3. পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ মালিক আল আশ্‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহাম্দু লিল্লা-হ’ মানুষের ‘আমালের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ‘সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হাম্দু লিল্লা-হ’ সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। সলাত হল নূর বা আলো। দান-খায়রাত (দানকারীর পক্ষে) দলীল। সব্র বা ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন হল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল । প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হতে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে– হয় তাকে সে আযাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধবংস করে দেয় । [১] আর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আল্ল-হু আকবার’ আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপুর্ণ করে দেয়। [2] মিশকাতুল মাসাবীহ-এর সংকলক বলেছেন, আমি এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিম কিংবা হুমায়দী বা জামিউল উসূলে কোথাও পাইনি। অবশ্য দারিমী এ বর্ণনাটিকে ‘সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি’ এর স্হলে বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সহাবীগণের উদ্দেশ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটি কথা বলব না আল্লাহ তা’আলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন এবং (জান্নাতেও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সহাবীগণ আবেদন করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আবশ্যই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণভাবে উযূ কর, মাসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত আদায়ের পর আর এক ওয়াক্তের সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হল ‘রিবাত্ব’ (প্রস্তুতি গ্রহণ)। [১] মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) ‘এটাই রিবা-ত্ব, এটাই রিবা-ত্ব দু’বার বলা হয়েছে- (মুসলিম ২৫১) । আর তিরমিযীতে তা তিনবার উল্লিখিত হয়েছে । [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্য তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে (উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম ফার্য সলাতের সময় হলে উত্তমভাবে উযূ করে, বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ’ করে (সলাত আদায় করে তার এ সলাত), তা তার সলাতের পূর্বের গুনাহর কাফ্ফারাহ্ (প্রায়চিত্ত) হয়ে যায়, যতক্ষন না সে কাবীরাহ্ গুনাহ করে থাকে। আর এভাবে সর্বদাই চলতে থাকবে। [১] উসমান (রাঃ) একদা তিনি এরূপে উযূ করলেন, তিনবার নিজের দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি [‘উসমান (রাঃ)] বললেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় উযূ করবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্’আত (নাফ্ল) সলাত আদায় করবে তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি; এ বর্ণনার শব্দসমুহ ইমাম বুখারীর। [১] উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম উযূ করে এবং উত্তমরূপে উযূ করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে (অন্তর ও দেহ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে রুজু করে) দু’রাক্’আত সলাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। [১] উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ করবে এরপর বলবেঃ “আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”, অর্থাৎ- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”- (অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর হুমায়দী তাঁর আফরাদে মুসলিম গ্রন্থে, ইবনুল ‘আসীর জামিউল উসূল গ্রন্থে এরূপ ও শায়খ মুহীউদ্দীন নাবাবী হাদীসের শেষে আমি যেরূপ বর্ণনা করেছি এরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম তিরমিযী উপরউক্ত দু’আর পরে আরো বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লা-হুম্মাজ ‘আলনী মিনাত্ তাওয়া-বীনা ওয়াজ ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন”- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তাওবাহকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে গণ্য কর”। [১] মুহয়ুস্ সুন্নাহ তাঁর সিহাহ গ্রন্থে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, “যে উযূ করল ও উত্তমভাবে তা করল শেষ …. পর্যন্ত। তিরমিযী তার জামি কিতাবে হুবহু এটাই বর্ণনা করেছেন। অবশ্য তিনি (আরবী) (আন্না মুহাম্মাদান) শব্দের পূর্বে (আরবী) (আশহাদু) শব্দটি বর্ণনা করেননি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে (জান্নাতে যাবার জন্য) এই অবস্থায় ডাকা হবে যখন তাদের চেহারা উযূর কারণে ঝকমক করতে থাকবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকাতে থাকবে। “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতাকে বাড়াতে সক্ষম সে যেন তাই করে”। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (জান্নাতে) মু’মিনের অলংকার অর্থাৎ উযূর চিহ্ন সে পর্যন্ত পৌঁছবে যে পর্যন্ত উযূর পানি পৌঁছবে (তাই উযূ সুন্দরভাবে করবে)। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (হে মু’মিনগণ!) তোমরা দ্বীনের উপর যথাযথভাবে অটল থাকবে। অবশ্য তোমরা সকল (কাজ) যথাযথভাবে করতে পারবে না, তবে মনে রাখবে তোমাদের সকল কাজের মধ্যে সলাতই হচ্ছে সর্বোত্তম। আর উযূর সব নিয়ম-কানুনের প্রতি মু’মিন ব্যতীত অন্য কেউ লক্ষ্য রাখে না। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ থাকতে উযূ করে তার জন্য (অতিরিক্ত) দশটি নেকী রয়েছে। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের চাবি হল সলাত। আর সলাতের চাবি হল ত্বহারাত (উযূ)। [১] শাবীব ইবনু আবূ রাওহ (রহঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক সহাবী হতে বর্ণনা করেন। একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্রের সলাত আদায় করলেন এবং (সলাতে) সূরাহ আর্ রূম তিলাওয়াত করলেন। সলাতের মধ্যে তাঁর তিলাওয়াতে গোলমাল বেঁধে গেল। সলাত শেষে তিনি বললেন, মানুষের কি হল! তারা আমার সাথে সলাত আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ করছে না। এটাই সলাতে আমার কিরাআতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। [১] বানী সুলায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি (সাহাবী) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাঁর নিজের হাতে গুণে বললেনঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা হল দাঁড়ি পাল্লার অর্ধেক, আর ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা হল দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করা এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ বলা হল আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়া। সিয়াম ধৈর্যের অর্ধেক এবং পাক-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [১] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন মু’মিন বান্দা উযূ করে ও কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন সে নাক ঝাড়ে তখন তার নাক থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধোয়, গুনাহ তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার চোখের পাতার নীচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। এরপর যখন নিজের দু’টি হাত ধোয়, তখন তার হাত হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার হাতের নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসাহ করে, মাথা হতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি দুই কান থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নিজের পা দু’টো ধোয়, তার দুই পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার পায়ের নখের নীচ হতেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর মাসজিদের দিকে গমন এবং তার সলাত হয় তার জন্য অতিরিক্ত। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরস্থানে (অর্থাৎ- মাদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশ্যে) বললেনঃ ‘‘আস্সালা-মু ‘আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই ? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখন আসেনি, তাদের আপনি ক্বিয়ামাতের দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে হে আল্লাহর রসূল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (ক্বিয়ামাতের দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকব। [১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন (আল্লাহর দরবারে) সাজদাহ্ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর এভাবে আমিই প্রথম ব্যক্তি যাকে সাজদাহ্ হতে মাথা উঠাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতঃপর আমি আমার সামনে (উপস্থিত উম্মাতদের দিকে) দৃষ্টি নিক্ষেপ করব এবং সকল নাবী-রাসূলদের উম্মাতদের মধ্য হতে আমার উম্মাতকে চিনে নিব। এভাবে আমার পেছনে, ডান দিকে, বাম দিকেও তাকাব। আমার উম্মাতকে চিনে নিব। (এটা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আপনি নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মাত পর্যন্ত এত লোকের মধ্যে আপনার উম্মাতকে চিনে নিবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে ধবধবে সাদা কপাল ও ধবধবে হাত-পা সম্পন্ন হবে, অন্য কোন উম্মাতের মধ্যে এরূপ হবে না। তাছাড়া আমি তাদেরকে চিনতে পারব এসব কারণে যে, তাদের ডান হাতে ‘আমালনামা থাকবে এবং তাদেরকে আমি এ কারণেও চিনব যে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানরা তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করবে। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার উযূ ছুটে গেছে তার সলাত কবুল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত সে উযূ না করে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা ছাড়া সলাত এবং হারাম ধন সম্পদের দান-খায়রাত কবূল হয় না। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অত্যধিক ‘মাযী’ বের হত। কিন্তু আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যার (ফাত্বিমার) স্বামী, তাই এ ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করতাম। তাই আমি মাসআলাটি জানার জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করতে মিক্বদাদকে বললাম। সে (নাম প্রকাশ ব্যতীত) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ অবস্থায় সে প্রথমে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে ও তারপর উযূ করে নিবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আগুন দিয়ে পাকানো কোন জিনিস খেলে তোমরা উযূ করে নেবে। [১] ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের হুকুম ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর রানের (পাকানো) গোশ্ত খেয়ে সলাত আদায় করলেন কিন্তু উযূ করেননি। [১] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি বকরীর গোশ্ত খেলে উযূ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে করতে পার, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করল, উটের গোশ্ত খাবার পর কি উযূ করব? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ, উটের গোশ্ত খাবার পর উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, বকরী থাকার স্থানে কি সলাত আদায় করতে পারি? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, উটের বাথানে কি সলাত আদায় করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্য কিছু (বায়ু) শব্দ পায় এবং এরপর তার সন্দেহ হয় যে, তার পেট হতে কিছু (বায়ু) বের হয়েছে কিনা, তাহলে সে যেন (উযূ) নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে মাসজিদ হতে বের না হয়, যে পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার দরুন) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধ পান করলেন । অতঃপর কুলি করলেন এবং বললেন, দুধের মধ্যে চর্বি থাকে । [১] বুরায়দাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন এক উযূতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করলেন এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আজ আপনি এমন কিছু করলেন যা পূর্বে কখনো করেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে, ‘উমার! আমি ইচ্ছা করেই এরূপ করেছি। [১] সুওয়াইদ ইবনু নু‘মান (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে খায়বার যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাঁরা খায়বারের অতি নিকটে ‘সহ্বা’ নামক স্থানে যখন পৌঁছলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আস্রের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর আহার পরিবেশন করতে বললেন, কিন্তু ছাতু ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। তিনি নির্দেশ দিলেন। তাই পানি দিয়ে ছাতু নরম করা হল। এ ছাতু তিনি নিজেও খেলেন আমরাও খেলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাতের জন্য দাঁড়ালেন এবং শুধু কুলি করলেন। আর আমরাও কুলি করলাম। এ অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন, অথচ নতুনভাবে উযূ করলেন না। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (বায়ু নির্গত হবার) শব্দ কিংবা গন্ধ পেলেই কেবল উযূ করতে হবে। [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘মাযী’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘মাযীর’ কারণে উযূ আর ‘মানীর’ কারণে গোসল করতে হবে। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের চাবি হল ‘উযূ’, আর সলাতের ‘তাহরীম’ হল ‘তাকবীর’ (অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা) এবং তার ‘তাহলীল’ হল (সলাতের শেষে) সালাম ফিরানো। [১] ‘আলী ও আবূ সা’ঈদ (রাঃ) ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটিকে ‘আলী ও আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। [১] আলী ইবনু ত্বলক্ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারও যখন বায়ু বের হয়, তখন সে যেন আবার উযূ করে নেয়। আর তোমরা নারীদের গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করবে না। [১] মু‘আবিয়াহ্ ইবনু আবী সুফ্ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোখ দু’টো হল গুহ্যদ্বারের ফিতা-বন্ধন স্বরূপ। সুতরাং চোখ যখন ঘুমায় ফিতা (ঢাকনা) তখন খুলে যায়। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুহ্যদ্বারের ফিতা বা ঢাকনা হল চক্ষুদ্বয়। তাই যে ব্যক্তি ঘুমাবে সে যেন উযূ করে। [১] আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সহাবীগণ ‘ইশার সলাতের জন্যে বসে অপেক্ষা করতেন। এমনকি ঘুমের আমেজে তাদের মাথা নীচের দিকে ঝুঁকে পড়তো। এরপর তারা সলাত আদায় করতেন, অথচ নতুন উযূ করতেন না। [১] তবে ইমাম তিরমিযী ‘ইশার সলাতের অপেক্ষায় বসে থাকতেন”-এর জায়গায় “ঘুম যেতেন” শব্দ উল্লেখ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই উযূ সে ব্যক্তির জন্যে ওয়াজিব যে কাত হয়ে ঘুমায়। কারণ কাত হয়ে ঘুমালে শরীরের বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। [১] বুসরাহ্ বিনতু সফ্ওয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে উযূ করতে হবে । [১] ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, উযূ করার পর কেউ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে এর হুকুম কী? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেটা তো মানুষের শরীরেরই একটা অংশবিশেষ। [১] ইমাম মুহ্য়িয়ূস সুন্নাহ্ (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসটি মানসূখ (রহিত)। কেননা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ত্বল্ক্ব-এর মাদীনাহ্ আগমনের পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের কারো হাত নিজের পুরুষাঙ্গের উপর লাগলে এবং হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন আবরণ না থাকলে তাকে উযূ করতে হবে”। [১] বুসরাহ্ (রাঃ) নাসায়ী (রহঃ) বুসরাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি “হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন আবরণ নেই”-এ শব্দগুলো বর্ণনা করেননি। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন স্ত্রীকে চুমু দিতেন, এরপর সলাত আদায় করতেন, অথচ উযূ করতেন না। [১] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, আমাদের হাদীসবেত্তাদের মতে কোন অবস্থাতেই ‘উরওয়ার সানাদ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে, এমনকি ইবরাহীম আত্ তায়মী (রহঃ)-এর সানাদও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে সহীহ হতে পারে না। আবূ দাউদ বলেছেন, এ হাদীসটি মুরসাল। কারণ ইবরাহীম আত্ তায়মী (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে শুনেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেড়ার বাজুর গোশ্ত খেলেন, তারপর আপন হাতকে আপন পায়ের তলায় ঘষে মুছে নিলেন, অতঃপর সলাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন, অথচ (নতুন করে) উযূ করলেন না। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট পাঁজরের ভুনা গোশ্ত পেশ করলাম। তিনি তা থেকে কিছু খেলেন, তারপর সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন, নতুন করে উযূ করেননি। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বকরীর পেটের গোশ্ত (কলিজা প্রভৃতি) ভুনা করে দিতাম (তিনি তা খেতেন)। এরপর তিনি সলাত আদায় করতেন, কোন উযূ করতেন না। [১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, তাকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ দেয়া হল এবং তিনি তা পাতিলে রান্না করলেন। এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-তার কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, এটা কী, হে আবূ রাফি’? তিনি বললেন, আমাদেরকে একটি বকরী হাদিয়্যাহ্ হিসেবে দেয়া হয়েছে, হে আল্লাহর রসূল! পাতিলে তা পাক করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ রাফি’! আমাকে এর একটি বাজু দাও তো। আমি তাঁকে একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। অতঃপর আমি তাঁকে আরো একটি বাজু দিলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, আমাকে আরো একটি বাজু দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ রসূল! একটি বকরীর তো দু’টি বাজু হয়। এটা শুনে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আহ! তুমি যদি চুপ থাকতে, তাহলে ‘বাজুর পর বাজু আমাকে দিতে পারতে, যে পর্যন্ত তুমি নিশ্চুপ থাকতে। এরপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুলি করলেন, নিজের আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে নিলেন, অতঃপর সলাতে দাঁড়ালেন এবং সলাত আদায় করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাদের কাছে ফিরে এলেন। এবার তাদের কাছে ঠান্ডা গোশ্ত দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খেলেন, এরপর মাসজিদে প্রবেশ করলেন এবং সলাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি ব্যবহার করলেন না অর্থাৎ উযূ করলেন না। [১] আবূ ‘উবায়দ দারিমী আবূ ‘উবায়দ হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু দারিমী ‘অতঃপর তিনি পানি চাইলেন হতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি। [১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি, উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-এ তিনজন এক জায়গায় বসে গোশ্ত ও রুটি খেলাম। অতঃপর খাওয়া শেষে আমি উযূ করার জন্য পানি চাইলাম। এটা দেখে তাঁরা [উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ ত্বালহাহ্ (রাঃ)] বললেন, তুমি উযূ কেন করবে? আমি বললাম, এ খাবারের কারণে? তাঁরা উভয়ে বললেন, এ পাক-পবিত্র খেয়েও কি তুমি উযূ করবে? অথচ তোমার চেয়ে অনেক বেশী উত্তম যিনি ছিলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আহারের পর উযূ করেননি। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলতেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে চুমু দেয়া অথবা তার স্বীয় হাত দিয়ে স্পর্শ করা ‘লামস্’-এর মধ্য গণ্য। সুতরাং যে লোক তার স্ত্রীকে চুমু দিবে কিংবা হাত দিয়ে স্পর্শ করবে তার জন্য উযূ করা ওয়াজিব। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে চুমু দিলে উযূ করা অত্যাবশ্যক। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, চুমু দেয়া ‘লামস্’-এর অন্তর্ভূক্ত। (যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে)। সুতরাং চুমু দেয়ার পরে তোমরা উযূ করবে। [১] ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তামীম আদ্ দারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রবাহমান রক্তের কারণেই উযূ করতে হবে। [১] দারাকুত্বনী হাদীস দু’টো বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) এ হাদীসটি তামীম আদ্ দারী (রাঃ) হতে শুনেননি। তিনি তাঁকে দেখেনওনি। অপর রাবী ইয়াযীদ ইবনু খালিদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ উভয়ই অজ্ঞাত ব্যক্তি। সুতরাং এ হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন পায়খানায় যাবে তখন ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে বসবে না, বরং পূর্বদিকে ফিরে বসবে অথবা পশ্চিম দিকে। [১] শায়খ ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ বলেছেন, এটা উন্মুক্ত প্রান্তরের হুকুম। দালান কোঠা বা ঘরের মধ্যকার পায়খানায় অথবা ঘরের মতো করে নির্মিত পায়খানায় এরূপ করা দোষের নয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার কোন কাজে (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসার ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। তখন আমি দেখলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নীচে এক ঘেরাও করা জায়গায়) ক্বিবলাহকে পেছনে রেখে (উত্তরে) সিরিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে পায়খানা করছেন। [১] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে, ডানহাতে ইস্তিঞ্জা করতে, তিনটির কম ঢিলা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গেলে বলতেনঃ “আল্ল- হুম্মা ইনী আ‘উযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস”- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট নর ও নারী শায়ত্বনদের (ক্ষতি সাধন) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।[১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এ দুই ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন বিরাট গুনাহের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব করার সময় আড়াল করত না। সহীহ মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, প্রস্রাব করার পর উত্তমভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করত না। আর অপরজন একজনের কথা অন্যজনের কানে লাগাত (চোগলখোরি করত)। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুরের একটি তাজা ডাল ভেঙ্গে তা দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক ক্ববরে তার একটি অংশ গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এরূপ করলেন কেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পর্যন্ত ডাল দু’টি শুকিয়ে না যাবে, হয়তো তাদের শাস্তি হ্রাস করা হবে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা দু’টি অভিসম্পাত থেকে বেঁচে থাকবে। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সে দুটি অভিসম্পাত কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলাচলের পথে অথবা তাদের কোন কিছুর ছায়ার স্থানে পায়খানা করে। [১] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ পানি পান করার সময় যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে, শৌচাগারে গেলে ডান হাতে নিজের পুরুষাঙ্গকে না ধরে এবং নিজের ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কোন ব্যক্তি উযূ করার সময় যেন ভাল করে নাক ঝেড়ে নেয় এবং ইস্তিঞ্জা করার সময় বেজোড় সংখ্যায় ঢিলা (তিন, পাঁচ ও সাত) ব্যবহার করে। [৩৫৮] (আরবী) (সে যেন প্রয়োজন পূরণের সময় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে (আরবী) (অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে সে যেন ডান হস্ত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে (আরবী) (অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন পেশাবরত অবস্থায় ডান হাত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে) উপরোক্ত সবগুলো বর্ণনা প্রমাণ করে যে পুরুষাঙ্গ স্পর্শের নিষেধাজ্ঞাটা পেশাবরত অবস্থার সাথে শর্তযুক্ত। এছাড়া অন্য অবস্থায় তা বৈধ। সর্বাবস্থায় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা নিষেধ সম্পর্কিত যে সকল বর্ণনা এসেছে এগুলোর উৎসস্থল একই। আবার কেউ কেউ বলেন ; সর্বাবস্থায় এ বিষয়টি নিষিদ্ধ হওয়াটাই যথাযথ হওয়া সত্ত্বেও নিষেধ করেছেন। কেননা প্রস্রাবরত অবস্থায় তা স্পর্শ করা প্রয়োজন। আর ত্বল্ক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিও ১ম উক্তিকে সমর্থন করে যেখানে “তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে লজ্জাস্থান স্পর্শ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন যে তাতো তোমার শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র।” ত্বল্ক্ব (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি সর্বাবস্থায় তা স্পর্শ করার বৈধতা প্রমাণ করে। তবে আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)-এর সহীহ হাদীসটির মাধ্যমে প্রস্রাবরত অবস্থাটি বৈধতা থেকে বের হয়ে গেল এবং অন্য অবস্থায় তা বৈধতার উপর অবশিষ্ট রইল। ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা নিষেধের কারণ ডান হাতের মর্যাদা রক্ষা। হাদীসটি উল্লিখিত তিনটি বিষয় যথা পানি পানের সময় পাত্রে শ্বাস ফেলা, প্রস্রাব করা কালে ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ এবং ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ। কেননা নাহীর মূল অর্থ হল হারাম করা যদি অন্য কোন অর্থে গ্রহণের কারণ না থাকে। এখানে সে ধরনের কোন কারণ নেই। তবে জমহুরের মতে এখানে নাহী দ্বারা উদ্দেশ্য নাহীয়ে তানযীহি। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় যেতেন। আমি এবং অন্য এক বালক পানির পাত্র ও বর্শাধারী একটি লাঠি নিয়ে যেতাম। সে পানি দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচ কার্য সমাধা করতেন। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় প্রবেশকালে নিজের হাতের আংটি খুলে রাখতেন। [১] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি ‘মুনকার’। অধিকন্তু তিনি ‘খুলে রাখতেন’ এর পরিবর্তে ‘রেখে দিতেন’ বলেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় যেতে ইচ্ছা করতেন, তখন এত দূরে চলে যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়। [১] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে নরম জায়গায় প্রস্রাব করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব করতে ইচ্ছা করলে এরূপ নরম স্থান খোঁজ করবে (যাতে শরীরে প্রস্রাবের ছিটা না আসে)। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব-পায়খানার সময় নির্দিষ্ট স্থানের কাছাকাছি যাওয়ার পরই কাপড় উঠাতেন (অর্থাৎ বসার সময়ে উঠাতেন, তার পূর্বে নয়)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (তা‘লীম ও নাসীহাতের ব্যাপারে) আমি তোমাদের জন্য পিতা-পুত্রের ন্যায়। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি (তোমাদের দীন, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার শিষ্টাচারও)। যখন তোমরা পায়খানায় যাবে ক্বিবলার দিকে মুখ করে বসবে না, পিঠ দিয়েও বসবে না। পায়খানা করার পর তিনটি ঢিলা দিয়ে তিনি পাক-পবিত্র হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে (পাক-পবিত্র হতে) নিষেধ করেছেন। তিনি ডান হাতে শৌচ করতেও নিষেধ করেছেন। [১] আল্লামা ‘আযীযী বলেন : রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনের নিকটবর্তী না হয়ে পরিপূর্ণ কাপড় উত্তোলন করতেন না বা করেননি। অতএব, কাপড় অপবিত্র হওয়ার আশংকা থাকলে সতর সংরক্ষন করে তা উত্তোলন করা বৈধ অন্যথায় প্রয়োজনানুপাতে উঠাবে। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডান হাত ছিল তাঁর পবিত্রতা অর্জন ও খাবারের জন্য। আর বাম হাত ছিল প্রস্রাব-পায়খানা ও অপর অপছন্দনীয় কাজের জন্য। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যায়, সে যেন তিনটি ঢিলা সাথে করে নিয়ে যায়। এ ঢিলাগুলো দিয়ে সে পাক-পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। [১] ‘আবদুল্লাহ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করো না। কেননা এসব তোমাদের ভাই জিনদের খোরাক। [১] তবে ইমাম নাসায়ী ‘জিন্দের খোরাক’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি। ওয়াইফি‘ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : হে রুওয়াইফি'! হয়তো তুমি আমার পরে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, তুমি তখন মানুষকে এ সংবাদ দিবে যে, যে ব্যক্তি নিজের দাড়ি জট পাকাবে অথবা ধনুকের রশি গলায় কবচ হিসেবে বাঁধবে অথবা পশুর গোবর বা হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় লাগায়। যে এভাবে করল সে ভাল করল, আর যে এভাবে করল না সে গর্হিত কাজ করল না। আর যে ব্যক্তি (প্রস্রাব-পায়খানা করার পর) ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ঢিলা ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি এভাবে করল সে ভাল করল, আর যে ব্যক্তি করল না সে গর্হিত কাজ করল না। যে ব্যক্তি খাবার খেলো এবং (খাবারের পর) খিলাল দ্বারা দাঁত হতে কিছু বের করল, সে যেন তা মুখ থেকে ফেলে দেয়। আর যা জিহ্বা দিয়ে বের করে নেয় তা যেন গিলে ফেলে। যে এভাবে করল সে উত্তম কাজ করল, আর যে এরূপ করল না সে গর্হিত কাজ করল না। যে লোক পায়খানায় যায় সে যেন পর্দা করে। পর্দা করার জন্য যদি সে বালুর স্তুপ ছাড়া কিছু না পায় তাহলে স্তুপের দিকে যেন পিঠ দিয়ে বসে (কাপড় দিয়ে সামনের দিক ঢেকে রাখে)। কারণ শয়তান মানুষের বসার স্থান নিয়ে খেলা করে। যে এরূপ করল ভাল করল, আর না করলে মন্দ কিছু করল না। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় প্রস্রাব না করে, এরপর আবার সেখানে গোসল করে অথবা উযূ করে। কারণ মানুষের অধিকাংশ ওয়াস্ওয়াসা এসব থেকেই উৎপন্ন হয়। [১] কিন্তু শেষের দু'জন (তিরমিযী ও নাসায়ী), "এরপর সেখানে গোসল করে ও উযূ করে" উল্লেখ করেননি। আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গর্তে প্রস্রাব না করে।[১] মু‘আয (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তিনটি অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য কাজ- (১) পানির ঘাটে, (২) চলাচলের পথে ও (৩) কোন কিছুর ছায়ায় পায়খানা করা এমন করা হতে বেঁচে থাকবে। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দুই ব্যক্তি এক সঙ্গে যেন পায়খানায় এমনভাবে না বসে যে, দু'জনেই দু'জনার লজ্জাস্থান দেখতে পায় এবং পরস্পরের সাথে কথা বলে। কেননা মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজে খুবই রাগান্বিত হন। [১] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : এসব পায়খানার স্থান হচ্ছে (জ্বিন ও শাইত্বনের) উপস্থিতির স্থান। সুতরাং তোমাদের যারা পায়খানায় যাবে তারা যেন এ দু'আ পড়ে : “আ'উযু বিল্লা-হি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস”- (অর্থাৎ- আমি নাপাক নর-নারী শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন জিন শাইত্বনের চোখ ও বানী আদামের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল “বিসমিল্লা-হ” বলা। [১] এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি গরীব, এর সানাদ দুর্বল। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেন : “গুফরা-নাকা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গেলে আমি তাঁর পেছনে পেছনে কখনও ‘তাওর’-এ করে আবার কখনও ‘রাক্ওয়াহ্’-এ করে পানি নিয়ে যেতাম। এ পানি দ্বারা তিনি শৌচকর্ম সম্পাদন করতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটিতে স্বীয় হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি আর এক পাত্রে পানি আনতাম। এ পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতেন। [১] হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব করার পর উযূ করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন। [১] উমায়মাহ্ বিনতু রুক্বায়ক্বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাটের নিচে একটি কাঠের গামলা ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে এতে প্রস্রাব করতেন। [১] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখে বললেন, ‘উমার! (আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের ন্যায়) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করো না। অতঃপর আমি আর কক্ষনো দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করিনি। [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক গোত্রের আবর্জনার স্থানে গেলেন এবং (সেখানে) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলেন। [১] বলা হয়ে থাকে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ওযরের কারণে এরূপ করেছেন।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বলে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তোমরা তাঁর কথা বিশ্বাস করো না। তিনি সবসময়ই বসে প্রস্রাব করতেন। [১] যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জিবরীল আমিনের মাধ্যমে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহী নাযিল করা হচ্ছিল, তখনই তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উযূ করা ও সলাত আদায়ের শিক্ষা দিলেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উযূ করা শেষ করে এককোষ পানি (হাতে উঠিয়ে) নিলেন এবং তখন নিজের পুরুষাঙ্গের উপর ছিটিয়ে দিলেন। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমার কাছে জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যখন আপনি উযূ করবেন, তখন পানি (সন্দেহ দূর করার জন্য আপনার গুপ্তাঙ্গে) ছিটিয়ে দিবেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব করলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁর পেছনে পানির পাত্র নিয়ে দাঁড়ালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘উমার! এটা কী? ‘উমার (রাঃ) বললেন, পানি। আপনার উযূ করার করার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এজন্য আদিষ্ট হইনি যে, যখনই প্রস্রাব করব তখনই উযূ করব। যদি আমি সর্বদা এমন করি তাহলে এটা ‘সুন্নাত’ হয়ে যাবে। [১] আবূ আইয়ূব, জাবির ও আনাস (রাঃ) “সেখানে (মাসজিদে কু’বায়) এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা অর্জন করাকে পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন”- (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯:১০৮) এ আয়াত যখন নাযিল হয় তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনসারগণ! এ আয়াতে আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমাদের পবিত্রতা কী? তাঁরা বললেন, আমরা সলাতের জন্য উযূ করি, নাপাকী হতে পবিত্র হবার জন্য গোসল করি, পানি দিয়ে পবিত্রতা লাভ করে থাকি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই (পবিত্রতা), যার জন্য আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং তোমরা সবসময় এটা করতে থাকবে। [১] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, মুশরিকদের কেউ ঠাট্টা করে আমাকে বলল, তোমাদের বন্ধু (অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তো দেখছি তোমাদেরকে পায়খানা-প্রস্রাবের নিয়ম-কানুনও শিখিয়ে দিচ্ছেন। আমি বললাম, হাঁ (এটা তো তাঁর অনুগ্রহ, দোষের তো কিছু নেই)। তিনি আমাদেরকে বলে দিয়েছেন, আমরা যেন পায়খানার সময় ক্বিবলার দিকে মুখ করে না বসি, ডান হাতে শৌচকর্ম না করি এবং পায়খানার পর তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার না করি। আর এতে (ঢিলা) যেন গোবর ও হাড় না থাকে। [১] আবদুর রহমান ইবনু হাসানাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর থেকে বের হয়ে) আমাদের কাছে এলেন, আর তাঁর হাতে ছিল একটি চামড়ার ঢাল (বর্ম)। তিনি ঢালটি (পর্দাস্বরূপ স্থাপন করে) তার দিকে ফিরে মাটিতে বসে প্রস্রাব করলেন। তখন (মুশরিকদের) কয়েকজন বলে উঠল, দেখ, মেয়েদের মতো (পর্দা করে) প্রস্রাব করছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা শুনলেন এবং বললেন, তোমার জন্য আফসোস হয়, তুমি কি জানো না যে, বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কি ঘটেছিল? অর্থাৎ তাদের শরীরে (বা কাপড়ে) যখন প্রস্রাব লাগতো, তখন তারা কাঁচি দিয়ে তা কেটে ফেলতো। তাই সে (বানী ইসরাঈল-এর এক ব্যক্তি) তা হতে মানুষকে নিষেধ করল। ফলে (মৃত্যুর পর) তাকে ক্ববরের ‘আযাব দেয়া হল। [১] ইমাম নাসায়ী ইমাম নাসায়ী এ হাদীসটি ‘আবদুর রহমান (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। [১] মারওয়ান আল আসফার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি ক্বিবলার দিকে তার উটকে বসালেন। তারপর উটের দিকে বসে প্রস্রাব করতে লাগলেন। আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! এটা হতে কি নিষেধ করা হয়নি। তিনি বললেন, না, বরং উন্মুক্ত জায়গায় এরূপ করা নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যখন তোমার আর ক্বিবলার মধ্যে এমন কোন জিনিস আড়াল হয়, তখন এরূপ করাতে কোন দোষ নেই। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা হতে বের হতেন, এ দু‘আ পড়তেন : “আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী আয্হাবা ‘আন্নিল আযা-ওয়া‘আ-ফানী”- [অর্থাৎ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করেছেন ও আমাকে নিরাপদ করেছেন]। [১] ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, জিনের প্রতিনিধি দল যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলেন, তখন তাঁর নিকট বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতকে গোবর, হাড় ও কয়লা দিয়ে ঢিলা ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিন। আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে আমাদের রিয্ক্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। অতএব রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করে দেন। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমি আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে ‘ইশার সলাত দেরীতে আদায় করতে ও প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ করতাম। [১] তাবি'ঈ শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, বলুন তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে কোন্ কাজটি করতেন? তিনি বললেন, মিসওয়াক। [১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাত আদায়ের জন্য ঘুম থেকে উঠেই মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : দশটি বিষয় ফিত্বরাহ্ অর্থাৎ প্রকৃতিগত স্বভাবের অন্তর্গত। (১) গোঁফ খাটো করা, (২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, (৫) নখ কাটা,(৬) আঙ্গুলের গিরাগুলো ধোয়া, (৭) বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, (৮) গুপ্তাঙ্গের লোম কাটা, (৯) শৌচকাজ করা (পবিত্র থাকা) এবং রাবী বলেন, দশমটা আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা ‘কুলি করা’। [১] অপর এক বর্ণনায় (দ্বিতীয় জিনিসটি) দাড়ি বাড়াবার স্থলে খতনা করার কথা এসেছে। মিশকাতের সংকলক বলেন, এ বর্ণনাটি বুখারী-মুসলিমে আমি পাইনি, আর হুমায়দীতেও নেই (যা সহীহায়নের জামি’)। অবশ্য এ রিওয়ায়াতকে জামিউস সগীরে উল্লেখ করেছেন। এভাবে খাত্ত্বাবী (রহঃ) মা’আলিমুস সুনানে বর্ণনা করেছেন। ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) হাদীসটি আবূ দাঊদ-এ ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : মিসওয়াক হল মুখগহবর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম। [১] আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : চারটি বিষয় নাবী রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, আর এক বর্ণনায় এর স্থলে খতনার কথা বলা হয়েছে; (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনে বা রাতে যখনই ঘুম হতে উঠতেন, উযূ করার পূর্বে মিসওয়াক করতেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করতেন। অতঃপর ধুয়ে রাখার জন্য তা আমাকে দিতেন। আমি (ধোয়ার আগে) ঐ মিসওয়াক দিয়ে নিজে মিসওয়াক করতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) দিতাম। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখন্ড মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক আমার কাছে এলো, যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে (বয়সে) বড়। আমি আমার মিসওয়াকটি ছোটজনকে দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হল, বড়জনকেই দিন। অতঃপর আমি তা বড়জনকেই দিলাম। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখনই জিবরীল (আঃ) আমার কাছে আসতেন আমাকে মিসওয়াক করার তাগিদ দিতেন; এমনকি আমার ভয় হল যে, (মিসওয়াক করার দরুন) আমার মুখের সম্মুখভাগ যেন আবার ক্ষত-বিক্ষত না করে ফেলি। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : আমি তোমাদেরকে মিসওয়াকের (গুরুত্ব ও ফাযীলাতের) ব্যাপারে অনেক বেশি বললাম। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করছিলেন। তখন তাঁর কাছে দু’জন লোক উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। তখন মিসওয়াকের ফাযীলাত সম্পর্কে ওয়াহী নাযিল হল- তাদের মধ্যে বড়জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে মিসওয়াকটি দিন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে সলাতের জন্য (উযূ করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফাযীলাত সত্তর গুন বেশি সে সলাতের চেয়ে যে সলাতে মিসওয়াক করা হয়নি। [১] যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : আমি যদি উম্মাতকে কষ্টে ফেলার আশংকা না করতাম তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করতে হুকুম (ফার্য) করতাম এবং 'ইশার সলাত রাতের এক-তৃতীয়াংশে পিছিয়ে দিতাম। তিনি [আবূ সালামাহ্ (রাঃ)] বলেন, (আমি দেখেছি) যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) সলাতে উপস্থিত হতেন। তার মিসওয়াক স্বীয় কানে আটকানো থাকত, যেখানে লেখকের কলম থাকে ঠিক তদ্রূপ। যখনই তিনি সলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন। তারপর তা আবার সেখানে (কানে) রেখে দিতেন। আবূ দাঊদ ‘ইশার সলাত পিছিয়ে দিতাম’ বাক্য ছাড়া বাকীটুকু বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এ হাদিসকে হাসান সহীহ বলেছেন। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে তখন সে যেন স্বীয় হাত (পানির) পাত্রে না ডুবায়, যে পর্যন্ত তা তিনবার ধুয়ে না নেয়। কারণ সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠবে ও উযূ করবে, সে যেন তিনবার নাকে পানি দিয়ে (নাক) ঝেড়ে ফেলে। কেননা শয়তান তার নাকের বাঁশিতে রাত যাপন করে। [১] আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) 'আবদুলাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করতেন? (এ কথা শুনে) তিনি উযূর জন্য পানি আনালেন, তারপর দুই হাতের উপর তা ঢাললেন এবং দুই হাত (কব্জি পর্যন্ত) দু’বার ধুয়ে নিলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখ ধুলেন। তারপর হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুলেন। এরপর দুই হাত দিয়ে ‘মাথা মাসাহ’ করলেন। (মাসাহ এভাবে করলেন) দুই হাতকে মাথার সম্মুখভাগ হতে পেছনের দিকে নিয়ে আবার পেছন হতে সম্মুখভাগে নিয়ে এলেন। তারপর আবার উল্টো দিকে যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে দুই হাত নিয়ে এলেন। অতঃপর দুই পা ধুলেন। [১] মালিক ও নাসায়ী; আবূ দাঊদেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। জামিউই উসূল-এর গ্রন্থকার এ কথা বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাঃ) সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিমকে বলা হল, যেভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন। তাই তিনি [‘আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ (রাঃ)] পানি আনলেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওযূ। [১] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, (মাসাহ করার জন্য) নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। অর্থাৎ মাথার সামনের অংশ হতে ‘মাসাহ’ শুরু করে দুই হাত পিছন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর আবার পিছন থেকে শুরু করে হাত সেখানে নিয়ে এলেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। অতঃপর দুই পা ধুইলেন। [2] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন, আর নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনবার করলেন। [3] বুখারী বর্ণনার শব্দ হল, তারপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আর এটা তিনি একবার করেছেন। অতঃপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইলেন। [4] বুখারীরই এক বর্ণনায় শব্দ হল, অতঃপর তিনি কুলি করলেন ও নাক ঝারলেন তিনবার এক কোষ পানি দিয়ে। [5] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উযূর স্থানসমুহ) একবার করে উযূ করলেন। একবারের অধিক ধুলেন না। [১] আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূর অঙ্গগুলোকে দু’বার করে ধুইলেন। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি মাক্বা‘ইদ নামক স্থানে উযূ করতে বসলেন এবং বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ করে দেখাব না? অতঃপর তিনি তিন তিনবার করে ধুয়ে উযূ করলেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কাহ্ হতে মাদীনায় ফিরে যাবার পথে একটি পানির কূপের কাছে পৌঁছলাম। আমাদের কেউ কেউ ‘আসরের সলাতের সময় তাড়াতাড়ি উযূ করতে গেলেন এবং তাড়াহুড়া করে উযূ করলেন। অতঃপর আমরা তাদের কাছে পৌঁছলাম, দেখি তাদের পায়ের গোড়ালি শুকনা, চকচক করছে। সেখানে পানি পৌঁছেনি। এটা দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সর্বনাশ! (শুকনা) গোড়ালির লোকেরা জাহান্নামে যাবে, তোমরা পূর্ণরূপে উযূ কর। [১] মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। তিনি কপালের চুলের উপর, পাগড়ীর উপর এবং মোজার উপর মাসাহ করলেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সব কাজই যথাসম্ভব ডান দিক হতে শুরু করতে পছন্দ করতেন- পাক-পবিত্রতা অর্জনে, মাথা আঁচড়ানোয় ও জুতা পরনে। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমরা কিছু পরিধান করবে এবং উযূ করবে, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে। [১] (আহমাদ, আবূ দাঊদ) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহ তা‘আলার নাম) পড়েনি তার ওযু হয়নি। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আহমাদ ও আবূ দাঊদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণিত। [১] দারিমী আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) দারিমী আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে ও তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ প্রমুখ তাদের বর্ণনায় তার প্রথমে এ কথা বৃদ্ধি করেছেন যার উযূ নেই তার সলাতও নেই, অর্থাৎ- উযূ ব্যতীত সলাত হয় না। [১] লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উযূর অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে ধুবে। আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে এবং উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে, যদি সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) না হও। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তুমি যখন উযূ করবে, হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে। তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ। ইবনু মাজাহও একইরূপ বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। [১] মুস্তাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করার সময় দেখেছি যে, তিনি বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতেন। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করার সময় এক কোষ পানি নিয়ে চিবুকের নিচ দিয়ে দাড়িতে প্রবেশ করিয়ে তা খিলাল করে নিতেন এবং বলতেন : আমার রব আমাকে এরূপ করতে নির্দেশ করেছেন। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উযূ করার সময়) নিজের দাড়ি খিলাল করতেন। [১] তাবি’ঈ আবু হাইয়্যাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি প্রথমে নিজের হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন ও তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার করে মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নিলেন। এরপর একবার মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং উযূর বাকী পানিটুকু নিয়ে তা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করলেন। অতঃপর বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করেছেন তা আমি তোমাদেরকে দেখাতে চাইলাম। [১] তাবি‘ঈ ‘আবদ খায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা বসে বসে ‘আলী (রাঃ)-এর উযূ করা দেখছিলাম। তিনি ডান হাত পানির মধ্যে ডুবিয়ে পানি উঠিয়ে মুখ ভরে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর বাম হাত দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তিনি এরূপ তিনবার করলেন, অতঃপর বললেন, কেউ যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ (করার পদ্ধতি) দেখে আনন্দ লাভ করতে চায়, তবে দেখুক, এরূপই ছিল তাঁর ওযূ। [১] আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করেছেন ও নাকে দিয়েছেন। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার করেছেন। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের মাথা ও দুই কান মাসাহ করেছেন। কানের ভিতরাংশ নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাসাহ করেছেন। [১] রুবায়্যিই‘ বিনতু মু‘আব্বিয (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করতে দেখেছেন। তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন সামনের দিক ও পেছনের দিক (অর্থাৎ গোটা মাথা), দুই কানের পার্শ্ব ও দুই কান একবার করে। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন এবং দুই আঙ্গুল দুই কানের ছিদ্রে ঢুকালেন। [১] তিরমিযী প্রথম রিওয়ায়াতটি এবং আহমাদ ও ইবনু মাজাহ দ্বিতীয় রিওয়ায়াতটি বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করতে দেখেছেন। আর এটাও দেখেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন এমন পানি দিয়ে, যা তাঁর দুই হাতের পানির অবশিষ্টাংশ নয় (অর্থাৎ নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করলেন)। [১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) তিনি একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূর কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, উযূর সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চোখের দুই কোণ মললেন এবং বললেন, কান দু’টি মাথারই অংশ। (ইবনু মাজাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী) আবূ দাঊদ ও তিরমিযী [১] এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, এ হাদীসের অপর রাবী হাম্মাদ বলেছেন, আমি জানি না “কান দু’টি মাথারই অংশ” এ কথাটা কার, আবূ উমামার না রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর? আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তিনি (দাদা) বলেন যে, এক বেদুঈন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁকে উযূ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায়, তিনি তাকে তিন তিনবার করে (উযূর প্রতিটি অঙ্গ ধুয়ে) দেখালেন। অতঃপর বললেন, এই হল ওযূ। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়িয়ে করল সে মন্দ করল, সীমালঙ্গল করল ও যুল্ম করল। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি তার ছেলেকে এ দু‘আ করতে শুনলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাতের ডান দিকে সাদা বালাখানাটি চাই। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হে আমার ছেলে! তুমি আল্লাহর কাছে শুধু জান্নাত চাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন লোকের উদ্ভব হবে যারা পবিত্রতা অর্জনে ও দু‘আর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে। [১] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেছেন : (ওয়াস্ওয়াসা দেবার) জন্য উযূর ক্ষেত্রে একটি শয়তান রয়েছে। এ শয়তান হল ‘ওয়ালাহান’। তাই (উযূ করার সময়) পানির ওয়াস্ওয়াসা হতে সতর্ক থাকবে। [৪৪০] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব, সানাদ দুর্বল। রাবী খারিজাহ্ ইবনু মুসহাব মুহাদ্দিসগণের মতে সবল নয়। অথচ তিনি ছাড়া অপর কেউ এ হাদীসকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা করেননি। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি উযূ করার পর নিজের কাপড়ের কিনারা দিয়ে নিজের মুখমন্ডল মুছে ফেলতেন। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৃথক একখন্ড কাপড় ছিল। এ কাপড় দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করার পর তাঁর উযূর অঙ্গগুলো মুছে নিতেন। [১] ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি তেমন সবল নয়। এর একজন বর্ণনাকারী আবূ ম‘আয মুহাদ্দিসীনের কাছে দুর্বল।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
তাবি‘ঈ সাবিত ইবনু আবূ সফিয়্যাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জা‘ফার-এর পিতা মুহাম্মাদ বাক্বির (ইবনু যায়নুল আবিদীন)-কে বললাম, আপনার কাছে কি জাবির (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো একবার, কখনো দুই দুইবার, আবার কখনো তিনবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধৌত করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই দুইবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধুলেন। অতঃপর বললেন, এটা হল আলোর উপর আলো। [১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন তিনবার করে উযূর অঙ্গগুলো ধুয়েছেন। এরপর তিনি বলেছেন, এটা হল আমার ও আমার আগের নাবীগণের উযূ এবং ইবরাহীম (আঃ) এর ওযূ। [১] এ হাদীস দু’টি ইমাম রযীন বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাবাবী শারহে মুসলিমে দ্বিতীয় হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ফারয সলাতের জন্য উযূ করতেন। আর আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির জন্য যে পর্যন্ত উযূ নষ্ট বা ভঙ্গ না হয় সে পর্যন্ত এক ওযূই যথেষ্ট ছিল। [১] মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু হিব্বান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর ছেলে ‘উবায়দুল্লাহকে বললাম, আমাকে বলুন তো, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কি প্রত্যেক সলাতের জন্য উযূ করতেন, চাই উযূ থাকুক কি না থাকুক, আর তিনি কার থেকে এ ‘আমাল অর্জন করেছেন? ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট আসমা বিনতু যায়দ ইবনুল খাত্ত্বাব এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ্ আবূ ‘আমির ইবনুল গসীল (রাঃ) এ হাদীস তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রত্যেক সলাতে উযূ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, চাই তাঁর উযূ থাকুক কি না থাকুক। এ কাজ তাঁর উপর কঠিন হয়ে পড়লে প্রত্যেক সলাতে মিসওয়াক করতে নির্দেশ দেয়া হল, উযূ মাওকূফ করা হল, যতক্ষণ পর্যন্ত না উযূ ভঙ্গ হয়। ‘উবায়দুল্লাহ বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার মনে করতেন যে, তার মধ্যে প্রত্যেক সলাতে উযূ করার শক্তি রয়েছে। তাই তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এ ‘আমাল করেছেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় সা’দ (রাঃ) উযূ করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে সা’দ! এত অপচয় কেন? সা’দ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উযূর মধ্যেও কি অপচয় আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ আছে। যদিও তুমি প্রবহমান নদীর কিনারায় থাক। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ইবনু মাস্‘ঊদ ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূ করল এবং ‘বিস্মিল্লা-হ’ (আল্লাহর নাম নিয়ে) পড়ে উযূ করল, সে তাঁর গোটা শরীরকে (গুনাহ হতে) পবিত্র করল। আর যে ব্যক্তি উযূ করল অথচ ‘বিস্মিল্লা-হ’ বলল না, সে শুধু উযূর অঙ্গগুলোকে পবিত্র (পরিষ্কার) করল। [১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের উযূ করার সময় নিজের আঙ্গুলে পরা আংটি নেড়ে-চেড়ে নিতেন। [১] দারাকুত্বনী উপরের দু’টি হাদীসই বর্ণনা করেছেন এবং ইবনু মাজাহ শুধু দ্বিতীয় হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীলোকের চার শাখার (দুই হাত দুই পা) মাঝখানে বসে সঙ্গমে রত হয় তখন তার উপর গোসল করা ফার্য হয়ে যায়, যদিও বীর্যপাত না হয়। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : পানিতেই পানির প্রয়োজন, অর্থাৎ বীর্যপাত ছাড়া গোসল ফার্য নয়। [১] ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ্ বলেন, এ হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) “পানি পানি হতে” এ হুকুম হল স্বপ্নদোষের জন্য। [১] আমি এ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে পাইনি। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন (আনাস-এর মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা‘আলা হাক্ব কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নপদোষের কারণে তার উপর কি গোসল ফার্য হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন : হাঁ, যদি (ঘুম থেকে জেগে উঠে) বীর্য দেখে। এ উত্তর শুনে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) (লজ্জায়) স্বীয় মুখ ঢেকে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীলোকেরও আবার স্বপ্নদোষ হয় (পুরুষের ন্যায় বীর্যপাত হয়)। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ। কি আশ্চর্য! (তা না হলে) তার সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে? [১] ইমাম মুসলিম (রহঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) কিন্তু ইমাম মুসলিম উম্মু সুলায়ম-এর বর্ণনায় এ কথাগুলো বেশী বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাও বলেছেন যে, সাধারণত পুরুষের বীর্য গাঢ় ও সাদা। স্ত্রীলোকের বীর্য পাতলা ও হলদে। উভয়ের বীর্যের মধ্যে যেটিই জয়ী হয়, অর্থাৎ- যে বীর্য আগে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে সন্তান তার সাদৃশ্য হয়।।[১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতার জন্য ফার্য গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত) দুই হাত ধুতেন। এরপর সলাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন। [১] কিন্তু ইমাম মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর উযূ করতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন) মায়মূনাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোসলের জন্য পানি রাখলাম এবং কাপড় দিয়ে পর্দা করে দিলাম। প্রথমে তিনি দুই হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং কব্জি পর্যন্ত হাত ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে তা দিয়ে লজ্জাস্থান ধুলেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষে তা মুছে নিলেন। তারপর নিয়ম মত হাত ধুলেন। এরপর মাথার উপর পানি ঢাললেন। সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ভিজালেন। তারপর নিজ স্থান হতে একটু সরে গিয়ে পা ধুলেন। আমি (শরীরের পানি মুছে ফেলার জন্য) তাঁকে কাপড় দিলাম। কিন্তু তিনি তা নিলেন না, দুই হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক আনসার মহিলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে হায়যের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। কীভাবে গোসল করতে হবে তিনি তাকে সে ব্যাপারে জানিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, মিস্কের সুগন্ধিযুক্ত একখন্ড কাপড় নিয়ে তা দিয়ে ভালভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করবে। মহিলাটি বলল, আমি কীভাবে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। সে আবার বলল, আমি তা দ্বারা কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সুব্হানাল্লাহ (এটাও বুঝলে না)! তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করবে।‘আয়িশাহ্ (রা:) বললেন, তখন আমি তাকে আমার দিকে টেনে আনলাম এবং (চুপিসারে) বললাম, রক্তক্ষরণের পর তা দ্বারা (গুপ্তাঙ্গের ভিতরের অংশ) মুছে নিবে (এতে দুর্গন্ধ দূর হবে)। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল!, আমি এমন এক মহিলা যে, আমার মাথার চুলের বেণী বেশ শক্ত করে বাঁধি। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফারয্ গোসলের সময় আমি কি তা খুলে ফেলব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না খুলবে না। তুমি তোমার মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢেলে দিবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্টঃ তারপর তুমি তোমার সর্বাঙ্গে পানি ঢেলে নিবে ও পবিত্রতা অর্জন করবে। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্দ পানি নিয়ে উযু করতেন এবং এক সা’ থেকে পাঁচ মুদ্দ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন। [১] মহিলা তাবি’ঈ মু’আযাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ (রা:) বলেছেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ও তাঁর মাঝখানে রাখা একটি পাত্র হতে পানি নিয়ে একসাথে (পবিত্রতার) গোসল করতাম। তিনি খুব তারাতারি করে আমার আগে পানি উঠিয়ে নিতেন। আর আমি তখন বলতে থাকতাম, আমার জন্য কিছু রাখুন, আমার জন্য কিছু রাখুন। মু’আযাহ্ (রহঃ) বলেন, তখন তারা উভয়ে নাপাক অবস্থায় থাকতেন। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন পুরুষ লোক (ঘুম থেকে জেগে শুক্রের) আদ্রতা পেল, অথচ স্বপ্নদোষের কথা তার মনে পড়ছে না। তখন সে কী করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে (ফারয) গোসল করবে। অপরদিকে কোন পুরুষের স্মরণ আছে তার স্বপ্নদোষ হয়েছে অথচ (কাপড়ে শুক্রের) কোন আদ্রতা সে খুঁজে পাচ্ছে না, (তখন সে কী করবে?) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাবে বললেন, তাকে (ফারয) গোসল করতে হবে না। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কোন স্ত্রীলোক যদি এরূপ দেখে তার উপরও কি গোসল ফারয হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, স্ত্রীলোকরাও পুরুষের মতো। [১] দারিমী ও ইবনু মাজাহ “তাকে গোসল করতে হবে না” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষের খাতনার জায়গা মহিলার খাতনার জায়গা অতিক্রম করলেই গোসল করা ফারয হয়ে যাবে। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছি, তারপর দু’জনেই গোসল করেছি। [৪৬৩] [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শরীরের প্রত্যেক পশমীর গোড়ায় নাপাকী থাকে। সুতরাং শরীরের পশমগুলোকে ভালভাবে ধুবে এবং চামড়াকে উত্তমভাবে পরিষ্কার করবে। [৪৬৪] ইমাম তিরমিযী বলেছেন এ হাদীসটি গরীব। এর রাবী হারিস ইবনু ওয়াজীহ তেমন গ্রহনযোগ্য নন। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নাপাকীর এক চুল পরিমাণও ছেড়ে দিবে এবং তা ধুবে না তাকে এভাবে এভাবে জাহান্নামে ‘আযাব দেয়া হবে। ‘আলী (রাঃ) বললেন, সেদিন হতে আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করছি। সেদিন হতে আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করেছি। সেদিন হতে আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করে আসছি- এরূপ তিনবার বললেন। [৪৬৫] কিন্তু আহমাদ ও দারিমী “সে হতেই আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করছি” বাক্যটি তিনবার বলেননি। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের পর (সলাত বা অন্যান্য ইবাদাতের জন্য নতুন করে) উযূ করতেন না। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারয গোসলের সময় খিত্বমী দিয়ে নিজের মাথা ধুতেন, অথচ তিনি নাপাক ছিলেন। খিতমী দিয়ে ধৌত করাকেই যথেষ্ট মনে করতেন। মাথায় পানি ঢালতেন না। [১] ইয়া‘লা [ইবনু মুররাহ্] (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে উলঙ্গ উন্মুক্ত জায়গায় গোসল করতে দেখলেন এবং (রাগভরে) তিনি মিম্বরে দাঁড়ালেন । প্রথমে আল্লাহর প্রসংশা করলেন, এরপর বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বড় লজ্জাশীল ও পর্দাশীল । তিনি লজ্জাশীলতা ও পর্দা করাকে বেশী পছন্দ করেন । তাই তোমাদের কেউ গোসল করতে গেলে যেন পর্দা অবলম্বন করে। [১] নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বড় পর্দাশীল । অতএব তোমাদের কেউ গোসল করতে ইচ্ছে করলে সে যেন কোন কিছু দিয়ে পর্দা করে নেয় ।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, “বীর্যখলন হলেই গোসল ফরয হয়”-এ হুকুম ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় ছিল। এরপর তা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। [১] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, আমি ফরয গোসল করেছি এবং ফজরের সলাত আদায় করেছি, এরপর আমি দেখলাম শরীরে নখ পরিমাণ পানি জায়গায় পানি পৌঁছনি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি যদি এ শুকনা জায়গাটা হাত দিয়ে মুছে নিতে তাহলে তোমার জন্য সেটাই যথেষ্ট হত। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, প্রথমে সলাত ফরয ছিল পঞ্চাশ ওয়াক্ত। পবিত্রতার গোসল ছিল সাতবার এবং প্রসাবের কাপড় ধোয়া ছিল সাতবার। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর দরবারে আবেদন করতে থাকেন, অবশেষে সলাত ফরয করা হয় পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্রতার গোসল ফরয করা হয় একবার। এবং প্রসাব হতে কাপড় ধোয়া ফরয করা হয় একবার। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখা হল। আমি তখন (বীর্যপাতের কারনে) নাপাক ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমি তার সাথে চলতে থাকলাম যে পর্যন্ত না তিনি বসলেন। তখন আমি চুপিসারে সরে পড়লাম এবং যথাস্থানে এসে গোসল করে নিলাম। অতঃপর আবার তাঁর কাছে চলে গেলাম। তিনি তখনো সেখানে বসা আছেন। তিনি বললেন, তুমি কোথায় ছিলে হে আবূ হুরাইরাহ্। আমি (সম্পূর্ণ) বিষয়টি তাঁর কাছে (খুলে) বললাম। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ মু‘মিন (কখনো) অপবিত্র হয় না। এটা বুখারী (২৮৫ হাঃ)-এর বর্ণনা। অনুরুপ অর্থবোধক হাদীস মুসলিমও বর্ণনা করেছেন এবং বুখারীর কথার পর তার বর্ণনায় এ কথাও আছে আমি উত্তরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম যখন আমার সাথে আপনার দেখা হল তখন আমি নাপাক ছিলাম। তাই গোসল না করে আপনার সাথে বসাটা ঠিক মনে করলাম না। বুখারীর আর একটি বর্ণনাও এভাবে এসেছে। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করে বললেন, (কোন সময়) রাতে তার নাপাকী হয়ে গেলে (তৎক্ষণাৎ তার কী করা উচিৎ)? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তখন তুমি ওযু করবে, তোমার গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে নিবে, অতঃপর ঘুমাবে। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্থায় ঘুমাতেন অথবা কিছু খাওয়ার ইচ্ছে করলে তখন সলাতের ওযূর মতো ওযূ করতেন। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করার পর আবারো যদি সঙ্গম করতে চায়, তাহলে সে যেন মধ্যখানে (সলাতের ওযূর মত) ওযূ করে নেয়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের নিকট যেতেন একই গোসলে। (অর্থাৎ মধ্যখানে শুধু ওযূ করতেন, গোসল করতেন না)। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবসময় আল্লাহর স্মরনে মগ্ন থাকতেন। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)- এর হাদীস, যা মাসাবীহের সংকলক এখানে বর্ণনা করেছেন, আমি কিতাবুল আত্ব‘ইমাতে বর্ণনা করব ইনশা-আল্লা-হ।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক স্ত্রী (মায়মূনাহ্) একটি গামলাতে পানি নিয়ে গোসল করলেন। এ গামলার পানি দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতে চাইলে পবিত্র স্ত্রী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো নাপাক ছিলাম (আমি তো এর থেকে পানি উঠিয়ে গোসল করেছি)। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পানি তো নাপাক হয় না। দারিমীও এরূপই বর্ণনা করেছেন। [১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আর শারহে সুন্নাহতেও ইবনু ‘আব্বাস থেকে মায়মূনাহ্-এর সূত্রে মাসাবীহ-এর শব্দে বর্ণনা করেছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকীর পর গোসল করতেন। অতঃপর আমার গোসল করার পূর্বে আমাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের গরম অনুভব করতেন। [১] ইমাম তিরমিযীও এরূপই বর্ণনা করেছেন, আর শারহু সুন্নাহতেও মাসাবীহর শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা হতে বেরিয়ে (উযূ করার আগে) আমাদেরকে কুরআন মাজীদ পড়াতেন এবং আমাদের সাথে গোশ্ত খেতেন। নাপাকী ব্যতীত কোন কিছু তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত হতে ফিরিয়ে রাখতে পারত না। [১] ইবনু মাজাহ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঋতুবতী স্ত্রীলোক ও নাপাক ব্যক্তি কুরআন মাজীদের কিয়দংশও পড়তে পারবে না। [১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এসব ঘরের দরজা মাসজিদে নাবাবীর দিক হতে ফিরিয়ে দাও। আমি মাসজিদকে ঋতুবতী মহিলা ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়িয মনে করি না। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে কোন ছবি বা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি থাকে সে ঘরে (রহমাতের) মালাক প্রবেশ করেন না। [১] আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন তিন ব্যক্তি আছে, মালায়িকাহ্ যাদের ধারে কাছেও যান না-(১) কাফিরের মৃতদেহ (২) খালূক্ব ব্যবহারকারী ও (৩) নাপাক ব্যক্তি, উযূ না করা পর্যন্ত। [১] আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাযম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আম্র ইবনু হায্ম-এর কাছে যে চিঠি লিখেছেন তাতে এ কথাও লেখা ছিল যে, পবিত্র লোক ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে। [১] নাফি‘ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার কোন কাজে গেলে আমিও তার সাথে গেলাম। তিনি তাঁর কাজ শেষ করলেন। সেদিন তাঁর কথার মধ্যে এ কথাটি ছিল, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি কোন একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্রাব বা পায়খানা সেরে বের হলেন। ঐ লোকটির সাথে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখা হলে সে সালাম দিল। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না। লোকটি যখন অন্য গলির দিকে মোড় নিচ্ছিল, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তায়াম্মুম করার জন্য) দেওয়ালে দুই হাত মেরে মুখমণ্ডলে মাসেহ করলেন। অতঃপর আবার দেওয়ালে হাত মেরে কনুইসহ দু’হাত মাসাহ করলেন (অর্থাৎ তায়াম্মুম করলেন)। এরপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, তোমাকে সালামের উত্তর দিতে পারিনি। কারণ আমি বে-উযূ ছিলাম, এটাই ছিল (তোমার সালামের উত্তর দিতে আমার) বাধা। [১] মুহাজির ইবনু কুনফুয (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন প্রস্রাব করছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রস্রাবের পর) যে পর্যন্ত না উযু করলেন তার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওজর পেশ করে বললেন, উযু না করে আমি আল্লাহর নাম নেয়া পছন্দ করিনি (এ কারনেই তোমার সালামের উত্তর দেইনি)। [১] ইমাম নাসায়ীও এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, “যে পর্যন্ত উযু না করলেন” বাক্য পর্যন্ত। ওজর পেশ করার কথা তিনি বলেননি। তার স্থানে বর্ণনা করেছেন, যখন উযু করলেন, তার সালামের উত্তর দিলেন। [2]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমার বিছানায়) নাপাক হয়ে যেতেন, অতঃপর ঘুমাতেন, আবার জাগতেন, আবার ঘুমাতেন। [১] শু‘বাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) নাপাক হলে যখন গোসল করতেন তখন প্রথমে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপর সাতবার পানি ঢালতেন, তারপর স্বীয় লজ্জাস্থান ধুতেন। একবার তিনি কতবার পানি ঢেলেছেন ভুলে গেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, আমার স্মরণ নেই। তিনি বললেন, তোমার মায়ের মৃত্যু হোক। স্মরণ রাখতে কে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? তারপর তিনি সালাতের উযুর মত উযু করে নিজের সারা শরীরে পানি ঢাললেন এবং বললেন, এভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতা লাভ করতেন। [১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সকল স্ত্রীর নিকট ঘুরে বেড়ালেন। তিনি এর নিকট একবার, তার নিকট একবার গোসল করলেন। আবু রাফি’ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! সবশেষে একবারই মাত্র কেন গোসল করলেন না? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রত্যেকবার গোসল করা হচ্ছে বেশী পবিত্রতা, বেশী আনন্দদায়ক ও বেশী পরিচ্ছন্নতা। [১] হাকাম ইবনু ‘আমর (রাঃ) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের উযুর (গোসলের পর) অবশিষ্ট পানি দিয়ে উযু করতে পুরুষদেরকে নিষেধ করেছেন। [১] তিরমিযী এ শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করেছেন যে, “তিনি নিষেধ করেছেন যে, মহিলাদের উযুর অবশিষ্ট পানি দিয়ে”। তিরমিযী আরও বলেছেন যে, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। হুমায়দ আল হিম্ইয়ারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম, যিনি চার বছর পর্যন্ত রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন, যেমন আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তাঁর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন পুরুষের অবশিষ্ট পানি দিয়ে স্ত্রীলোকদের গোসল করতে এবং স্ত্রীলোকদের অবশিষ্ট পানি দিয়ে পুরুষের গোসল করতে। পরবর্তী রাবী মুসাদ্দাদ এ কথা অতিরিক্ত বলেছেন, বরং উভয়েই যেন একই সাথে অঞ্জলি ভরে গোসল করে। [১] ইমাম আহমাদ প্রথম দিকে এ কথা বৃদ্ধি করেছেন, আমাদের প্রত্যেক দিন চুল আঁচড়াতে ও গোসলের জায়গায় প্রসাব করতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [2] ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) ইবনু মাজাহ্ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) হতে।
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন (বহমান নয় এমন) বদ্ধ পানিতে প্রসাব না করে। অতঃপর এতে গোসল করে। [১] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে নাপাক অবস্থায় গোসল না করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, সে কিভাবে করবে, হে আবু হুরায়রাহ্? তিনি বললেন, সে তা থেকে পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করবে। [2] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদ্ধ পানিতে প্রসাব করতে নিষেধ করেছেন। [১] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার এ বোনপুত্র অসুস্থ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন। আমি তাঁর উযুর পানি (কিছু) পান করলাম। অতঃপর আমি তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে দাড়িয়ে তাঁর দুই কাঁধের মধ্যে মশারীর বা পর্দার ঘণ্টির মতো ’মুহুরে নবুওয়াত’ দেখতে লাগলাম। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মাঠে-ময়দানের (জমে থাকা) পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হল। সেখানে বিভিন্ন জাতের জীব - জন্তু ও হিংস্র প্রানী এসে পানি পান করে থাকে (এসব পানি কি পাক-পবিত্র?) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দুই কুল্লা পরিমান পানি হলে তা নাপাক হয় না। [১] আবূ দাউদ -এর এর এক বর্ণনার শব্দ হল, ''এ পানি নাপাক হয় না।'' আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, (রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে একদিন) জিজ্ঞেস করা হলঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি ''বুযা - আহ্'' কূপের পানি দিয়ে উযূ করতে পারি? কেননা এ কূপটিতে হায়যের নেকড়া, মরা কুকুর ও বিভিন্ন ধরনের দুর্গন্ধময় আবর্জনা ফেলা হয়। উত্তরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পানি পবিত্র। কোন জিনিসই সেটাকে নাপাক করতে পারে না। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা সমুদ্র ভ্রমণে যাই এবং সাথে কিছু মিঠা পানি নিয়ে যাই। তাই এই পানি দিয়ে ওযু করলে খাবার পানির অভাবে আমরা তৃষ্ণার্ত হয়ে পরি। এ অবস্থায় আমরা কি সমুদ্রের (লবানাক্ত) পানী দিয়ে ওজু করতে পারি? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিলেন সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং এর মৃত জীবও হালাল। [১] আবূ যায়দ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘জিনের রাতে’ তাকে জিঞ্জেস করলেন, তোমার ‘মশকে’ কি আছে? আমি বললাম, ‘নাবীয’। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, খেজুর পাক পানিও পবিত্রকারী। আহমাদ ও তিরমিযী শেষের দিকে বৃদ্ধি করে বলেছেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দিয়ে উযু করলেন। [১] তিরমিযী বলেন, আবূ যায়দ একজন মাজহুল (অপরিচিত) লোক। সাহীহ সুত্রে ইব্নু মা্’উদ (রাঃ)–এর অপর ছাত্র ‘আলকামাহ্ ‘আবদুল্লাহ ইব্নু মাস্’উদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘আমি জিনের রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে ছিলাম না। [৫০৩] [১] কাবশাহ্ বিনতু কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি ছিলেন আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) এর পুত্রবধূ। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁর জন্য উযুর পানি ঢাললেন। একটি বিড়াল এলো এবং উযূর পাত্র হতে পানি পান করতে লাগল। আর তিনি পাত্রটি তার জন্য কাত করে ধরলেন যে পর্যন্ত পান করা শেষ না হল। কাবশাহ বলেন, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, আমি তাঁর দিকে চেয়ে আছি। তিনি আমাকে বললেন, আমার ভাতিজী! তোমার কাছে আশ্চর্য লাগছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়। এটা তোমাদের আশে পাশে ঘন ঘন বিচরণকারী বা বিচরণকারিণী। [১] তাবি’ঈ দাউদ ইব্নু সা-লিহ ইব্নু দীনার (রহ:) তার (মায়ের) মুক্তিদানকারিণী মুনীব একবার তার মাকে কিছু ‘হারিসাহ্’ নিয়ে ‘আয়িশাহ্’ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তার মা বলেন, আমি গিয়ে তাকে সালাতরত পেলাম। তিনি তখন আমাকে (হাত নিয়ে) ইশারা করলেন, ‘তা রেখে দাও’। তখন একটি বিড়াল এলো এবং তা হতে কিছু খেল। এরপর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সালাত শেষ করে বিড়ালের খাওয়া স্থান থেকেই খেলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিড়াল নাপাক নয়। ওটা তোমাদের আশেপাশে ঘন ঘন বিচরণকারী জীব। তিনি [আয়িশাহ্ (রাঃ)] আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট (পানি) দিয়ে উযু করতে দেখেছি। [১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে জিঞ্জেস করা হল, আমরা কি গাধার উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে উযূ করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, বরং সকল হিংস্র জানোয়ারের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়েও। [১] উম্মু হানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ) একটি গামলার পানি দিয়ে গোসল করেছেন, যাতে আটার খামীরের অবশিষ্ট ছিল। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
ইয়াহ্ইয়া ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এক কাফিলার সাথে বের হলেন। এদের মধ্যে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)–ও ছিলেন। পথ চলতে চলতে তাঁরা একটি হাওযের কাছে পৌঁছলেন। তখন ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) বললেন, হে হাওযের মালিক! তোমার হাওযে হিংস্র জন্তরা ও কি পানি পান করতে আসে? ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, হে হাওযের মালিক! আমাদেরকে এ সংবাদ দিও না। এ পানির ঘাটে কখনো আমরা আসি আর কখনো আসে জন্তু জানোয়ার। (তাতে অসুবিধা কী?) [১] ইমাম রযীন (রহঃ) এ হাদীসটিকে আরো বৃদ্ধি করে বর্ণনা করে বলেছেনঃ কোন কোন বর্ণনাকারী ‘উমারের কথার মধ্যে এ কথাও উল্লেখ করেছেন, ‘‘আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তা থেকে জন্তু জানোয়ার পেটে যা নিয়েছে তা তাদের জন্য, আর যা অবশিষ্ট আছে তা আমাদের জন্য পাক-পবিত্র ও পানীয়। আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা ও মাদীনার মধ্যে অবস্থিত কূপগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, এসব কূপে জন্তু-জানোয়ার, কুকুর ও গাধা পানি পান করতে আসে। এগুলোর পানি কি পবিত্র? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জন্তু-জানোয়াররা পেটে যা গ্রহণ করেছে তা তাদের জন্য, আর যা অবশিষ্ট আছে তা আমাদের জন্য পবিত্র। (ইবনু মাজাহ্)[১] উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, রোদে গরম করা পানি দিয়ে গোসল করো না। কারণ এ পানি শ্বেত ও কুষ্ঠ রোগ সৃষ্টি করে। (দারাকুত্বনী)[১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পানি পান করে, তখন সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয়। [১] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয় এবং এর প্রথমবার মাটি দিয়ে। [2] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন জনৈক বেদুইন মাসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে দিল। লোকেরা তাকে ঘিরে ধরল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদের (মানুষের জন্য) সহজ পন্থা অবলম্বনকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে, কঠোরতা সৃষ্টিকারীরূপে নয়। [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাসজিদে (নাবাবীতে) ছিলাম। এমন সময় জনৈক বেদুইন এসে মাসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ বলে উঠলেন, থাম, থাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিও না, তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। তাই সহাবীগণ তাকে ছেড়ে দিলেন। সে প্রস্রাব করা শেষ করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে বললেন, এ মাসজিদসমূহে প্রস্রাব ও অপবিত্রকরণের কোন কাজ করা জায়িয নয়। বরং এটা শুধু আল্লাহর যিক্র, সলাত ও কুরআন পাঠের জন্য। (রাবী বলেন) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঠিক এ বাক্য বা অনুরূপ কিছু বলেছেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে উপস্থিত একজনকে নির্দেশ দিলেন সে এক বালতি পানি এনে (প্রস্রাবের উপর) ঢেলে দিল। [১] আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন জনৈক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কারও যদি কাপড়ে হায়যের রক্ত লাগে, তখন সে কি করবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কারো কাপড়ে হায়যের রক্ত লেগে গেলে, সে আঙ্গুল দিয়ে তা খুঁটে ফেলবে। অতঃপর পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। তারপর তাতে সলাত আদায় করবে। [১] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে কাপড়ে লেগে থাকা মানী (বীর্য) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি [আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় থেকে মানী ধুয়ে দিতাম। তারপর তিনি সলাত আদায়ের উদ্দেশে বের হতেন, অথচ তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) কাপড়ে বীর্যের ‘আলামাত দেখা যেত। [১] (তাবি’ঈদ্ব্য়) আসওয়াদ ও হাম্মাম (রহঃ) উভয়ে বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ-এর কাপড় হতে বীর্য খুঁটে তুলে ফেলতাম। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তবে তাতে আরো আছে, “অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে কাপড় পড়ে সলাত আদায় করতেন। [১] উম্মু ক্বায়স বিনতু মিহসান (রাঃ) একদিন তিনি তার একটি শিশু নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন। (পুত্র শিশুটি মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য গ্রহণে অনুপযুক্ত ছিল)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আপন কোলে বসালেন। শিশুটি তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনালেন, প্রস্রাবের উপর পানি ঢেলে দিলেন, ধুলেন না। [১] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (কাঁচা) চামড়া যখন পাকা (প্রক্রিয়াজাত) করা হয়, তখন তা পাক হয়ে যায়। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আমার খালা) মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর এক মুক্তদাসীকে একটি বকরী দান করা হল। পরে সেটি মারা গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট দিয়ে যাবার সময় বললেন, তোমারা বকরীর চামড়াটা খুলে নিয়ে পাকা করলে না, অথচ এটা কাজে লাগাতে পারতে। তারা বলল, এটা যে মৃত! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা শুধু খাওয়াই হারাম করা হয়েছে। [১] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী সাওদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের একটি বকরী মারা গেলে আমরা এর চামড়াটা পাকা করলাম। অতঃপর আমরা সব সময় এতে ‘নাবীয’ বানাতে থাকি, যা পরবর্তীতে একটা পুরান মশকে পরিণত হল। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
লুবাবাহ্ বিনতু হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, হুসায়ন ইবনু ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে তাঁর কাপড়ে প্রস্রাব করে দিলেন। তখন আমি বললাম, আপনি অন্য কাপড় পরে নিন এবং আমাকে আপনার কাপড়টি দিন, আমি তা ধুয়ে দেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরে বললেন, মেয়েদের প্রস্রাব ধুতে হয়। ছেলেদের প্রস্রাবের উপর পানি ছিটিয়ে দিলেই হয়। [১] আবুস্ সাম্হ আবূ দাউদ ও নাসায়ীর এক বর্ণনায় আবুস্ সাম্হ হতে এ শব্দগুলো অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মেয়ে শিশুদের প্রস্রাব ধুতে হয়। আর ছেলে শিশুদের প্রস্রাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হয়। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নিজের জুতা দিয়ে অপবিত্র জিনিস মাড়ায়, তখন মাটিই এর জন্য পবিত্রকারী। [১] ইবনু মাজাহ্ও অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তাঁকে এক মহিলা এসে বলল, আমি আমার কাপড়ের আঁচল নিচে লম্বা করে দেই, আর অপবিত্র জায়গায় চলি, (এখন আমি কী করব?) তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরের পবিত্র জায়গার মাটি এটাকে পবিত্র করে দেয়। [১] আবূ দাউদ ও দারিমী বলেন, প্রশ্নকারী মহিলা ছিলেন ইব্রাহীম ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর উম্মু ওয়ালাদ বা সন্তানের মা। মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারীব (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র জন্তুর চামড়া পরতে ও এর উপর আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন। [১] আবুল মালীহ ইবনু উসামাহ্ (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র পশুর চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। [১] কিন্তু তিরমিযী ও দারিমীর বর্ণনায় আরো আছে, এবং তা বিছাতে (বিছানা বা গদী হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন) [2] আবুল মালীহ (রহঃ) তিনি হিংস্র জন্তুর চামড়ার মূল্য অপছন্দ করতেন। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকায়ম (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ মর্মে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পত্র এসেছে: তোমরা মৃত জীবজন্তুর চামড়া বা রগ দ্বারা ফায়দা উঠাবে না। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা:) মৃত জীবের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর এর থেকে উপকৃত হতে নির্দেশ দিয়েছেন।[১] মায়মূনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্রের কিছু লোক গাধার মতো বড় একটি মৃত বকরীকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ দিয়ে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা যদি এর চামড়া ছিলে নিতে (তাহলে হয়তো তোমাদের কাজে লাগত)। তারা বলল, এটা তো মৃত(যাবাহ করা নয়)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পানি এবং সলম গাছের পাতা এক পবিত্র করে।[১] সালামাহ্ ইবনুল মুহাব্বিক্ব (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূকের যুদ্ধের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পরিবারের নিকট গেলেন। সেখানে তিনি একটি মশক লটকানো দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাত্থেকে) পানি চাইলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো মরা (জন্তুর পাকা করা) চামড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাকে দাবাগত করাই হল এর পবিত্রতা। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
‘আবদুল আশহাল বংশের জনৈকা রমণী তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! মাসজিদের দিকে আমাদের (চলাচলের পথে) একটি অতি গন্ধময় রাস্তা আছে। সেখানে বৃষ্টি হবার পর আমরা কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করব? তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মাসজিদের দিকে যাওয়ার জন্য পূর্বের চেয়ে আর কোন ভাল পবিত্র পথ পড়বে না? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই হল ওটার বদলা (অর্থাৎ-পরবর্তী রাস্তার পবিত্র মাটি দিয়ে লেগে থাকা নাপাকী পবিত্র হয়ে যাবে)। [১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করতাম। অথচ (পবিত্র মাটির) রাস্তায় চলার কারণে উযূ করতাম না। [১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মাসজিদে (নাবাবীতে) কুকুর চলাচল করত। অথচ সাহাবীগণ (কুকুর হাঁটার জায়গায়) কোন পানি ছিটাতেন না (ধুইতেন না)। [১] বারা (ইবনু ‘আযিব) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার গোশত খাওয়া হয় তার প্রস্রাব গায়ে লাগলে ক্ষতি নেই। [১] জাবির (ইবনু ‘আবদুল্লাহ) (রাঃ) তিনি বলেন, যে জীব-জন্তুর গোশত খাওয়া হয় তার প্রস্রাবে দোষ নেই। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
(তাবি’ঈ) শুরায়াহ্ ইবনু হানী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) কে মোজার উপর মাসাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি ‘আলী (রাঃ) উত্তরে বললেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুকিমের জন্য একদিন একরাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [১] মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবুক যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। মুগিরাহ্ বলেন, একদিন ফজরের সলাতের আগে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানার উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর আমি তাঁর পিছনে একটি পানির পাত্র বহন করে গেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে আসার পর আমি তাঁর দুই হাতের কব্জির উপর পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই হাত ও চেহারা ধুলেন। তখন তাঁর গায়ে একটি পশমের জুব্বাহ্ ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর (জুব্বার আস্তিন গুটিয়ে) হাত দুটি খুলতে চাইলেন। কিন্তু জুব্বার আস্তিন খুব চিকন ছিল। তাই জুব্বার ভিতর দিক দিয়েই তাঁর হাত দুটি বের করে নিজের দুই কাঁধের উপর রেখে দিলেন এবং হাত দুটি (কনুই পর্যন্ত) ধুলেন। অতঃপর মাথার সামনের দিক (কপাল) ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজাগুলো খুলতে চাইলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এগুলো এভাবে থাকতে দাও, আমি এগুলো পবিত্রাবস্থায় (অর্থাৎ উযু করে) পরেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলোর উপর মাসাহ্ করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীর উপর আরোহণ করলেন, আমিও আরোহণ করলাম এবং আমরা একটা দলের কাছে পৌঁছে গেলাম। তখন তারা সলাতে দাড়িয়ে গিয়েছিলেন, আর আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) তাদের সলাতের ইমামতি করছিলেন এবং তাদের নিয়ে এক রাক’আত সলাত আদায়ও করে ফেলেছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন বুঝতে পেরে তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার স্থানে (স্থির থাকতে) ইশারা করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে দুই রাক’আতের মধ্যে এক রাক’আত সলাত পেলেন। তিনি সালাম ফিরালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর এক রাক’আত ছুটে যাওয়া সলাত আমরা আদায় করলাম। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন ও এক রাত উযু করে মোজা পরার পর এর উপর মাসাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। আসরাম তার সুনানে এবং ইবনু খুজায়মাহ্ ও দারাকুত্বনী এ হাদীস টি বর্ণনা করেছেন। [১] ইমাম খাত্তাবি বলেছেন, হাদিসটির সনদ সহীহ। আল মুনতাকা কিতাবেও এরূপ উল্লেখ রয়েছে। সফ্ওয়ান ইবনু ‘আস্সাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফর অবস্থায় কোথাও রওয়ানা হলে আমাদেরকে তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত পবিত্রতার গোসল ছাড়া, এমনকি প্রসাব–পায়খানা ও ঘুমানোর পর মোজা না খুলে উযুর করার আদেশ করতেন। [১] মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উযুর পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি মোজার উপর দিক ও তার নীচের দিক মাসাহ করেছিলেন।৫৩৬ ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি ত্রুতিযুক্ত। আমি আবু যুর’আহ ও ইমাম বুখারীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ নয়। এভাবে ইমাম আবু দাউদও হাদীসটিকে য’ঈফ বলেছেন (অর্থাৎ এর সনদ মুগিরাহ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নেই, মধ্যখানে রাবী ছুটে গেছে।[১] মুগীরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি তিনি তাঁর দুটো মোজার উপর দিকে মাসাহ করেছেন। [১] মুগীরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং জুতার সাথে ‘জাওয়াব’ ও ‘পা’ দুটোর উপরের দিকও মাসাহ করেলেন। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোজার উপর মাসাহ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনি কি (পা ধুতে) ভুলে গেছেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না বরং তুমিই ভুল বুঝেছ। এভাবে করার জন্যই আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যিনি মহান ও প্রতাপশালী। [১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, দ্বীন যদি (মানুষের বুদ্ধি) অনুসারেই হত, তাহলে মোজার উপরের চেয়ে নীচের দিকে মাসাহ করাই উত্তম হত। আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি, তিনি মোজার উপরের দিকে মাসাহ করেছেন। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল মানুষের উপর তিনটি বিষয়ে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। (১) আমাদের (সলাতের) কাতারকে মালায়িকার সারির মত মর্যাদা দেয়া হয়েছে। (২) সমস্ত পৃথিবীকে বানানো হয়েছে আমাদের সলাতের স্থান এবং (৩) মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি পাবো না। [১] ইমরান (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি দ্বখলেন এক ব্যাক্তি পৃথক হয়ে বসে আছে, অথচ সে মানুষের সাথে জামা'আতে সালাত আদায় করেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! মানুষের সাথে জামা'আতে সালাত আদায় করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? লোকটি বলল, আমি নাপাক ছিলাম, অথচ তখন পানি পাচ্ছিলাম না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মাটি (তায়াম্মুম মাধ্যমে) ব্যবহার করা উচিত ছিল। আর (পবিত্রতা অর্জনে) এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। [১] ‘আম্মার (ইবনু ইয়াসির) (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব- এর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বলল, আমি নাপাক হয়েছি, পানি পেলাম না। ‘আম্মার (রাঃ) উমারকে বললেন, আপনার কি মনে নেই যে, এক সময় আমি ও আপনি উভয়ে (নাপাক) ছিলাম? আপনি (পানি না পাওয়ায়) সালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম। এরপর ব্যাপারটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ কথা বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই হাত তালু মাটিতে মারলেন এবং দু'হাত (উঠিয়ে) ফুঁ দিলেন।তারপর উভয় হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। এভাবে ইমাম মুসলিমও বর্ণনা করেছেন, যার শেষে শব্দ গুলি হল (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের জন্য এটাই যথেস্ট, যে তোমরা হাত মাটিতে মারবে, তারপর হাতে ফুঁ দিবে, অতঃপর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। [১] আবূ জুহায়ম ইবনুল হারিস ইবনুস্ সিম্মাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন , আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি প্রসাব করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। পরে তিনি একটি দেয়ালের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তাকে নিজের লাঠি দিয়ে খোঁচা মাড়লেন। এর পর দেয়ালের উপর হাত মেরে নিজের চেহারা ও দু হাত মাসাহ করলেন। অতঃপর আমার সালামের উত্তর নিলেন। মিশকাত সংকলন বলেন, আমি এই হাদিস বুখারি , মুসলিমে এবং হুমায়দীর গ্রন্থেও পাইনি। তবে তিনি এটি শারহুস সুন্নাহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদিসটি হাসান। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাক-পবিত্র মাটি মুসলমানকে পবিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করে, যদি দশ বছরও সে পানি না পায়। পানি যখন পাবে তখন সে যেন তাঁর গায়ে পানি লাগায়। এটাই তার জন্য উত্তম। [১] নাসায়ীতে '' যদি দশ বছরও যদি পানি না পায় '' পর্যন্ত উনুরুপ বর্ণনা করেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা (কিছু লোক) সফরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাদের একজন (মাথায়) পাথরের আঘাত পেল এবং তার মাথায় ক্ষত হল। তারপর তার স্বপ্নদোষ হলে সে তার সাথী ভাইদেরকে জিজ্ঞাস করল, এ অবস্থায় কি আমার জন্য তায়াম্মুম করার সুযোগ আছে? তারা বললেন, এ অবস্থায় (যেহেতু পানি ব্যবিহার করতে পারছ) তোমার তায়াম্মুম ব্যবহার করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে করি না। অতঃপর সে গোসল করল, আর আতে সে মারা গেলো। আমরা সফর হতে ফিরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলাম। তাঁর নিকট সব ঘটনা বলা হল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লোকেরা তাকে মেরে ফেলেছে, আল্লাহ্ তাদের কে হত্যা করূন। তারা যখন জানে না তখন অন্যদের কেন জিজ্ঞাস করল না ? কারণ, না জানার চিকিৎসাই হল জানতে চাওয়া। অথচ তার জন্য তায়াম্মুম করা এবং আহত স্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট ছিল। অতঃপর নিজের সমস্ত শরীর ধুয়ে নিতে পারতো। [১] ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) ইবনু মাজাহ এ বর্ণনাটিকে 'আতা ইবনু আবী রাবাহ হতে, তিনি ইবনু 'আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেছেন। আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, দুই লোক সফরে বের হল। পথিমধ্যে সালাতের সময় হল, অথচ তাদের পানি ছিল না । তাই তারা দুজনেই পাক মাটিতে তায়ম্মুম করে সালাত আদায় করে নিল। অতঃপর সালাতের সময়ের মধ্যেই তারা পানি পেয়ে গেল। তাই তাদের একজন উযু করে আবার সালাত আদায় করা নিল এবং দ্বিতীয়জন তা করল না। এরপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে তা বর্ণনা করল। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেনি তাকে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তুমি সুন্নতের উপরেই ছিলে। এ সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযূ করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে তাকে বললেন, তোমার জন্য দিগুন সাওয়ব রয়েছে। [৫৪৭] আবূ দাউদ ও দারিমী, আর নাসায়ীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[১] ইমাম নাসায়ী ও ইমাম আবূ দাঊদ আবূ দাউদ ও ইমাম নাসায়ী এ হাদীস 'আতা ' ইবনু ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
আবুল জুহায়ম ইবনুল হারিস ইবনুস্ সিম্মাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামাল নামক কুয়ার দিক হতে আসলেন, তখন জনৈক লোক তাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগিয়ে একটি দেয়ালের কাছে এসে চেহারা ও হাত মাসাহ করলেন, তারপর লোকটার সালামের জবাব দিলেন। [১] আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, একবার তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে অবস্থানকালে পানি না থাকার কারণে ফাজরের সালাতের জন্য মাটি দিয়ে মাসাহ করেন । তারা তাদের হাতকে মাটিতে মারলেন, তারপর একবার তাদের চেহারা মাসাহ করলেন। আবার মাটিতে হাত মারলেন এবং সম্পূর্ণ হাত বাহুমুল পর্যন্ত এবং হাতের ভিতর দিকে বগল পর্যন্ত মাসাহ করলেন। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর সলাত আদায় করতে চাইলে (এর আগে) সে যেন গোসল করে। [১] আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর জুমু‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম মাত্রই সবার জন্য সাতদিনের মধ্যে কমপক্ষে একদিন গোসল করা ওয়াজিব (অত্যাবশ্যক)। এতে তার মাথা ও শরীর ধুয়ে নিবে। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক জুমু‘আর দিন শুধু উযূ করে ফার্য (কাজ) আদায় করেছে, আর এটা তার জন্য যথেষ্ট। আর যে লোক (জুমু‘আর দিন) গোসল করেছে এ গোসল তার জন্য খুবই কল্যাণকর। [১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যে লোক গোসল দেয় সে নিজেও যেন গোসল করে। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি কারণে গোসল করতেনঃ (১) অপবিত্রতা, (২) জুমু‘আহ্, (৩) রক্তমোক্ষণের (শিঙ্গা লাগানোর) পর (অর্থাৎ-শরীর থেকে রক্ত বের হলে) এবং (৪) মৃত ব্যক্তির গোসল দেবার পর। [১] ক্বায়স ইবনু ‘আসিম (রাঃ) তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
ইকরিমাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইরাকের কিছু লোক এসে জিজ্ঞেস করল, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস! জুমু‘আর দিনের গোসলকে আপনি কি ওয়াজিব মনে করেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু যে ব্যক্তি তা করবে তার জন্য খুবই উত্তম ও পবিত্রতম। আর যে ব্যক্তি তা করল না তার জন্য ফার্য নয়। কিভাবে জুমু‘আর গোসল শুরু হল তা আমি তোমাদেরকে বলছি। লোকেরা গরীব ছিল। পশমের মোটা কাপড় পরত। পিঠে ভারবাহীর মতো কঠিন পরিশ্রম করতো। তাদের মাসজিদ ছিল ছোট ও নীচু চালার খেজুর ডালের চাপরা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনি এক গরমের দিনে মাসজিদের দিকে গেলেন। মানুষ পশমের কাপড় পড়ে ঘামে ভিজেছিল। তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এতে একে অপরের দুর্গন্ধে কষ্ট পাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও গন্ধ পাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! তোমরা এ দিনে গোসল করে মাসজিদে আসবে। তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আপন আপন সামর্থ্যনুযায়ী ভাল ভাল তৈল ও সুগন্ধী ব্যবহার করে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পদ দান করলেন। তারা পশম ছাড়া অন্য কাপড়-চোপড় পরতে থাকেন। তাদের পরিশ্রম ও দিন মজুরীর অবসান ঘটে। তাদের মাসজিদও প্রশস্ত হল। তাদের একে অপরকে কষ্ট দেবার মতো দুর্গন্ধ ঘামও দূর হয়ে গেল। [১] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের কোন স্ত্রীলোকের হায়য হলে তারা শুধু তাদের সাথে একত্রে খাওয়াই বন্ধ করে দিত না, বরং তাদেরকে একত্রে এক ঘরেও রাখত না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীগণ তাঁকে (এ বিষয়ে) জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তা‘আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, “আর তারা আপনাকে হায়য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে........”- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ ২:২২২) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের সাথে যৌনসঙ্গম ব্যতীত আর সব কিছু করতে পার। এ সংবাদ ইয়াহূদীদের কাছে পৌঁছালে তারা বলল, এ ব্যক্তি আমাদের সব কিছুতেই বিরোধীতা না করে ছাড়তে চায় না। অতঃপর উসায়দ ইবনু হুযায়র এবং ‘আব্বাদ ইবনু বিশ্র (রাঃ) আসলেন। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ইয়াহূদীরা এসব কথা বলে বেড়ায়। আমরা কি আমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনসঙ্গম করার অনুমতি পেতে পারি? এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তাতে আমাদের ধারণা হল, তিনি তাদের উপর রাগ করেছেন। তারপর তারা বের হয়ে গেলেন। এমন সময় তাদের সামনেই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য কিছু দুধ হাদিয়া আসল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেছনে পেছনে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে ডেকে এনে দুধ খেতে দিলেন। এতে তারা বুঝলেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে রাগ করেননি। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাপাক অবস্থায় আমি ও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রে হতে গোসল করতাম। তিনি আমাকে হুকুম করতেন, আমি শক্ত করে লুঙ্গি বেধে দিতাম, আর তিনি আমার গায়ে গা লাগাতেন অথচ তখন আমি হায়য অবস্থায় ছিলাম। তিনি ই‘তিক্বাফ অবস্থায় তাঁর মাথা মাসজিদ থেকে বের করে দিতেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি দিয়ে তাঁর মাথা ধুয়ে দিতাম। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়য অবস্থায় পানি পান করতাম। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা দিতাম। তিনি আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখেই পানি পান করতেন। আমি কখনও হায়য অবস্থায় হাড়ের গোশ্ত খেতাম। অতঃপর আমি এ হাড় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতাম। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মুখের জায়গায় মুখ রেখে তা খেতেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হায়য অবস্থায় থাকতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, মাসজিদ হতে আমাকে চাটাই এনে দাও। আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বললেন, তোমার হায়য তো তোমার হাতে নয়। [১] মায়মূনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি চাদরে সালাত আদায় করতেন। যার একটি অংশ আমার শরীরের উপর থাকত আর অন্য অংশ তার শরীরের উপর থাকত। অথচ তখন আমি ঋতুবতী। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ঋতুবতী অবস্থায় যৌনসঙ্গম করেছে অথবা কোন স্ত্রীলোকের মলদ্বার দিয়ে যৌনসঙ্গম করেছে আথবা কোন গণকের কাছে গিয়েছে, সে লোক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি অবিশ্বাস করেছে। কিন্তু শেষের দু'জন ইবনু মাজাহ ও দারিমীর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি গণকের কাছে গিয়েছে, সে যা বলেছে তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, সে কুফ্রী করেছে (অর্থাৎ-কাফির হয়ে গেছে)। তিরমিযী এ সানাদের সমালোচনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে আবূ তামীমাহ্, তাঁর থেকে হাকীম আস্রাম ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে বলে আমি জানি না। (তবে আবূ তামীমার বিশ্বস্ততা সম্পর্কে কোন কোন মুহাদ্দিস সন্দেহ প্রকাশ করেছেন)। [১] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! হায়য অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে আমার কী কী করা হালাল? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সালোয়ারের উপরিভাগে (নাভীর উপরের অংশে যা করতে চাও কর, তা হালাল)। তবে এটুকু থেকে বিরত থাকাই উত্তম। [১] ইমাম মুহ্য়িয়ুস্ সুন্নাহ বলেন, এ হাদীসের সানাদ তেমন শক্তিশালী নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে ঋতুবতী অবস্থায় যৌনসঙ্গম করে, তাহলে সে যেন অর্ধেক দীনার দান করে দেয়। [১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (যৌনসঙ্গমকালে হায়যের রক্ত) লাল থাকলে এক দীনার ও পীতবর্ণ দেখা দিলে অর্ধেক দীনার সদাক্বাহ আদায় করতে হবে। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তার সাথে কী কী করা (যৌনতৃপ্তি মেটানো) হালাল? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার পরনের পায়জামা শক্তভাবে বাঁধবে। তারপর এর উপরের দিকে যা ইচ্ছা করবে। [১] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আমি ঋতুবতী হতাম, বিছানা হতে সরে চাটাইতে নেমে আসতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসতেন না এবং আমরাও (বিবিগনও) পাক-পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাঁর কছে যেতাম না (মেলামেশা করতাম না)। [১]
প্রথম অনুচ্ছেদ
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবূ হুবায়শ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একজন এমন স্ত্রীলোক যে, সব সময় ইস্তিহাযাহ্ রোগে ভূগি। কোন সময়ই পাক হই না। তাই আমি কি সালাত ছেড়ে দিব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। এটা একটি শিরাজনিত রোগ, হায়যের রক্ত নয়। যখন তোমার হায়যের সময় হবে সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়যের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমার শরীর হতে তুমি হায়যের রক্ত ধুয়ে ফেলবে (অর্থাৎ- গোসল করবে)। অতঃপর সালাত আদায় করতে থাকবে। [১]
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
তাবি’ঈ ‘উরওয়াহ্ ইব্নু যুবায়র (রঃ) তিনি ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবূ হুবায়শ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ফাত্বিমাহ্ সব সময় ইস্তিহাযাহ্ রোগে ভুগতেন। তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলে দিয়েছেন, যখন হায়যের রক্ত আসবে তখন তা কালো হয়, যা সহজে চিনা যায়। এ রক্ত দেখলে সালাত আদায় করবে না। আর (হায়যের রং) ভিন্ন রকম হলে উযু করে সালাত আদায় করবে। কারণ এটা রগবিশেষের রক্ত। [১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে জনৈক নারীর ঋতুস্রাব হতে লাগল। উম্মু সালামাহ তাঁর ব্যাপারটি সম্পর্কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে জিঞ্জেস করলেন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ অবস্থায় তার দেখতে হবে গতমাসে যে কয়দিন তার হায়য থাকত,সে কয়দিন সালাত হতে বিরত থাকবে। যখন সে পরিমাণ দিন শেষ হয়ে যাবে, সে গোসল করবে। এরপর কাপড়ের টুকরো দিয়ে নেংটি বেধে সালাত আদায় করবে। [১] আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে, ইয়াহইয়া ইব্নু মা’ঈন বলেন, ‘আদী (রাঃ)–এর দাদার নাম দীনার, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুস্তাহাযাহ্ স্ত্রীলোক সম্পর্কে বলেছেন, সে হায়যগ্রস্ত অবস্থা থাকাকালীন সালাত পরিত্যাগ করবে। অতঃপর মেয়াদ শেষে গোসল করবে এবং প্রত্যেক সালাতের সময় উযূ করবে। আর সিয়াম (রোযা) পালন করবে ও সালাত আদায় করবে। [১] হামনাহ্ বিনতু জাহশ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এ অবস্থার কথা বলতে ও এর মাসআলা জানতে আসলাম । আমি তাঁকে আমার বোন যায়নাব বিন্তে যাহাশ (রাঃ)–এর ঘরে পেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি ইস্তিহাযার গুরুতর রোগে ভুগছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? এ কারণে আমি সালাত- সিয়াম ঠিকমত করতে পারছি না। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাকে সেখানে পট্টি দিতে উপদেশ দিচ্ছি। তা রক্ত রোধ করবে। হামনাহ্ (রাঃ) বললেন, তা তো এ দিয়ে থামবে না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে তুমি তার উপর কাপড় দিয়ে পট্টি বেধে নিবে। তিনি বলেন, তা এর চেয়েও অধিক। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি পট্টির নীচে কাপড়ের লেঙ্গট বেধে নিবে। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা আরও বেশী গুরুতর। আমার পানির স্রোতের ন্যায় রক্তক্ষরণ হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তোমাকে আমি দু’টি নির্দেশ দিচ্ছি। এর যে কোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি দুটোই করতে পার তাহলে তুমিই অধিক বুঝবে। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, (চিন্তা করবে না, এটা শয়ত্বানের অনিষ্ট সাধনের চেষ্টার একটি অনিষ্ট সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথম নির্দেশ- তুমি তোমার এ সময়ের ছয়দিন অথবা সাতদিন হায়য হিসেবে ধরবে। প্রকৃত বিষয় আল্লাহ্ জানা আছে। অতঃপর গোসল করবে। শেষে যখন তুমি মনে করবে, তুমি পাক ও পবিত্র হয়ে গেছ, মাসের বাকী তেইশ রাত-দিন অথবা চব্বিশ রাত-দিন সালাত আদায় করতে থাকবে এবং সিয়ামও পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর এভাবে প্রতি মাসে তুমি হিসাব করে চলবে যেভাবে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা তাদের হায়যের সময়কে ‘হায়য’ ও তুহুর-এর সময়কে গণ্য করে । দ্বিতীয় নির্দেশ- আর তুমি যদি সক্ষম হও, যুহরকে পিছিয়ে দিতে ও ‘আসরকে এগিয়ে আনতে তাহলে এক গোসলে যুহর ও আসরকে একত্রে আদায় করবে। এভাবে মাগরিবকে পিছিয়ে নিবে ও ‘ইশাকে এগিয়ে আনবে, তারপর একই গোসলের মাধ্যমে উভয় সালাতকে একসাতে আদায় করবে। আর ফজরের জন্য ও গোসল করে সালাত পূর্ণ করবে এবং সওম ও রাখবে। সার কথা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তিন গোসলে আদায় করবে। তারপর দু’ ওয়াক্ত সালাতকে একত্রে আদায় করবে। তুমি যদি এ নিয়মে করতে পারো তাহলে তা-ই করবে। হামনাহ্ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আর শেষ নির্দেশটা আমার নিকট তোমার জন্য বেশী পছন্দনীয়। [১]
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে] বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবূ হুবায়শ (রাঃ) এর এত দিন ধরে ইস্তিহাযাহ্ হচ্ছে এবং সে (এটাকে হায়য মনে করে) সালাত আদায় করছে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুব্হা-নাল্লা-হ’ পড়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, সালাত আদায় না করা তো শয়ত্বানের প্ররোচনা। সে যেন একটি গামলায় পানি ভরে ওতে বসে যায়, তারপর যখন পানি পীত রং দেখে, তখন (অন্য পানি দ্বারা) গোসল করে যুহর ও ‘আসরের সালাত আদায় করে। মাগরিব ও ইশার সালাতের জন্য এভাবে একবার গোসল করবে। আর ফজরের জন্য পৃথক একবার গোসল করবে। এর মাঝখানে উযু করে নিবে। [১] বর্ণনাকারী মুজাহিদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ফাত্বিমাহ্ (রাঃ)–এর প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করা কঠিন হয়ে পড়লে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক গোসলে দুই সালাত একত্রে আদায় করতে নির্দেশ দিলেন। [১]