13. কবিতা চর্চা ও ব্যাঙ্গ-কৌতুক
অনুচ্ছেদঃ কোন কোন কবিতায় প্রজ্ঞা নিহিত আছে।
খালিদ ইবনে কায়সান (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন ইয়াস ইবনে খায়ছামা (র) তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে ফারুক তনয়! আমার কিছু কবিতা কি আপনাকে আবৃত্তি করে শুনাবো? তিনি বলেন, হাঁ, তবে কেবল উত্তম কবিতাই শুনাবে। তিনি তাকে তা আবৃত্তি করে শুনাতে থাকেন। পরে কবিতায় ইবনে উমার (রাঃ)-এর অপছন্দনীয় কিছু এলে তিনি বলেন, এবার থামো। কাতাদা (র) আমি মুতাররিফ (র)-কে বলতে শুনেছি, আমি ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ)-এর সাথে কূফা থেকে বসরা পর্যন্ত সফর করেছি। খুব কম মনযিলই এমন ছিল যেখানে তিনি যাত্রাবিরতি করেছেন, অথচ আমাকে কবিতা পড়ে শুনাননি। তিনি বলেন, পরোক্ষ বচন মিথ্যাকে এড়ানোর নিরাপদ উপায়। উবাই ইবনে কাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয় কোন কোন কবিতায় জ্ঞানের কথাও থাকে। আল-আসওয়াদ ইবনে সারী (র) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি (স্বরচিত কবিতায়) নানাভাবে মহামহিম আল্লাহর প্রশংসা করেছি। তিনি বলেনঃ শোনো! তোমার প্রভু তার প্রশংসা অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি এর বেশী আর কিছু বলেননি। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিজের পেট কবিতা দ্বারা ভর্তি করার তুলনায় পুঁজ দ্বারা ভর্তি করা যে কোন ব্যক্তির জন্য উত্তম। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) আল-আসওয়াদ ইবনে সারী (রাঃ) আমি ছিলাম কবি। অতএব আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, আমি যে কবিতার মাধ্যমে আমার প্রভুর প্রশংসা করেছি তা দ্বারা কি আপনার প্রশংসা করতে পারি না? তিনি বলেনঃ নিশ্চয় তোমার প্রভু প্রশংসা পছন্দ করেন। তিনি আমাকে এর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, হাসসান ইবনে ছাবিত (রাঃ) (কবিতার মাধ্যমে) মুশরিকদের নিন্দা প্রচার করার জন্য নবী (সাঃ)-এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি বলেনঃ আমার বংশকে কি করবে? হাসসান (রাঃ) বলেন, আটার খামীর থেকে চুলকে যেভাবে টেনে বের করা হয় সেভাবে আমি আপনাকে তাদের থেকে আলাদা করে নিবো। (বুখারী, মুসলিম) হিশাম (র) আমি আয়েশা (রাঃ)-এর সামনে হাসসান (রাঃ)-কে ভর্ৎসনা করতে উদ্যত হলাম। তিনি বলেন, তাকে ভর্ৎসনা করো না। কেননা সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে (কবিতার মাধ্যমে) দুশমনদেরকে প্রতিহত করেছে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ উত্তম কথার ন্যায় উত্তম কবিতাও আছে, নিকৃষ্ট কবিতাও আছে।
উবাই ইবনে কাব (রা) নবী (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয় কোন কোন কবিতায় জ্ঞানের কথাও থাকে। (বুখারী,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ কবিতাও কথারই মত (কথার সমষ্টি)। রুচি সম্মত কবিতা উত্তম কথাতুল্য এবং কুরুচিপূর্ণ কবিতা কুরুচিপূর্ণ কথাতুল্য। (দার) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলতেন, কবিতার মধ্যে কতক ভালো এবং কতক নিকৃষ্ট। তুমি তার ভালোটা গ্রহণ করে এবং নিকৃষ্টটা পরিহার করো। আমার কাছে কাব ইবনে মালেক (রাঃ)-এর এমন কবিতাও বর্ণনা করা হয়েছে, যার মধ্যকার একটি কাসীদায় চল্লিশ বা তার কিছু কম সংখ্যক চরণ ছিলো। মিকদাম ইবনে শুরায়হ (র) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি উপমা দেয়ার জন্য কবিতা পাঠ করতেন? তিনি বলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার এ কবিতা আবৃত্তি করে উপমা দিতেনঃ “যাকে তুমি দাওনি তোশা, খবর আনবে সে নিশ্চয়”। -(তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, তাহাবী) আল-আসওয়াদ ইবনে সারী (রাঃ) আমি ছিলাম কবি। অতএব আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, আমি যে কবিতার মাধ্যমে আমার প্রভুর প্রশংসা করেছি তা দ্বারা কি আপনার প্রশংসা করতে পারি না? তিনি বলেনঃ “নিশ্চয় তোমার প্রভু প্রশংসা পছন্দ করেন”। তিনি আমাকে এর অধিক কিছু বলেননি। (তাহাবীর কিতাবুল কারাহিয়্যা)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কবিতা আবৃত্তির আবদার করে।
আশ-শারীদ (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাকে কবি উমাইয়্যা ইবনে আবুস সালতের কবিতা আবৃত্তি করে তাঁকে শুনাতে বলেন। আমি তাঁকে তা আবৃত্তি করে শুনলাম। নবী (সাঃ) বলতে থাকলেনঃ চালাতে থাকো, চালাতে থাকো। শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে এক শত চরণ আবৃত্তি করে শুনালাম। তিনি বলেনঃ সে তো প্রায় মুসলমান হয়েই গিয়েছিলো। -(মুসলিম, ইবনে মাজাহ, দারিমী, ইবনে খুজাইমাহ, আহমাদ, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকা নিন্দনীয় মনে করে।
ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ নিজের পেট কবিতা দ্বারা ভর্তি করার তুলনায় পুঁজ দ্বারা ভর্তি করা যে কোন ব্যক্তির জন্য উত্তম। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ “কবিগণ, কেবল পথভ্রষ্টরাই তাদের অনুগামী হয়” (২৬ : ২২৪)।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) “বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখো না যে, তারা প্রতিটি ময়দানে উদভ্ৰান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং এমন কথা বলে যা তারা করে না” (সূরা শুআরাঃ ২২৪-২২৫)? উপরোক্ত অংশ (মহামহিম আল্লাহ) মানসূখ (রহিত) করেছেন এবং নিম্নোক্ত অংশ ব্যতিক্রম করেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ “তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, আল্লাহকে পর্যাপ্ত স্মরণ করে এবং নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নির্যাতনকারী অচিরেই জানতে পারবে তাদের গন্তব্য কিরূপ” (সূরা শুআরাঃ ২২৭)। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ যে বলে, কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি বা এক বেদুইন নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কথাবার্তা বললো। নবী (সাঃ) বলেনঃ কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে এবং কবিতাও প্রজ্ঞাপূর্ণ হতে পারে। (আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, ইবনে হিব্বান,তহাকিম) উমার ইবনে সালাম (র) আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান তার সন্তানদের আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার জন্য শাবী (র)-এর নিকট সোপর্দ করেন। তিনি বলেন, এদের কবিতা শিক্ষা দিন, তাতে তারা উচ্চাভিলাসী ও নির্ভীক হবে, এদের গোশত খাওয়ান, তাতে তাদের হৃদয়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এদের মস্তক মুণ্ডন করান, তাতে তাদের ঘাড় শক্ত হবে এবং এদের নিয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের সমাবেশে বসুন। তাতে তাদের সাথে বাক্য বিনিময়ে তারা কথা বলার কৌশল আয়ত্ত করতে পারবে। -(তারীখুল কাবীর, আবু হাতেম, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ নিন্দনীয় কবিতা।
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মানুষের মধ্যে মারাত্মক অপরাধী হলো সেই কবি যে সমগ্র গোত্রের নিন্দা করে এবং যে ব্যক্তি নিজ পিতাকে অস্বীকার করে। -(ইবনে মাজাহ হা/৩৭৬১)
অনুচ্ছেদঃ বাচালতা।
ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে প্রাচ্য থেকে দুই বাগ্মী পুরুষ (মদীনায়) আসে। তারা দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করলো, অতঃপর বসলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্তা সাবিত ইবনে কায়েস (রাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। কিন্তু লোকজন পূর্বের দুই বক্তার বক্তৃতায়ই অভিভূত হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ হে জনগণ! নিজেদের কথা বলো। কেননা মারপ্যাচের কথা বলা শয়তানের অভ্যাস। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন কোন বক্তৃতায় যাদুকরী প্রভাব থাকে। -(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান) আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি উমার (রাঃ)-র সামনে দীর্ঘ বক্তৃতা করলো। উমার (রাঃ) বলেন, বক্তৃতায় লম্বা-চওড়া কথা বলা শয়তানের কাজ। আবু ইয়াযীদ অথবা মান ইবনে ইয়াযীদ (র) নবী (সাঃ) বলে পাঠানঃ তোমরা তোমাদের মসজিসমূহে একত্র হও। লোকজন একত্র হলে তারা যেন আমাকে খবর দেয়। অতঃপর আগমনকারী প্রথমে আমাদের মসজিদে আসেন এবং বসেন। তখন আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যাঁর প্রশংসা দ্বারা একমাত্র তাঁর সত্তা ছাড়া আর কিছুই কাম্য নয়। আর তিনি ছাড়া পালিয়ে যাবার অন্য কোন ঠাই নাই। এতে নবী (সাঃ) অসন্তুষ্ট হন এবং উঠে চলে যান। আমরা এজন্য পরস্পরকে দোষারোপ করে বললাম, আগন্তুক তো প্রথমেই আমাদের মসজিদে আসেন (আর আমরা তাঁকে অসন্তুষ্ট করলাম)। অতঃপর তিনি অন্য এক মসজিদে গিয়ে সেখানে বসেন। আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট (ক্ষমা চাইলাম)। অতএব তিনি আমাদের সাথে ফিরে এলেন এবং তাঁর আগের জায়গায় বা তার সন্নিকটে বসেন, অতঃপর বলেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি যা ইচ্ছা তাঁর সম্মুখে করেন এবং যা ইচ্ছা তাঁর পশ্চাতে করেন। আর কোন কোন বক্তৃতায় যাদুকরী প্রভাব থাকে। অতঃপর তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে ওয়াজ-নসীহত করেন এবং জ্ঞান দান করেন। (আহমাদ হা/১৫৯৫৫)
অনুচ্ছেদঃ আশা-আকাঙ্ক্ষা।
আয়েশা (রাঃ) এক রাতে নবী (সাঃ)-এর ঘুম আসছিলো না। তিনি বলেন, আহা! আমার সাহাবীদের মধ্যকার কোন সৎকর্মশীল ব্যক্তি এসে এই রাতটুকু যদি আমাকে পাহারা দিতো। তৎক্ষণাৎ আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কে এই লোক? বলা হলো, সাদ। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি। অতঃপর নবী (সাঃ) ঘুমিয়ে গেলেন, এমনকি আমরা তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। -(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি, বস্তু বা ঘোড়াকে ‘সমুদ্র’ অভিহিত করা।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) একদা মদীনায় (বিকট শব্দ হলে) ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। নবী (সাঃ) আবু তালহা (রাঃ)-র মানদূৰ নামের ঘোড়াটি ধার নিয়ে তাতে চড়ে সেদিকে গেলেন। অতঃপর ফিরে এসে বলেনঃ তেমন কিছু তো দেখলাম না। আর ঘোড়াটি তো দেখছি সমুদ্রবৎ (দ্রুতগামী)। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ ভাষাগত ভুলের জন্য প্রহার করা।
নাফে (র) ইবনে উমার (রাঃ) তার ছেলেকে উচ্চারণের ভুলের জন্য প্রহার করতেন। (আবু দাউদ) আবদুর রহমান ইবনে আজলান (র) উমার (রাঃ) দুই ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তখন তীর নিক্ষেপ করছিল। তাদের একজন অপরজনকে বললো, ......... (শুদ্ধ ..............) অর্থাৎ তুমি নির্ভুল তীর ছুঁড়েছো। উমার (রাঃ) বলেন, উচ্চারণের ভুল তীর নিক্ষেপে ভুল করার চেয়েও মারাত্মক। (ইবনে আদী)
অনুচ্ছেদঃ কেউ বলে, এটা কিছুই না অর্থাৎ এটা সঠিক বা যথার্থ কিছু নয়।
নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) লোকজন নবী (সাঃ)-এর নিকট গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তিনি তাদের বলেনঃ তারা কিছুই না। লোকজন আবার বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা এমন কিছুও বলে যা সঠিক হতে দেখা যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ সেটা শয়তানের লুফে নেয়া কথা (আসমানবাসী থেকে)। সে তার বন্ধুদের দুই কানে মুরগীর ডাকের মত তা পৌঁছে দেয়। অতঃপর সেই গণক তার সাথে শত মিথ্যা যোগ করে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ বিপরীতাৰ্থক উপমা।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর এক সফরে ছিলেন। চালক হুদী গান গেয়ে (জতুযান হাঁকিয়ে নিয়ে) যাচ্ছিল। নবী (সাঃ) বলেনঃ হে আনজাশা! তোমার জন্য আফসোস, সদয় হও কাঁচপাত্রগুলোর ব্যাপারে। (বুখারী, মুসলিম) উমার (রাঃ) কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতোটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তাই নির্বিচারে বলে বেড়ায়। উমার (রাঃ) আরো বলেন, পরোক্ষ বচন মুসলমানের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (হাকিম) মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনুস শিখখীর (র) বসরা যেতে আমি ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ)-র সফরসংগী হলাম। সফরে প্রতি দিনই তিনি আমাদের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, পরোক্ষ বচন মিথ্যাকে এড়ানোর নিরাপদ উপায়।
অনুচ্ছেদঃ গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেয়া।
আমর ইবনুল আস (রাঃ) যে ব্যক্তি তাকদীর থেকে পলায়ন করে তার সম্পর্কে আমার অবাক লাগে। কারণ তাকদীরের সাথে তার সাক্ষাত ঘটবেই। সে তার (অপর মুসলিম) ভাইয়ের চোখে পতিত সামান্য ময়লাটুকুও দেখতে পায় কিন্তু নিজ চোখে পতিত গাছের গুঁড়িও দেখে না। সে তার ভাইয়ের অন্তর থেকে ঘৃণা-বিদ্বেষ বের করার প্রয়াস পায়, অথচ নিজের অন্তরের বিদ্বেষ ত্যাগ করে না। আমি কারো কাছে আমার গোপনীয় বিষয় বলবো, আর তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার জন্য তাকে তিরস্কার করবো, এটা হতে পারে না। যে গোপনীয়তা চেপে রাখতে আমি সমর্থ হয়নি, তার (ফাঁস হয়ে যাওয়ার) জন্য অপরকে কিভাবে তিরস্কার করতে পারি? (ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ ঠাট্টা-বিদ্ধপ। মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “একদল অপর দলকে যেন ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে” (৪৯ : ১১)।
আয়েশা (রাঃ) এক বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কতক নারীকে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। তাকে দেখে তারা বিদ্রুপাত্মক হাসি হাসলো। ফলে তাদের কেউ কেউ বিপদগ্রস্ত হলো। (তাবারী, তাবারানী, ইবনে আদী, বায়হাকীর শুআবুল ঈমান)
অনুচ্ছেদঃ কাজকর্মে ধীরস্থিরতা।
যুহরী (র) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এলাম। আমার পিতা আমাকে বাদ দিয়ে (মহানবীর সাথে) একান্তে আলাপ করলেন। রাবী বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, তিনি আপনাকে কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ “তুমি কোন কাজ করার মনস্থ করলে ধীরস্থিরভাবে অগ্রসর হবে, যাবত না আল্লাহ তোমাকে তা থেকে নির্গমনের পথ দেখান অথবা আল্লাহ তোমার জন্য নির্গমনের ব্যবস্থা করেন। মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যা (র) সেই ব্যক্তি প্রজ্ঞাবান নয় যে সদ্ভাবে বসবাস করতে পারে নাসাঈ, যে তার সমাজের কাছে পরিত্রাণের পথ পায় নাসাঈ, যাবত না আল্লাহ তার জন্য মুক্তির উপায় বা পথ করে দেন।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পথভোলা লোককে রাস্তা বলে দেয়।
বারাআ ইবনে আযেব (র) নবী (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি দুধ পান করার জন্য পশু ধার (মনীহাকিম) দেয় অথবা পথহারা ব্যক্তিকে পথ বলে দেয়, তার জন্য একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব রয়েছে। (আহমাদ হা/১৮৭০৯, তিরমিযী হা/১৯০৭)। আবু যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ভর্তি করে দেয়া একটি সদাকা (দান)। সৎকাজের জন্য তোমার আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য তোমার নির্দেশ একটি সদাকা (দান)। তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাক্ষাত করা একটি সদাকা। জনপথ থেকে তোমার পাথর, কাঁটা ও হাড় অপসারণ করা তোমার পক্ষ থেকে একটি সদাকা। পথহারা পথিককে তোমার রাস্তা বাতলে দেয়াও একটি সদাকা। -(তিরমিযী, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অন্ধকে পথহারা করে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্ধকে পথহারা করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন। -(হাকিম, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ বিদ্রোহ।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদা নবী (সাঃ) তাঁর মক্কার বাড়ির আঙ্গিনায় বসা ছিলেন। তখন উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নবী (সাঃ)-এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। নবী (সাঃ) তাকে বলেনঃ তুমি কি বসবে না? তিনি বলেন, হাঁ। নবী (সাঃ) তার দিকে মুখ করে বসলেন। তিনি তার সাথে কথা বলছিলেন। এমন সময় নবী (সাঃ) আসমানের দিকে তাকিয়ে বলেনঃ এইমাত্র আল্লাহর দূত আমার নিকট আসেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তিনি আপনাকে কি বলেছেন? তিনি বলেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেন ন্যায়পরায়ণ তাবারানী, সদাচার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনকে দান-খয়রাত করার এবং বারণ করেন অশ্লীল তাবারানী, গৰ্হিত কর্ম ও বিদ্রোহ। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে” (সূরা নাহল : ৯০)। উসমান (রাঃ) বলেন, এটা তখনকার কথা যখন ঈমান আমার অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে আমি ভালোবাসতে শুরু করেছি। (আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ বিদ্রোহের শাস্তি।
আবু বাকর ইবনে উবায়দুল্লাহ ইবনে আনাস (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দুইটি কন্যা সন্তানকে বালেগ হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করে, আমি এবং সে এই দুটির মতো পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করবো। হাদীস বর্ণনাকালে রাবী মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল আযীয (র) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের প্রতি ইঙ্গিত করেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দু’টি অপরাধের শাস্তি সত্বর দুনিয়াতেই দেয়া হয় (১) বিদ্রোহ এবং (২) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।
অনুচ্ছেদঃ বংশমর্যাদা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্র, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্র, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্র অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ) হলেন ইয়াকুব (আঃ)-এর পুত্র, তিনি ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র এবং তিনি ইবরাহীম (আঃ)-এর পুত্র। (বুখারী, মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার বন্ধু হবে মোত্তাকী পরহেজগারগণ। বংশগত সম্পর্ক অপরের তুলনায় অধিক নিকটতর হলেও তা উপকারে আসবে না। লোকজন আমার নিকট আসবে তাদের আমল নিয়ে, আর তোমরা আসবে দুনিয়াকে তোমাদের কাঁধে তুলে নিয়ে। তোমরা ডেকে বলবে, হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ! আর আমি এরূপ এরূপ বলবোঃ আমি কোন কাজে আসবো না। আমি সব দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো। ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমার মতে কোন ব্যক্তি নিম্নোক্ত আয়াত অনুযায়ী আচরণ করে না (অনুবাদ) : “হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছি..... নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট সবচাইতে সম্ভ্রান্ত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী আল্লাহভীরু” (সূরা হুজুরাত : ১৩)। আল্লাহর এই বাণী বিদ্যমান থাকা সত্বেও এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলবে, আমি তোমার চেয়ে অধিক সম্ভ্রান্ত। অথচ তাকওয়া ব্যতীত কেউ কারো চেয়ে অধিক সম্ভ্রান্ত হতে পারে না। ইয়াযীদ ইবনুল আসাম্ম (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তোমরা কাদের সম্ভ্রান্ত গণ্য করো? আল্লাহ অবশ্যই সম্ভ্রান্ত কে তা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচাইতে সম্ভ্রান্ত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশী আল্লাহভীরু”। (৪৯ : ১৩) তোমরা কাকে মর্যাদাবান গণ্য করো? যার স্বভাব-চরিত্র সর্বোত্তম সে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান।
অনুচ্ছেদঃ মানবাত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদল।
আয়েশা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ মানবাত্মাসমূহ যেন সমবেত সৈন্যদল ! (সৃষ্টির সেই আদিতে) যারা পরস্পর পরিচিত হয়েছে, এখানেও তারা পরস্পর পরিচিত হবে। আর সেখানে যারা পরস্পর অপরিচিত ছিল, এখানে তাদের মধ্যে অনৈক্য থাকবে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আবু ইয়ালা) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মানবাত্মাসমূহ যেন সমবেত সৈন্যদল। (আদিতে) যারা পরস্পর পরিচিত হয়েছে, এখানেও (দুনিয়ায়) তারা পরস্পর পরিচিত হবে। আর সেখানে যারা পরস্পর অপরিচিত ছিল, এখানে তাদের মধ্যে অনৈক্য হবে। (মুসলিম, আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ বিস্মিত হয়ে কারো ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ একদা এক রাখাল ছাগল চরাচ্ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ ছাগলের পালের উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং একটি ছাগী ধরে নিয়ে গেলো। তখন রাখাল তার পিছু ধাওয়া করলো। নেকড়েটি তাকে লক্ষ্য করে বললো, যেদিন হিংস্র শ্বাপদের রাজত্ব হবে সেদিন আমি ছাড়া আর কে তার রক্ষক হবে? উপস্থিত লোকজন বললো, সুবহানাল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি, আবু বাকর ও উমার তা বিশ্বাস করি। (বুখারী, মুসলিম) আলী (রাঃ) নবী (সাঃ) এক জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি একটি জিনিস হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটিতে রেখা টানতে লাগলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার ঠিকানা দোযখ অথবা বেহেশত লিপিবদ্ধ করা হয়নি। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আমাদের ভাগ্যলিপির উপর নির্ভর করে কাজকর্ম ত্যাগ করবো না? তিনি বলেনঃ তোমরা কাজকর্ম করতে থাকো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সেটি সহজসাধ্য করা হয়েছে। তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হবে তার জন্য সৌভাগ্যজনক কাজ সহজসাধ্য করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি হতভাগ্য হবে তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক কাজ সহজসাধ্য করা হয়েছে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেনঃ “অনন্তর যে দান করে, তাকওয়া অবলম্বন করে এবং উত্তম বাণীর সত্যতা ঘোষণা করে ...” (সূরা লাইল : ৫-৭)।
অনুচ্ছেদঃ হাতে মাটি স্পর্শ করা।
উসাইদ ইবনে আবু উসাইদ (র) তিনি বলেন, আমি আবু কাতাদা (রাঃ)-কে বললাম, আপনার কি হলো যে, লোকে যেরূপ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করেন, আপনি তেমনটি করেন না? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন তার পার্শ্বদেশকে জাহান্নামের বিছানার জন্য সমতল করে নেয়। (একথা বলে) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হাত দ্বারা মাটি স্পর্শ করেন। (শাফিঈ)
অনুচ্ছেদঃ নুড়ি পাথর।
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল আল-মুযানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নুড়িপাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ তা না পারে শিকার হত্যা করতে, আর না পারে শত্রুকে কাবু করতে। বরং তা চক্ষু নষ্ট করে অথবা দাঁত ভেঙ্গে দেয়। (বুখারী,মুসলিম, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ তোমরা বায়ুকে গালি দিও না।
আবু হুরায়রা (রাঃ) মক্কায় যাবার পথে লোকজন প্রবল বায়ু তাড়িত হলো। উমার (রাঃ)-ও (তাদের সাথে) হজ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। উমার (রাঃ) তার চারপাশের লোকদের বলেন, এই বায়ু কী? তারা কিছুই উত্তর দিলো না। তখন আমি আমার বাহনটিকে তার দিকে ধাবিত করে তার নিকটে গিয়ে বললাম, আমি জানতে পারলাম যে, আপনি বায়ু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “বাতাস হলো আল্লাহর রহমাতের অন্তর্ভুক্ত। তা রহমাতও বয়ে আনে, আবার আযাবও বয়ে আনে। অতএব তোমরা তাকে গালি দিও নাসাঈ, বরং তোমরা আল্লাহর কাছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করো এবং তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো”। -(আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ কারো বক্তব্য, অমুক অমুক গ্রহের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে।
যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হুদায়বিয়াতে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন। ঐ রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। নামাযান্তে নবী (সাঃ) লোকদের দিকে ফিরে বলেনঃ তোমরা কি জানো, তোমাদের প্রভু কী বলেছেন? তারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সমধিক জ্ঞাত। আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দারা আমার প্রতি মুমিন ও কাফেররূপে প্রভাতে উপনীত হয়। যে বলে, আল্লাহর করুণা ও দয়ায় বৃষ্টি হয়েছে সে আমার প্রতি মুমিন এবং নক্ষত্রসমূহের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী”। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ লোকজন মেঘ দেখলে যা বলবে।
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলে (চিন্তিত হয়ে) ঘরে ঢোকতেন, আবার বের হতেন, সামনে যেতেন আবার পেছনে ফিরে আসতেন এবং তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো। বৃষ্টি হলে পর তাঁর মুখে হাসি ফোটতো। আয়েশা (রাঃ) তার এরূপ অবস্থা সম্পর্কে তার সাথে আলাপ করলে তিনি বলেনঃ কি জানি এমনও তো হতে পারে যেরূপ আল্লাহ বলেছেন, “অতঃপর তারা যখন মেঘমালাকে তাদের উপত্যকা অভিমুখে অগ্রসর হতে দেখলো তখন বললো, এতো সেই মেঘমালা যা আমাদের বৃষ্টি দিবে.....”। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘কুলক্ষণে’ বিশ্বাস শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মধ্যে অনুরূপ ধারণা আসে না। তবে আল্লাহর উপর ভরসা করার কারণে তিনি তা দূর করে দেন। -(তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ অশুভ লক্ষণ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ অশুভ লক্ষণ (বলতে কিছু নেইবনে মাজাহ)। তার মধ্যে ফালই উত্তম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ফাল কি? তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ (অদৃশ্য থেকে) যে উত্তম কথা শোনতে পায় তা। -(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অশুভ লক্ষণ মানে না তার মর্যাদা।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ একদা হজ্জের মৌসুমে আমার উম্মাতকে আমার সামনে পেশ করা হলো। আমার উম্মাতের সংখ্যাধিক্যে আমি অভিভূত হলাম। সমভূমি ও পাহাড়-পর্বত তাদের দ্বারা পরিপূর্ণ। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি সন্তুষ্ট? আমি বললামঃ হাঁ, হে প্রভু। তিনি বলেন, “উপরন্তু এদের সাথে রয়েছে আরো সত্তর হাজার যারা বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে। তারা হচ্ছে সেইসব লোক যারা ঝাঁড়ফুক করায় নাসাঈ, শরীরে দাগ দেয়ায় না এবং অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না। তারা তাদের প্রভুর উপরই ভরসা করে”। তখন উকাশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি দোয়া করলেনঃ “হে আল্লাহ! উকাশাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো”। অপর এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্যও দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেনঃ এ ব্যাপারে উকাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে। -(বুখারী, আহমাদ, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ জিনের আছর থেকে বাঁচার নিষ্ফল তদবীর।
আয়েশা (রাঃ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতকদের আয়েশা (রাঃ)-র নিকট আনা হতো। তিনি তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন। আমি (আলকামার মা) একটি নবজাতককে নিয়ে আয়েশা (রাঃ)-র নিকট এলাম। তিনি নবজাতকের বালিশ সরাতেই দেখা গেলো, একটি ক্ষুর তার শিয়রের নিচে। তিনি ক্ষুর সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা বললো, আমরা জিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তা রেখেছি। তিনি ক্ষুরটি ধরে তা দূরে নিক্ষেপ করেন এবং তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করেন। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস অপছন্দ করতেন এবং তাতে অসন্তুষ্ট হতেন। অতএব আয়েশা (রাঃ)-ও এরূপ করতে বারণ করেন।
অনুচ্ছেদঃ শুভ লক্ষণ।
আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ রোগ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই বা অশুভ লক্ষণেরও কোন বাস্তবতা নেই। আর শুভ ফাল অর্থাৎ (অদৃশ্য থেকে শ্রুত) উৎকৃষ্ট কথা আমার পছন্দনীয়। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) হাব্বা (তিরমিয়ীতে হায়্যা) ইবনে হাবিস আত-তামীমী (র) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ পেঁচার ডাকে অশুভ কিছু নেই। ফাল-ই হলো অধিক নির্ভরযোগ্য শুভ লক্ষণ এবং বদনজর সত্য বা বাস্তব। (তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ উত্তম নামকে বরকতময় মনে করা।
আবদুল্লাহ ইবনুস সাইব (রাঃ) হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর যখন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বললেন, সুহাইলকে তার সম্প্রদায় সন্ধির এই প্রস্তাবসহ পাঠিয়েছে যে, মুসলমানগণ এই বছর ফিরে যাবে এবং আগামী বছর কুরাইশগণ তিন দিনের জন্য (মক্কা নগরী মুসলমানদের জন্য) খালি করে দিবে। সুহাইল এসে পৌছলে নবী (সাঃ) বলেনঃ সুহাইল এসেছে। আল্লাহ তোমাদের বিষয়টি সহজ করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনুস সাইব (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেন।
অনুচ্ছেদঃ ঘোড়ায় কুলক্ষণ।
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কুলক্ষণ (বলতে কিছু থাকলে তাবারানী) ঘরবাড়ি, স্ত্রীলোক ও ঘোড়ায়। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, তাহাবী) সাহল ইবনে সাদ (র) রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যদি কিছুতে লক্ষণ থাকতো তবে তা স্ত্রীলোক, ঘোড়া ও বাসস্থানে থাকতো। -(বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তাহাবী) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এক বাড়িতে বসবাস করতাম। সেখানে আমাদের জনসংখ্যা ও ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল। অতঃপর আমরা অপর একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর সেখানে আমাদের জনসংখ্যা ও ধন-সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমরা আগের বাড়িতে ফিরে যাও অথবা তিনি বলেনঃ তোমরা এই বাড়ি ত্যাগ করো। কেননা এটি নিন্দনীয় বাড়ি। ইমাম বুখারী (র) বলেন, এ হাদীসের সনদে ত্রুটি আছে।