10. মেহমানদারি
অনুচ্ছেদঃ মেহমানের সমাদর এবং সশরীরে তাদের খেদমত করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এলেন। তিনি (খাদ্যের জন্য) তার স্ত্রীগণের নিকট পাঠান। তারা বলেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নাই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কে তার মেহমানদারি করবে? আনসারদের একজন বলেন, আমি। তিনি তাকে নিয়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের রাতের খাবার ছাড়া আমাদের আর কিছু নাই। আনসারী বলেন, তুমি খাবার তৈরি করো, বাতি ঠিক করো এবং তোমার বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন প্রবোধ দিয়ে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিও। মহিলা তার খাবার তৈরি করলেন, বাতি ঠিকঠাক করলেন এবং তার বাচ্চাদের ঘুম পাড়ালেন। অতঃপর তিনি উঠে বাতি ঠিক করার ছুতোয় তা নিভিয়ে দিলেন। তারা এমন ভাব দেখালেন যে, তারা যেন মেহমানের সাথে আহার করছেন। অথচ রাতে তারা উপোসই থাকলেন। ভোর হলে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপে হেসেছেন বা অবাক হয়েছেন এবং আয়াত নাযিল করেছেনঃ “তারা অভাবগ্রস্ত হলেও নিজেদের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। (সূরা হাশর : ৯)
অনুচ্ছেদঃ মেহমানকে প্রদত্ত পাথেয়।
আবু শুরাইহ আল-আদাবী (রাঃ) যখন নবী (সাঃ) বলেছেন, তখন আমার দুই কান শুনেছে এবং দুই চোখ দেখেছে। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন পুরস্কারসহ মেহমানের আপ্যায়ন ও সমাদর করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তার পুরস্কার কি? তিনি বলেনঃ এক রাত ও এক দিনের জন্য উন্নত খাবার পরিবেশন করা। আর তিন দিন পর্যন্ত সাধারণ মেজবানীই যথেষ্ট। এর চেয়েও বেশী দিন অবস্থান করলে সেই মেহমানদারি হলে বদান্যতা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ মেহমানদারি তিন দিন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মেহমানদারি করতে হবে তিন দিন। তার অধিক করা হলে তা দান হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ মেহমান আপ্যায়নকারীর অসুবিধা করে থাকবে না।
আবু শুরায়হ আল-কাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অন্যথা নীরব থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর-ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। তার বিশেষ মেহমানদারি হচ্ছে এক দিন এক রাত, আর স্বাভাবিক মেহমানদারি হচ্ছে তিন দিন। তার অতিরিক্ত যা করা হবে তা বদান্যতারূপে গণ্য হবে। আর মেহমানের পক্ষে মেজবানের বাড়িতে এতো অধিক দিন অবস্থান করা উচিৎ নয় যাতে সে অসুবিধা বোধ করে। -(আহমাদ, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ মেহমান ভোরবেলা আপনার আপনার উপস্থিত হলে।
মিকদাম আবু কারীমা আস-সামী (র) নবী (সাঃ) বলেছেন রাতের বেলা আগত মেহমানের মেহমানদারি করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আর রাতের বেলা তার নিকট মেহমান অবস্থান করলে, সে তার জন্য ঋণস্বরূপ। এখন সে ইচ্ছা করলে এই ঋণ (মেহমানকে পানাহার করানো) পরিশোধ করুক অথবা চাইলে তা ত্যাগ করুক। -(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারিমী, হাকিম, তাহাবী, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ বঞ্চিত অবস্থায় মেহমানের ভোর হলে।
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে বাইরে পাঠিয়ে থাকেন। আমরা এমন সব গোত্রের এলাকায় অবতরণ করি যারা আমাদের মেহমানদারি করে না। এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যদি তোমরা কোন গোত্রের এলাকায় অবতরণ করো এবং তারা সাধ্যমত তোমাদের জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করে তবে তা সাদরে গ্রহণ করো। কিন্তু যদি তারা (অনুরূপ কোন ব্যবস্থা) না করে, তবে তাদের থেকে এতোটা হক আদায় করে নাও যা দেয়া তাদের উচিত ছিল। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ সশরীরে মেহমানের খেদমত করা।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) আবু উসাইদ সাইদী (রাঃ) তার বাসর রাতে নবী (সাঃ)-কে দাওয়াত দিলেন। তার নববধূ সেদিন তাদের আহার পরিবেশন করেন। স্ত্রী বলেন, আপনারা কি জানেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য সেদিন আমি ছিলে-চেঁছে কি পরিবেশন করেছিলাম? রাতের বেলা আমি তাঁর জন্য টাটকা খেজুর একটি মাটির পাত্রে ভিজিয়ে রেখেছিলাম -(বুখারী, মুসলিম)।
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি মেহমানের সামনে আহার পরিবেশন করে নিজে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলে।
নুআইম ইবনে কানাব (র) আমি আবু যার (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে ঘরে পেলাম না। আমি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু যার (রাঃ) কোথায়? তিনি বলেন, কোন কাজে বাইরে গিয়েছেন, এখনই আপনার সাক্ষাতে এসে যাবেন। অতএব আমি তার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। তিনি দু’টি উটসহ আসলেন, যার একটির পিছনে অপরটি বাধা এবং প্রতিটির ঘাড়ে ছিল একটি করে মশক। তিনি সেই দু’টি নামালেন, অতঃপর এলেন। আমি বললাম, হে আবু যার! যাদের সাথে আমি দেখা-সাক্ষাত করি তাদের মধ্যে আমার কাছে আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় কেউ নাই। আবার তাদের মধ্যে আপনার চেয়ে অধিক অপ্রিয়ও আমার কাছে কেউ নাই। তিনি বলেন, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কোরবান হোক। এই দু’টি বিপরীত জিনিস একত্র হলো কি করে। তিনি বলেন, আমি জাহিলী যুগে একটি কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিয়েছি। আমার আশংকা হয় যে, আমি আপনার সাথে সাক্ষাত করলেই আপনি বলবেন, তোমার তওবা করার বা নিস্কৃতি লাভের কোন সুযোগ নাই। কিন্তু আমি আকাঙ্খা করতাম যে, আপনি বলবেন, তোমার তওবা করার ও নিস্তার লাভের উপায় আছে। তিনি বলেন, তুমি কি এটি জাহিলী যুগে করেছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, অতীতের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো। মহিলা অসম্মত হলো। তিনি পুনরায় তাকে আদেশ করলে এবারও সে অস্বীকার করলো। শেষে দু’জনের কথা কাটাকাটির স্বর উচ্চ মাত্রায় পৌঁছলো। তিনি বলেন, এই যে! তোমরা তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্তব্য গণায় ধরো না। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ “নিশ্চয় নারী হচ্ছে পাঁজরের বাঁকা হাড়। তুমি যদি তা সোজা করতে চাও তবে তাকে খানখান করে ফেলবে। আর তুমি যদি তাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করে যাও, তবুও তাদের বাঁকা স্বভাব বিদ্যমান থাকবেই”। মহিলাটি চলে গেলো এবং সারীদ (ঝোলে ভিজানো রুটি) নিয়ে বিড়ালের মত চুপিসারে ফিরে এলো। আবু যার (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি খাও, আমার কথা চিন্তা করো না। আমি রোযা আছি। অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ধীরেসুস্থে নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি আহার করলেন। আমি বললাম, ইন্না লিল্লাহ! আমি কখনও আশংকা করিনি যে, আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলবেন! তিনি বলেন, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কোরবান হোক! তুমি সাক্ষাত করার সময় থেকে আমি তোমাকে কোন মিথ্যা কথা বলিনি। আমি বললাম, আপনি কি আমাকে বলেননি যে, আপনি রোযাদার? তিনি বলেন, হাঁ, আমি এই মাসে তিন দিন রোযা রেখেছি। আমার জন্য তার সওয়াব লেখা হয়েছে এবং আমার জন্য খাদ্য গ্রহণ হালাল হয়ে গেছে। (নাসাঈ, দারিমী, আহমাদ হা/২১৬৬৫)
অনুচ্ছেদঃ কারো নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করা।
সাওবান (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ “কোন ব্যক্তির ব্যয়কৃত সর্বোত্তম দীনার (মুদ্রা) হলো সেটি যা সে তার পরিবারের জন্য খরচ করে, যা সে আল্লাহর পথের (জিহাদকারী) তার সঙ্গী-সাথীদের জন্য খরচ করে এবং যা সে আল্লাহর পথে (জিহাদে) তার জন্তুযানের জন্য খরচ করে”। অধস্তন রাবী আবু কিলাবা (র) বলেন, (ঊর্ধতন রাবী) পরিবার-পরিজনের কথা প্রথমে উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি তার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততির জন্য ব্যয় করে মহান আল্লাহ তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল না করা পর্যন্ত, তার চেয়ে অধিক উত্তম পুরস্কার লাভের যোগ্য আর কে হতে পারে? (মুসলিম) আবু মাসউদ আল-বদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যে সম্পদ ব্যয় করে তা তার জন্য দান-খয়রাত হিসেবে গণ্য। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ) জাবের (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তুমি নিজের জন্য খরচ করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তোমার খাদেমের জন্য বা সন্তানের জন্য খরচ করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি আছে। তিনি বলেনঃ তা আল্লাহর পথে রেখে দাও। আর তা হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট দীনার। (আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ; আবু হুরায়রা সূত্রে) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি চারটি দীনারের (স্বর্ণ মুদ্রা) মধ্য থেকে একটি দীনার দীন-দুঃখীকে দান করলে, একটি দীনার দ্বারা গোলামকে দাসত্বমুক্ত করলে, একটি দীনার আল্লাহর পথে খরচ করলে এবং একটি দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করলে। এগুলোর মধ্যে যে দীনারটি তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করেছে সেটিই সবোৰ্ত্তম। -(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, হাকিম, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক জিনিসের সওয়াব আছে, এমনকি কোন ব্যক্তির নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়া গ্রাসেও।
সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বলেনঃ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ করো, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেয়া হবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও তার জন্যও। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমাদের বরকতময় মহামহিম প্রভু রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? (কে আছে এমন, যে আমার কাছে দোয়া করবে এবং আমি তার দোয়া কবুল করবো)? কে আছে এমন, যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে এবং আমি তা দান করবো? কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করবো। -(বুখারী, মুসলিম, দারিমী)
অনুচ্ছেদঃ গীবতের উদ্দেশ্যে নয়, বরং পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির এরূপ বলাঃ অমুক কৃষ্ণকায়, খর্বাকৃতি বা দীর্ঘদেহী।
আবু রুহম (রাঃ) তিনি ছিলেন বৃক্ষতলে (হুদাইবিয়ায়) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট বাইআতকারী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, আমি তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করি। এক রাতে আমি নৈশ প্রহরায় দাঁড়ালাম। আমি তাঁর নিকটেই পাহারা দিচ্ছিলাম। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম এবং জেগে থাকতে চেষ্টা করলাম। আমার জন্তুযান তাঁর জন্তুযানের কাছাকাছি এসে পড়লে আমার আশংকা হলো, কখন জানি আমার জন্তুযান আরও কাছাকাছি চলে এলে পাদানিতে রাখা তাঁর পায়ে আমার জন্তুযানের ধাক্কায় ব্যাথা পান। তাই আমি আমার জন্তুযানকে হটাতে থাকলাম। শেষে রাতের কোন এক অংশে আমার চোখে তন্দ্রা এলো এবং আমার জন্তুযান রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্তুযানকে ধাক্কা দিলো। তখনো তাঁর পা পদানিতে ছিল এবং তা আমার পায়ের সাথে লেগে গেলো। কিন্তু তবুও আমার ঘুম ভাংলো না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ‘সজাগ হও’ কথায় আমার ঘুম ছুটলো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সামনে চলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে গিফার গোত্রের কে কে যুদ্ধে যোগদান থেকে পেছনে রয়ে গেছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ ঐ যে গৌর বর্ণ দীর্ঘদেহী যাদের চোয়ালে সামান্য দাড়ি আছে তারা কি করেছে? আমি তাদের পেছনে থেকে যাওয়ার কথা তাঁকে জানালাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ঐ যে কৃষ্ণবর্ণ খর্বাকৃতির লোকগুলো কি করেছে, শাবকা শাদাখ নামক পানির উৎসে যাদের পশুপাল আছে? আমি গিফার গোত্রের মধ্যে আমার স্মৃতিচারণ করলাম, কিন্তু সেই গোত্রে তেমন কাউকে স্মরণ করতে পারলাম না। আমার স্মরণ হলো যে, তারা তো আসলাম গোত্রের লোক। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তারা তো আসলাম গোত্রের লোক। তিনি বলেনঃ তাদের কোন সুচতুর কর্মঠ লোককে তার জন্তুযানে আরোহণ করিয়ে আল্লাহর রাস্তায় পাঠাতে তাদের কিসে বাধা দিলো? আমার একথা চিন্তা করতে কষ্ট হয় যে, কুরাইশ বংশীয় মুহাজিরগণ, আনসারগণ, গিফার গোত্রের লোক এবং আসলাম গোত্রের কেউ যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে পিছনে থেকে যাবে। (আহমাদ হা/১৯২৮২) আয়েশা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলো। তিনি বলেনঃ গোত্রের মন্দ লোক। অতঃপর সে ভেতরে প্রবেশ করলে তিনি তার সাথে প্রসন্ন বদনে সাক্ষাত করেন। (পরে) আমি তাঁকে বললে তিনি বলেনঃ আল্লাহ অশ্লীলভাষীকে এবং অশ্লীল আচরণকারীকে পছন্দ করেন না। (বুখারী, মুসলিম) আয়েশা (রাঃ) সাওদা (রাঃ) মুযদালিফার রাতে যাত্রা করার জন্য নবী (সাঃ)-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। সাওদা (রাঃ) ছিলেন মন্থর গতিসম্পন্ন স্থূলদেহী মহিলা। সুতরাং তিনি (সাঃ) তাকে অনুমতি দিলেন। -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ যিনি মনে করেন, ঘটনা বা উপমা বর্ণনা দোষের নয়।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন জিরানা নামক স্থানে গনীমতের মাল বন্টন করেন তখন সেখানে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড় হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন এক বান্দাকে এক সম্প্রদায়ের নিকট পাঠান। তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নির্যাতন করে আহত করে। তিনি তার কপাল থেকে রক্ত মুছছেন আর বলছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে তুমি ক্ষমা করো, কেননা তারা অজ্ঞ”। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি যেন দিব্যি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখতে পাচ্ছি, তিনি সেই কপাল মোছায় রত ব্যক্তির কাহিনী বর্ণনা করছেন। -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ গোপন রাখে।
আবুল হাইসাম (র) একদল লোক উকবা ইবনে আমের (রাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আমাদের কতক প্রতিবেশী আছে, যারা মদ্যপান করে এবং বদ কাজে লিপ্ত থাকে। আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে শাসকের নিকট অভিযোগ উত্থাপন করবো? তিনি বলেন, না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ দেখতে পেয়ে তা গোপন রাখলে সে যেন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সন্তানকে কবর থেকে তুলে জীবন দান করলো। -(আবু দাউদ, তাবারানী)
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির মন্তব্য লোক ধ্বংস হয়ে গেলো।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে বলতে শোন, লোকজন ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে (বুঝবে) সে সর্বাধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত। -(মুসলিম, আবু দাউদ, মালিক, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ মুনাফিককে ‘সায়্যিদ’ (নেতাবারানী) বলে সম্বোধন করবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (র) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা মুনাফিককে ‘নেতা’ বলো না। কেননা সে যদি তোমাদের নেতা হয়ে যায়, তাহলে তোমরা তোমাদের মহিমান্বিত প্রভুকে অসন্তুষ্ট করলে। (আবু দাউদ, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ কেউ অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনলে কি বলবে?
আদী ইবনে আরতাত (র) কখনো নবী (সাঃ)-এর কোন সাহাবীর পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করা হলে তিনি বলতেন, “হে আল্লাহ! তারা যা বলে সেজন্য আমাকে অভিযুক্ত করো না এবং তারা যে ব্যাপারে জ্ঞাত নয় সে ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করো”। (বাযযার) আবু কিলাবা (র) আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) আবু মাসউদ (রাঃ)-কে বলেন অথবা আবু মাসউদ (রাঃ) আবু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলেন, “অলিক ধারণা-অনুমান” সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, (তাবারানী) লোকটির কতই না মন্দ বাহন। (আবু দাউদ, আহমাদ, তাবাকাত ইবনে সাদ) আবদুল্লাহ ইবনে আমের (র) হে আবু মাসউদ! “তারা আন্দাজ-অনুমান করেছে” এরূপ কথা সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তা লোকের অত্যন্ত মন্দ বাহন। আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছিঃ মুমিন ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার সমতুল্য।
অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে যেন না বলে যে, সে তা জানে নাসাঈ, তা আল্লাহ জানেন।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তোমাদের কেউ যেন (তার অজ্ঞাত বিষয়ে মন্তব্য করার পর) না বলে, সে তা জানে নাসাঈ, আল্লাহ তা জানেন। অথচ আল্লাহর জ্ঞানে হয়তো অন্যরূপ আছে। সে যেন (ভাবছে) আল্লাহ যা জানেন না তা তাঁকে জানাচ্ছে। আল্লাহর কাছে তা (অর্থাৎ জিজ্ঞাসিত বিষয়ে অজ্ঞ হওয়া সত্বেও উত্তর দিতে চাওয়া) গুরুতর ব্যাপার।
অনুচ্ছেদঃ রংধনু।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) ছায়াপথ হলো আসমানের দরজাসমূহের মধ্যকার একটি দরজা এবং রংধনু হলো নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত হওয়ার পর নিরাপত্তার প্রতীক।
অনুচ্ছেদঃ ছায়াপথ।
আবুত তুফাইল (রাঃ) ইবনুল কাওয়া (র) আলী (রাঃ)-কে ছায়াপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তা হলো আসমানের প্রবেশদ্বার এবং নৃহের বন্যায় প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের জন্য আকাশের ঐ দ্বারই খুলে দেয়া হয়েছিল (৫৪ : ১১ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) রংধনু হলো পৃথিবীবাসীর জন্য মহাপ্লাবনের পর নিরাপত্তার প্রতীক এবং ছায়াপথ হলো আকাশের একটি দরজা, যা থেকে আকাশ বিদীর্ণ হবে।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি এভাবে বলতে অপছন্দ করেঃ হে আল্লাহ আমাকে তোমার রহমতের অবস্থান স্থলে রাখো।
আবুল হারিস কিরমানী (র) আমি এক ব্যক্তিকে আবু রাজা (র)-এর নিকট বলতে শুনেছি, আমি আপনাকে সালাম জানাচ্ছি এবং দোয়া করছি যেন আল্লাহ তাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থানে আপনাকে ও আমাকে একত্র করেন। তিনি বলেন, সেই সামর্থ্য কি কারো আছে? তিনি জিজ্ঞেস করেন, তাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থান কি? সে বললো, জান্নাত। আবু রাজা (র) বলেন, তুমি সঠিক বলোনি। লোকটি বললো, তবে তাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থান কি? তিনি বলেন, আমি বললাম, বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
অনুচ্ছেদঃ তোমরা কাল-প্রবাহকে গালি দিও না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, হায় সর্বনাশ কাল। কেননা কাল তো স্বয়ং আল্লাহ (সৃষ্ট)। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, নাসাঈ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, হায় সর্বনাশ কাল। মহা মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন, কাল তো আমিই (সৃষ্টি করেছি)। আমিই রাত ও দিন পাঠাই। যখন আমি চাইবো তাকে কবজা করবো। আর কেউ যেন আঙ্গুরকে কারম না বলে। কেননা কারম হলো মুমিন ব্যক্তি। -(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, দারিমী, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রস্থানকালে তার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে না তাকায়
মুজাহিদ (র) কোন ব্যক্তির প্রতি অপর ব্যক্তির তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকানো অথবা তার ফিরে যাবার সময় তার দিকে সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকানো অথবা তাকে জিজ্ঞেস করা, তুমি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে, এরূপ আচরণ আপত্তিকর।
অনুচ্ছেদঃ এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির এরূপ বলা, তোমার সর্বনাশ হোক।
আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) এক ব্যক্তিকে কোরবানীর একটি উট হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে বলেনঃ উটের পিঠে আরোহণ করো। লোকটি বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি পুনরায় বলেন, এর পিঠে আরোহণ করো। সে বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি বলেনঃ তুমি এর পিঠে আরোহণ করো। সে বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি বলেনঃ তোমার অকল্যাণ হোক, তুমি এর পিঠে আরোহণ করো। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে খুজাইমাহ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি তাকে বললো, আমি রুটি ও গোশত খেয়েছি। আমাকে কি উযু করতে হবে? তিনি বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়। তুমি কি পাক জিনিস আহার করে উযু করবে? জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হুনাইন যুদ্ধের দিন জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তিনি বিলালের কোলে (কাপড়ের মধ্যে রাখা) সোনা বিতরণ করছিলেন। এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, ইনসাফ করুন। আপনি ইনসাফ করছেন না। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়। আমি যদি ইনসাফ না করি তবে ইনসাফ আর কে করবে? উমার (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিকের ঘাড়ে আঘাত হানি (হত্যা করি)। তিনি বলেনঃ সে তার সঙ্গী-সাথীসহ এখানে আছে। তারা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। তারা ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যাওয়ার গতিতে দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। -(বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ) বশীর ইবনে মাবাদ আস-সাদূসী (রাঃ) তার পূর্বনাম ছিল জাহম ইবনে মাবাদ। তিনি নবী (সাঃ)-এর নিকট হিজরত করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেঃ তোমার নাম কি? তিনি বলেন, জাহম (দুর্দশা)। তিনি বলেনঃ তুমি হচ্ছে বশীর (সুসংবাদদাতাবারানী)। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে হাঁটছিলাম। তিনি মুশরিকদের কবরস্থানের নিকট পৌঁছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ হারিয়েছে। তিনি তিনবার এরূপ বলেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদের কবরস্থানে পৌছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি তিনবার এরূপ বলেন। তখন নবী (সাঃ)-এর দৃষ্টি এক ব্যক্তির উপর পতিত হলো। সে জুতা পরিহিত অবস্থায় কবরস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেনঃ হে জুতাধারী! তোমার জুতা খুলে ফেলে দাও। লোকটি তাকালো। সে নবী (সাঃ)-কে দেখে তৎক্ষণাৎ তার জুতাজোড়া খুলে ফেলে দিলো। -(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা নির্মাণ।
মুহাম্মাদ ইবনে হেলাল (র) তিনি দেখেছেন যে, নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের হুজরাসমূহে খেজুর পাতার ছাউনি এবং বেড়া শুষ্ক ঘাস বা খড়ের ছিল। আমি মুহাম্মাদ ইবনে হেলালকে আয়েশা (রাঃ)-এর ঘর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, তার ঘরের দরজা ছিল সিরিয়া অভিমুখী। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, দরজার কপাট কি একটি ছিল না দুইটি? তিনি বলেন, একটি। আমি বললাম, তা কি কাঠের ছিল? তিনি বলেন, সাইপ্রাস অথবা সেগুন কাঠের। আবু হুরায়রা (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ লোকজন নকশী কাঁথার মত কারুকার্য মণ্ডিত ঘর-বাড়ি তৈরি না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির কথা, “নাসাঈ, তোমার পিতার শপথ”।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন ধরনের দান সর্বাধিক পুণ্যের? তিনি বলেনঃ তুমি সুস্থ ও অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় এবং দারিদ্র্যের আশংকা করছে, ধনী হওয়ার আশাও পোষণ করছো, এমতাবস্থায় যে দান করবে। আর ঐ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করো নাসাঈ, যখন তোমার প্রাণ হবে কণ্ঠাগত, আর তুমি বলবে, অমুককে এ তাবারানী, অমুককে এতো দিলাম। তা তো তখন অপরের হয়েই গেছেভ। -(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিব্বান
অনুচ্ছেদঃ কেউ কারে নিকট কিছু চাইলে সরাসরি চাইবে, তার চাটুকারিতা করবে না।
আবদুল্লাহ (রাঃ) তোমাদের কেউ প্রয়োজনে কারো কাছে কিছু চাইলে যেন সহজভাবে চায় (বারংবার না চায়)। কেননা তার তাকদীরে যা নির্ধারিত চাছে তা সে পাবেই। তোমাদের কেউ যেন তার কোন সহযোগীর নিকট গিয়ে তার চাটুকারিতা না করে। তা করলে সে যেন তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিলো। আবু আযযা ইয়াসার ইবনে আবদুল্লাহ আল-হুযালী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ যখন তাঁর কোন বাদাকে নির্দিষ্ট কোন স্থানে মৃত্যুদান করতে চান, তখন সেখানে (যাওয়ার জন্য) সেই বান্দার কোন প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন। (তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ কারো মন্তব্য, তোমার শত্রু নিপাত যাক।
আবু আবদুল আযীয (র) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাতে আমাদের এখানে থাকলেন। তিনি একটি উজ্জল তারকার দিকে তাকিয়ে বলেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আবু হুরায়রার প্ৰাণ! কোন কোন সম্প্রদায়ের দখলে পার্থিব শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আসলে তার চাইবে যে, তারা যদি ঐ তারকার সাথে মিলিত হতে পারতো এবং শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের না থাকতো। অতঃপর তিনি আমার দিকে ফিরে বলেন, তোমার শত্রু নিপাত যাক। প্রাচ্যবাসীরা কি তাদের সেই প্রাচ্যের রাজত্ব-কর্তৃত্বে বিভোর হয়ে আছে? আমি বললাম, হাঁ, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাদের অমঙ্গল করুন এবং বিহিত ব্যবস্থা করুন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আবু হুরায়রার প্রাণ! তাদেরকে গৌর বর্ণের প্রশস্ত চেহারাবিশিষ্ট ক্রুর স্বভাবের লোকেরা এমনভাবে হাঁকিয়ে বেড়াবে যে, কৃষকদের তাদের খামারে এবং পশু পালকদেরকে তাদের পশুপালে পৌঁছিয়ে দিবে। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন এভাবে না বলে, আল্লাহ ও অমুক।
মুগীছ ইবনে উমার (র) ইবনে উমার (রাঃ) তাকে তার মনিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আল্লাহ এবং অমুক। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, এভাবে বলো না। তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শামিল করো না। বরং তুমি বলো, আল্লাহর পর অমুক।