14. হাঁচি ও তার জবাবদান

【1】

অনুচ্ছেদঃ হাঁচি দেয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা করলে এবং যে কোন মুসলমান তা শোনতে পেলে হাঁচির জবাব দেয়া তার কর্তব্য। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব কেউ তা যেন যথাসাধ্য প্রতিহত করে। কোন ব্যক্তি হাই তুলে ‘হা’ (মুখ গহব্বর ফাঁক) করলে তাতে শয়তান (আনন্দে) অট্টহাসি দেয়। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমাহ)

【2】

অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যা বলবে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে শুধু ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে একজন ফেরেশতা বলেন, ‘রব্বিল আলামীন’। আর সে ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ বললে ফেরেশতা বলেন, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন)। (তাবারানী) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কেউ হাঁচি দিয়ে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার অপর (মুসলমান) ভাই বা সংগী যেন ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে। সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললে (শুকরিয়াস্বরূপ) সে যেন বলে, ‘ইয়াহদিকাল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকা’ (আল্লাহ তোমায় সৎপথে চালিত করুন এবং তোমার অবস্থার সংশোধন করুন)। -(বুখারী, আবু দাউদ) ইমাম বুখারী (র) এই বিষয়বস্তু সংক্রান্ত হাদীসমূহের মধ্যে উক্ত হাদীসকে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

【3】

অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতার জবাব দেয়া।

আবদুর রহমান ইবনে যিয়াদ ইবনে আনউম আল-ইফরীকী (র) তিনি বলেন যে, তারা মুআবিয়া (রাঃ)-এর আমলে নৌ-যুদ্ধে যোগদান করেন। পথিমধ্যে আমাদের জাহাজ আবু আইউব আনসারী (রাঃ)-র জাহাজের নিকটবর্তী হলে এবং আমাদের সকালের খাবার উপস্থিত হলে আমরা তার নিকট লোক পাঠালাম। তিনি এসে বলেন, তোমরা আমাকে দাওয়াত দিয়েছো। কিন্তু আমি রোযাদার। তবুও আমি তোমাদের দাওয়াত কবুল করেছি। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ এক মুসলমানের উপর তার অপর মুসলমান ভাইয়ের ছয়টি অনিবার্য দাবি রয়েছে। যদি কেউ তার একটিও লংঘন করে তবে সে তার ভাইয়ের প্রতি একটি অপরিহার্য কর্তব্য পালন করলো না। (১) তার সাথে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম দিবে। (২) সে তাকে দাওয়াত দিলে তা কবুল করবে। (৩) সে হাঁচি দিলে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) তার জবাব দিবে। (৪) সে রোগগ্ৰস্ত হলে তাকে দেখতে যাবে। (৫) সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে এবং (৬) সে পরামর্শ চাইলে তাকে উত্তম পরামর্শ দিবে। রাবী বলেন, আমাদের সাথে (ঐ অভিযানে) একজন রসিক লোকও ছিলেন। তিনি আমাদের সাথে আহাররত এক ব্যক্তিকে বলেন, আল্লাহ তোমাকে অতিশয় উত্তম প্রতিদান দিন। তাকে বারবার এরূপ বললে সে ক্ষেপে যেতো। রসিক ব্যক্তি আবু আইউব (রাঃ)-কে বলেন, এই লোকটি সম্পর্কে আপনি কি রলেন, আমি তাকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান ওয়া বাররান’ বললে সে ক্ষেপে যায় এবং আমাকে গালি দেয়। আবু আইউব (রাঃ) বলেন, আমরা বলতাম, কল্যাণ যার জন্য বাঞ্ছনীয় নয় অমঙ্গলই তার জন্য বাঞ্ছনীয়। অতএব তাকে এর উল্টা বলো। ঐ লোকটি তার নিকট এলে রসিক ব্যক্তি তাকে বলেন, জাযাকাল্লাহু শাররান ওয়া আররান (আল্লাহ তোমাকে অমঙ্গল ও কঠোর প্রতিদান দিন)। লোকটি হেসে দিলো এবং প্রসন্ন হলো আর বললো, তুমি বুঝি তোমার রসিকতা ত্যাগ করতে পারো না। তিনি বলেন, আল্লাহ আবু আইউব আনসারী (রাঃ)-কে উত্তম প্রতিদান দিন (তাহযীবুল কামাল)। আবু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের চারটি কর্তব্য রয়েছে। (১) সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে। (২) সে মারা গেলে তার জানাযায় শামিল হবে। (৩) সে তাকে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করবে। (৪) সে হাঁচি দিলে তার হাঁচির জবাব দিবে। -(ইবনে মাজাহ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান) বারাআ ইবনে আযেব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ (১) অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতে, (২) জানাযায় শরীক হতে, (৩) হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দিতে, (৪) প্রতিজ্ঞা পালন করতে, (৫) উৎপীড়িতের সাহায্য করতে, (৬) সালামের বহুল প্রচলন করতে এবং (৭) দাওয়াত দানকারীর দাওয়াত কবুল করতে। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ (১) সোনার আংটি পরতে, (২) রূপার বাসনপত্র ব্যবহার করতে এবং (৩) নরম তুলতুলে রেশমী বস্ত্র, (৪) (তৎকালে মিসরে উৎপাদিত) এক প্রকার রেশমী বস্ত্র, (৫) মোটা রেশমী বস্ত্র, (৬) রেশম ও সূতা মিশ্রিত রেশমী বস্ত্র ও (৭) মিহি রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করতে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি কর্তব্য রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই কর্তব্যগুলো কি কি? তিনি বলেনঃ (১) তার সাথে তোমার সাক্ষাত হলে সালাম দিবে। (২) সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করবে। (৩) সে তোমার কাছে পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে পরামর্শ দিবে। (৪) সে হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে তুমি তার জবাব দিবে। (৫) সে অসুস্থ হলে তুমি তাকে দেখতে যাবে। (৬) সে মারা গেলে তুমি তার জানাযায় ও দাফনে শরীক হবে। -(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

【4】

অনুচ্ছেদঃ যে হাঁচি দিতে শোনবে সে বলবে, আলহামদু লিল্লাহ।

আলী (রাঃ) যে ব্যক্তি কাউকে হাঁচি দিতে শোনে বলে, “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আল কুল্লি হালিন মাকানা” (সর্বাবস্থায় বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য প্রশংসা), কখনো তার দাঁতের ও কানের অসুখ হবে না। -(আহমাদ, তাবারানী, ইবনে শায়বাহ)

【5】

অনুচ্ছেদঃ কেউ হাঁচি দিতে শোনলে কিভাবে জবাব দিবে?

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে যেন বলে, আলহামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)। সে আলহামদু লিল্লাহ বললে তার অপর ভাই বা সাথী যেন বলে, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন)। আবার হাঁচিদাতা যেন বলে, ইয়াহদীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম (আল্লাহ তোমাকে সৎপথে চালিত করুন এবং তোমাকে স্বাচ্ছন্দ প্রদান করুন)। (বুখারী, আবু দাউদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে (আলহামদু লিল্লাহ বললে) এবং অপর মুসলমান ব্যক্তি তা শোনতে পেলে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন) বলা তার কর্তব্য হয়ে যায়। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তা যথাসাধ্য চেপে রাখে। কারণ তোমাদের কোন ব্যক্তি হাই তুললে তাতে শয়তান আনন্দের হাসি দেয়। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ) আবু জামরা (র) আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে হাঁচির জবাবে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের দোযখ থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হোন”। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জবাবে বলেনঃ ইয়ারহামুকাল্লাহ। অতঃপর আরেক ব্যক্তি হাঁচি দিলো কিন্তু তার জবাবে তিনি কিছুই বলেননি। সে ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ঐ লোকটির হাঁচির জবাব দিলেন, অথচ আমার জন্য কিছুই বলেননি। তিনি বলেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছে কিন্তু তুমি তো কিছুই বলোনি।

【6】

অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা আল্লাহর প্রশংসা না করলে হাঁচির জবাব দিবে না।

আনাস (রাঃ) দুই ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সামনে হাঁচি দিলো। নবী (সাঃ) তাদের একজনের হাঁচির জবাব দিলেন এবং অপরজনের হাঁচির জবাব দেননি। সে বললো, আপনি ঐ ব্যক্তির হাঁচির জবাব দিলেন, অথচ আমার হাঁচির জবাব দেননি। তিনি বলেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছে কিন্তু তুমি আল্লাহর প্রশংসা করোনি। (বুখারী, মুসলিম) আবু হুরায়রা (রাঃ) দুই ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট বসলো। তাদের একজন ছিল অপরজনের চেয়ে অধিক সম্মানী। তাদের মধ্যকার সম্মানী ব্যক্তিটি হাঁচি দিলো কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করলো না। নবী (সাঃ)-ও তার হাঁচির জবাব দেননি। অতঃপর অপর ব্যক্তি হাঁচি দিলো এবং আল্লাহর প্রশংসা করলো। নবী (সাঃ) তার হাঁচির জবাব দিলেন। তখন শরীফ ব্যক্তি বললো, আমি আপনার সামনে হাঁচি দিয়েছি, কিন্তু আপনি আমার কোন জবাব দেননি। অথচ এই ব্যক্তি হাঁচি দিলে আপনি তার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করেছে, তাই আমিও তাকে স্মরণ করেছি। অপরদিকে তুমি আল্লাহকে ভুলে রয়েছো, তাই আমিও তোমাকে ভুলে রয়েছি। -(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)

【7】

অনুচ্ছেদঃ হাঁচিদাতা প্রথমে কি বলবে?

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) তিনি হাঁচি দিলে তার জবাবে যখন বলা হতো, ইয়ারহামুকাল্লাহ, তখন তিনি প্রত্যুত্তরে বলতেন, “আল্লাহ আমাকে ও তোমাদেরকে দয়া করুন এবং আমাকে ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন”। (হাকিম, বাযযার) আবদুল্লাহ (রাঃ) তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দিলে যেন বলে, “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”। আর জবাবদাতা বলবে, ইয়ারহামুকাল্লাহ। প্রত্যুত্তরে প্রথম ব্যক্তি যেন বলে, “ইয়াগফিরুল্লাহু লী ওয়ালাকুম” (আল্লাহ আমাকে ও তোমাদের ক্ষমা করুন)। -(নাসাঈ, হাকিম, তাবারানী) ইয়াস ইবনে সালাম (র) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সামনে হাঁচি দিলে তিনি বলেনঃ ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমায় দয়া করুন)। সে পুনরায় হাঁচি দিলে তিনি বলেনঃ সে সর্দিতে আক্রান্ত। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

【8】

অনুচ্ছেদঃ যিনি বলেন, তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে থাকলে তিনি তোমাকে দয়া করুন।

মাকহুল আল-আযদী (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-এর পাশে উপস্থিত ছিলাম। মসজিদের এক পাশে এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, তুমি আল্লাহর প্রশংসা করে থাকলে আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন।

【9】

অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন হাঁচি দিয়ে ‘আ-ব’ না বলে।

মুজাহিদ (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর এক পুত্র আবু বাকর অথবা উমার হাঁচি দিয়ে ‘আ-ব’ শব্দ করলো। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, আ-ব আবার কি? আ-ব তো শয়তানদের মধ্যকার এক শয়তানের নাম। সে এটিকে হাঁচি ও আলহামদু লিল্লাহর মাঝখানে রেখে দিয়েছে। -(ইবনে আবু শায়বাহ)

【10】

অনুচ্ছেদঃ কেউ বারবার হাঁচি দিলে।

ইয়াস ইবনে সালামা (র) আমার পিতা বলেছেন, আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে নবী (সাঃ) বলেনঃ ইয়ারহামুকাল্লাহ। সে পুনরায় হাঁচি দিলে নবী (সাঃ) বলেনঃ এতো সর্দিতে আক্রান্ত। -(মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, দারিমী) আবু হুরায়রা (রাঃ) হাঁচিদাতার জবাব দাও, একবার, দুইবার, তিনবার, এরপর যা তা সর্দি। (আবু দাউদ)

【11】

অনুচ্ছেদঃ কোন ইহুদী হাঁচি দিলে।

আবু মূসা (রাঃ) ইহুদীরা নবী (সাঃ)-এর সামনে হাঁচি দিতো এই আশায় যে, তিনি তাদের জবাবে “ইয়ারহামুকুমুল্লাহ” বলবেন। কিন্তু তিনি বলতেনঃ ‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ (আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থার পরিবর্তন করুন)। -(আবু দাউদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম, তাহাবী)

【12】

অনুচ্ছেদঃ পুরুষ লোকের নারীর হাঁচির জবাব দেয়া।

আবু বুরদা (র) আমি আবু মূসা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মাতা উম্মুল ফাদল (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। আমি হাঁচি দিলাম কিন্তু তিনি তার জবাব দেননি। অথচ উম্মুল ফাদল (রাঃ) হাঁচি দিলে তিনি তার জবাব দিলেন। আমি (ফিরে এসে) আমার মাতাকে এই কথা জানালাম। অতঃপর আবু মূসা (রাঃ) আমার মায়ের কাছে এলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে হাঁচি দিয়েছিল, কিন্তু আপনি তার জবাব দেননি। অথচ উম্মুল ফাদল (রাঃ) হাঁচি দিলে আপনি তার জবাব দিয়েছেন। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে তোমরা তার জবাব দিও। আর যদি সে আল্লাহর প্রশংসা না করে তবে তোমরা তার জবাব দিও না”। আমার ছেলেটি (অর্থাৎ আপনার ছেলেটি) হাঁচি দিয়েছে, কিন্তু আলহামদু লিল্লাহ বলেনি, তাই আমিও তার জবাব দেইনি। উম্মুল ফাদল (রাঃ) হাঁচি দিয়েছেন এবং আলহামদু লিল্লাহ বলেছেন। তাই আমিও তার জবাব দিয়েছি। আমার মা বলেন, আপনি ঠিক করেছেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)

【13】

অনুচ্ছেদঃ হাই তোলা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন যথাসাধ্য তা চেপে রাখে (বুখারী, মুসলিম)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ কাউকে ডাকলে জবাবে লাব্বায়েক বলা।

মুআয (রাঃ) আমি জন্তুযানে নবী (সাঃ)-এর পিছনে আরোহিত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে মুআয! আমি বললাম, লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক (আমি হাযির আছি) । তিনি পরপর তিনবার এভাবে ডাকলেন, তুমি কি জানো, বান্দার কাছে আল্লাহর কি দাবি আছে? “তারা তার ইবাদত করবে এবং তার সাথে অপর কিছু শরীক করবে না”। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ পথ চলার পর আবার ডাকলেনঃ হে মুআয! আমি জবাব দিলাম, লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক। তিনি বলেনঃ তুমি কি জানো, তারা যদি তাই করে তবে মহামহিম আল্লাহর কাছে তাদের কি দাবি আছে? তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)

【15】

অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের সম্মানার্থে কোন ব্যক্তির দাঁড়ানো।

আবদুল্লাহ ইবনে কাব (রাঃ) কাব (রাঃ) অন্ধ হয়ে গেলে তার পুত্রদের মধ্যে তিনি তার পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি বলেন, কাব ইবনে মালেক (রাঃ) তাবুক যুদ্ধে যোগদান না করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পেছনে থেকে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, অতঃপর আল্লাহ তার তওবা কবুল করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের নামায পড়ার পর আল্লাহ কর্তৃক আমাদের তওবা কবুল করার কথা ঘোষণা করলেন। তাতে দলে দলে লোক এসে আমার তওবা কবুল হওয়ার জন্য আমাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। তারা বলেন, আপনার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ায় আমরা আপনাকে অভিনন্দন জানাই। এমতাবস্থায় আমি গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় সমাসীন। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রাঃ) উঠে দৌড়ে এসে আমার সাথে মোসাফাহা (করমর্দন) করেন এবং আমাকে অভিনন্দন জানান। আল্লাহর শপথ! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ব্যতীত আর কেউ আমার দিকে উঠে আসেননি। আমি তালহার এ ব্যবহার কখনও ভুলতে পারবো না। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) লোকেরা (ইহুদীরা) সাদ ইবনে মুআয (রাঃ)-এর ফয়সালা মেনে নেয়ার ব্যাপারে তাদের সম্মতি জ্ঞাপন করলে তার জন্য লোক পাঠানো হলো। তিনি একটি গাধায় চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদের নিকটে এসে পৌছলে নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তিকে বা তোমাদের নেতাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করো। তিনি বলেনঃ হে সাদ! তারা তোমার ফয়সালা মেনে নেয়ার সম্মতি প্রকাশ করেছে। সাদ (রাঃ) বলেন, তাদের ব্যাপারে আমার ফয়সালা এই যে, তাদের মধ্যকার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের হত্যা করা হবে এবং তাদের শিশুদের বন্দী করা হবে। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি আল্লাহর বা মহান মালিকের ফয়সালা অনুযায়ী ফয়সালা করেছো। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ) আনাস (রাঃ) সাহাবীগণের নিকট নবী (সাঃ)-এর দর্শন যতো প্রিয় ছিল, আর কারো দর্শন তাদের নিকট এতো প্রিয় ছিলো না। অথচ তারা তাঁকে (আসতে) দেখে তাঁর (সম্মানার্থে) কখনো উঠে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তা তাঁর অপছন্দীয়। (তিরমিযী, আহমাদ) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) কথাবার্তায়, উঠাবসায় ফাতেমার চাইতে নবী (সাঃ)-এর সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। তিনি আরও বলেন, নবী (সাঃ) তাকে দেখলেই অভ্যর্থনা জানাতেন, তার জন্য উঠে দাঁড়াতেন এবং তাকে চুমা দিতেন, অতঃপর তার হাত ধরে তাকে এনে নিজের বসার স্থানে বসাতেন। অপরদিকে নবী (সাঃ)-ও তার নিকট গেলে তিনি তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতেন এবং উঠে গিয়ে তাঁকে চুমা দিতেন। নবী (সাঃ)-এর অন্তিম রোগের সময় তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে অভ্যর্থনা জানালেন, তাকে চুমা দিলেন এবং তার সাথে গোপনে কথা বললেন। ফাতেমা (রাঃ) তাতে কেঁদে দিলেন। তিনি পুনরায় তাকে গোপনে কিছু বললে এবার তিনি (ফাতেমা) হাসেন। আমি উপস্থিত মহিলাগণকে বললাম, আমি মনে করি নারী জাতির মধ্যে এই মহিলা মর্যাদায় অনন্য। তবুও ইনি একজন নারীইবনে মাজাহ, কখনো কাঁদেন আবার কখনও হাসেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আপনাকে কী বলেছেন? তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি এখন গোপন রহস্যের সংরক্ষক। নবী (সাঃ) ইন্তিকাল করার পর তিন বলেন, প্রথমার তিনি গোপনে বলেনঃ “আমার মৃত্যু আসন্ন”। তাই আমি কেঁদেছি। অতঃপর তিনি গোপনে আমাকে বলেনঃ “আমার পরিজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমিই (মৃত্যুবরণ করে) আমার সাথে মিলিত হবে”। এতে আমি খুশি হই এবং তা আমাকে আনন্দিত করে। (বুখারী হা/৩৩৫৪, তিরমিযী হা/৩৮০৯, মুসলিম, আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)

【16】

অনুচ্ছেদঃ উপবিষ্ট ব্যক্তির জন্য কারো দাঁড়ানো।

জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমরা তাঁর পেছনে নামায পড়লাম। তিনি বসা অবস্থায় ইমামতি করেন। আর আবু বাকর (রাঃ) তাঁর মুকাব্বির হন। তিনি আমাদের দিকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেন। তিনি আমাদেরকে বসবার জন্য ইঙ্গিত করলেন। তাই আমরা বসে পড়লাম এবং বসা অবস্থায় তাঁর সাথে নামায পড়লাম। তিনি সালাম ফিরানোর পর বলেনঃ তোমরা তো প্রায় পারস্যবাসী ও রোমবাসীদের মত আচরণ করলে। তারা তাদের রাজা-বাদশাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, অথচ রাজা-বাদশাগণ থাকে বসা অবস্থায়। তোমরা এরূপ করো না। তোমরা তোমাদের ইমামগণের অনুসরণ করো। ইমাম যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়েন তবে তোমরাও দাড়ানো অবস্থায় নামায পড়ো। আর যদি তারা বসা অবস্থায় নামায পড়েন তবে তোমরাও বসা অবস্থায় নামায পড়ো। (মুসলিম)

【17】

অনুচ্ছেদঃ কারো হাই উঠলে যেন নিজ মুখে হাত দেয়।

আবু সাঈদ (র) নবী (সাঃ) বলেন তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তার হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। কেননা শয়তান মুখে প্রবেশ করে। -(মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কারো হাই আসলে সে যেন তার হাত তার মুখের উপর রাখে। কেননা তা শয়তানের পক্ষ থেকে। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন তার মুখ চেপে ধরে। অন্যথায় শয়তান তাতে প্রবেশ করে। (মুসলিম, আবু দাউদ) আবু সাঈদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কারো হাই উঠলে সে যেন তার হাত দ্বারা তার মুখ চেপে ধরে। অন্যথায় শয়তান তাতে ঢুকে পড়ে। -(মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ)

【18】

অনুচ্ছেদঃ একজন অপরজনের মাথার উকুন বেছে দিবে কি?

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) মিলহন-কন্যা উম্মু হারাম (রাঃ)-এর বাড়িতে যাতায়াত করতেন এবং তিনি তাঁকে আহার করাতেন। তিনি ছিলেন উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদা উম্মু হারাম (রাঃ) তাঁকে আহার করানোর পর তাঁর মাথার উকন বাছতে লাগলেন। নবী (সাঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন এবং ক্ষণিক পর হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক) কায়েস ইবনে আসেম আস-সাদী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেনঃ সে হলো তাঁবুবাসীদের নেতা। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কি পরিমাণ মাল থাকলে আমার উপর যাঞ্চাকারী বা মেহমানের কোন দায়দায়িত্ব থাকে না? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ চল্লিশটি (পশু সংখ্যা) উত্তম, আর উর্ধ্বতন সংখ্যা ষাট। আর দুই শতের মালিকদের তো বিপদ। তবে যে ব্যক্তি উঠতি বয়সের উট দান করে, দুধ পানের জন্য কাউকে উস্ত্রী ধার দেয় এবং মোটাতাজা উট যবেহ করে নিজেও আহার করে এবং অভাবী ভদ্রলোক ও যাঞ্চাকারীদেরও আহার করায় (তার ভয়ের কোন কারণ নাইবনে মাজাহ)। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা তো অতি উত্তম স্বভাব। কিন্তু আমি যে উপত্যকায় বাস করি সেখানে আমার পশুর প্রাচুর্যের বিচারে এটা তো মামুলি ব্যাপার। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কিরূপ দান-খয়রাত করো? আমি বললাম, উঠতি বয়সের উষ্ট্রীও দান করে থাকি। তিনি বলেনঃ তুমি কিভাবে দুধ পানের জন্য উষ্ট্রী ধার দিয়ে থাকো? আমি বললাম, আমি শত সংখ্যক দান করি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ প্রজননের ব্যাপারে তুমি কি করো? আমি বললাম, লোকজন তাদের গর্ভ গ্রহণকারিনী উষ্ট্রী নিয়ে আসে এবং আমার উট পালের মধ্যকার যে উটটিকে প্ররোচিত করতে পারে, তা সাথে নিয়ে যায় এবং তার প্রয়োজন মাফিক তা তার কাছে রেখে দেয়। প্রয়োজন শেষে সে তা ফেরত দিয়ে যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমার নিজের মাল তোমার অধিক প্রিয় নাকি তোমার ওয়ারিসদের মাল? রাবী বলেন, আমার মাল। তিনি বলেনঃ তোমার মাল তাই যা তুমি নিজে পানাহার করে শেষ করেছে অথবা কাউকে (আল্লাহর পথে) দান করেছো। তাছাড়া অবশিষ্টটুকু তোমার ওয়ারিসদের মাল। আমি বললাম, এবার ফিরে গিয়ে অবশ্যই উটের সংখ্যা কমিয়ে ফেলবো। অতঃপর তার মৃত্যুর সময় আসন্ন হলে তিনি তার পুত্রদের ডেকে একত্র করেন এবং বলেন, হে পুত্ৰগণ! তোমরা আমার উপদেশ শোনো। কেননা তোমাদের জন্য আমার উপদেশের চেয়ে অধিক কল্যাণকামী উপদেশদাতা আর কাউকে পাবে না। আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য বিলাপ করো না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর জন্য বিলাপ করা হয়নি। আমি নবী (সাঃ)-কে “বিলাপ করতে নিষেধ করতে শুনেছি”। আর আমার নামায পড়ার বস্ত্র দ্বারা আমার কাফন দিবে। তোমরা তোমাদের মধ্যকার প্রবীণদের নেতা নির্বাচিত করবে। কেননা যাবৎ তোমরা তোমাদের প্রবীণদের নেতা বানাবে তোমাদের পিতৃপুরুষের প্রতিনিধিত্ব তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে। আর যখন তোমরা তোমাদের মধ্যকার যুবকদের তোমাদের নেতা নির্বাচিত করবে, তখন লোক সমক্ষে তোমাদের পিতৃপুরুষের অবমাননা হবে। তোমাদের মধ্যে কৃচ্ছসাধনার প্রেরণা যোগাবে। তোমাদের জীবনযাত্রাকে সমুন্নত করো। কেননা তাতে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় না। তোমরা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। কেননা তা হচ্ছে সর্বশেষ নিকৃষ্টতর পেশা। যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে তখন আমার কবর মাটির সাথে সমান করে দিবে। কেননা আমার এবং ঐ পার্শ্ববতী জনপদে বসবাসরত বাকর ইবনে ওয়াইল গোত্রের মধ্যে প্রায়ই বিবাদ হতো। পাছে তাদের মধ্যকার কোন নিবোধ ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করে বসে যার প্রতিশোধ গ্রহণ তোমাদের বেলায় তোমাদের দীন-ধর্মের জন্য অনিষ্টকর হবে। (হাকিম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, তাবারানী, ইস্তীআব)

【19】

অনুচ্ছেদঃ অবাক-বিস্ময়ে মাথা দোলানো এবং দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরা।

আবু যার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর উযুর পানি নিয়ে আসলাম। তিনি তাঁর মাথা মললেন এবং দাঁত দ্বারা দুই ঠোঁট চেপে ধরলেন। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? তিনি বলেনঃ না। তুমি এমন অনেক আমীর ও ইমামের সাক্ষাত পাবে যারা ওয়াক্তমত নামায পরবে নাসাঈ, নামাযে বিলম্ব করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি হুকুম করেন? তিনি বলেনঃ তুমি ওয়াক্তমত নামায পড়বে, তারপর তাদের সাথে মিলিত হলে তাদের সাথেও নামায পড়বে। কিন্তু তুমি বলবে নাসাঈ, আমি নামায পড়েছি, পুনরায় আর পড়বো না। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী)

【20】

অনুচ্ছেদঃ হতবাক হয়ে বা অন্য কারণে কারো নিজ উরুতে চপেটাঘাত করা।

আলী (রাঃ) এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার এবং ফাতেমার নিকট এসে বলেনঃ তোমরা কি (রাতে নফল) নামায পড়ে না? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রাণ তো আল্লাহর হাতে, যখন তাঁর মর্জি হয় আমরা উঠি। নবী (সাঃ) আমার কথার কোন প্রতিউত্তর না করে চলে গেলেন। আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে তাঁর উরুতে চপেটাঘাত করে বলছেনঃ “মানুষ অতিশয় বিতর্কপ্রিয়”। (সূরা কাহফ : ৫৪) আবু রাযীন (র) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি তার কপালে চপেটাঘাত করে বলছেন, হে ইরাকবাসীরা! তোমরা কি মনে করো যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করি? তোমরা সওয়াবের ভাগী হবে আর আমি হবো গুনাহর ভাগী? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো এক জুতার ফিতা ছিড়ে গেলে সে যেন অপর জুতাটি পায়ে দিয়ে না হাঁটে, যাবৎ না তা মেরামত করে নেয়। (মুসলিম,ইবনে মাজাহ,নাসাঈ,আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) আবুল আলিয়া আল-বারাআ (র) আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত (র) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার জন্য একটি চেয়ার রেখে দিলাম। তিনি তাতে বসলে আমি তাকে বললাম, ইবনে যিয়াদ দেরীতে নামায পড়ে। আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি আমার উরুতে সজোরে চপেটাঘাত করেন এবং ফলে তাতে দাগ পড়ে যায়। তারপর তিনি বলেন, তুমি আমাকে যা জিজ্ঞেস করলে হুবহু এই প্রশ্নটি আমি আবু যার (রাঃ)-কে করেছিলাম। তিনি আমার উরুতে চপেটাঘাত করেন, যেমন আমি তোমার উরুতে চপেটাঘাত করলাম। তিনি বলেন, তুমি ওয়াক্তমত নামায পড়ে নাও। যদি পরে তাদের সাথে নামায পাও তবে পুনরায় তাদের সাথে নামায পড়ে নিও এবং বলো নাসাঈ, আমি তো নামায পড়েছি, এখন আর পড়বো না। (বুখারী, মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সাথে একটি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইবনে সাইয়াদ-এর নিকট গেলেন। তারা তাকে (ইবনে সাইয়াদকে) বনু মাগাল দুর্গের পাশে অন্যান্য বালকের সাথে খেলাধুলারত পেলেন। তখন ইবনে সাইয়াদ বলেগ প্রায়। সে নবী (সাঃ)-এর আগমন অনুভব করার আগেই নবী (সাঃ) তার হাত ধরে ফেলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আমি আল্লাহর রাসূল? ইবনে সাইয়াদ তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। এরপর সে নবী (সাঃ)-কে বললো, আপনি কি সাক্ষ্য দিবেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন নবী (সাঃ) তাকে ছেড়ে দিয়ে বলেনঃ আমি আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছি। তারপর তিনি ইবনে সাইয়াদকে জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কী দেখে থাকো? ইবনে সাইয়াদ বললো, আমার কাছে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী আগমন করে থাকে। নবী (সাঃ) বলেনঃ ব্যাপারটি তোমার কাছে বিভ্রান্তিকর করা হয়েছে। এরপর নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি একটি বিষয়ে তোমার থেকে (আমার মনের মধ্যে) গোপন রেখেছি। বলতো, সেটি কি? ইবনে সাইয়াদ বললো, তা হচ্ছে ‘আদ-দুখখ’। তিনি বলেনঃ তুমি লাঞ্ছিত হও। তুমি কখনো তোমার (জন্য নির্ধারিত) সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে অনুমতি দিন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি সে সেই (দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কাবু করার সামর্থ্য তোমাকে দেয়া হয়নি। আর যদি সে সেই দাজ্জাল না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে তোমার কোন কল্যাণ নেই। রাবী সালেম (র) বলেন, আমি ইবনে উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং উবাই ইবনে কাব (রাঃ) ঐ খেজুর বাগানের দিকে গেলেন যেখানে ইবনে সাইয়াদ ছিল। ইবনে সাইয়াদ তাঁকে দেখে ফেলার আগেই ইবনে সাইয়াদের কিছু কথা তিনি শুনে নিতে চাচ্ছিলেন। নবী (সাঃ) তাকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখলেন, যার ভেতর থেকে তার গুনগুন শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ইবনে সাইয়াদের মা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখতে পেলো যে, তিনি খেজুর গাছের কাণ্ডের আড়ালে আত্মগোপন করে অগ্রসর হচ্ছেন। সে তখন ইবনে সাইয়াদকে ডেকে বললো, ও সাফ! (এটি ইবনে সাইয়াদের ডাকনাম) এই যে মুহাম্মাদ! তখন ইবনে সাইয়াদ লাফিয়ে উঠলো। নবী (সাঃ) বলেনঃ সে (ইবন সাইয়াদের মা) তাকে স্ব-অবস্থায় থাকতে দিলে (ব্যাপারটি) স্পষ্ট হয়ে যেতো। সালেম (র) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনসমাবেশে ভাষণ দিতে দাড়িয়ে প্রথমে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন, অতঃপর দাজ্জালের প্রসংগ উত্থাপন করলেন। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ব্যাপারে সতর্ক করছি এবং এমন কোন নবী আসেননি যিনি তাঁর উম্মাতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেননি। নূহ (আঃ)-ও তার উম্মাতকে সতর্ক করেছেন। তবে আমি তার ব্যাপারে এমন একটি কথা বলবো যা পূর্ববতী নবীগণ বলেননি। জেনে রাখো! সে হবে কানা। আর আল্লাহ কখনও অন্ধ নন। (বুখারী, মুসলিম) জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) নাপাক হলে (অর্থাৎ তাঁর উপর গোসল ফরজ হলে) তিন অঞ্জলী পানি তাঁর মাথায় ঢালতেন। হাসান ইবনে মুহাম্মাদ (র) বলেন, হে আবু আবদুল্লাহ! আমার মাথার চুল যে অনেক বেশী ঘন। রাবী বলেন, জাবের (রাঃ) হাসানের উরুতে চপেটাঘাত করে বলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র! নবী (সাঃ)-এর মাথার চুল তোমার মাথার চুলের চাইতে বেশী ঘন ও সরস ছিল। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

【21】

অনুচ্ছেদঃ যে উপবিষ্ট ব্যক্তি তার সম্মানে অপরের দণ্ডায়মান হওয়াকে অপছন্দ করে।

জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) মদীনায় ঘোড়ার পিঠ থেকে একটি খেজুর গাছের গোড়ার উপর পড়ে যান এবং তাঁর পায়ে আঘাত পান। আমরা আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে তাঁকে দেখতে যেতাম। একবার আমরা তাঁর নিকট এসে দেখি যে, তিনি বসে নামায পড়ছেন। আমরা তাঁর সাথে দাড়িয়ে নামায পড়লাম। আরেকবার আমরা তাঁর নিকট এসে দেখি যে, তিনি বসা অবস্থায় ফরজ নামায পড়ছেন। আমরা তাঁর পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় নামায পড়লাম। তিনি ইশারায় আমাদেরকে বসতে বলেন। নামায শেষ করে তিনি বলেনঃ ইমাম বসা অবস্থায় নামায পড়লে তোমরাও বসে নামায পড়বে। আর ইমাম দাঁড়ানো অবস্থায় নামায পড়লে তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। ইমাম বসা অবস্থায় থাকলে তোমরা (তার সম্মানে) দাঁড়িও নাসাঈ, যেমন পারস্যবাসীরা তাদের নেতাদের বেলায় দাঁড়ায়। (আহমাদ হা/১৪২৫৪)। জাবের (রাঃ) আনসারদের মধ্যকার এক যুবকের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে তার নাম রাখে মুহাম্মাদ। আনসারগণ বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের নামে তোমাকে ডাকবো না। শেষে আমরা তার নিকট কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাস্তার উপর বসলাম। তিনি বলেনঃ তোমরা কি আমার কাছে কিয়ামাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে আমার নিকট এসেছো? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ শত বছর বাঁচবে এমন লোক খুব কমই আছে। আমরা বললাম, আনসারদের মধ্যকার এক যুবকের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। সে তার নাম রেখেছে মুহাম্মাদ। আনসারগণ তাকে বলেছেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের নামে তোমাকে ডাকবো না। তিনি বলেনঃ আনসারগণ উত্তম কাজ করেছে। তোমরা আমার নামে নাম রাখো, কিন্তু আমার ডাকনামে কাউকে অভিহিত করো না। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

【22】

অনুচ্ছেদঃ (দুনিয়া কতই না তুচ্ছ)।

জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর উভয় পাশে লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোন এক উচ্চভূমি দিয়ে একটি বাজার অতিক্রম করছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সামনে ক্ষুদ্র কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগলছানা পড়লো। তিনি সেটির কান ধরে বলেনঃ তোমাদের কেউ এক দিরহামের বিনিময়ে এটি পেতে আগ্রহী হবে কি? তারা বলেন, কোন কিছুর বিনিময়ে এটি পেতে আমরা আগ্রহী নই। আমরা এটি দিয়ে কি করবো? তিনি বলেনঃ তোমরা কি (বিনামূল্যে) এটি নিতে আগ্রহী হবে? তারা বলেন, না। তিনি তাদেরকে তিনবার একথা জিজ্ঞেস করেন। তারা বলেন, আল্লাহর শপথ! না। জীবিত হলেও তো তা ত্রুটিপূর্ণ হতো। কারণ তা কানবিহীন। (রাবী বলেন) “দুই কানবিহীন পশুকে ‘আসাক্ব’ বলে” (ইমাম নববী অর্থ করেছেন “ক্ষুদ্র কানবিশিষ্ট”)। অতএব মৃত হওয়াতে তা তো আরো মূল্যহীন। তিনি বলেনঃ আল্লাহর শপথ। এটি তোমাদের নিকট যতোখানি তুচ্ছ, দুনিয়াটা আল্লাহর কাছে তার চেয়েও অধিক তুচ্ছ। -(মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ) উতাই ইবনে দামরা (র) আমি দেখলাম যে, আমার পিতার নিকট এক ব্যক্তি জাহিলী যুগের মত বিলাপ করছে। আমার পিতা পরোক্ষভাবে না বলে সরাসরি তাকে কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করলেন। এজন্য তার সাথীরা তার দিকে তাকালে তিনি বলেন, তাকে এভাবে বলা হয়তো তোমরা অপছন্দ করছো। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কখনও কাউকে সমীহ করবো না। নিশ্চয় আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের মতো বিলাপ করবে, তোমরা তাকে পরোক্ষে না বলে তার প্রতি কঠোর ব্যবহার করবে”।

【23】

অনুচ্ছেদঃ কারো পায়ে ঝিঝি ধরলে যা বলবে।

আবদুর রহমান ইবনে সাদ (র) ইবনে উমার (রাঃ)-এর পা ঝিঝি ধরে অবশ হলে এক ব্যক্তি তাকে বললো, আপনার প্রিয়মত ব্যক্তিকে স্মরণ করুন। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ)। (ইবনুস সুন্নী)

【24】

অনুচ্ছেদঃ (প্রথম তিন খলীফাকে জান্নাতের সুসংবাদ)।

আবু মূসা (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-এর সাথে মদীনার বাগানসমূহের মধ্যকার এক বাগানে ছিলেন। নবী (সাঃ)-এর হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি তা দ্বারা পানি ও কাদা মাটিতে আঘাত করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে (বাগানের প্রবেশদ্বার) খোলার আবেদন করলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তার জন্য (প্রবেশদ্বার) খুলে দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি আবু বাকর (রাঃ)। আমি তার জন্য দ্বার খুলে দিলাম এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর আরেক ব্যক্তি প্রবেশদ্বার খোলার আবেদন করলেন। তিনি বলেনঃ দ্বার খুলে দিয়ে তাকেও বেহেশতের সুসংবাদ দাও। তিনি ছিলেন উমার (রাঃ)। আমি দ্বার খুলে দিয়ে তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর আরেক ব্যক্তি দ্বার খোলার আবেদন করলেন। নবী (সাঃ) তখন হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসে বলেনঃ তাকেও ফটক খুলে দাও এবং তাকেও বিপদাপদের শিকার হওয়াসহ বেহেশতের সুসংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি তিনি উসমান (রাঃ)। আমি তাকে দ্বার খুলে দিলাম এবং নবী (সাঃ) যা বলেছেন তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বলেন, আল্লাহই আমার সাহায্যকারী। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

【25】

অনুচ্ছেদঃ শিশুদের সাথে মোসাফাহা করা।

আলম ইবনে ওয়ারদান (র) আমি আনাস ইবনে মালেক (র)-কে লোকজন সাথে মোসাফাহা করতে দেখলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কে? আমি বললাম, আমি লাইস গোত্রের মুক্তদাস। তিনি তিনবার আমার মাথায় হাত বুলান এবং বলেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন।

【26】

অনুচ্ছেদঃ মোসাফাহা (করমর্দন)।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) যখন ইয়ামনবাসীগণ এসে উপস্থিত হন তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ “ইয়ামনবাসীগণ এসেছে। তাদের অন্তর তোমাদের তুলনায় অধিক কোমল” (রাবী বলেন,) তারাই সর্বপ্রথম মোসাফাহা করেন। -(আবু দাউদ) বারাআ ইবনে আযেব (রাঃ) তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার মোসাফাহা (করমর্দন) সালামকে পূর্ণতা দান করে। -(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

【27】

অনুচ্ছেদঃ শিশুর মাথায় কোন মহিলার হাত বুলানো।

ইবরাহীম ইবনে মারযূক আছ-ছাকাফী (র) আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-র সমর্থক ছিলেন এবং পরে হাজ্জাজ তাকে তার নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) আমাকে তার মা আসমা বিনতে আবু বাকর (রাঃ)-এর কাছে পাঠাতেন এবং আমি তাকে তাদের প্রতি হাজ্জাজের দুর্ব্যবহারের কথা অবগত করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন এবং আমার মাথায় হাত বুলাতেন। আমি ছিলাম তখন বালক বয়সী।

【28】

অনুচ্ছেদঃ মুয়ানাকা (আলিঙ্গন)।

ইবনে আকীল (র) জাবের ইবন আবদুল্লাহ (র) তার নিকট বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এক সাহাবীর বরাতে একটি হাদীস সম্পর্কে অবহিত হন। আমি (জাবের) একটি উট ক্রয় করে তাতে আরোহণ করে এক মাসের পথ অতিক্রম করে সিরিয়ায় গিয়ে তার নিকট উপস্থিত হই। সেই সাহাবী ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস (রাঃ)। আমি তাকে খবর পাঠালাম যে, জাবের তোমার দ্বারে অপেক্ষমাণ। দূত ফিরে এসে জিজ্জেস করলো, আপনার নাম কি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)? আমি বললাম, হাঁ। তখন তিনি বাইরে বের হয়ে এসে আমাকে আলিঙ্গন করেন। আমি বললাম, এমন একটি হাদীস আমার নিকট পৌঁছেছে যা আমি ইতিপূর্বে শুনিনি। আমার আশংকা হলো হয়তো আমি মারা যাবো অথবা আপনি মারা যাবেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা বান্দাগণকে বা মানবজাতিকে হাশরের মাঠে উঠাবেন বস্ত্রহীন ও সহায়-সম্বলহীন অবস্থায়। আমরা বললাম, সহায়-সম্বলহীন কি? তিনি বলেনঃ তাদের কোন সহায়-সম্বল থাকবে না। তিনি তাদেরকে সশব্দে ডাকবেন, দূরবর্তীগণও তা শুনতে পাবে, যেমন শুনতে পাবে নিকটবর্তীরা, “আমিই রাজাধিরাজ”। কোন বেহেশতবাসী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন দোযখবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকবে। আর কোন দোযখবাসীও দোযখে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ তার উপর কোন বেহেশতবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকবে। আমি বললাম, সে দাবি কিভাবে মিটমাট করবে, যেখানে আমরা সকলে উথিত হবো আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? তিনি বলেনঃ নেকী এবং গোনাহ দ্বারা। -(বুখারী, আহমাদ, আবু ইয়ালা, তাবারানী, হাকিম)

【29】

অনুচ্ছেদঃ নিজ কন্যাকে চুমা দেয়া।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) কথাবার্তায় ফাতেমার চাইতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। ফাতেমা (রাঃ) তার নিকট এলে তিনি উঠে তার নিকট যেতেন, তাকে স্বাগত জানাতেন, তাকে চুমা দিতেন এবং তাকে নিজের জায়গায় বসাতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও তার নিকট গেলে ফাতেমা (রাঃ)-ও তাঁর নিকট উঠে যেতেন, তাঁর হাত ধরে তাকে স্বাগত জানাতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। নবী (সাঃ) অন্তিমরোগে আক্রান্ত অবস্থায় ফাতেমা (রাঃ) আসলে তিনি তাকে স্বাগত জানান এবং চুমা দেন। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)

【30】

অনুচ্ছেদঃ হাতে চুমা দেয়া।

ইবনে উমার (রাঃ) আমরা একটি যুদ্ধে যোগদান করলাম। (যুদ্ধের ভয়াবহতায়) লোকজন পলায়ন করলো। আমরা বলাবলি করলাম, আমরা কেমন করে নবী (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করবো, অথচ আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছি। তখন নাযিল হলো, “অবশ্য যুদ্ধকৌশল অবলম্বনের জন্য পশ্চাৎপদ হলে স্বতন্ত্র কথা” (সূরা আনফাল : ১৬)। আমরা বলাবলি করলাম, আমরা মদীনায় ফিরে যাবো না। তাহলে লোকজন আমাদেরকে দেখবে না। আমরা আরও বললাম, যদি আমরা মদীনায় ফিরে যাই! নবী (সাঃ) ফজরের নামায পড়ে কেবল বের হয়েছেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো পলাতকের দল। তিনি বলেনঃ তোমরা তো পাল্টা আক্রমণকারী দল। তাঁর একথায় আমরা তাঁর হাতে চুমা দিলাম। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের দলভুক্ত। -(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ) আবদুর রহমান ইবনে রাজীন (র) আমরা একদা রাবাযা নামক স্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের বলা হলো, সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) এখানে আছেন। আমরা তার নিকট এসে তাকে সালাম দিলাম। তিনি তার দুই হাত বের করে বলেন, এই দুই হাতে আমি আল্লাহর নবীর হাতে বায়আত হয়েছি। তিনি তার হৃষ্টপুষ্ট এক হাতের তালু বের করলেন, যা ছিল উটের পাঞ্জার মত। আমরা উঠে তার নিকট গিয়ে তাতে চুমা দিলাম। ইবনে জুদআন (র) সাবিত (র) আনাস (রাঃ)-কে বলেন, আপনি কি নবী (সাঃ)-কে নিজ হাতে স্পর্শ করেছেন? তিনি বলেন, হাঁ। তখন তিনি তার হাতে চুমা দিলেন।

【31】

অনুচ্ছেদঃ পায়ে চুমা দেয়া (কদমবুচি)।

ওয়াজে ইবনে আমের (রাঃ) আমরা (আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল মদীনায়) পৌছলে বলা হলো, ইনিই আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। আমরা তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে তাতে চুমা দিলাম। (আবু দাউদ) সুহাইব (র) আমি আলী (রাঃ)-কে আব্বাস (রাঃ)-এর হাত ও উভয় পায়ে চুমা দিতে দেখেছি।

【32】

অনুচ্ছেদঃ একজনের সম্মানার্থে অপরজনের দাঁড়ানো।

আবু মিজলায (র) মুয়াবিয়া (রাঃ) বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমের ও আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বসা ছিলেন। ইবনে আমের উঠে দাঁড়ালেন এবং ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বসে থাকলেন। আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) ছিলেন তাদের উভয়ের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার সম্মানে আল্লাহর বান্দাগণ দাঁড়ালে আনন্দিত হয় সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ, তাবারানী, হাকিম)