18. সভা-সমাবেশ ও তার রীতিনীতি

【1】

অনুচ্ছেদঃ প্রশস্ত স্থানে বৈঠক অনুষ্ঠান উত্তম।

আবদুর রহমান ইবনে আবু আমরা আল-আনসারী (র) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে একটি জানাযার খবর দেয়া হলো। তিনি বিলম্ব করলেন। লোকজন এসে নিজ নিজ জায়গায় বসে গেলো। অতঃপর তিনি এলেন। তারা তাকে আসতে দেখেই তাড়াহুড়া করলো এবং কতক লোক দাঁড়িয়ে গেলো, যাতে তিনি তাদের স্থানে বসেন। তিনি বলেন, না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রশস্ত স্থানের বৈঠক উত্তম। অতঃপর তিনি একটু অগ্রসর হয়ে এক প্রশস্ত স্থানে বসলেন। (দারিমী, তিরমিযী)

【2】

অনুচ্ছেদঃ কিবলামুখী হয়ে বসা।

সুফিয়ান ইবনে মুনকিয (র) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) প্রায়ই কিবলামুখী হয়ে বসতেন। সূর্যোদয়ের পর ইয়াযীদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসাইত (র) সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) ব্যতীত তিনি এবং উপস্থিত সকলে সিজদা করলেন। তিনি বলেন, তুমি কি তোমার সংগীদের সিজদা লক্ষ্য করেনি? তারা নামায পড়া যায় না এমন সময় সিজদা করেছে।

【3】

অনুচ্ছেদঃ কেউ মজলিস থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ মজলিস থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় তথায় ফিরে এলে সে তার পূর্বোক্ত স্থানে বসার অধিক হকদার। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

【4】

অনুচ্ছেদঃ রাস্তায় বসা।

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের নিকট এলেন। আমরা ছিলাম একদল বালক। তিনি আমাদের সালাম দিলেন। তিনি আমাকে তাঁর এক প্রয়োজনে পাঠালেন এবং আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত রাস্তায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। এতে উম্মু সুলাইম (রাঃ)-র নিকট আমার (বাড়িতে) ফিরে আসতে বিলম্ব হলো। তিনি বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস করলে আমি বললাম, নবী (সাঃ) তার এক প্রয়োজনে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, সেটা গোপনীয় বিষয়। তিনি বলেন, তাহলে তুমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গোপনীয় বিষয়ের হেফাজত করো। -(মুসলিম, বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে খুজাইমাহ)

【5】

অনুচ্ছেদঃ সভা-সমিতিতে বসার জায়গা প্রশস্ত করা।

ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন অপর ব্যক্তিকে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে। বরং তোমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জায়গা প্রশস্ত করে বসো। -(মুসলিম, বুখারী, দারিমী, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

【6】

অনুচ্ছেদঃ পরে আসা ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে বসবে।

জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) আমরা নবী (সাঃ)-এর মজলিসে এসে যেখানে জায়গা (খালি) পাওয়া যেতো, আমাদের যে কেউ সেখানে বসে যেতো। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)

【7】

অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন দুইজনের মাঝখানে ফাক করে না বসে।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য দুইজনের মাঝে তাদের অনুমতি ছাড়া ফাঁক করে বসা হালাল নয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ)

【8】

অনুচ্ছেদঃ মজলিসে লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে সভাপতির নিকট গমন।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) উমার (রাঃ) সন্ত্রাসী কর্তৃক আহত হলে যারা তাকে ধরে তার ঘরে নিয়ে আসেন, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! বাইরে গিয়ে দেখো, কে আমাকে হামলা করেছে এবং আমার সাথে আর কে আহত হয়েছে? আমি বাইরে গিয়ে তাকে খবর দেয়ার জন্য ফিরে এলাম। দেখি যে, ঘর লোকে লোকারণ্য। তাই আমি তাদের ঘার ডিঙ্গিয়ে সামনে যেতে পছন্দ করলাম না। আমি ছিলাম উঠতি বয়সের যুবক। অতএব আমি বসে পড়লাম। আর তিনি কাউকে কোন কাজে পাঠালে নির্দেশ দিতেন, সে যেন ফিরে এসে তাকে তা অবহিত করে। তখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ইত্যবসরে কাব (রাঃ) এসে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমীরুল মুমিনীনের দোয়া করা উচিৎ যাতে আল্লাহ তাকে এই উম্মাতের জন্য জীবিত রাখেন। অন্যথায় তিনি তাকে তুলে নিলে এই এই (অনিষ্ট) ঘটতে পারে। এমনকি কাব (রাঃ) মোনাফিকদের নাম-উপনাম ও তাদের সংখ্যা পর্যন্ত উল্লেখ করেন। আমি বললাম, আপনি যা বললেন তা আমি তার নিকট পৌছাবো। কাব (রাঃ) বলেন, তুমি তার কাছে পৌছাবে এই উদ্দেশেই তো আমি বলেছি। এবার আমি (ইবনে আব্বাস) সাহস সঞ্চার করে উঠে দাঁড়ালাম এবং লোকজনের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে তার শিয়রে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম, আপনি আমাকে এজন্য পাঠিয়েছিলেন। আপনার সাথে আরো তেরোজন আহত হয়েছেন। কুলাইব আল-জাযযারও আহত হয়েছেন, তখন তিনি উখলির (পানির চৌবাচ্চা) নিকট উযু করছিলেন। আর কাব (রাঃ) আল্লাহর শপথ করে এই এই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, কাবকে ডাকো। তিনি কাব (রাঃ)-কে ডাকলেন। উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, আমি এই এই কথা বলেছি। উমার (রাঃ) বলেন, নাসাঈ, আল্লাহর শপথ আমি দোয়া করবো না। আল্লাহ যদি উমারকে ক্ষমা না করেন তবে সে তো হতভাগ্য। শাবী (র) এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-র নিকট এলো। তার নিকট একদল লোক বসা ছিল। সে তাদের ডিঙ্গিয়ে তার নিকট যেতে থাকলে তারা তাকে বাধা দেয়। তিনি বলেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না। সে এসে তার নিকট বসার পর বলে, আপনি আমাকে এমন কিছু অবহিত করুন যা আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে সে-ই হলো প্রকৃত মুসলমান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিহার করে সে-ই হলো প্রকৃত মুহাজির”। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারিমী, ইবনে হিব্বান, আহমাদ)

【9】

অনুচ্ছেদঃ সহযোগী অধিক সম্মানের পাত্র।

মুহাম্মাদ ইবনে আব্বাদ ইবনে জাফর (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ লোকজনের মধ্যে আমার সহযোগীরাই আমার নিকট অধিক সম্মানের পাত্র। (নাসাঈ, ইবনে হিব্বান) ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমার সঙ্গীরাই অন্যদের চেয়ে আমার নিকট অধিক সম্মানের পাত্র, যদিও তারা লোকজনের ঘাড় টপকিয়ে এসে আমার নিকট বসে। (পূর্বোক্ত বরাত)

【10】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি কি বৈঠকে উপস্থিত লোকদের দিকে তার পা ছড়িয়ে দিয়ে বসতে পারে?

কাছীর ইবনে মুররা (র) আমি জুমুআর দিন মসজিদে প্রবেশ করে আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ)-কে একটি সভায় জনগণের দিকে তার দুই পা প্রসারিত করে দিয়ে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি আমাকে দেখামাত্র তার পদদ্বয় গুটিয়ে নিয়ে আমাকে বলেন, তুমি কি জানো, কি কারণে আমি আমার পদদ্বয় প্রসারিত করে রেখেছিলাম? যাতে কোন সৎকর্মশীল লোক এসে (আমার নিকটে) বসতে পারে।

【11】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি জনসমাবেসের মধ্যে কিভাবে থুথু ফেলবে?

হারিস ইবনে আমর আস-সাহ্মী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি মিনা অথবা আরাফাতে ছিলেন। লোকজন তার চারপাশে ঘোরাফেরা করছিল। বেদুইনরা এসে যখন তাঁর চেহারা দেখতো তখন বলতো, এতো বরকতময় চেহারা। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেঃ হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। আমি পুনরায় ঘুরে এসে বললাম, আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। তার মুখে থুথু এলে তিনি তা নিজ হাতে নিয়ে তার জুতায় মুছে ফেলেন এই আশংকায় যে, তা লোকজনের গায়ে না পড়ে। -(আবু দাউদ, নাসাঈ, হাকিম)

【12】

অনুচ্ছেদঃ বহিরাঙ্গিনার বৈঠক।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বহিরাঙ্গিনায় (বা রাস্তায়) সভা অনুষ্ঠান বা বৈঠকাদি করতে নিষেধ করেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঘরে বসে থাকা তো আমাদের জন্য কষ্টকর। তিনি বলেনঃ যদি তোমরা বহিরাঙ্গনে (বা রাস্তায়) বসো তবে বৈঠকের দাবি পূরণ করো (বা কর্তব্য পালন করো)। তারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! বৈঠকের দাবি কি? তিনি বলেনঃ পথভোলা লোককে তার গন্তব্য পথ বলে দেয়া, (পথচারীদের) সালামের জবাব দেয়া, চোখের দৃষ্টি সংযত রাখা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজে বাধা দেয়া। (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ রাস্তায় বসার ব্যাপারে তোমরা সাবধান হও। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তায় না বসে তো আমাদের উপায় নাইবনে মাজাহ, তথায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমরা যখন অসম্মত হচ্ছে, তাহলে রাস্তার দাবি পূরণ করো। তারা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ রাস্তার দাবি কি? তিনি বলেনঃ চোখের দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ। (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)

【13】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজের পায়ের নলা উদলা করে কূপের পাশে বসে পদদ্বয় কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দেয়।

আবু মূসা আশআরী (রাঃ) একদিন নবী (সাঃ) তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়ার জন্য মদীনার এক বাগানে প্রবেশ করেন। আমিও তার পিছে পিছে গেলাম। তিনি বাগানের ভেতর প্রবেশ করলে আমি এর ফটকে বসে থাকলাম এবং মনে মনে বললাম, আমি আজ অবশ্যই নবী (সাঃ)-এর দ্বাররক্ষী হবো, যদিও তিনি আমাকে আদেশ করেননি। নবী (সাঃ) গিয়ে তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়ার পর একটি কূপের কিনারায় বসেন এবং তার পায়ের নলা উদলা করে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আবু বাকর (রাঃ) এসে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রবেশানুমতি প্রার্থনা করেন। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না আপনার জন্য অনুমতি চাই। তিনি অপেক্ষা করলেন। আমি গিয়ে নবী (সাঃ)-কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু বকর (রাঃ) আপনার সাক্ষাতপ্রার্থী। তিনি বলেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদও দাও। তিনি প্রবেশ করে নবী (সাঃ)-এর ডান দিক দিয়ে এসে নিজ পায়ের নলা উদলা করে কূপের মধ্যে তা ঝুলিয়ে দিয়ে বসলেন। অতঃপর উমার (রাঃ) এলে আমি বললাম, আমি আপনার জন্য অনুমতি না আনা পর্যন্ত স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তাকেও অনুমতি দাও এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। উমার (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর বাম পাশ দিয়ে এসে নিজ পদদ্বয়ের নলা উদলা করে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়ে বসলেন। ফলে কূপের বেষ্টনী দেয়াল ভরে গেলো এবং তাতে আর বসার জায়গা থাকলো না। অতঃপর উসমান (রাঃ) এলে আমি বললাম, আমি আপনার জন্য অনুমতি না আনা পর্যন্ত স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তাকেও আসার অনুমতি দাও এবং তার উপর বিপদ আপতিত হওয়াসহ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি প্রবেশ করে তথায় তাদের সাথে বসার খালি জায়গা পেলেন না। তাই তিনি ঘুরে গিয়ে তাদের সম্মুখভাগে কূপের কিনারে এলেন। তিনিও নিজ পদদ্বয়ের নলা উন্মুক্ত করে দিয়ে তা কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেন। আমি তখন আকাঙ্ক্ষা করতে থাকলাম, আমার ভাইটি যদি এসে পৌছতো এবং আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকলাম যে, তিনি যেন তাকে নিয়ে আসেন। তাঁরা উঠে যাওয়া পর্যন্ত সে এসে পৌঁছেনি। ইবনুল মুসাইয়্যাব (র) বলেন, আমি উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যা করেছি যে, সেটা তাদের তিনজনের কবর যা এখানে এক স্থানে অবস্থিত, আর উসমান (রাঃ)-র কবর পৃথক স্থানে অবস্থিত। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) দিনের কোন এক অংশে বের হলেন। (পথিমধ্যে) তিনিও আমার সাথে কোন কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সাথে কোন কথা বলিনি। এমতাবস্থায় তিনি কায়নুকা গোত্রের বাজারে এলেন। (ফেরার পথে) তিনি ফাতেমা (রাঃ)-র বাড়ির আঙ্গিনায় বসে ডেকে বলেনঃ খোকা (হাসান) কি এখানে আছে, খোকা কি এখানে আছে? ফাতেমা (রাঃ) শিশুকে আসতে দিতে খানিক বিলম্ব করলেন। আমি ভাবলাম, হয়তো তিনি তাকে পোশাক পরাচ্ছেন অথবা গোসল করাচ্ছেন। সে দ্রুতবেগে বের হয়ে আসলে নবী (সাঃ) তাকে বুকে চেপে ধরে চুমা দিলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাকে মহব্বত করো এবং যারা তাকে ভালোবাসে তাদেরকেও মহব্বত করো”। -(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)

【14】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো সম্মানে স্বস্থান থেকে উঠে দাঁড়ালে সে যেন সেখানে না বসে।

ইবনে উমার (রাঃ) কোন ব্যক্তিকে স্বস্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে অপর ব্যক্তিকে সেখানে বসতে নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিযী,আহমাদ) ইবনে উমার (রাঃ)-র সম্মানে কেউ স্বস্থান থেকে উঠে দাঁড়ালে তিনি তার সেই জায়গায় বসতেন না। (মুসলিম)

【15】

অনুচ্ছেদঃ আমানত (বিশ্বস্ততাবারানী)।

আনাস (রাঃ) এক দিন আমি নবী (সাঃ)-এর খেদমত করলাম। শেষে আমি যখন দেখলাম যে, আমি তাঁর খেদমত থেকে অবসর হয়েছি, আমি ভাবলাম, নবী (সাঃ) হয়তো দুপুরের বিশ্রাম নিবেন। তাই আমি তাঁর নিকট থেকে বের হয়ে চলে গেলাম। পথিমধ্যে শিশুরা খেলছিল। আমি তাদের খেলা দেখার জন্য দাড়িয়ে গেলাম। নবী (সাঃ) এসে তাদের নিকট পৌঁছে তাদের সালাম দিলেন। অতঃপর আমাকে ডেকে একটি প্রয়োজনে পাঠালেন। আমি তার প্রয়োজন সেড়ে তার নিকট ফিরে এলাম এবং মায়ের নিকট ফিরে যেতে আমার বিলম্ব হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বিলম্বের কারণ কি? আমি বললাম, নবী (সাঃ) একটি প্রয়োজনে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, তা নবী (সাঃ)-এর গোপনীয় বিষয়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গোপনীয় বিষয়ের হেফাজত করো। সৃষ্টিকুলের কারো সাথে আমি সে বিষয়ে আলোচনা করিনি। আমি যদি তা কারো কাছে বলতাম, তবে তা আপনার কাছে বলতাম। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ)

【16】

অনুচ্ছেদঃ নবী (সাঃ) কারো দিকে ফিরলে পূর্ণদেহে ফিরতেন।

সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দৈহিক গঠন বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাঁর দেহের গড়ন ছিল মধ্যম আকৃতির, প্রায় দীর্ঘকায়, অত্যন্ত গৌরবর্ণের, দাড়ির চুল কালো, সুন্দর মুখাবয়ব, লম্বা ভ্রুযুগল, বাহুদ্বয় চওড়া, প্রশস্ত গণ্ডদেশ, পদদ্বয় সম্পূর্ণ সমতল, তার তালুতে গর্ত ছিলো না। কারো প্রতি তাকালে সমস্ত শরীর ঘুরিয়ে তাকাতেন এবং সমস্ত শরীরে পশ্চাদমুখী হতেন। আমি তাঁর আগে কিংবা পরে আর কাউকে তার অনুরূপ দেখিনি।

【17】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন প্রয়োজনে একজনকে অপরজনের নিকট পাঠালে সে যেন (কাউকে) তা অবহিত না করে।

আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (র) তিনি বলেন, উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি তোমাকে কারো নিকট পাঠালে তুমি (অপরকে) অবহিত করো না যে, কেন আমি তোমাকে তার নিকট পাঠিয়েছি। অন্যথায় শয়তান ঐ সময় তার জন্য মিথ্যা রচনা করবে।

【18】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কি জিজ্ঞেস করতে পারে, তুমি কোথা থেকে এসেছো?

মুজাহিদ (র) কোন ব্যক্তির দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকানো অথবা সে উঠে চলে গেলে তার দিকে নজরদারি করা অথবা তাকে জিজ্ঞেস করা, তুমি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে ইত্যাকার আচরণ দূষণীয়। মালেক ইবনে যুবাইদ (র) আমরা রাবাযা নামক স্থানে আবু যার (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কোথা থেকে আগমন করেছো? আমরা বললাম, মক্কা থেকে অথবা বাইতুল আতীক (কা বাযযার) থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটাই কি তোমাদের কাজ ছিল? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, এর সাথে কি ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো না? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, তোমাদের কাজ অব্যাহত রাখো।

【19】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা তা অপছন্দ করে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি (বিচরণশীল প্রাণীর) প্রতিকৃতি নির্মাণ করে তাকে তাতে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য বাধ্য করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে, যদিও সে কখনো তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। যে ব্যক্তি মনগড়া স্বপ্ন বলবে তাকে দুটি গমের দানার মধ্যে গিঠ দিতে বাধ্য করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে, যদিও সে কখনো তাতে গিঠ দিতে পারবে না। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা তার শ্রবণ অপছন্দ করে, তার দুই কানের মধ্যে উত্তপ্ত তরল সীসা ঢেলে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, দারিমী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

【20】

অনুচ্ছেদঃ সোফা জাতীয় গদিতে বসা।

উরয়ান ইবনুল হায়ছাম (র) আমার পিতা প্রতিনিধি হিসাবে মুআবিয়া (রাঃ)-র নিকট গেলেন। আমি তখন তরুণ। তিনি তার নিকট প্রবেশ করলে তিনি বলেন, মারহাবা মারহাবা। তার নিকটেই এক ব্যক্তি সোফায় বসা ছিল। তিনি বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যক্তি কে যাকে আপনি মারহাবা বলে স্বাগত জানালেন? তিনি বলেন, ইনি প্রাচ্যবাসীর নেতা। ইনি হায়ছাম ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ)। আমি বললাম, ইনি কে? লোকজন বললো, ইনি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ)। আমি তাকে বললাম, হে অমুকের পিতা! দাজ্জাল কোথা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে? তিনি বলেন, তুমি যে এলাকার বাসিন্দা সেই এলাকার লোকদের চেয়ে দূরবর্তী বিষয় সম্পর্কে অধিক জিজ্ঞাসাকারী এবং নিকটবর্তী বিষয় অধিক ত্যাগকারী আমি আর কোন এলাকার লোককে পাইনি। অতঃপর তিনি বলেন, গাছপালা ও খেজুর বৃক্ষ সমৃদ্ধ ইরাক থেকে সে আত্মপ্রকাশ করবে। (তাবারানী) আবুল আলিয়া (র) আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-র সাথে গদিতে বসেছি। আবু জামরা (র) আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-র সাথে উঠা-বসা করতাম। তিনি আমাকে তার গদিতে বসাতেন। তিনি আমাকে বলেন, তুমি আমার নিকট অবস্থান করে যাবত না আমি তোমাকে আমার মালের একটি অংশ দান করি। অতএব আমি তার নিকট দুই মাস অবস্থান করলাম। (বুখারী, মুসলিম) খালিদ ইবনে দীনার আবু খালদা (র) আমি আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-কে বসরার শাসক আল-হাকামের সাথে গদিতে বসা অবস্থায় বলতে শুনেছি, নবী (সাঃ) গরমের মৌসুমে বিলম্বে এবং শীতের মৌসুমে ত্বরায় (ওয়াক্তের প্রারম্ভে) নামায পড়তেন। (বুখারী, নাসাঈ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি খেজুর পাতার দড়ির তৈরী একটি চারপায়ার উপর শায়িত ছিলেন। তার মাথার নিচে ছিল খেজুর গাছের বাকল ভর্তি একটি চামড়ার বালিশ। চারপায়া ও তার দেহের মাঝখানে কোন কাপড় বিছানো ছিলো না। উমার (রাঃ) তার নিকট প্রবেশ করে কেঁদে দিলেন। নবী (সাঃ) তাকে বলেনঃ হে উমার! তোমাকে কিসে কাঁদালো? তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি এজন্যই কাদছি যে, আমি জানি আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা (পারস্য রাজ) কিসরা ও (রোমসম্রাট) কাইজারের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে। তারা এই পার্থিব জগতের কতো অফুরন্ত ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে আছে। আর হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অবস্থা তো আমি স্বচক্ষে দেখছি! নবী (সাঃ) বলেনঃ হে উমার! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে না যে, তাদের জন্য দুনিয়ার ভোগসামগ্ৰী আর আমাদের জন্য আখেরাতের ভোগসামগ্ৰী? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ বিষয়টি এরূপই। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান) আবু রিফাআ আল-আদাবী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম। তিনি তখন ভাষণ দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! একজন মুসাফির এসেছে, সে তার দ্বীন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায়। সে জানে না তার দ্বীন কি? তিনি তৎক্ষণাৎ তার ভাষণ স্থগিত রেখে আমার সামনে এলেন। একটি কুরছি (চেয়ার) আনা হলো, আমার ধারণামতে এর পায়াগুলো ছিল লোহার। অধস্তন রাবী হুমাইদ (র) বলেন, মনে হয় পায়াগুলো ছিল কালো কাঠের এবং তিনি তাকে লোহা ধারণা করেছেন। নবী (সাঃ) তাতে বসলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যা শিখিয়েছেন তা তাকে শিখালেন। অতঃপর তিনি তার অসমাপ্ত ভাষণ সমাপ্ত করলেন। (মুসলিম, নাসাঈ, দূলাবী) মূসা ইবনে দিহকান (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-কে লাল রং-এর কাপড় পরিহিত অবস্থায় বাসর রাতের খাটের উপর বসা দেখেছি। -(তাহাবী) ইমরান ইবনে মুসলিম (র) আমি আনাস (রাঃ)-কে তার এক পা অপর পায়ের উপর রেখে গদিতে বসা অবস্থায় দেখেছি। -(তাহাবী)

【21】

অনুচ্ছেদঃ কতক লোককে গোপনে আলাপরত দেখলে সেখানে তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করবে না।

সাঈদ আল-মাকবুরী (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তার সাথে এক ব্যক্তি কথা বলছিল। আমি তাদের পাশে দাড়ালে ইবনে উমার (রাঃ) আমার বুকে চপেটাঘাত করে বলেন, তুমি দুই ব্যক্তিকে একত্রে কথাবার্তা বলতে দেখলে তাদের অনুমতি না নিয়ে তাদের সাথে দাঁড়াবেও না এবং বসবেও না। আমি বললাম, হে আবদুর রহমানের পিতা আল্লাহ আপনার সংশোধন করুন, আমি আপনাদের দুইজনের নিকট কল্যাণকর কিছু শোনার আশাই করেছিলাম। (আবু দাউদ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শোনে, অথচ তারা এটা পছন্দ করে নাসাঈ, তার কানের মধ্যে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি মনগড়া স্বপ্ন বলবে তাকে গমের দানায় গিঠ দিতে বাধ্য করা হবে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, দারিমী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

【22】

অনুচ্ছেদঃ তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দুইজনে যেন গোপন পরামর্শ না করে।

আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু (সাঃ) বলেনঃ তিনজন একসাথে থাকলে তৃতীয়জনকে বাদ দিয়ে দুইজনে যেন গোপন পরামর্শ না করে। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আবু আওয়া নাসাঈ)

【23】

অনুচ্ছেদঃ চারজন একত্র হলে।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা তিনজন একত্র হলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে আলাদা হয়ে গোপন আলাপ করো না। কারণ তা তাকে মনক্ষুণ্ন করবে। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ) ইবনে উমার (রাঃ) আমরা বললাম, যদি তাদের সংখ্যা চার হয়। তিনি বলেনঃ তাহলে কোন ক্ষতি নাই। (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান) আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তিনজন একত্র হলে একজনকে বাদ রেখে দু’জনে আলাদা হয়ে গোপন আলাপ করবে নাসাঈ, যাবত না তারা লোকদের সাথে মিলিত হয়। কারণ তা তাকে মনোক্ষুণ্ন করবে। (বুখারী, মুসলিম) ইবনে উমার (রাঃ) তারা চারজন একত্র হলে (দু’জনের স্বতন্ত্র গোপন আলাপে) কোন ক্ষতি নাই।

【24】

অনুচ্ছেদঃ কেউ কারো পাশে বসলে সে উঠে যেতে তার অনুমতি চাইবে।

আবু বুরদা ইবনে আবু মূসা (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ)-র নিকট বসলাম। তিনি বলেন, তুমি আমার পাশে এসে বসেছে অথচ আমার উঠে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি বললাম, তা আপনার ইচ্ছা। অতএব তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং তিনি দরজায় পৌছা পর্যন্ত তার সাথে সাথে গেলাম।

【25】

অনুচ্ছেদঃ রোদের দিকে মুখ করে বসবে না।

কায়েস (র) তিনি যখন এসে উপস্থিত হন তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। নবী (সাঃ) তাকে নির্দেশ দিলে তিনি ছায়ায় চলে আসেন। (আহমাদ, হাকিম, ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিব্বান,তায়ালিসী)

【26】

অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম (ইহতিবা)।

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুই ধরনের পোশাক পরিধানের নিয়ম এবং দুই ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ক্রয়-বিক্রয়ে মুলামাসা ও মুনাবাযা নিষিদ্ধ করেছেন। মুলামাসা হলো, কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির কাপড় স্পর্শ করা। আর মুনাবাযা হলো, কোন ব্যক্তির কাপড় অপর ব্যক্তির দিকে ছুঁড়ে মারা। (পণ্য নিরীক্ষণ করে না দেখলেও) এতে উভয়ের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হয়ে যেতো। আর দুই ধরনের পোশাক পরার নিয়মের ক্ষেত্রে তিনি ইশতিমালুস সাম্মা নিষিদ্ধ করেছেন। সাম্মা এই যে, নিজের পরিধেয় বস্ত্র নিজের এক কাঁধে এমনভাবে তুলে দেয়া, যাতে অন্য কাঁধ অনাবৃত থেকে যায়। পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ অপর নিয়ম এই যে, এক পরত কাপড় নিজের গোটা দেহে পেঁচিয়ে কারো এমনভাবে বসা, যাতে তার লজ্জাস্থানে কোন কাপড়ই থাকে না। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

【27】

অনুচ্ছেদঃ কাউকে হেলান দেয়ার বালিশ পেশ করা।

আবু কিলাবা (র) আবুল মালীহ (র) আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি তোমার পিতা যায়েদের সাথে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী (সাঃ)-এর নিকট আমার রোযা সম্পর্কে আলোচনা হলো। তিনি আমার নিকট এলেন। আমি তাঁর জন্য খেজুর গাছের ছাল ভর্তি চামড়ার একটি বালিশ পেশ করলাম। কিন্তু তিনি মাটিতে বসে গেলেন এবং বালিশটি আমার ও তার মাঝখানে পড়ে থাকলো। তিনি আমাকে বলেনঃ প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখলে কি তোমার জন্য যথেষ্ট হয় না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আরো অধিক)। তিনি বলেনঃ পাঁচ দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আরো অধিক)। তিনি বলেনঃ সাত দিন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ নয় দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ এগারো দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ দাউদ (আবু দাউদ)-এর রোযার চেয়ে উত্তম রোযা হয় নাসাঈ, অর্ধবছর। একদিন রোযা এবং এক দিন বিরতি। -(বুখারী, মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (র) নবী (সাঃ) তার পিতার নিকট এলে তিনি তার জন্য নরম গদি পেতে দেন। তিনি তার উপর বসেন।

【28】

অনুচ্ছেদঃ দুই হাঁটু খাড়া করে তা দুই হাতে বেড় দিয়ে ধরে নিতম্বের উপর বসা।

কাইলা (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে তাঁর দুই হাঁটু খাড়া করে তা দুই হাতে বেড় দিয়ে ধরে নিতম্বের উপর বসা অবস্থায় দেখেছি। নবী (সাঃ)-কে এরূপ বিনীতভাবে বসা অবস্থায় দেখে আমি ভীত-কম্পিত হলাম। (আবু দাউদ হা/৪৮৪৭)

【29】

অনুচ্ছেদঃ চার জানু হয়ে বসা।

হানযালা ইবনে হিযয়াম (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে তাকে চার জানু হয়ে বসা অবস্থায় দেখলাম। (তাহযীবুল কামাল, ইসতীআব) আবু যুরাইক (র) তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-র পুত্র আলীকে তার এক পা অপর পায়ের উপর অর্থাৎ ডান পা বাম পায়ের উপর রেখে চার জানু হয়ে বসা অবস্থায় দেখেছেন। ইমরান ইবনে মুসলিম (র) আমি আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-কে তার এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চার জানু হয়ে বসে থাকতে দেখেছি। (তাহাবী)

【30】

অনুচ্ছেদঃ পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধ নিয়ম (ইহুতি বাযযার)।

সুলাইম ইবনে জাবের আল-হুজায়মী (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি একটি চাদর মুড়ি দিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন। চাদরের ঝালর তাঁর পায়ের পাতার উপর ছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ “তুমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করবে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৎকাজকেও তুচ্ছজান করো নাসাঈ, তা যদি তোমার বালতি থেকে পানি প্রার্থীর পাত্রে পানি ঢেলে দেয়ার মত নগণ্য কাজও হয় অথবা হাস্যোজ্জ্বল মুখে তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার আলাপ-আলোচনাও হয়। পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে দেয়া থেকে সাবধান হও। কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কোন ব্যক্তি যদি তার জ্ঞাত তোমার কোন ত্রুটির কারণে তোমাকে গালি দেয়, তবে তুমি তোমার জ্ঞাত তার কোন ত্রুটির কারণে তাকে গালি দিও না। তার কর্মের পরিণতি ভোগের জন্য তাকে ছেড়ে দাও এবং তার সওয়াব পাবে তুমি । তুমি কোন কিছুকে গালি দিও না”। রাবী বলেন, পরে আমি কখনো পশু বা মানুষ কাউকে গালি দেইনি। -(আবু দাউদ, আহমাদ, হাকিম) আবু হুরায়রা (রাঃ) আমি যখনই হাসানকে দেখেছি আমার চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে গেছে। তা এজন্য যে, একদিন নবী (সাঃ) বের হয়ে এসে আমাকে মসজিদে পেলেন। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমি তাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। আমরা কায়নুকা গোত্রের বাজারে না পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেননি। তিনি বাজারে ঘুরলেন এবং দেখলেন, অতঃপর আমাকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। শেষে আমরা মসজিদে এসে পৌছলাম। তিনি চার জানু হয়ে বসলেন, অতঃপর বলেনঃ খোকা কোথায়? খোকাকে আমার নিকট ডেকে আনো। হাসান দ্রুতবেগে বের হয়ে এসে তার কোলে ঝাপিয়ে পড়লো, অতঃপর তার হাত তাঁর দাড়ির ভেতর ঢুকালো। অতঃপর নবী (সাঃ) নিজের মুখ ফাঁক করে তার মুখ নিজের মুখে প্রবেশ করান (মুখে চুমা দেন)। তারপর বলেনঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তাকে ভালোবাসি। অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসো এবং যারা তাকে মহব্বত করে, তুমি তাদেরকেও মহব্বত করো”। (বুখারী, মুসলিম, হাকিম)

【31】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি হাঁটু গেড়ে বসে।

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) তাদের সাথে নিয়ে যুহরের নামায পড়লেন। তিনি সালাম ফিরানোর পর মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন, কিয়ামতের উল্লেখ করলেন এবং আরো উল্লেখ করেন যে, এর সাথে রয়েছে অনেক সাংঘাতিক বিষয়। অতঃপর তিনি বলেনঃ কেউ আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলে সে তা জিজ্ঞেস করুক। আল্লাহর শপথ! আমি আমার এই জায়গায় থাকা পর্যন্ত তোমরা আমার নিকট যা-ই জিজ্ঞেস করবে, আমি তোমাদের তা অবহিত করবো। আনাস (রাঃ) বলেন, লোকজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুখে এটা শোনার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও বারবার বলতে থাকেন ? তোমরা জিজ্ঞেস করো। উমার (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে বলেন, আমরা আল্লাহকে প্রভুরূপে, ইসলামকে দীনরুপে এবং মুহাম্মাদকে রাসূলরুপে পেয়ে সন্তুষ্ট। উমার (রাঃ) একথা বলাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিশ্চুপ হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ বিপদ সন্নিকটে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এইমাত্র এই দেয়ালের পাশে আমার নামাযরত অবস্থায় আমার সামনে বেহেশত ও দোযখ উপস্থিত করা হয়েছে। অতএব আজকের মত কল্যাণ ও অনিষ্টকে (একত্রে) আর দেখিনি। -(বুখারী, মুসলিম)