15. পরস্পর সালাম বিনিময়
অনুচ্ছেদঃ সালামের সূচনা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আবু দাউদ)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেন, যাও, উপবিষ্ট ঐ ফেরেশতার দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয় তা মনোযোগ সহকারে শোনো। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম (সম্ভাষণ)। আদম (আঃ) গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম (আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ (আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ “ওয়া রহমাতুল্লাহি” বাড়িয়ে বলেন। যে ব্যক্তি বেহেশতে যাবে সেই হবে আদম (আবু দাউদ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট। তখন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের দেহাবয়ব (উচ্চতাবারানী) ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ সালামের প্রসার।
বারাআ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা সালামের বহুল প্রসার করো, তাহলে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। তোমরা পরস্পরকে মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন জিনিস জ্ঞাত করবো নাসাঈ, যাতে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি হয়? সাহাবাগণ বলেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে সালামের বহুল প্রসার ঘটাও। (মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাদত করো, মানুষকে আহার করাও এবং সালামের বহুল প্রচলন করো, তাহলে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করতে পারবে। -(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয়।
বশীর ইবনে ইয়াসার (র) ইবনে উমার (রাঃ)-কে তার আগে কেউ সালাম দিতে পারতো না। -(আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান) জাবের (রাঃ) আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে গমনকারীকে সালাম দিবে এবং পদব্রজে গমনকারী বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে। আর দুই পথচারীর মধ্যে যে প্রথম সালাম দিবে সে অধিক উত্তম। নাফে (র) ইবনে উমার (র) তাকে অবহিত করেন যে, মুযায়না গোত্রের আল-আগারর (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সাহাবী ছিলেন। আমর ইবনে আওফ গোত্রের এক ব্যক্তির নিকট তার কয়েক ওয়াসাক খেজুর পাওনা ছিল। তিনি এজন্য বেশ কয়েক বার তাকে তাগাদাও দেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি আমার সাথে আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে পাঠান। তিনি বলেন, (পথিমধ্যে যার সাথেইবনে মাজাহ) আমাদের সাক্ষাত হয়েছে তারাই আগে আমাদের সালাম দিয়েছে। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, তুমি কি লক্ষ্য করছে না যে, লোকজন তোমাকে আগে সালাম দিচ্ছে এবং তাদের সওয়াব হচ্ছে? তুমি আগে তাদেরকে সালাম দাও, তোমার সওয়াব হবে। ইবনে উমার (রাঃ) এটাকে নিজের ঘটনা বলেছেন। (তাবারানী) আবু আইউব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা হালাল নয়। অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, তাদের দু’জনের সাক্ষাত হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ঐদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ সালাম বিনিময়ের ফযীলাত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন এক মজলিসে ছিলেন। সে বললো, আসসালামু আলাইকুম। নবী (সাঃ) বলেনঃ দশটি নেকী। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি ঐ পথে যেতে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী (সাঃ) বলেনঃ বিশ নেকী। আরেক ব্যক্তি সেখান দিয়ে যেতে বললো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ। নবী (সাঃ) বলেনঃ তিরিশ নেকী। অতঃপর এক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলো, কিন্তু সালাম দিলো না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ হয়তো তোমাদের সাথী (সালামের মর্যাদা) বিস্তৃত হয়েছে। তোমাদের কেউ মজলিসে এসে পৌছলে যেন সালাম দেয়। তারপর মজলিসে বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে সে বসবে। আবার সে যখন চলে যাবে তখনও যেন সালাম দেয়। কেননা পরের সালাম পূর্বের সালামের চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ নয়। -(তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, আহমাদ, আবু দাউদ) উমার (রাঃ) আমি বাহনের পেছন দিকে আবু বাকর (রাঃ)-এর সফরসংগী ছিলাম। তিনি যে কোন জনসমষ্টিকে অতিক্রম করেন তাদেরকে আসসালামু আলাইকুম বলেন। তারা বললো, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আর তিনি আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বললে তারা বলে, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, লোকজন আজ আমাদের চেয়ে অনেক বেশী সওয়াবের অধিকারী হলো। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ইহুদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এতো বেশী ঈর্ষান্বিত নয় যতোটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। (ইবনে মাজাহ হা/৮৫৬)
অনুচ্ছেদঃ সালাম হলো মহামহিম আল্লাহর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি নাম।
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ সালাম হলো আল্লাহ তাআলার নামসমূহের একটি। তিনি দুনিয়াবাসীদের জন্য তা দান করেছেন। অতএব তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের বহুল প্রচলন করো। -(তাবারানী, বাযযার) ইবনে মাসউদ (রাঃ) লোকজন নবী (সাঃ)-এর পেছনে নামায পড়ছিলো। এক ব্যক্তি বললো, আসসালামু আলাল্লাহ (আল্লাহর প্রতি সালাম)। নবী (সাঃ) নামায শেষে জিজ্ঞেস করেনঃ আসসালামু আলাল্লাহ কে বলেছে? নিশ্চয় আল্লাহ হলেন সালাম (শান্তিদাতাবারানী)। বরং তোমরা বলো, ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি....... আবদুহু ওয়া রাসূলুল্লাহু’। “সমস্ত সম্মান, ইবাদত, উপাসনা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রহমাত এবং প্রাচুর্যও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তার বান্দাহ ও রাসূল”। রাবী বলেন, সাহাবীগণ তা এতো গুরুত্ব সহকারে শিক্ষা করতেন, যেমন তোমাদের কেউ কুরআনের সূরা শিক্ষা করে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ দুই মুসলমানের সাক্ষাতকালে সালাম প্রদানকারী মুসলমানের অধিকার।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি কর্তব্য রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কি কি? তিনি বলেনঃ (১) তুমি তার সাথে সাক্ষাত করলে তাকে সালাম দিবে। (২) সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তুমি তার দাওয়াত কবুল করবে। (৩) সে তোমার কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইলে তুমি তাকে সৎ পরামর্শ বা সদুপদেশ দিবে। (৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে তুমি তার হাঁচির জবাব দিবে। (৫) সে মারা গেলে তুমি তার সংগী হবে (জানাযা পড়বে ও দাফন করবে)। -(বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ পথচারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে।
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আরোহী যেন পদচারীকে সালাম দেয়। পদচারী যেন উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দেয়, অল্প সংখ্যক যেন বেশি সংখ্যককে সালাম দেয়। যে ব্যক্তি সালামের জবাব দিলো তার সওয়াব তাদের জন্য আর যে ব্যক্তি সালামের জবাব দিলো না তার জন্য কিছুই নাই। (আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আরোহী পদচারীকে সালাম দিবে, পদচারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। (বুখারী, মুসলিম) জাবের (রাঃ) দুইজন পদচারী একত্র হলে তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দেয় সে অধিক উত্তম ।
অনুচ্ছেদঃ আরোহী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আরোহী পদচারীকে সালাম দিবে, পদচারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। (বুখারী, মুসলিম) ফাদালা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ অশ্বারোহী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে সালাম দিবে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। -(তিরমিযী, নাসাঈ, দারিমী, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ পদচারী কি আরোহীকে সালাম দিবে?
হুসাইন (র) এক অশ্বারোহীর সাথে শাবী (র)-এর সাক্ষাত হলে তিনি তাকে প্রথমে সালাম দেন। আমি বললাম, আপনি তাকে প্রথমে সালাম দিলেন? তিনি বলেন, আমি শুরায়হ (রাঃ)-কে পদব্ৰজে যেতে প্রথমে সালাম দিতে দেখেছি।
অনুচ্ছেদঃ ক্ষুদ্র দল বড়ো দলকে সালাম দিবে।
ফাদালা ইবনে উবায়েদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আরোহী পদচারীকে পদচারী উপবিষ্টকে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। -(তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে হিব্বান) ফাদালা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ অশ্বরোহী পদচারীকে, পদচারী দণ্ডায়মান ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। (ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ ছোটরা বড়োদের সালাম দিবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ছোট বড়োকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং কম সংখ্যক বেশী সংখ্যককে সালাম দিবে। (তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ সালামের সমাপ্তি।
আবু যিনাদ (র) যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ)-এর পুত্র খারিজা (র) যায়েদ (রাঃ)-এর পত্রে সালাম লিখতেনঃ “আপনার প্রতি সালাম, হে আমীরুল মুমিনীন এবং আল্লাহর রহমাত, বরকত, তাঁর ক্ষমা ও সর্বোৎকৃষ্ট করুণারাশি বর্ষিত হোক”।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইশারায় সালাম দিলো।
হাইয়্যায ইবনে বিসাম আবু কুররা আল-খুরাসানী (র) আমি দেখেছি যে, আনাস (রাঃ) আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে তার হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে আমাদের সালাম দিতেন। তাতে শ্বেতরোগের দাগ ছিল। আমি হাসান (র)-কে দেখেছি যে, তিনি হলুদ রঙ্গের খেজাব ব্যবহার করতেন এবং তার মাথায় থাকতো কালো পাগড়ী। আসমা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) তার হাতের ইশারায় নারীদের সালাম দেন। -(দারিমী, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) সাদ (রাঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) ও কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (র)-এর সাথে সফরে রওয়ানা হন। তারা সারিফ নামক স্থানে উপনীত হলে আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) সেই পথে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদেরকে ইঙ্গিতে সালাম দেন এবং তারা দু’জনে তার জবাবও দেন। আতা ইবনে আবু রাবাহ (র) সাহাবীগণ হাতের ইশারায় সালামের আদান-প্রদান অপছন্দ করতেন।
অনুচ্ছেদঃ প্রতিপক্ষকে শুনিয়ে সালাম দিবে।
সাবিত ইবনে উবাইদ (র) আমি এক মজলিসে আসলাম। সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি বলেন, তুমি সালাম দিলে তা (প্রতিপক্ষের) কর্ণগোচর করো। কেননা তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বরকতপূর্ণ ও পবিত্র বাক্য।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সালাম আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে বের হয়।
তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কাব (র) তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতেন এবং তার সাথে বাজারে যেতেন। রাবী বলেন, আমরা বাজারে যাওয়ার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র সাথে সর্বসাধারণ, দোকানদার, ফকীর-মিসকীন বা অন্য যে কোন লোকের সাক্ষাত হতো তিনি তাকে সালাম দিতেন। তুফাইল (র) বলেন, একদিন আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট আসলাম। তিনি আমাকে নিয়ে বাজারে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? না আপনি কেনাকাটা করেন, না কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, না দরদাম করেন, আর না বাজারের কোন মজলিসে বসেন। বরং আমাদের নিয়ে এখানেই বসুন, কিছু আলাপ-আলোচনা করি। আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বলেন, হে ভুরিওয়ালা (তার পেট মোটা ছিল)। আমরা তো বাজারে যাই যাকে সামনে পাই তাকে সালাম দেয়ার জন্য। -(মুয়াত্তা মালিক, তাবাকাত ইবনে সাদ)
অনুচ্ছেদঃ মজলিসে পৌছে কারো সালাম দেয়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি মজলিসে গিয়ে পৌঁছলে সে যেন সালাম দেয়। সে ফিরে যেতেও সালাম দিবে। কেননাসাঈ, পরের সালাম আগের সালাম থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। -(তিরমিযী, নাসাঈ, তাবারানী, তাহাবী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ মজলিস থেকে বিদায়কালে সালাম দেয়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি মজলিসে এসে পৌছে যেন সালাম দেয়। সে মজলিসে বসার পর মজলিস শেষ হওয়ার পূর্বে উঠে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে যেন পুনরায় সালাম দেয়। কেননা আগের সালাম কোন অংশেই শেষের সালামের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। -(আবু দাউদ, নাসাঈ, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ মজলিস থেকে বিদায়কালে সালাম প্রদানকারীর অধিকার।
মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (র) আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি যদি কোন মজলিসে তার কল্যাণ লাভের আশায় অংশগ্রহণ করো, অতঃপর কোন প্রয়োজনে তোমাকে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে হয় তবে তুমি বলবে, সালামুন আলাইকুম! তাহলে সেই মজলিসে অংশগ্রহণকারীগণ তাতে যে কল্যাণ লাভ করবে, তুমিও তাতে শরীক থাকবে। আর যারা কোন মজলিসে অংশগ্রহণের পর আল্লাহকে স্মরণ না করে মজলিস ভঙ্গ করে উঠে যায়, তারা যেন একটি মৃত গাধা (খেতে একত্র হওয়ার পর) উঠে গেলো। (তাবারানী) আবু মরিয়ম (র) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করলে সে যেন তাকে সালাম দেয়। যদি তাদের মধ্যে কোন গাছ বা প্রাচীর অন্তরায় হয়, অতঃপর পুনরায় তাদের সাক্ষাত হয়, তখনও যেন তাকে সালাম দেয়। (আবু দাউদ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সাহাবাগণ একত্র থাকা অবস্থায় তাদের সামনে কোন গাছ প্রতিবন্ধক হওয়ায় তাদের কতক তার ডান পাশ দিয়ে এবং কতক বাম পাশ দিয়ে যেতে তাদের পুনরায় সাক্ষাত হতেই পরস্পর সালাম করতেন। (তাবারানী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মুসাফাহা করার উদ্দেশে হাতে তৈল মালিশ করে।
সাবিত আল-বুনানী (র) আনাস (রাঃ) সকালবেলা বন্ধু-বান্ধবের সাথে মোসাফাহা (করমর্দন) করার জন্য তার হাতে সুগন্ধি তৈল মাখতেন।
অনুচ্ছেদঃ পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন ইসলাম সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি আহার করাবে এবং সালাম দিবে পরিচিত-অপরিচিত সকলকে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ (রাস্তার অধিকার)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়ির আঙ্গিনায় এবং উঁচু স্থানসমূহের ঢালে বসতে নিষেধ করলেন। মুসলমানগণ বলেন, তা তো আমাদের সাধ্যাতীত। তিনি বলেনঃ যদি তাই হয় তবে তোমরা তার দাবি পূরণ করো। তারা বলেন, রাস্তার দাবি কি? তিনি বলেনঃ দৃষ্টিশক্তি সংযত রাখা, পথিককে পথ বলে দেয়া, হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া এবং সালামের উত্তর দেয়া। (আবু দাউদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কৃপণ এবং যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দেয় না সে প্রতারক। যদি তোমার ও তোমার অপর ভাইয়ের মাঝখানে কোন গাছ প্রতিবন্ধক হয় তবে যথাসাধ্য তুমিই তাকে আগে সালাম দিতে তৎপর হবে। সে যেন তোমার আগে তোমাকে সালাম দিতে না পারে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র মুক্তদাস সালেম (র) কেউ ইবনে উমার (রাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি বর্ধিত শব্দযোগে তার উত্তর দিতেন। আমি তার নিকট আসলাম এবং তিনি তখন বসা ছিলেন। আমি বললাম, আসসালামু আলাইকুম। তিনি উত্তর দেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি পুনরায় তার নিকট এসে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি উত্তর দেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি পুনরায় তার নিকট এসে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি এবার জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া তাইয়্যিবু সালাওয়াতিহি।
অনুচ্ছেদঃ পাপাচারীকে সালাম দিবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) তোমরা মদ্যপায়ীকে সালাম দিও না। (বুখারী) হাসান (র) তোমার ও পাপাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে সম্মানের কোন সম্পর্ক থাকবে না। আবু জুরাইক (র) তিনি আলী ইবনে আবদুল্লাহ (র) সম্পর্কে শুনেছেন যে, তিনি দাবা খেলা অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, যারা এই খেলায় অভ্যস্ত তোমরা তাদেরকে সালাম দিও না। কেননা তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি খালূক (যাফরান মিশ্রিত খোশবু) ব্যবহারকারী ও পাপাচারীকে সালাম দেয় না।
আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) নবী (সাঃ) এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে খালূক প্রসাধনী মাখা এক ব্যক্তিও ছিল। তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে তাদের সালাম দিলেন, কিন্তু ঐ ব্যক্তিকে উপেক্ষা করলেন। সে বললো, আপনি যে আমাকে উপেক্ষা করলেন? তিনি বলেনঃ তার দুই চোখের মাঝখানে জ্বলন্ত কয়লা রয়েছে। আমর ইবনে শুআইব (র) এক ব্যক্তি সোনার আংটি পরে নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলো। নবী (সাঃ) তাকে অবজ্ঞা করলেন। সে তাঁর অবজ্ঞা অনুভব করতে পেরে চলে গিয়ে ঐ আংটি ফেলে দিলো এবং একটি লোহার আংটি পরিধান করলো, অতঃপর নবী (সাঃ)-এর নিকট এলো। তিনি বলেনঃ এটা মন্দ, এটা দোযখবাসীদের অলংকার। সে ফিরে গেলো এবং তাও ফেলে দিয়ে একটি রূপার আংটি পরিধান করলো। নবী (সাঃ) এবার তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। -(তাহাবী) আবু সাঈদ (রাঃ) বাহরাইন থেকে এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এলো। সে তাকে সালাম দিলো কিন্তু জবাব তিনি দেননি। তার হাতে ছিল সোনার আংটি এবং তার পরনে ছিল একটি রেশমী জুব্বা। লোকটি বিষন্ন মনে ফিরে গিয়ে ঘটনাটি তার স্ত্রীকে জানালো। তার স্ত্রী বললো, হয়তো তোমার এই জুব্বা ও সোনার আংটির কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরূপ করে থাকবেন। সে এই দু’টি ফেলে দিয়ে পুনরায় ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিলো। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন। সে বললো, কিছুক্ষণ আগে আমি আপনার নিকট এসেছিলাম। তখন আপনি আমাকে উপেক্ষা করেছেন। তিনি বললেঃ তখন তোমার হাতে দোযখের জ্বলন্ত অঙ্গার ছিল। সে বললো, তাহলে তো আমি অনেক অঙ্গারই সঞ্চয় করেছি। তিনি বলেনঃ তুমি তো তাই নিয়ে এসেছিলে। কারো কাছে হাররা প্রান্তরের পাথরের চেয়ে অধিক পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তা তো পার্থিব জীবনের সম্পদই। সে বললো, তাহলে আমি কিসের আংটি বানাবো? তিনি বলেনঃ রূপা, পিতল বা লোহা দ্বারা। (নাসাঈ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ আমীরকে সালাম দেয়া।
ইবনে শিহাব (র) উমার ইবনে আবদুল আযীয (র) আবু বাকর ইবনে সুলায়মান ইবনে আবু হাসমাকে জিজ্ঞেস করেন, কেনো আবু বাকর (রাঃ) পত্রের শিরোনামে লিখতেনঃ আবু বাকর, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খলীফার পক্ষ থেকে। অতঃপর উমার (রাঃ) লিখতেন, উমার ইবনুল খাত্তাব, আবু বাকরের খলীফার (প্রতিনিধির) পক্ষ থেকে। সর্বপ্রথম কে “আমীরুল মুমিনীন” শব্দটি লেখার প্রচলন করেন? তিনি বলেন, আমার পিতামহী শিফা (রাঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি প্রথম যুগের মুহাজির মহিলাদের একজন এবং উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বাজারে গেলে তার সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করতেন। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ইরাকের শাসনকর্তাকে লিখে পাঠান, আমার নিকট দুইজন বিজ্ঞ ও সম্ভ্রান্ত লোক পাঠাও যাদেরকে আমি ইরাক ও তার অধিবাসীদের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো। ইরাকের শাসনকর্তা লবীদ ইবনে রবীয়া এবং আদী ইবনে হাতেম (রাঃ)-কে তার নিকট পাঠান। তারা মদীনায় পৌছে তাদের বাহনদ্বয় মসজিদের চত্বরে বাঁধেন। অতঃপর তারা মসজিদে প্রবেশ করে আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর সাক্ষাত পান। তারা তাকে বলেন, হে আমর! “আমীরুল মুমিনীন” উমার (রাঃ)-এর সাথে আমাদের সাক্ষাতের অনুমতি নিয়ে দিন। আমর (রাঃ) উমার (রাঃ)-এর কাছে দ্রুত ছুটে গেলেন এবং বলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আমীরুল মুমিনীন। উমার (রাঃ) তাকে বলেন, হে আসের পুত্র! এই পদবী তুমি কোথায় পেলে? তুমি যা বলেছে তা প্রত্যাহার করো। তিনি বলেন, হাঁ, লবীদ ইবনে রবীয়া এবং আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) এসেছেন। তারা আমাকে বলেছেন, আমীরুল মুমিনীনের নিকট থেকে আমাদের জন্য সাক্ষাতের অনুমতি এনে দিন। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! তোমরা দু’জনে তার যথার্থ নামকরণ করেছো। নিশ্চয় তিনি আমীর এবং আমরা মুমিন। সেদিন থেকে তা লেখার প্রচলন হয়। (ইসতীআব) উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (র) মুআবিয়া (রাঃ) যখন খলীফারূপে প্রথমবার হজ্জ করতে আসেন তখন উসমান ইবনে হুনাইফ আনসারী (রাঃ) তার নিকট আসেন এবং বলেন, আসসালামুআলাইকুম আয়্যুহাল আমীর ওয়া রহমাতুল্লাহ (হে আমীর! আপনাকে সালাম ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক)। সিরিয়াবাসীদের তা অপছন্দ হলো। তারা বললো, কে এই মোনাফিক যে আমীরুল মুমিনীনের প্রতি অভিবাদনটাকে খাটো করেছে? তখন উসমান (রাঃ) তার হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন। এরা এমন একটি ব্যাপারকে অপছন্দ করছে যা তাদের চাইতে আপনি অধিক জ্ঞাত। আল্লাহর শপথ! আমি আবু বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ)-কে এভাবে অভিবাদন করেছি। তাদের কেউই তা অপছন্দ করেননি। মুআবিয়া (রাঃ) সিরিয়াবাসীদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ কথা বলেছে তাকে বলেন, ওহে! চুপ করো। তিনি যা বলেছেন ব্যাপার অনেকটা তাই। কিন্তু সিরিয়াবাসীরা গোলযোগ ঘটে যাবার পর বলে, আমাদের খলীফার প্রতি অভিবাদনকে সংক্ষিপ্ত করবো না। হে মদীনাবাসীগণ! আমি তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, তোমরা যাকাত আদায়কারীদেরকেও “আমীর” বলে সম্বোধন করে থাকো। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক) জাবের (রাঃ) আমি হাজ্জাজের নিকট গিয়েছি কিন্তু তাকে সালাম দেইনি। (হাকিম) তামীম ইবনে হাযলাম (র) কুফাতে সর্বপ্রথম কাকে আমীর সম্বোধন করে সালাম দেয়া হয়েছিল তা আমার অবশ্যই স্মরণ আছে। মুগীরা ইবনে শোবা (রাঃ) কুফার রাহবা ফটক দিয়ে বের হলে কিনদার এক ব্যক্তি তার নিকট আসেন। লোকের ধারণা যে, তিনি ছিলেন আবু কুররা আল-কিন্দী। তিনি তাকে সালাম দিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকা আয়্যুহাল আমীর ওয়া রহমাতুল্লাহ আসসালামু আলাইকুম। মুগীরা (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং বলেন, আসসালামু আলাইকুম আয়্যুহাল আমীরু ওয়া রহমাতুল্লাহ আসসালামু আলাইকুম, এটা কি? আমি তাদেরই একজন কিনা? সিমাক (র) বলেন, অতঃপর মুগীরা (রাঃ) এই আমীর উপাধি গ্রহণ করেন। হিময়ারের এক শাখার সদস্য যিয়াদ ইবনে উবায়েদ আর-রুয়াইনী (র) আমরা রুয়াইফে (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি তখন আনতাবুলসের আমীর (শাসক)। এক ব্যক্তি এসে তাকে সালাম দিয়ে বললো, আসসালামু আলাল আমীর। আবদা (র)-এর বর্ণনায় আছে, সে বললো, আসসালামু আলাইকা আয়্যুহাল আমীর। রুয়াইফে (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি যদি আমাকেই সালাম দিতে তবে অবশ্যই আমি তোমার সালামের জবাব দিতাম। তুমি তো মিসরের শাসক মাসলামা ইবনে মুখাল্লিদকে সালাম দিয়েছো। তুমি তার নিকট যাও, তিনিই তোমার সালামের জবাব দিবেন। রাবী যিয়াদ (র) বলেন, আমরা তার ওখানে গেলে এবং তিনি মজলিসে উপস্থিত থাকলে আসসালামুআলাইকুম বলতাম।
অনুচ্ছেদঃ নিদ্রিত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া।
মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) নবী (সাঃ) রাতের বেলা এসে এমনভাবে সালাম দিতেন যে, ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হতো নাসাঈ, অথচ জাগ্রত লোক তা শুনতে পেতো। (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ তোমায় দীর্ঘজীবি করুন।
শাবী (র) উমার (রাঃ) আদী ইবনে হাতেম তাঈ (রাঃ)-কে বলেন, সুনাম সহকারে আল্লাহ তোমায় দীর্ঘজীবি করুন।
অনুচ্ছেদঃ মারহাবা (স্বাগতম)।
আয়েশা (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ) পদব্রজে আসলেন। আর তার হাঁটার ভংগি ছিল নবী (সাঃ)-এর হাঁটার অনুরূপ। নবী (সাঃ) বলেনঃ মারহাবা (স্বাগতম), কন্যা আমার, অতঃপর তাকে নিজের ডান অথবা বামপাশে বসান। (বুখারী, মুসলিম) আলী (র) আম্মার (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি তার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে বলেনঃ এই পাক-পবিত্র ব্যক্তিকে স্বাগতম। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, বুখারীর তারীখ)
অনুচ্ছেদঃ কিভাবে সালামের উত্তর দিবে?
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) একদা আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী এক স্থানে একটি গাছের ছায়ায় নবী (সাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন এক কর্কশ ও কঠোর প্রকৃতির বেদুইন এসে বললো, আসসালামু আলাইকুম। লোকজন বললো, ওয়া আলাইকুম। আবু হামযা (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে সালাম দেয়া হলে তার জবাবে আমি তাকে “ওয়া আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলতে শুনেছি। কাইলা (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ ওয়া আলাইকাস সালামু ওয়া রহমাতুল্লাহ। (ইবনে মানদা আবু যার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি সবেমাত্র নামায পড়ে অবসর হয়েছেন। আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তাকে ইসলামী রীতিতে সালাম দিয়েছে। তিনি বলেনঃ ওয়া আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ। তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, গিফার গোত্রের। (মুসলিম) আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হে আয়েশা! ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমি যা দেখতে পাই না আপনি তা দেখতে পান। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে একথা বলেন। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (র) আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! কোন ব্যক্তি তোমাকে অতিক্রমকালে তোমাকে আসসালামু আলাইকুম বললে তুমি শুধু ‘ওয়া আলাইকা' (এবং তোমার উপরও) বলো না। কেননা তাতে কেবল তাকেই সালাম দিচ্ছে, অথচ সে একা নয়। বরং তুমি বলবে, আসসালামু আলাইকুম।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সালামের জবাব দেয়নি।
আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত (র) আমি আবু যার (রাঃ)-কে বললাম, আমি উম্মুল হাকামের পুত্র আবদুর রহমানের নিকট দিয়ে যেতে তাকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে কোন উত্তরই দেননি। তিনি বলেন, হে ভাইপো! তাতে তোমার কিছু যায় আসে না। তার চেয়েও উত্তম ব্যক্তি অর্থাৎ ডান পাশের ফেরেশতা তোমার সালামের উত্তর দিয়েছেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) সালাম হলো আল্লাহর নামসমূহের মধ্যকার একটি নাম। তিনি তা পৃথিবীতে রেখেছেন। অতএব তোমরা পরস্পরের মধ্যে তার ব্যাপক প্রসার করো। কোন ব্যক্তি কোন লোকসমষ্টিকে সালাম দিলে এবং তারা তার জবাব দিলে তাদের চেয়ে তার একটি মর্যাদা বেশী হয়। কেননা সে তাদের আস-সালামকে (শান্তিদাতাকে) স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। যদি তারা তার সালামের উত্তর নাও দেয় তবে এমন একজন তার উত্তর দেন যিনি তার বা তাদের চেয়ে অধিক উত্তম ও পবিত্র। -(বাযযার, তাবারানী, ইবনে আবু শায়বাহ) হাসান (র) সালাম দেয়া হলো নফল (ঐচ্ছিক)। কিন্তু তার উত্তর দেয়া ফরয (বাধ্যতামূলক)।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) যে ব্যক্তি শপথ করে মিথ্যা বলে সে সবচেয়ে বড়ো মিথ্যাবাদী। যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে মারাত্মক কৃপণ। যে ব্যক্তি নামায চুরি করে সে বড়ো চোর। আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে, সে সবচাইতে বড়ো কৃপণ। যে ব্যক্তি দোয়া করার ব্যাপারে অক্ষম, সে সবচেয়ে বড়ো অক্ষম।
অনুচ্ছেদঃ শিশুদের সালাম দেয়া।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) তিনি বালকদের নিকট দিয়ে যেতে তাদেরকে সালাম দেন এবং বলেন, নবী (সাঃ) তাদের সাথে তাই করতেন। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী) আনবাসা (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-কে মক্তবের বালকদের সালাম দিতে দেখেছি।
অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোকদের পুরুষ লোককে সালাম দেয়া।
উম্মু হানী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কে এই মহিলা ? আমি বললাম, উম্মু হানী। তিনি বলেনঃ মারহাবা-স্বাগতম। (বুখারী, মুসলিম) মুবারক (র) আমি হাসান বসরী (র)-কে বলতে শুনেছিঃ নারীরা পুরুষদেরকে সালাম দিতেন ।
অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের সালাম দেয়া।
আসমা (রাঃ) নবী (সাঃ) মসজিদের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন একদল মহিলা তথায় বসা ছিলেন। তিনি হাতের ইশারায় তাদেরকে সালাম দেয়ার পর বলেনঃ তোমরা নিয়ামতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা থেকে সাবধান হও, তোমরা নিয়ামতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা থেকে সাবধান হও। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহর নবী। আমরা আল্লাহর কাছে তার দেয়া নিয়ামতরাজির প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। তিনি বলেনঃ হাঁ, তোমাদের কোন নারীর স্বামীর বিরহ-যন্ত্রনা দীর্ঘায়িত হলে সে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে বলে, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো সামান্য সময়ের জন্যও তার থেকে কোন ভালো ব্যবহার পাইনি। এটাই হলো আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং এটাই হলো নিয়ামতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ হা/২৮১৪১) আসমা বিনতে ইয়াযীদ আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাকে অতিক্রম করলেন। আমি তখন আমাদের মহিলাদের সাথে বসা ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাম দেয়ার পর বলেনঃ নিয়ামতপ্রাপ্তদের অকৃতজ্ঞতা থেকে সাবধান হও। নারীদের মধ্যে আমি তার নিকট প্রশ্ন করতে খুবই নির্ভীক ছিলাম। অতএব আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিআমতপ্রাপ্তদের অকৃজ্ঞতা কি? তিনি বলেনঃ হয়তো তোমাদের কারো পিতা-মাতার ঘরে অবিবাহিত অবস্থায় দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়। অতঃপর আল্লাহ তাকে স্বামী দান করেন এবং তার ঔরসে তাকে সন্তানাদি দান করেন। তারপরও সে খুব অসন্তুষ্ট হয়ে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং বলে, আমি তোমার নিকট কখনো ভালো ব্যবহার পেলাম না (আহমাদ হা/২৮১১৩) ।
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি (অনেকের মধ্যে) কাউকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়া অপছন্দ করে।
তারিক ইবনে শিহাব (র) আমরা আবদুল্লাহ (রাঃ)-র নিকট বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তার সংবাদ বাহক এসে বললো যে, নামাযের জামাআত শুরু হয়ে গেছে। অতএব তিনিও উঠলেন এবং আমরাও তার সাথে উঠে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তিনি লোকদেরকে মসজিদে সম্মুখভাগে রুকু অবস্থায় দেখলেন। তিনি তাকবীর (তাহরীমা) বলে রুকূ করলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হয়ে তার অনুরূপ করলাম। এক ব্যক্তি দ্রুতবেগে যেতে যেতে বললো, হে আবদুর রহমানের পিতা! আসসালামু আলাইকুম। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন এবং তার রাসূল (সাঃ) পূর্ণরূপে পৌছে দিয়েছেন। আমরা নামায শেষ করলে তিনি ফিরে গিয়ে তার অন্দরমহলে চলে গেলেন এবং আমরা তার (ফিরে আসার) অপেক্ষায় স্বস্থানে বসে থাকলাম। শেষে তিনি বের হয়ে এলেন। আমাদের কতক কতককে বললো, তোমাদের কে তাঁকে জিজ্ঞেস করবে? তারিক (র) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করবো। অতএব তিনি জিজ্ঞেস করলে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ কিয়ামতের নিকটবর্তী কালে লোক বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পৰ্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে। (আহমদ ৩৮৭০) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে তোমার আহার করানো এবং সালাম দেয়া। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)