21. জুয়া ও দাবা/পাশা খেলা

【1】

অনুচ্ছেদঃ জুয়া খেলা।

জাফর ইবনে আবুল মুগীরা (র) সাঈদ ইবনে জুবাইর (র) আমার এখানে মেহমান হলেন। তিনি বলেন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, বলা হতো, উটের জুয়াড়ীগণ কোথায়? তখন দশজন প্রতিযোগী সমবেত হতো এবং জুয়ার উটটির ক্রয়মূল্য নিৰ্দ্ধারণ করতো দশটি উটশাবক। তারা তীরের জুয়ার পাত্রে তীর স্থাপন করে সেটিকে চক্কর দেয়াতো, তাতে একজন বাদ পড়ে নয়জন অবশিষ্ট থাকতো। এভাবে প্রতি চক্করে একজন করে বাদ পড়ে শেষে মাত্র একজন অবশিষ্ট থাকতো এবং সে বিজয়ী হিসাবে তার শাবকসহ অন্যদের নয়টি শাবকও লাভ করতো। এতে নয়জনের প্রত্যেকে একটি করে শাবক লোকসান দিতো। এটাও এক প্রকার জুয়া। ইবনে উমার (রাঃ) দাবা খেলাও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। (আবু উবায়দ, ইবনে জারীর, আবু হাতিম, শাওকানীর ফাতহুল কাদীর)

【2】

অনুচ্ছেদঃ মোরগের বাজিও জুয়া।

রবীআ ইবনে আবদুল্লাহ (র) উমার (রাঃ)-র শাসনকালে দুই ব্যক্তি দু’টি মোরগের লড়াইয়ের বাজি ধরে। উমার (রাঃ) মোরগ হত্যার নির্দেশ দেন। এক আনসার ব্যক্তি তাকে বলেন, আপনি কি এমন এক উম্মাতকে হত্যা করবেন যারা (আল্লাহর) গুণগান করে? অতএব তিনি তার নির্দেশ প্রত্যাহার করেন।

【3】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলে, এসো তোমার সাথে জুয়া খেলি।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি শপথ করে এবং তার শপথে বলে, লাত ও উহ্যার শপথ, তবে সে যেন বলে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলে, এসো তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন দান-খয়রাত করে। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

【4】

অনুচ্ছেদঃ কবুতরের বাজি ধরা।

হুসাইন ইবনে মুসআব (র) এক ব্যক্তি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বললো, আমরা দুটি কবুতরের বাজিতে শর্ত লাগাই এবং তৃতীয় ব্যক্তিকে সালিশ মানা অপছন্দ করি। এজন্য যে, পাছে সে-ই তা (বাজির জিনিস) হস্তগত করে নিয়ে যায় কিনা। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এটা তো শিশুসুলভ কাজ। অবশ্যই তোমরা তা ত্যাগ করবে।

【5】

অনুচ্ছেদঃ নারীদের জন্তুযানে হুদী (উট চালনার) গান।

আনাস (রাঃ) বারাআ ইবনে মালেক (রাঃ) পুরুষ যাত্রীদের হুদী গান শুনাতেন এবং আনজাশা মহিলা যাত্রীদের বাহন হুদী গান গেয়ে চালাতেন। তার কণ্ঠস্বর ছিল সুমধুর। নবী (সাঃ) বলেনঃ হে আনজাশা! ধীরে চালাও। তোমার যে কাঁচের চালান। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, তায়ালিসী)

【6】

অনুচ্ছেদঃ সংগীত।

ইবনে আব্বাস (বাযযার) তিনি মহামহিম আল্লাহর বাণীঃ “কতক লোক ক্রীড়া-কৌতুকের কথাবার্তা ক্রয় করে”।(৩১ : ৬) সম্পর্কে বলেন, এর অর্থ গান-বাজনা ও অনুরূপ জিনিস। (তাবারী) বারাআ ইবনে আয়েব (র) রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, শান্তিতে থাকবে। অসার কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া ক্ষতিকর। (মুসনাদ আবু ইয়ালা) মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনুস শিখখীর (র) বসরা যেতে আমি ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ)-র সফরসংগী হলাম। সফরে প্রতি দিনই তিনি আমাদের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, পরোক্ষ বচন মিথ্যাকে এড়ানোর নিরাপদ উপায়।

【7】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি দাবা খেলায় লিপ্তদের সালাম দেয়নি।

ফুদাইল ইবনে মুসলিম (র) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বাবুল কাসর থেকে বের হলে তিনি দাবা খেলোয়াড়দের দেখতে পান। তিনি তাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আটক রাখেন। তাদের মধ্যে কতককে তিনি দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। রাবী বলেন, যারা অর্থের আদান-প্রদানের ভিত্তিতে খেলেছিল, তিনি তাদের রাত পর্যন্ত আটক রাখেন, আর যারা এমনি খেলেছিল তাদেরকে দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। তিনি নির্দেশ দিতেন, লোকজন যেন তাদেরকে সালাম না দেয়।

【8】

অনুচ্ছেদঃ দাবা খেলোয়াড়ের পাপ।

আবু মূসা আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো। (আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, দার,হাকিম,ইবনে হিব্বান) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) সাবধান! তোমরা এই চতুৰ্ভুজ টুকরায় পরিহার করো, যা নিক্ষেপ করা হয়। কারণ এই দু’টি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। (আহমাদ হা/৪২৬৩)। আবু বুরায়দা (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে যেন তার হাত শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করলো। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক) আবু মূসা আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা খেললো সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো।– (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, দারিমী, হাকিম, ইবনে হিব্বান)

【9】

অনুচ্ছেদঃ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দাবা খেলোয়াড় ও বাতিলপন্থীদের উচ্ছেদ করা।

নাফে (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) তার পরিবারের কাউকে দাবা খেলায় লিপ্ত দেখতে পেলে তাকে প্রহার করতেন এবং দাবার সরঞ্জাম ভেঙ্গে ফেলতেন। -(মুয়াত্তা মালিক) আয়েশা (রাঃ) তিনি জানতে পারলেন যে, তার বাড়িতে বসবাসকারী এক পরিবারের নিকট দাবা খেলার সরঞ্জাম আছে। তিনি লোক মারফত বলে পাঠান, তোমরা যদি তা বের করে ফেলে না দাও তবে আমি অবশ্যই আমার বাড়ি থেকে তোমাদের উচ্ছেদ করবো। তিনি তাদের এই আচরণ কঠোরভাবে অপছন্দ করেন। রবীআ ইবনে কুলসূম (র) আমার পিতা বলেছেন, ইবনুয যুবাইর (রাঃ) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, হে মক্কাবাসীগণ! আমি জানতে পারলাম যে, কুরাইশ বংশের কতক লোক দাবা খেলায় লিপ্ত আছে। এটা ছিল অত্যন্ত কঠোর ব্যাপার। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় মদ ও জুয়া ...” (সূরা মায়িদাহ : ৯০)। আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, কোন দাবা খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করে আনা হলে আমি অবশ্যই তার প্রতিটি পশমে ও চামড়ায় কঠোর শাস্তি দিবো এবং যে তাকে গ্রেপ্তার করে আনবে আমি তাকে তার মালপত্র দিয়ে দিবো। ইয়ালা ইবনে মুররা (র) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বাজি ধরে দাবা খেলে সে শূকরের গোশত ভক্ষণকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি বাজি না ধরে দাবা খেলে সে শূকরের রক্তে হাত রঞ্জিতকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি তাদের সাথে বসে তাদের খেলা দেখে সে শূকরের গোশতের দিকে তাকিয়ে থাকা ব্যক্তির সমতুল্য। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) বাজি ধরে দুটি গুটি দ্বারা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারী শূকরের গোশত ভক্ষণকারীর সমতুল্য এবং বাজিবিহীন খেলায় অংশগ্রহণকারী শূকরের রক্তে হাত ডুবানো ব্যক্তিতুল্য।

【10】

অনুচ্ছেদঃ মুমিন ব্যক্তি একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)

【11】

অনুচ্ছেদঃ রাতের বেলা যে ব্যক্তি তীরন্দাজি করে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি রাতের বেলা আমাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আহমাদ, ইবনে হিব্বান, তাহাবী) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসলিম, তাহাবী) আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (বুখারী, মুসলিম)

【12】

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় তাঁর কোন বান্দার মৃত্যুদান করতে চাইলে তথায় যাওয়ার জন্য তার একটি প্রয়োজন সৃষ্টি করেন।

আবুল মালীহ (র) যিনি নবী (সাঃ)-এর সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় কোন বান্দার মৃত্যুদান করতে চাইলে সেখানে (যাওয়ার জন্য) তার একটি প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন। (তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)

【13】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি নিজ পরিধেয় বস্ত্রে নাকের ময়লা মোছে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি তার পরিধেয় বস্ত্রে নাক পরিষ্কার করার পর বলেন, বাহ, বাহ! আবু হুরায়রা কাতান কাপড়ে নাক পরিষ্কার করছে। আমি নিজেকে আয়েশা (রাঃ)-র ঘর ও মসজিদে নববীর মিম্বারের মধ্যস্থলে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। লোকে বলতো, পাগল (হয়ে গেছে)। ক্ষুধার যন্ত্রণায়ই আমার এই অবস্থা হয়েছিল। (বুখারী, তিরমিযী)