1. জাল জয়ীফ হাদিস সিরিজ (১-১০০) নং হাদিস
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
বর্ণনাকারী দ্বীন [ধর্ম] হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন [ধর্ম] নেই তার কোন বিবেক নেই। হাদীসটি বাতিল। হাদীসটি নাসাঈ “আল-কুনা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার থেকে দুলাবী “আল-কুনা ওয়াল আসমা” গ্রন্থে (২/১০৪) আবূ মালেক বিশ্র ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে... প্রথম বাক্যটি ছাড়া মারফু’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসাঈ হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ (আরবী) এ হাদীসটি বাতিল, মুনকার। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ বিশর নামক বর্ণনাকারী। কারণ আযদী বলেন : তিনি মাজহূল [অপরিচিত] বর্ণনাকারী। ইমাম যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” এবং ইবনু হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তার কথাকে সমর্থন করেছেন। হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ ১০০/১-১০৪/১) দাউদ ইবনু্ল মুহাব্বার সূত্রে বিবেকের ফযীলত সম্পর্কে ত্রিশের অধিক হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ সে সবগুলোই জাল (বানোয়াট)। সেগুলোর একটি হচ্ছে এ হাদীসটি যেমনটি সুয়ূতী তার “যায়লুল-লাআলিল মাসনূ’য়াতি ফিল আহাদীছিল মাওযূ’আত” গ্রন্থে (পৃ : ৪-১০) উল্লেখ করেছেন : তার থেকে হাদীসটি আল্লামা মুহাম্মাদ তাহির আল-হিন্দী মাওযূ’ গ্রন্থ “তাযকিরাতুল মাওযূ’আত”-এর মধ্যে (পৃ: ২৯-৩০) উল্লেখ করেছেন। দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সম্পর্কে যাহাবী বলেন : ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল বলেন : হাদীস কী তিনি তাই জানতেন না। আবূ হাতিম বলেন : তিনি যাহেবুল হাদীস [হাদীসকে বিতাড়নকারী], নির্ভরযোগ্য নন। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি]। আব্দুল গনী ইবনু সা’ঈদ দারাকুতনী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ মায়সারা ইবনু আব্দি রাব্বিহি “আল-আকল” নামক গ্রন্থ রচনা করেন আর তার নিকট হতে দাউদ ইবনুল মুহাব্বার তা চুরি করেন। অতঃপর তিনি তার (মায়সারার) সনদের পরিবর্তে নিজের বানোয়াট সনদ জড়িয়ে দেন। এরপর তা চুরি করেন আব্দুল আযীয ইবনু আবূ রাজা এবং সুলায়মান ইবনু ঈসা সাজযী। মোটকথা বিবেকের ফযীলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস নেই। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস হয় দুর্বল, না হয় জাল (বানোয়াট)। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম “আল-মানার” গ্রন্থে বলেনঃ (পৃ: ২৫) (আরবী) ‘বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা।’ বর্ণনাকারী যে ব্যক্তির সলাত তাকে তার নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত করে না, আল্লাহর নিকট হতে তার শুধু দূরত্বই বৃদ্ধি পায়। হাদীসটি বাতিল। যদিও হাদীসটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তবুও সেটি সনদ এবং ভাষা উভয় দিক দিয়েই সহীহ নয়। সনদ সহীহ না হওয়ার কারণঃ হাদীসটি তাবারানী “আল মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৬/২), কাযা’ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/৪৩) এবং ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা করেছেন, যেমনটি “তাফসীর ইবনু কাসীর” গ্রন্থে (২/৪১৪) এবং “আল কাওয়াকাবুদ দুরারী” গ্রন্থে (৮৩/২/১) লাইস সূত্রে তাউস-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। এ লাইসের কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বল –তিনি হচ্ছেন লাইস ইবনু আবী সুলাইম- কারণ তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। হাফিয ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে তার জীবনী লিখতে গিয়ে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, কিন্তু শেষ জীবনে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। তার হাদীস পৃথক করা যেত না, ফলে তার হাদীস মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]। হায়সামী “মাজমা’উয যাওয়াইদ” গ্রন্থে তার (১/১৩৪) একই কারণ উল্লেখ করেছেন। তার শাইখ হাফিয আল-ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/১৪৩) বলেছেন : হাদীসটির সনদ লাইয়েনুন (দুর্বল)। আমি (আলবানী) বলছি : হাদীসটি ইবনু জারীর তার “তাফসীর” গ্রন্থে (২০/৯২) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত এটিই সহীহ্ অর্থাৎ সাহাবীর কথা। যদিও তার সনদে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ইমাম আহমাদ “কিতাবুল যুহুদ” গ্রন্থে (পৃ: ১৫৯) আর তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে হাদীসটি ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে মওকূফ হিসাবে ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইরাকী বলেন : তার সনদটি সহীহ্। অতএব হাদীসটি মওকূফ। ইবনুল আ’রাবী তার “আল-মু’জাম” গ্রন্থে (১/১৯৩) হাদীসটি হাসান বাসরী হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাসান হচ্ছেন মুদাল্লিস। হাফিয যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি বেশী বেশী তাদলীস করতেন। তিনি (আরবী) আন শব্দে বর্ণনা করলে তার হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করাটা দুর্বল হয়ে যায়। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে তার শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি। এ কারণে মুহাদ্দিসগণ আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে তার হাদীসকে মুনকাতি’ হিসাবে গণ্য করেছেন। তবে হাসান বাসরীর নিজের কথা হিসাবে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন এমন কথা বলেননি। ইমাম আহমাদ “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (পৃ:২৬৪) এভাবেই বর্ণনা করেছেন আর তার সনদটি সহীহ। অনুরূপ ভাবে ইবনু জারীরও বিভিন্ন সূত্রে তার থেকেই (২০/৯২) বর্ণনা করেছেন এবং এটিই সঠিক। “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/৪৩) মিকদাম ইবনু দাঊদ সূত্রে হাসান বাসরী হতে মারফূ’ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এই মিকদাম সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। মোটকথা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত এটির সনদ সহীহ নয়। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এবং হাসান বাসরী হতে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণেই ইবনু তাইমিয়্যা “কিতাবুল ঈমান” গ্রন্থে (পৃঃ ১২) মওকূফ হিসাবেই উল্লেখ করেছেন। ইবনু উরওয়াহ্ “আল-কাওয়াকিব” গ্রন্থে বলেছেন : এটিই বেশী সঠিক। ভাষার দিক দিয়ে সহীহ না হওয়ার কারণঃ হাদীসটি যে ব্যক্তি সলাতের শর্ত এবং আরকান সমূহের দিকে যত্নবান হয়ে যথাযথভাবে আদায় করে সে ব্যক্তিকেও সম্পৃক্ত করে। অথচ শারী’য়াত তার সলাতকে বিশুদ্ধ বলে রায় প্রদান করেছে। যদিও এ মুসল্লী কোন গুনাহের সাথে জড়িত থাকে। অতএব কীভাবে এ সলাতের কারণে তার সাথে আল্লাহর দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে? এটি বিবেক বর্জিত কথা। শারী’য়াত এ কথার সাক্ষ্য দেয় না। হাদীসটি মওকূফ হওয়ার ক্ষেত্রেও সলাত দ্বারা এমন সলাতকে বুঝানো হয়েছে যে সলাতে এমন কোন অংশ ছেড়ে দেয়া হয়েছে যা ছেড়ে দিলে সলাত শুদ্ধ হয় না। আল্লাহ (আরবী) বলেনঃ (আরবী) অর্থঃ ‘নিশ্চয় সলাত নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত রাখে।’ (আনকাবুতঃ ৪৫)। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অমুক ব্যক্তি সারা রাত ধরে ইবাদাত করে অতঃপর যখন সকাল হয় তখন সে চুরি করে। উত্তরে তিনি উক্ত আয়াতের গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন : ‘তুমি যা বলছ তা থেকে অচিরেই তাকে তার সলাত বিরত করবে অথবা বলেন : তাকে তার সলাত বাধা প্রদান করবে।’ হাদীসটি ইমাম আহমাদ, বায্যার, তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (২/৪৩০), বাগাবী “হাদীসু আলী ইবনুল যা’আদ” গ্রন্থে (৯/৯৭/১) এবং আবূ বাক্র কালাবাযী “মিফতাহু মা’য়ানীল আসার” গ্রন্থে (৩১/১/৬৯/১) সহীহ্ সনদে আবূ হুরাইরাহ্ (আরবী) হতে বর্ণনা করেছেন। লক্ষ্য করুন! রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিয়েছেন যে, এ ব্যক্তি তার সলাতের কারণে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে (যদি তার সলাতটি যথাযথ ভাবে হয়)। তিনি বলেননি যে, তার দূরত্ব বৃদ্ধি করবে, যদিও সে তার চুরি হতে বিরত হয়নি। এ কারণেই আব্দুল হক ইশবীলী “আত-তাহাজ্জুদ” গ্রন্থে (কাফ- ১/২৪) বলেন : সত্যিকার অর্থে যে ব্যক্তি সলাত আদায় করবে এবং সলাতকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তার সলাত তাকে হারামে জড়িত হওয়া এবং হারামে পতিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। অতএব প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাদীসটি সনদ এবং ভাষা উভয় দিক দিয়েই দুর্বল। এছাড়া আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইয্যুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালাম ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আসারটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ ধরনের হাদীসকে ভীতি প্রদর্শনমূলক হাদীস হিসাবে গণ্য করা বাঞ্ছনীয়। এ হাদীসকে তার বাহ্যিক অর্থে নেয়া সঠিক হবে না। কারণ তার বাহ্যিক অর্থ সহীহ্ হাদীসে যা সাব্যস্ত হয়েছে তার বিপরীত অর্থ বহন করছে। সহীহ্ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সলাত গুনাহ্ সমূহকে মোচন করে, অতএব আল্লাহ্ সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি করলে সলাত কীভাবে গুনাহ্ মোচনকারী হতে পারে? আমি (আলবানী) বলছিঃ এরূপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে তবে মওকূফ হিসাবে গণ্য করে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসাবে নয়। উপরের আলোচনার সাক্ষ্য দেয় বুখারীতে বর্ণিত হাদীস। এক ব্যক্তি কোন মহিলাকে চুমু দিয়ে দেয়। অতঃপর সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঘটনাটি উল্লেখ করলে আল্লাহ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন : (আরবী) “নিঃসন্দেহে সৎ কর্মগুলো অসৎ কর্মগুলোকে মুছে ফেলে” (হুদ:১১৪) হাফিয যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে (৩/২৯৩) ইবনুয যুনায়েদ হতে বর্ণনা করে (আলোচ্য) হাদীসটি সম্পর্কে বলেন : এটি মিথ্যা। বর্ণনাকারী পুরুষদের ইচ্ছা (মনোবল) পর্বতমালাকে স্থানচ্যুত করতে পারে। এটি হাদীস নয়। ইসমাঈল আজলুনী “কাশফুল খাফা” গ্রন্থে বলেন : এটি যে হাদীস তা অবহিত হতে পারিনি। তবে কোন ব্যক্তি শাইখ আহমাদ গাযালীর উদ্ধৃতিতে বলেছেন যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (আরবী) ‘পুরুষদের মনোবল পর্বতমালার উচ্ছেদ ঘটাতে পারে’। আমি (আলবানী) বলছি : সুন্নাতের গ্রন্থগুলো খুঁজেছি এর (হাদীসটির) কোন অস্তিত্ব পাইনি। শাইখ আহমাদ গাযালী কর্তৃক হাদীস বলে উল্লেখ করাটা তাকে সাব্যস্ত করে না। কারণ তিনি মুহাদ্দিসগণের দলভুক্ত নন, বরং তিনি তার ভাই মুহাম্মাদের ন্যায় সূফী সম্প্রদায়ভুক্ত একজন ফাকীহ্ ছিলেন। তার ভাই কর্তৃক রচিত “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে কতইনা হাদীস নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উদ্ধৃতিতে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে এগুলো হাদীস। অথচ সেগুলোর কোন ভিত্তিই নেই। যেমনিভাবে হাফিয ইরাকী ও আরো অনেকে বলেছেন। সেগুলোর একটি নিম্নের হাদীসটি : বর্ণনাকারী মসজিদের মধ্যে কথপোকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে ফেলে। হাদীসটি ভিত্তিহীন। গাযালী এটি “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (১/১৩৬)। অথচ তার কোন ভিত্তি নেই। হাফিয ইরাকী বলেন : তার কোন ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত হইনি। হাফিস ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশ্শাফ” গ্রন্থে ভিত্তি না থাকাকে (৭৩/৯৩, ১৩০/১৭৬) আরো সুষ্পষ্ট করেছেন। আব্দুল ওয়াহাব সুবকী “তাবাকাতুশ-শাফে’ঈয়াহ” গ্রন্থে (৪/১৪৫-১৪৭) বলেছেন: তার কোন সনদ পাইনি। লোকদের মুখে মুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে, মসজিদের মধ্যে বৈধ কথা সৎ কর্মগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে খড়িকে আগুন খেয়ে ফেলে। এটি ও উপরেরটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্ণনাকারী কোন বান্দা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যখন কিছু ত্যাগ করে, তখন আল্লাহ তাকে তার দ্বীন ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে তার চাইতেও অতি কল্যাণকর বস্তু প্রতিদান হিসাবে দান করেন। এ ভাষায় হাদীসটি বানোয়াট। আমি (আলবানী) বলছি : হাদীসটি ১৩৭৯ হিজরী সনের রমাযান মাসে রেডিও দামেস্কে প্রচারিত কোন এক সম্মানিত ব্যক্তির বক্তব্যে শুনি। হাদীসটি আবূ নো’য়াইম “হিলইয়াতুল আওলিয়া” গ্রন্থে (২/১৯৬), দাইলামী “আল-গারাইয়েবুল মুলতাকাতাহ” গ্রন্থে, আস-সিলাফী “আত-তায়ূরীয়াত” গ্রন্তে (২/২০০) এবং ইবনু আসাকির (৩/২০৮/২, ১৫/৭০/১) আবদুল্লাহ ইবন সা’দ আর-রাকী সূত্রে .........বর্ণনা করেছেন। অত:পর আবূ নু’য়াইম বলেন : হাদীসটি গারীব। আমি (আলবানী বলছি : হাদীসটির সনদ বানোয়াট, কারণ হাদীসটির সনদে বর্ণিত যুহরীর নিচের বর্ণনাকারীগণের মধ্য থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু সা’দ আর-রাকী ব্যতীত অন্য কোন বর্ণনাকারীর বিবরণ হাদীসগ্রন্থসমূহে মিলে না। তিনি পরিচিত, তবে মিথ্যুক হিসাবে। হাফিয যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে এবং তার অনুসরণ করে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেন : (আরবি) দারাকুতনী তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন : তিনি হাদীস জাল করতেন। আর আহমাদ ইবনু আব্দান তাকে খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হাদীসটিতে অন্য একটি সমস্যা রয়েছে, সেটি হচ্ছে বাক্বার ইবনু মুহাম্মাদ। তিনি মাজহূল (অপরিচিত)। ইবনু আসাকির তার জীবনীতে তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলেনি। তব্যে হ্যাঁ হাদীসটি (আরবি) এ শব্দ ছাড়া সহীহ। যা ওয়াকী’ “আল-যুহুদ” নামক গ্রন্থে (২/৬৮/২) এবং তার থেকে ইমাম আহমাদ (৫/৩৬৩) ও কাযা’ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (১১৩৫) নিম্নের ভাষায় উল্লেখ করেছেন : (আরবি) ‘তুমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে কিছু ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তার প্রতিদান হিসাবে তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন’। ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটির সনদ সহীহ। হাদীসটি ইসপাহানীও “আত-তারগীব” গ্রন্থে (১/৭৩) বর্ণনা করেছেন। অত:পর তিনি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে তার একটি শাহেদ [সাক্ষীমূলক] হাদীস এমন এক সনদে বর্ণনা করেছেন, শাহেদ হওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোন সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী ধূলিকণা হতে তোমরা বেঁচে চল, কারণ ধূলিকণা হতেই জীবাণু সৃষ্টি হয়। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। ইবনুল আসীর (আরবি) মাদ্দায় “আন-নেহায়া” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন যে, এটি হাদীস! কিন্তু মারফূ হিসাবে এটির কোন ভিত্তি সম্পর্কে জানি না। তবে আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে মাওকূফ হিসাবে ইবনু সা’দ “তাবাকাতুল কুবরা” গ্রন্থে (৮/২/১৯৮) বর্ণনা করেছেন। তা সত্ত্বেও কয়েকটি কারণে সনদের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ নয় : ১। ইবনু সা’দ মাধ্যম হিসাবে তার শাইখের নাম উল্লেখ করেননি। অর্থ্যাত মু’য়াল্লাক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ২। এছাড়া সনদে উল্লেখিত আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ-এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে, যদিও বুখারী তার থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি নিজে সত্যবাদী ছিলেন, কিন্তু তার প্রতিবেশীর পক্ষ হতে তার হাদীসে মুনকারের প্রবেশ ঘটেছে। তিনি বলেন : আমি ইবনু খুজায়মাকে বলতে শুনেছি : প্রতিবেশীর সাথে তার শত্রুতা ছিল। এ কারণে প্রতিবেশী ইবনু সালেহের শাইখের উদ্ধৃতিতে নিজের হাতে লিখে হাদীস জাল করতো এবং (আব্দুল্লাহর হাতের লিখার সাথে তার হাতের লিখার মিল ছিল) সে হাদীসকে আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহের বাড়ীতে তার গ্রন্থগুলোর উপর ফেলে দিত। ফলে আব্দুল্লাহ তার লিখাকে নিজের হাতের লিখা মনে করতেন এবং তিন তাকে হাদীস হিসাবে বর্ণনা করতেন। বর্ণনাকারী দু’টি বস্তুর নিকটবর্তী হয়ো না, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা এবং মানুষের ক্ষতি সাধন করা। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটি এ বাক্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। সুন্নাহের কোন গ্রন্থে এর ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত হইনি। হতে পারে এর মূলে আছে গাযালীর “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৮৫) বর্ণিত কথিত হাদীস। হাফিয ইরাকী তাঁর “তাখরীজ” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি “ফিরদাউস” গ্রন্থের রচনাকারী আলী (রাঃ) এর হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর ছেলে তাঁর “মুসনাদ” গ্রন্থে মুসনাদ হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেননি। এ কারণেই সুবকী সেটিকে সেই সব হাদীসগুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছেন (৪/১৫৬) যেগুলো “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে এসেছে, অথচ তিনি সেগুলোর কোন সনদ পাননি। বর্ণনাকারী তুমি দুনিয়ার জন্য এমনভাবে কর্ম কর, যেন তুমি অনন্ত কালের জন্য জীবন ধারণ করবে। আর আখেরাতের জন্য এমনভাবে আমল কর, যেন তুমি কালকেই মৃত্যুবরণ করবে। মারফূ’ হিসাবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। যদিও এটি পরবর্তী সময়গুলোতে মুখে মুখে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে মওকূফ হিসাবে হাদীসটির ভিত্তি পেয়েছি। ইবনু কুতায়বা “গারীবুল হাদীস” গ্রন্থে (১/৪৬/২) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটির সনদের বর্ণনাকারী ওবায়দুল্লাহ ইবনু আয়যারের জীবনী কে উল্লেখ করেছেন পাচ্ছিনা। অতঃপর এটি সম্পর্কে “তারীখু বুখারী” গ্রন্থে (৩/৩৯৪) এবং “যারহু ওয়াত তা’দীল” (২/২/৩৩০) গ্রন্থে অবহিত হয়েছি। কিন্তু সনদটি মুনকাতি’ [বিচ্ছিন্ন]। অতঃপর ইবনু হিব্বানকে এটিকে “সিকাত আতবা’ইত তাবে’ঈন” গ্রন্থে (৭/১৪৮) উল্লেখ করতে দেখেছি। ইবনুল মুবারাকও অন্য সূত্রে “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২১৮) মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটিও মুনকাতি’ [ অর্থাৎ এর সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে]। মারফূ’ হিসাবেও বর্ণিত হয়েছে। বাইহাকী তাঁর “সুনান” গ্রন্থে (৩/১৯) আবূ সালেহ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন (তবে ভাষায় ভিন্নতা আছে)। কিন্তু এটির সনদটিও দু’টি কারণে দুর্বলঃ সনদের এক বর্ণনাকারী উমার ইবনু আব্দিল আযীযের দাস মাজহূল এবং আবূ সালেহ দুর্বল। তিনি হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ, লাইসের কাতিব [কেরানী]। তাঁর সম্পর্কে ৬ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। বাইহাকী কর্তৃক বর্ণিত ইবনু ‘আমরের হাদীসের প্রথম অংশটি বায্যার জাবের (রা) এর হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন (দেখুনঃ ১/৫৭/৭৪-কাশফুল আসতার)। হায়সামী “আল-মাজমা” গ্রন্থে (১/৬২) বলেছেনঃ এটির সনদে ইয়াহইয়া ইবনুল মুতাওয়াক্কিল (আবূ আকীল) রয়েছেন। তিনি মিথ্যুক। বর্ণনাকারী আমি প্রত্যেক পরহেজগার (সংযমী) ব্যক্তির দাদা। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাফিয সুয়ূতীকে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেনঃ আমি এ হাদীসটি চিনিনা। তিনি এ কথাটি তাঁর “আল-হাবী লিল ফাতাওয়া” গ্রন্থে (২/৮৯) বলেছেন। বর্ণনাকারী নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দা কে হালাল রুযি অন্বেষণের উদ্দেশে পরিশ্রান্ত অবস্থায় দেখতে ভালবাসেন। হাদীসটি জাল। এটিকে আবূ মানসূর দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে আলী (রাঃ)– এর হাদীস হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইরাকী (২/৫৬) বলেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু সাহাল আল-আত্তার নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি হাদিস জালকারী। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি সেই সব হাদীসের একটি যেগুলোকে সুয়ূতি “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে তার গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন। ভূমিকাতে উদ্ধৃত তার নিজ উক্তির বিরোধিতা করে, তিনি বলেছেনঃ (আরবী) আমি কিতাবটি জালকারী ও মিথ্যুকের একক বর্ণনা হতে হেফাযাত করেছি। এ গ্রন্থের ভাষ্যকার আব্দুর রউফ আর-মানাবী “ফয়যুল কাদীর” গ্রন্থে বলেনঃ “জামে’উস সাগীর” এর লেখকের হাদীসটিকে তার গ্রন্থ হতে মুছে ফেলা উচিত ছিল। বর্ণনাকারী আমাকে প্রেরন করা হয়েছে শিক্ষাদানকারী হিসাবে। হাদীসটি য’ঈফ (দুর্বল)। এটি দারেমী (১/৯৯) আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ সুত্রে (তিনি হচ্ছেন আবূ আব্দির রহমান মাকরী), ইবনু ওয়াহাব “মুসনাদ” গ্রন্থে (৮/১৬৪/২), আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২২০), তার থেকে হারিস তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (পৃঃ ১৬) এবং তায়ালিসী (পৃঃ ২৯৮ হাঃ নং ২২৫১) বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ ইবনে আন’আম হতে এবং তিনি আব্দুর রহমান ইবনু রাফে’ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি দুর্বল। কারণ আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ এবং ইবনু রাফে’ তারা উভয়ই দুর্বল, যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে বলেছেন। ইবনু মাজাহও হাদীসটি (১/১০১) দাউস ইবনু যাবারকান সুত্রে বাকর ইবনু খুনায়েস হতে, আর তিনি আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি প্রথমটির চেয়ে বেশী দুর্বল। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ-এর নীচের বর্ণনাকারীগন সকলেই দুর্বল। তারা নিভরশীল বর্ণনাকারীদের বিরোধিতা করেছেন। বূসয়রী “আল-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ১৬/২) বলেনঃ এর সনদে দাউদ, বাকর ও আব্দুর রহমান নামের (তিনজন) বর্ণনাকারী রয়েছেন। তারা সকলেই দুর্বল। হাফিয ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে বলেনঃ সনদটি দুর্বল। বর্ণনাকারী আল্লাহর দুনিয়ার নিকট অহী মারফত বলেছেন যে, তুমি খেদমত কর ঐ বাক্তির যে আমার খেদমত করে আর কষ্ট দাও ঐ বাক্তিকে যে তোমার খেদমত করে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি খাতীব বাগদাদী “তারিখ বাগদাদ” গ্রন্থে (৮/৪৪) ও হাকিম “মা’রিফাতু উলূমিল হাদীস” গ্রন্থে (পৃঃ ১০১) বিভিন্ন সুত্রে হুসাইন বিন দাউদ হতে, তিনি ফু্যায়েল ইবনু আয়ায হতে,...আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’উদ হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আল-খাতীব বলেনঃ হুসাইন ফুযায়েল হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বানোয়াট। হুসাইন ইবনু দাউদ বাদে হাদীসটীর সকল বর্ণনাকারী নিরভরশীল। কারণ তিনি ইয়াযীদ ইবনু হারুন সুত্রে হুমায়েদ এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) হতে একটি কপি বর্ণনা করেছেন, যার অধিকাংশই বানোয়াট। বর্ণনাকারী শামের অধিবাসীরা আল্লাহর পৃথিবীতে তাঁর চাবুক। তিনি তাদের দ্বারা তাঁর বান্দাদের থেকে যাকে চান শাস্তি দেন। তাদের মু’মিনদের উপর তাদের মুনাফিকদের প্রাধান্য বিস্তারকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাদের মুনাফিকরা শুধুমাত্র চিন্তা ও অস্থির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। হাদীসটি দুর্বল। এটি তারবানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৪১৬৩) ওয়ালীদ বিন মুসলিম হতে দু’টি সুত্রে বর্ণনা করেছেন। দু’টি কারণে হাদীসটি সহিহ নয়ঃ ১। ওয়ালীদ আন আন শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। তিনি ‘তাদলীসুত তাসবিয়া’ করতেন। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি যখন আন আন শব্দ দ্বারা ইবনু জুরায়েজ ও আওযা’ঈ হতে বর্ণনা করেন তখন তাঁর বর্ণনা নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ তিনি মিথ্যুকদের থেকে তাদলীস করতেন। তবে যখন (আরবী) আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন’ এ শব্দ ব্যবহার করেছেন তখন তার হাদীস গ্রহনযোগ্য। [তাদলীসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ৫৭ পৃষ্ঠায় দেখুন]। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি নিরভরশীল। কিন্তু তিনি বহু তাদলীস এবং তাসবিয়া কারী। ২। মওকূফঃ মওকূফ (সাহাবীরবাণী) হিসাবে ইমাম আহমাদ (৩/৪৯৮) বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি সহীহ্। ইবনু তাইমিয়্যা সন্দেহ বশত হাদীসটিকে মারফূ বলেছেন। কিন্তু আসলে সেরূপ নয়। মুনযেরী ''তারগীব ওয়াত তারহীব'' গ্রন্থে (৪/৬৩) বলেনঃ হাদীসটি মওকূফ হিসাবেই সঠিক। বর্ণনাকারী তোমরা তোমাদেরকে এবং সার দেয়া ভূমির সবুজ বর্ণকে রক্ষা কর। জিজ্ঞাসা করা হল, সার দেয়া ভুমির সবুজ বর্ণ কী? (উত্তরে রসূল) বললেনঃ নিকৃষ্ট উৎপত্তি স্থল হতে জন্মগ্রহণ করা সুন্দরী নারী। হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। হাদীসটি কাজা'ঈ ''মুসনাদুশ শিহাব'' গ্রন্থে (কাফ ৮১/১) ওয়াকেদী সুত্রে এবং গাযালী ''আল-ইহইয়া'' গ্রন্থে (২/৩৮) উল্লেখ করেছেন। তার তাখরীজকারী ইরাকী বলেনঃ হাদীসটি দারাকুতনী ''আল-আফরাদ'' গ্রন্থে এবং রামহুরমুজী ''আল-আমসাল'' গ্রন্থে আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) –এর হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ এ হাদীসটি ওয়াকেদী এককভাবে বর্ণনা করেছেন ,তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী। ইবনুল মুলাক্কান ''খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর'' গ্রন্থে (কাফ ১১৮/১) তার মতই উক্তি করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনিমাতরূক। ইমাম আহমাদ, নাসঈ ও ইবনুল মাদীনী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ তাকে (ওয়াকেদীকে) মিথ্যুক বলেছেন। কোন কোন গোঁড়া ব্যক্তি তাকে নির্ভরযোগ্য বলার চেষ্টা করেছেন, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যাবেনা। কারণ তা মুহাদ্দিসগণের প্রসিদ্ধ সূত্র (ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে নির্দোষীতার উপর) বিরোধী। এজন্য কাওসারী হাদীসটিকে জাল বলেছেন। বর্ণনাকারী শাম দেশ আমার তীর রাখার স্থল। যে তার কোনরূপ অনিষ্ট করার ইচ্ছা করবে ,আমি তাকে সেখানকার তীর দ্বারা আঘাত করব। মারফূ' হিসাবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। সম্ভবত এটি ইসরাইলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ আহলে কিতাবদের বর্ণনাকৃত। এটি হাফিয আবুল হাসান রিব'ঈ ''ফাযায়েলুশ-শাম'' গ্রন্থে (পৃঃ৭) আউন ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনে উতবা হতে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদে বর্ণনাকারী মাস'উদী রয়েছেন। তার নাম আব্দুররহমান ইবনু আব্দিল্লাহ। তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটার কারণে তিনি দুর্বল। এছাড়া অন্য বর্ণনাকারীদের জীবনী কে উল্লেখ করেছেন পাচ্ছিনা। ইমাম সাখাবীও ''মাকাসিদুল হাসানা'' গ্রন্থে বলেছেনঃ মারফূ' হিসাবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। বর্ণনাকারী আমার উম্মতের দু’শ্রেণীর লোক যখন ঠিক হয়ে যাবে, তখন মানুষ ভাল হয়ে যাবে। নেতাগণ এবং ফাকীহ্গণ। (অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘আলেমগন’)। হাদীসটি জাল। তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২৩৮), আবূ নো’য়াইম “হিলিয়াহ” গ্রন্থে (৪/৯৬) এবং ইবনু আব্দিল বার “জামেউ’ বায়ানিল ইল্ম” গ্রন্থে (১/১৮৪) মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ ইয়াশকুরী সূত্রে ... হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, চোখ টেরা, হাদীস জালকারী। ইবনু মা’ঈন ও দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। আবূ যুর’আহ ও অন্যরাও তাঁকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। সুয়ূতি হাদীসটি “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে তাঁর শর্তের বিরোধিতা করে উল্লেখ করেছেন! গাযালী “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৬) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন! তাঁর তাখরীজকারী হাফিজ ইরাকী বলেনঃ সনদটি দুর্বল। হাফিজ যে বলেছেন সনদটি দুর্বল আর আমরা বলেছি বানোয়াট তার মধ্যে কন দ্বন্দ্ব নেই। কারণ বানোয়াট হচ্ছে দুর্বল হাদীসের প্রকারগুলোর একটি। যেমনটি হাদীস শাস্ত্রের নীতির উপর রচিত গ্রন্থ সমূহে এসেছে। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি হাসতে হাসতে গুনাহ করবে, সে কাঁদতে কাঁদতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি আবূ নু’ইয়াইম (৪/৯৬) উমার ইবনু আইউব সুত্রে ...বর্ণনা করেছেন। এ সনদেও মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ ইয়াশকুরী রয়েছেন। এ হাদীসটি সেই সব হাদীসের একটি, যেগুল দ্বারা সুয়ূতি তাঁর “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থের ভাষ্যকার মানাবী বলেনঃ এর সনদে বর্ণনাকারী উমার ইবনু আইউব রয়েছেন, তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ ইবনু হিব্বান তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ উমার হচ্ছেন মুযানী। দারাকুতনী তাকে খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, যেমনটি “আল-মীযান” এবং “আল-লিসান” গ্রন্থে এসেছে। হাদীসটির সনদে মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ ইয়াশকুরীও রয়েছেন। তার দ্বারা দোষ বর্ণনা করাই উত্তম। কারণ তাকে মুহাদ্দিসগ্ণ মিথ্যুক ও হাদীস জালকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ মিথ্যুকের সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে নিম্নের হাদীসটিঃ বর্ণনাকারী তোমরা পরকাটা কবুতর গ্রহন কর, কারণ তা তোমাদের বাচ্চাদের (সন্তানদের) থেকে জিনকে বিমুখ করে দেয়। হাদীসটি জাল। এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/২৮৮), খাতীব বাগদাদী (৫/২৭৮) ও ইবনু আসাকির (১৭/৪৬৯) মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ সুত্রে পূর্বের সনদেই ইবনু আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিকেও সুয়ূতী “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষ্যকার মানাবী তাঁর সমালোচনা করে বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ, ইবনু মা’ঈন প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বলেছেনঃ তিনি ছিলেন মিথ্যুক, হাদীস জালকারী। ইবনু হাজার বলেনঃ তাকে তারা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, জালকারী। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ কারনেই ইবনুল জাওযী হাদীসটি জাল বলে হুকুম লাগিয়েছেন। ইবনু ইরাক, হিন্দী ও অন্যরাও হাদীসটি জাল বলেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ তাদের মধ্যে “আল-মানার” গ্রন্থে (৩৯) জাল আখ্যাদানকারী হিসাবে ইবনুল কাইয়্যিমও রয়েছেন। বর্ণনাকারী তোমরা তোমাদের নারীদের মজলিসগুলো প্রেমালাপের দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। হাদীসটি বানোয়াট। হাদীসটি ইবনু আদী (২/২৮৮) ও খাতীব বাগদাদী (৫/২৮০) ইয়াশকুরী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী বলেনঃ এ ইয়াশকুরী দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি মায়মূন হতে এমন সব মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেগুলো তিনি ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী তার সাথে মিলে হাদীসটি বর্ণনা করেননি। খাতীব বাগদাদী সূত্রে হাদীসটি ইবনুল জাওযী “মাওযূ’আত” গ্রন্থে (২/২৭৭) উল্লেখ করেছেন। আর সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৯) তাকে সমর্থন করেছেন। বর্ণনাকারী তোমাদের দস্তরখানাগুলো সবজি দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত কর, কারণ তা বিসমিল্লাহ বলে আহার করলে শয়তানকে বিতাড়নকারী যন্ত্র। হাদীসটি বানোয়াট। হাদীসটি আব্দুর রাহমান আত-দামেস্কি “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২২৯/১), ইবনু হিব্বান “আয-যু’য়াফা ওয়াল মাতরূকীন” গ্রন্থে (২/১৮৬) এবং আবু নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/২১৬) ‘আলা ইবনু মাসলামা সূত্রে... বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি একটি জাল হাদীস। এর সমস্যা হচ্ছে বর্ণনাকারী এ ‘আলা। যাহাবী ‘আল-মীযান’ গ্রন্থে বলেন, আযদী বলেছেনঃ ‘আলা হতে বর্ণনা করা বৈধ নয়। কারণ কি বর্ণনা করেছেন তিনি তার কোন পরওয়া করতেন না। ইবনু তাহের বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। ইনবু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন। তিনি আরো বলেনঃ কোন অবস্থাতেই তার দ্বারা দলীল গ্রহন করা হালাল নয়। সুয়ূতী হাদীসটিকে “জামে’উস সাগীরা” গ্রন্থে উল্লেখ করে তার গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন। ইবনুল জাওযী হাদীসটি “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (৩/২৯৮) ইবনু হিব্বান-এর সুত্রে ‘আলা ইবনু মাসলামা হতে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি নেই, ‘আলা জালকারী...। এছাড়া “আল-মীযান” গ্রন্থে যা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সে সব কিছুও উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে এ হাদীসটি আরো একটি সূত্র “আল-লাআলিল মাসনূ’য়াহ গ্রন্থে (২/১২) উল্লেখ করেছেন, যাতে হাসান ইবনু শাবীবুল মাকতাব নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হচ্ছেন এ হাদীসের সমস্যা। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বাতিল হাদীস বর্ণনা করতেন। ইবনুল কাইয়্যিম “আল-মানার” গ্রন্থে ( পৃঃ ৩২ ) বলেছেনঃ হাদীসটি জাল। বর্ণনাকারী আমার অবস্থা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞাত হওয়া আমার চাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটির কোন ভিত্তি নেই। কেউ কেউ এটিকে ইব্রাহীম (আঃ)-এর বাণী বলেছেন। যখন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন জিবরীল (আঃ) তাকে তার প্রয়োজনীয়তার কথা জিজ্ঞাসা করেন। সে সময় তিনি এ কথা দ্বারা তার উত্তর দিয়েছিলেন। এটি ইসরাইলী বর্ণনা। মারফূ’ হিসাবে এর কোন সনদ মিলে না। বাগাবী সূরা আম্বিয়ার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করে দুর্বল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া এটি কুরআন এবং সহীহ হাদীস পরিপন্থী। কারণ কুরআন এবং সহীহ হাদীসে আল্লাহকে ডাকা ও তাঁর কাছে চাওয়ার ব্যাপারে বহু তাগিদ এসেছে। এছাড়া দোয়ার ফযীলতও বর্ণনা করা হয়েছে। ইব্রাহীম (আঃ) নিজে আল্লাহর নিকট প্রার্থনাও করেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) বলেনঃ {আরবী} সূরা ইব্রাহীম-এর ৩৭ নং আয়াত হতে ৪১ নং পর্যন্ত সবই দো’আ। এছাড়া কুরআন এবং সুন্নতের মধ্যে নাবীগনের অগণিত দো’আ এসেছে। আল্লাহ্ বলেছেনঃ ‘তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব...’। (সূরা গাফেরঃ ৬০) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দো’আই হচ্ছে ইবাদাত। সহীহ আবী দাউদ (১৩২৯)। হাদীসটি সুনান রচনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন। এমনকি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে না আল্লাহ্ তাঁর উপর রাগান্বিত হন।’ এ হাদীসটি হাকিম বর্ণনা করে ১/৪৯১ সহীহ আখ্যা দিয়েছেন আর যাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি হাসান। আলোচ্য হাদীসটি ইবনু ইরাক “তানযীহুশ-শারী’য়াতিল মারফূ’য়াহ আনিল আখবারিশ-শানী’য়াতিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন (১/২৫০ ) ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেনঃ হাদীসটি বানোয়াট। বর্ণনাকারী তোমরা আমার সত্তা দ্বারা অসীলা ধর, কারণ আমার সত্তা আল্লাহর কাছে মহান। এটির কোন ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) “আল-কা‘য়েদাতুল জালীলাহ” গ্রন্থে আলোকপাত করেছেন। কোন সন্দেহ নেই যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সত্তা আল্লাহর নিকট মহা সম্মানিত। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলেনঃ {আরবী} অর্থঃ “তিনি আল্লাহর নিকট বড়ই সম্মানিত ছিলেন।” (সূরা আহযাবঃ ৬৯)। আমরা সকলে জ্ঞাত আছি যে, আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (আঃ)-এর চাইতেও উত্তম। কিন্তু এটি এক বিষয় আর তাঁর সত্তার অসীলায় কিছু চাওয়া অন্য বিষয়। দু’টি বিষয়কে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ তাঁর সত্তার অসীলায় যে ব্যক্তি কিছু পাবার ইচ্ছা পোষণ করে, সে এটা কামনা করে যে তাঁর দো‘আ কবূল হয়। এ বিশ্বাস (যে তিনি মৃত্যুর পরে কারো জন্য দো‘আ করতে সক্ষম) সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজন সহীহ দলীলের। কারণ এটি সম্পূর্ণ গায়েবী ব্যাপার। তার পরেও এটি এমন এক বিষয় যে তা ব্যক্তির বুদ্ধি দ্বারা জানা এবং তা সাব্যস্ত করাও সম্ভব নয়। আমরা দলীল দেখতে গেলে পাচ্ছি যে, অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দু’ভাগে বিভক্ত, সহীহ ও য‘ঈফ। যদি সহীহ হাদীসগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব যে, সেগুলোতে তাঁর সত্তা দ্বারা অসীলা গ্রহণকারীর কোন দলীল মিলছে না। ইসতিস্কার সলাতে তাঁর মাধ্যমে অসীলা করা, অন্ধ ব্যক্তির তাঁর মাধ্যমে অসীলা করা, এসব অসীলা ছিল তাঁর জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর দো‘আর দ্বারা, তাঁর সত্তার দ্বারা নয়। অতএব যখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দো‘আর দ্বারা অসীলা করা সম্ভব নয়, তখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সত্তার দ্বারা অসীলা করাও সম্ভব নয় এবং তা জায়েযও নয়। যদি তা জায়েয থাকত তাহলে সাহাবীগণ উমার (রাঃ)-এর যুগে ইসতিস্কার সলাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতেন না। বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসীলায় পানি প্রার্থনা করতেন। কারণ তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁরা (সাহাবীগণ) উমার (রাঃ)-র যুগে আব্বাস (রাঃ)-এর দো‘আকে মাধ্যম হিসাবে ধরে তার দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন। এ কারণে যে, তাঁরা জানতেন কোন অসীলাটি বৈধ আর কোনটি বৈধ নয়। অর্থাৎ জীবিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির দো‘আ বা তার সত্তার অসীলা ধরা বৈধ নয়। সে যে কেউ হোক না কেন। যে অন্ধ ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অসীলা ধরেছিলেন, তার দো‘আর ভাষা ছিল এরূপ ‘(আরবী)’ হে আল্লাহ তুমি তাঁর শাফা‘আতকে (দো‘আকে) আমার ব্যাপারে কবূল কর। অন্ধ ব্যক্তির হাদীসের বিষয় দো‘আকে ঘিরেই। বিদ‘আতী অসীলার সাথে তার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। এ কারণে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এ ধরনের অসীলাকে অস্বীকার করে বলেছেনঃ (আরবী) ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো মাধ্যমে চাওয়াকে আমি ঘৃণা করি।’ এমনটিই এসেছে “দুররুল মুখতার” সহ হানাফী মাযহাবের অন্যান্য গ্রন্থে। কাওসারী যে বলেছেন ‘ইমাম শাফে‘ঈ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর অসীলায় তাঁর কবরের নিকট বরকত গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে চেয়েছেন।’ এ মর্মে বর্ণিত কথাটি বাতিল। কারণ তার সূত্রে উমার বিন ইসহাক নামে এক ব্যক্তি আছেন, যার সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তিনি মাজহূল [অপরিচিত]। এ জন্য ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন যে, এটি ইমাম শাফে‘ঈর উপর মিথ্যারোপ। ইবনু তাইমিয়্যাহ “ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম” গ্রন্থে (১৬৫) বলেনঃ এটি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ... কারণ ইমাম শাফে‘ঈ হিজাজ, ইয়ামান, শাম, ইরাক, মিসর ভ্রমনকালে বহু নাবী, সাহাবী ও তাবে‘ঈগণের কবর দেখেছেন যাঁরা ইমাম আবূ হানীফা ও তার ন্যায় আলেমগণের চেয়ে বহুগুনে উত্তম, তা সত্ত্বেও তিনি তাদের কারো নিকট দু‘আ না করে শুধু আবূ হানীফার নিকট দু‘আ করলেন? এ ছাড়াও ইমাম আবূ হানীফার কোন শিষ্য থেকেও এরূপ প্রমাণিত হয়নি...। আর দ্বিতীয় প্রকার অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দুর্বল, যেগুলো বিদ‘আতী অসীলার প্রমাণ বহন করে, সেগুলো সম্পর্কেও কিছু সতর্কতামূলক আলোচনা হওয়া দরকার। বর্ণনাকারী আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দেন। তিনি চিরঞ্জীব মৃত্যুবরণ করবেন না। তুমি ক্ষমা কর আমার মা ফাতিমা বিনতু আসাদকে। তাকে উপাধি দাও তার অলংকার হিসাবে, তার প্রবেশ পথকে প্রশস্ত কর, তোমার নাবীকে সত্য ও আমার পূর্ববর্তী সকল নাবীকে সত্য জানার দ্বারা। কারণ তুমিই সকল দয়ালুর মাঝে সর্বাপেক্ষা দয়াবান। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি তাবারানী “মু‘জামুল কাবীর” গ্রন্থে (২৪/৩৫১,৩৫২) ও “মু‘জামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১৫২-১৫৩) বর্ণনা করেছেন এবং তার সূত্রে আবূ নু‘য়াইম “হিলইয়াহতুল আওলিয়া” গ্রন্থে (৩/১২১) উল্লেখ করেছেন। যখন ‘আলী (রাঃ)-এর মা ফাতিমা মারা গেলেন, তখন কবর খোঁড়ার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত দো‘আ পড়েন বলে কথিত আছে। এ হাদীসের সনদে রাওহ ইবনু সলাহ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে তাবারানী বলেনঃ তিনি হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বর্ণনাকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন ইবনু আদী (৩/১০০৫) বলেছেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু ইউনুস বলেনঃ তার থেকে বহু মুনকার হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে য‘ঈফ। ইবনু মাকূলা বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কোন কোন শিথিলতা প্রদর্শনকারী মুহাদ্দিস তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন ইবনু হিব্বান ও হাকিম। কিন্তু তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মুহাদ্দিসগণের মধ্যে যখন কোন হাদীসের ক্ষেত্রে এরূপ দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন তাদের দু’জনের কথা গৃহীত হয় না। কারণ তারা বহু অজ্ঞাত বর্ণনাকারীর হাদীসকেও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন, অথচ হাদীসটি সহীহ নয়। তারা উভয়ে শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। এ শাস্ত্রে যারা বেশি বিজ্ঞ তাদের নিকট রাওহ দুর্বল। আর হাদীস শাস্ত্রের থিওরি অনুযায়ী ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ প্রাধান্য পাবে যারা কাউকে নির্ভরযোগ্য বলবেন তার উপর। কাওসারীও তার “আল-মালাকাত” গ্রন্থে (পৃঃ ১৮৫) বলেছেনঃ সহীহ আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে হাকিম ও ইবনু হিব্বান শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। এ কথা বলে তিনি হাকিম ও ইবনু হিব্বান কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলা ব্যক্তির বর্ণনাকৃত হাদীসকে গ্রহণ করেননি। অতএব যেখানে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল হিসাবে উল্লেখ করেছেন, সেখানে ইবনু হিব্বান ও হাকিম নির্ভরযোগ্য বলেছেন, এ কথা বলে তার (কাওসারী কর্তৃক) এ হাদীসটিকে সহীহ বলা গ্রহণযোগ্য নয়। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি তার বাড়ী হতে সলাতের জন্য বের হয়, অতঃপর এ দু‘আ বলেঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তোমার নিকট প্রার্থনাকারীদের সত্য জানার দ্বারা, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি আমার এ চলাকে সত্য জানার দ্বারা। কারণ আমি অহংকার করে আর অকৃতজ্ঞ হয়ে বের হইনি...। তখন আল্লাহ তাঁর চেহারা সমেত তার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং তার জন্য এক হাজার ফেরেশতা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হাদীসটি দুর্বল। এটি ইবনু মাজাহ (১/২৬১-২৬২), আহমাদ (৩/২১), বাগাবী “হাদীসু আলী ইবনুল যা’য়াদ” গ্রন্থে (৯/৯৩/৩) ও ইবনুস সুন্নী (নং ৮৩) ফুযায়েল ইবনু মারযূক সূত্রে আতিয়া আল-আওফী হতে বর্ণনা করেছেন। দু’টি কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বলঃ ১। ফুযায়েল ইবনু মারযূক দুর্বল বর্ণনাকারী। একদল তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর একদল তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। তিনি আরো বলেনঃ তার হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না। হাকিম বলেনঃ তিনি সহীহার শর্তের মধ্যে পড়েন না। ইমাম মুসলিম তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করার কারণে দোষী হয়েছেন। নাসাঈ বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু হিব্বান তার “আস-সিকাত” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি ভুল করতেন। তিনি “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে আরো বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের বিপক্ষে ভুল করতেন এবং আতিয়া হতে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করতেন। লক্ষ্য করুন তাকে আবূ হাতিম ও নাসাঈর সাথে হাকিম এবং ইবনু হিব্বানও দুর্বল বলেছেন, অথচ তারা দু’জন নির্ভরযোগ্য বলার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। কাওসারী যে বলেছেনঃ শুধুমাত্র আবূ হাতিমই তাকে দুর্বল বলেছেন। কথাটি যে ঠিক নয় তার প্রমাণ মিলে গেছে। তিনি যে বলেছেন, দোষারোপটি ব্যাখ্যাকৃত নয়, সেটিও ঠিক নয়। কারণ আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি বহু ভুল করতেন। হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথার উপর নির্ভর করেছেন। এছাড়া তিনি বলেছেন যে, বুস্তি তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। বুস্তি হচ্ছেন ইবনু হিব্বান। তিনি কি বলেছেন আপনারা অবগত হয়েছেন। ২। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে আতিয়া আল-আওফী নামক দুর্বল বর্ণনাকারী। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, তবে বহু ভুল করতেন। এছাড়া তিনি একজন শি‘য়া মতাবলম্বী মুদাল্লিস বর্ণনাকারী ছিলেন। অতএব তাকে দোষ দেয়াটা ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ। ইবনু হিব্বান “আয-যু‘য়াফা” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে কতিপয় হাদীস শুনেন। অতঃপর যখন আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) মারা গেলেন, তখন তিনি কালবীর মজলিসে বসা শুরু করলেন। যখন কালবী বলতেনঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন..., তখন তিনি তা হেফয করে নিতেন। কালবীর কুনিয়াত ছিল আবূ সা‘ঈদ। তিনি তার থেকে বর্ণনা করতেন। তাকে যখন বলা হত এ হাদীসটি আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন? তখন তিনি বলতেনঃ আমাকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ সা‘ঈদ। ফলে লোকেরা ধারণা করত যে, তিনি আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বুঝাচ্ছেন, অথচ আসলে হবে কালবী। এজন্য তার হাদীস লিপিবদ্ধ করাই হালাল নয়। তবে আশ্চর্য হবার উদ্দেশ্যে লিখা যেতে পারে। যাহাবীও “আল-মীযান” গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম তিরমিযী আতিয়ার হাদীসকে হাসান বলেছেন। কিন্তু তার একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিরমিযী এ ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে পরিচিত। ইবনু দাহিয়া বলেনঃ তিনি বহু জাল এবং দুর্বল হাদীসের সনদকেও সহীহ বা হাসান বলে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে ইমাম যাহাবী বলেনঃ আলেমগণ ইমাম তিরমিযীর বিশুদ্ধকরণের উপর নির্ভর করেননি। আবুস সিদ্দীক হাদীসটির মুতাবা‘য়াত করেছেন। কিন্তু তার সনদে আব্দুল হাকিম ইবনু যাকুওয়ান রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু মা‘ঈন বলেনঃ তাকে আমি চিনি না। ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বললেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এর ব্যাখ্যা পূর্বেই দেয়া হয়েছে। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে ইযতিরাব। একবার এসেছে মারফূ‘ হিসাবে আরেকবার এসেছে মওকূফ হিসাবে। এছাড়া ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ্” গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সনদে বর্ণনাকারী ওয়াযে রয়েছেন, তিনি বিলাল হতে বর্ণনা করেছেন। এ ওয়াযে সম্পর্কে আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল, তিনি কিছুই না। তিনি তার ছেলেকে বলেনঃ তার হাদীসগুলো নিক্ষেপ কর, কারণ সেগুলো মুনকার। হাকিম বলেনঃ তিনি কতিপয় বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যরাও অনুরূপ বলেছেন। মোটকথা হাদীসটি উভয় সূত্রেই দুর্বল। একটি সূত্র অন্যটি হতে বেশী দুর্বল। বূসয়রী, মুনযেরী ও অন্যান্য ইমামগণ হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। বর্ণনাকারী আদম (আঃ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেনঃ হে আমার প্রভু! তোমার নিকট মুহাম্মদকে সত্য জেনে প্রার্থনা করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ বললেনঃ হে আদম। তুমি কীভাবে মুহাম্মদকে চিনলে, অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি ? আদম (আঃ) বললেনঃ হে আমার প্রভু। আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আপনার আত্মা থেকে আত্মার প্রবেশ ঘটান, তখন আমি আমার মাথা উঁচু করেছিলাম। অতঃপর আমি আরশের স্তম্ভগুলোতে (খুটি) লিখা দেখেছিলাম লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ। আমি জেনেছি যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি ব্যতীত অন্য কাউকে আপনি আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত করবেন না। সত্যই বলেছ, হে আদম। নিশ্চয়ই তিনি আমার নিকট সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি। তুমি তাঁকে হক জানার দ্বারা আমাকে ডাক। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। মুহাম্মদ যদি না হতো আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। হাদীসটি জাল। ইমাম হাকীম ’আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থে (২/৬১০) এবং তার সূত্রে ইবনু আসাকির (২/৩২৩/২) ও বাইহাকী ”দালায়েলুন নবুওয়াহ” গ্রন্থে (৫/৪৮৮) মারফূ’ হিসাবে আবুল হারিস আবদুল্লাহ ইবনু মুসলিম আল-ফিহরী সূত্রে আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনে আসলাম হতে ...বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ হাদীসটির সনদ সহীহ। যাহাবী তার বিরোধীতা করে বলেছেনঃ বরং হাদীসটি বানোয়াট। আব্দুর রহমান দুর্বল আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আল-ফিহ্রী কে তা জানি না। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ফিহরীকে ”মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে এ হাদীসটির কারণে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি (যাহাবী) বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল। বাইহাকী বলেনঃ হাদীসটি আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ একক ভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্বল। ইবনু কাসীর তার ”আত-তারীখ” গ্রন্থে (২/৩২৩) তা সমর্থন করেছেন। আর হাফিয ইবনু হাজার ”আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল। আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ সম্পর্কে বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করার দোষে দোষী। তিনি লাইস, মালেক এবং ইবনু লাহি’য়ার উপর হাদীস জাল করতেন। তার হাদীস লিখা হালাল নয়। হাকিম কর্তৃক এ হাদীসের বর্ণনা তার বিপক্ষেই গেছে। কারণ হাকিম সহীহ বললেও তিনি ”আল-মাদখাল ইলা মা’রিফাতিস সহীহে মিনাস সাকিমে” নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতা হতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। একই কথা আবূ নু’য়াইমও বলেছেন। ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেনঃ এ আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসগণ একমত। ইবনুল জাওযী বলেনঃ আপনি যদি হাদীস শাস্ত্রের পন্ডিতদের কিতাবগুলো খুঁজেন, তাহলে তাকে কেউ দুর্বল বলেননি এরূপ পাবেন না। বরং তাকে আলী ইবনুল মাদীনী এবং ইবনু সা’দ অত্যন্ত দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম তাহাবী বলেনঃ তার হাদীসের বিদ্বানদের নিকটে চরম পর্যায়ের দুর্বল। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি না জেনে হাদীসকে উলট পালট করে ফেলতেন। তিনি বহু মুরসাল বর্ণনা ও মওকুফ সনদকে মারফূ’ করে ফেলেছেন। এ জন্য তাকে পরিত্যাগ করাই হচ্ছে তার প্রাপ্য। আমি (আলবানী ) বলছিঃ সম্ভবত হাদীসটি ইসরাইলী বর্ণনা হতে এসেছে। ভুল করে আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফূ’ করে ফেলেছেন। কারণ আলোচিত ফেহরী সূত্রেই হাদীসটি মওকুফ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। আবূ বাক্র আজুরী ”আশ-শারী’য়াহ” গ্রন্থে (পৃ:৪২৭) তা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আবূ মারওয়ান উসমানী সূত্রে উসমান ইবনু খালিদ হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তারা দু’জনই দুর্বল। ইবনু আসাকিরও অনুরূপ ভাবে (২/৩১০/২) মদিনাবাসী এক শাইখ হতে ইবনু মাস’উদ (রাঃ)-এর সাথীদের থেকে বর্ণনা করেছেন ; এটির সনদে একাধিক মাজহূল বর্ণনাকারী রয়েছেন। মোটকথা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটিকে দু’ হাফিয যাহাবী ও আসকালানী বাতিল বলে হুকুম লাগিয়েছেন। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বর্ণিত ৪০৩ নং হাদীসটিও এ হাদীসটি বাতিল হওয়ার প্রমাণ বহন করে। বিঃদ্রঃ (কাওসারী এ জাল হাদীসকে সাব্যস্ত করার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। তার কথার বহুলাংশই স্ববিরোধীও বটে। এছাড়া তিনি তথাগত বহু ভুলও করেছেন। শাইখ আলবানী এ ”য’ঈফা” গ্রন্থেই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ পরিসরে তা বিষদভাবে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না। যার একান্তই প্রয়োজন মূল কিতাব দেখে নেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি)। (অনুবাদক) বর্ণনাকারী ধর্মীয় চেতনা আচ্ছাদিত করবে আমার উম্মাতের উত্তম উত্তম ব্যক্তিগণকে। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি তাবারানী (৩/১১৮/১, ১/১২৩), ইবনু আদী (১/১৬৩) ও মুখাল্লেস ”আল-ফাওয়াইদুল মুনতাকাত” গ্রন্থে (৬/৪৪/২) সালামুত তাবীল সূত্রে ফযল ইবনু আতিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন। বাগাবী বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। সালামুত তাবীল হাদীসের ক্ষেত্রে নিতান্তই দুর্বল বর্ণনাকারী। ইবনুল জাওযী বলেনঃ সালামুত তাবীল মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য] এবং ফযল ইবনু আতিয়াও তার ন্যায়। আমি (আলবানী) বলছিঃ ফযল ইবনু আতিয়া যদিও দুর্বল তবুও তাকে হাদীস জাল করার মত দোষ দেয়া যায় না। তবে সালামুত তাবীল তার বিপরীত। কারণ তাকে মিথ্যুক ও জালকারী হিসাবে একাধিক ব্যক্তি দোষী করেছেন। হ্যাঁ তার একটি মুতাবা’য়াত পাওয়া যায় মুহাম্মাদ ইবনু ফযল হতে, যেটি আবূ নু’য়াইম ”আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৬১) ও আল-খাতীব তার ”আত-তারীখ” গ্রন্থে (১৪/৭৩) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযলও মিথ্যুক। তার মুতাবা’য়াত দ্বারা খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাকে ইবনু মা’ঈন, ফাল্লাস ও অন্যরা মিথ্যুক বলেছেন। [মুতাবা’আতের অর্থ জানার জন্য ৫৭ পৃষ্ঠা দেখুন ]। তা সত্ত্বেও হাদীসটি জাল এরূপ হুকুম লাগানো যাচ্ছে না। কারণ এর শাহেদ অন্য সনদে মিলছে, যার অবস্থা এটির চেয়ে উত্তম। সেটি হাসান ইবনু সুফিয়ান তার ”মুসনাদ” গ্রন্থে, বিশ্র ইবনু মাতার তার ”হাদীস” গ্রন্থে (৩/৮৯/১), ইবনু মান্দা ”মা’রিফাতুস সাহাবা” গ্রন্থে (২/২৬৪/২), আবূ নু’য়াইম ”আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৭) ও আল-খাতীব ”আল-মুওয়াযি্যহ” গ্রন্থে (২/৫০) দূরায়েদ ইবনু নাফির সূত্রে আবূ মানসূর আল ফারেসী হতে বর্ণনা করেছেন। এ সনদটিও দুর্বল। কারণ আবূ মানসূর সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার হাদীস মুরসাল। আলোচ্য হাদীসটি বিভিন্ন ভাষায় ও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্ত সেগুলোর কোনটিই মিথ্যুক হতে খালী নয়। নিম্নে সেগুলোর তিনটি উল্লেখ করা হলোঃ বর্ণনাকারী ধর্মীয় চেতনা আচ্ছাদিত করবে কুরআন বহনকারীদেরকে। তাদের পেটে কুরআনকে ইজ্জত করার উদ্দেশ্যে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু আদী ”আল-কামিল” গ্রন্থে (৭/২৫২৯) ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব সূত্রে নিজ সনদে মু’য়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ (আরবী) ওয়াহাব হাদীস জাল করতেন। উকায়লী (৪/৩২৫) বলেনঃ (আরবী) তার সকল হাদীস বাতিল। সুয়ূতীও ইবনু আদীর বর্ণনায় ”জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। মানাবী বলেনঃ তার সনদে ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব ইবনে কাসীর রয়েছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী ”আল-মীযান” গ্রন্থে বলেন, ইবনু মা’ঈন বলেছেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি জাল করতেন। অতঃপর তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন যেগুলোর শেষে এটিও রয়েছে )- এ হাদীসগুলো মিথ্যা। বর্ণনাকারী ধর্মীয় চেতনা শুধুমাত্র আমার উম্মাতের নেককার ও সৎকর্মর্শীলদের মধ্যেই হবে। অতঃপর তা ফিরে যাবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (২৩/৬৯/২) বিশ্র ইবনু হুসাইন সূত্রে ...আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে মারফু’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ বিশ্র মিথ্যুক। ইমাম সুয়ূতী দাইলামী কর্তৃক “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থের বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। যাহাবী বলেন, দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি (বিশ্র) মাতরূক। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেন, আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি যুবায়ের ইবনু আদীর প্রতি মিথ্যারোপ করতেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ বিশ্র ইবনু হুসাইন জাল হাদীসের পাণ্ডুলিপি হতে বর্ণনা করতেন। তাতে প্রায় একশত পঞ্চাশটি জাল হাদীস ছিল। এটি সেগুলোরই একটি, যেমনটি যাহাবী তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। মানাবী বলেনঃ তায়ালিসীয়ও তাকে মিথ্যুক বলেছেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ইমাম সুয়ূতী মু’য়ায এবং আনাস (রাঃ)-এর হাদীস দু’টি “যায়লুল আহাদীছিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃঃ২৪) উল্লেখ করা সত্ত্বেও “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি ভূমিকায় বলেছেন যে, তিনি এ গ্রন্থটিকে মিথ্যুক এবং জাল বর্ণনাকারী হতে হেফাযাত করেছেন। বর্ণনাকারী আমার উম্মাতের সর্বোত্তম ব্যক্তিরা হচ্ছেন তাদের ধর্মীয় চেতনার অধিকারীগণ। যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা (তা হতে) প্রত্যাবর্তন করে। হাদীসটি বাতিল। হাদীসটি উকায়লী “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে (পৃঃ ২১৭), তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২৪৯), ইবনু শাযান “ফাওয়াইদু ইবনু কানে ওয়া গায়রিহি” গ্রন্থে (২/১৬৩) এবং সিলাফী “আত-তায়ূরিয়াত”গ্রন্থে (২/১৪০) আব্দুল্লাহ ইবনু কুমবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। উকায়লী বলেনঃ হাদীসটি সাব্যস্ত করতে আব্দুল্লাহ্র অনুসরণ করা যাবে না। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে আযাদী বলেনঃ “(আরবী)” (মুহাদ্দিসগণ) তাকে গ্রহণ করেননি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে যাহাবী এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি একটি বাতিল হাদীস। আসকালানীও তা স্বীকার করেছেন। তাবারানী হাদীসটি “মু’জামুল আওসাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যার সনদে ইয়াগনাম ইবনু সালেম ইবনে কুমবার রয়েছেন। তিনি মিথ্যুক, যেমনটি হায়সামী (৮/৬৮) ও সাখাবী (পৃঃ১৮৭) বলেছেন। মোটকথা ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস জাল। একমাত্র দুরায়েদের হাদীসটি বাদে। যেটি আবূ মানসূর আল ফারেসী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে (২৬)। সেটি শুধুমাত্র দুর্বল মুরসাল হওয়ার কারণে। বর্ণনাকারী আমার ও আমার উম্মাতের মাঝে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কল্যাণ নিহিত। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। সাখাবী “আল-মাকাসীদ” গ্রন্থে বলেছেনঃ আমাদের শাইখ ইবনু হাজার আসকালানী বলেছেনঃ হাদীসটি আমি চিনি না। ইবনু হাজার হায়তামী আল-ফাকীহ “আল-ফাতাওয়াল হাদীসাহ” গ্রন্থে (১৩৪) বলেছেনঃ এ শব্দ বর্ণিত হয়নি। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ কারণে সুয়ূতী “যাইলুল আহাদীছিল মাওযূ’আহ্” গ্রন্থে (১২২০ নং) উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হতে আমাদেরকে মুক্ত রাখে নিম্নের সহীহ হাদীস। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে......’। হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী দুনিয়া হচ্ছে মু’মিন ব্যক্তির এক পদক্ষেপ। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটি সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে (১/১৯৬) বলেনঃ এটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে, এছাড়া উম্মাতের সালাফ (সাহাবী ও তাবে’ঈ) এমনকি ইমামগণ হতেও জানা যায় না। হাদীসটি সুয়ূতী “যায়লুল আহাদীছিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১১৮৭ নং) উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী আখেরাতের অধিবাসীদের জন্য দুনিয়া হারাম আর দুনিয়ার অধিবাসীদের জন্য আখেরাত হারাম। দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি হারাম আল্লাহ্র ওয়ালাদের জন্য। হাদীসটি জাল। হাদীসটি সে সব হাদীসের একটি যার দ্বারা সুয়ূতী তার “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করে বলেছেন যে, দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে ইবনু আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসের সনদে জাবালাত ইবনু সুলায়মান নামে এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। যাহাবী তাকে “আয-যু’ইয়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ তার সম্পর্কে ইবনু মা’ঈন বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আমি (আলবানী) বলছিঃ সত্যিই যিনি এ হাদীস বর্ণনা করবেন তিনি নির্ভরযোগ্য হবেন না, বরং তিনি হবেন অত্যন্ত নিকৃষ্ট মিথ্যুক। কারণ এ হাদীসটি বাতিল তাতে কোন বিবেকমান মু’মিন সন্দেহ পোষণ করতে পারেন না। কীভাবে রসূল (সা) আখেরাতের অধিবাসী মু’মিনদের উপর দুনিয়াকে হারাম করেন। যার উত্তম উত্তম বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়াকে তাদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ হালাল করে দিয়েছেন তাঁর {هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا } অর্থঃ “তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য যমীনের সব কিছুকেই সৃষ্টি করেছেন” (সূরা: বাক্বারাহ্ : ২৯) এ বাণী দ্বারা, তিনি আরো বলেছেনঃ }قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ ۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ{ “আপনি বলে দিন আল্লাহ্র অলংকারাজী, যা তিনি তাঁ বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পানাহারের হালাল বস্তুগুলোকে হারাম করেছেন। আপনি বলে দিন সে নে’য়ামাতগুলো মু’মিনদের জন্যেই পার্থিব জীবনে এবং বিশেষ করে কিয়ামাত দিবসে.....” (সূরা আল-আরাফঃ ৩২)। (এই আয়াতের রেফারেন্স বইতে সূরা আলে ইমরানঃ ৩২ দেয়া আছে, যা ভুল। সঠিক হচ্ছে সূরা আল-আরাফঃ ৩২) অতঃপর কীভাবে বলা সম্ভব যে, রসূল (সাঃ) দুনিয়া ও আখেরাতকে একসাথে হারাম করে দিয়েছেন আল্লাহ্ ভক্তদের উপর। অথচ আল্লাহ্ ভক্তরাই হচ্ছেন কুরআনের ভক্ত। যারা তাকে প্রতিষ্ঠা করে এবং তাঁর নির্দেশনাবলীর উপর আমল করে। আর আখেরাত হয় জান্নাত নয়তোবা জাহান্নাম। আল্লাহ্ ভক্তদের উপর জাহান্নামকে আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন। এ সংবাদ তিনি নিজেই দিয়েছেন, যেমনিভাবে তিনি মু’মিনদের জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। কীভাবে এ মিথ্যুক বলে যে, রসূল (সাঃ) আখেরাতকে তাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন? অথচ এ আখেরাতেই রয়েছে জান্নাত, যা মুত্তাকীদের জন্য ওয়াদা করা হয়েছে। আমার ধারণা এ হাদীসটির জালকারী হচ্ছেন একজন মূর্খ সূফী। তিনি এ দ্বারা মুসলমানদের মাঝে সূফী আক্বীদাহ্ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। অতঃপর আমি দাইলামীর “মুসনাদ” গ্রন্থে এটির সনদ সম্পর্কে (২/১৪৮) অবহিত হয়েছি। তাতে (তিনজন) বর্ণনাকারী রয়েছেন, যাদেরকে আমি চিনি না। এ ছাড়াও এটি ইবনু যুরায়েজ হতে আন্ আন্ শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তিনি মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। [মুদাল্লিস-এর অর্থ হচ্ছে “দোষ গোপনকারী] বর্ণনাকারী দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের সতীন। নাবী (সাঃ) হতে এর কোন ভিত্তি নাই। যেমনটি “আল-কাশফ” সহ অন্যান্য গ্রন্থে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে ঈসা (আঃ)-এর বাণী হিসাবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী দুনিয়া থেকে তোমরা বেঁচে চল, কারণ তা হচ্ছে হারূত ও মারূতের দেয়েও অধিক যাদুকর। হাদীসটি মুনকার এর কোন ভিত্তি নেই। “তাঁখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (৩/১৭৭) ইরাকী বলেনঃ হাদীসটি ইবনু আবিদ-দুনিয়া ও বাইহাকী “শু’য়াবুল ঈমান” গ্রন্থে আবুদ-দারদা আর-রাহাবীর বর্ণনা সূত্রে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বাইহাকী বলেন, তাদের কেউ বলেছেনঃ আবুদ-দারদা কোন একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন। যাহাবী বলেনঃ আবুদ-দারদা কে তা জানা যায় না? আরো বলেনঃ এটি মুনকার, এর কোন ভিত্তি নেই। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে (৬/৩৭৫) তা সমর্থন করেছেন। যিনি ধারণা করবেন যে, আবুদ-দারদা সাহাবী তিনি ভুল করবেন। সুয়ূতী “জামে’উস সাগীর” ও “দুররুল মানসূর” গ্রন্থে (১/১০০) এমনটিই বুঝিয়েছেন বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেছেনঃ আবুদ-দারদা হতে। এ ক্ষেত্রে মানাবীও তার অনুসরণ করেছেন। মোটকথা হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ আবুদ-দারদাই, তিনি মাজহূল [অপরিচিত], তিনি সাহাবী নন। বর্ণনাকারী যে আযান দিবে সেই যেন ইকামাত দেয়। এ শব্দে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। বর্ণিত হয়েছে এ ভাষায় (আরবী) “যে আযান দিবে সে ইকামাত দিবে” এ ভাষাতেও হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আবূ নু’য়াইম “আখবাবু আসবাহন” গ্রন্থে (১/২৬৫, ২৬৬) ও ইবনু আসাকির (৯/৪৬৬, ৪৬৭) আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ আল-ইফরীকী সূত্রে ...বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি এ আল-ইফরীকীর কারণে দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল ছিলেন। ইমাম তিরমিযীও তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেছেনঃ (আরবী) ‘এ হাদীসটিকে ইফরীকী সূত্রেই চিনি, তিনি মুহাদ্দিসগণের নিকট দুর্বল।‘ হাদীসটিকে বাগাবীও “শারহুস সুন্নাহ” গ্রন্থে (২/৩০২) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম নাবাবীও “আল-মাজমূ’” গ্রন্থে (৩/১২১) তেমনটিই বলেছেন। বাইহাকী “সুনানুল কুবরা” গ্রন্থে (১/৪০০) দুর্বল বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। হাদীসটি অন্য সূত্রেও ইবনু উমার (রঃ) হতে আব্দু ইবনে হামীদ “আল-মুনতাখাব মিন মুসনাদিহি” গ্রন্থে (২/৮৮), আবূ উমাইয়্যাহ্ “আত-তারসূসী মুসনাদু ইবনে উমার” গ্রন্থে (১/২০২), ইবনু হিব্বান “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে (১/৩২৪), বাইহাকী, তাবারানী (৩/২৭/২) ও উকায়লী “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে (পৃ: ১৫০) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ সূত্রেও হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটিকে বাইহাকীও দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেনঃ সা’ঈদ ইবনু রাশেদ একক ভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তিনি দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজারও “আত-তালখীস” (৩/১০) গ্রন্থে অনুরূপ কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ আবূ হাতিম আর রাযী ও ইবনু হিব্বান “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে এ হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু আবী হাতিম “ইলালুল হাদীস” গ্রন্থে (নং ৩২৬) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার, সা’ঈদ হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। আরেকবার বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। ইবনু আবী হাতিম হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে (১/২৯৫) বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল ইবনে আতিয়া রয়েছেন। তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ তার অধিকাংশ হাদীসের মুতাবা’য়াত করেননি। বর্ণনাকারী দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। হাদীসটি জাল। যেমনিভাবে সাগানী (পৃ: ৭) ও অন্যরা বলেছেন। এটির অর্থও সহীহ নয়। কারণ এ ভালবাসা নিজেকে এবং সম্পদকে ভালবাসার মতই প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই মূলগত ভাবে বিদ্যমান। শারী’য়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ভালবাসার প্রশংসা করা যায় না। এটি ঈমানের জন্য অপরিহার্যও নয়। আপনারা কী দেখছেন না যে, এ ভালবাসায় মু’মিন এবং কাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বর্ণনাকারী মানুষের মাঝে এমন এক যামানা আসবে যখন তারা বাঘের ন্যায় হবে। অতঃপর যে ব্যক্তি বাঘ না হতে পারবে তাকে বাঘগুলো খেয়ে ফেলবে। হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। ইবনুল জাওযী তার ‘‘আল-মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (৩/৮০) দারাকুতনীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। এ সনদে যিয়াদ ইবনু আবী যিয়াদ আল-জাস্সাস নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। দারাকুতনী বলেনঃ যিয়াদ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]। সুয়ূতী তার ‘‘আল-লাআলী’’ গ্রন্থে (২/১৫২) বলেনঃ ‘‘আল-মীযান’’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, যিয়াদ দুর্বল হওয়ার বিষয়ে সকলে একমত পোষণ করেছেন। ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে, কখনও কখনও ত্রুটি করতেন। তাবারানীও হাদীসটি ‘‘মু‘জামুল আওসাত’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ তাবারানীর বর্ণনায় হায়সামী ‘‘আল-মাজমা’’ গ্রন্থে (৭/২৮৭, ৮/৮৯) উল্লেখ করে হাদীসটি সম্পর্কে বলেছেনঃ এর সনদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তি রয়েছেন যাদেরকে চিনি না। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি চল্লিশ দিনকে নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করবে, তার ভাষায় বিচক্ষনতার ঝর্ণাধারা উদ্ভাসিত হবে । হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি আবূ নু‘য়াইম ‘‘আল-হিলইয়্যাহ’’ গ্রন্থে (৫/১৮৯) মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা’ঈল সূত্রে আবূ খালেদ ইয়াযীদ ওয়াসেতী হতে, তিনি হাজ্জাজ হতে...বর্ণনা করেছেন। এছাড়া হুসাইন আল-মারওয়াযী ‘‘জাওয়ায়েদুয যূহুদ’’ গ্রন্থে (১/২০৪), ইবনু আবী শাইবাহ ‘‘আল-মুসান্নাফ’’ গ্রন্থে (১৩/২৩১) ও হান্নাদ ‘‘আল-যুহুদ’’ গ্রন্থে (৬৭৮ নং) উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার ‘‘মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (৩/১৪৪) আবূ ন‘য়াইম সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। ইয়াযীদ ইবনু আবী ইয়াযীদ আব্দুর রহমান ওয়াসেতী অধিক পরিমাণে ভুল করতেন, হাজ্জাজ ত্রুটি যুক্ত ব্যক্তি, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল অপরিচিত এবং আবূ আইউব (আরবী) হতে মাকহুলের শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি। সুয়ূতী ‘‘আল-লাআলী’’ গ্রন্থে (২/১৭৬) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইরাকী ‘‘তাখরীজুল ইহইয়া’’ গ্রন্থে শুধুমাত্র দুর্বল বলেই খ্যান্ত হয়েছেন। মাকহুল হতে মুরসাল হিসাবে তার অন্য একটি সূত্র রয়েছে, যাতে মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ও ইয়াযীদ নেই। আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদে বর্ণিত হাজ্জাজ হচ্ছেন ইবনু আরতাত-তিনি মুদাল্লিস, আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। তা সত্ত্বেও মুরসাল। হাদীসটিকে সাগানী ‘‘আহাদীসুল মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (পৃঃ ৭) উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটির অন্য একটি সনদ পেয়েছি, সেটি কাযা‘ঈ বর্ণনা করেছেন। তাতেও সেওয়ার ইবনু মুস‘য়াব নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে নাসাঈ সহ প্রমুখ মহাদ্দিসগণ বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। সুতরাং হাদীসটি দুর্বল। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি আসরের পরে ঘুমাবে, তার জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। ফলে সে শুধুমাত্র নিজেকেই দোষারোপ করবে । হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি ইবনু হিব্বান ‘‘আয-যু‘য়াফা ওয়াল মাতরূকীন’’ গ্রন্থে (১/২৮৩) খালিদ ইবনুল কাসেম সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী ‘‘মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (৩/৬৯) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। কারণ খালেদ মিথ্যুক। হাদীসটি মূলত ইবনু লাহী‘য়ার, খালিদ তা ছিনিয়ে নিয়েছেন। অতঃপর তাকে লাইস-এর সূত্রে গেথে দিয়েছেন। তৃতীয় সূত্রে মারওয়ান হতে বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি ইবনু আদী ‘‘আল-কামিল’’ গ্রন্থে (কাফ ২১১/১) ও সাহমী ‘‘তারীখু জুরজান’’ গ্রন্থে (৫৩) উল্লেখ করেছেন। মারওয়ান বলেনঃ আমি লাইস ইবনু সা‘দকে এমতাবস্থায় বললাম যে, তিনি রমযান মাসে আসরের পরে ঘুমাচ্ছিলেনঃ হে আবূল হারিস! কী হয়েছে আপনার যে আপনি আসরের পরে ঘুমাচ্ছেন? অথচ আমাদেরকে ইবনু লাহী‘য়া হাদীস শুনিয়েছেন ...। উত্তরে আবুল লাইস বললেনঃ আকীল হতে ইবনু লাহী‘য়ার হাদীসের কারণে আমি এমন কিছু ছাড়ব না যা আমার উপকার করে! (ইবনু লাহী‘য়া মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল)। বর্তমান যুগের বহু মাশায়েখ আসরের পরে ঘুমাতে নিষেধ করে থাকেন যদিও তার প্রয়োজন হয়। তাকে যদি বলা হয় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। তাহলে দ্রুত উত্তরে বলেনঃ ফাযায়েলে আমল-এর ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। ভেবে দেখুন পূর্ববর্তীদের চিন্তা-চেতনা আর পরবর্তীদের জ্ঞানের মধ্যে কত বড় পার্থক্য? লাইস ছিলেন মুসলমানদের ইমাম এবং প্রসিদ্ধ এক ফাকীহ। তার কথা প্রমাণ বহন করছে তার চিন্তাচেতনা ও জ্ঞানের গভীরতার, অথচ পরবর্তীগণ কী বলেন? হাদীসটি আবূ ই‘য়ালা ও আবূ ন‘য়াইম ‘‘আত-তিব্বুন্নাবাবী’’ গ্রন্থে (২/১২) আম্র ইবনু হুসাইন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ আম্রকে খাতীব বাগদাদীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ মিথ্যুক বলেছেন। এ আমরই নিম্নের ডালের হাদীস বর্ণনাকারী... বর্ণনাকারী তোমরা কদু (লাউ) অপরিহার্য করে নাও, কারণ তা অনুভূতি [জ্ঞান] বৃদ্ধি করে। তোমরা ডালকে অপরিহার্য করে নাও, কারণ তার পবিত্রতা বর্ণিত হয়েছে সত্তর জন নবীর ভাষায়। হাদীসটি জাল। হাদীসটি তাবারানী “মু‘জামুল কাবীর” গ্রন্থে (২২/৬২ নং১৫২) আম্র ইবনুল হুসাইন সূত্রে ইবনু ‘আলাসা হতে বর্ণনা করেছেন। সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৫১) বলেছেনঃ আম্র ও তার শাইখ তারা দু’জনেই মাতরূক। আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ুতী হাদীসটি “জামে‘উস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ! যারাকশী “আল-লাআলিল মানসূরা আহাদীসিল মাশহূরাহ” (১৪৩ নং) গ্রন্থে বলেনঃ ইবনুস সালাহ-র হাতের লিখায় পেয়েছি যে, এটি একটি বাতিল হাদীস। হাদীসটি ইবনুল জাওযী “মাওযূ‘আত” গ্রন্থে (২/২৯৪, ২৯৫) কয়েকটি সূত্রে উল্লেখ করেছেন এবং বানোয়াট হিসেবে হুকুম লাগিয়েছেন। সাগানী “আহাদীসুল মাওযূ‘আহ” গ্রন্থে (পৃঃ৯) ও ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়া “আল-মানার” গ্রন্থে (পৃঃ২০) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সাদৃশ্যপূর্ণ সেই সব জালকারীদের সাথে যারা মান্না ওয়াস সালওয়ার উপর এটিকে পছন্দ করেছেন। ‘আলী আল-কারী তার “মাওযূ‘আত” গ্রন্থে (পৃঃ ১০৭) এটিকে বানোয়াট হিসাবেই স্বীকার করেছেন। ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমূ‘উ ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেনঃ হাদীসটি জ্ঞানীজনদের ঐক্যমতে মিথ্যা ও বানোয়াট। এ মিথ্যুক আম্রের আরো একটি হাদীসঃ (আরবী লিখা) বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় (অন্যকে বিপদগ্রস্থ করে) সম্পদ অর্জন করল, আল্লাহ্ তাকে নরকে নিয়ে যাবেন। হাদীসটি সহীহ্ নয়। হাদীসটি কাযা‘ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (কাফ ২/৩৭) ও রামহুরমুযী “আল-আমসাল” গ্রন্থে (পৃঃ ১৬০) আম্র ইবনুল হুসাইন সূত্রে... বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি সাকেত [নিক্ষেপযোগ্য]। এ আম্র ইবনুল হুসাইন মিথ্যুক। পূর্বে তাঁর সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। সাখাবী “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে (নং ১০৬১) বলেছেনঃ আম্র মাতরূক। আবূ সালমা হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু সালাম। তিনি ইয়াহইয়া ইবনু জাবের এর কাতিব [লেখক], তিনি সাহাবী নন। এছাড়া আবূ সালমা আল-হিমসী সম্পর্কে মানাবী বলেনঃ তিনি একজন মাজহূল [অপরিচিত] তাবে‘ঈ। বর্ণনাকারী নাবীগণ হচ্ছেন নেতা, ফাকীহগণ হচ্ছেন সর্দার আর তাদের মজলিস গুলো হচ্ছে অতিরিক্ত। হাদীসটি বানোয়াট। হাদীসটি দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃঃ ৩২২) এবং কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (১/২৩) ... হারিস ইবনু আব্দিল্লাহ হামদানী আল-আওয়ার সূত্রে... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। হারিসকে জামহূর ওলামা দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনুল মাদীনী বলেনঃ “(আরবী)” তিনি মিথ্যুক। শু‘বা বলেনঃ আবূ ইসহাক তার থেকে মাত্র চারটি হাদীস শ্রবণ করেছেন। “আল-আশফ” গ্রন্থে এসেছে (১/২০৫), ‘আলী আল-কারী’ বলেনঃ এটি বানোয়াট হাদীস। অনুরূপ কথা “খুলাসা” গ্রন্থেও এসেছে। বর্ণনাকারী আসমান ও যমীনের মাঝে রমাযান মাস ঝুলন্ত থাকে। তাকে যাকাতুল ফিতর প্রদান না করা পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে উঠিয়ে নেয়া হয় না। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি “জামে’উসসাগীর” গ্রন্থেএসেছে। তাতে বলা হয়েছে ইবনু শাহীন তার “আত-তারগীব” গ্রন্থে এবং যিয়া জারীর হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাকে দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। মানাবী তার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ হাদীসটি ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ সহীহ নয়। সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ওবায়েদ আল-বাসরী নামক বর্ণনাকারী আছেন, তিনিমাজহূল। আমি (আলবানী) বলছিঃ “ইলালুল মুতানাহিয়া” গ্রন্থে (৮২৪) ইবনুল জাওয়াযীর পূর্ণাঙ্গ কথা হচ্ছেঃ (আরবি) তার অনুসরণ করা যায় না। হাফিয ইবনু হাজার তার কথাকে সমর্থন করেছেন। আনাস (রাঃ)–এর হাদিস হতে আল-খাতীব (৯/১২১) বর্ণনা করেছেন, তার থেকে ইবনুল জাওযী “আল-ইলাল” গ্রন্থে (৮২৩) এবং ইবনু আসাকির (১২/২৩৯/২) বাকিয়া ইবনুল ওয়ালিদ সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনু উসমান ইবনে উমার হতে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আব্দুর রহমানকে আমি চিনি না। বাহ্যিক ব্যাপার এই যে, তিনি বাকিয়ার মাজহুল শাইখদের একজন। ইবনুল জাওযী ধারণা করেছেন যে, তিনি হচ্ছেন বাকরাবী। যার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ লোকেরা তার হাদীসকে গ্রহণ করেনি। বর্ণনাকারী যে ব্যাক্তি মল-মুত্রত্যাগ করল, অতঃপর ওযু করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি ওযু করল, অতঃপর সলাত আদায় করলনা সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি সলাত আদায় করল, অতঃপর আমাকে ডাকলো না, সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি আমাকে ডাকলো আর তার ডাকে সাড়া দিলাম না তার সাথে আমি রূঢ় আচরণ করলাম। অথচ আমি রূঢ় আচরণকারী প্রতিপালক নই। হাদীসটি জাল। সাগানী (পৃঃ৬) ও অন্যরা এ কথাই বলেছেন। হাদীসটি বানোয়াট হওয়ার প্রমাণ এই যে, মল-মুত্র ত্যাগ করার পর ওযু করা এবং ওযুর পরে সলাত আদায় করা মুসতাহাব কাজের অন্তর্ভূক্ত। অথচ হাদীসটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এ দু’টো ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত (আরবি) ‘আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল’ একথার কারণে। অথচ এটি কোন অজানা কথা নয় যে, এসব কর্ম মুসতাহাবের অন্তর্ভূক্ত। নিম্নের হাদীসটি উপরের হাদীসের ন্যায়ঃ বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারত করল, অথচ আমাকে যিয়ারত করলনা, সে আমার ব্যাপারে রূঢ় আচরণ করল। হাদীসটি জাল। হাফিয যাহাবী “আল-মীযান” (৩/২৩৭) গ্রন্থেএ কথাই বলেছেন। সাগানি “আল-আহাদীসুল মাওযূ’আত” গ্রন্থে (পৃঃ৬), অনুরূপভাবে যারাকশী ও শাওকানী “আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূ’য়াহ ফিল আহাদীসিল মাওযূ‘আত” গ্রন্থে (পৃঃ৪২) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এর সমস্যা হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনে নু‘মান। ইবনু আদী (৭/২৪৮০) ওইবনু হিব্বান “আয-যু‘য়াফা” গ্রন্থে (৩/৭৩) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “মাওযূ‘আত” গ্রন্থে (২/২১৭) উল্লেখ করেছেন। তারা উভয়ে (ইবনু আদী ও ইবনু হিব্বান) বলেছেনঃ মুহাম্মাদ নির্ভরযোগ্যদের উদ্বৃতিতে বড়সমস্যা (মিথ্যা) বহন করে আনতেন এবং দৃঢ় চেতাদের উদ্বৃতিতে উল্টা পাল্টা হাদীস বর্ণনা করতেন। দারাকুতনী বলেনঃ এ হাদীসটির সনদের মধ্যে দোষনীয় ব্যক্তি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে নু‘মান। এছাড়া হাদীসটি বানোয়াট হওয়ার প্রমাণ এটিও যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর ব্যাপারে রূঢ় আচরণ করা যদি কুফরী নাও হয় , তবুও তা বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে যে তাঁকে যিয়ারত করা ছেড়ে দিবে, সে বড় গুনাহে লিপ্ত হল। এমনটি হলে হাদীসটি যিয়ারত করাকে হজ্জের ন্যায় অপরিহার্য করে। অথচ যিয়ারত করা ওয়াজিব এমন কথা কোন মুসলিম ব্যক্তি বলেননি। যিয়ারত করা যদি নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যমও হয় তবুও তা আলেমদের মুসতাহাবের গন্ডি হতে আর বেশী কিছু হবেনা। অতএব কীভাবে তাঁর যিয়ারত পরিত্যাগকারী তাঁর সাথে রূঢ় আচরণকারী হয় এবং কীভাবে তাঁর থেকে বিমুখ হয়? বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার পিতা ইব্রাহীমকে একই বছরে যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি জাল। যারাকশী “আল-লাআলিল মানসূরা” গ্রন্থে (১৫৬ নং) বলেনঃ কোন কোন হাফিয বলেছেনঃ হাদীসটি বানোয়াট। হাদীস সম্পর্কে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এটিকে হাদীস বলে বর্ণনা করেননি। অনুরূপভাবে ইমাম নাবাবী বলেনঃ এটি বানোয়াট, এর কোন ভিত্তি নেই। সুয়ূতী এটিকে “যায়লুল আহাদীছিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১১৯ নং) উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ ইবনু তাইমিয়্যা ও নাবাবী বলেছেনঃ হাদীসটি জাল, ও ভিত্তিহীন। শাওকানীও “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (পৃঃ ৪২) তা সমর্থন করেছেন। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি হজ্জ করবে, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে, সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/২০৩/২) এবং “আওসাত” গ্রন্থে (১/১২৬/২), ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে, দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃঃ ২৭৯), বাইহাকী (৫/২৪৬) ও সিলাফী “আস-সানী আশার মিনাল মাশীখাতিল বাগদাদীইয়াহ্” গ্রন্থে (২/৫৪) বর্ণনা করেছেন। তারা প্রত্যেকেই হাফসা ইবনু সুলায়মান আবী সুলাইম হতে......বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ দু’টি কারণে হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বলঃ ১। লাইসা ইবনু সুলাইম-এর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল, যেমনটি বলা হয়েছে ২ নং হাদীসের আলোচনায়। ২। হাফস ইবনু সুলায়মান হচ্ছেন আল-কারী, তাকে আল-গাযেরী বলা হয়। তিনি নিতান্তই দুর্বল, যেমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন হাফিয ইবনু হাজার “আল-তাকবীর” গ্রন্থে নিম্নোক্ত কথার দ্বারাঃ (আরবি) তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে মাতরূক [অগ্রণযোগ্য]। কারণ তার সম্পর্কে ইবনু মা’ঈন বলেনঃ (আরবি) তিনি ছিলেন মিথ্যুক; যেমনটি ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে এসেছে। ইবনু খাররাশ বলেনঃ (আরবি) তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন। এ হাদীসের সনদের সমর্থন সূচক আরো কিছু সনদ দ্বারা হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।২ যেগুলো এটিকে আরো শক্তিশালী করে না। কারণ দুর্বলের দিক থেকে সেগুলোর অবস্থা এটির সনদ চেয়ে কম নয়। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে আরো হাদীস এসেছে, যেগুলো সুবকী “আল-শেফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর সবই দুর্বলের অন্তর্ভুক্ত, যার একটি অপরটির চেয়ে বেশী দুর্বল। ইবনু তাইমিয়্যা “আল-কা’য়েদাতুল জালীলা” গ্রন্থে (পৃঃ৫৭) বলেনঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে যে সব হাদীস এসেছে সবই দুর্বল। দ্বীনি বিষয়ে সেগুলোর কোনটির উপরে নির্ভর করা যায় না। সে কারণেই সহীহ গ্রন্থ এবং “সুনান” গ্রন্থের লেখকগণ এ সংক্রান্ত কোন হাদীস তাদের গ্রন্থগুলোতে বর্ণনা করেননি। সেগুলো বর্ণনা করেছেন তারাই যারা দুর্বল হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। যেমন দারাকুতনী, বায্যার, ও আরো অনেকে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন যে, এ হাদীসের মিথ্যাবাদিতা সুস্পষ্ট, এটি মুসলমানদের ধর্ম বিরোধী। কারণ যে ব্যক্তি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবিত থাকাকালীন মু’মিন অবস্থায় তাঁকে যিয়ারত করেছে, সে সাহাবীগণের দলভুক্ত, যাদের ফযীলত বর্ণনা করে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কোন ব্যক্তি সাহাবীগণের পরে যে কোন আমলের দ্বারা, যদিও সেটি ওয়াজিব-এর পর্যায়ভুক্ত হয় যেমন হজ্জ, জিহাদ, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ও তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা তবুও সাহাবগণের সমকক্ষ হতে পারবে না। অতএব কীভাবে তাদের সমকক্ষ হবে এমন একটি আমলের দ্বারা যেটি (তাঁর কবর যিয়ারত ) সকল মুসলিমের ঐক্যমতে ওয়াজিব নয়। বরং তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাই শারী’য়াত সম্মত নয়। বরং সেটি নিষিদ্ধ। তবে কেউ যদি তাঁর মসজিদে সলাত কায়েমের উদ্দেশ্যে সফর করে তাহলে মুস্তাহাব এবং সে সাথে কবর যিয়ারত ও করতে পারবে। সতর্কবানীঃ বহু লোক মনে করেন যে, ইবনু তাইমিয়্যা এবং সালাফীদের মধ্য থেকে যারা তাঁর নীতি অনুসরণ করেছেন শুধুমাত্র তারাই বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারত করা নিষেধ। এটি মিথ্যা ও অপবাদ মাত্র। যাদের ইবনু তাইমিয়্যার (কিতাবের) গ্রন্থরাজী সম্পর্কে জ্ঞান আছে, তারা জানেন যে, ইবনু তাইমিয়্যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতকে শারী’য়াহ সম্মত এবং মুস্তাহাব বলেছেন। যদি তাঁর সাথে কোন প্রকার শারী’য়াত বিরোধী কর্মকান্ড এবং বিদ’আত জড়িত না হয় তাহলেই। যেমন যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাহন প্রস্তুত করা বা শুধু তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপক ভিত্তিক নিম্নোক্ত হাদীসের কারণেঃ (আরবি) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন প্রস্তুত কর না। তিনটি মসজিদ ছাড়া শুধুমাত্র অন্য মসজিদগুলোতে যাওয়াকেই বাতিল করা হয়নি, যেমনটি বহুলোক ধারণা করে থাকেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন স্থানে যাওয়াকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাই সেটি মসজিদ বা কবর বা অন্য কোন স্থান হোক না কেন। এর দলীল আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসঃ বুসরা ইবনু আবূ বুসরা বলেনঃ আমি তূর পাহাড় হতে ফিরে এসে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হলাম। আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথা হতে আসলে? আমি বললাম তূর হতে। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি যদি তোমাকে তূরের দিকে বের হওয়ার পূর্বে পেতাম তাহলে তুমি বের হতে না। কারণ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আরোহী প্রস্তুত কর না তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন তৈরী করো না। (আল-হাদীস)। হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। দেখুন “আহকামুল জানায়েয” (পৃঃ ২২৬)। ২ {যেমনঃ তাবারানী তাঁর “আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/১২৬/২) আহমাদ ইবনু রাশদীন সূত্রে “আলী ইবনুল হাসান ইবনে হারুন আনসারী হতে হাফস ইবনু সুলায়মানের মুতাবা’য়াত হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ আহমাদ ইবনু রাশদীন সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ মিথ্যুক বলেছেন এবং তাঁর উপর বহুকিছু ইনকার করা হয়েছে। যাহাবী তার কতিপয় বাতিল হাদীস উল্লেখ করেছেন। এছারাও একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারীর সমাবেশ ঘটেছে।} বর্ণনাকারী সন্তান পিতার উত্তম ভূমি। হাদীসটির কোন ভিত্তি নাই। ইমাম সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানাত” গ্রন্থে (পৃঃ ৭০৬) এ কথা বলেছেন। ইমাম সুয়ূতীও তার “আদ-দুরার” গ্রন্থে (পৃঃ ১৭০) যারাকশীর (আত-তাজকিরাহ পৃঃ ২২১) গ্রন্থের অনুসরণ করে এরূপই বলেছেন। সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৪) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এটির অর্থের প্রয়োগও সহীহ্ নয়। কারণ নাবীগণের মধ্যে এমন আছেন যার পিতা ছিলেন মুশরিক, নাফারমান। যেমন- ইব্রাহীম (আঃ)-এর পিতা আযর। তাদের মধ্যে এমনও আছেন যার সন্তান ছিলেন মুশরিক। যেমন- নূহ (আঃ)-এর পুত্র। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর অথবা যে কোন একজনের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাকে সৎ কর্মশীলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। হাদীসটি জাল। ত্ববারানী হাদীসটি “মু’জামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃঃ ১৯৯) এবং “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (১/৮৪/১) উল্লেখ করেছেন। তার থেকে ইস্পাহানী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/২২৮) মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু ‘আলা বাজালী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি আব্দুল করীম আবী উমাইয়াহ হতে......বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং তার অনুসরণ করে “আল-লিসান” গ্রন্থে ইবনু হাজার বলেছেনঃ “(আরবি)” উকায়লী বলেনঃ ‘তিনি মজহহূল এবং ইয়াহইয়া হচ্ছেন মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]।’ আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ইয়াহইয়ার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। তাকে ওয়াকী‘ মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ “(আরবি)” ‘তিনি মিথ্যুক, হাদিস জালকারী।’ ইবনু আদী বলেনঃ তার বর্ণনাগুলোতে দুর্বলতা সুস্পষ্ট এবং তার হাদীসগুলো বানোয়াট। তার শাইখ আব্দুল করীম আবূ উমাইয়াহ ইবনু আবিল মুখারিকও দুর্বল। তবে তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করা যায় না। এ কারণে শুধুমাত্র তার (আব্দুল করীম) কথা উল্লেখ করে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ বর্ণনা করে হাফিয হায়সামী সঠিক কাজটি করেননি। তিনি বলেছেনঃ (৩/৬০) তাবারানী হাদীসটি “মু’জামুস সাগীর” এবং “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাতে আব্দুল করীম আবূ উমাইয়াহ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন, তিনি দুর্বল। ইমাম সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৩৪) বলেছেনঃ (আরবি) (আব্দুল করীম দুর্বল, ইয়াহ্ইয়া ইবনুল ‘আলা এবং মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান দু’জনই মাজহূল)। শুধুমাত্র এভাবে কারণ দর্শিয়ে ঠিক করেননি। কারণ ইয়াহইয়া ইবনুল ‘আলা মাজহূল নন বরং তিনি পরিচিত, তবে মিথ্যুক হিসাবে। এছাড়াও হাদীসটির সনদে ইযতিয়াব সংঘটিত হয়েছে। এর কারণও বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে। অতঃপর তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রতিটি আয়াত অথবা অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু আদী (১/২৮৬), আবূ নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪৪-৩৪৫) ও আব্দুল গনী আল-মাকদেসী “সুনান” গ্রন্থে (২/৯১)............আম্র ইবনু যিয়াদ সূত্রে ............বর্ণনা করেছেন। কোন মুহাদ্দিস (আমার ধারণা তিনি হচ্ছেন ইবনু মুহিব কিংবা যাহাবী) “সুনানুল মাকদেসী” গ্রন্থের হাশিয়াতে (টীকাতে) লিখেছেন, (আরবি) এ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি। ইবনু আদী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল। এ সনদে এটির কোন ভিত্তি নেই। আম্র ইবনু যিয়াদ (তিনি হচ্ছেন আবুল হাসান আস-সাওবানী)-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার অন্যান্য হাদীসের সাথে এ হাদীসটির ব্যাপারে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেন। সে সব হাদীসের একটি সম্পর্কে বলেনঃ (আরবি) জাল (বানোয়াট)। অতঃপর বলেনঃ আম্র ইবনু যিয়াদ-এর এ হাদীসটি ছাড়া আরো হাদীস রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু আছে নির্ভরযোগ্য থেকে চুরি করা এবং কিছু আছে বানোয়াট। তাকে সেগুলো জালকারী হিসাবে দোষী করা হয়েছে। দারাকুতনী বলেনঃ (আরবি) তিনি হাদীস জাল করতেন। এ কারণে ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (৩/২৩৯) ইবনু আদীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঠিকই করেছেন। অথচ সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৪০) বলেছেনঃ হাদীসটির সমর্থনে শাহেদ আছে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটিতে পূর্বের হাদীসের সনদটি উল্লেখ করেছেন। যেটি সম্পর্কে আপনি জেনেছেন যে, সেটিও জাল হাদীস। যদিও বলা হয়েছে সেটি শুধু দুর্বল। তা সত্ত্বেও সেটিকে হাদীসের শাহেদ হিসাবে ধরা যেতে পারে না। কারণ এটির সাথে সেটির ভাষার কোন মিল নেই। আর জাল হাদীস উল্লেখ করতে কোন উপকারিতাও নেই। [শাহেদ অর্থ জানতে দেখুনঃ ৫৬ নং পৃষ্ঠা]। উল্লেখ্য কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা মুস্তাহাব এ মর্মে সহীহ সুন্নাহ হতে কোন প্রমাণ মিলে না। বরং সহীহ সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, কবর যিয়ারতের সময় মৃত্যু ব্যক্তিদের জন্য শুধু সালাম প্রদান করা এবং আখেরাতের স্মরণ করাই হচ্ছে শারী’য়াত সম্মত। সালাফে সালেহীনের ‘আমল এর উপরেই হয়ে এসেছে। অতএব কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা ঘৃণিত বিদ’আত। যেমনটি স্পষ্ট ভাবে পূর্ববর্তী একদল ওলামা বলেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ ও অন্যন্য ইমামগণ, কারণ এ মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি। ইবনু উমার হতে দাফনের সময় সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষ অংশ পাঠের যে কথা বলা হয়েছে তা সহীহ সনদে প্রমাণিত হয়নি। যদি ধরেইনি সহীহ তাহলে তা শুধু মাত্র দাফনের সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। [কিন্তু ধরে নিয়ে সহীহ্ বানানো কী সঠিক ]। অতএব আমাদেরকে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে আর বিদ’আত হতে সতর্ক হয়ে তা হতে বেঁচে চলতে হবে। যদিও লোকেরা বিদ’আতকে ভাল কাজ হিসাবে দেখে। কারণ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল বিদ’আতই পথভ্রষ্টতা। বর্ণনাকারী বহু সন্তানের পিতা দরিদ্র সৎ মু’মিন বান্দাকে আল্লাহ ভালবাসেন। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি ইবনু মাজাহ (২/৫২৯) এবং উকায়লী “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৬১) হাম্মাদ ইবনু ঈসার সূত্রে মূসা ইবনু ওবায়দাহ হতে, তিনি কাসিম ইবনু মিহরান হতে ............বর্ণনা করেছেন। উকায়লী কাসেম-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ (আরবি) ‘কাসেম কর্তৃক ইমরান ইবনু হুসাইন হতে শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি এবং তার থেকে হাদীসটি বর্ণনাকারী মূসা ইবনু ওবায়দাহ মাতরূক।‘ বূসায়রী “আয-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২৫৩) উকায়লীর একথাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ এ সনদটি দুর্বল। আমি (আলবানী) বলছিঃ উকায়লীর কথা হতে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার দু’টি কারণ স্পষ্ট হয়েছে। কারণ দুটি হচ্ছে সনদে বিচ্ছিন্নতা এবং ইবনু ওবায়দার দুর্বলতা। এটির তৃতীয় কারণ হচ্ছে কাসেম ইবনু মিহরানের মাজহূল হওয়া। হাফিয ইবনু হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাজহূল [অপরিচিত]। চতুর্থ কারণ হাম্মাদ ইবনু ঈসা ওয়াসেতী সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ তিনি দুর্বল। এ কারণে হাফিয ইরাকী বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল, যেমনভাবে মানাবী উল্লেখ করেছেন। হাদীসটিকে সাখাবীও "আল-মাকাসিদ" গ্রন্থে (২৪৬) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির আরেকটি সুত্র পেয়েছি। কিন্তু সেটির দ্বারা শুধু এটির দুর্বলতাই বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি মুহাম্মাদ ইবনু ফযল-এর সুত্রে যায়েদ ইবনু 'আমী মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন হতে বর্ণনা করেছেন। এটি ইবনু আদী (১/২৯৫) ও আবূ নু'য়াইম (২/২৮২) উল্লেখ করেছেন। এটি দুর্বল হওয়ার পিছনে তিনটি কারণঃ ১। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন ও ইমরান ইবনু হুসাইনের মধ্যে সনদে বিচ্ছিন্নতা। কারণ তিনি ইমরান হতে শুনেননি, যেমনটি দারাকুতনী বলেছেন। ২। যায়েদ আল-'আমী, তিনি হচ্ছেন ইবনুল হাওয়ারী, তিনি দুর্বল। ৩। মুহাম্মাদ ইবনু ফযল; তিনি একজন মিথ্যুক, যেমনভাবে ফাল্লাস ও আরো অনেকে বলেছেন। বর্ণনাকারী তোমাদের কারোর উপর যখন তার পশুটি বোঝা স্বরূপ হয়ে যাবে অথবা তার স্ত্রীর চরিত্র অথবা তার পরিবারের যে কোন একজনের চরিত্র মন্দ হয়ে যাবে, তখন সে যেন তার কানে আযান দেয়। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি গাযালী দৃঢ়তার সাথে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা বলে "ইয়াহইয়াউল উলূমিদ-দ্বীন" গ্রন্থে (২/১৯৫) উল্লেখ করেছেন। তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ হাদীসটি আবূ মানসূর আদ-দাইলামী "মুসনাদুল ফিরদাউস" গ্রন্থে হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনে আবী তালিব (রাঃ) হতে দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ "মুসনাতুল ফিরদাউস" গ্রন্থে (৩/৫৫৮) হাদীসটির ভাষা নিম্নরূপ (আরবি) ‘মানুষ অথবা পশুর মধ্যে যার চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে তোমরা তার কান দু’টোতে আযান দিবে’। বর্ণনাকারী তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আঁকড়ে ধর। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। সাখাঁবী "আল-মাকাসিদ" গ্রন্থে এরূপই বলেছেন। সাগানী "আল-আহাদীসুল মাওযূ’আত" গ্রন্থে (পৃঃ৭) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। অথচ ইমাম গাযালী মারফূ‘ হিসাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন! তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ ইবনু তাহের "কিতাবুত তাযকিরাহ" গ্রন্থে (৫১১) বলেনঃ সাধারণ লোকদের মাঝে হাদীসটি পরিচিত, অথচ সহীহ্ বা দুর্বল বর্ণনাতেও এটির কোন ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত হতে পারিনি। বর্ণনাকারী যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরূপ হয়ে যাবে, তখন তোমরা মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারণ করবে। হাদীসটি জাল। ইবনু তাহের বলেনঃ এটির সনদে ইবনুল বাইলামানী রয়েছেন। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা ইবনু উমার (রাঃ) হতে এমন এক কপি বর্ণনা করেছেন, যেটিকে জাল করার দোষে তাকে দোষী করা হয়েছে। হাফিয ইরাকী বলেনঃ এ সূত্রেই ইবনুল বাইলামানীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনু হিব্বান হাদীসটি "আয-যু‘য়াফা" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান-এর সূত্রে ইবনুল জাওযী "আল-মাওযূ‘আত" গ্রন্থে (১/২৭১) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির অন্য সমস্যা হচ্ছে ইবনু আব্দির রহমান বাইলামানী হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস হারেসী; তিনি দুর্বল। ইবনু আদী (২/২৯৭) হাদীসটি ইবনু আব্দির রহমান বাইলামানী হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস আল-হারেসীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ (আরবি) ‘তার বর্ণনাকৃত অধিকাংশ হাদীস মাহফূয নয় (নিরাপদ নয়)।’ ইবনুল জাওযী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস কিছুই না এবং তার শাইখ ইবনুল বাইলামানী তার ন্যায়। তিনি তার পিতা হতে জাল কপির মাধ্যমে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এটিকে উমার ইবনু আব্দিল আযীয-এর ভাষ্য হিসাবে জানা যায়। সুয়ূতী "আল-লাআলিল মাসনূ‘য়াহ" গ্রন্থে তার এ কথাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু হারিস সুনান ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারীদের একজন। "আল-মীযান" গ্রন্থে বলা হয়েছে এ হাদীসটি তার অদ্ভুত বর্ণনাগুলোর একটি। ইবনু হারিস সম্পর্কে কিছু আলোচনা না করে এখানে ইবনুল বাইলামানীর সম্পর্কে বলাই উত্তম। কারণ সকলেই তার দুর্বল হওয়ার বিষয়ে একমত। আর কেউ কেউ ইবনু হারিসকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন। অতএব এ হাদীসের সমস্যা হচ্ছে-ইবনুল বাইলামানী। যার সম্পর্কে সাখাবীও "আল-মাকাসিদ" গ্রন্থে ইবনু তাহেরের ভাষ্যের ন্যায় বলেছেন। শাইখ ’আলী আল-কারী বলেনঃ (আরবি) হাদীসটি বানোয়াট। তা সত্ত্বেও হাদীসটি সুয়ূতী "জামে‘উস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী দ্রুত চলা মু’মিনের উজ্জলতাকে বিতাড়িত করে দেয়। হাদীসটি নিতান্তই মুনকার। হাদীসটি আবূ হুরাইরা, ইবনু উমার, আনাস ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। প্রথমতঃ আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর হাদীস; এটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ প্রথম সূত্রঃ হাদীসটি আবূ সা’ঈদ আল-মালীনী “আল-আরবা’উন ফি শুয়ূখিস সূফিয়া” গ্রন্থে (৫/১), আবূ নু’য়াইম “হিলইয়াহ্” গ্রন্থে ( ১০/২৯০), আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১/৪১৭) এবং তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১১৭৮) উল্লেখ করেছেন। যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনুল আসমা’ঈর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ হাদীসটি নিতান্তই মুনকার। অতঃপর তিনি হাদীসটির সনদ উল্লেখ করে বলেনঃ এটি সহীহ্ নয়। হাফিয ইবনু হাজারও “আল-লিসান” গ্রন্থে তার (যাহাবীর) কথাকে সমর্থন করেছেন। [ মুনকার অর্থ জানার জন্য দেখুন (৫৬) পৃষ্ঠা]। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ প্রথম সূত্রটি দুর্বল হওয়ার কারণ তিনটিঃ ১। এতে মুহাম্মাদ ইবনু আসমা’ঈ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তিনি মাজহূল [অপরিচিত]। ২। ইবনু আসমা’ঈ হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব আল- ফারাজীর জীবনী পাচ্ছিনা। ৩। আবূ মাশার যার নাম নাজীহ ইবনু আব্দির রহমান সিন্দী, সবার ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপভাবে ইমাম বুখারীও বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। দ্বিতীয় সূত্রঃ ইবনুআদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২) তার থেকে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (২/২১৯) আব্দুল্লাহ ইবনু সালেম সূত্রে আম্মার ইবনু মাতার রাহাবী হতে বর্ণনা করে জাওযী বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। এ সূত্রের বর্ণনাকারী আম্মার ইবনু মাতার রাহাবী সম্পর্কে আবূ হাতিম আর–রাযী বলেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইবনু আদী বলেনঃ তার হাদীস গুলো বাতিল। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল। তৃতীয় সূত্রঃ ইবনুআদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২) এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী আবূ শিহাব আব্দুল কুদ্দূস সূত্রে… বর্ণনাকরেছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ (আরবী) তার বহু মিথ্যা [হাদীস] রয়েছে যেগুলো তিনি জাল করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে এটিকে মুনকার হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এ তিনটি সূত্রের প্রথমটি উত্তম তা সত্ত্বেও সেটি দুর্বল বহুবিধ কারণে। দ্বিতীয়তঃ ইবনু উমার (রাঃ)-এরহাদীস; এটি আব্বাস দাওরী “তারীখু ইবনু মা’ঈন” গ্রন্থে (কাফ ২/৪১), ইবনু আদী (৫/১৩, ৭/৭৭), আলখাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (৫/৯১/২), ওয়াহেদী “ওয়াসীত” গ্রন্থে (৩/১৯৪/১০), সা’লাবী “তাফসীর” গ্রন্থে (৩/৭৮/২) ও ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১১৭৭) বর্ণনা করেছেন। এর সনদে ওয়ালীদ ইবনু সালামা (জর্দানের কাজী) এবং উমার ইবনু সহবান নামক দু’জন বর্ণনাকারী রয়েছেন। এ উমার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ এ উমারের হাদীসগুলোর অনুসরণ করেননি। তার অধিকাংশ হাদীস মুনকার। আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি খুবই দুর্বল। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। তার থেকে বর্ণনাকারী ওয়ালীদ ইবনু সালামা তার চাইতেও মন্দ। তার সম্পর্কে একাধিক ব্যক্তি বলেছেনঃ তিনি বড়ই মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ (আরবী) তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন। তৃতীয়তঃ আনাস (রা)-এর হাদীস; হাদীসটি ইবনু বিশরান “ আল-‘আমালী” গ্রন্থে (২৩/৬৯/২) ও আল-খাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (২/২২/১) মুহাম্মদ ইবনু ইউনুস ইবনু কামেল হতে, তিনি আব্দুস সালাম ইবনু সুলায়মান আযদী হতে, তিনি আবান হতে … বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি বাতিল। এ সনদে উল্লেখিত কোন ব্যক্তিই নির্ভরযোগ্য নয়। আবান সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। শু’বা বলেনঃ (আরবী) আবানের নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করার চেয়ে কোন ব্যক্তির যেনা করাটা বেশি উত্তম (অর্থাৎ জাল হাদীস বর্ণনা করা যেনার চেয়েও জঘন্য)। এ কথাটিই প্রমাণ করে যে তিনি মিথ্যুক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। আব্দুস সালাম ইবনু সুলায়মান আল-আযদী মাজহূলুল হাল (তার অবস্থা অজ্ঞাত)। তিনি একজন শামী বর্ণনাকারী। অথচ এ সনদটি শামী নয়। অতএব তিনি এ হাদীসের বর্ণনাকারী নন এটিই সুস্পষ্ট। ইউসুফ ইবনু কামিল আল-আত্তার; তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলা হয়নি। অর্থাৎ তিনি মাজহূল [অপরিচিত]। মুহাম্মদ ইবনু ইউনুস; তিনি হচ্ছেন কুদাইমী। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ (আরবী) তাকে (হাদীস) জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে। ইবনু হিব্বান বলেনঃ সম্ভবত তিনি হাজারাধিক হাদীস জাল করেছেন। আবূ দাঊদ, মূসা ইবনু হারুণ এবং কাসিম ইবনু মুতাররীয তাকে মিথ্যুক বলেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ তাকে হাদীস জাল করার ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে। চতুর্থতঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ)- এরহাদীস; সুয়ূতী তার “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি ইবনু নাজ্জারের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার সনদ পাইনি। আমার বেশীর ভাগ ধারণা এটিও অন্যান্যটির ন্যায় দুর্বল। এক কথায় এ হাদীসটি সম্পর্কে বর্ণিত সকল সনদ নিতান্তই দুর্বল। এজন্য একটি সনদ অপরটিকে শক্তিশালী করে না। শাইখ ‘আলী আল-কারী “শারহুশ শামায়েল” গ্রন্থে (১/৫২) এটিকে যুহ্রীর বাণী বলে উল্লেখ করেছেন। এটি যে হাদীস নয় তার জন্য এ কথাই যথেষ্ট যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলার সময় দ্রুতচ লতেন। (দেখুন তিরমিযীর “মুখতাসারুশ শামায়েল” (পৃঃ৭১ ও ২০), ইমাম বুখারীর “আদাবুল মুফরাদ” (১১৯), তাবাকাতু ইবনু সা’দ (১/৩৭৯-৩৮০) এবং মাজমা’উয যাওয়াইদ” (৮/২৭৩,২৮১)। এটি সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে। উমারও (রাঃ) দ্রুত চলতেন। দেখুন “তাবাকাতু ইবনে সা’দ” (১/৩৭৯-৩৮০)। বর্ণনাকারী যদি নারী জাতি না থাকত, তাহলে সত্যিই আল্লাহর ইবাদত করা হত। হাদীসটি জাল। এটির দু’টি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ প্রথম সূত্রটিতে বর্ণনাকারী আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-‘আমী রয়েছেন। তিনি তার পিতা যায়েদ হতে…বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী হাদীসটি (কাফ ১/১৩২) উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি মুনকার। এ সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্রে হাদীসটি চিনি না। নির্ভর যোগ্য বর্ণনা কারীগণ আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-‘আমীর কোন হাদীসকে সমর্থন করেননি। আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেনঃ (আরবী) মুহাদ্দিসগণ তাকে গ্রহণ করেননি। ইবনু মা’ঈন বলেনঃ তিনি একজন মিথ্যুক, খবীস। আবূ হাতিম বলেনঃ তার হাদীস ছেড়ে দেয়া উচিত, তিনি মুনকারুল হাদীস। তিনি তার পিতাকে দোষী করতেন। তার থেকে তিনি মহাবিপদ বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবনী) বলছিঃ তার পিতা যায়েদ দুর্বল। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (২/২৫৫) ইবনু আদীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এর কোন ভিত্তি নেই। আব্দুর রহীম ও তার পিতা উভয়েই মাতরূক। সুয়ূতী ইবনুল জাওযীর সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৫৯) বলেছেনঃ এটির শাহেদ রয়েছে, কিন্তু তার এ সমালোচনা যথার্থ নয়। কারণ এর শাহেদ হিসাবে যে হাদীসটি উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটি আলোচ্য হাদীসটির চেয়ে উত্তম নয়। হাদীসটি নিম্নরূপঃ (আরবি) ‘নারীরা যদি না থাকত, তাহলে পুরুষরা জান্নাতে প্রবেশ করত।’ কারণ এটির সনদে বিশ্র ইবনু হুসাইন নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন। তিনি মাতরূক, মিথ্যা বলতেন। “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে হাদীসটির ভাষা এসেছে, (আরবি) ‘যদি নারী জাতি না থাকত তাহলে যথাযথ আল্লাহর ইবাদত করা হতো।’ সুয়ূতী বিশ্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুধুমাত্র বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। এ জন্য তার সমালোচনা করে ইবনু ইরাক “তানযীহুশ শারী’য়াহ” গ্রন্থে (২/২০৪) বলেছেনঃ “(আরবী) বরং তিনি মিথ্যুক, জালকারী, তার হাদীস অন্য হাদীসের সমর্থনে শাহেদ হবার যোগ্য নয়।’ এ বিশ্র সম্পর্কে ২৮ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। বর্ণনাকারী আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে সুয়ূতী “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে বলেছেনঃ সম্ভবত কোন হুফ্ফায-এর গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তা আমাদের নিকট পৌঁছেনি। আমার নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ একথা এটাই সাব্যস্ত করে যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিছু হাদীস উম্মাতের মধ্য হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিমের এরূপ বিশ্বাস রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়। মানাবী সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ হাদীসটি মুহাদ্দিসদের নিকট পরিচিত নয়। এটির কোন সহীহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত হতে পারিনি। শাইখ জাকারিয়া আল-আনসারী “তাফসীর বায়যাবী” গ্রন্থের টীকাতে (কাফ ২/৯২) মানাবীর কথাটি সমর্থন করেছেন। এছাড়া হাদীসটির অর্থও বিচক্ষণ আলেমদের নিকট অপছন্দনীয়। ইবনু হায্ম “আল-ইহকাম ফি উসূলিল আহকাম” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস নয় এ ইঙ্গিত দেয়ার পর বলেনঃ এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ হত, তাহলে মতৈক্য অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন মুসলিম ব্যক্তি বলেন না। তিনি অন্য এক স্থানে বলেনঃ এটি বাতিল, মিথ্যারোপ। এ বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেননা। অথচ সেদিকে তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বরং তাদের নিকট এ চার মাযহাব যেন একাধিক শরী’য়াতের ন্যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلْقُرْءَانَ ۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ ٱللَّـهِ لَوَجَدُوا۟ فِيهِ ٱخْتِلَـٰفًا كَثِيرًا অর্থঃ “যদি (এ কুর’আন) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তাহলে তারা তাতে বহু মতভেদ পেত।” সূরা নিসাঃ ৮২ আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ তা’আলার নিকট হতে নয়। অতএব কীভাবে এ মতভেদকে অনুসরণীয় শারী’য়াত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয়? আর কীভাবেই তা নাযিলকৃত রহমত হতে পারে? মোট কথা শারী’য়াতের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব হচ্ছে যতদূর সম্ভব তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারণ এটি হচ্ছে উম্মাতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি। যেমনিভাবে আল্লাহপাক বলেছেনঃ وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنَـٰزَعُوا۟ فَتَفْشَلُوا۟ وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ “আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে।" (আনফালঃ ৪৬ ) অতএব মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসেবে তার নামকরণ করা সম্পূর্ণ আয়াত বিরোধী কথা, যার অর্থ খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদবিহীন (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যার কোন ভিত্তি নেই) এ জাল হাদীস ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই। এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন, অথচ তারা লোকদের মধ্যেস র্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত করে না। ইবনু হাযম তার উত্তরে বলেনঃ কক্ষনও নয়। তাদেরকে এ নিন্দা সম্পৃক্ত করবেনা। কারণ তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ভুল করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং একটি সওয়াব পাবেন। সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের গুণাহ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেননি আর সত্যকে জানার গবেষণার ক্ষেত্রে তারা অলসতাও করেননি। ফলে তাদের মধ্যে যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি দু’টি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ধর্মীয় ঐসকল বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলোর সমাধান লুকায়িত, যা আমাদের নিকট এখনও পৌঁছেনি। উল্লেখিত নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে আল্লাহর রজ্জুর সম্পর্কে (কুর’আনকে) এবং নাবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে, তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল প্রতীয় মান হওয়ার পরেও। বরং কুর’আন ও হাদীসকে পরিত্যাগ করার মানসে অন্য ব্যক্তির সাথে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধঅনুসরণ করে, গোঁড়ামী ও অজ্ঞতার দিকে আহ্বানকারী হিসেবে। সে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে কুর’আন ও হাদীসের যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ করে। এরাই হচ্ছে নিন্দনীয় মতভেদকারী। বর্ণনাকারী আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু আব্দিল বার “জামে’উল ইলম” (২/৯১) ও ইবনু হায্ম “আল-ইহকাম” (৬/৮২) গ্রন্থে সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারিস ইবনু গোসাইন হতে, তিনি আ’মাশ হতে, তিনি আবূ সুফিয়ান হতে… বর্ণনা করেছেন। ইবনু আব্দিল বার বলেনঃ (আরবি) ‘এ সনদটি দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না, কারণ এ সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন মাজহূল ।’ ইবনু হায্ম বলেনঃ এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিইয়ান রয়েছেন, তিনি দুর্বল আর হারিস ইবনু গোসাইন হচ্ছেন মাজহূল। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি। আমি (আলবানী) বলছিঃ সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলায়মান আত-তাবীল, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খাররাশ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ (আরবী)……………… তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। হারিস মাজহূল হলেও আবূ সুফিইয়ান দুর্বল নয় যেমনভাবে ইবনু হায্ম বলেছেন। তিনি বরং সত্যবাদী যেরূপ ইবনু হাযার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন। ইমাম আহমাদ বলেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়, যেমনভাবে ইবনু কুদামার “আল-মুনতাখাব” গ্রন্থে (১০/১৯৯/২) এসেছে। তবে হাদীসটি জাল হওয়ার জন্য সালামই যথেষ্ট। বর্ণনাকারী যখনই তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে কিছু প্রাপ্ত হবে তখনই তার উপর ‘আমল করবে। তা ছেড়ে দিতে তোমাদের কারো ওযর চলবে না। যদি কিতাবুল্লাহতে (সমাধান) না থাকে, তাহলে আমার নিকট হতে (সমাধান হিসাবে) প্রাপ্ত অতীত সুন্নাহকে গ্রহণ করতে হবে। যদি আমার পক্ষ হতে অতীত কোন সুন্নাতে সমাধান না মিলে, তাহলে আমার সাহাবীগণ যা বলেছেন তা গ্রহণ করবে। কারণ আমার সাহাবীগণ আসমানের নক্ষত্রের ন্যায়। অতএব তোমরা যে কোন জনের কথা গ্রহণ করলেই হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আমার সাহাবীগণের মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ। হাদীসটি জাল। হাদীসটি খাতীব বাগদাদী “কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়াহ্” গ্রন্থে (পৃঃ ৪৮) এবং আবুল আব্বাস আল-আসাম তার “হাদীস” গ্রন্থে (নং ১৪২) বর্ণনা করেছেন। এছাড়া তার থেকে বাইহাক্বী “আল-মাদখাল” গ্রন্থে (নং ১৫২), দাইলামী (৪/৭৫) ও ইবনু আসাকির (৭/৩১৫/২) সুলায়মান ইবনু আবী কারীমা সূত্রে যুওয়াইবির হতে, আর তিনি যহ্হাক হতে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি অত্যন্ত দুর্বল। ইবনু আবী হাতিম তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (২/১/১৩৮) সুলায়মান ইবনু আবী কারীমা সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। যুওয়াইবির ইবনু সা’ঈদ আল-আযদী মাতরূক, যেমনভাবে দারাকুতনী, নাসাঈ ও অন্য মুহাদ্দিসগণ বলেছেন। ইবনুল মাদীনী তাকে নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর যহ্হাক; তিনি হচ্ছেন ইবনু মাজাহিম আল-হিলালী। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-র সাথে তার সাক্ষাত ঘটেনি। বাস্তব কথা হচ্ছে এ যে, হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে যুওয়াইবির-এর কারণে খুবই দুর্বল। যেমনভাবে সাখাবী “আল-মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বলেছেন। কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে এটি বানোয়াট। সুয়ূতী বলেন যে, হাদীসটির মধ্যে কিছু ফায়েদাহ রয়েছে। কথা হচ্ছে যেটি হাদীস হিসেবে সাব্যস্তই হচ্ছে না সেটিতে ফায়েদা খুঁজার যৌক্তিকতা কোথায়? বর্ণনাকারী আমার মৃত্যুর পরে যে বিষয়ে আমার সাথীগণ মতভেদ করেছে, সে বিষয়ে আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি আমাকে অহী মারফত জানিয়েছেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার সাথীগণ আমার নিকট আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যাদের কতকজন অন্যজনের চেয়ে অতি উত্তম। অতএব যে ব্যক্তি তাদের মতভেদকৃত বস্তু থেকে কিছু গ্রহণ করেছে সে আমার নিকট সঠিক পথের উপরেই রয়েছে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু বাত্তা “আল-ইবানাহ্” গ্রন্থে (৪/১১/২) এবং আল-খাতীবও বর্ণনা করেছেন। এছাড়া নিযামুল মুলক “আল-‘আমালী” গ্রন্থে (১৩/২), দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/১৯০), যিয়া “আল-মুনতাকা” গ্রন্থে (২/১১৬) ও ইবনু আসাকির (৬/৩০৩/১) নু’য়াইম ইবনু হাম্মাদ সূত্রে আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-‘আমী হতে… বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি বানোয়াট। কারণ নু’য়াইম ইবনু হাম্মাদ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি বহু ভুল করতেন। আর আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-‘আমী; মিথ্যুক। তার সম্পর্কে ৫৬ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থের ভাষ্যকার মানাবী বলেনঃ ইবনুল জাওযী “আল-ইলাল” গ্রন্থে বলেছেনঃ এ হাদীসটি সহীহ নয়। কারণ নু’য়াইম দোষণীয় ব্যক্তি আর আব্দুর রহীম সম্পর্কে ইবনু মা’ঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটি বাতিল। বর্ণনাকারী অবশ্যই আমার সাথীগণ নক্ষত্রতুল্য। অতএব তোমরা তাদের যে কারো কথা গ্রহণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনু আব্দিল বার মু’য়াল্লাক হিসাবে (২/৯০) বর্ণনা করেছেন এবং তার থেকে ইবনু হাযম মারফূ’ হিসাবে আবূ শিহাব হান্নাত সূত্রে হামযা যাযারী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আব্দু ইবনে হুমায়েদ “আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ” (১/৮৬) গ্রন্থে, এবং ইবনু বাত্তা “আল-ইবনাহ” গ্রন্থে (৪/১১/২) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু আব্দিল বার বলেছেনঃ (আরবি) ‘এ সনদটি সহীহ নয়, হাদীসটি নাফে‘ হতে এমন কেউ বর্ণনা করেননি যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়।’ আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হামযা হচ্ছে আবূ হামযার ছেলে; দারাকুতনী তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাতরূক। ইবনু আদী বলেনঃ (আরবি) তার অধিকাংশ বর্ণনা জাল [বানোয়াট] ইবনু হিব্বান বলেনঃ (আরবি) ‘তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে এককভাবে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন। সুতরাং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করাই হালাল নয়। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার জাল হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর একটি হচ্ছে এটি। ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৬/৮৩) বলেনঃ এটিই স্পষ্ট হয়েছে যে, এ বর্ণনাটি আসলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং বর্ণনাটি যে মিথ্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেনঃ (আরবি) অর্থঃ “আর তিনি মনোবৃত্তি হতে কিছু বলেন না। তাঁর উক্তি অহী ছাড়া আর অন্য কিছু নয়।” (সূরা নাজম: ৩-৪) যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকল কথা শরীয়তের মধ্যে সত্য এবং তা গ্রহণ করা ওয়াজিব, তখন তিনি যা বলেন তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট হতেই আসে। আর আল্লাহর নিকট হতে যা আসে তাতে মতভেদ থাকতে পারে না, তাঁর এ বাণীর কারণে। (আরবি) অর্থঃ “আর যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে হতো, তাহলে তারা তাতে বহু মতভেদ পেত।” (সূরা নিসা:৮২) আল্লাহ্ তা’আলা মতভেদ ও দ্বন্দ্ব করতে নিষেধ করেছেন, তাঁর এ বাণী দ্বারা (আরবী) “আর তোমরা আপোষে বিবাদ করো না।” আনফালঃ ৪৬। অতএব এটি অসম্ভবমূলক কথা যে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করার নির্দেশ দিবেন, অথচ তাদের মধ্য হতে কেউ কোন বস্তুকে হালাল বলেছেন আবার অন্যজন সেটিকে হারাম বলেছেন। ইবনু হাযম এ বিষয়ে বলেছেনঃ সাহাবীগণের মধ্য হতে এমন মতামতও আছে যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় তারা তাতে ভুল করেছেন সুন্নাত বিরোধী হওয়ার কারণে। অতঃপর (৬/৮৬) বলেছেনঃ কীভাবে সম্ভব তাদের অন্ধ অনুসরণ করা যারা ভুল করেছেন, আবার সঠিকও করেছেন? ইবনু হাযম মতভেদ নিন্দনীয় অধ্যায়ে (৫/৬৪) আরো বলেনঃ আমাদের উপর ফরয হচ্ছে আল্লাহর নিকট হতে কুরআনের মধ্যে যা এসেছে ইসলাম ধর্মের শারী’য়াত হিসাবে তার অনুসরণ করা এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সহীহ বর্ণনায় যা এসেছে তার অনুসরণ করা। কারণ সেগুলোও আল্লাহর নির্দেশ হিসাবে তাঁর নিকট ধর্মের ব্যাখ্যায় এসেছে। অতএব মতভেদ কখনও রহমত হতে পারে না। আবার তা গ্রহণীয় হতে পারে না। মোটকথা হাদীসটি মিথ্যা, বানোয়াট, বাতিল, কখনও সহীহ নয়, যেমন ইবনু হাযম বলেছেন। বর্ণনাকারী আমার পরিবারের সদস্যগণ নক্ষত্রতুল্য, তোমরা তাদের যে কোন জনের অনুসরণ করলে সঠিক পথ লাভ করবে। হাদীসটি জাল। এটি মিথ্যুক আহমাদ ইবনু নুবায়েতের কপিতে রয়েছে। আমি অবহিত হয়েছি যে, এ বর্ণনাটি নু’য়াইম আসবাহানীর। তার সনদে আহমাদ ইবনু কাসিম আল-মিসরী আল-লোকাঈ এবং আহমাদ ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আল-আশযা’ঈ রয়েছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আহমাদ উক্ত কপিতে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, এটি সেগুলোর একটি। যাহাবী এ কপি সম্পর্কে বলেনঃ (আরবী) ‘তাতে বহু সমস্যা রয়েছে! আহমাদ ইবনু ইসহাক দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বৈধ নয়, কারণ তিনি একজন মিথ্যুক।’ হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর কথাকে সমর্থন করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ আহমাদ ইবনু ইসহাক হতে বর্ণনাকারী অপর ব্যক্তি আহমাদ ইবনু কাসেম লোকাঈ দুর্বল। ইবনু আররাক হাদীসটি সুয়ূতীর “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ‘আহ” গ্রন্থের (পৃ: ২০১) অনুসরণ করে “তানযীহুশ শারী’য়াহ” গ্রন্থে (২/৪১৯) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া শাওকানীও “ফাওয়াইদুল মাযমূ’য়াহ ফিল আহাদীসিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃ:১৪৪) উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী শীলা খাদ্যও না আবার পানিয় দ্রব্যও না। হাদীসটি মুনকার। হাদীসটি তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (২/৩৪৭), আবূ ই’য়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ ২/১৯১), সিলাফী “আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (৭/১-২) ও ইবনু আসাকির (৬/৩১৩/২) আলী ইবনু যায়েদ ইবনু যাদ’আন সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল, কারণ ‘আলী ইবনু যায়েদ ইবনে যাদ’আন দুর্বল; যেরূপভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন। শু’বা ইবনু হাজ্জাজ বলেনঃ আমাদেরকে হাদীসটি ‘আলী ইবনু যায়েদ ইবনে যাদ’আন বর্ণনা করেছেন। তিনি মওকূফকে মারফূ’ হিসাবে বর্ণনাকারী। অর্থাৎঃ তিনি ভুল করতেন, মওকূফ হাদীসকে মারফূ’ করে ফেলতেন। এটিই হচ্ছে এ হাদীসটির সমস্যা। কারণ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ এটিকে আনাস (রাঃ) হতে মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এখানে মওকূফকে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করাটাই হচ্ছে মুনকার। হাদীসটিকে ইমাম আহমাদ (৩/২৭৯) ও ইবনু আসাকির (৬/৩১৩/২) শু’বা সূত্রে ... আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা শীলা বৃষ্টি হল, তখন আবূ তালহা সওম অবস্থায় ছিলেন। তিনি তা থেকে খাওয়া শুরু করলেন। তাকে বলা হলঃ আপনি সওম অবস্থায় শীলা খাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ এটিতো বরকত স্বরূপ। শাইখায়নের শর্তানুযায়ী এটির সনদ সহীহ। ইবনু হাযম “আল-ইহকাম” গ্রন্থে (৬/৮৩) সহীহ বলেছেন। তাহাবীও অন্য দু’টি সূত্রে আনাস (রাঃ) হতেই বর্ণনা করেছেন। ইবনু বায্যারও মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করার পর বলেছেনঃ এটি সা’ঈদ ইবনু মুসায়য়াব-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি তা অপছন্দ করেন এবং বলেন যে, এটি তৃষ্ণাকে দূর করে। সুয়ূতী হাদীসটি “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃ:১১৬) দাইলামীর সূত্রে উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন যে, এটি মাওযূ’ হাদীস। কিন্তু ইবনু আররাক “তানযীহুশ শারী’য়াহ” গ্রন্থে (১/১৫৯) তার বিরোধিতা করে বুঝিয়েছেন যে, এটি মাওযূ’ও নয়, তবে এটি দুর্বল। কারণ ইবনু হাজার বলেছেন যে, এটির সনদ দুর্বল। হাদীসটি মওকূফ হিসাবে সহীহ হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি ছিল আবূ তালহার অভিমত। অন্যরা তার এ মতের বিরোধীতা করেছেন। তার এ মতের সাথে কেউ ঐক্যমতও পোষণ করেননি। বর্ণনাকারী মেষ শাবক (যার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে) কতই না উত্তম কুরবানী। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (২/৩৫৫), বাইহাকী (৯/২৭১) ও ইমাম আহমাদ (২/৪৪৪, ৪৪৫) উসমান ইবনু ওয়াকিদ সূত্রে কিদাম ইবনু আব্দির রহমান হতে আর তিনি আবূ কাব্বাশ হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ “(আরবী)” হাদীসটি গারীব। একথা দ্বারা বুঝিয়েছেন এটি দুর্বল। এ জন্য হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর” মধ্যে (১০/১২) বলেছেনঃ “(আরবী)” ‘এটির সনদে দুর্বলতা রয়েছে।’ ইবনু হায্ম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/৩৬৫) বলেন, উসমান ইবনু ওয়াকিদ মাজহূল আর কিদাম ইবনু আব্দির রহমান জানি না সে কে। আবূ কাব্বাশ সম্পর্কে যা বলেছেন তা যেন ইঙ্গিত করছে যে, তিনি এ হাদীসের ব্যাপারে অপবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তি। কিন্তু তিনি কিদামের ন্যায় একজন মাজহূল, যেরূপভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বলেছেন। উসমান ইবনু ওয়াকিদ; অপরিচিত নয়। কারণ তাকে ইবনু মা’ঈন ও অন্যরা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যদিও আবূ দাঊদ তাকে দুর্বল বলেছেন। হাদীসটি অন্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার সনদে ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম আল-হুনায়নী রয়েছেন। বাইহাকী তার সম্পর্কে বলেনঃ “(আরবী)” ‘তিনি এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তার হাদীসে দুর্বলতা রয়েছে।‘ আমি (আলবানী) বলছিঃ ইসহাক আল-হুনায়নী দুর্বল এ বিষয়ে সকলে একমত। উকায়লী তাকে “আয-যু’য়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি নেই। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ “(আরবী)” ‘তিনি যিয়াদ ইবনু মায়মূন হতে আনাস (রাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে মিথ্যা বর্ণনা করতেন।‘ ইবনুত তুরকুমানী বাইহাক্বীর উপরোক্ত কথার সমালোচনা করে বলেনঃ হাদীসটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে উল্লেখিত ইসহাক সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেন যে, এটির সনদ সহীহ! আমি (আলবানী) বলছিঃ এ শাস্ত্রের প্রত্যেক বিজ্ঞজন জ্ঞাত আছেন যে, সহীহ এবং নির্ভরযোগ্য আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে হাকিম শিথিলতা প্রদর্শনকারী। এ জন্য তার দিকে কেউ দৃষ্টি দেন না। বিশেষ করে যখন তিনি অন্যদের বিপরীতে বলেছেন। এ কারণেই যাহাবী তার এ সহীহ্ বলাকে “তালখীস” গ্রন্থে সমর্থন করেননি, বরং বলেছেন (৪/২২৩) ইসহাক ধবংসপ্রাপ্ত আর হিশাম নির্ভরযোগ্য নন। ইবনুত তুরকুমানী সম্ভবত হানাফী হওয়ার কারণে হাদীসটি সহীহ্ বলার চেষ্টা চালিছেন। এটি এ ধরনের আলেমের ক্ষেত্রে বড় দোষ। বর্ণনাকারী মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়েয। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫), বাইহক্বী ও ইমাম আহমাদ (৬/৩৩৮) উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহ্ইয়া সূত্রে তার মা হতে, তার মা উম্মু বিলাল বিনতে হিলাল হতে ...বর্ণনা করেছেন। এটির সনদ দুর্বল উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহ্ইয়া মাজহূল হওয়ার কারণে, যেমনভাবে ইবনু হাযম (৭/৩৬৫) বলেছেন। তিনি আরো বলেনঃ উম্মু বিলাল বিনতে হিলালও মাজহূলা। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটি জানা যায়না। সিন্দী বলেন, দামায়রী বলেছেনঃ ইবনু হায্ম প্রথমটিতে ঠিক করেছেন দ্বিতীয়টিতে ঠিক করেননি। কারণ উম্মে বিলালকে ইবনু মান্দা, আবূ নু’য়াইম ও ইবনু আব্দিল বার সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার পরেও যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায়না। অথচ আযালী তাকে নির্ভরশীল বলেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সম্পর্কে ইবনু হাযম যা বলেছেন সেটিই সঠিক। কারণ তাকে একমাত্র এ হাদীসেই চেনা যায়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। যেমনটি জানা যায় তার সনদে অজ্ঞতাও রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, হাদীসটির মধ্যে দুর্বলতা সাব্যস্ত হওয়ার পরেও “নাসবুর রায়া” গ্রন্থে ইমাম যায়লা’ঈ (৪/২১৭, ২১৮) চুপ থেকেছেন। এ অধ্যায়ে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো ইবনু হায্ম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/৩৬৪-৩৬৫) উল্লেখ করেছেন এবং সবগুলোকেই দুর্বল বলেছেন। উকবা ইবনু ‘আমের-এর হাদীস ব্যতীত অন্যান্য হাদীসকে তার দুর্বল বলার সিদ্ধান্তটি সঠিক। উকবার হাদীসে বলা হয়েছেঃ “(আরবী)” ‘আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মেষ শাবক যবেহ করেছি’। হাদীসটি নাসাঈ (২/২০৪) ও বাইহাকী (৯/২৭০) বর্ণনা করেছেন। তাদের সনদটি ভাল। উকবার ক্ষেত্রে মেষ শাবক কুরবানী দেয়ার বিষয়টি তার জন্যই খাস ছিল, এ মর্মে হাদীসে বিবরণ এসেছে বা ওযরের কারণে ছিল। যেমন মুসিন্নার (যে ছাগল দু’বছর পার হয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে) দুষ্প্রাপ্যতা বা মূল্য বেশী হওয়ার কারণে। এটিই সঠিকের নিকটবর্তী। আসিম ইবনু কুলাঈব কর্তৃক তার পিতা হতে বর্ণনাকৃত হাদীসের কারণে। তার পিতা বলেনঃ (আরবি) “আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথীগণ কর্তৃক যুদ্ধের মধ্যে আদেষ্টিত হয়েছিলাম। আমরা ছিলাম অশ্বারোহী। কুরবানীর দিন মুসিন্নাগুলোর দাম বেড়ে গেলে, একটি মুসিন্নাহ দু’টি/তিনটি মেষ শাবক-এর বিপরীতে গ্রহণ করতাম। আমাদের মধ্য হতে মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আজকের দিনের ন্যায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, তখন আমরা একটি মুসিন্নাহ দু’টি/তিনটি মেষ শাবকের পরিবর্তে গ্রহণ করতাম। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসিন্নাহ যাতে যথেষ্ট হয় মেষ শাবকও তাতে যথেষ্ট হবে। হাদীসটি নাসাঈ, হাকিম (৪/২২৬) ও ইমাম আহমাদ বর্ণণা করেছেন। হাকিম বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ্। হাদীসটি তেমনই যেমনটি হাকিম বলেছেন। ইবনু হায্ম বলেন(৭/২৬৭) - হাদীসটি অত্যন্ত সহীহ্। হাদীসটি আবূ দাঊদ (২/৩), ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫) ও বাইহাক্বী (৯/২৭০) সংক্ষিপ্তাকারে মুশাজে’ ইবনু মাস’ঊদ আস-সুলামী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি প্রমাণ করেছে যে, মেষ শাবক কুরবানী দেয়া যাবে তখনই যখন মুসিন্নার দাম বেড়ে যাবে এবং তা দুষ্প্রাপ্য হবে। এ ব্যাখ্যাকে জাবির (রাঃ)-এর নিম্নের হাদীসটি সমর্থন করছেঃ (আরবি) “তোমরা মুসিন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু যবেহ কর না, তবে তোমাদের জন্য যদি তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায় তাহলে তোমরা মেষ শাবক যবেহ কর।” হাদীসটি মুসলিম (৬/৭২) ও আবূ দাঊদ (২/৩) (৩/৩১২, ৩২৭) বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর” মধ্যে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ্। জাবির হতে বর্ণিত হাদীসটি আসলে সহীহ নয়। কারণ আবূ যুবায়ের যখন জাবির হতে বা অন্যদের থেকে “(আরবী)” আন আন শব্দ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেন এবং তার হাদীসটি যদি লাইস ইবনু সা’দ কর্তৃক তার থেকে বর্ণিত না হয়, তাহলে আবূ যুবায়ের-এর শ্রবণ জাবির হতে সাব্যস্ত হয় না। এ হাদীসটিতে এদু’টোই বিদ্যমান। এ কারণে হাদীসটি দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত জাবির হতে তার শ্রবণ সাব্যস্ত না হয় অথবা সাক্ষীমূলক হাদীস না মিলে যা তার হাদীসকে শক্তি যোগাবে। আমি (আলবানী) প্রথমে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবেনা এ মতকে সমর্থন করেছি। কিন্তু এখন তা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং উপরে উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় যা বলেছি তাও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। বিশেষ বরে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবে এ মতকে সমর্থন করছি এবং শেষবধি বলছি যে, উম্মে হিলাল সূত্রে বর্ণিত হাদীস যদিও সনদের দিক দিয়ে সহীহ নয় তবুও সেটি অর্থের দিক দিয়ে সহীহ্। যার সাক্ষী দিচ্ছে উকবা এবং মুশাজে’র হাদীস। তবে যদি ছাগল ছানা হয় তাহলে তার দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। কারণ বারা (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে; তিনি বলেনঃ (আরবি) আমার খালু আবূ বুরদা সলাতের (কুরবানীর সলাতের) পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন, ফলে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সেটি গোশতের ছাগল”। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার নিকটে একটি ছাগল ছানা রয়েছে। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সেটিই কুরবানী কর, তবে তা তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না।“ অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ “তাই যবেহ কর, তবে তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে তা যথেষ্ট হবে না।” অপর এক বর্ণনায় এসেছেঃ ছাগল ছানা তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে না। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম (৬/৭৪-৭৬) এবং বুখারী তার ন্যায়। ফায়েদা: “(আরবী)” ‘মুসিন্না’ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে দুই বা তারও বেশী নতুন দাঁতধারী উট, গরু ও ছাগলকে। গরু ও ছাগলের মধ্যে যেটির বয়স দু’ বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে আর উটের ক্ষেত্রে যেটি সবে মাত্র ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে সেটিকে। আর “(আরবী)” মেষ শাবক (ভেড়ার বাচ্চা) বলতে বুঝানো হচ্ছে যেটির বয়স আরবী ভাষাবিদ ও জামহূরে আহলে ইলমের প্রসিদ্ধ মতানুসারে এক বছর পূর্ণ হয়েছে সেটিকে। (মোটকথাঃ ছাগলের এক বছরের বাচ্চা দিয়ে কুরবানী বিশুদ্ধ হবে না, তবে এক বছরের ভেড়া দিয়ে কুরবানী করা যাবে)। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাফিয সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃ: ১৯৮) বলেনঃ আবূ মুযাফ্ফার ইবনুস সাম’য়ানী বলেনঃ মারফূ’ হিসাবে এটিকে জানা যায় না। ইয়াহ্ইয়া ইবনু মু’য়ায আর-রাযীর ভাষ্য হিসাবে বলা হয়ে থাকে। ইমাম নাবাবী বলেছেনঃ এটি সাব্যস্ত হয়নি। সুয়ূতী হাদীসটি “যায়লুল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃ: ২০৩) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম নাবাবীর কথাটি উল্লেখ করে তাকে সমর্থন করেছেন। তিনি তার “আল-কাওলিল আশবাহ্” গ্রন্থে (২/৩৫১) বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। শাইখ আল-কারী তার “মাওযূ’আত” গ্রন্থে (পৃ: ৮৩) ইবনু তাইমিয়্যা হতে নকল করে বলেছেনঃ হাদীসটি বানোয়াট। ফিরোযাবাদী বলেনঃ যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয়। এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত একটি কথা। মুহাদ্দীসগণ এ হাদীসের উপর উল্লেখিত হুকুম লাগালেও পরবর্তী হানাফী ফাকীহ্গণের মধ্য হতে জনৈক ফাকীহ্ এটির ব্যাখ্যায় পুস্তক রচনা করেছেন, অথচ হাদীসটির কোন অস্তিত্বই নেই। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে এ ঘটনা প্রমাণ করছে যে, ঐসব ফাকীহ্গণ-মুহাদ্দিসগণ সুন্নাতের খিদমাতে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা হতে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করেননি। এ জন্য তাদের গ্রন্থসমূহে দুর্বল এবং জাল হাদীসের সমারোহের আধিক্যতা দেখা যায়। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি ফজরের সলাতে সূরা “আলাম নাশরাহ” এবং সূরা “আলাম তারা কাইফা” পাঠ করবে; সে চোখে ঝাপসা দেখবেনা। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃ:২০০) বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি নেই। চাই ফজর দ্বারা সকালের সুন্নাত অথবা সকালের ফরয সলাত ধরা হোক না কেন। উভয়টিতে কিরায়াত পাঠের সুন্নাত এটির বিপরীতে হওয়ার কারণে। তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, ফজরের সুন্নাত সলাতে সুন্নাত হচ্ছে (প্রথম রাক’আতে) কুল ইয়া-আইউহাল কাফিরুন আর (দ্বিতীয় রাক’আতে) কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করা। আর ফজরের ফরয সলাতে ষাট বা ততোধিক আয়াত পাঠ করা। অতএব হাদীসটি সঠিক নয়। বর্ণনাকারী ওযূর পরে “ইন্না আনযালনাহু” সূরা পাঠ করতে হয়। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। যেমনটি সাখাবী বলেছেন। তিনি বলেনঃ আমি এটি দেখি হানাফী মাযহাবের ইমাম আবূল লাইস-এর “আল-মুকাদ্দিমা” গ্রন্থে। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাতে (মুকাদ্দিমাতে) এটির প্রবেশ ঘটেছে। এটি সহীহ্ সুন্নাতকে বিতাড়িত করে। আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ ওযূর পরের সুন্নাত হচ্ছে, এ দু’আ পাঠঃ এটি ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, তবে বাক্যগুলো তিরমিযীর। অথবা বলবেঃ “(আরবী)” এটি হাকিম ও অন্যরা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ (আলোচ্য) হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। এ কথাতে সন্দেহ হতে পারে যে, এর কোন সনদ নেই। আসলে তা নয়, সনদ আছে তবে তা সঠিক নয়, যা ১৪৪৯ নং হাদীসে আসবে। বর্ণনাকারী গর্দান মাসাহ করা নিরাপত্তা বিধান করে বন্দি হওয়া থেকে। হাদীসটি জাল। ইমাম নাবাবী “আল-মাজমূ’ শারহুল মুহায্যাব” গ্রন্থে বলেনঃ “(আরবী)” ‘এটি জাল, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা নয়।‘ সুয়ূতী “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (পৃ: ২০৩) ইমাম নাবাবীর উক্ত কথা বর্ণনা করে তা সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “তালখীসুল হাবীর” গ্রন্থে (১/৪৩৩) বলেনঃ এটি আবূ মুহাম্মাদ আল-যুওয়াইনী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ এটির সনদে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। গাযালীও “আল-ওয়াসীত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইবনুস সালাহ্ তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে জানা যায়নি। এটি সালাফদের কোন ব্যক্তির কথা। হাফিয আরো বলেনঃ হতে পারে এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই হাদীসটিকে যেটি “কিতাবুত তাহূর”-এর মধ্যে আবূ ওবায়েদ মাস’ঊদী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এটি মওকূফ। তথাপিও গৃহীত হত যদি সূত্রে মাস’ঊদী না থাকতো। কারণ তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। তার হাদীস যদি মারফূ’ও হয় তাহলে গৃহীত হয় না। অতএব মওকূফ হলে কীভাবে গৃহীত হবে? হাফিয ইবনু হাজার (১/৪৩৪-৪৩৫) বলেনঃ আবূ নু’য়াইম “তারীখু আসবাহান” গ্রন্থে ও রূইয়ানী “আল-বাহার” গ্রন্থে পৃথক পৃথক সনদে একই ভাবার্থে আলাদা আলাদা ভাষায় ইবনু উমার (রাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে মারফূ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ কিন্তু “আল-বাহারে” বর্ণিত হাদীসটির সনদে ইবনু ফারেস এবং ফুলাইহ ইবনু সুলায়মান রয়েছেন। তারা উভয়েই সমস্যার স্থল। তাতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। “তারীখু আসবাহান” গ্রন্থে (২/১১৫) উল্লেখিত ইবনু উমারের (রাঃ) হাদীসটিকে শাইখ ‘আলী আল-কারী “মাওযূ’আত” গ্রন্থে (পৃ: ৭৩) দুর্বল সনদে উল্লেখ করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এর কারণ তার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আম্র আল-আনসারী রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন আবূ সাহাল আল-বাসরী। সকলে তার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে একমত। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তিনি হাসান হতে ধ্বংসাত্মক বহু কিছু বর্ণনা করেছেন। আবূ নু’য়াইম-এর শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদও দুর্বল। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ দারাকুতনী তার থেকে বর্ণনা করে তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ধরনের হাদীসকে মুনকার হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। কারণ হাদীসটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত ওযূর পদ্ধতি বর্ণনাকারী সকল সহীহ হাদীস বিরোধী। কেননা সেগুলোর কোনটিতেই গর্দান মাসাহ করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। হ্যাঁ একটিতে বলা হয়েছে; যেটি বর্ণিত হয়েছে তালহা ইবনু মুসাররাফ হতে, তিনি তার পিতা হতে, তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে গর্দান পর্যন্ত মাসাহ করার কথা বলা হয়েছে। হাদীসটি আবূ দাঊদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। বলা হয়েছে ইবনু ওয়াইনা হাদীসটি অস্বীকার করতেন। সেটিই হক, কারণ এটির সনদে তিনটি সমস্যা একত্রিত হয়েছে। একেকটিই তার দুর্বল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ জন্য নাবাবী, ইবনু তাইমিয়্যা, আসকালানী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। এটিকে আমি য’ঈফু সুনানে আবী দাঊদ গ্রন্থে ১৫ নং হাদীসে বর্ণনা করেছি। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি তার কোন ভাইকে পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত রুটি খাওয়াবে। তৃষ্ণা না মেটা পর্যন্ত পানি পান করাবে। তাকে আল্লাহ্ সাত খন্দক সমপরিমাণ জাহান্নাম হতে দূরে সরিয়ে দিবেন। দু’খন্দকের মধ্যের দূরত্ব হবে পাঁচশত বছরের চলার পথের সমপরিমাণ। হাদীসটি জাল। হাদীসটি দুলাবী “আল-কুনা” গ্রন্থে (১/১১৭), ইয়াকূব আল-ফুসাবী “আত-তারীখ” গ্রন্থে (২/৫২৭), ইবনু আবী হাকাম “ফতূহে মিসর” গ্রন্থে (পৃ:২৫৪), হাকিম (৪/১২৯), তাবারানী “আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/৯৫/১) ও ইবনু আসাকির (৬/১১৫/২) ইদরীস ইবনু ইয়াহ্ইয়া খাওলানী সূত্রে ...বর্ণনা করেছেন। এ সনদে রাজা ইবনু আবী আতা নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। হাকিম হাদীসটি সম্পর্কে বলেন : সহীহ! আর তার সাথে সুর মিলিয়েছেন হাফিয যাহাবী! এটি তাদের দু’জনের মারাত্মক ভুল। কারণ এ রাজাকে কেউ নির্ভরশীল বলেননি, বরং তিনি একজন মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। শুনুন স্বয়ং হাকিম নিজে তার সম্পর্কে কি বলেছেন, যাহাবী নিজেই যা “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নিজে তাকে কিঞ্চিৎ ভাল বলার পর বলেছেন, হাকিম বলেন : তিনি মিসরী-জাল হাদীসের হোতা। ইবনু হিব্বান বলেন : তিনি জাল হাদীস বর্ণনাকারী। অতঃপর এ হাদীসটি মিসরীদের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (২/১৭২) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৮৭) তা সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেছেন যে, হাদীসটি ইবনু হিব্বান বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেন : এটি জাল। হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন : হাদীসটির সনদ সহীহ্। আবার তিনি নিজেই তার বর্ণনাকারী (রাজা) সম্পর্কে বলেছেন : তিনি জালের হোতা। মোটকথা হাদীসটি জাল (বানোয়াট) এটিই সঠিক। বর্ণনাকারী তাকবীর হচ্ছে পৃথক পৃথক ভাবে। (অর্থাৎ আযানের তাকবীর)। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। এমনই বলেছেন হাফিয ইবনু হাজার, সাখাবী ও সুয়ূতী। তবে সুয়ূতি এটিকে ইব্রাহীম নাখ’ঈর কথা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ তাকবীর দ্বারা বুঝিয়েছেন সলাতের তাকবীর। আযানের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, যেমনভাবে কেউ কেউ ধারণা পোষণ করেছেন। মিসরের একদল লোক এ হাদীসের উপর ‘আমল করে পৃথক পৃথক ভাবে আযান দিয়ে থাকেন। যদিও এ পদ্ধতিতে আযান দেয়ার কোন ভিত্তি সুন্নাতের মধ্যে নেই। কারণ আযানে দু’তাকবীরকে একসাথে জোড়া জোড়া করে বলার ব্যাপারে সহীহ সূন্নাতে প্রকাশ্য ইঙ্গিত এসেছে। যা সহীহ মুসলিমে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী আল্লাহ তা’আলা আমাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন, অতঃপর আমার শিষ্টাচারে সুন্দর রূপ দান করেছেন। হাদীসটি দুর্বল। ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমু’আতুর রাসায়েলিল কুবরা” গ্রন্থে (২/৩৩৬) বলেনঃ হাদীসটির অর্থ সহীহ, কিন্তু তার সনদ সম্পর্কে জানা যায় না। সাখাবী ও সুয়ূতী তাঁর একথাকে সমর্থন করে শক্তিশালী করেছেন। দেখুন “কাশফুল খাফা” (১/৭০)। বর্ণনাকারী যে ব্যক্তি তর্জুনী অংগুলি দু’টোর ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়ায্যিন কর্তৃক আশ-হাদু-আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ..... বলার সময় দু’চোখ মাসাহ করবে; তার জন্য রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে। হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস”গ্রন্থে আবূ বাক্র (রাঃ) হতে মারফূ’হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু তাহির “আত-তাযকীরাহ্”গ্রন্থে বলেনঃ এটি সহীহ নয়। শাওকানী “আহাদীসুল মাওযূ’আহ”গ্রন্থে (পৃ: ৯) অনুরূপ কথাই বলেছেন। সাখাবীও “মাকাসিদুল হাসানা”গ্রন্থের মধ্যে অনুরূপ বলেছেন। বর্ণনাকারী তোমরা মোটা-তাজা শক্তিশালী পশু দ্বারা কুরবানী কর; কারণ তা হবে পুল-সিরাতের উপর তোমাদের বাহন। এ ভাষায় হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। ইবনু সালাহ্ বলেনঃ (“আরবী”) এ হাদীসটি পরিচিতও না এবং সাব্যস্তও হয়নি। হাদীসটি ইসমাঈল আল-আজলূনী “আল-কাশফ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তার পূর্বে ইবনুল মুলাক্কিন “আল-খুলাসা” গ্রন্থে (১৬৪/২) উল্লেখ করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ খুবই দুর্বল। এটি সম্পর্কে ২৬৮৭ নং হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা আসবে। ইনশাআল্লাহ্। বর্ণনাকারী সলাত ছুটে যাবার পূর্বেই দ্রুত তোমরা তা আদায় কর এবং মৃত্যু গ্রাস করার পূর্বেই দ্রুত তাওবাহ্ কর। হাদীসটি জাল। তবে তার অর্থটি সঠিক। সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযু’আহ” গ্রন্থে (পৃ: ৪-৫) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী আলেমগন ব্যতীত সব মানুষ মৃত, ‘আমলকারীগণ ব্যতীত সব আলেম ধ্বংসপ্রাপ্ত, মুখলেসগণ ব্যতীত সব ‘আমলকারী ডুবে রয়েছে। আর মুখলেসগণ মহা বিপদে নিপতিত। হাদীসটি জাল। হাদীসটি সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযূ‘আহ” গ্রন্থে (পৃ: ৫) উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : এটি একটি মিথ্যারোপ। আমি (আলবানী) বলছি : সূফীদের কথার সাথে এটির সাদৃশ্যতা রয়েছে। বর্ণনাকারী একমাত্র ঈসা (আঃ)-ই হচ্ছেন মাহদী। হাদীসটি মুনকার। এটি ইবনু মাজাহ (২/৪৯৫), হাকিম (৪/৪৪১), ইবনুল জাওযী “আল ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৪৭), ইবনু আব্দিল বার “জামে‘উল ইলম” গ্রন্থে (১/১৫৫), আবূ আম্র আদ্দানী “আস-সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান ” গ্রন্থে, সিলাফী “আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (৬২/১) এবং খাতীব বাগদাদী (৪/২২১) মুহাম্মদ খালেদ জানাদী সূত্রে আবান ইবনু সালেহ হতে, তিনি হাসান হতে ..... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ তিনটি কারণে দুর্বলঃ ১। হাসান বাসরী কর্তৃক আন্ আন্ (আরবি) শব্দ দ্বারা বর্ণনাকৃত। কারণ তিনি কখনও কখনও তার শাইখের নাম গোপন করতেন (তাদলীস করতেন)। ২। সনদে বর্ণিত মুহাম্মদ ইবনু খালিদ আল-জানাদী মাজহূল; যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন। ৩। হাদীসটির সনদে বিভিন্নতা। বাইহাক্বী বলেনঃ হাসান বাসরী সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীসটি মুনকাতি’। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ (আরবি) ‘এ হাদীসটি মুনকার।’ তিনি এটিকে মুরসালও বলেছেন। সাগানী বলেনঃ হাদীসটি জাল, যেমনভাবে শাওকানীর “আল-আহাদীসুল মাওযু‘আহ” গ্রন্থে (পৃ : ১৯৫) এসেছে। সূয়ূতী “আল-ওরফুল ওয়ারদী ফী আখবারিল মাহদী” (২/২৭৪) গ্রন্থে কুরতুবীর উদ্ধৃতিতে বলেন, তিনি “তাযকিয়া” গ্রন্থে বলেছেনঃ এটির সনদ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর” মধ্যে (৬/৩৮৫) ইঙ্গিত দিয়েছেন এ হাদীসটি মারদূদ (পরিত্যাক্ত) মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলোর বিরোধী হওয়ার কারণে। বর্ণনাকারী মু‘মিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। শাইখ আহমাদ আল-গাযাযী আল-‘আমেরী “আল-যাদ্দুল হাসীস” গ্রন্থে (১৬৮) বলেনঃ (আরবি) এটি কোন হাদীস নয়। তার একথাকে শাইখ আজলূনী “কাশফুল খাফা” গ্রন্থে (১/৪৫৮) সমর্থন করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ শাইখ ‘আলী আল-কারী তার “মাওযূআত” গ্রন্থে (পৃ:৪৫) বলেছেনঃ অর্থের দিক দিয়ে হাদীসটি সহীহ্। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু’ হিসাবে “আল-আফরাদ” গ্রন্থে দারাকুতনীর নিম্নের বর্ণনার কারণেঃ (আরবি) ‘কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার মু‘মিন ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে পানি পান করা বিনয়ের অন্তর্ভূক্ত।’ কিন্তু ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মারফু’ হাদীসটিও সহীহ নয়। তার বিবরণ একটু পরেই আসবে। যদি সহীহ্ হত তাহলেও এটি মূল্যহীন হাদীসের সাক্ষী (শাহেদ ) হতে পারতো না। কীভাবে হবে? যাতে মু‘মিনের উচ্ছিষ্ট আরোগ্য স্বরূপ একথাটি না স্পষ্টভাবে আছে আর না পরোক্ষভাবে আছে। বর্ণনাকারী কোন ব্যক্তির তার ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে পান করা নম্রতার অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির লক্ষ্যে পান করবে, তার মর্যাদা সত্তর গুন বৃদ্ধি করা হবে এবং তার সত্তরটি গুনাহ্ (অপরাধ) মোচন করে দেয়া হবে এবং তার জন্য সত্তরটি মর্যাদা লিখা হবে। হাদীসটি জাল। ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (৩/৪০) দারাকুতনীর বর্ণনায় নূহ ইবনু মারইয়াম সূত্রে ..... উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ নূহ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তিনি মাতরূক। কিন্তু সুয়ূতী “আল-লাআলিল মাসনূ‘য়াহ” গ্রন্থে (২/২৫৯) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির মুতাবা‘য়াত পাওয়া যায়। কিন্তু ইসমাঈলী তার “আল-মু‘জাম” গ্রন্থে (২/১২৩) এমন এক সনদে বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে ইবরাহীম ইবনু আহমাদ আল-বালখী এবং হাসান ইবনু রাশীদ আল-মারওয়াযী নামক দুই বর্ণনাকারী রয়েছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাসান মুনকারুল হাদীস। ইবনু হাজার আসকালানীর “আল-লিসান” গ্রন্থে এসেছে : উকায়লী বলেনঃ তার হাদীসে সন্দেহ রয়েছে। তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন যেটিকে ইবনু আবী হাতিম মুনকার বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল, তার কোন ভিত্তি নেই। আবূ বাক্র আল-ইসমাঈলী বলেনঃ ইব্রাহীম ইবনু আহমাদ আল-বালখী ও হাসান ইবনু রাশীদ আল-মারওয়াযী তারা উভয়েই মাজহূল (অপরিচিত)। অতএব, সুয়ূতীর পক্ষ হতে সমর্থন সূচক হাদীস রয়েছে এ দাবীকরণ সঠিক নয়। কারণ সেটিও সহীহ নয়। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ নূহ ছিলেন জ্ঞানীদের একজন। আবু হানীফা (রহঃ)-এর ফিকাহ জমা করার কারণে আল-জামে’ নামে তার নামকরণ করা হয়। কিন্তু হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। তার সম্পর্কে আবূ আলী নাইসাপূরী বলেনঃ (আরবি) তিনি ছিলেন একজন মিথ্যুক। আবূ সা‘ঈদ আল-নাক্কাশ বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বণনা করেছেন। তার সম্পর্কে হাকীম বলেনঃ সত্যবাদিতা ব্যতীত তাকে সব কিছু দান করা হয়েছিল। আল্লাহর নিকট তার পদঙ্খলনের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইবনু হিব্বানও অনুরূপ কথা বলেছেন। হাফিয বুরহান উদ্দিন হালাবী “কাশফুল হাদীস” গ্রন্থে তাকে হাদীস জালকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া হাদীসটির আরো একটি সম্যসা আছে, তা হচ্ছে ইবনু যুবায়েজ কর্তৃক তাদলীস। তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও মুদাল্লিস ছিলেন। ইমাম আহমাদ বলেনঃ কিছু কিছু জাল হাদীসকে ইবনু যুরায়েজ মুরসাল হিসাবে চালিয়ে দিতেন। তিনি কোথা হতে হাদীসটি গ্রহণ করেছেন এ ব্যাপারে বে-পরওয়া ছিলেন। যাহাবীর “আল-মীযান” গ্রন্থে এমনটিই এসেছে। দারাকুতনী বলেনঃ ইবনু যুরায়েজের তাদলীস (শাইখকে গোপন করা) হতে বেঁচে থাকুন। তিনি জঘন্যতম তাদলীস করতেন। তিনি তাদলীস করতেন একমাত্র ঐ ব্যক্তি হতে যিনি দোষনীয়। “আত-তাহযীব” গ্রন্থে ও অনূরূপ বলা হয়েছে। বর্ণনাকারী মাহদী হবে আমার চাচা আব্বাসের সন্তানদের থেকে। হাদীসটি জাল। এটিকে দারাকুতনী “আল-আফরাদ” গ্রন্থে (২/নম্বর ২৬) উল্লেখ করেছেন । তার থেকে দাইলামী (৪/৮৪) ও ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৩১) মুহাম্মদ ইবনুল ওয়ালীদ আল-কুরাশী সূত্রে .... উল্লেখ করেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ হাদীসটি গারীব, মুহাম্মদ ইবনুল ওয়ালীদ এককভাবে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনু আদী বলেনঃ (আরবি) তিনি হাদীসটি জাল করতেন। আবূ আরূবাহ বলেনঃ (আরবি) ‘তিনি মিথ্যূক।’ ইবনুল জাওযীর উদ্ধৃতিতে মানাবী একই কারণ দর্শিয়েছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ এই যে, এটি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা বিরোধী। তিনি বলেনঃ “মাহদী আমার মেয়ে ফাতিমার সন্তানদের মধ্য থেকে হবে।” এটিকে আবূ দাউদ (২/২০৭-২০৮), ইবনু মাজাহ (২/৫১৯), হাকিম (৪/৫৫৭), আবূ আম্র আদ্দানী ও উকায়লী যিয়াদ ইবনু বায়ান সূত্রে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী হে আব্বাস! নিশ্চয় আল্লাহ আমার মাধ্যমে এ কর্ম উম্মোচন করেছেন, যার সমাপ্তি টানবেন তোমার সন্তানদের মধ্য হতে এক যুবকের মাধ্যমে। তিনি ইনসাফ দ্বারা তাকে (যমীনকে) পরিপূর্ণ করে দিবেন; যেমনি ভাবে তাকে (যমীনকে) অত্যাচার দ্বারা পূর্ণ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি ঈসা (আঃ)-এর সাথে সলাত কায়েম করবেন (তাঁর ইমামতি করবেন)। হাদীসটি জাল। হাদীসটি খাতীব বাগদাদী “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে (৪/১১৭) উল্লেখ করেছেন এবং তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৩৭) উল্লেখ করেছেন। এটির সনদে আহমাদ ইবনু হাজ্জাজ নামক এক বর্ণনাকারী আছেন, তাকে যাহাবী এ হাদীসের ব্যাপারে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। তার এ কথার সাথে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে ঐকমত্য পোষন করেছেন। হাদীসটি সুয়ূতী “আল-লাআলিল মাসনূ‘য়াহ” গ্রন্থে (১/৪৩১-৪৩৪) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি কোন হুকুম না লাগিয়ে চুপ থেকেছেন। ইবনু জাওযী “মাওযূ’আত” গ্রন্থে (২/৩৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি জাল। খাতীব বাগদাদী “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে অন্য এক সনদে (৪/১১৭) উল্লেখ করেছেন এবং তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “ইলালুল মুতানাহিয়াহ” গ্রন্থে (২/৩৭৫/১৪৩৮) উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ এটির সনদে সমস্যা নেই। কিন্তু এটির সনদে দুটি সমস্যা রয়েছেঃ ১। আব্দুস সামাদ ইবনু ‘আলী, তিনি হাশেমী; তাকে উকায়লী (৩/৮৪/১০৫৩) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ২। মুহাম্মদ ইবনু নূহ্ ইবনে সা‘ঈদ আল-মুয়াযযিন; তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তার এ হাদীসটি মিথ্যা এবং তার পিতা মাজহূল। বর্ণনাকারী হে আবুল ফযল! তোমাকে কি সুসংবাদ দেব না? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে এ কর্ম উন্মোচন করেছেন এবং তা তোমার সন্তান দ্বারা সমাপ্ত করবেন। হাদীসটি জাল। হাদীসটি আবূ নু’য়াইম “হিলইয়্যাহ” গ্রন্থে (১/১৩৫) লাহিয ইবনু জা’ফার আত-তাইমী সূত্রে...বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ লাহিয মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি বাগদাদী মজহূল। তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদিস বর্ণনা করতেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এর ফযীলত বর্ণনায় তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ (আরবী) ‘এ হাদীসটি বাতিল।’ যাহাবী বলেনঃ আল্লাহ্র কসম এটি সর্বাপেক্ষা বড় জাল হাদীস। (আল্লাহ্র আভিশাপ সেই ব্যক্তিকে যে আলী (রাঃ) কে মুহাব্বাত করে না। বর্ণনাকারী তাসবীহ পাঠের যন্ত্র দ্বারা তাসবীহ পাঠক কতইনা ভাল ব্যক্তি। নিশ্চয় সর্বোত্তম বস্তু সেটিই যমীনে যার উপর সাজদাহ করা হয় এবং যমীন যা উৎপাদন করে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে (৪/৯৮) বর্ণনা করেছেন। এছাড়া সুয়ূতী তার “আল-মিনহা ফিস সিবহা” গ্রন্থে (২/১৪১) এবং তার থেকে শাওকানী “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে (২/১৬৬-১৬৭) উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তারা উভয়ে (কোন হুকুম না লাগিয়ে) চুপ থেকেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদে রয়েছে একগুচ্ছ অন্ধকার যার একটির চেয়ে অন্যটি বড়। তার অধিকাংশ বর্ণনাকারী মাজহূল, এমনকি তাদের কেউ কেউ মিথ্যার দোষে দোষী। এটির সনদে উম্মুল হাসান বিনতু জা’ফার ইবনুল হাসান রয়েছেন। কে তার জীবনী রচনা করেছেন পাচ্ছিনা। সনদে আরো রয়েছেন, মুহাম্মদ ইবনু হারুন ইবনে ঈসা ইবনে মানসূর আল-হাসেমী, তিনি হাদীস জাল করতেন। ইবনু আসাকির “তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে বলেনঃ (আরবী) ‘তিনি হাদীস জাল করতেন।’ অতঃপর তিনি তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ এটি তার জালকৃত হাদীস। অনুরূপ ভাবে খাতীব বাগদাদীও তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। তিনি (৭/৪০৩) বলেনঃ এ হাশেমীকে ইবনু বোরাই নামে চেনা যায়। তিনি যাহেবুল হাদীস। তাকে হাদীস জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে। সনদে আরো রয়েছেন আব্দুস সামাদ ইবনু মূসা, তিনি হাসেমী। যাহাবী “আল-মিযান” গ্রন্থে খাতীব বাগদাদীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অতঃপর যাহাবী বলেনঃ (আরবী) ‘তিনি তার দাদা মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহীম আল-ইমাম হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন।’ আমার নিকট কতিপয় কারণে এ হাদীসের অর্থও বাতিলঃ ১। তসবীহ দ্বানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা বিদ’আত। কারণ তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ছিল না। এটি আবিস্কার হয়েছে পরবর্তীতে। কীভাবে তিনি তার সাথীদেরকে এমন একটি কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন যেটিকে তারা চিনতেন না। এর দলীল; ইবনু মাস’উদ (রাঃ) এক মহিলাকে তসবীহ দ্বানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করতে দেখে তা কেটে ও ছুড়ে ফেলেছিলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করতে দেখে তিনি তাকে পা দ্বারা প্রহার করেন। অতঃপর বলেনঃ তোমরা আমাদের চেয়ে অগ্রণী হয়ে গেছ! অত্যাচার করে বিদ’আত-এর উপর আরোহণ করেছ এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথীগণকেও ছাড়িয়ে গেছ! ২। এটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দিক নির্দেশনা বিরোধী। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেনঃ (আরবী) ‘আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ডান হাতের মুষ্টি বেধে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি।’ হাদীসটি আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বাইহাক্বী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। ৩। এছাড়া রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশেরও বিরোধী। তিনি মহিলাদেরকে অঙ্গুলিগুলো মুষ্টি বেধে তাসবীহ... পাঠ নির্দেশ দেন...। হাদীসটি হাসান। এটি আবূ দাউদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। এটিকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন আর নাবাবী ও আসকালানী হাসান আখ্যা দিয়েছেন। কেউ যদি বলেন যে, কোন কোন হাদীসে পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠের কথা এসেছে এবং রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা সমর্থন করেছেন। আর তাসবীহ দ্বানা ও পাথরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, যেমনভাবে শাওকানী বলেছেন? আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মেনে নেয়া যেত যদি পাথর দিয়ে তাসবীহ পাঠের হাদিসগুলো সহীহ হতো। কিন্তু সেগুলো সহীহ নয়। এ মর্মে দু’টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সুয়ূতী হাদীস দু’টো বর্ণনা করেছেন। একটি সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে আর দ্বিতীয়টি সাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। প্রথমটি আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবন হিব্বান, দাওরাকী, মুখাল্লিস ও হাকীম বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। হাকিম বলেছেনঃ সনদ সহীহ্। যাহাবী তাতে তাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ভুল করেছেন। কেননা এর সনদে খুযাইমা নামক এক বর্ণনাকারী আছেন তিনি মাজহূল। যাহাবী নিজেই বলেছেনঃ তার পরিচয় জানা যায় না এবং তার থেকে সা’ঈদ ইবনু আবী হিলাল এককভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনটিই বলেছেনঃ হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে (আরবী) ‘তার পরিচয় জানা যায় না।’ এছাড়া সা’ঈদ ইবনু আবী হিলাল নির্ভরযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। ইয়াহ্ইয়াও তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল এরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া কোন কোন নির্ভরশীল বর্ণনাকারী সনদে খুযাইমাকে উল্লেখ করেননি। ফলে সনদটি মুনকাতি’ (বিচ্ছিন্নতা) ভুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় হাদীস, যেটি সাফিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। সেটি ইমাম তিরমিযী, আবূ বাক্র আশ-শাফে’ঈ ও হাকীম বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে তিনি সহীহুল ইসনাদ বলেছেন আর যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। এটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। কারণ তিনি হাসিম ইবনু সা’ঈদকে “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, ইবনু মা’ঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইবনু আদী বলেনঃ তিনি যে পরিমাণ হাদীস বর্ণনা করেছেন তার অনুসরণ করা যায় না। এ জন্য ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি দুর্বল আর সাফিয়ার মাওলা কিনানা তিনি মাজহূলুল হাল, তাকে ইবনু হিব্বান ছাড়া কেউ নির্ভরশীল বলেননি। এছাড়া এ দু’টি পাথরের হাদীস দুর্বল হওয়ার আরো কারণ হচ্ছে, উল্লেখিত হাদীস দু’টির ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে সহীহ বর্ণনায় যুওয়াইরিয়াহ হতে বর্ণিত হয়েছে। যাতে পাথরের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এটি ইমাম মুসলিম (৮/৮৩-৮৪), তিরমিযী (৪/২৭৪) (এবং তিনি সহীহ বলেছেন), নাসাঈ “আমালুল ইয়াওয়ম ওয়াল লাইলা” গ্রন্থে (১৬১-১৬৫), ইবনু মাজাহ (১/২৩) ও আহমাদ (৬/৩২৫,৪২৯-৪৩০) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি দু’টি বিষয়ের প্রমান বহন করেঃ ১। পূর্বে যে ঘটনার সাথে সাফিয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে সাফিয়া নয় বরং সেটি হচ্ছে যুওয়াইরিয়ার ঘটনা। ২। ঘটনায় পাথরের উল্লেখ মুনকার। মুনকার হওয়াকে শক্তিশালী করছে কিছু লোককে পাথর গণনা করতে দেখে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কতৃক তা ইনকার করা। এছাড়া তার মাদরাসা হতে শিক্ষাগ্রহণকারী ইব্রাহীম আন-নাখ’ঈ তার মেয়েকে মহিলাদেরকে তসবীর সূতা (তা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করার জন্য) পাকিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছিলেন। এটি ইবনু আবী শায়বাহ “আল-মুসান্নাফ” গ্রন্থে (২/৮৯/২) ভাল সনদে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী তার থেকে তোমরা সকলে উত্তম। হাদীসটি দুর্বল। সুন্নাতের গ্রন্থ সমূহে এটি পাচ্ছি না। এটি ইবনু কুতাইবা “উয়ূনুল আখবার” গ্রন্থে (১/২৬) দুর্বল সনদে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির ঘটনা নিম্নরূপঃ আশ’য়ারীদের একটি দল কোন এক সফরে ছিল। তারা যখন ফিরে আসল, তখন তারা বললঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্র রসূলের পরে অমুক ব্যক্তি ছাড়া আর কোন উত্তম ব্যক্তি নেই। সে দিনে সওম পালন করে, আর আমরা যখন কোন স্থানে অবতরণ করি তখন সে দাঁড়িয়ে গিয়ে সলাত শুরু করে, সে স্থান ত্যাগ না করা পর্যন্ত! রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার কাজ কে করেছে? তারা বললেনঃ আমরা। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (আরবী) তোমরা প্রত্যেকে তার চাইতে উত্তম। সনদের সকল বর্ণনাকারী নির্ভরশীল, কিন্তু হাদীসটি মুরসাল। কারণ মুসলিম ইবনু ইয়াসার বাসরী উমাবী একজন তাবে’ঈ। তার জীবনীতে বলা হয়েছে যে, তার অধিকাংশ বর্ণনা আবুল আশ’য়াস সান’য়ানী এবং আবূ কিলাবা হতে বর্ণিত হয়েছে। তার এ হাদীসটি আবূ কিলাবার সূত্রে। আবূ কিলাবা এবং মুসলিম ইবনু ইয়াসার তারা উভয়ে একশ হিজরীর কিছু পরে মারা গেছেন। কিন্তু আবূ কিলাবা বর্ণনাকারী হিসাবে একজন মুদাল্লিস। যাহাবী বলেনঃ তিনি মুদাল্লিস যার সাথে মিলিত হয়েছেন তার থেকে এবং যার সাথে মিলিত হননি তার থেকেও। তার কতিপয় সহীফা ছিল, তিনি সেগুলো হতে হাদীস বর্ণনা করতেন এবং তাদলীস করতেন। এ জন্য হাফীয বুরহানুদ্দীন আল-আজামী আল-হালাবী তার “আত-তাবে’ঈন লি আসমাঈল মুদাল্লিসীন” গ্রন্থে (পৃঃ ২১) উল্লেখ করেছেন। অনূরূপ ভাবে হাফিয ইবনু হাজারও তাকে “তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন” গ্রন্থে (পৃঃ ৫) উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী তোমাদের সংরক্ষিত সম্পদের নিকট তিনজনকে হত্যা করা হবে। তারা প্রত্যেকে খলীফার পুত্র। অতঃপর তা তাদের মধ্যের একজনের জন্যও হবে না। অতঃপর প্রাচ্যের দিক থেকে এক বিরাট দলের ঝাণ্ডা প্রকাশ পাবে। তারা তোমাদের এমন ভাবে হত্যা করবে, যেরূপ হত্যাযজ্ঞের সম্মুখীন কোন জাতি হয়নি। অতঃপর তিনি কিছু উল্লেখ করলেন তা আমি হেফয করতে পারিনি। তারপর তিনি বললেঃ তোমরা যদি দেখতে পাও তাহলে তার সাথে বাই’য়াত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও তা করতে হয়। কারণ তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ্র প্রতিনিধি মাহদী। অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ তোমরা বড় দলের ঝাণ্ডাগুলো দেখতে পাবে খুরাসানের দিক থেকে বের হয়েছে। তখন তোমরা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার নিকট আসবে। হাদীসটি মুনকার। ইবনু মাজাহ (৫১৮-৫১৯), হাকিম (৪/৪৬৩-৪৬৪) দু’টি সূত্রে খালেদ আল-হাযা সূত্রে আবূ কিলাবা হতে...হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ইমাম আহমাদ (৫/২৭৭) ‘আলী ইবনু যায়েদ সূত্রে এবং হাকিম আব্দুল ওয়াহাব সূত্রে...তার থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী “আল-আহাদীসুল ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৪৫) সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হাজার “আল-কাওলুল মুসাদ্দাদ...” গ্রন্থে বলেনঃ ‘আলী ইবনু যায়েদ দুর্বল। মানাবীও “ফায়যুল কাদীর” গ্রন্থে একই কারণ দর্শিয়েছেন। তিনি বলেনঃ “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আহমাদ ও অন্যরা তাকে দুর্বল (য’ঈফ) আখ্যা দিয়েছেন। অতঃপর যাহাবী বলেনঃ (আরবী) আমি এ হাদীসটিকে মুনকারই মনে করি। ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার “মাওযূ’আত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইবনু হাজার বলেনঃ জাল হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ করাটা সঠিক হয়নি। কারণ এ হাদিসের সনদে এমন কোন ব্যক্তি নেই যাকে মিথ্যার দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে ইবনুল জাওযী তার জাল হাদীস গ্রন্থে (২/৩৯) যে সনদে উল্লেখ করেছেন, সে সনদের দিকে লক্ষ্য করলে, তার জাল হিসেবে উল্লেখ করাটা সঠিক হয়েছে। অতঃপর ইবনুল জাওযী বলেনঃ এটির ভিত্তি নেই। আম্র কিছুই না। তিনি হাসান হতে শুনেননি এবং হাসান আবূ ওবায়দা হতে শুনেননি। আমি (আলবানী) বলছিঃ আবূ ওবায়দা তার পিতা ইবনু মাস’উদ (রাঃ) হতেও শুনেননি। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৪৩৭) বলেনঃ তার ইসনাদ সহীহ্। হাকিম শাইখায়নের শর্তানুযায়ী সহীহ্ বলেছেন এবং যাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন। অথচ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ আমি হাদীসটিকে মুনকার হিসাবেই দেখছি। মুনকার হওয়াটাই সঠিক। তিনি এটিকে সহীহ্ বলেছেন মুনকার হওয়ার কারণ ভুলে যাওয়ায়। সেটি হচ্ছে আবূ কিলাবার আন্ আন্ সূত্রে বর্ণনা করা। কেননা তিনি মুদাল্লিসদের অন্তর্ভুক্ত, যেমনটি উল্লেখ করেছেন যাহাবী ও অন্যরা। এ জন্যই ইবনু ওলাইয়্যাহ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন যেমনভাবে ইমাম আহমাদ “আল-ইলাল” গ্রন্থে (১/৩৫৬) ইবনু ওলাইয়্যাহ হতে তা বর্ণনা করে তাকে সমর্থন করেছেন। তবে (আরবী) ‘কারণ তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ্র প্রতিনিধি মাহদী’ এ অংশটুকু বাদ দিয়ে হাদীসটির অর্থ সঠিক। কারণ এ অংশটুকু সাব্যস্ত করার মত কোন বিশুদ্ধ সূত্র নেই। আবূ বাকরকে (রাঃ) খালীফাতুল্লাহ বলে সম্বোধন করা হলে তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহ্র খলীফা নই বরং আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খলীফা। এটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে। আল্লাহ্ অন্যের খালীফা হন, কেউ তাঁর খালীফা হতে পারেন না। বর্ণনাকারী প্লেগ (উদরাময়) তোমাদের ভাই জিনদের এক অংশ। হাদীসটির এ বাক্যে কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটি ইবনুল আসীর “আন-নেহায়া” গ্রন্থে’’ (আরবী) মূলের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি ইমাম আহমাদ “মুসনাদ” গ্রন্থে (৪/৩৯৫, ৪১৩, ৪১৭), তাবারানী “মু’জামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃঃ ১৭) এবং হাকিম (১/৫০) আবূ মূসা আল-আশ’য়ারী হতে নিম্নের ভাষায় মারফূ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেনঃ (আরবি) অর্থঃ প্লেগ (উদরাময়) তোমাদের দুশমন জিনদের এক অংশ। হাকিম এটিকে মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তা সমর্থন করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ভাষায় হাদীসটি সহীহ। তবে মুসলিমের শর্তানুযায়ী এ কথাটি সঠিক নয়। মোটকথা হাদীসটি “...(আরবী)” এ শব্দে সহীহ, (আরবী) শব্দে সহীহ নয়। তবে “(আরবী)” এ শব্দে সহীহ, যেটি ইমাম মুসলিম ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। দেখুন “নাইলুল আওতার”। সম্ভবত কারো নিকট একটি অন্যটির সাথে গোলমাল হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী খতীব যখন মিম্বারে উঠে যাবে; তার পর সলাতও নেই, কোন কথাও নেই। হাদীসটি বাতিল। এ ব্যাকটি মুখে মুখে পরিচিতি লাভ করেছে, কিন্তু তার কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটি তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফূ’ হিসাবে নিম্নের এ ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ (আরবি) “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম মিম্বারের উপরে, তখন ইমামের খুৎবা শেষ না করা পর্যন্ত আর কোন সলাত পড়া যাবে না এবং কোন কথাও বলা যাবে না।” এ হাদীসের সনদে আইউব ইবনু নাহীক নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতীম “আল-জারহু ওয়াত-তা’দীল” গ্রন্থে (১/১/২৫৯) বলেনঃ আমি আমার পিতা হতে শুনেছি তিনি বলেনঃ হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল। আবূ যুর’য়াহ হতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ আইউব ইবনু নাহীক হতে আমি হাদীস বর্ণনা করব না এবং তার হাদীস আমার নিকট পড়াও হয় না। অতঃপর বলেছেনঃ তিনি একজন মুনকারুল হাদীস। হায়সামী “মাজমা’উয যাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/১৮৪) বলেনঃ (আরবী) ‘তিনি মাতরূক, তাকে মুহাদ্দিসগণের এক জামা’আত দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।’ এ কারণেই হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর” মধ্যে (২/৩২৭) বলেছেনঃ হাদীসটি দুর্বল। আমি হাদীসটি বাতিল বলে হুকুম লাগিয়েছি। কারণ তার সনদে দুর্বলতা থাকা ছাড়াও এটি দু’টি সহীহ হাদীস বিরোধীঃ (আরবী) ১। “তোমাদের কেউ জুম’আর দিবসে যখন (মসজিদে) আসবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন, তখন সে যেন সংক্ষেপে দু’রাকা’আত সলাত আদায় করে।” হাদীসটি মুসলিম শরীফে (৩/১৪/১৫) এবং আবূ দাউদে (১০২৩) বর্ণিত হয়েছে। বুখারী এবং মুসলিম এর বর্ণনাতেও জাবের (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদিস এসেছে। (আরবি) ২। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তুমি যদি তোমার সঙ্গীকে জুম’আর দিবসে ইমাম খুৎবা দেয়ার সময় বল চুপ কর, তাহলে তুমি কটু কথা বললে।” প্রথম কথাটি অত্যন্ত স্পষ্ট, যা তাগিদ দিচ্ছে খুৎবা চলাকালীন সময়ে দু’রাকা’আত সলাত আদায় করার জন্য। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের বিরোধিতা করে কিছু অজ্ঞ ইমাম/খতীব খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করে যে ব্যক্তি দু’রাকা’আত সলাত আদায় করতে চাই তাকে নিষেধ করেন। আমার ভয় হয় তারা রসূলের হাদীসের বিরোধিতা করার কারণে নিম্নে বর্ণিত আয়াত দু’টিতে বর্ণিত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় কিনা। (আরবি) অর্থঃ “কোন বান্দা যখন সলাত আদায় করে তখন তাকে যে নিষেধ করে তার সম্পর্কে আপনার সিদ্ধান্ত কী?” (সূরা আ’লাকঃ ৯-১০) (আরবি) অর্থঃ “যারা আল্লাহ্র হুকুমের বিরোধিতা করে তাদের ভয় করা উচিৎ যে, তাদের কোন বিপদ গ্রাস করবে বা তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল হবে” (সূরা নূরঃ ৬৩)। দ্বিতীয় হাদীসটি হতে বুঝা যাচ্ছে ইমাম খুৎবা শুরু করলে কথা বলা নিষেধ। খুৎবা শুরু না করে মিম্বারে বসে থাকা অবস্থায় কথা বললে তা নিষেধ নয়। কারণ উমার (রাঃ)-এর যুগে তিনি যখন মিম্বারের উপর বসতেন তখনও লোকেরা মুয়াজ্জিন চুপ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকতেন। যখন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে যেতেন তখন দু’ খুৎবা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কেউ কথা বলতেন না। অতএব মিম্বারে উঠলেই কথা বলা নিষেধ এটি সঠিক নয়। বর্ণনাকারী শস্য কৃষকের জন্য,যদিও তা ছিনিয়ে নিয়ে থাকে। হাদীসটি বাতিল, এটির কোন ভিত্তি নেই। সান‘আনী ‘‘সুবুলুস সালাম’’ গ্রন্থে (৩/৬০) বলেনঃ কেউ এটিকে উল্লেখ করেননি। ‘‘আল-মানার’’ গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ এ হাদীসটিকে খুজাখুজি করেছি, কিন্তু পাইনি। শাওকানী ‘‘নাইলুল আওতার’’ গ্রন্থে বলেনঃ এটির ব্যাপারে অবহিত হইনি, এটিতে দৃষ্টি দেয়া দরকার। আমি (আলবানী) বলছিঃ আমি এটির ব্যাপারে দৃষ্টি দিয়েছি,কিন্তু তার ভিত্তি পাইনি। বরং এটিকে সহীহ হাদীসের বিপরীতে পেয়েছি। (আরবি) ১। ‘‘যে ব্যক্তি মৃত যমীন জীবিত করবে (আবাদ করবে) তা তার জন্যেই।অত্যাচারীর জন্য এতে কোন হক নেই।’’ হাদীসটি সহীহ্ সনদে আবূ দাউদে (২/৫০) বর্ণিত হয়েছে। তিরমিযী (২/২২৯) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (আরবি) ২। ‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের যমী তাদের বিনা অনুমতিতে চাষ করবে, তার সেই ক্ষেত হতে কোন অংশ নেই। তাকে তার খরচগুলো দিয়ে দিতে হবে।’’ হাদীসটি আবূ দাউদ (২/২৩), তিরমিযী (২/২৯১), ইবনু মাজাহ (২/৯০), তাহাবী ‘‘আল-মুশকিল’’ গ্রন্থে (৩/২৮০), সহিহাক্বী (৬/১৩৬) ও ইমাম আহমাদ (৪/১৪১) বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী এটিকে হাসান বলেছেন। এটি সহীহ অনুরূপ অর্থের বহু হাদীস থাকার কারনে। দেখুন ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ (হাঃ নংঃ ১৫১৯) বর্ণনাকারী বস্তুর মালিকই তার বস্তুটি বহন করার অধিক হকদার। তবে সে যদি দুর্বলতার কারণে তা বহন করতে অক্ষম হয়, তাহলে তাকে তার মুসলিম ভাই সহযোগিতা করবে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইবনুল আ’রাবী তার ‘‘আল-মু’জাম’’ গ্রন্থে (২৩৫/১-২), ইবনু বিশরান ‘‘আল-‘আমালী’’ গ্রন্থে (২/৫৩-৫৪) ও মুহাম্মাদ ইবনু নাসীর ‘‘আত-তানবীহ’’ গ্রন্থে (১৬/১-২) ইউসুফ ইবনু যিয়াদ আল-বাসারী সূত্রে তার শাইখ আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ ইবনে আন‘আম হতে ...বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি একেবারেই নিম্ন পর্যায়ের। উক্ত ইউসুফ সম্পর্কে ‘‘তারীখুল কাবীর’’ গ্রন্থে (৪/২/৩৮৮) ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদিস। ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার ‘‘আল-মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (৩/৪৭) ইবনু আদীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। দারাকুতনি ‘‘আল-আফরাদ’’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে ইউসুফ ইবনু যিয়াদ। কারণ তিনি বাতিল হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ। আর তিনি ছাড়া ইফরীকী হতে অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। মানাবী তার ‘‘আল-ফায়য’’ গ্রন্থে বলেন, হাফিজ ইরাকী ও ইবনু হাজার বলেছেনঃ তিনি দুর্বল। সাখাবী বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল। ইবনুল জাওযী হাদীসটির ব্যাপারে জাল হিসাবে হুকুম লাগিয়ে বলেছেন যে, তাতে ইউসুফ ইবনু যিয়াদ আল-বাসরী রয়েছেন, তিনি আব্দুর রহমান আল-ইফরীকী হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার নিকট হতে একমাত্র বর্ণনাকারী। সুয়ূতী বলেনঃ তিনি আব্দুর রহমান হতে একক বর্ণনাকারী নন, বরং বাইহাক্বী তার ‘‘আল-শু‘ইয়াব’’ গ্রন্থে এবং ‘‘আল-আদাব’’ গ্রন্থে হাফস ইবনু আব্দির রহমান সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এর উত্তরে বলতে হচ্ছে যে আমরা আব্দুর রহমান আল-ইফরীকীর কথা বলছি। ইবনু হিব্বান বলেনঃ (আরবি) ‘তিনি (ইউসুফ) নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী। অতএব তিনিই হাদীসটি জাল হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। আমি (আলবানী) বলছিঃ হক হচ্ছে ইবনুল জাওযীর সাথে (তার কথাই ঠিক)। যারা ইউসুফকে শুধু দুর্বল বলেছেন, তারা তিনি যে, নিতান্তই দুর্বল তা না বলে ভুল করেছেন। এছাড়া (দ্বিতীয় কারণ) শাইখ আব্দুর রহমান আল-ইফরীকীও যে নিতান্তই দুর্বল এটি বলতেও তারা ভুলে গেছেন। খাতীব বাগদাদী তার ‘‘তারিখু বাগদাদ’’ গ্রন্থে (১৪/ ২৯৫-২৯৬) ইউসুফ সম্পর্কে বলেন, নাসাঈ হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। বুখারী ও সাজী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। আবূ হাতিমও এরূপ কথাই বলেছেন, যেমনভাবে তার ‘‘আল-জারহু ওয়াত তা‘দীল’’ গ্রন্থে (৪/২২২) এসেছে। তিনি হচ্ছেন মিথ্যার দোষে অভিযুক্ত। সাখাবী হাদীসটি ‘‘ফাতওয়াল হাদীসাহ্’’ গ্রন্থে (কাফ ৮৬/১) উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। বর্ণনাকারী তোমরা পশমী পোশাক গ্রহণ কর, তাহলে তোমরা তোমাদের হৃদয়ে ঈমানের মধুরতা পাবে। তোমরা পশমী পোশাক গ্রহণ কর, তাহলে সল্প খাদ্য প্রাপ্ত হবে। তোমরা পশমী পোশাক গ্রহণ কর; তাহলে তা দ্বারা তোমাদেরকে আখেরাতে চেনা যাবে। পশমী পোশাক হৃদয়কে গবেষণার অধিকারী করে আর গবেষণা বিচক্ষণতার অধিকারী করে এবং বিচক্ষণতা প্রবাহিত হয় রক্তনালীর মধ্যে। অতএব যে ব্যক্তির গবেষণা বৃদ্ধি পাবে, তার খাদ্য কমে যাবে, তার জিহ্বা অকেজো হয়ে যাবে এবং তার অন্তর পাতলা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তির গবেষণা কমে যাবে তার খাদ্য বৃদ্ধি পাবে, তার শরীর মোটা হয়ে যাবে এবং তার হৃদয় শক্ত হয়ে যাবে। এ শক্ত হৃদয় দূরে সরে যাবে জান্নাত হতে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী হয়ে যাবে। হাদীসটি জাল। এটি আবূ বাকর ইবনুন নাকূর ‘‘আল-ফাওয়াইদ’’ গ্রন্থে (১/১৪৭-১৪৮), ইবনু বিশরান ‘‘আল-‘আমালী’’ গ্রন্থে (২/৯/১), দাইলামী ‘‘মুসনাদুল ফিরদাউস’’ গ্রন্থে (২/২৮১) এবং ইবনুল জাওযী ‘‘মাওযূ‘আত’’ গ্রন্থে (৩/৪৮) আল-খাতীব-এর সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কুদায়মী হতে, তিনি তার শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু দাউদ আল-ওয়াসেতী হতে ...বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। কুদায়মী হাদীস জাল করতেন এবং তার শাইখ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। সুয়ূতী তার এ মতকে ‘‘আল-লাআলী’’ গ্রন্থে (২/২৬৪) সমর্থন করেছেন। তবে তিনি বলেছেন যে, হাদীসটিতে ইদ্রাজ করা হয়েছে (যা তার মধ্যে হওয়ার কথা নয় তা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে)। তিনি তার ‘‘মুদরাজ ইলাল মুদরাজ’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন যে, এটি হতে মারফূ‘ হচ্ছে শুধুমাত্র এ অংশটুকুঃ (আরবি) অবশিষ্ট অংশ অতিরিক্ত মুনকার। এ জন্যেই তিনি ‘‘আল-জামে‘উস সাগীর’’ গ্রন্থে হাকিম ও বাইহাক্বীর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ সূত্রেও জালকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ সম্ভবত তিনি দু’হাজারেরও বেশি হাদীস জাল করেছেন। এছাড়াও হাকিম ‘‘আল-মুসতাদরাক’’ গ্রন্থে অন্য একটি সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেটিও সহীহ নয়। মোটকথা এটির কোন সূত্রেই সঠিক নয়। এটির সনদে ইবনু হাবীব মারওয়াযী রয়েছেন; তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন এবং আহমাদ ইবনু আব্দিল্লাহ নামক বর্ণনাকারী রয়েছেন। আমার ধারণা তিনি প্রসিদ্ধ মিথ্যুক এবং তার ভাই মুহাম্মাদ মাজহূল। বর্ণনাকারী আল্লাহর নাম ধরে কসম করে মিথ্যা কথা বলা আমার নিকট অতিপ্রিয়, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করে সত্য বলা হতে। হাদীসটি জাল। হাদীসটি আবূ নু’য়াইম “আল-হিলইয়্যাহ্” গ্রন্থে (৭/২৬৭) এবং “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/১৮১) উল্লেখ করে “আখবার” গ্রন্থে বলেছেন : লোকেরা এটিকে মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আর “হিলইয়্যাহ্” গ্রন্থে বলেছেন : মুহাম্মাদ ইবনু মু’য়াবিয়া একক ভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছি : তিনি হচ্ছেন নাইসাপূরী। দারাকুতনী তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু মা’ঈনও বলেছেন : তিনি মিথ্যুক। তবে এটি ইবনু মাস’উদ (রাঃ)-এর বাণী, যেমনভাবে আবূ নু’য়াইম উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে তাবারানীও “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১৭/২) সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। যেমনটি এসেছে “আল-মাজমা” গ্রন্থে (৪/১৭৭)। অর্থাৎ এটি মওকূফ হিসাবে সহীহ্। বর্ণনাকারী তিনটি বস্তু যার মাঝে থাকবে, তার বক্ষকে আল্লাহ প্রশস্ত করে দিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। দুর্বলকে দয়া করা, পিতা-মাতার প্রতি নম্র ব্যবহার করা এবং অধীনস্তদের প্রতি ইহসান করা। হাদীসটি জাল। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (৩/৩১৬) আব্দুল্লাহ ইবনু ইব্রাহীম আল-গিফারী আল-মাদীনী সূত্রে তার পিতা হতে ...বর্ণনা করে বলেছেন : হাদীসটি গারীব। আমি (আলবানী) বলছি : ইবনু হিব্বান এ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে বলেছেন : তিনি হাদীস জাল করতেন। হাকিম বলেন : তিনি দুর্বল সম্প্রদায় হতে বহু জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেগুলো তিনি ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। আমি (আলবানী) বলছি : তার পিতা মাজহূল, যেমনভাবে “আত-তাকরীব” গ্রন্থে এসেছে। অতএব হাদীসটি এ সনদে জাল। বর্ণনাকারী কিয়ামত দিবসে লোকদের কাতার বন্দি করা হবে। অতঃপর জাহান্নামের কোন এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে অতিক্রম করবে আর বলবে : হে ব্যক্তি! তুমি কি স্মরণ করতে পারছ না সেই দিনটিকে যেদিন তুমি (আমার নিকট) পানি চেয়েছিলে? অতঃপর আমি তোমাকে একবার পানি পান করিয়েছিলাম। তিনি বলেন : অতঃপর তার জন্য সুপারিশ করা হবে। অন্য এক ব্যক্তি অতিক্রম করবে আর বলবে : হে ব্যক্তি! তুমি কি স্মরণ করতে পারছ না সেই দিনটিকে যেদিন আমি তোমাকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দিয়েছিলাম? অতঃপর তার জন্য সুপারিশ করা হবে। অন্য এক ব্যক্তি অতিক্রম করবে আর বলবে, হে ব্যক্তি! তুমি কি স্মরণ করতে পারছ না সেই দিনটিকে যেদিন তুমি আমাকে এ এ প্রয়োজনে প্রেরণ করেছিলে আর আমি তোমার জন্য গিয়েছিলাম? অতঃপর তার জন্য সুপারিশ করা হবে। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (২/৩৯৪) ইয়াযীদ রুকাশী সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি হচ্ছেন ইয়াযীদ ইবনু আবান; তিনি দুর্বল, যেরূপভাবে ইবনু হাজার ও অন্যরা বলেছেন। তিনি ছাড়া অন্য ব্যক্তিও হাদীসটি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। সেগুলোর কোন একটিও সহীহ নয়। দেখুন “আত-তারগীব” (২/৫০-৫১)। বর্ণনাকারী ইসলামের হাতল ও দ্বীনের স্তম্ভ হচ্ছে তিনটি। যেগুলোর উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। যে ব্যক্তি সেগুলো হতে একটি পরিত্যাগ করবে, সে তা দ্বারা কুফরীকারী হিসেবে গণ্য হবে, যার রক্ত প্রবাহিত করা হালাল। সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই-এর সাক্ষ্য প্রদান, ফরয সালাত ও রমাযানের সওম। হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটি আবূ ই‘য়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ ১২৬/২) এবং লালকাঈ তার “সুন্নাহ” গ্রন্থে (১/২০২/১) মুয়াম্মিল ইবনু ইসমাঈল সূত্রে ... আম্র ইবনু মালেক আন-নুকারী হতে ... বর্ণনা করেছেন। আম্র ইবনু মালেককে ইবনু হিব্বান ব্যতীত অন্য কোন মুহাদ্দিস নির্ভরযোগ্য বলেননি। তিনি নির্ভরযোগ্য বলতে শিথিলতা প্রদর্শনকারীদের একজন। এমনকি মাজহূল ব্যক্তিদেরকেও তিনি নির্ভরযোগ্য বলেছেন। এছাড়া তিনি নিজেই এ মালেক সম্পর্কে বলেনঃ তার ছেলে ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনা ব্যতীত অন্য বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ভুল করতেন এবং গারীব বর্ণনা করতেন। অতএব এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না অন্য সনদে তা বর্ণিত না হওয়া পর্যন্ত। এছাড়া মুয়াম্মিল ইবনু ইসমাঈল সত্যবাদী, কিন্তু বহু ভূল করতেন। এরূপই বলেছেন আবূ হাতিম ও অন্যরা। এছাড়া হাদীসটি সকলের ঐক্যমতের সহীহ্ হাদীস বিরোধী। যেটিতে ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি উল্লেখ করা হয়েছে অথচ এটিতে বলা হয়েছে তিনটি। সহীহ্ হাদীসটির মধ্যে বলা হয়নি যে, কোন একটি স্তম্ভকে ছেড়ে দিলে সে কাফের হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে এটিতে বলা হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি (তিনটির) একটি ছেড়ে দিবে সে কাফির। তবে অন্য দলীল হতে বুঝা যায় যে, আশংকা আছে কেউ যদি সালাতের ব্যাপারে অলসতা করে তাহলে সে কুফরীর উপর মৃত্যুবরণ করবে এবং লাইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষী প্রদান করা ব্যতীত কোন কিছুই উপকারে আসবে না। অতএব মুনযেরী (১/১৯৬) এবং হায়সামী (১/৪৮) কর্তৃক আলোচ্য হাদীসের সনদটি হাসান বলা প্রশ্নবোধক। বর্ণনাকারী তওবাকারী আল্লাহ্র বন্ধু। এ শব্দে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। গাযালী “আল-ইহ্ইয়া” গ্রন্থে (৪/৪৩৪) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অথচ শাইখ তাজুদ্দীন সুবকী “আত-তাবাকাত” গ্রন্থে (৪/১৪-১৭০) বলেনঃ (আরবি) এর কোন সনদ পাচ্ছি না। এটির ন্যায় নিম্নের হাদীসটিওঃ বর্ণনাকারী নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন পথভ্রষ্ট তওবাকারী মু‘মিন বান্দাকে। হাদীসটি জাল এটি আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ “যাওয়াইদুল মুসনাদ” গ্রন্থে (নং ৬০৫, ৮১০) এবং তাঁর সূত্রে আবু নু‘য়াইম “হিলইয়্যাহ্” গ্রন্থে (৩/১৭৮-১৭৯) উল্লেখ করেছেন। এ সূত্রে আবু আব্দিল্লাহ মাসলামা আর-রাযী রয়েছেন। তিনি আবু আম্র আল-বাজালী হতে আর তিনি আব্দুল মালেক ইবনু সুফিয়ান আস-সাকাফী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি জাল। কারণ আবু আব্দিল্লাহ মাসলামা আর-রাযীর জীবনী পাচ্ছি না। হাফিয ইবনু হাজার তাকে তার “তা’জীলুল মানফা‘য়াহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। আবূ আম্র আল-বাজালী সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং ইবনু হাজার “আত-তা‘জীল” গ্রন্থে বলেনঃ বলা হয় তার নাম আবীদা, তার থেকে হারামী ইবনু হাফ্স হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা হালাল নয়। হাফিয ইবনু হাজার দৃঢ়তার সাথে “আল-কুনা” গ্রন্থে “লিসানুল মীযান”-এর উদ্ধৃতিতে (৬/৪১৯) বলেছেনঃ তিনি হচ্ছেন আবীদা ইবনু আব্দির রহমান। তাকে ইবনু হিব্বান উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন। আব্দুল মালেক ইবনু সুফিইয়ান আস-সাকাফী সম্পর্কে হুসাইনী বলেনঃ তিনি মাজহূল। হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথাকে “আত-তা‘জীল” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। এছাড়া হাদীসটি ওয়াকেদী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তিনি একজন মিথ্যুক। অতএব হাদীসটি বানোয়াট। বর্ণনাকারী নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী যুবককে ভালবাসেন। হাদীসটি দুর্বল। হাফিয ইরাকী “আত-তাখরীজ” গ্রন্থে (৪/৪-৫) বলেনঃ এটিকে ইবনু আবিদ-দুনিয়া “আত-তাওবাহ” গ্রন্থে এবং আবূশ শাইখ “কিতাবুস সাওয়াব” গ্রন্থে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস বলে দুর্বল সনদে উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী নিশ্চয় আল্লাহ সেই যুবককে ভালবাসেন যে, তার যৌবন কালকে আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে অতিবাহিত করে। হাদীসটি জাল। এটিকে আবূ নু’য়াইম (৫/৩৬০) এবং তার সূত্রে দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে (১/২/২৪৭ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল ইবনু আতিয়া সূত্রে … বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি জাল। কারণ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল মিথ্যুক। এর পরেও সনদে বিচ্ছিন্নতা থাকার আশংকা করছি, উমার ইবনু আব্দিল আযীয এবং ইবনু উমার (রাঃ)-এর মধ্যে। কারণ ইবনু উমার (রাঃ)-এর মৃত্যুর দিন উমারের বয়স ছিল ১৩ বছরের মত। বর্ণনাকারী নিশ্চয় আল্লাহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে ইবাদাতকারীকে ভালবাসেন। হাদীসটি জাল। হাদীসটি খাতীব বাগদাদী তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১০/১১-১২) আব্দুল্লাহ ইবনু ইব্রাহীম আল-গিফারী সূত্রে … বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি জাল। কারণ গিফারী জাল করার দোষে দোষী আর তার শাইখ মুনকাদির ইবনু মুহাম্মাদ লাইয়েনুল হাদীস (হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল), যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন। এ হাদীসটি এবং পূর্বের হাদীসটি “জামে’উস সাগীর”-এর জাল হাদীস গুলোর অন্তর্ভূক্ত। বর্ণনাকারী সদাচরণকারীদের উত্তম কর্মগুলো হচ্ছে নৈকট্য অর্জন কারীগণের মন্দ কর্ম। হাদীসটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই। গাযালী “আল-ইহ্ইয়া” গ্রন্থে (৪/৪৪) (আরবি) এ ভাষায় উল্লেখ করেছেন। সুবকী (৪/১৪৫-১৭১) বলেনঃ এটি যদি হাদীস হয় তাহলে তা দেখার প্রয়োজন আছে। কারণ লেখক তার উল্লেখিত কথা দ্বারা কাকে বুঝিয়েছেন তা দেখতে হবে। আমি (আলবানী) বলছিঃ বাহ্যিকভাবে যা দেখা যাচ্ছে, গাযালী হাদীস হিসাবে এটিকে উল্লেখ করেননি। এ জন্য হাফিয ইরাকী “তাখরীজু আহাদীসে ইহ্ইয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। গাযালী ইঙ্গিত করেছেন যে, এটি আবূ সা’ঈদ আল-খাররাজ আস-সূফীর কথা। ইবনুল জাওযী “সাফওয়াতুস সাফওয়া” গ্রন্থে (২/১৩০/১) অনুরূপভাবে ইবনু আসাকিরও উল্লেখ করেছেন, যেমনটি “আল কাশফ” গ্রন্থে (১/৩৫৭) এসেছে। অতঃপর বলেছেনঃ কোন কোন ব্যক্তি এটিকে হাদীস হিসাবে গণ্য করেছেন। কিন্তু তেমনটি নয়। যারা এটিকে হাদীস হিসাবে গণ্য করেছেন, তাদের একজন হচ্ছেন আবুল ফযল মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ আশ-শাফে’ঈ তার “জিল্লুল মওরেদ” গ্রন্থে (কাফ ১/১২)। তবে তিনি দুর্বল শব্দ দিয়ে (রোগাক্রান্ত শব্দে) উল্লেখ করেছেন। তার এ দাবি সঠিক নয়। কারণ এটির কোন ভিত্তি নেই। অর্থের দিক দিয়েও এটি সঠিক নয়। কারণ কখনই ভালকর্ম খারাপ কর্মে পরিণত হতে পারে না। বর্ণনাকারী আমি ভুলিনা, কিন্তু আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয় যাতে করে আমি বিধান রচনা করতে পারি। হাদীসটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই। এটিকে উক্ত ভাষায় গাযালী “আল-ইহ্ইয়া” গ্রন্থে (৪/৩৮) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইরাকী বলেনঃ ইমাম মালেক হাদীসটি বিনা সনদে তার নিকট পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনু আব্দিল বার বলেনঃ হাদীসটি “আল-মুওয়াত্তা” গ্রন্থে সনদহীন মুরসাল হিসাবে পাওয়া যায়। হামযা আল-কিনানী বলেনঃ ইমাম মালেক ছাড়া অন্য কারো সূত্রে এটি বর্ণিত হয়নি। আবূ তাহের আনমাতী বলেনঃ এটিকে আমি দীর্ঘ সময় খুঁজেছি, ইমাম এবং হাফিযগণকে এটির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু সফলকাম হইনি এবং কারো নিকট শুনিনি যে, তিনি সফল হয়েছেন। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ যারকানী “শরহুল মুওয়াত্তা” গ্রন্থে (১/২০৫) উল্লেখ করেছেন। এর কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত নিম্নের সহীহ হাদীস বিরোধী। (আরবি) অর্থঃ ‘আমি মানুষ; আমি ভুলে যাই যেরূপভাবে তোমরা ভুলে যাও। অতএব আমি যখন ভুলে যাব তখন তোমরা আমকে স্মরণ করিয়ে দিবে।‘ বর্ণনাকারী লোকেরা ঘুমিয়ে রয়েছে, যখন তারা মৃত্যুবরণ করবে; তখন তারা সতর্ক হবে (জাগ্রত হবে)। হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। গাযালী এটিকে মারফূ’ বলে উল্লেখ (৪/২০) করেছেন। হাফিয ইরাকী এবং তার অনুসরণ করে সুবকী বলেন (৪/১৭০-১৭১): কিন্তু মারফূ’ হিসাবে হাদীসটি পাচ্ছি না। এটিকে আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-এর কথা হিসাবে বলা হয়েছে। অনুরূপ কথা “আল-কাশফ” গ্রন্থেও (২/৩১২) এসেছে।