2. পর্ব-২ঃ ‘ইলম (বিদ্যা)

【1】

প্রথম অনুচ্ছেদ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌছিয়ে দাও। বানী ইসরাইল হতে শোনা কথা বলতে পার, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। [১] সামুরাহ্ বিন জুনদুব ও মুগীরাহ্ বিন শু‘বাহ্ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে এমন হাদীস বলে, যা সে মিথ্যা মনে করে, নিশ্চয়ই সে মিথ্যাবাদীদের একজন। [১] মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যার কল্যান কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্তুত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহ তা'আলা আমাকে দান করেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সোনা-রূপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। যারা জাহিলিয়্যাতের (অন্ধকারের) যুগে উত্তম ছিল, দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার কারণে তারা ইসলামের যুগেও উত্তম। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে হিংসা করা ঠিক নয়। প্রথম ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ দান করেছেন সাথে সাথে তা সত্যের পথে (ফী সাবীলিল্লাহ) বা সৎকার্জে ব্যয় করার জন্য তাকে তাওফীক্বও দিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা'আলা হিক'মাহ্, অর্থাৎ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং সে এ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগায় এবং (লোকদেরকে) তা শিখায়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার 'আমাল বন্ধ (নিঃশেষ) হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি 'আমালের সাওয়াব (অব্যাহত থাকে): (১) সদাক্বায়ে জারিয়া, (২) জ্ঞান- যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং (৩) সুসন্তান- যে তার (পিতা-মাতার) জন্য দু'আ করতে থাকে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু'মিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা'আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্থ লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা'আলা ক্বিয়ামাতের দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মু'মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ তা'আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞান চর্চা করে, তাদের উপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহ্মাত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা'আলা মালাকগণের নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার 'আমাল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা'আলার সামনে হাশরের ময়দানে তাকে পেশ করবেন এবং তিনি তার সকল নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নি'আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নি'আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছ? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুর করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নি'আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি'আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি'আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি 'ইল্ম অর্জন করেছি, মানুষকে 'ইল্ম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমাকে 'আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তৃতীয় ব্যক্তি - যাকে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া সব নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি'আমাত পেয়ে তুমি কি 'আমাল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে করচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (শেষ যুগে) আল্লাহ তা'আলা 'ইল্ম বা জ্ঞানকে তাঁর বান্দাদের অন্তর হতে টেনে বের করে ঊঠিয়ে নিবেন না, বরং (জ্ঞানের অধিকারী) 'আলিমদেরকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিয়ে যাবার মাধ্যমে 'ইলম বা জ্ঞানকে উঠিয়ে নিবেন। তারপর (দুনিয়ায়) যখন কোন 'আলিম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন লোকজন অজ্ঞ মূর্খ লোকদেরকে নেতারূপে গ্রহন করবে। অতঃপর তাদের নিকট (মাসআলা-মাসায়িল) জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তারা বিনা 'ইল্মেই 'ফাতাওয়া' জারী করবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে। [১] তাবি’ঈ শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে লোকজনের সামনে ওয়ায-নাসীহাত করতেন। একদিন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমরা চাই, আপনি এভাবে প্রতিদিন আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করুন। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বললেন, এরূপ করতে আমাকে এ কথাই বাধা দিয়ে থাকে যে, আমি প্রতিদিন (ওয়ায-নাসীহাত) করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে উঠবে। এ কারণে আমি মাঝে মধ্যে ওয়ায-নাসীহাত করে থাকি, যেমনিভাবে আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লক্ষ্য রাখতেন যাতে আমাদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক না হয়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন কথা বলতেন (অধিকাংশ সময়) তিনবার বলতেন, যাতে মানুষ তাঁর কথাটা ভাল করে বুঝতে পারে। এভাবে যখন তিনি কোনও সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তাদেরও সালাম করতেন তখন তাদের তিনবার করে সালাম করতেন। [১] আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মত কোন সওয়ারী নেই। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। [১] জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা দিনের প্রথম বেলায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ছিলাম। এমন সময় কাঁধে তরবারী ঝুলিয়ে একদল লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে পৌঁছল। তাদের শরীর প্রায় উলঙ্গ, ‘আবা’ বা কালো ডোরা চাদর দিয়ে কোন রকমে শরীর ঢেকে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক, বরং সকলেই ‘মুযার’ গোত্রের ছিল। তাদের চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল এবং তিনি খাবারের খোঁজে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর কিছু না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন এবং বিলাল (রাঃ) -কে (আযান ও ইক্বামাত দিতে) নির্দেশ করলেন। বিলাল (রাঃ) আযান ও ইক্বামাত দিলেন এবং সকলকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বাহ্ দিলেন এবং এ আয়াত পড়লেনঃ (আরবী) “হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তা হতে জোড়া সৃষ্টি করেছেন, এরপর এ জোড়া হতে বহু নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর (নিজেদের অধিকার) দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (সুরাহ্ আন্ নিসা ৪:১) অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ্ আল্ হাশ্র-এর এ আয়াত পড়লেনঃ (আরবী) “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য (ক্বিয়ামাতের জন্য) কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।” (সূরাহ্ আল হাশ্র ৫৯:১৮) (অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের) প্রত্যেকেরই তাদের দীনার, দিরহাম, কাপড়-চোপড়, গম ও খেজুরের ভাণ্ডার হতে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদি খেজুর এক টুকরাও হয়। বর্ণনাকারী (জারীর) বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগল। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়-চোপড়ে দু’টি স্তুপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারা ঝকমক করছে, যেন তা স্বর্ণে জড়ানো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করল সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর ‘আমাল করবে তাদেরও সম-পরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করল, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর ‘আমাল করবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে ‘আমালকারীদের গুনাহ কম করবে না। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হোক, তার খুনের (গুনাহর) একটি অংশ প্রথম হত্যাকারী ‘আদাম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ সে-ই (‘আদামের সন্তান কাবীল) প্রথম হত্যার প্রচলন করেছিল। [১]

【2】

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

কাসীর বিন ক্বায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি দিমাশ্ক -এর মাসজিদে আবুদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার নিকট একজন লোক এসে বলল, হে আবুদ্ দারদা! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শহর মাদীনাহ্ থেকে শুধু একটি হাদীস জানার জন্য আপনার কাছে এসেছি। আমি শুনেছি আপনি নাকি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আর কোন উদ্দেশে আমি আপনার কাছে আসিনি। তার এ কথা শুনে আবুদ্ দারদা (রাঃ) বললেন, (হাঁ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি (কুরআন ও হাদীসের) ‘ইলম সন্ধানের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছিয়ে দিবেন এবং মালায়িকাহ্ ‘ইল্ম অনুসন্ধানকারীর সন্তুষ্টি এবং পথে তার আরামের জন্য তাদের পালক বা ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর ‘আলিমদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দু’আ করে থাকেন, এমনকি পানির মাছসমূহও (ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে)। ‘আলিমদের মর্যাদা মূর্খ ‘ইবাদাতকারীর চেয়ে অনেক বেশী। যেমন পূর্ণিমা চাঁদের মর্যাদা তারকারাজির উপর এবং ‘আলিমগণ হচ্ছে নাবীদের ওয়ারিস। নাবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম (ধন-সম্পদ) মীরাস (উত্তরাধিকারী) হিসেবে রেখে যান না। তাঁরা মীরাস হিসেবে রেখে যান শুধু ‘ইল্ম। তাই যে ব্যক্তি ‘ইল্ম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।[২২৯] আর তিরমিযী হাদীস বর্ণনাকারীর নাম ক্বায়স বিন কাসীর বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাবীর নাম কাসীর ইবনু ক্বায়সই এটিই সঠিক (যা মিশকাতের সংকলকও নকল করেছেন)।[১] আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এদের একজন ছিলেন ‘আবিদ (‘ইবাদাতকারী), আর দ্বিতীয়জন ছিলেন ‘আলিম (জ্ঞান অনুসন্ধানকারী)। তিনি বললেন, ‘আবিদের উপর ‘আলিমের মর্যাদা হল যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা, তাঁর মালায়িকাহ্ এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ‘ইল্ম শিক্ষাকারীর জন্য দু’আ করে। [১] মাকহূল (রহঃ) দারিমী এ হাদীসে মাকহূল (রহঃ) থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, ‘আবিদের তুলনায় ‘আলিমের মর্যাদা এমন, যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের উপর আমার মর্যাদা। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবী) “নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ‘আলিমরাই তাঁকে ভয় করে”- (সূরাহ্ ফাত্বির/মালায়িকাহ্ ৩৫: ৮)। এছাড়া তার হাদীসের অবশিষ্টাংশ তিরমিযীর বর্ণনার অনুরূপ। [১] আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদা লোকেরা (আমার পরে) তোমাদের অনুসরণ করবে। আর তারা দূর-দূরান্ত হতে দ্বীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে তোমরা তাদেরকে ভাল কাজের (দ্বীনের ‘ইল্মের) নাসীহাত করবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্ঞানের কথা মু’মিনের হারানো ধন। সুতরাং মু’মিন যেখানেই তা পাবে সে-ই হবে তার অধিকারী। [১] তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব। তাছাড়াও এর অপর বর্ণনাকারী ইব্রাহীম ইবনু ফায্লকে দুর্বল (য'ঈফ) বলা হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন ফাক্বীহ (‘আলিমে দীন) শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে হাজার ‘আবিদ (‘ইবাদাতকারী) হতেও বেশী ভীতিকর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ‘ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ পরানোর শামিল।[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিক্বের মধ্যে দু’টি অভ্যাস একত্র হতে পারে না- নেক চরিত্র ও দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান। (তিরমিযী)[১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য বের হয়েছে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই রয়েছে। (তিরমিযী ও দারিমী)[১] সাখবারাহ্ আল আযদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানানুসন্ধান করে, তা তার পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (তিরমিযী ও দারিমী)[১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কল্যাণকর কাজে অর্থাৎ- জ্ঞানার্জনে পরিতৃপ্ত হতে পারে না, যে পর্যন্ত না পরিণামে সে জান্নাতে পৌঁছে যায়। (তিরমিযী)[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে এমন কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে, অথচ গোপন রাখে (বলে না), ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[১] ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে ‘আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (তিরমিযী)[১] ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ‘ইল্ম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে ক্বিয়ামাতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কোন কথা শুনেছে, অতঃপর এ কথাকে স্মরণ রেখেছে ও রক্ষা করেছে এবং যা শুনেছে হুবহু তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কারণ জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নয়। আবার কেউ কেউ এমন আছে যারা নিজেরা জ্ঞানী হলেও, নিজের তুলনায় বড় জ্ঞানীর নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়। তিনটি বিষয়ে মুসলিমের অন্তর বিশ্বাসঘাতকতা (অবহেলা) করতে পারে নাঃ (১) আল্লাহর উদ্দেশে নিষ্ঠার সাথে কাজ করা (২) মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করা এবং (৩) মুসলিমের জামা’আতকে আঁকড়ে ধরা। কারণ মুসলিমদের দু’আ বা আহ্বান তাদের পরবর্তী (মুসলিমদেরও) শামিল করে রাখে। [১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাউদ হাদীসটি যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে তিরমিযী ও আবূ দাউদ (আরবী) হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি । [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে শ্রোতা থেকে অধিক স্মরণকারী হয়। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) এ হাদীসটি দারিমী আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন । [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। যে পর্যন্ত আমার হাদীস বলে তোমরা নিশ্চিত না হবে, তা বর্ণনা করবে না। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করেছে (বর্ণনা করেছে), সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম নির্ধারণ করে নিয়েছে। [১] ইবনু মাস’উদ (রাঃ) ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসকে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং প্রথম অংশ ‘আমার পক্ষ হতে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে’ অংশটুকু বর্ণনা করেননি। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাপারে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কোন মতামত দিয়েছে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে (শব্দগুলো হল), যে লোক কুরআন সম্পর্কে নিশ্চিত ‘ইল্ম ছাড়া (মনগড়া) কোন কথা বলে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে নেয়।[১] জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে নিজের মনগড়া কোন কথা বলল এবং সে সত্যেও উপনীত হল, এরপরও (মনগড়া কথা বলে) সে ভুল করল (কেননা, সে ভুল পন্থা অবলম্বন করেছে)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআনের কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া কুফরী। [১] আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি দল সম্পর্কে শুনলেন, তারা পরস্পর কুরআন নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে, ঝগড়া করেছে। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের দ্বারা বাতিল করার চেষ্টা করছিল। অথচ আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তার এক অংশ অপর অংশের পরিপূরক হিসেবে ও সত্যতা প্রমাণ করার জন্য। তাই তোমরা এর এক অংশকে অপর অংশের দ্বারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করো না, বরং তোমরা তার যতটুকু জান শুধু তা-ই বল, আর যা তোমরা জান না তা কুরআনের ‘আলিমের নিকট সোর্পদ কর। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআন মাজীদ সাত হরফের সাথে অবতীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেক আয়াতের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দিক রয়েছে। প্রত্যেকটি দিকের একটি ‘হাদ্’ (সীমা) রয়েছে। আর প্রত্যেকটি সীমার একটি অবগতির স্থান রয়েছে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘ইলম বা জ্ঞান তিন প্রকার- (১) আয়াতে মুহকামাতের জ্ঞান, (২) সুন্নাতে ক্বায়িমার জ্ঞান এবং (৩) ফারীযায়ে আদিলার জ্ঞান। এর বাইরে যা আছে তা অতিরিক্ত। [১] আওফ ইবনু মালিক আল আশজা‘ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ [তিন ব্যাক্তি বাগাড়ম্বর করে] (১) শাসক (২) শাসকের পক্ষ হতে নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যাক্তি (৩) অথবা কোন অহংকারী লোক। [১] ‘আমর ইবনু শু’আয়ব দারিমী এ হাদীসটি ‘আমর ইবনু শু’আয়ব থেকে তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের এ বর্ণনায় শব্দ (আরবী) এর পরিবর্তে (আরবী) উল্লেখ রয়েছে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তিকে ভুল ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে অর্থাৎ বিনা ‘ইল্‌মে (বিদ্যায়) ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে এর গুনাহ তার উপর বর্তাবে যে তাকে ফাতাওয়া দিয়েছে। আর যে ব্যাক্তি তার কোন ভাইকে (অপরকে) এমন কোন কাজের পরামর্শ দিয়েছে, যা কল্যাণ হবে না বলে সে জানে, সে নিশ্চয়ই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। [১] মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (আমার নিকট হতে) ফারায়িয ও কুরআন শিখে নাও এবং লোকদেরকে তা শিখিয়ে দাও। কারণ আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে (আমার মৃত্যু হবে)। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে তাঁর) সাথে ছিলাম। তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠালেন, অতঃপর বললেন, এটা এমন সময় যখন মানুষের নিকট হতে ‘ইলমকে (দ্বীনী বিদ্যাকে) ছিনিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তারা ‘ইলম হতে কিছুই রাখতে পারবে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন সময় খুব বেশি দূরে নয় মানুষ যখন জ্ঞানের সন্ধানে উটের কলিজায় আঘাত করবে (অর্থাৎ উটে আরোহণ করে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে)। কিন্তু মদীনার ‘আলিমের চেয়ে বড় কোন ‘আলিম কোথাও খুঁজে পাবে না। [১] জামি’ আত্ তিরমিযীতে ইবনু ‘উআয়নাহ্ হতে বর্ণিত হয়েছে, মাদীনার সে ‘আলিম মালিক ইবনু আনাস। ‘আবদুর রাযযাকও একথা লিখেছেন। আর ইসহাক্ব ইবনু মুসার বর্ণনা হল, আমি ইবনু ‘উআয়নাহকে এ কথা বলতে শুনেছি, মাদীনার সে ‘আলিম হলো ‘উমারী জাহিদ। অর্থাৎ ‘উমার ফারূক (রাঃ)-এর খান্দানের লোক। তার নাম হল ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবগত হয়েছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দীনকে সংস্কার করবেন। [১] ইবরাহীম ইবনু ‘আবদুর রহমান আল ‘উযরী (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক আগত জামা’আতের মধ্যে নেক তাক্বওয়াসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহর) এ জ্ঞান গ্রহণ করবেন। আর তিনিই এ জ্ঞানের মাধ্যমে (কুরআন-সুন্নাহ্) সীমালংঘনকারীদের রদবদল, বাতিলপন্থীদের মিথ্যা অপবাদ এবং জাহিল অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বিদূরিত করবেন। [২৬৪] ইমাম বায়হাক্বী এ হাদীসটি ‘মাদখাল’ গ্রন্থে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। [১]

【3】

তৃতীয় অনুচ্ছেদ

হাসান আল বসরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন ব্যক্তি যার মৃত্যু এসে পৌঁছেছে এমন অবস্থায়ও ইসলামকে জীবন্ত করার উদ্দেশে ‘ইলম বা জ্ঞানার্জনে মশগুল রয়েছে, জান্নাতে তার সাথে নাবীদের মাত্র একধাপ পার্থক্য থাকবে। [১] হাসান আল বসরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বানী ইসরাঈলের দু’জন লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তাদের একজন ছিলেল ‘আলিম, যিনি ওয়াক্তিয়া ফারয সালাত আদায় করার পর বসে মানুষকে তা’লীম দিতেন। আর দ্বিতীয়জন দিনে সিয়াম পালন করতেন, গোটা রাত ইবাদাত করতেন (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল) এ দু’ব্যক্তির মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে উত্তম কে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওয়াক্তিয়া ফারয সালাত আদায় করার পরপরই বসে বসে যে ব্যক্তি তা’লীম দেয়, সে ব্যক্তি যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে ‘ইবাদাত করে তার চেয়ে তেমন বেশী মর্যাদাবান। যেমন- তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমার মর্যাদা। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম ব্যক্তি হল সে, যে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান এ সমৃদ্ধ। যদি তার কাছে লোকজন মুখাপেক্ষী হয়ে আসে, তাহলে সে তাদের উপকার সাধন করে। আর যখন তার কাছে মানুষের প্রয়োজন থাকে না, তখন তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। [১] তাবি’ঈ ‘ইক্বকিমাহ্ (রহঃ) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস(রাঃ) বলেছেনঃ হে ‘ইক্বরিমাহ। প্রত্যেক জুমু’আয় (সপ্তাহে) মাত্র একদিন মানুষকে ওয়ায-নাসীহাত শুনাবে। যদি একবার ওয়ায-নাসীহাত করা যথেষ্ট নয় মনে কর তাহলে সপ্তাহে দু’বার। এর চেয়েও যদি বেশী করতে চাও তাহলে সপ্তাহে তিনবার ওয়ায-নাসীহাত কর। তোমরা এ কুরআনকে মানুষের নিকট বিরক্তিকর করে তুলো না। কোন জাতি যখন তাদের কোন ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত থাকে তখন তোমরা সেখানে পৌঁছলে তাদের আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের কাছে ওয়ায-নাসীহাত করতে যেন আমি কখন তোমাদেরকে না দেখি। এ সময় তোমরা চুপ করে থাকবে। তবে তারা যদি তোমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার জন্য বলে তখন তাদের আগ্রহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে হাদীস শুনাও। কবিতার ছন্দে দু’আ করা পরিত্যাগ করবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সহাবীগণকে দেখেছি, তারা এরূপ করতেন না। [১] ওয়াসিলাহ্ বিন আসক্বা‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞান সন্ধান করেছে ও অর্জন করতে পেরেছে, তার সাওয়াব দুই গুন। আর যদি সে জ্ঞান অর্জন করতে না পেরেও থাকে, তাহলেও তার সাওয়াব (চেষ্টা করার জন্য) এক গুন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনের ইন্তিকালের পরও তার যেসব নেক ‘আমল ও নেক কাজের সাওয়াব তার নিকট সবসময় পৌঁছতে থাকবে, তার মধ্যে- (১) ‘ইলম বা জ্ঞান-যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; (২) নেক সন্তান-যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; (৩)কুরআন- যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; (৪) মাসজিদ- যা সে নির্মাণ করে গেছে; (৫) মুসাফিরখানা- যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; (৬) কূপ বা ঝর্ণা- যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং (৭) দান-খয়রাত- যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধন- সম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সাওয়াব তার তার নিকট পৌঁছতে থাকবে। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ‘ইলম (বিদ্যা) হাসিল করার জন্য কন পথ ধরবে আমি তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিব। আর যেই ব্যক্তির দুই চোখ আমি নিয়ে নিয়েছি, তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করব। ‘ইবাদাতের পরিমাণ বেশি হবার চেয়ে ‘ইলমের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। দ্বীনের মূল হল তাক্বওয়া তথা হারাম ও দ্বিধা-সন্দেহের বিষয় হতে বেঁচে থাকা। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাতে সামান্য কিছু সময় দ্বীনের জ্ঞান আলোচনা করা (‘ইবাদাতে রত থাকা) গোটা রাত জাগরণ অপেক্ষা উত্তম। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে নবাবীতে অনুষ্ঠিত দুটি মজলিসের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উভয় মজলিসই উত্তম কাজ করছে, কিন্তু এদের এক মাজলিস অন্য মাজলিস অপেক্ষা উত্তম। একটি দল ইবাদাতে লিপ্ত, তারা অবশ্য আল্লাহর নিকট দু'আ করছে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাদের আশা পূর্ণও করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে নাও পারেন। আর দ্বিতীয় দলটি হল ফাকীহ ও আলিমদের। তারা ইলম অর্জন করেছে এবং মূর্খদের শিখাচ্ছে, তারাই উত্তম। আর আমাকে শিক্ষকরূপে পাঠানো হয়েছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দলের সাথেই বসে গেলেন।” [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল: হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে ইলমের সীমা কী যাতে পৌছলে একজন লোক ফাকীহ বা আলিম বলে গণ্য হবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম): বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের জন্য দ্বীন সংক্রান্ত চল্লিশটি হাদীস মুখস্থ করেছে, আল্লাহ তা'আলা তাকে কিয়ামাতের দিন ফাকীহ হিসেবে (ক্ববর হতে) উঠাবেন। আর আমি তার জন্য কিয়ামাতের দিন শাফা’আত করব ও তার আনুগত্যের সাক্ষ্য দিব।" [১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা বলতে পার, সর্বাপেক্ষা বড় দানশীল কে? সহাবীগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল সবচেয়ে বেশী জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দান-খয়রাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন আল্লাহ তা'আলা। আর বানী আদামের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করবে এবং তা বিস্তার করতে থাকবে। কিয়ামাতের দিন সে একাই একজন “আমীর' অথবা বলেছেন, একটি উম্মাত হয়ে উঠবে।" [১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দুজন লোভী ব্যক্তির পেট কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে না। একজন জ্ঞানপিপাসু লোক- ইলম দ্বারা তার পেট কখনো ভরে না। দ্বিতীয়জন হল দুনিয়া পিপাসু- দুনিয়ার ব্যাপারে সেও কখনো পরিতৃপ্ত হয় না।" [১] তাবিঈ ‘আওন (রহঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন: দুই পিপাসু ব্যক্তি কক্ষনো পরিতৃপ্ত হয় না। তার একজন হলেন ‘আলিম আর অপরজন দুনিয়াদার। কিন্তু এ দু'জনের মর্যাদা সমান নয়। কেননা ‘আলিম ব্যক্তি, তার প্রতি তো আল্লাহর সস্তুষ্টি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর দুনিয়াদার তো (ধীরে ধীরে) আল্লাহর অবাধ্যতার পথে অগ্রসর হতে থাকে। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) দুনিয়াদার ব্যক্তি সম্পর্কে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন: - (আরবী) "কক্ষনো নয়, নিশ্চয় মানুষ নিজকে (ধনে জনে সম্মানে) স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে থাকে।" (সূরাহ আল ‘আলাকু ৯৬:৬-৭) বর্ণনাকারী বলেন, অপর ব্যক্তি ‘আলিম সম্পর্কে তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: (আরবী) "আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিশ্চয় ‘আলিমরাই তাকে ভয় করে" (সূরাহ ফাত্বির ৩৫:২৮) [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : বলেছেন : সেদিন বেশি দূরে নয় যখন আমার উম্মাতের কতক লোক দ্বীনের ইলম অর্জনে তৎপর হবে ও কুরআন অধ্যয়ন করবে। তারা বলবে, আমরা আমীর-উমরাদের কাছে যাবো এবং তাদের পার্থিব স্বার্থে কিছু ভাগ বসিয়ে আমাদের দ্বীন নিয়ে আমরা সরে পড়ব। কিন্তু তা কখনো হবার নয়। যেমন কাটাঁর গাছ থেকে শুধু কাটাঁই পাওয়া যায়, কোন ফল লাভ করা যায় না। ঠিক এভাবে আমীর-উমরাদের নৈকট্য দ্বারা। মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) বলেন, গুনাহ ছাড়া কিছু অর্জিত হয় না।" [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলিমগণ যদি ইলমের হিফাযাত ও মর্যাদা রক্ষা করতেন, উপযুক্ত ও যোগ্য লোকেদের কাছে ইলম সোপর্দ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাদের ‘ইলমের কারণে নিজেদের যুগের লোকেদের নেতৃত্ব করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা তাদের কাছ থেকে দুনিয়ার কিছু স্বার্থ লাভ করতে পারেন। তাই তারা দুনিয়াদারদের কাছে মর্যাদাহীন হয়ে পড়েছেন। আমি তোমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত চিন্তাকে এক মাকসুদ, অর্থাৎ শুধুমাত্র আখিরাতের চিন্তায় নিবদ্ধ করে নিবে- আল্লাহ তার দুনিয়ার যাবতীয় মাকসুদ পূরণ করে দিবেন। অপরদিকে যাকে দুনিয়ার নানা দিক ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে, তার জন্য আল্লাহর কোন পরওয়াই নেই, চাই সে কোন জঙ্গলে (দুনিয়ায় যে কোন অবস্থায়) ধ্বংস হোক না কেন।” [১] বায়হাক্বী বায়হাক্বী এ হাদীসকে শু'আবুল ঈমানে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে তার বক্তব্য হিসেবে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।” [১] তাবিঈ আ’মাশ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইলমের জন্য বিপদ হল (ইলম শিখে) তা ভুলে যাওয়া। অযোগ্য লোক ও অপাত্রে ইলমের কথা বলা বা জ্ঞান দেয়া ইলমকে ধ্বংস করার সমতুল্য। দারিমী মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন।” [১] সুফ্ইয়ান সাওরী (রহঃ) উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) কা‘ব (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, প্রকৃত ‘আলিম কারা? কাব (রহঃ) বললেন, যারা অর্জিত ‘ইলম অনুযায়ী আমাল করে। উমার (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলিমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয় কোন্ জিনিস? কা'ব (রহঃ) বললেন, (সম্মান ও সম্পদের) লোভ-লালসা" [১] আহ্ওয়াস ইবনু হাকীম (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মন্দ (লোক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, আমাকে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, সাবধান! খারাপ মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে মন্দ ‘আলিম। আর ভাল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল ভাল ‘আলিমরা। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক মন্দ সে ব্যক্তি হবে, যে তার ‘ইলমের দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। [১] তাবি’ঈ যিয়াদ ইবনু হুদায়র (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলতে পারো ইসলাম ধ্বংস করবে কোন জিনিসে? আমি বললাম, আমি বলতে পারি না। তখন তিনি [‘উমার (রাঃ)] বললেন, আলিমদের পদঙ্খলন, আর আল্লাহর কিতাব কুরআন নিয়ে মুনাফিক্বদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে। [১] হাসান [আল বসরী] (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার ইলম হল অন্তরে যা উপকারি ‘ইলম। আর অপর প্রকার ‘ইলম হল মুখে মুখে, আর এটা হল আল্লাহর পক্ষে বানী আদামের বিরুদ্ধে দলীল। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দুই পাত্র (দুই প্রকারের ’ইলম) শিখেছি। এর মধ্যে এক পাত্র আমি তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু অপর পাত্রের ‘ইলম- তা যদি আমি তোমাদেরকে বলে দেই তাহলে আমার এ গলা কাটা যাবে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, হে লোক সকল! যে যা জানে সে যেন তা-ই যেন বলে। আর যে জানেনা সে যেন বলে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। কারন যে ব্যাপারে তোমার কিছু জানা নেই সে ব্যাপারে “আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত আছেন” এ কথা ঘোষনাই তোমার জ্ঞান। (কুরআনে) আল্লাহ তা’আলা তার নাবীকে বলেছেনঃ “আপনি বলুন আমি (দীন প্রচারের বিনিময়ে) তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আর যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই”-(সুরাহ সোয়াদ ৮৮: ৮৬)। [১] তাবি’ঈ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ (সানাদের) ‘ইলম হচ্ছে দীন। অতএব তোমরা লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের দ্বীন কার নিকট থেকে গ্রহন করছো? [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি (তাবি’ঈদের উদ্দেশ্যে) বলেন, হে কুরআন-ধারী (‘আলিম) গন! সোজা সরল পথে চল। কেননা (প্রথমে দ্বীন গ্রহন করার দরুন পরবর্তীদের তুলনায়) তোমরা অনেক অগ্রসর হয়েছে। অপরপক্ষে তোমরা যদি (সরল পথ বাদ দিয়ে) ডান ও বামের পথ অবলম্বন কর, তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে সুদুর বিভ্রান্তিতে পতিত হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুযুন’ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল! ‘জুব্বুল হুযুন’ কি? তিনি বললেন, এটা হল জাহান্নামের মধ্যে একটি গর্ত। এ গর্ত হতে বাচার জন্য জাহান্নামও দৈনিক চারশ বার আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। সহাবীগন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল! এতে (এ গর্তে) কারা যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যারা দেখানোর উদ্দেশ্যে ‘আমাল ও কুরআন অধ্যয়ন করে থাকে। তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ মুকাদ্দামাহ, ইবনু মাজার অপর এক বর্ননায় আছেঃ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাও বলেছেন, কুরআন অধ্যনকারী (‘আলিম)-গনের মধ্যে তারাই আল্লহর নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃনিত, যারা আমীর-ওমরাহদের সাথে বেশী বেশী সাক্ষাত বা মেলামেশা করে। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শীঘ্রই মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শুধু নাম ব্যাতীত ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সেদিন কুরআনের অক্ষরই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মাসজিদ্ গুলোতো বাহ্যিকভাবে আবাদ হতে থাকবে, কিন্তু হিদায়াতশুন্য থাকবে। তাদের ‘আলিমগন হবে আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক, তাদের নিকট থেকেই (দ্বীনের) ফিতনাহ-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর এ ফিতনাহ তাদের দিকেই ফিরে আসবে। [১] যিয়াদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বিষয় বর্ণনা করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, সেটা ‘ইলম উঠে যাওয়ার সময় সংঘটিত হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কিরুপে ‘ইলম উঠে যাবে? অথচ আমরা তো কুরআন শিক্ষা করছি, আমাদের সন্তানদেরকেও কুরআন শিক্ষা দিচ্ছি। আমাদের সন্তানগণ ক্বিয়ামাত আবধি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতে থাকবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যিয়াদ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। আমি তো তোমাকে মদীনার একজন বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যাক্তি বলেই মনে করতাম। এসব ইয়াহুদী ও নাসারাগণ কি তাওরাত ও ইঞ্জিল পড়ছে না কিন্তু তারা তদানুযায়ী কাজ করছে না এমন নয় কি? আহমাদ, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযীও অনুরুপ যিয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন । [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) ইয়াম দারিমীহ ও আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তোমরা ইলম শিক্ষা কর, লোকদের তা শিক্ষা দিতে থাক। তোমরা অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলো (বা ফারায়িয) শিখবে, অন্যকেও শিখাবে। এভাবে কুরআন শিখ, লোকদের শিখাও। নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ, আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে এবং ফিতনাহ্-ফাসাদ ও হাঙ্গামা সৃষ্টি হবে। এমন কি দুই ব্যাক্তি অবশ্য পালনীয় বিষয়ে মতভেদ করবে, অথচ ঐ দুই ব্যাক্তি এমন কাউকে পাবে না, যে এ দু’জনের মীমংসা করে দিতে পারে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ‘ইলম বা জ্ঞান দ্বারা কারো কোন উপকার হয় না, তা এমন এক ধনভান্ডারের ন্যায় যা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করা হয় না। [১]