22. কুমন্ত্রনা, কুধারনা ও বাচালতা
অনুচ্ছেদঃ মনের মধ্যে সৃষ্ট কুমন্ত্রণা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মনের মধ্যে এমন কিছু চিন্তার উদ্রেক হয় যা সূর্য উদিত হওয়ার পরিধির মধ্যকার (মূল্যবান) সবকিছুর বিনিময়েও কথায় প্রকাশ করা আমরা মোটেও সমীচীন মনে করি না। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কি তা অনুভব করো? তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ এটিই ঈমানের সুস্পষ্ট পরিচয়। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান) শাহর ইবনে হাওশাব (র) আমি ও আমার মামা আয়শা (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হলাম। মামা বলেন, আমাদের কারো মনের মধ্যে এমন কিছুর উদ্রেক হয়, সে তা ব্যক্ত করলে তার আখেরাত ধ্বংস হয়ে যায় এবং তা প্রকাশ পেলে সেজন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। রাবী বলেন, আয়েশা (রাঃ) তিনবার “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি করার পর বলেন, এই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কারো অন্তরে তা অনুভব করলে সে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। মুমিন ব্যক্তিই এটা অনুভব করে থাকে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যা হয়নি সে সম্পর্কে লোকে অনবরত জিজ্ঞেস করতে থাকবে। শেষে সে বলবে, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ অলীক ধারণা-অনুমান।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ধারণা-অনুমান সম্পর্কে তোমরা সাবধান হও। কারণ অলীক ধারণা পোষণ সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা পরস্পর গোয়েন্দাগিরি করো নাসাঈ, ঝগড়া-বিবাদ করো নাসাঈ, অসাক্ষাতে দোষচর্চা করো নাসাঈ, হিংসা ও ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! সকলে ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান) আনাস (রাঃ) একদা নবী (সাঃ) তাঁর কোন এক স্ত্রীর সাথে ছিলেন। তখন তাঁর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তি অতিক্রম করলো। নবী (সাঃ) তাকে ডেকে বলেনঃ হে অমুক! ইনি আমার স্ত্রী অমুক। সে বললো, আমি হয়তো কারো সম্পর্কে ধারণা-অনুমান করতে পারি, কিন্তু আপনার সম্পর্কে কখনো ধারণা-অনুমানে লিপ্ত হই না। তিনি বলেনঃ শয়তান রক্তপ্রবাহের মত মানুষের ভেতরে বিচরণ করে। (আবু দাউদ) আবদুল্লাহ (রাঃ) যার জিনিস চুরি হয়ে যায় সে ধারণা-অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়। বিলাল ইবনে সাদ আল-আশআরী (র) মুআবিয়া (রাঃ) আবু দারদা (রাঃ)-কে লিখে পাঠানঃ দামিশকের দুষ্কৃতিকারীদের সম্পর্কে আমাকে লিখে পাঠান। তিনি বলেন, আমার সাথে দামিশকের দুষ্কৃতিকারীদের কি সম্পর্ক? আর আমি কোথায় বা তাদের চিনবো? তার পুত্র বিলাল বলেন, আমি তাদের সম্পর্কে লিখবো । অতএব তিনি তাদের তালিকা তৈরি করেন। আবু দারদা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, কোথা থেকে তুমি জানতে পারলে? তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলেই কেবল দুষ্কৃতিকারী সম্পর্কে জানতে পারবে। অতএব তোমার নামটি দিয়ে (তালিকা) শুরু করো। তিনি তাদের নাম কখনো পাঠাননি।
অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাসী বা স্ত্রী তার স্বামীর মাথার চুল কামাতে পারে।
সুকাইন ইবনে আবদুল আযীয ইবনে কায়েস (র) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হলাম। তখন এক বাঁদী চুল কামাচ্ছিল। তিনি বলেন, চুন চামড়াকে নরম করে। (তাবারানী)
অনুচ্ছেদঃ বগলের লোম উপড়ানো।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ স্বভাব সুলভ জিনিস পাঁচটি। খতনা করা, নাভীর নিচের লোম কামানো, বগলের লোম উপড়ানো, গোঁফ খাটো করা এবং নখ কাটা। (বুখারী, নাসাঈ, তিরমিযী) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ পাঁচটি জিনিস স্বভাব সুলভ। খতনা করা, নাভির নিচের লোম কামানো, নখ কাটা, বগলের নিচের লোম উপড়ানো এবং গোঁফ খাটো করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) পাঁচটি জিনিস স্বভাব সুলভ। নখ কাটা, গোঁফ খাটো করা, বগলের লোম উপড়ানো, নাভীর নিচের লোম কামানো এবং খতনা করা। -(তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ উত্তম ব্যবহার।
আবুত তুফাইল (রাঃ) আমি বাল্যকালে জিরানা নামক স্থানে নবী (সাঃ)-কে গোশত বণ্টন করতে দেখেছি। আমি উটের এক এক টুকরা গোশত বহন করে আনতাম। এই অবস্থায় তাঁর নিকট এক মহিলা আসেন। তিনি তার জন্য নিজের চাদরখানা লেছে দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হলো, ইনি নবী (সাঃ)-এর দুধমাতা। (আবু দাউদ, হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ আলাপ-পরিচয়।
মুগীরা ইবনে শোবা (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, আল্লাহ আমীরের অবস্থা সংশোধন করুন। আপনার দ্বাররক্ষী সাক্ষাতপ্রার্থী কতক লোককে চিনে এবং সে তাদের অগ্রাধিকার দেয়। আমীর জবাব দেন, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। পূর্ব-পরিচয় তো হিংস্র কুকুর ও খ্যাপা উটের সামনেও উপকারী প্রমাণিত হয়।
অনুচ্ছেদঃ শিশুদের আখরোট দিয়ে খেলা করা।
ইবরাহীম (র) আমাদের মুরববীগণ আমাদেরকে কুকুরের খেলা ব্যতীত যে কোন খেলাধুলা করার অনুমতি দিতেন। ইমাম বুখারী (র) বলেন, অর্থাৎ শিশুদেরকে। আবু উকবা (র) একবার আমি ইবনে উমার (রাঃ)-র সাথে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি কতক আবিসিনীয় বালককে অতিক্রম করলেন, যাদের তিনি খেলাধুলায় মত্ত দেখলেন। তিনি দুটি দিরহাম (রূপার মুদ্রা) বের করে তাদের দিলেন। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) আমার খেলার সাথীদের আমার নিকট পাঠিয়ে দিতেন। তারা খেলনা অর্থাৎ ক্ষুদ্র পুতুল নিয়ে খেলতো। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ কবুতর যবেহ করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের পিছু ধাওয়া করতে দেখলেন। তিনি বলেনঃ এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ) হাসান (র) উসমান (রাঃ) জুমুআর নামাযের খুতবা দিলেই তাতে কুকুর হত্যা করার এবং কবুতর যবেহ করার নির্দেশ দিতেন (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক)। হাসান (র) আমি উসমান (রাঃ)-কে তাঁর ভাষণে কুকুর নিধনের এবং কবুতর যবেহ করার নির্দেশ দিতে শুনেছি। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক)
অনুচ্ছেদঃ যার প্রয়োজন আছে সে-ই যাবে।
যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) একদিন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার নিকট এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চান। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তখন তার মাথা তার বাঁদীর হাতে ছিল এবং সে তাতে চিরুনী করছিল। তিনি তার মাথা সরিয়ে নিলেন। উমার (রাঃ) তাকে বলেন, তাকে অপনার মাথায় চিরুনী করতে দিন। তিনি বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি লোক পাঠালে আমিই তো আপনার নিকট যেতে পারতাম। উমার (রাঃ) বলেন, প্রয়োজনটা তো আমার। (বায়হাকীর সুনানুল কুবরা)
অনুচ্ছেদঃ জনসমাবেশের ভেতরে থুথু ফেলার নিয়ম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) কেউ লোকজনের মধ্যে (অবস্থানকালে) থুথু ফেললে তা হাত দিয়ে আড়াল করে রাখবে, যাবত না তা মাটিতে পতিত হয়। কেউ রোযা রাখলে যেন (দেহে) তৈল মাখে, যাতে তার চেহারায় রোযার আলামত না দেখা যায়।
অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি একদল লোকের সাথে কথা বলার সময় একজনকে লক্ষ্য করে বলবে না।
হাবীব ইবনে আবু সাবিত (র) তারা (সাহাবীগণ) এটাই পছন্দ করতেন যে, কোন ব্যক্তি কথা বললে কেবল একজনের সামনাসামনি হয়ে কথা বলবে নাসাঈ, বরং সকলকে সম্বোধন করবে।
অনুচ্ছেদঃ অবাঞ্ছিত দৃষ্টিপাত।
ইবনে আবুল হুযাইল (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) তার সাথীদের একজনকে সাথে নিয়ে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যান। তিনি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে তার সাথের লোকটি এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বলেন, আল্লাহর শপথ! যদি তোমার চোখ দুটি ফুঁড়ে দেয়া হতো তবে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হতো। নাফে (র) ইরাকবাসী একদল লোক ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হয়। তারা তাদের এক খাদেমের নিকট একটি সোনার বেড়ি দেখতে পেলো। তাতে তারা পরস্পরের প্রতি তাকালো। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, খারাপ কাজের জন্য তোমাদের কি ধুর্তামি।
অনুচ্ছেদঃ অনর্থক কথাবার্তা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) অনৰ্থক কথাবার্তায় কোন কল্যাণ নাই। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমার উম্মাতের নিকৃষ্ট লোক হলো যারা বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে স্ফীত। আর আমার উম্মাতের উত্তম হলো তাদের মধ্যকার উত্তম চরিত্রের লোক। (তিরমিযী, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ দ্বিমুখী চরিত্রের লোক।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ দ্বিমুখী চরিত্রের লোক মানুষের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট। সে এদের নিকট এক রূপ নিয়ে এবং ওদের নিকট ভিন্ন রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়। (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ দ্বিমুখী চরিত্রের লোকের পাপ।
আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী চরিত্রের, কিয়ামতের দিন তার আগুনের দুইটি মুখ হবে। এ সময় এক স্থূলকায় ব্যক্তি সেখান দিয়ে গেলে তিনি বলেনঃ এই ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত। (আবু দাউদ, দারিমী, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ অনিষ্টের ভয়ে যাকে পরিহার করা হয় সে নিকৃষ্ট।
আয়েশা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলো। তিনি বলেনঃ তাকে অনুমতি দাও, বংশের নিকৃষ্ট লোক। সে প্রবেশ করলে তিনি তার সাথে নম্র ব্যবহার করেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যা মন্তব্য করার তো করলেন, অতঃপর নম্র ভাষায় কথা বললেন। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! যার অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার জন্য মানুষ তাকে ত্যাগ করে, সে নিকৃষ্ট লোক। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ লজ্জাশীলতা।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে। বাশীর ইবনে কাব (র) বলেন, প্রজ্ঞাপূর্ণ কথার মধ্যে লিপিবদ্ধ আছে, লজ্জাশীলতার মধ্যে রয়েছে গাম্ভীর্য, লজ্জাশীলতার মধ্যে রয়েছে প্রশান্তি। ইমরান (রাঃ) তাকে বলেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদীস শুনাচ্ছি। আর তুমি তোমার কিতাব থেকে বর্ণনা করছে। (বুখারী, মুসলিম, তাবারানী)। ইবনে উমার (রাঃ) লজ্জাশীলতা ও ঈমান সম্পূর্ণ একই প্রকৃতির। এদের একটি তুলে নেয়া হলে অপরটি দূরীভূত হয়ে যায়। (হাকিম)
অনুচ্ছেদঃ যুলুম-নির্যাতন।
আবু বাকরা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ লজ্জা-সম্ভ্রম ঈমানের অংগ, আর ঈমানের (মুমিনের) স্থান বেহেশতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা যুলুমের অংগ, আর যুলুমের (যালেমের) স্থান হলো দোযখে। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, তাহাবী, হাকিম, হিব্বান) মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনুল হানাফিয়্যা (র) নবী (সাঃ) ছিলেন হৃষ্টপুষ্ট মাথাবিশিষ্ট এবং ডাগর চোখবিশিষ্ট। তিনি সামনের দিকে ঝুঁকে হাটতেন, যেন তিনি উচ্চ স্থানে আরোহণ করছেন। তিনি কারো প্রতি দৃষ্টিপাত করলে পূর্ণদেহে সেদিকে ফিরতেন। (আহমাদ হা/৬৮৪, তিরমিযী, মুসান্নাফ ইবনে শায়বাহ)
অনুচ্ছেদঃ তোমার লজ্জা-শরম না থাকলে যাচ্ছে তাই করতে পারো।
আবু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেছেনঃ পূর্বকালের নবীগণের বাণীসমূহের মধ্যে মানুষ যেটি লাভ করেছে তা হলো, “তোমার যদি লজ্জাই না থাকে তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো”। (বুখারী)
অনুচ্ছেদঃ ক্রোধ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ প্রকৃত বলবান বীর পুরুষ সে নয় যে কুস্তিতে কাউকে ধরাশায়ী করে। আসল বীরপুরুষ হলো সেই ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) ইবনে উমার (রাঃ) কোন বান্দা আল্লাহর সন্তোষ লাভের বাসনায় তার ক্রোধের ঢোক গলাধঃকরণ (সংবরণ) করলে, আল্লাহর নিকট সওয়াবের দিক থেকে তার চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ কোন ঢোক নাই। (আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ ক্রোধের সময় কি বলবে?
সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রাঃ) দুই ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সামনে পরস্পর গালিগালাজ করে। তাতে তাদের একজন ক্রোধাৰিত হওয়ায় তার মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। নবী (সাঃ) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ আমি অবশ্যই এমন একটি বাক্য জানি যা সে বললে নিশ্চয় তার এই রাগ চলে যাবে। তা হলোঃ “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” (আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইবনে মাজাহ)। তখন এক ব্যক্তি উঠে ঐ লোকটির নিকট গিয়ে বললো, তুমি কি জানো, নবী (সাঃ) কী বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ তুমি বলো, “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম”। লোকটি বললো, তুমি কি আমাকে পাগল ঠাওরিয়েছো! সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম। দুই ব্যক্তি পরস্পরকে গালি দিতে লাগলো। তাতে তাদের একজনের চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো এবং তার শিরা-উপশিরা ফুলে গেলো। নবী (সাঃ) বলেনঃ অবশ্যই আমি এমন একটি কথা জানি, সে তা উচ্চারণ করলে নিশ্চয় তার রাগ চলে যাবে। লোকজন ঐ লোকটিকে বললো, নিশ্চয় নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তুমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। সে বললো, আমি কি পাগল হয়ে গেছি। (বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ কারো রাগ উঠলে চুপ হয়ে যাবে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা জ্ঞান দান করো এবং দীনকে সহজভাবে তুলে ধরো। তোমরা জ্ঞান দান করো এবং দীনকে সহজভাবে তুলে ধরো। তিনি একথা তিনবার বলেন। তুমি ক্রোধাৰিত হলে নীরবতা অবলম্বন করো। কথাটি তিনি দুইবার বলেন। (আহমাদ, তায়ালিসী)
অনুচ্ছেদঃ বন্ধুর সার্থে ভালোবাসার আতিশয্য দেখাবে না।
আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) ইবনুল কাওয়াকে বলেন, তুমি কি জানো, প্রথম ব্যক্তি কি বলেছেন? তোমার বন্ধুকে সংগত সীমা পর্যন্ত ভালোবাসো। অসম্ভব নয় যে, সে একদিন তোমার শক্র হয়ে যেতে পারে। তোমার শত্রুর সাথে তোমার শত্রুতাকে সীমিত রাখো। অসম্ভব নয় যে, সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যেতে পারে। (তিরমিযী হা/১৯৪৭)
অনুচ্ছেদঃ তোমার ঘৃণা যেন ধ্বংসের কারণ না হয়।
যায়েদ ইবনে আসলাম (র) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, তোমার ভালোবাসা যেন কৃত্রিম না হয় এবং তোমার ঘৃণা যেন ধ্বংসকামী না হয়। আমি (রাবী) বললাম, তা কিভাবে হতে পারে? তিনি বলেন, তুমি যখন ভালোবাসো তখন শিশুর মত হয়ে যাও এবং যখন তুমি ঘৃণা করো তখন তোমার সাথীর (প্রতিপক্ষের) ধ্বংস কামনা করো (এরূপ যেন না হয়)। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক)