেম ২৫০২ নং) আসমা বিন্তে আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় (আমার সম্পদের লোভ রেখে) আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।” (বুখারী ২৬২০, ৩১৮৩, ৫৯৭৯, মুসলিম ২৩৭১-২৩৭২ নং) ইবনে উমার (রাঃ) ‘আমার বিবাহ বন্ধনে এক স্ত্রী ছিল, যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু (আমার পিতা) উমার তাকে অপছন্দ করতেন। সুতরাং তিনি আমাকে বললেন, “তুমি ওকে ত্বালাক দাও।” কিন্তু আমি (তা) অস্বীকার করলাম। অতঃপর উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এলেন এবং এ কথা উল্লেখ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে) বললেন, “তুমি ওকে ত্বালাক দিয়ে দাও।” (সুতরাং আমি তাকে ত্বালাক দিয়ে দিলাম।) (আবূ দাঊদ ৫১৪০, তিরমিযী ১১৮৯, হাসান সহীহ সূত্রে) আবূ দারদা (রাঃ) এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, ‘আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা তাকে ত্বালাক দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।’ আবূ দার্দা বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “পিতা-মাতা জান্নাতের দুয়ারসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দুয়ার। সুতরাং তুমি যদি চাও, তাহলে এ দুয়ারকে নষ্ট কর অথবা তার রক্ষণাবেক্ষণ কর।” (তিরমিযী ১৯০০, হাসান সহীহ সূত্রে) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, “একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দেন; যা করলে আমি জান্নাত প্রবেশ করতে পারব।’ তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক (অংশী) করো না; যদিও তোমাকে সে ব্যাপারে শাস্তি দেওয়া হয় এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। তোমার মাতা-পিতার আনুগত্য কর; যদিও তারা তোমাকে তোমার ধন-সম্পদ এবং সমস্ত কিছু থেকে দূর করতে চায়। আর ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করো না; কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়।” (ত্বাবারানীর আউসাত্ব ৭৯৫৬, সহীহ তারগীব ৫৬৯ নং) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তিন জনের দু‘আ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয় ঃ (১) নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, (২) মুসাফিরের দুআ এবং (৩) ছেলের জন্য মাতা-পিতার (দুআ বা) বদ্দুআ।” (আবূ দাউদ ১৫৩৮, তিরমিযী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ইবনে মাজাহ ৩৮৬২, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৯৬ নং) আব্দুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে রয়েছে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলার সন্তুষ্টি, আর তাদের অসন্তুষ্টিতে রয়েছে তাঁর অসন্তুষ্টি।” (তিরমিযী ১৮৯৯, হাকেম ৭২৪৯, বাযযার ২৩৯৪, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ৫১৬ নং) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি অনেক (বড়) গোনাহ করে ফেলেছি। আমার কি কোন তওবাহ (প্রায়শ্চিত্ত) আছে?’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মা-বাপ আছে কি?” লোকটি বলল, ‘জী না।’ তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমার খালা আছে কি?” লোকটি বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি তার সেবাযত্ন কর।” (আহমাদ ৪৬২৪, তিরমিযী ১৯০৪, ইবনে হিব্বান ৪৩৫, হাকেম ৭২৬১ নং) বারা ইবনে আযেব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “খালা মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।” (তিরমিযী ১৯০৪) আবূ বাকরাহ নুফাই ইবনে হারেষ (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কাবীরাহ গোনাহগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না?” সবাই বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “(সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।” এতক্ষণ তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসে বললেন, “শুনে রাখ, আর মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।” এ কথাটি তিনি পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, ‘এবার যদি তিনি চুপ হতেন!’ (বুখারী ২৬৫৪, ৫৯৭৬, মুসলিম ২৬৯ নং) আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, “কাবীরাহ গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।” (বুখারী ৬৬৭৫, ৬৮৭০ নং) উক্ত সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোন ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ ক’রে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা-কে গালি দেয়।” (বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ২৭৩ নং) অন্য এক বর্ণনায় আছে, “কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, “সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ ক’রে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি দেয়।” আবূ ঈসা মুগীরা বিন শু’বাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য (তিনটি কর্মকে) হারাম করেছেন; মায়ের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা ও অনধিকার কিছু প্রার্থনা করা এবং কন্যা জীবন্ত প্রোথিত করা। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন (তিনটি কর্ম); ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা (বা জনরবে থাকা), অধিক (অনাবশ্যক) প্রশ্ন করা (অথবা প্রয়োজনের অধিক চাওয়া) এবং ধন-মাল বিনষ্ট (অপচয়) করা।” (বুখারী ৫৯৭৫, মুসলিম ৪৫৮০ নং) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “দুটি (পাপ) দরজা এমন রয়েছে, যার শাস্তি দুনিয়াতেই তরান্বিত করা হয়; বিদ্রোহ ও পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ।” (হাকেম ৭৩৫০, সহীহুল জামে’ ২৮১০ নং) ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যার সাথে পিতার মৈত্রী সম্পর্ক ছিল, তা অক্ষুণ্ণ রাখা সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ।” আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার আব্দুল্লাহ (রাঃ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এক বেদুঈন মক্কার পথে তাঁর সাথে মিলিত হল। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমার তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার উপর সওয়ার ছিলেন তার উপর চাপিয়ে নিলেন। আর যে পাগড়ী তাঁর মাথায় ছিল, তিনি তা তাকে দিয়ে দিলেন। ইবনে দীনার বলেন, আমরা বললাম, ‘আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, এরা তো বেদুঈন, এরা তো স্বল্পেই তুষ্ট হয় (ফলে এর সাথে এত কিছু করার কী প্রয়োজন)?’ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বললেন, ‘এর পিতা উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকী।” অন্য এক বর্ণনায় ইবনে দীনারের সূত্রে ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনে উমারের মক্কা যাওয়ার সময় তার সাথে একটি গাধা থাকত। তিনি যখন উটের উপরে চেপে বিরক্ত হয়ে পড়তেন, তখন (এক ঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য) ঐ গাধার উপর চেপে বিশ্রাম নিতেন। তাঁর একটি পাগড়ী ছিল, তিনি তা মাথায় বাঁধতেন। একদিন তিনি গাধার উপর সওয়ার ছিলেন, এমতাবস্থায় এক বেদুঈন তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন, ‘তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও?’ সে বলল, ‘অবশ্যই!’ অতঃপর তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে বললেন, ‘এর উপর আরোহন কর’ এবং তাকে পাগড়ীটি দিয়ে বললেন, ‘এটি তোমার মাথায় বাঁধ।’ (এ দেখে) তাঁকে তাঁর কিছু সাথী-সঙ্গী বলল, ‘আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনি এই বেদুঈনকে ঐ গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর চড়ে আপনি বিশ্রাম নিতেন এবং তাকে ঐ পাগড়ীটিও দিলেন, যেটি আপনি নিজ মাথায় বাঁধতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ।” আর এর পিতা উমার (রাঃ) এর বন্ধু ছিলেন। এ সমস্তগুলি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। (৬৬৭৭-৬৬৭৯ নং) ইবনে আব্বাস (রাঃ) সা’দ বিন উবাদাহর মা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার অনুপস্থিত থাকা কালে আমার আম্মা মারা গেছেন। এখন যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু দান করি, তাহলে তিনি উপকৃত হবেন কি?’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হ্যাঁ হবে।” সা’দ বললেন, ‘তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আমার মিখরাফের বাগান তাঁর নামে সদকাহ করলাম।’ (বুখারী ২৭৫৬ নং প্রমুখ)
আত্মীয়তা অক্ষুন্ন রাখার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত) তিনি আরো বলেন, وَاتَّقُوا اللهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَام অর্থাৎ, সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট চাওয়া এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর। (সূরা নিসা ১ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন, وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ অর্থাৎ, আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুন্ন রাখে। (সূরা রা’দ ২১ আয়াত) وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ অর্থাৎ, যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস। (সূরা রা’দ ২৫ আয়াত) আবূ আইয়ূব খালেদ ইবনে যায়েদ আনসারী (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।” (শব্দাবলী মুসলিমের ১১৫ নং) عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ فَقَالَ الْقَوْمُ مَا لَهُ مَا لَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَرَبٌ مَا لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ বুখারীতে আছে, একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলল, ‘আমাকে এমন এক আমলের সন্ধান দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ লোকেরা বলল, ‘আরে, কী হল ওর কী হল?’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “ওর কোন প্রয়োজন আছে।” (অতঃপর ঐ লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন,) “তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সাথে কাউকেও শরীক করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।” (বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮৩ নং) কাতাদাহ (রাঃ) খাষআম গোত্রের এক ব্যক্তি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর কিছু সঙ্গী-সাথীর সাথে ছিলেন। আমি বললাম, আপনিই কি মনে করেন, আপনি রাসূলুল্লাহ?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্ আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, “আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারপর কী?’ তিনি বললেন, “তারপর আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারপর কী?’ তিনি বললেন, “তারপর ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করা।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্ আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণ্য?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করা।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারপর কী?’ তিনি বললেন, “তারপর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারপর কী?’ তিনি বললেন, “তারপর মন্দ কাজের আদেশ ও ভালো কাজে বাধা দান করা।” (আবূ য়্যা’লা ৪৮৩৯, সঃ তারগীব ২৫২২ নং) আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনে মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১, হাকেম ৪২৮৩, সহীহ তারগীব ৬১০ নং) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ৬১৩৮, মুসলিম ?) উক্ত সাহাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ সকল কিছুকে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি সৃষ্টি কাজ শেষ করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক উঠে বলল, ‘(আমার এই দণ্ডায়মান হওয়াটা) আপনার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয়প্রার্থীর দণ্ডায়মান হওয়া।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হ্যাঁ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ সে (রক্ত সম্পর্ক) বলল, ‘অবশ্যই।’ আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমরা চাইলে (এ আয়াতটি) পড়ে নাও; ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত ক’রে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত) (বুখারী ৪৮৩০, ৫৯৮৭, ৭৫০২, মুসলিম ৬৬৮২ নং) বুখারীর ৫৯৮৮ অন্য বর্ণনায় ভিন্ন শব্দ বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, ‘যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে বিচ্ছিন্ন করবেন।” (বুখারী ৫৯৮৯, মুসলিম ৬৬৮৩ নং, শব্দাবলী মুসলিমের) আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, “যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ, এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অনড় থাকবে।” (মুসলিম ৬৬৮৯ নং) আব্দুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সেই ব্যক্তি সম্পর্ক বজায়কারী নয়, যে সম্পর্ক বজায় করার বিনিময়ে বজায় করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক বজায়কারী হল সেই ব্যক্তি, যে কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা কায়েম করে।” (বুখারী ৫৯৯১ নং) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) ‘তোমাদের কেউ যেন পরানুগামী (ইয়েস-ম্যান) না হয়।’ লোকেরা বলল, ‘পরানুগামিতা কী?’ তিনি বললেন, ‘এই বলা যে, আমি লোকেদের অনুগামী। তারা সৎ হলে, আমিও সৎ আর তারা পথভ্রষ্ট হলে আমিও পথভ্রষ্ট। বরং প্রত্যেকের মনকে প্রস্তুত রাখা উচিত যে, লোকে কাফের হলে, সে কাফের হবে না।’ (ত্বাবারানী ৮৬৭৮ নং) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমার সঙ্গে যে আত্মীয়তা ছিন্ন করেছে, তুমি তার সাথে তা বজায় কর, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান কর এবং যে তোমার প্রতি অন্যায়াচরণ করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা ক'রে দাও।” (আহমাদ ১৭৪৫২, হাকেম ৭২৮৫, ত্বাবারানী ১৪২৫৮, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৮০৭৯, সিঃ সহীহাহ ৮৯১ নং) আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তুমি তার সাথে সুসম্পর্ক জুড়ে চল যে তোমার সাথে তা নষ্ট করতে চায়, তার প্রতি সদ্ব্যবহার কর যে তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং হক কথা বল; যদিও তা নিজের বিরুদ্ধে হয়।” (ইবনে নাজ্জার, সহীহুল জামে ৩৭৬৯ নং) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি চায় যে, তার রুযী (জীবিকা) প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে।” (বুখারী ২০৬৭, ৫৯৮৬, মুসলিম ৬৬৮৭-৬৬৮৮ নং) আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, সুন্দর চরিত্র অবলম্বন করা এবং প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার রাখায় দেশ আবাদ থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।” (আহমাদ ২৫২৫৯, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭৯৬৯, সহীহুল জামে ৩৭৬৭ নং) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন “গোপনে দান প্রতিপালকের ক্রোধ দূরীভূত করে, জ্ঞাতি-বন্ধন অক্ষুন্ন রাখে, আয়ু বৃদ্ধি করে। আর পুণ্যকর্ম সর্বপ্রকার কুমরণ থেকে রক্ষা করে।” (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৩৪৪২, সহীহুল জামে ৩৭৬০ নং) আম্র বিন সাহ্ল (রাঃ) আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রাখাতে সম্পদ বৃদ্ধি হয়, পরিজনের মধ্যে সম্প্রীতি থাকে এবং আয়ুষ্কাল বেড়ে যায়।” (ত্বাবারানীর কাবীর ১৭২১, আওসাত্ব ৭৮১০, সহীহুল জামে ৩৭৬৮ নং) আনাস বিন মালিক (রাঃ) ও সুওয়াইদ বিন আমের আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক আর্দ্র রাখ; যদিও তা সালাম দিয়ে হয়।” (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭৯৭২-৭৯৭৩, সহীহুল জামে’ ২৮৩৮ নং) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, মদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সবচেয়ে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বাগানে প্রবেশ ক’রে সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।” (আলে ইমরান ৯২ আয়াত) তখন আবূ তালহা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ ক’রে বলেছেন, “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।” আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান ক’রে দিন।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “আরে! এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার আপন-জনদের মধ্যে তা বন্টন করে দাও।” আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বন্টন ক’রে দিলেন। (বুখারী ১৪৬১, মুসলিম ২৩৬২ নং) উম্মুল মু’মেনীন মায়মূনাহ বিনতে হারেষ (রাঃ) তিনি তাঁর একটি ক্রীতদাসীকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুমতি না নিয়েই মুক্ত করলেন। অতঃপর যখন ঐ দিন এসে পৌঁছল, যেদিন তাঁর কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যাওয়ার পালা, তখন মায়মূনাহ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যে আমার ক্রীতদাসীকে মুক্ত ক’রে দিয়েছি, আপনি কি তা বুঝতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, “তুমি কি (সত্যিই) এ কাজ করেছ?” মায়মূনা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “তুমি যদি ক্রীতদাসীটিকে তোমার মামাদেরকে দিতে, তাহলে তুমি বেশী সওয়াব পেতে।” (বুখারী ২৫৯২, ২৫৯৪, মুসলিম ২৩৬৪ নং ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে মহিলাগণ! তোমরা সাদকাহ কর; যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়।” যায়নাব (রাঃ) বলেন, সুতরাং আমি (আমার স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) এর নিকট এসে বললাম, ‘আপনি গরীব মানুষ, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে সাদকাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব আপনি তাঁর নিকট গিয়ে এ কথা জেনে আসুন যে, (আমি যে, আপনার উপর ও আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করি তা) আমার পক্ষ থেকে সাদকাহ হিসাবে যথেষ্ট হবে কি? নাকি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে আমি অন্যকে দান করব?’ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বললেন, ‘বরং তুমিই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে জেনে এসো।’ সুতরাং আমি তাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তাঁর দরজায় আরও একজন আনসারী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ভাবগম্ভীরতা দান করা হয়েছিল। (তাঁকে সকলেই ভয় করত।) ইতোমধ্যে বিলাল (রাঃ) কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে গিয়ে বলুন, ‘দরজার কাছে দু’জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে যে, তারা যদি নিজ স্বামী ও তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করে, তাহলে তা সাদকাহ হিসাবে যথেষ্ট হবে কি? আর আমরা কে, সে কথা জানাবেন না।’ তিনি প্রবেশ ক’রে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তারা কে?” বিলাল (রাঃ) বললেন, ‘এক আনসারী মহিলা ও যায়নাব।’ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কোন্ যায়নাব?” বিলাল (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আব্দুল্লাহর স্ত্রী।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তাদের জন্য দু’টি সওয়াব রয়েছে, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার সওয়াব এবং সাদকাহ করার সওয়াব।” (বুখারী ১৪৬২, ১৪৬৬, মুসলিম ২৩৬৫ নং) সালমান ইবনে আমের (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “---মিসকীনকে সাদকাহ করলে সাদকাহ (করার সওয়াব) হয়। আর আত্মীয়কে সাদকাহ করলে দু’টি সওয়াব হয় ঃ সাদকাহ করার ও আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার।” (তিরমিযী ৬৫৮, উল্লেখ্য যে, হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ নয় বলে উল্লেখ করা হয়নি।) বর্ণনাকারী আবূ সুফ্য়ান স্বাখ্র ইবনে হার্ব্ (রাঃ) থেকে (রোম-সম্রাট) হিরাক্লের ঘটনা সম্পর্কিত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, হিরাক্ল আবূ সুফিয়ানকে বললেন, ‘তিনি (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) তোমাদেরকে কী নির্দেশ দেন?’ আবূ সুফ্য়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, “তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত পথ পরিত্যাগ কর।” আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়ার, সত্যবাদিতার, চারিত্রিক পবিত্রতার এবং আত্মীয়তা বজায় রাখার আদেশ দেন।’ (বুখারী ৭, ৫৯৮০, মুসলিম ৪৭০৭ নং) সাহাবী (রাঃ) আমি নবুঅতের শুরুর দিকে মক্কায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকটে এলাম এবং বললাম, ‘আপনি কী?’ তিনি বললেন, “আমি নবী।” আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, “আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।” আমি বললাম, ‘কি নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, “জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণরাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।---” (এ হাদীস অন্যত্রে উল্লিখিত হয়েছে।) আবূ যার্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা অদূর ভবিষ্যতে এমন এক এলাকা জয় করবে, যেখানে ক্বীরাত্ব (এক দীনারের ২০ ভাগের একভাগ স্বর্ণমুদ্রা) উল্লেখ করা হয়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তোমরা অচিরে মিসর জয় করবে এবং এটা এমন ভূখণ্ড যেখানে ক্বীরাত্ব (শব্দ) সচরাচর বলা হয়। (সেখানে ঐ মুদ্রা প্রচলিত।) তোমরা তার অধিবাসীদের সাথে ভাল ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সুতরাং যখন তোমরা তা জয় করবে, তখন তার অধিবাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।” অথবা বললেন, “দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে।” (মুসলিম ৬৬৫৭-৬৬৫৮ নং) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল যার অর্থ হল, “তুমি তোমার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক কর।” (সূরা শুআরা ২১৪ আয়াত) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরায়েশ (সম্প্রদায়) কে আহবান করলেন। সুতরাং তারা একত্রিত হল। অতঃপর তিনি সাধারণ ও বিশেষভাবে (সম্বোধন ক’রে) বললেন, “হে বানী আব্দে শাম্স! হে বানী কা’ব ইবনে লুআই! তোমরা নিজেদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাও। হে বানী মুর্রাহ ইবনে কা’ব! তোমরা নিজেদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাও। হে বানী হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দিল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদেরকে দোযখ থেকে বাঁচাও। হে ফাতেমা! তুমি নিজেকে দোযখ থেকে বাঁচাও। কারণ, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের (উপকার-অপকার) কিছুরই মালিক নই। তবে তোমাদের সাথে (আমার) যে আত্মীয়তা রয়েছে তা আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই আর্দ্র রাখব। (পরকালে আমার আনুগত্য ছাড়া আত্মীয়তা কোন কাজে আসবে না।)” (মুসলিম ৫২২ নং) আবূ আব্দুল্লাহ আম্র ইবনে আ’স (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গোপনে নয় প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “অমুক গোত্রের লোকেরা (যারা আমার প্রতি ঈমান আনেনি তারা) আমার বন্ধু নয়। আমার বন্ধু তো আল্লাহ এবং নেক মু’মিনগণ। কিন্তু ওদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই তা আর্দ্র রাখব।” (বুখারী ৫৯৯০, মুসলিম ৫৪১, শব্দ বুখারীর) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, খাদীজা (রাঃ) এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, ততটা ঈর্ষা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি হতো না। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখিনি। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অধিকাংশ সময় তাঁর কথা আলোচনা করতেন এবং যখনই তিনি ছাগল যবাই করতেন, তখনই তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে খাদীজার বান্ধবীদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঠাতেন। আমি তাঁকে মাঝে মধ্যে (রসিকতা ছলে) বলতাম, ‘মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজা ছাড়া আর কোন মেয়েই নেই।’ তখন তিনি (তাঁর প্রশংসা ক’রে) বলতেন, “সে এই রকম ছিল, ঐ রকম ছিল। আর তাঁর থেকেই আমার সন্তান-সন্তুতি।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন বকরী যবাই করতেন, তখন খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এতটা পরিমাণে মাংস পাঠাতেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট হত।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন বকরী যবাই করতেন, তখন বলতেন, “খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এই মাংস পাঠিয়ে দাও।” অন্য এক বর্ণনায় আছে আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদা খাদীজার বোন হালা বিনতে খুআইলিদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করলেন, সুতরাং তিনি আনন্দবোধ করলেন এবং বললেন, “আল্লাহ! হালা বিনতে খুআইলিদ?” এ বর্ণনায় فَارتَاحَ (আনন্দবোধ করলেন) শব্দ এসেছে। আর হুমাইদীর ‘আল-জামউ বাইনাস স্বাহীহাইন’-এ এসেছে فَارتَاعَ শব্দ। অর্থাৎ, তার প্রতি যত্ন নিলেন ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আবূ মুহাম্মাদ জুবাইর ইবনে মুত্বইম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” সুফিয়ান তাঁর বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।” (বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ৬৬৮৪-৬৬৮৫ নং, তিরমিযী) আবূ বাকরাহ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যুলুমবাজী ও (রক্তের) আত্মীয়তা ছিন্ন করা ছাড়া এমন উপযুক্ত আর কোন পাপাচার নেই যার শাস্তি পাপাচারীর জন্য দুনিয়াতেই আল্লাহ অবিলম্বে প্রদান করে থাকেন এবং সেই সাথে আখেরাতের জন্যও জমা করে রাখেন।” (আহমাদ ২০৩৭৪, ২০৩৯৯, বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ ২৯, আবূ দাউদ ৪৯০৪, তিরমিযী ২৫১১, ইবনে মাজাহ ৪২১১, হাকেম ৩৩৫৯, ইবনে হিব্বান ৪৫৫, সহীহুল জামে’ ৫৭০৪ নং) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর আনুগত্য করা হয় এমন আমলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী তাড়াতাড়ি যে আমলের সওয়াব পাওয়া যায়, তা হল আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা। আর যে বদ আমলের শাস্তি সত্বর দেওয়া হয়, তা হল বিদ্রোহ, আত্মীয়তার বন্ধন ছেদন করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া, যা দেশ-মাটিকে মরুময় ক’রে তোলে।” (বাইহাকী ২০৩৬৪, সহীহুল জামে ৫৩৯১ নং)
প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত) ইবনে উমার ও আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত ক’রে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।” (বুখারী ৬০১৪-৬০১৫, মুসলিম ৬৮৫৪ নং) আবূ যার্র (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “হে আবূ যার্র! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।” অন্য এক বর্ণনায় আবূ যার্র বলেন, আমাকে আমার বন্ধু (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) অসিয়ত ক’রে বলেছেন যে, “যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারী) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌঁছে দাও।” (মুসলিম ৬৮৫৫-৬৮৫৬ নং) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! কোন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত (পূর্ণ) মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার প্রতিবেশী অথবা (কোন) ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করেছে, যা সে নিজের জন্য করে।” (মুসলিম ১৮০ নং) ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।” (বুখারীর আদাব ১১২, ত্বাবারানী ১২৫৭৩, হাকেম, বাইহাকী ২০১৬০, সহীহুল জামে ৫৩৮২ নং) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সে আমার প্রতি ঈমান আনে নি, যে ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়ে রাত্রিযাপন করে, অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে এবং এ কথা সে জানে।” (বাযযার, ত্বাবারানী ৭৫০, সহীহুল জামে ৫৫০৫ নং) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন বান্দার ঈমান দুরস্ত হয় না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হৃদয় দুরস্ত হয় এবং তার হৃদয়ও দুরস্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার জিহ্বা দুরস্ত হয়। আর সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা না পায়।” (আহমাদ ১৩০৪৮, ত্বাবারানী ১০৪০১ নং) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।” মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। (বুখারী ৬০১৬, মুসলিম ১৮১ নং) উক্ত সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন। (বুখারী ২৫৬৬, ৬০১৭, মুসলিম ২৪২৬ নং) উক্ত সাহাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, ‘কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ) কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)।’ (বুখারী ২৪৬৩, মুসলিম ৪২১৫ নং) উক্ত রাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ৬০১৮, মুসলিম ১৮২ নং) আবূ জুহাইফা (রাঃ) এক ব্যক্তি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে নিজ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি তোমার আসবাব-পত্র রাস্তায় বের ক’রে ফেলো।’ সে ফিরে গিয়ে তাই করল। তা দেখে পথচারী লোকেরা কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রতিবেশীর কষ্ট দেওয়ার কথা জানানো হল। সুতরাং সকলে ঐ প্রতিবেশীকে অভিশাপ দিতে লাগল। সে তা শুনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে লোকেদের অভিশাপ দেওয়ার কথা জানালে তিনি তাকে বললেন, ‘তাদের আগে আল্লাহ তোমাকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ প্রতিবেশীটি বলল, ‘আমি ওকে আর কষ্ট দেব না।’ অতঃপর অভিযোগকারী মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলে তাকে তার আসবাবপত্র তুলে নিতে আদেশ করলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করলেন। (আবূ দাঊদ ৫১৫৫ আবূ হুরাইরা কর্তৃক, ত্বাবারানী, বাযযার, সঃ তারগীব ২৫৫৮-২৫৫৯ নং) আবূ শুরায়হ খুযায়ী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।” (মুসলিম ১৮৫ নং, কিছু শব্দ বুখারীর) আব্দুর রহমান বিন আবী কুরাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যদি তোমরা চাও যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদেরকে ভালোবাসবেন, তাহলে তোমরা আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ কর, সত্য কথা বল এবং তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কর।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৬৫১৭, সহীহুল জামে ১৪০৯ নং) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিষিদ্ধ ও হারাম জিনিস থেকে বেঁচে থাক, তাহলে তুমি মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় আবেদ (ইবাদতকারী) গণ্য হবে। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন, তাতেই পরিতুষ্ট থাক, তবে তুমিই মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় ধনী হবে। প্রতিবেশীর প্রতি অনুগ্রহ কর, তাহলে তুমি একজন (খাঁটি) মু’মিন বিবেচিত হবে। মানুষের জন্যও তা-ই পছন্দ কর, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ কর, তাহলে তুমি একজন (খাঁটি) মুসলিম গণ্য হবে। আর খুব বেশী হাসবে না, কারণ, অধিক হাসি অন্তরকে মেরে দেয়।” (আহমাদ ৮০৯৫, তিরমিযী ২৩০৫, সহীহুল জামে ৪৫৮০, ৭৮৩৩ নং) আবূ উমামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসিয়ত করছি।” (মাকারিমুল আখলাক, খারাইত্বী, সহীহুল জামে ২৫৪৮ নং) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, “যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।” (বুখারী ২২৫৯, ২৫৯৫, ৬০২০ নং) আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা বেশী বেশী (নফল) নামায পড়ে, সিয়াম রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে দোযখে যাবে।” লোকটি আবার বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা অল্প (নফল) নামায পড়ে, সিয়াম রাখে ও দান-খয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জিভ দ্বারা (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। (তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?)’ তিনি বললেন, “সে বেহেশ্তে যাবে।” (আহমাদ ৯৬৭৫, ইবনে হিব্বান ৫৭৬৪, হাকেম ৭৩০৫, সহীহ তারগীব ২৫৬০ নং) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।” (আহমাদ ৬৫৬৬, তিরমিযী ১৯৪৪, ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, হাকেম, সিঃ সহীহাহ ১০৩ নং) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলল, ‘আমি ভালো কাজ করেছি, না মন্দ কাজ করেছি, তা কীভাবে জানতে পারব?’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি ভাল কাজ করেছ, তাহলে তুমি (সত্যই) ভাল কাজ করেছ। আর যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীর মুখে বলতে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছ, তাহলে তুমি (সত্যই) মন্দ কাজ করেছ।” (আহমাদ ৩৮০৮, ইবনে মাজাহ ৪২২২-৪২২৩, ত্বাবারানী ১০২৮০, সহীহুল জামে ৬১০ নং) আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখন কোন মুসলিম বান্দা মারা যায় এবং তার জন্য নিকটবর্তী তিন ঘর প্রতিবেশী ভালো হওয়ার সাক্ষ্য দেয়, তখন মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার বান্দাদের সাক্ষ্য সেই বিষয়ে গ্রহণ করলাম, যে বিষয় তারা জানে এবং যে বিষয় আমি জানি (ওরা জানে না), সে বিষয়ে ওকে ক্ষমা করে দিলাম।’ (আহমাদ ৮৯৮৯, ৯২৯৫, সঃ তারগীব ৩৫১৬ নং) সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হল চারটি; সাধ্বী স্ত্রী, প্রশস্ত বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী স্ত্রী, সংকীর্ণ বাড়ি এবং খারাপ সওয়ারী (গাড়ি)।” (ইবনে হিব্বান ৪০৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৫৫৬, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৮২ নং) আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, সুন্দর চরিত্র অবলম্বন করা এবং প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার রাখায় দেশ আবাদ থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।” (আহমাদ ২৫২৫৯, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭৯৬৯, সহীহুল জামে ৩৭৬৭ নং) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কী?’ উত্তরে তিনি বললেন, “এই যে, তুমি তাঁর কোন শরীক নির্ধারণ কর -অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” আমি বললাম, ‘এটা তো বিরাট! অতঃপর কোন্ পাপ?’ তিনি বললেন, “এই যে, তোমার সাথে খাবে -এই ভয়ে তোমার নিজ সন্তানকে হত্যা করা।” আমি বললাম, ‘অতঃপর কোন পাপ?’ তিনি বললেন, “প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচার করা।” আর এ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا অর্থাৎ, (আল্লাহর বান্দারা) আল্লাহর সঙ্গে কোন উপাস্যকে অংশী করে না, আল্লাহ যাকে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে হত্যা নিষেধ করেছেন তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এ সব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন ওদের আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে তারা হীন অবস্থায় স্থায়ী হবে। (সূরা ফুরকান ৬৮-৬৯ আয়াত) (বুখারী ৪৪৭৭,৭৫৩২ প্রভৃতি, মুসলিম ২৬৭-২৬৮ নং, তিরমিযী, নাসাঈ) মিক্বদাদ বিন আসওয়াদ (রাঃ) একদা মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা ব্যভিচার সম্বন্ধে কী বল?” সকলে বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল হারাম করেছেন, অতএব তা হারাম।’ তিনি বললেন, (لَأَنْ يَزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرَةِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ) “প্রতিবেশীর নয় এমন ১০টি মহিলার সাথে ব্যভিচার করার চাইতে প্রতিবেশীর ১টি মহিলার সাথে ব্যভিচার অধিকতর নিকৃষ্ট।” অতঃপর বললেন, “তোমরা চুরি সম্বন্ধে কী বল?” সকলে বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল হারাম করেছেন, অতএব তা হারাম।’ তিনি বললেন, (لَأَنْ يَسْرِقَ الرَّجُلُ مِنْ عَشْرَةِ أَبْيَاتٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَسْرِقَ مِنْ جَارِهِ) “প্রতিবেশীর নয় এমন ১০টি বাড়িতে চুরি করার চাইতে প্রতিবেশীর ১টি বাড়িতে চুরি করা অধিকতর নিকৃষ্ট।” (আহমাদ ২৩৮৫৪, বুখারীর আদাব ১০৩, ত্বাবারানী ১৬৯৯৩, সহীহুল জামে ৫০৪৩ নং) উক্ববা বিন আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন প্রথম বাদী-প্রতিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী।” (আহমাদ ১৭৩৭২, ত্বাবারানী ১৪২৫২, ১৪২৬৮, সহীহ তারগীব ২৫৫৭ নং) ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কত প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীকে কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) ধরে এনে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! একে জিজ্ঞাসা করুন, কেন এ আমার মুখে দরজা বন্ধ রেখেছিল এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত বস্তু থেকে বিরত রেখেছিল?” (আসবাহানী, বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ ১১১, সিঃ সহীহাহ ২৬৪৬ নং) আবূ যার্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন ও তিন ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন। (১) সেই ব্যক্তি, যে কোন দলে থেকে দুশমনের মোকাবেলার জন্য নিজের বুক পেতে দেয়। পরিশেষে সে খুন হয়ে যায় অথবা সাথীদের বিজয় লাভ হয়। (২) সেই ব্যক্তি, যে কোন সম্প্রদায়ের সাথে সফরে থাকে, তাদের রাত্রি-ভ্রমণ দীর্ঘায়িত হয়, পরিশেষে তারা মাটি স্পর্শ করতে (ঘুমাতে) চায়। সুতরাং তারা অবতরণ করে (ঘুমিয়ে যায়)। আর তাদের ঐ ব্যক্তি এক ধারে সরে গিয়ে নামায পড়তে লাগে। অবশেষে তাদেরকে যাত্রা করার জন্য জাগ্রত করে। (সে মোটেই ঘুমায় না।) (৩) সেই ব্যক্তি, যার প্রতিবেশী তাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু সে তার কষ্টে ধৈর্যধারণ করে। পরিশেষে মৃত্যু অথবা স্থানান্তর তাদেরকে পৃথক করে দেয়। আর যাদেরকে আল্লাহ ঘৃণা করেন, (তারা হল,) (১) অনেকানেক কসমখোর ব্যবসায়ী, (২) অহংকারী গরীব এবং (৩) অনুগ্রহ প্রকাশকারী কৃপণ। (আহমাদ ২১৩৪০, সঃ জামে’ ৩০৭৪ নং)