1. পিতা-মাতার সাথে সদ্ধ্যবহার
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ “আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি” (২৯ : ৮)।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কি? তিনি বলেনঃ ওয়াক্তমত নামায পড়া। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেনঃ পিতা-মাতার সাথে সদাচার। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। রাবী বলেন, তিনি আমাকে এইসব বিষয়ে বললেন। আমি আরো জিজ্ঞেস করলে তিনি অবশ্যই আমাকে আরো বলতেন। (বুখারী, মুসলিম, দারেমী, তিরমিযী, নাসাঈ) ইবনে উমার (রাঃ) (কারো প্রতি তার) পিতা সন্তুষ্ট থাকলে প্রভুও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন এবং তার পিতা অসন্তুষ্ট থাকলে প্রভুও অসন্তুষ্ট থাকেন।-(তিরমিযী, হাকিম, বাযযার, তাহাবী, আদ-দুররুল মানসুর)
অনুচ্ছেদঃ মায়ের সাথে সদাচার।
হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সদ্ব্যবহার পেতে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পি তাবারানী, তারপর ক্রমান্বয়ে আত্মীয়ের সম্পর্কের নৈকট্যের ভিত্তিতে (দারিমী, তিরমিযী, হাকিম)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই। (বাযযার)
অনুচ্ছেদঃ পিতার সাথে সদাচার।
আবু হুরায়রা (রাঃ) ইয়া রাসূলাল্লাহ! সদাচার প্রাপ্তির অগ্রগণ্য ব্যক্তি কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। তিনি বলেন, তারপর কে? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তাহাবী) আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আমাকে কি আদেশ করেন? তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে চতুর্থবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার মায়ের সাথে সদাচার করবে। সে পঞ্চমবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমার পিতার সাথে সদাচার করবে (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তাহাবী)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতা যুলুম করলেও তাদের সাথে সদাচার করতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) যে কোন মুসলমানের মুসলিম পিতা-মাতা জীবিত থাকলে এবং সে ভোরবেলা সওয়াবের আশায় তাদের খোঁজ-খবর নিলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশতের দু’টি দরজা খুলে দেন এবং তাদের একজন থাকলে একটি দরজা। সে তাদের কোন একজনকে অসন্তুষ্ট করলে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকে সন্তুষ্ট না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হন না। বলা হলো, তারা তার উপর যুলুম করে থাকলে? তিনি বলেন, তারা তার উপর যুলুম করলেও (বাযযার)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা- মাতার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলা।
তায়সাল ইবনে মায়্যাস (র) আমি যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিলাম। আমি কিছু পাপকাজ করে বসি যা আমার মতে কবীরা গুনাহর শামিল। আমি তা ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, এই এই ব্যাপার। তিনি বলেন, এগুলো কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়। কবীরা গুনাহ নয়টিঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) নরহত্যা, (৩) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন, (৪) সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে যেনার মিথ্যা অপবাদ রটানো, (৫) সূদ খাওয়া, (৬) ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, (৭) মসজিদে ধর্মদ্রোহী কাজ করা, (৮) ধর্ম নিয়ে উপহাস করা এবং (৯) সন্তানের অসদাচরণ যা পিতা-মাতার কান্নার কারণ হয়। ইবনে উমার (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি কি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি তাই চাই। তিনি বলেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম, আমার মা জীবিত আছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তুমি তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকো (তাবারীর তাফসীর, আবদুর রাযযাক আল-খারাইতীর মাসাবিউল আখলাক)। হিশাম ইবনে উরওয়া (র) “তাদের জন্য মায়া-মমতার পক্ষপুট বিস্তার করে দাও”(১৭ : ২৪) শীর্ষক আয়াত প্রসংগে তিনি বলেন, তারা যে জিনিসই পছন্দ করেন, তাতে বাধা দিও না (তাবারী)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতার প্রতিদান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ সন্তানের পক্ষে তার পিতার প্রতিদান শোধ করা সম্ভব নয়। তবে সে তাকে দাসরূপে পেয়ে ক্রয় করে দাসত্বমুক্ত করে দিলে তার প্রতিদান হতে পারে (মুসলিম, দারিমী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, তাহাবী)। আবু বুরদা (র) তিনি ইবনে উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। ইয়ামনের এক ব্যক্তি তার মাকে তার পিঠে বহন করে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিল আর বলছিল, “আমি তার জন্য তার অনুগত উটতুল্য+আমি তার পাদানিতে আঘাতপ্রাপ্ত হলেও নিরুদ্বেগে তা সহ্য করি”। অতঃপর সে ইবনে উমার (রাঃ)-কে বললো, আমি কি আমার মাতার প্রতিদান দিতে পেরেছি বলে আপনি মনে করেন? তিনি বলেন, নাসাঈ, তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও হয়নি। অতঃপর ইবনে উমার (রাঃ) তাওয়াফ করলেন। তিনি মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে দুই রাকআত নামায পড়ার পর বলেন, হে আবু মূসার পুত্র প্রতি দুই রাকআত নামায পূর্ববর্তী পাপের কাফফারা (বায়হাকী, কানযুল উম্মাল)। আবু হুরায়রা (রাঃ) মারওয়ান তাকে তার স্থলাভিষিক্ত করেছিল এবং তিনি তখন যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে অবস্থান করতেন। তিনি একটি ঘরে বাস করতেন এবং তার মা আর একটি ঘরে বাস করতেন। যখন তিনি ঘর থেকে বের হতেন তখন তার মায়ের দরজায় দাঁড়িয়ে বলতেন, “আসসালামু আলাইকে ইয়া উম্মাতাহ ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” (মা! আপনার প্রতি শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। তার মা বলতেন, “ওয়া আলাইকা ইয়া বুনাইয়্যা ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” (হে পুত্ৰ! তোমার উপরও শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)। তিনি পুনরায় বলতেন, আল্লাহ “আপনার প্রতি দয়া করুন যেভাবে আপনি আমার শৈশবকালে আমাকে লালন-পালন করেছেন”। তার মা বলতেন, “আল্লাহ তোমার প্রতিও দয়া করুন যেরূপ আমার বার্ধক্যে তুমি আমার প্রতি সদ্ব্যবহার করছো”। অতঃপর তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখনও অনুরূপ বলতেন (আবু দাউদ)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হিজরতের উদ্দেশ্যে বায়আত হওয়ার জন্য এক ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে কান্নারত অবস্থায় ত্যাগ করে নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো। তিনি বলেনঃ তুমি তাদের নিকট ফিরে যাও এবং তাদেরকে যেমন কাঁদিয়ে এসেছে তেমনি তাদের মুখে গিয়ে হাসি ফুটাও (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আবু তালিব কন্যা উম্মে হানী (রাঃ)-র মুক্তদাস আবু মুররা (র) তিনি আকীক নামক স্থানে অবস্থিত আবু হুরায়রা (রাঃ)-র সাথে তার খামার বাড়ীতে একই বাহনে চরে গমন করেন। তিনি তার বাড়িতে পৌঁছে উচ্চস্বরে বলেন, আলাইকিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ইয়া উম্মাতাহ। তার মা বলেন, ওয়া আলাইকাস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আবার আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রহিমাকিল্লাহু কামা রব্বায়তানী সাগীরা। তার মা বলেন, ইয়া বুনাইয়্যা ওয়া আনতা জাযাকান্নাহু খায়রান ওয়া রাদিয়া আনকা কামা বারারতানী কাবীরা (বাযযার)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার পরিণতি।
আবু বাকরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মকগুলি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করবো না? কথাটি তিনি তিনবার বলেন। সাহাবাগণ বলেন, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা (শিরক) এবং পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ। তিনি হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেনঃ এবং মিথ্যা বলা। তিনি এ কথাটি বারবার বলছিলেন। আমি মনে মনে বললাম, আহা! তিনি যদি ক্ষান্ত হতেন (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)। মুগীরা ইবনে শোবা (রাঃ)-র সচিব ওয়াররাদ মুয়াবিয়া (রাঃ) তাকে পত্র লিখলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখে তুমি যা শুনেছো তা আমাকে লিখে পাঠাও। ওয়াররাদ বলেন, মুগীরা (রাঃ) আমার দ্বারাই লিখালেন এবং আমি স্বহস্তে লিখলাম। আমি তাকে “বেশী যাচঞা করতে, অর্থের অপচয় করতে এবং গুজবে কান দিতে নিষেধ করতে শুনেছি” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।
আবু তোফাইল (র) আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী (সাঃ) কি কোন বিশেষ ব্যাপার আপনাকে বলেছেন, যা সর্বসাধারণকে বলেননি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অন্য কাউকে বলেননি এমন কোন বিশেষ কথা একান্তভাবে আমাকে বলেননি। অবশ্য আমার তরবারির খাপের মধ্যে যা আছে ততটুকুই। অতঃপর তিনি একখানি লিপি বের করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অপর কারো নামে পশু জবাই করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি জমির সীমানা চিহ্ন চুরি করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ (মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ)।
অনুচ্ছেদঃ পাপাচার ব্যতীত অন্য সকল ব্যাপারে পিতা-মাতার অনুগত থাকা।
আবু দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে নয়টি ব্যাপারে ওসিয়াত করেছেনঃ (১) আল্লাহর সাথে কিছু শরীক করো নাসাঈ, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা অগ্নিদগ্ধ করা হয়। (২) ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ত্যাগ করো নাসাঈ, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ত্যাগ করবে তার সম্পর্কে আমার কোন দায়িত্ব নাই। (৩) মদ্যপান করো নাসাঈ, কেননা তা সকল অনাচারের চাবি। (৪) তোমার পিতা-মাতার আনুগত্য করবে, তারা যদি তোমাকে দুনিয়া ছাড়তেও আদেশ করেন তবে তাই করবে। (৫) শাসকদের সাথে বিবাদে জড়াবে নাসাঈ, যদিও দেখো যে, তুমিই তুমি। (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করো নাসাঈ, যদিও তুমি ধ্বংস হও এবং তোমার সঙ্গীরা পলায়ন করে। (৭) তোমার সামর্থ্য অনুসারে পরিবারের জন্য ব্যয় করো। (৮) তোমার পরিবারের উপর থেকে লাঠি তুলে রাখবে না এবং (৯) তাদের মধ্যে মহামহিম আল্লাহর ভয় জাগ্রত রাখবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি হিজরত করার জন্য আমার পিতা-মাতাকে কান্নারত রেখে আপনার নিকট বায়আত হতে এসেছি। তিনি বলেনঃ তুমি তাদের নিকট ফিরে যাও এবং তাদেরকে যেভাবে কাদিয়েছে সেভাবে তাদের মুখে হাসি ফোটাও (মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযী)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি জিহাদে যাত্রার উদ্দেশ্যে নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ যাও, তাদের মধ্যে (সেবাযত্নের) জিহাদে প্রবৃত্ত হও (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতাকে পেয়েও যে ব্যক্তি বেহেশত লাভ করতে পারেনি।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তার নাক ধুলিমলিন হোক! তার নাক ধুলিমলিন হোক!! তার নাক ধুলিমলিন হোক!!! সাহাবাগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! কার নাক? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেলো অথচ সে দোযখে গেলো (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতার সাথে সদাচার করে আল্লাহ তার আয়ু বৃদ্ধি করেন।
মুআয (র) নবী (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করলো তার জন্য শুভ সংবাদ। আল্লাহ তার আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করেন (হাকিম, তাবারানী, মুসনাদ আবু ইয়ালা)।
অনুচ্ছেদঃ কেউ নিজ মুশরিক পিতার জন্য যেন ক্ষমা প্রার্থনা না করে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমার জীবদ্দশায় তাদের কোন একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদের প্রতি (বিরক্তিসূচক) উহ শব্দটিও বলো নাসাঈ, ....যেমন তারা তোমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছে” (১৭ : ২৪)। উক্ত আয়াত “মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও ঈমানদারদের জন্য শোভনীয় নয়, যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হয়, তাদের কাছে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যাবার পরও যে, তারা দোযখবাসী” (৯ : ১১৩) এই আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে (তাবারানী, আদ-দুররুল মানসুর)।
অনুচ্ছেদঃ মুশরিক পিতার সাথেও সদাচার করতে হবে।
সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) আমার সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের চারটি আয়াত নাযিল হয়। (১) আমার মা শপথ করেন যে, আমি যতক্ষণ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে ত্যাগ না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পানাহার করবেন না । এই প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেনঃ “পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে চাপ দেয় যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেইবনে মাজাহ, তবে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে” (৩১ : ১৫)। (২) একখানি তরবারি আমার পছন্দ হলে আমি তা গ্রহণ করে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এটা দান করুন। তখন নাযিল হলো, “লোকে আপনার নিকট যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যসম্ভার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে” (৮ : ১)। (৩) আমি রোগাক্রান্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখতে আসেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার সম্পদ বণ্টন করে দিতে চাই। আমি কি আমার অর্ধেক সম্পত্তি সম্পর্কে ওসিয়াত করবো? তিনি বলেনঃ না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি নিরুত্তর থাকলেন। শেষে এক-তৃতীয়াংশ ওসিয়াত করা বৈধ করা হয়। (৪) আমি কতক আনসারীর সাথে মদপান করি। তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি উটের নীচের চোয়ালের হাড় আমার নাকের উপর ছুড়ে মারে। আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে মহামহিম আল্লাহ মদ্যপান হারাম হওয়া সংক্রান্ত আয়াত (৫ : ৯০-৯১) নাযিল করেন (মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, তিরমিযী, তাবারানী)। আসমা বিনতে আবু বাকর (রাঃ) আমার মা নবী (সাঃ)-এর যুগে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট অবস্থায় আমার কাছে আসেন। আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তার সাথে আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। ইবনে উয়ায়না (র) বলেন, এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না” (৬০ : ৮) (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। ইবনে উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) একটি লাল বর্ণের রেশমী চাদর বিক্রি হতে দেখে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা আপনি ক্রয় করুন। জুমুআর দিন ও বহিরাগত প্রতিনিধি দলসমূহের সাথে সাক্ষাতদানকালে তা আপনি পরতে পারবেন। তিনি বলেনঃ তা সেইসব লোকই পরবে যাদের (আখেরাতে) কোন অংশ নাই। পরে অনুরূপ লাল বর্ণের কিছু সংখ্যক রেশমী চাদর নবী (সাঃ)-এর দরবারে আসে। তিনি তার একটি উমারের কাছে পাঠিয়ে দেন। উমার (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটা পরিধান সম্পর্কে যা বলেছেন, তারপর আমি তা কিভাবে পরতে পারি! তিনি বলেনঃ আমি তা তোমার পরিধানের জন্য পাঠাইনি, বরং তুমি তা বিক্রি করবে অথবা কাউকে পরতে দিবে। উমার (রাঃ) তা তার জনৈক মক্কাবাসী ভাইয়ের জন্য পাঠিয়ে দিলেন, যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, নাসাঈ)।
অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন নিজ পিতা-মাতাকে গালি না দেয়।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের একটি হলো নিজ পিতা-মাতাকে গালি দেয়া। সাহাবীগণ বলেন, কেউ কি নিজ পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে! তিনি বলেনঃ সে অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দিবে, প্রতিশোধ স্বরূপ ঐ ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দিবে (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (র) পিতা-মাতাকে গলি শুনানো আল্লাহর নিকট একটি কবীরা গুনাহ (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)।
অনুচ্ছেদ পিতা-মাতার অবাধ হওয়ার শাস্তি।
আবু বাকরা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার অপরাধের শাস্তি অন্যান্য পাপের চেয়ে দ্রুত অপরাধীর উপর কার্যকর হয়। পরকালের শাস্তি তো আছেই (দারেমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা ব্যভিচার, মদ্যপান ও চুরি সম্পর্কে কি বলো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বলেনঃ এগুলি জঘন্য পাপাচার এবং এগুলির জন্য ভীষণ শাস্তি অবধারিত আছে। আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে মারাত্মক কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না? মহান আল্লাহর সাথে শীরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্যাচারী হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসে বলেনঃ এবং মিথ্যাচার (বাযযার, তাবারানী)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতার কান্না।
তায়সালা (র) তিনি ইবনে উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ পিতা-মাতাকে কাঁদানো এবং তাদের অবাধ্যাচরণ কবীরা গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত (৮ নং হাদীসের বরাত)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা-মাতার দোয়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোন সন্দেহ নাই। (১) মযলুম বা নির্যাতিতের দোয়া, (২) মুসাফিরের দোয়া এবং (৩) সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া (দারিমী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আবু দাউদ) এবং জুরাইজ সংশ্লিষ্ট শিশু ব্যতীত আর কোন মানব-সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্র দোলনায় কথা বলেনি। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জুরাইজ কে? তিনি বলেনঃ জুরাইজ ছিলেন একজন উপাসনালয়বাসী সংসারত্যাগী দরবেশ। তার উপাসনালয়ের প্রান্তেই এক রাখাল বাস কারতো। গ্রাম্য এক নারী সেই রাখালের কাছে যাতায়াত করতো। একদিন জুরাইজের মা তার নিকট এসে বলেন, হে জুরাইজ! তিনি তখন নামাযরত ছিলেন। তিনি নামাযরত অবস্থায় মনে মনে বলেন, আমার মা এবং আমার নামায। তিনি তার নামাযকে অগ্রাধিকার দিলেন। দ্বিতীয়বার তার মা জোরে ডাক দিলে তিনি মনে মনে বলেন, আমার মা ও আমার নামায। তিনি মায়ের উপর নামাযকে অগ্রাধিকার দিলেন। তৃতীয়বার চীৎকার দিয়ে তার মা তাকে ডাকলে তিনি বলেন, আমার মা ও আমার নামায। তিনি নামাযকে অগ্রাধিকার দেয়াই সমীচীন ভাবলেন। জুরাইজ তার ডাকে সাড়া না দিলে তিনি তাকে অভিশাপ দিলেনঃ “তোকে পতিতা নারীদের মুখ না দেখিয়ে যেন আল্লাহ তোর মৃত্যু না ঘটান”। অতঃপর তার মা চলে গেলেন। ঘটনাক্রমে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু সন্তানসহ সেই নারীকে রাজ-দরবারে উপস্থিত করা হলো। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, কার ঔরসে এ শিশুর জন্ম? সে বললো, জুরাইজের ঔরসে। রাজা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, উপাসনালয়বাসী জুরাইজ? সে বললো, হাঁ। রাজা নির্দেশ দিলেন, উপাসনালয়টি ভেঙ্গে দাও এবং তাকে আমার নিকট হাযির করো। তারা কুঠারাঘাতে তার উপাসনালয়টি ভূপাতিত করলো এবং তার দুই হাত রশি দিয়ে তার ঘাড়ের সাথে বেঁধে তাকে নিয়ে রাজ-দরবারে চললো। পথে পতিতা নারীরা সামনে পড়লো, তিনি তাদের দেখে মৃদু হাসলেন। তারাও তাকে লোকজন পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখলো। রাজা তাকে বলেন, সে কি ধারণা করে? জুরাইজ বলেন, সে কী ধারণা করে? রাজা বলেন, তার দাবি এই যে, এ শিশু আপনার ঔরসজাত। জুরাইজ পতিতাকে বলেন, সত্যিই কি তোমার এই ধারণা? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেন, কোথায় সেই শিশু? তারা বললো, ঐ যে তার মায়ের কোলে । তিনি তার সামনে গেলেন এবং বললেন, কে তোমার পিতা? শিশুটি বললো, গরুর রাখাল। এবার রাজা বলেন, আমরা কি আপনার খানকাহ সোনা দ্বারা নির্মাণ করে দিবো? তিনি বলেন, না। রাজা পুনর্বার বলেন, তবে রূপা দ্বারা? তিনি বলেন, না। রাজা বলেন, তবে আমরা সেটিকে কি করবো? তিনি বলেন, তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, তবে আপনার মৃদু হাসির কারণ কি? তিনি বলেন, মৃদু হাসির পেছনে একটা ঘটনা আছে যা আমার জানা ছিল। আমার মায়ের অভিশাপই আমাকে স্পর্শ করেছে। অতঃপর তিনি সকল ঘটনা তাদেরকে অবহিত করেন (বুখারী, মুসলিম)।
অনুচ্ছেদঃ খৃস্টান ধর্মাবলম্বী মাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেয়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) আমার পরিচিত যে কোন ইহুদী বা খৃস্টান আমাকে ভালোবাসে। আমি চাইতাম যে, আমার মা ইসলাম গ্রহণ করুন। কিন্তু তিনি তাতে রাজী হতেন না। আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলাম কিন্তু তিনি তাতে রাজী হননি। আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি তার জন্য দোয়া করুন। তিনি দোয়া করলেন। আমি তার নিকট গিয়ে দেখি, তিনি ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে আছেন। তিনি বলেন, হে আবু হুরায়রা! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি নবী (সাঃ)-কে তা অবগত করে বললাম, আমার জন্য এবং আমার মায়ের জন্য দোয়া করুন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার বান্দা আবু হুরায়রা এবং তার মা, তাদের উভয়কে জনপ্রিয় করো” (মুসলিম, আবু দাউদ)।
অনুচ্ছেদঃ মৃত পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
আবু উসাইদ (রাঃ) আমরা নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বলেনঃ হাঁ, চারটি উপায় আছে। (১) তাদের জন্য দোয়া করা, (২) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, (৩) তাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ পূর্ণ করা এবং (৪) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয় (দারিমী, ইবনে মাজাহ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্ৰভু! এটা কি জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে (ইবনে মাজাহ, মুওয়াত্তা মালিক)। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (র) এক রাতে আমরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! আবু হুরায়রাকে, আমার মাকে এবং তাদের দু’জনের জন্য যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাদের সকলকে তুমি ক্ষমা করো”। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (র) বলেন, আমরা তার দোয়ায় শামিল হওয়ার আশায় তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ বান্দা মারা যাবার সাথে সাথে তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি কাজ ব্যতীত। (১) সদকায়ে জারিয়া, (২) উপকারী জ্ঞান এবং (৩) সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে (মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী, নাসাঈ)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা মারা গেছেন। তিনি কোনরূপ ওসিয়াত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান-খয়রাত করি তবে তাতে তার কোন উপকার হবে কি? তিনি বলেনঃ হাঁ (বুখারী, দারিমী, তিরমিযী, নাসাঈ)।
অনুচ্ছেদঃ পিতা যাদের সাথে সদাচার করতেন তাদের সাথে সস্তানের সদাচার।
ইবনে উমার (রাঃ) এক বেদুইন সফরে গেলো। তার পিতা উমার (রাঃ)-এর বন্ধু ছিলেন। বেদুইন বললো, আপনি কি অমুকের পুত্র নন? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি তার সাথে আনা একটি গাধা বেদুইনকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং নিজের মাথার পাগড়ী খুলে তাকে দান করলেন। তার এক সঙ্গী বললো, তাকে দু’টি দিরহাম দিলে কি যথেষ্ট হতো না? তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ পিতার বন্ধুত্ব অটুট রাখো, তা ছিন্ন করো না। অন্যথায় আল্লাহ তোমার (ঈমানের) আলো নিভিয়ে দিবেন (মুসলিম, আবু দাউদ)। ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হলো, তার পিতার বন্ধু পরিবারের প্রতি তার সদ্ব্যবহার (মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)।
অনুচ্ছেদঃ তোমার পিতা যাদের সাথে সম্পর্ক রাখতেন, তুমি তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। অন্যথায় তোমার ঈমানের আলো নিভে যাবে।
সাদ ইবনে উবাদা আয-যুরাকী (র) তার পিতা বলেছেন, আমি মদীনার মসজিদে আমর ইবনে উসমানের সাথে বসা ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তার ভাতিজার কাঁধে ভর করে আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি মজলিস অতিক্রম করে যেতে যেতে ফিরে তাকালেন এবং আবার সেখানে ফিরে এলেন। তিনি বলেন, আমর ইবনে উসমান! তুমি কি চাও? তিনি দুই বা তিনবার একথা বলেন। তারপর বলেন, সেই সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন! নিঃসন্দেহে আল্লাহর কিতাবে (তাওরাত) দুইবার বলা হয়েছেঃ তোমার পিতা যাদের সাথে সম্পর্ক রাখতো, তাদের সাথে তুমি সম্পর্ক ছিন্ন করো না। অন্যথায় তাতে তোমার ঈমানের নূর নির্বাপিত হবে।
অনুচ্ছেদঃ বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা উত্তরাধিকার সূত্রে আসে।
মহানবী (সাঃ)-এর এক সাহাবী (রাঃ) তোমাদের জন্য যথেষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা আসে উত্তরাধিকার সূত্রে। (বাযযার, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ পিতার নাম নিও নাসাঈ, তার আগে বসো না এবং তার আগে আগে চলো না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) দুই ব্যক্তিকে দেখে তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেন, ইনি তোমার কি হন? সে বললো, তিনি আমার পিতা। তিনি বলেন, তাকে নাম ধরে ডেকো না, তার আগে আগে চলো না এবং তার আগে বসো না (বাযযার, ইবনুস সুন্নী)।
অনুচ্ছেদঃ পিতাকে কি উপনামে ডাকা যায়?
শাহর ইবনে হাওশাব (র) আমরা ইবনে উমার (রাঃ)-র সাথে বের হলাম। তার পুত্র সালেম (র) তাকে বলেন, হে আবদুর রহমানের পিতা! সালাম! ইবনে উমার (রাঃ) হাফসের পিতা উমার (রাঃ) বিচার মীমাংসা করেছেন।