12. অর্থপূর্ণ নাম রাখা এবং কদর্য নাম পরিবর্তন
অনুচ্ছেদঃ মহামহিম আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় নামসমূহ।
আবু ওয়াহব আল-জুশামী (রাঃ) তিনি ছিলেন সাহাবী। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা নবীগণের নামানুসারে নাম রাখো। নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট প্রিয়তর হচ্ছে আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। যথার্থ নাম হচ্ছে হারিস (চাষী) ও হাম্মাম (দাতাবারানী) এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম হচ্ছে হারব ও মুররা। -(নাসাঈ, আবু দাউদ, আহমাদ) জাবের (রাঃ) আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তির একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। সে তার নাম রাখলো কাসেম। আমরা বললাম, আমরা তোমাকে আবুল কাসেম (কাসেমের পিতাবারানী) ডাকনাম দিয়ে গৌরবান্বিত করবো না। নবী (সাঃ)-কে অবহিত করা হলে তিনি বলেনঃ তোমার ছেলের নাম রাখো আবদুর রহমান। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ নাম পরিবর্তন করা।
সাহল (রাঃ) মুনযির ইবনে আবু উসাইদ জন্মগ্রহণ করলে তাকে নবী (সাঃ)-এর খেদমতে আনা হলো। তিনি তাকে তার উরুর উপর রাখলেন। আর আবু উসাইদ (রাঃ) তাঁর পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। নবী (সাঃ) তার সামনের কোন একটি জিনিসে মনোযোগী হয়ে রইলেন। তখন আবু উসাইদ (রাঃ) তার পুত্রকে নবী (সাঃ)-এর উরু থেকে তুলে নিতে বললে তাকে তুলে নেয়া হলো। উক্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ শেষ হলে নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ বাচ্চাটি কোথায়? আবু উসাইদ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছি। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তার নাম কি? তিনি বলেন, অমুক। নবী (সাঃ) বলেনঃ নাসাঈ, বরং তার নাম মুনযির। ঐ দিন থেকে তার নাম হলো মুনযির। -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ মহামহিম আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় নামসমূহ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে লোকের নাম মালিকুল আমলাক (রাজাধিরাজ) রাখা হয়েছে, আল্লাহর কাছে সেটি সর্বনিকৃষ্ট নাম। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অপরকে তার ক্ষুদ্রত্ববাচক নামে ডাকে।
তলক ইবনে হাবীব (র) আমি শাফাআতের বিষয়টিকে কঠোরভাবে অস্বীকার করতাম। আমি জাবের (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে তুলায়ক! আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ একদল লোক দোযখে যাওয়ার পর (শাফাআতধন্য হয়ে) সেখান থেকে বের হয়ে আসবে। তুমি যা পড়ো আমরাও তাই পড়ি। (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ আছিয়া নাম পরিবর্তন করা।
ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) “আসিয়া” (পপিষ্ঠা) নাম পরিবর্তন করেন এবং বলেনঃ তুমি জামীলা (সুন্দরী)। -(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান) মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা (র) তিনি যয়নব বিনতে আবু সালামার নিকট প্রবেশ করলেন। যয়নব তাকে তার সংগী বোনটির নাম জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, তার নাম বাররা (পুণ্যবতী)। তিনি বলেন, তার নাম পরিবর্তন করো। কেননা নবী (সাঃ) যয়নব বিনতে জাহশকে বিবাহ করেন এবং তার নাম ছিল বাররা। তিনি তা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন যয়নব। বিবাহ করার পর তিনি তার ঘরে গেলেন। তখন আমার নাম ছিল বাররা। তিনি উম্মু সালামা (রাঃ)-কে আমাকে এই নামে ডাকতে শুনলেন। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা নিজেদেরকে পবিত্রতায় আখ্যায়িত করো না। কেননা কে পুণ্যবতী আর কে পাপিষ্ঠা তা আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। তুমি তার নাম রাখো যয়নব। তিনি বলেন, সে যয়নবই। আমি তাকে বললাম, আমার নাম? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে নামে পরিবর্তন করেছেন সেই নাম রেখে দাও। অতএব তিনি তার নাম রাখলেন যয়নব। -(মুসলিম, দারিমী, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ সারম নাম পরিবর্তন করা।
সাঈদ আল-মাখযূমী (রাঃ) তাঁর পূর্বনাম ছিল সারম (কর্তনকার, ছিন্নকারী)। নবী (সাঃ) তার নাম রাখেন সাঈদ (ভাগ্যবান)। (অধস্তন রাবী আবদুর রহমান (র) বলেন) আমি উসমান (রাঃ)-কে মসজিদে হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় দেখেছি। (হাকিম) আলী (রাঃ) হাসান ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নাম রাখলাম হারব (যুদ্ধ)। নবী (সাঃ) এসে বলেনঃ আমার নাতি আমাকে দেখাও, তোমরা তার কি নাম রেখেছে? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেনঃ বরং তার নাম হাসান। পরে হুসাইন ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নাম রাখলাম হারব। নবী (সাঃ) এসে বলেনঃ আমার নাতি আমাকে দেখাও, তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেনঃ বরং তার নাম হুসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নামও রাখলাম হারব। অতঃপর নবী (সাঃ) এসে বলেনঃ আমার নাতি আমাকে দেখাও, তোমারা তার কি নাম রেখেছে? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেনঃ বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর তিনি বলেনঃ আমি হারূন (আঃ)-এর সন্তান শিবর, শুবায়র ও মুশাব্বির-এর নাম অনুসারে এদের নাম রাখলাম। (ইসতীআব, আহমাদ, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ গুরাব (কাক) নামের পরিবর্তন।
রায়েতা বিনতে মুসলিম (র) তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে হুনায়ন যুদ্ধে শরীক ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার নাম কি? আমি বললাম, গুরাব (কাক)। তিনি বলেনঃ নাসাঈ, বরং তোমার নাম মুসলিম। (আবু দাউদ, তারীখুল কাবীর)
অনুচ্ছেদঃ শিহাব নামের পরিবর্তন।
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সামনে শিহাব নামক এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উঠলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ বরং তুমি হিশাম (দানশীল)। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ আস (অবাধ্য) নাম পরিবর্তন করা।
আবদুল্লাহ ইবনে মুতী (র) আমি মুতী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আজকের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন কুরাইশ বংশীয় লোককে (চাঁদমারির) লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হত্যা করা যাবে না। কুরাইশের ‘আস’ নামীয়দের মধ্যে মুতী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। তার নামও ছিল আস (অবাধ্য)। নবী (সাঃ) তার নাম রাখেন মুতী (বাধ্য)। -(মুসলিম, দারিমী, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ কেউ নিজ সংগীকে তার নাম সংক্ষিপ্ত করে ডাকতে পারে।
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেনঃ হে আইশ! ইনি হচ্ছেন জিবরীল (আঃ)। তিনি তোমাকে সালাম বলেছেন। তিনি বলেন, তার প্রতিও সালাম এবং আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি দেখতে পান যা আমি দেখি না। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) উম্মে কুলসুম বিনতে ছুমামা (র) তিনি হজ্জ উপলক্ষে (বসরা থেকে মদী নাসাঈ) আসেন। তার ভাই মুখারিক ইবনে ছুমামা (র) বলেন, আপনি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। কেননা বহু লোক তার সম্পর্কে আমাদের কাছে নানা কথা বলে। উম্মে কুলসুম (র) বলেন, আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আপনার কোন এক সন্তান আপনাকে সালাম জানিয়েছে এবং উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছে। তিনি বলেন, ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ (তার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক)। তিনি বলেন, শোনো! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি উসমান (রাঃ) এবং আল্লাহর নবী (সাঃ)-কে এই ঘরের মধ্যেই এই গরমের রাতে একত্রে দেখেছি। জিবরাঈল (আঃ) তখন নবী (সাঃ)-এর উপর ওহী নাযিল করেন। পরে নবী (সাঃ) উসমান (রাঃ)-এর হাতে অথবা কাঁধের উপর চপেটাঘাত করে বলেনঃ লিখে নাও হে উসম! আল্লাহ তাআলা কারো প্রতি সদয় না হলে তার নবীর পক্ষ থেকে এমন মর্যাদা তাকে দেন না। সুতরাং যে উসমান (রাঃ)-কে গালি দেয় তার প্রতি আল্লাহর গযব। (আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ জাহম নাম রাখা।
বশীর ইবনে নাহীক (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট নীত হলে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার নাম কি? তিনি বলেন, জাহম। তিনি বলেনঃ বরং তোমার নাম বশীর। একদা আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে যাচ্ছিলাম। তিনি বলেনঃ হে খাসাসিয়ার পুত্ৰ! তোমার কি হলো যে, তুমি আল্লাহর কাজে দোষ খুঁজে বেড়াও? আর সেজন্যই তুমি কি আল্লাহর রাসূলের পিছনে লেগেছো? আমি বললাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক। আমি আল্লাহর কাজে দোষ খুঁজি না। আমি সর্বপ্রকার কল্যাণ লাভ করেছি। অতঃপর তিনি মুশরিকদের কবরস্থানে পৌঁছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ হারিয়েছে। অতঃপর তিনি মুসলমানদের কবরস্থানে পৌঁছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছে। এই সময় চপ্পল পরিহিত এক ব্যক্তি কবরস্থানের উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। রাসূলুল্লাহ। (সাঃ) বলেনঃ হে চপ্পল পরিহিত! তোমার চপ্পলজোড়া খুলে ফেলে দাও। অতএব সে তার চঞ্জলজোড়া খুলে ফেলে দিলো। (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ হা/৭৮০ নং-ও দ্র.) বশীর ইবনুল খাসাসিয়া (রাঃ) তার নাম ছিল যাহম। নবী (সাঃ) তার নাম রাখেন বশীর ।
অনুচ্ছেদঃ “বাররা” নাম।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া (রাঃ)-এর নাম ছিল বাররা। নবী (সাঃ) তার নাম রাখেন জুয়াইরিয়া। -(মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান) আবু হুরায়রা (রাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-এর নাম ছিল বাররা। নবী (সাঃ) তার নাম রাখেন মায়মূনা।
অনুচ্ছেদঃ আফলাহ নাম।
জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি যদি জীবিত বাকি তবে ইনশাআল্লাহ আমার উম্মাতকে নিষেধ করবো যে, তাদের কেউ যেন বরকত, নাফে, আফলাহ ইত্যাদি নাম না রাখে। রাবী বলেন, তিনি রাফে নামের কথাও বলেছেন কিনা তা আমার স্মরণ নাই। হয় তো বলা হবে, এখানে বরকত আছে কি? জবাবে বলা হবে, নাসাঈ, এখানে নাই। নবী (সাঃ) ইন্তিকাল করেন, কিন্তু এসব নাম রাখতে নিষেধ করেননি। (আবু দাউদ) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) ইয়ালা, বরকত, নাফে, ইয়াসার, আফলাহ প্রভৃতি নাম রাখতে নিষেধ করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে নীরব থাকেন এবং আর কিছু বলেননি। (মুসলিম, আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ রাবাহ নাম।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাঃ) যখন তাঁর স্ত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ছিলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গোলাম রাবাহ-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি ডাক দিয়ে বললাম, হে রাবাহ! রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট থেকে আমার প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করো। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ নবীগণের নাম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা আমার নামানুসারে নাম রাখতে পারো, কিন্তু আমার উপনামে নাম রেখো না। কেননা আমিই আবুল কাসিম। (বুখারী, মুসলিম) আনাস ইবনে মালক (র) এক ব্যক্তি ডাক দিলো, হে আবুল কাসেম! নবী (সাঃ) তার দিকে তাকালে সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ঐ ব্যক্তিকে ডেকেছি। তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখতে পারো, কিন্তু আমার ডাকনামে নাম রেখো না। -(বুখারী, মুসলিম, তাহাবী) ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) আমার নাম রাখেন ইউসুফ। তিনি আমাকে তাঁর কোলে বসান এবং আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। (আহমাদ, শামাইল জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের আনসারদের এক ব্যক্তির একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। সে তার নাম রাখতে চাইলো মুহাম্মাদ। আমি তাকে কাঁধে তুলে নিলাম এবং তাকে নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট এলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখতে পারো, তবে আমার ডাকনামে নাম রেখে না। কেননা আমাকে কাসেম (বিতরণকারী) বানানো হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে বন্টন করি। (বুখারী, মুসলিম) আবু মূসা (রাঃ) আমার একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। আমি তাকে নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট এলাম। তিনি তার নাম রাখেন ইবরাহীম। তিনি খেজুর চিবিয়ে শিশুর মুখে দেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করেন। অতঃপর তাকে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন। সে ছিলো আবু মূসা (রাঃ)-এর বড়ো ছেলে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ হুযন (দুঃখ) নাম।
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (র) তিনি নবী (সাঃ)-এর নিকট এলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার নাম কি? তিনি বলেন, হুযন (দুঃখ)। তিনি বলেনঃ তুমি সাহল (সহজ)। তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা আমি পরির্বতন করবো না। ইবনুল মুসাইয়্যাব (র) বলেন, ফলে সে অনবরত আমাদের মধ্যে চিন্তাযুক্ত থাকতো। আবদুল হামীদ ইবনে জুবাইর ইবনে শায়বা (র) আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (র)-এর পাশে বসা ছিলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করলেন যে, তার দাদা হুযন (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কি? তিনি বলেন, আমার নাম হুযন। তিনি বলেনঃ বরং তোমার নাম সাহল। তিনি বলেন, আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করবো না। ইবনুল মুসাইয়্যাব (র) বলেন, সেই অবধি আমাদের পরিবারে দুঃখ লেগেই আছে। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)
অনুচ্ছেদঃ নবী (সাঃ)-এর নাম ও উপনাম।
জাবের (রাঃ) আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তির একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সে তার নাম রাখে কাসেম। আনসারগণ বলেন, আমরা তোমাকে না আবুল কাসেম নামে ডাকবো আর না তোমার চোখ জুড়াবো। সে নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে আনসারগণ যা বলেছে তা তাঁকে জানায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ আনসারগণ উত্তম কাজই করেছে। তোমরা আমার নামে নাম রাখো, কিন্তু আমার ডাকনামে নাম রেখো না। আমিই হলাম কাসেম (বন্টনকারী)। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ) ইবনুল হানাফিয়া (র) আলী (রাঃ)-এর জন্য (একটি ব্যাপারে) অনুমোদন ছিল। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার পরে আমার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি কি আপনার নামে তার নাম এবং আপনার ডাকনামে তার ডাকনাম রাখতে পারবো? তিনি বলেনঃ হাঁ। -(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, তাহাবী, হাকিম, আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে তাঁর নাম ও ডাকনাম একত্রে রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি হলাম আবুল কাসেম আল্লাহ আমাকে দান করেন এবং আমি বিতরণ করি। -(তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু ইয়ালা) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বাজারে ছিলেন। এক ব্যক্তি ডেকে বললো, হে আবুল কাসেম । নবী (সাঃ) তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে বললো, আমি এই ব্যক্তিকে ডেকেছি। তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখো, কিন্তু আমার ডাকনামে ডাকনাম রেখো না। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ মুশরিক (পৌত্তলিক) কি উপনাম গ্রহণ করতে পারে।
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) বাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক মজলিসে গিয়ে উপনীত হলেন। সেখানে (মুনাফিক নেতাবারানী) আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূলও উপস্থিত ছিল। এটা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর ইসলাম গ্রহণের পূর্বেকার ঘটনা। তখন সে বললো, তুমি আমাদের মজলিসে আমাদের কষ্ট দিও না। অতঃপর নবী (সাঃ) সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলেনঃ হে সাদ! তুমি কি শোনো নাইবনে মাজাহ, আবু হুবাব কি বলে? এখানে আবু হুবাব (সাপের পিতা বা রানী) দ্বারা তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে বুঝিয়েছেন। -(বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ বালকের উপনাম।
আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাদের এখানে আসতেন। আবু উমাইর ডাকনামে আমার একটি ছোট ভাই ছিল। তার একটি বুলবুলি ছিল। সে তা নিয়ে খেলা করতো। সেটি মারা গেলো। নবী (সাঃ) আমাদের এখানে এসে তাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার কি হয়েছে? তাঁকে বলা হলো, তার বুলবুলিটি মারা গেছে। তিনি (কৌতুক করে) বলেনঃ ওহে আবু উমাইর! কি করলো তোমার নুগায়ের। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ শিশুর জন্মের পূর্বেই কারো উপনাম গ্রহণ।
ইবরাহীম (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) আলকামা (র)-এর ডাকনাম রাখেন “আবু শিবল”। অথচ তখনও তার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। আলকামা (র) আমার কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ না হতেই আবদুল্লাহ (রাঃ) আমার ডাকনাম রাখেন।
অনুচ্ছেদঃ নারীদের উপনাম।
আয়েশা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি। আপনার স্ত্রীগণের ডাকনাম রেখেছেন। অতএব আমারও একটি ডাকনাম রাখুন। তিনি বলেনঃ তুমি তোমার বোনপুত আবদুল্লাহর নামে ডাকনাম গ্রহণ করো। (আবু দাউদ) আয়েশা (রাঃ) হে আল্লাহর নবী! আপনি কি আমার ডাকনাম রাখবেন না? তিনি বলেনঃ তুমি তোমার পুত্রের অর্থাৎ যুবাইরের পুত্র আবদুল্লাহর নামে ডাকনাম গ্রহণ করো। অতএব তাকে আবদুল্লাহর মা নামে ডাকা হতো। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো এমন কিছু দ্বারা উপনাম রাখলো যা তার বা তাদের কারো মধ্যে আছে।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ)-এর নিকট তার নামগুলোর মধ্যে “আবু তুরাব” নামটি ছিল সর্বাধিক প্রিয় এবং তাকে এই নামে ডাকা হলে তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত হতেন। আবু তুরাব ডাকনাম তাকে নবী (সাঃ)-ই দিয়েছেন। এক দিন তিনি ফাতেমা (রাঃ)-এর উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে মসজিদে গিয়ে তার দেয়াল ঘেঁষে শুয়ে পড়লেন। তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে নবী (সাঃ) সেখানে আসলে এক লোক বলে যে, তিনি দেয়াল ঘেঁষে শুয়ে আছেন। নবী (সাঃ) তার কাছে যান। আলী (রাঃ)-এর পিঠে ধূলাবালি লেগে ছিল। নবী (সাঃ) তার পিঠের ধূলাবালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলেনঃ হে আবু তুরাব! উঠে বসো। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ প্রবীণ ও মর্যাদাশালী লোকদের সাথে কিভাবে হাঁটবে?
আনাস (রাঃ) একদা নবী (সাঃ) আমাদের খেজুর বাগানে অর্থাৎ আবু তালহা (রাঃ)-এর খেজুর বাগানে ছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়তে গেলেন এবং বিলাল (রাঃ)-ও তাঁর পাশে পাশে গেলেন। নবী (সাঃ) একটি কবরের নিকট পৌঁছলেন এবং বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট না আসা পর্যন্ত দাঁড়ালেন। তিনি বলেনঃ হে বিলাল! তোমার জন্য দুঃখ হয়। আমি যা শুনেছি তুমি কি তা শুনেছো? তিনি বলেন, আমি কিছুই শুনতে পাইনি। তিনি বলেনঃ এই কবরবাসীর শাস্তি হচ্ছে। কবরটি ছিল এক ইহুদীর। (আহমাদ হা/১২৫৫৮)
অনুচ্ছেদঃ (শিরোনাম বিহীন)।
কায়েস (র) আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-কে তার ছোট ভাইকে বলতে শুনেছি, তুমি গোলামটিকে তোমার বাহনের পেছন দিকে তুলে নাও। কিন্তু সে তা অস্বীকার করলো মুয়াবিয়া (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি চরম অশিষ্ট। কায়েস (র) বলেন, আমি আবু সুফিয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনলাম, তোমার ভাইকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। আমর ইবনুল আস (রাঃ) বন্ধুর সংখ্যা যতো বাড়বে, দাবিদারের সংখ্যাও ততো বাড়বে। অধস্তন রাবী বলেন, আমি মূসা ইবনে আলী (র)-কে বললাম, ‘গুরামা' অর্থ কি? তিনি বলেন, প্রাপক বা দাবিদার।
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তিকে তার প্রিয় নামে ডাকা।
হানবাল ইবনে হিয়াম (র) নবী (সাঃ) কোন ব্যক্তিকে তার নামসমূহের মধ্যে তাঁর নিকট অপেক্ষাকৃত প্রিয় নামে বা উপনামে ডাকতেই পছন্দ করতেন। (তাহযীবুল কামাল)