16. দেখা-সাক্ষাতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা
অনুচ্ছেদঃ পর্দা সংক্রান্ত আয়াত কিভাবে নাযিল হয়েছে?
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনায় আসেন তখন আনাস (রাঃ) দশ বছরের বালক। আমার মা-খালা তাঁর খেদমত করার জন্য আমাকে তাগিদ দিতেন। অতএব আমি দশ বছর যাবত তাঁর খেদমতে নিয়োজিত থাকি। তিনি যখন ইনতিকাল করেন তখন আমার বয়স বিশ বছর। তাই আমি পর্দার বিধান সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-কে বিবাহ করলে পর সর্বপ্রথম পর্দার বিধান সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়। নববধূর সাথে রাত যাপনের পর তিনি ভোরে উপনীত হয়ে লোকজনকে আহারের দাওয়াত করেন। (ঐ দিন রাতে) তারা আহার সেড়ে চলে গেলো এবং কতক লোক মহানবী (সাঃ)-এর নিকট থেকে গেলো। তারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলো। তাই তিনি একবার বাইরে যান আবার ভেতরে আসেন। আমিও তাঁর সাথে বাইরে গেলাম যাতে তারা চলে যায়। তিনি পায়চারি করতে থাকলেন, আমিও তাঁর সাথে পায়চারি করতে থাকলাম। এভাবে তিনি আয়েশা (রাঃ)-র ঘরের দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি ধারণা করলেন যে, হয়তো তারা চলে গেছে। তাই তিনি ফিরে এলেন এবং আমিও ফিরে এলাম। তিনি যয়নব (রাঃ)-র ঘরে পৌঁছে দেখলেন যে, তারা বসেই আছে। অতএব তিনি আবার ফিরে এলেন এবং আমিও ফিরে এলাম। তিনি আয়েশা (রাঃ)-র ঘরের চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছলেন। তিনি মনে করলেন যে, এবার তারা হয়তো চলে গেছে। তাই তিনি ফিরে এলেন এবং আমিও ফিরে এলাম। দেখা গেলো যে, তারা চলে গেছে। মহানবী (সাঃ) তাঁর ও আমার মাঝখানে পর্দা টানিয়ে দিলেন এবং পর্দা সংক্রান্ত বিধান নাযিল করা হলো। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ পর্দার তিন সময়।
সালাবা ইবনে আবু মালেক আল-কুরাযী (র) তিনি “পর্দার তিন সময়” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য জন্তুযানে আরোহণ করে বনু হারিসা ইবনুল হারিস-এর সদস্য আবদুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ (রাঃ)-র নিকট গেলেন। কারণ তিনি এই তিন সময়ের নিয়ম মেনে চলতেন। তিনি বলেন, তুমি কী জানতে চাও? আমি বললাম, আমি ঐ তিন সময়ের বিধান মেনে চলতে চাই। তিনি বলেন, দুপুরের সময় যখন আমি আমার পোশাকাদি খুলে রাখি তখন আমার পরিবারের কোন বালেগ সদস্য আমার অনুমতি ব্যতীত আমার নিকট প্রবেশ করতে পারে না। অবশ্য আমি যদি তাকে ডাকি, তবে এটাও তার জন্য অনুমতি। আর যখন ফজরের ওয়াক্ত হয় এবং লোকজনকে চেনা যায়, তখন থেকে ফজরের নামায পড়া পর্যন্ত সময়ও (কেউ অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করতে পারে নাসাঈ)। আর যখন আমি এশার নামায পড়ার পর পোশাক খুলে রেখে ঘুমানো পর্যন্ত (অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করে নাসাঈ) (ইসতীআব ও উসদুল গা বাযযার)।
অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীর সাথে স্বামীর আহার গ্রহণ।
আয়েশা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে হায়স (এক প্রকার মিষ্টি খাদ্য) খাচ্ছিলাম। তখন উমার (রাঃ) এলে তিনি তাকে ডাকলেন এবং তিনিও আহার করলেন। তার হাত আমার আঙ্গুল স্পর্শ করলে তিনি বলেন, তোমাদের ব্যাপারে বোধশক্তি কাজ করলে কোন চোখ তোমাদের দেখতে পেতো না। তখন পর্দার বিধান নাযিল হয়। (নাসাঈ) সালেম ইবনে সারজ (র) তিনি উম্মু হাবীব বিনতে কায়েস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, একই পাত্রে (আহারের সময়) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাত আমার হাতে লেগে যায়। -(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে আবু শায়বাহ, তাবারানী)
অনুচ্ছেদঃ কেউ বসতিহীন ধরে প্রবেশ করল।
নাফে (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, কেউ বসতিহীন ঘরে প্রবেশ করলে যেনো বলে, “আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন” (আমাদের উপর এবং আল্লাহর সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। -(ইবনে আবু শায়বাহ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) (মহান আল্লাহর বাণী)ঃ “তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্য ঘরে প্রবেশ করো নাসাঈ, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি গ্রহণ করো এবং ঘরবাসীদের সালাম দাও” (সূরা নূর : ২৭)। মহান আল্লাহর বাণীঃ “বসতিহীন যে ঘরে তোমাদের জিনিসপত্র রয়েছে তাতে তোমাদের প্রবেশ করায় কোন আপত্তি নাই। তোমরা যা প্রকাশ করো এবং যা গোপন করো তা আল্লাহ জানেন” (সূরা নূর : ২৯)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই শেষোক্ত আয়াতের নির্দেশ পূর্বোক্ত আয়াতের নির্দেশের ব্যতিক্রম। (তাবারী)
অনুচ্ছেদঃ “তোমাদের ক্রীতদাসেরা যেন তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে” (২৪ : ৫৮)।
ইবনে উমার (র) (আল্লাহর বাণী) “তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে তারা যেন তোমাদের অনুমতি প্রার্থনা করে” (সূরা নূর : ৫৮) । তিনি বলেন, এই নির্দেশ পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণী, “যখন তোমাদের শিশুরা বালেগ হয়” (২৪ : ৫৯)।
ইবনে উমার (রাঃ) তার কোন সন্তান বালা হলেই তিনি তাঁকে পৃথক (বিছা নাসাঈ) করে দিতেন। সে অনুমতি ব্যতীত তার নিকট প্রবেশ করতে পারতো না।
অনুচ্ছেদঃ মায়ের (ঘরে প্রবেশ করতেও) অনুমতি প্রার্থনা করবে।
আলকামা (র) এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ (রাঃ)-র নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, আমি কি আমার মায়ের নিকট (প্রবেশ করতেও) অনুমতি চাইবো? তিনি বলেন, প্রতিটি মুহুর্তে তুমি তাকে দেখতে পছন্দ করবে না। মুসলিম ইবনে নায়ীর (র) এক ব্যক্তি হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললো, আমি কি আমার মায়ের নিকটও অনুমতি প্রার্থনা করবো? তিনি বলেন, তুমি তার অনুমতি না চাইলে তাকে এমন অবস্থায় দেখে ফেলবে যা তুমি পছন্দ করো না।
অনুচ্ছেদঃ পিতার নিকটও (প্রবেশের) অনুমতি চাইবে।
মূসা ইবনে তালহা (র) আমি আমার পিতার সাথে আমার মায়ের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে আমিও তার অনুসরণ করলাম। তিনি পেছনে ফিরে আমার বুকে সজোরে আঘাত করে আমাকে আমার নিতম্বের উপর বসিয়ে দিলেন, অতঃপর বলেন, অনুমতি না নিয়েই তুমি প্রবেশ করলে?
অনুচ্ছেদঃ পিতা ও সন্তানের নিকটও (প্রবেশের) অনুমতি চাইবে।
জাবের (রাঃ) যে কোন ব্যক্তি তার সন্তানের নিকট এবং মায়ের নিকট অনুমতি চাইবে, তিনি বৃদ্ধা হলেও, ভাইবনে মাজাহ, বোন ও পিতার নিকটও প্রবেশানুমতি চাইবে।
অনুচ্ছেদঃ নিজের বোনের নিকটও প্রবেশানুমতি চাইবে।
আতা (র) আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, আমি কি আমার বোনের নিকটও প্রবেশানুতি প্রার্থনা করবো? তিনি বলেন, হাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করে বললাম, আমার প্রতিপালনাধীনে আমার দু’টি বোন আছে, আমিই তাদের পৃষ্ঠপোষক (নিরাপত্তা দানকারী) এবং আমিই তাদের ভরণপোষণ করি, আমি কি তাদের নিকটও প্রবেশানুমতি চাইবো? তিনি বলেন, হাঁ। তুমি কি তাদেরকে উলঙ্গ দেখতে পছন্দ করবে? অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পড়েন (অনুবাদ) : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মালিকনাধীন দাস-দাসী এবং তোমাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানেরা তিনটি সময়ে যেন তোমাদের নিকট প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করেঃ ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরের সময় যখন তোমরা পোশাক খুলে রেখে দাও এবং এশার নামাযের পর। তোমাদের তিনটি পর্দা করার সময়” (সূরা নূর : ৫৮)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, পর্দার এই তিন সময়ই তাদেরকে অনুমতি প্রার্থনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের শিশুরা প্রাপ্তবয়সে পৌছলে অবশ্যই (সব সময়) অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে, যেমন তাদের প্রবীণরা অনুমতি নিয়ে আসে” (সূরা নূর : ৫৯)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতএব অনুমতি প্রার্থনা করা বাধ্যতামূলক। ইবনে জুরাইজের বর্ণনায় আরো আছে, সকল লোকের জন্য। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
অনুচ্ছেদঃ নিজের ভাইয়ের কাছেও অনুমতি প্রার্থনা করবে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) মানুষ তার পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের নিকট প্রবেশানুমতি চাইবে। (তাবারী)
অনুচ্ছেদঃ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করবে।
উবাইদ ইবনে উমাইর (র) আবু মূসা আশআরী (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-র নিকট প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। উমার (রাঃ) হয়তো কোন কাজে মশগুল ছিলেন। তাই আবু মূসা (রাঃ) ফিরে এলেন। উমার (রাঃ) অবসর হয়ে বলেন, আমি কি আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ)-র আওয়াজ শুনিনি? তোমরা তাকে আমার অনুমতি দাও। বলা হলো, তিনি ফিরে গেছেন। তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন। আবু মূসা (রাঃ) বললেন, আমাদেরকে এরূপই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বলেন, আপনি আমার সামনে এর অনুকূলে প্রমাণ পেশ করুন। অতএব তিনি আনসারদের মজলিসে এসে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। তারা বলেন, আমাদের মধ্যকার কনিষ্ঠতর আবু সাঈদ আল-খুদরীই এর অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে। অতএব তিনি আবু সাঈদ (রাঃ)-কে নিয়ে গেলেন। উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একটি নির্দেশ আমার অজ্ঞাত থেকে গেলো? বাজারে ব্যবসাই আমাকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে অর্থাৎ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বাইরের যাতায়াত। -(বুখারী, মুসলিম, আদ-দুররুল মানসুর, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ সালাম না দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করলে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) যে ব্যক্তি সালাম না দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করে তিনি তার সম্পর্কে বলেন, সে সালাম না দেয়া পর্যন্ত তাকে প্রবেশানুমতি দেয়া যাবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) কেউ সালাম না দিয়ে প্রবেশ করলে তুমি বলো, সে চাবি নিয়ে না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ সালাম না দেয়া পর্যন্ত। (খোলা যাবে নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ বিনা অনুমতিতে কেউ ভেতর বাড়িতে তাকালে তার চোখ ফুটো করে দেয়া হবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি কোন লোক তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে দেখে এবং তুমি তার প্রতি কংকর নিক্ষেপ করো, তা তার চোখে বিদ্ধ হলে তাতে তোমার কোন দোষ হবে না। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁর ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায়। তিনি তাঁর তুণীর থেকে তীর তুলে নিয়ে তার দুই চোখ বরাবর তাক করেন। -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ)
অনুচ্ছেদঃ চোখের কারণেই অনুমতি প্রার্থনা করতে হয়।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিলো। নবী (সাঃ) তখন লোহার একটি চিরুনী দিয়ে তাঁর মাথা আচড়াচ্ছিলেন। নবী (সাঃ) তাকে দেখে বলেনঃ আমি যদি জানতে পারতাম যে, তুমি (উঁকি মেরে) আমাকে দেখছো, তাহলে আমি এই চিরুনী দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ) মহানবী (সাঃ) চোখের কারণেই অনুমতি প্রার্থনার বিধান দেয়া হয়েছে। (আবু দাউদ) আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি মারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তীরের ফলা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। লোকটি তার মাথা টেনে বের করে নেয়।
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তার ঘরে সালাম করলে।
আবু মূসা (রাঃ) আমি উমার (রাঃ)-র নিকট তিনবার প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই আমি ফিরে এলাম। তিনি আমার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেন, হে আবদুল্লাহ! তোমার কতো কষ্ট হলো যে, তুমি আমার ঘরের দরজায় অবরুদ্ধ হলে। বুঝে নাও! তোমার ঘরের দরজায়ও লোকজন এভাবে অবরুদ্ধ হয়ে কষ্ট ভোগ করে। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করেছি, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই আমি ফিরে এসেছি। আর আমাদেরকে অনুরূপ নির্দেশই দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বলেন, আপনি তা কার নিকট শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি তা নবী (সাঃ)-এর নিকট শুনেছি। উমার (রাঃ) বলেন, সত্যিই কি আপনি নবী (সাঃ)-এর কাছে শুনেছেন, যা আমি শুনিনি? আপনি যদি একথার প্রমাণ নিয়ে আসতে ব্যর্থ হন তবে আমি আপনাকে উচিৎ শাস্তি দিবো। অতএব আমি রওয়ানা হয়ে মসজিদে (নববীতে) উপবিষ্ট একদল আনসারীর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম এবং তাদের নিকট প্রমাণ প্রার্থনা করলাম। তারা বলেন, এই বিষয়ে কি কেউ সন্দেহ করতে পারে? অতএব উমার (রাঃ) যা বলেছেন আমি তাদেরকে তা অবহিত করলাম। তারা বলেন, আমাদের মধ্যকার কনিষ্ঠতর ব্যক্তিই তোমার সাথে দাঁড়াবে। অতএব আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) অথবা আবু মাসউদ (রাঃ) আমার সাথে উমার (রাঃ)-র নিকট যেতে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন, আমরা নবী (সাঃ)-এর সাথে রওয়ানা হলাম। তিনি সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ)-কে দেখতে যাওয়ার মনস্থ করলেন। তিনি তার বাড়িতে পৌছে সালাম দিলেন, কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়া হলো না। এভাবে তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার সালাম দিলেন, কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তিনি বলেনঃ আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। অতঃপর তিনি ফিরে চললেন। ইতিমধ্যে সাদ (রাঃ) (বের হয়ে এসে) তার সাথে সাক্ষাত করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন! আপনি যতবারই সালাম দিয়েছেন তা আমি শুনতে পেয়েছি এবং আপনার সালামের উত্তর দিয়েছি। কিন্তু আমার প্রতি ও আমার পরিবার-পরিজনের প্রতি আপনার অধিক সালাম আশা করছিলাম (তাই সাড়া দেইনি)। আবু মূসা (রাঃ) এবার উমার (রাঃ)-কে বলেন, আল্লাহর শপথ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসের ব্যাপারে অবশ্যই আমি বিশ্বস্ত আমানতদার। তিনি বলেন, অবশ্যইবনে মাজাহ, কিন্তু আমি এর অনুকূলে আরো প্রমাণ আশা করছিলাম। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির ডাকাও অনুমতি হিসাবে গণ্য।
আবদুল্লাহ (র) কোন ব্যক্তিকে ডাকা হলে তাকে অনুমতি দেওয়া হলো। -(ইবনে আবু শায়বাহ) আবু হুরায়রা (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কাউকে ডাকা হলে এবং সে বার্তাবাহকের সাথে আগমন করলে সেটাই তার জন্য অনুমতি। -(বুখারী, আবু দাউদ, বাযযার, ইবনে হিব্বান) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির নিকট অপর ব্যক্তির বার্তাবাহক পাঠানোই তার অনুমতি গণ্য হবে। (আবু দাউদ) আবুল আলানিয়া (র) আমি আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-র বাড়িতে এসে সালাম দিলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আমি পুনরায় সালাম দিলাম, কিন্তু অনুমতি প্রাপ্ত হলাম না। আমি তৃতীয়বার উচ্চস্বরে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দার। এবারও আমি অনুমতি প্রাপ্ত হলাম না। অতএব আমি একপাশে সরে গিয়ে বসে থাকলাম। আমার নিকট একটি গোলাম বের হয়ে এসে বললো, প্রবেশ করুন। আমি প্রবেশ করলে আবু সাঈদ (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি আরো অধিকবার অনুমতি প্রার্থনা করলে তোমাকে অনুমতি দেয়া হতো না। আমি তার নিকট বিভিন্ন পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আর আমি যে জিনিস সম্পর্কেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বলেন, হারাম। শেষে আমি তাকে চামড়ার পাত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হারাম। মুহাম্মাদ (র) বলেন, ‘জাফ’ অর্থ মাথায় চামড়া জড়িয়ে দেহে জ্বর উঠানো। (নাসাঈর ওলীমা)
অনুচ্ছেদঃ দরজার সামনে কিভাবে দাঁড়াবে।
মহানবী (সাঃ)-এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) কেউ প্রবেশানুমতি প্রার্থনার অভিপ্রায়ে আগমন করলে সে যেন দরজার মুখামুখি না দাঁড়ায়, বরং একটু ডানে বা বাঁয়ে সরে দাঁড়াবে। তাকে অনুমতি দেয়া হলে তো ভালো, অন্যথায় সে ফিরে যাবে। (আবু দাউদ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ কেউ অনুমতি চাইলে (ভেতর থেকে) বললো, আমি যতক্ষণ না বের হয়ে আসি৷ সাক্ষাতপ্রার্থী কোথায় বসবে?
আবদুর রহমান ইবনে মুআবিয়া ইবনে হুদাইজ (র) তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-র নিকট এসে তার সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলাম। লোকজন আমাকে বললো, তিনি বের হয়ে না আসা পর্যন্ত স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। আমি তার ঘরের দরজার কাছাকাছি বসে থাকলাম। রাবী বলেন, তিনি আমার নিকট বের হয়ে এসে পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি উযু করলেন, অতঃপর তার মোজাদ্বয়ের উপর মাসেহ করলেন। আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! পেশাবের পর এই উযু? তিনি বলেন, পেশাব ইত্যাদির পর এই উযু (করা ভালো)।
অনুচ্ছেদঃ দরজা খটখট করা।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর দরজাসমূহ (অনুমতি চেয়ে) নখ দ্বারা খটখট করা হতো। (আবু নাঈমের তারীখ ইসবাহান)
অনুচ্ছেদঃ কেউ অনুমতি না নিয়েই প্রবেশ করলে।
কালদা ইবনে হাম্বল (রাঃ) মক্কা বিজয়ের পর নবী (সাঃ) মক্কার উচ্চভূমিতে অবস্থান করছিলেন। সাফওয়ান ইবনে উমাইয়্যা (রাঃ) আমাকে দুধ, ছাগলের বাচ্চা ও তরকারীসহ তাঁর নিকট পাঠান। আমি (তথায় পৌঁছে) সালামও দেইনি, অনুমতিও প্রার্থনা করিনি। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং বলো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? এটা সাফওয়ান (রাঃ)-র ইসলাম গ্রহণের পরের ঘটনা। (দারিমী, তিরমিযী) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কারো দৃষ্টি (ভেতরে) চলে গেলে তার জন্য অনুমতি নাই। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ কেউ সালাম না দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করলে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) কেউ সালাম না দিয়ে যদি বলে, “প্রবেশ করতে পারি কি”, তবে তুমি বলো, “নাসাঈ, যতক্ষণ না তুমি চাবি নিয়ে আসো”। আমি বললাম, সালাম? তিনি বলেন, হাঁ। রিবঈ ইবনে হিরাশ (র) আমের গোত্রের এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেন, যিনি নবী (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললেন, আমি কি ভিতরে প্রবেশ করতে পারি? নবী (সাঃ) বাদীকে বলেনঃ তুমি বাইরে গিয়ে তাকে বলে, “তুমি বলো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি”? কারণ সে সুন্দরভাবে প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করতে পারেনি। রাবী বলেন, বাদী বের হয়ে আসার পূর্বেই আমি ঐকথা শুনে ফেললাম এবং বললাম, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? তিনি বলেনঃ তোমাকেও (সালাম), প্রবেশ করো। রাবী বলেন, আমি প্রবেশ করে বললাম, আপনি কি জিনিস নিয়ে এসেছেন? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের নিকট কল্যাণকর জিনিস নিয়েই এসেছি। আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি তা হলো, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করবে যাঁর কোন শরীক নাই এবং লাত ও উযযার ইবাদত ত্যাগ করবে, প্রতি দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বে, বছরে এক মাস রোযা রাখবে এবং এই ঘরের হজ্জ করবে। তোমরা তোমাদের ধনীদের মাল থেকে (যাকাত) গ্রহণ করে তা তোমাদের মধ্যকার দরিদ্রজনদের মধ্যে বিতরণ করবে। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, এমন কিছু জ্ঞানও আছে কি যা আপনি জ্ঞাত নন? তিনি বলেনঃ আল্লাহ সব কিছু জানেন। তবে এমন পাঁচটি জ্ঞান আছে যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। “কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে যা আছে তা তিনিই জানেন। কেউই জানে না যে, সে আগামী কাল কি উপার্জন করবে। কেউ জানে না যে, সে কোন স্থানে মারা যাবে”। (সূরা লোকমান : ৩৪) (আবু দাউদ, আহমাদ, ইবনে শায়বাহ, ইবনুস সুন্নী)
অনুচ্ছেদঃ অনুমতি প্রার্থনার পদ্ধতি।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) উমার (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে বলেন, আসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম, উমার কি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে?
অনুচ্ছেদঃ একজন বললো, কে? অপরজন বললো, আমি।
মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (র) আমি জাবের (র)-কে বলতে শুনেছি, আমার পিতার রেখে যাওয়া কিছু ঋণের ব্যাপারে আলোচনার জন্য আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এলাম। আমি দরজায় করাঘাত করলে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কে? আমি বললাম, আমি। তিনি বলেনঃ আমি, আমি। তিনি যেন জবাবটি অপছন্দ করলেন। (বুখারী, মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (র) তিনি বলেন, নবী (সাঃ) মসজিদের উদ্দেশে বের হলেন। তখন আবু মূসা (রাঃ) কুরআন পড়ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললাম, আমি বুরায়আবু দাউদ, আপনার জন্য উৎসর্গপ্রাণ। তিনি বলেনঃ তাকে দাউদ (আঃ) পরিবারের সুমধুর কণ্ঠস্বর থেকে একটি কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছে। (মুসলিম, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ কেউ অনুমতি চাইলো এবং অপরজন বললো, নিরাপদে প্রবেশ করুন।
আবদুর রহমান ইবনে জুদআন (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র সাথে ছিলাম। তিনি এক পরিবারের নিকট প্রবেশানুমতি চাইলেন। বলা হলো, নিরাপদে প্রবেশ করুন। কিন্তু তিনি তাদের ঘরে প্রবেশে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন।
অনুচ্ছেদঃ ঘরের মধ্যে দৃষ্টিপাত করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ কারো দৃষ্টি ভেতরে চলে গেলে তার জন্য অনুমতি নাই। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ) মুসলিম ইবনে নায়ীর (র) এক ব্যক্তি হুযায়ফা (রাঃ)-র নিকট প্রবেশানুমতি চেয়ে ভেতর বাড়িতে উঁকি মারলো এবং বললো, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, তোমার চোখ তো প্রবেশ করেছে, বাকি আছে তোমার (দেহের) নিম্নাংশ। অতএব তুমি প্রবেশ করো না। এক ব্যক্তি বললো, আমাকে কি আমার মায়ের অনুমতি নিতে হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, তুমি যদি অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করে তবে হয়তো অবাঞ্ছিত কিছু দেখবে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বাড়িতে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারলো। তিনি একটি তীর বা সুচালো কাঠ তুলে নিলেন এবং বেদুইনের চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তা তার দিকে তাক করলেন। অতএব সে চলে গেলো। তিনি বলেনঃ তুমি যদি স্থির থাকতে তবে আমি তোমার চোখ ফুড়ে দিতাম। (নাসাঈ,তাহাকিম) আম্মার ইবনে সাদ আত-তুজীবী (র) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তিকে অনুমতি দেয়ার পূর্বেই তার চক্ষুদ্বয় ঘরের কামরায় প্রবেশ করালে সে পাপাচারে লিপ্ত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য অনুমতি না নিয়ে কারো ঘরের অভ্যন্তরে তাকানো হালাল নয়। তাই করলে সে যেন ঘরে প্রবেশ করলো। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করে, তার জন্য তাদেরকে বাদ দিয়ে বিশেষভাবে শুধু নিজের জন্য দোয়া করে শেষ করা সমীচীন নয়। কোন ব্যক্তির জন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন চেপে রেখে এবং তা থেকে মুক্ত না হয়ে নামায পড়া হালাল নয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ ঘরে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে তার ফযীলাত।
আবু উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির প্রত্যেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। সে বেঁচে থাকলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট এবং মারা গেলে বেহেশতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি নিজের ঘরে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে তার জন্য মহামহিম আল্লাহ যামিন হন। যে ব্যক্তি মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলো তার জন্যও আল্লাহ যামিন হন। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদে) রওয়ানা হলো তার জন্যও আল্লাহ যামিন হন। -(আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান) আবু যুবাইর (র) তিনি জাবের (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তুমি তোমার ঘরে প্রবেশকালে তোমার পরিজনদের সালাম দিও। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ কামনার দোয়া, যা খুবই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র। রাবী বলেন, আমার মতে এটা আল্লাহর বাণীর ব্যাখ্যাঃ “আর যখন তোমাদেরকে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন করা হয় তখন তোমরা তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে সাদর সম্ভাষণ জ্ঞাপন করো অথবা অন্তত তদনুরূপ উত্তর দাও”। (সূরা নিসা : ৮৬)
অনুচ্ছেদঃ ঘরে প্রবেশকালে কেউ আল্লাহকে স্মরণ না করলে সেই ঘরে শয়তান রাত যাপন করে।
জাবের (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন লোক তার ঘরে প্রবেশকালে এবং তার আহার গ্রহণকালে মহামহিম আল্লাহকে স্মরণ করলে, শয়তান (তার সাঙ্গপাঙ্গকে) বলে, তোমরা রাত যাপনের স্থান ও রাতের আহার থেকে বঞ্চিত হলে। সে তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত কাটানোর জায়গা পেয়ে গেলে। সে তার আহার গ্রহণকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাত কাটানোর জায়গা এবং রাতের আহার উভয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেলো। -(মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়া নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ যেখানে প্রবেশানুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নাই।
আইয়ান আল-খাওয়ারিযমী (র) আমরা আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-র নিকট আসলাম। তিনি নিঃসঙ্গভাবে তার দহলিজে বসা ছিলেন। আমার সঙ্গী তাকে সালাম দিয়ে বলেন, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? আনাস (রাঃ) বলেন, প্রবেশ করো। এটা এমন জায়গা যেখানে কারো প্রবেশানুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নাই। আমাদের জন্য খাদ্য পরিবেশন করা হলে আমরা তা আহার করলাম। পরিবেশক মিষ্টি নবীযের (খেজুরের শরবত) বিরাট পাত্র নিয়ে এলো। তিনি তা পান করলেন এবং আমাদেরও পান করালেন ।
অনুচ্ছেদঃ বাজারের বিপণী বিতানে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা।
মুজাহিদ (র) ইবনে উমার (রাঃ) বিপণী বিতানে প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইতেন না। আতা (র) ইবনে উমার (রাঃ) বস্ত্র ব্যবসায়ীদের শামিয়ানায় প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইতেন।
অনুচ্ছেদঃ পারস্যবাসীদের নিকট কিভাবে অনুমতি প্রার্থনা করবে?
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-র পুত্র আসেম (র)-এর নাতনি উম্মু মিসকীন বিনতে উমার (র)-এর মুক্তদাস আবু আবদুল মালেক (র) আমার মনিব আমাকে আবু হুরায়রা (রাঃ)-র নিকট পাঠান। তিনি আমার সাথেই চলে আসেন। তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে বলেন, ভেতরে প্রবেশ করতে পারি কি? উম্মু মিসকীন (র) বলেন, প্রবেশ করুন। তিনি বলেন, হে আবু হুরায়রা! সে রাতের আহারশেষে আমার নিকট কাঁচাপাকা কথা নিয়ে আসে, আমি কি তার সাথে (তখন) কথাবার্তা বলতে পারি? আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, বিতরের নামায না পড়া পর্যন্ত কথাবার্তা বলতে পারো। কিন্তু তুমি বিতর পড়ার পর আর কথাবার্তা বলো না।
অনুচ্ছেদঃ যিম্মী পত্র মারফত সালাম দিলে তার উত্তর দিতে হবে।
আবু উসমান আন-নাহদী (র) আবু মূসা (রাঃ) রাহবানকে চিঠি লিখলেন এবং তাকে সালাম জানালেন। তাকে বলা হলো, সে তো কাফের, তাকে আপনি সালাম দিলেন? তিনি বলেন, সে আমাকে চিঠি লিখেছে এবং আমাকে সালাম দিয়েছে। আমি এর জবাব দিয়েছি।
অনুচ্ছেদঃ যিম্মীকে প্রথমে সালাম দিবে না।
আবু বাসরা আল-গিফারী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি আগামী কাল সকালে ইহুদীদের এলাকায় যাচ্ছি। অতএব তোমরা তাদেরকে প্রথমে সালাম দিবে না। তারা তোমাদের সালাম দিলে তোমরা বলবে, তোমাদের প্রতিও। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়কে তোমরা আগে সালাম দিবে না। তোমরা তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ দিকে পথ চলতে বাধ্য করো। -(মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, আবু আওয়ানাসাঈ, তাহাবী, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইংগিতে যিম্মীকে সালাম দেয়।
আলকামা (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) গ্রামবাসী কৃষকদেরকে ইশারায় সালাম দেন। আনাস (রাঃ) এক ইহুদী নবী (সাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বলে, আসসামু আলাইকুম (তোদের মরণ হোক)। তাঁর সাহাবীগণ সালামের উত্তর দিলে তিনি বলেনঃ সে তো বলেছে, তোদের মরণ হোক। ইহুদীকে গ্রেপ্তার করা হলে সে স্বীকারোক্তি করে। তিনি বলেনঃ সে যেভাবে বলেছে তোমরা তদনুরূপ উত্তর দাও। -(মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, আবু আওয়া নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ যিম্মীদের সালামের উত্তর কিভাবে দিবে?
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইহুদী সম্প্রদায়ের কেউ তোমাদের কখনো সালাম দিলে অবশ্যই সে বলে, তোর মরণ হোক। অতএব তোমরাও বলো, তোরই মরণ হোক। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী, নাসাঈ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তোমরা ইহুদী, খৃষ্টান বা অগ্নি উপাসকদের সালামের উত্তর দিও। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমাদের যখন অভিবাদন বাক্যে স্বাগত জানানো হয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে স্বাগত জানাও অথবা (অন্তত) তাই প্রত্যপণ করো”। (সূরা নিসা : ৮৬)।
অনুচ্ছেদঃ মুসলমান ও মুশরিকদের সম্মিলিত সভায় সালাম দেয়া।
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) নবী (সাঃ) জিনপোষের উপর ফাদাকের তৈরী চাদর বিছানো গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে এবং উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-কে তার পেছনে বসিয়ে অসুস্থ সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তিনি এক জনসমাবেশের নিকট গিয়ে পৌছলেন, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলও উপস্থিত ছিল। এটা আল্লাহর এই দুশমনের ইসলাম গ্রহণের আগেকার ঘটনা। উক্ত জনসভায় মুসলমান, মুশরিক ও মূর্তিপূজক সকলেই উপস্থিত ছিল। তিনি তাদের সালাম দেন। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায়কে কিভাবে চিঠিপত্র লিখবে?
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) রোমের বাদশা হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নিকট লোক পাঠান। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চিঠি নিয়ে ডাকেন যা নিয়ে তিনি দিহইয়া আল-কালবী (রাঃ)-কে বুসরার শাসকের নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি চিঠিখানি হিরাকলের নিকট অর্পণ করেন। তিনি তা পাঠ করেন। তাতে ছিলঃ “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোমের শাসক হিরাকলকে। যে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসরণ করে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর, আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন নিরাপদ থাকুন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ সওয়াব দান করবেন। যদি আপনি পশ্চাতে ফিরে যান তাহলে প্রজাদের সমস্ত পাপের বোঝা আপনাকে বহন করতে হবে”। “হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক কথায় আসো যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান। ...তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলমান” (সূরা আল ইমরান : ৬৪)। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)
অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাব সম্প্রদায় “তোদের মরণ হোক” বললে।
জাবের (রাঃ) ইহুদীদের একদল লোক নবী (সাঃ)-কে সালাম দিতে গিয়ে বলে, তোমার মরণ হোক। তিনি বলেনঃ তোমাদেরও। আয়েশা (রাঃ) ক্রোধাৰিত হয়ে বলেন, আপনি কি শুনতে পাননি, তারা কি বলেছে? তিনি বলেনঃ হাঁ, অবশ্যই। আমার বিরুদ্ধে তাদের তাদের দোয়া কবুল হবে না। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ আহলে কিতাবদের রাস্তার সংকীর্ণ পাশ দিয়ে হাটতে বাধ্য করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ চলার পথে মুশরিকদের সাথে তোমাদের সাক্ষাত হলে তোমরা আগে তাদেরকে সালাম দিবে না এবং তাদেরকে রাস্তার সংকীর্ণ পথে চলতে বাধ্য করো। -(মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, তাহাবী, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ যিম্মীর জন্য কিভাবে দোয়া করবে?
উকবা ইবনে আমের আল-জুহানী (রাঃ) তিনি মুসলমানদের বেশভূষাধারী এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যেতে সে তাকে সালাম দিলো এবং তিনিও উত্তরে বলেন, তোমার প্রতিও এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও প্রাচুর্যও। সাথের যুবক তাকে বললো, সে তো খৃস্টান। উকবা (রাঃ) দাঁড়ালেন, অতঃপর লোকটির পিছে পিছে অগ্রসর হয়ে তাকে পেয়ে গেলেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রহমাত ও তাঁর প্রাচুর্য মুমিনদের উপর বর্ষিত হয়। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবি করুন এবং তোমার ধন-সম্পত্তি ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দিন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) ফিরাউনও যদি আমাকে বলতো, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তবে আমিও বলতাম, তোমাকেও, যদিও ফেরাউন ধ্বংস হয়েছে। আবু মূসা (রাঃ) ইহুদীরা নবী (সাঃ)-এর সামনে হাঁচি দিয়ে আশা করতো যে, তিনি তাদের (হাঁচির জবাবে) বলবেন, আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হোন। কিন্তু তিনি বলতেনঃ আল্লাহ তোমাদের হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করুন। -(আবু দাউদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, হাকিম, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ অজান্তে কোন খৃষ্টানকে সালাম দিলে।
আবদুর রহমান (র) ইবনে উমার (রাঃ) এক খৃস্টান ব্যক্তির নিকট দিয়ে যেতে তাকে সালাম দেন। সেও তার সালামের জবাব দেয়। পরে তাকে অবহিত করা হলো যে, সে খৃষ্টান। তিনি তা জানতে পেরে ফিরে গিয়ে বলেন, আমার সালাম ফেরত দাও।
অনুচ্ছেদঃ যখন কেউ বলে, অমুক আপনাকে সালাম দিয়েছে।
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) তাকে বলেন, জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাকেও সালাম এবং আল্লাহর রাহমাত। (বুখারী, মুসলিম)