5. ভদ্র আচার ব্যাবহার

【1】

অনুচ্ছেদঃ সৎ-অসৎনির্বিশেষে সকলের সাথে সদাচার।

মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনুল হানাফিয়া (র) তিনি বলেন, “সদ্ব্যহারের প্রতিদান সদ্ব্যবহার ভিন্ন আর কি হতে পারে”(৫৫ : ৬০) শীর্ষক আয়াত পুণ্যবান ও পাপাচারী সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আবু আবদুল্লাহ (র) বলেন, আবু উবায়েদ (র) বলেছেন, তা হলো সাধারণ নীতি (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।

【2】

অনুচ্ছেদঃ ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর মর্যাদা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ বিধবা ও গরীবজনদের জন্য চেষ্টা-সাধনাকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর এবং যে ব্যক্তি দিনে রোযা রাখে ও রাতে (নফল) নামাযে লিপ্ত থাকে তার সমতুল্য (বুখারী, মুসলিম)।

【3】

অনুচ্ছেদঃ নিজের ইয়াতীম পোষ্যদের লালনকারীর মর্যাদা।

আয়েশা (রাঃ) এক স্ত্রীলোক তার দু’টি কন্যা সন্তানসহ আমার নিকট এসে কিছু প্রার্থনা করে। সে আমার কাছে একটি খেজুর ভিন্ন আর কিছুই পেলো না। আমি সেটি তাকে দান করলাম। সে তা তার কন্যাদ্বয়কে ভাগ করে দিলো। অতঃপর সে উঠে চলে গেলো। নবী (সাঃ) ঘরে এসে প্রবেশ করলে আমি তাঁকে তা বললাম। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি এই কন্যাদের প্রতি সামান্য সদয় ব্যবহার করবে, তারা তার জন্য দোযখ থেকে অন্তরাল হবে (বুখারী, মুসলিম)।

【4】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি দরিদ্র পিতা-মাতার সন্তান লালন-পালন করে তার মর্যাদা।

উম্মু সাঈদ (র) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি এবং ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী বেহেশতে এই দুইটি মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলের মতো একত্রে থাকবো (তাবারানী)। হাসান (র) এক ইয়াতীম বালক ইবনে উমার (রাঃ)-এর আহার গ্রহণকালে নিয়মিত উপস্থিত হতো। এক দিন তিনি আহার নিয়ে ডাকলেন এবং ইয়াতীমকে খোঁজ করলেন, কিন্তু তাকে পাননি। তার আহার গ্রহণ শেষ হলে সে এসে উপস্থিত হলো। ইবনে উমার (রাঃ) খাদ্য নিয়ে ডাকলেন। তখন তাদের নিকট খাবার অবশিষ্ট ছিলো না। তার নিকট ছাতু ও মধু আনা হলো। তিনি বলেন, এটা গ্রহণ করো। আল্লাহর শপথ! তোমাকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে না। হাসান (র) এই হাদীস বর্ণনাকালে বলতেন, আল্লাহর শপথ! ইবনে উমার (রাঃ) আহার থাকতে তা লুকাননি। সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি ও ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী কিয়ামতের দিন এভাবে একত্রে থাকবো। একথা বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমার প্রতি ইংগিত করেন (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী)। আবু বাকর ইবনে হাফস (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) ইয়াতীমকে সঙ্গে না নিয়ে আহার করতেন না।

【5】

অনুচ্ছেদঃ যে ঘরে ইয়াতীম আছে এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করা হয় সেই ঘর সর্বোত্তম।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মুসলমানদের ঘরসমূহের মধ্যে সেই ঘর সর্বোত্তম, যেখানে কোন ইয়াতীম আছে এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করা হয়। মুসলমানদের ঘরসমূহের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট সেই ঘর যেখানে কোন ইয়াতীম আছে এবং তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। আমি এবং ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী বেহেশতে এই দুইটির মতো একত্রে থাকবো। এই বলে তিনি তার দুই আঙ্গুলের দিকে ইংগিত করেন (ইবনে মাজাহ)।

【6】

অনুচ্ছেদঃ ইয়াতীমের জন্য দয়ার্দ্র পিতৃতুল্য হও।

আবদুর রহমান ইবনে আবযা (রাঃ) দাউদ (আবু দাউদ) বলেছেনঃ ইয়াতীমের জন্য দয়ার্দ্র পিতৃতুল্য হও এবং জেনে রাখো! তুমি যেরূপ বপন করবে সেইরূপ কর্তন করবে। প্রাচুর্যের পর দরিদ্রতা কতই না মন্দ! তার চাইতেও মন্দ হলো হেদায়াত লাভের পর পথভ্রষ্টতা। তুমি কোন সঙ্গীর সাথে ওয়াদা করলে তা অবশ্যই পূর্ণ করবে। নতুবা তাতে তোমার ও তার মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হবে। এমন বন্ধু থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, (বিপদে) যাকে স্মরণ করলে সে তোমাকে সাহায্য করবে না এবং তুমি তাকে ভুলে গেলে সে তোমাকে স্মরণ করবে না। হাসান বসরী (র) আমি এমন মুসলমানদের সাক্ষাত পেয়েছি, যাদের কেউ ভোরে উপনীত হয়ে তার পরিজনকে বলতেন, “হে আমার পরিবার, হে আমার পরিবার! তোমাদের ইয়াতীম, তোমাদের ইয়াতীম। হে আমার পরিবার, হে আমার পরিবার! তোমাদের দরিদ্রজন, তোমাদের দরিদ্রজন। হে আমার পরিবার, হে আমার পরিবার! তোমাদের প্রতিবেশী, তোমাদের প্রতিবেশী। তোমাদের সেই উৎকৃষ্টগণ (সাহাবীগণ) তো চলে গেলেন, আর তোমরা তো দিন দিন অধঃপতিত হচ্ছে । তিনি আরো বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে দেখতে পাবে যে, পাপাচারী তিরিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জাহান্নামের গভীরে প্রবেশ করছে। তার কি হলো! আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন। সে আল্লাহর কাছে তার প্রাপ্য অংশ একটি ছাগলের মূল্যে বিকিয়ে দিলো। তুমি ইচ্ছা করলে দেখতে পাবে যে, সে শয়তানের রাস্তার ইতর অনুসারী। সে নিজ বিবেকের উপদেশও গ্রহণ করে না এবং অন্যের উপদেশেও কর্ণপাত করে না। আসমা ইবনে উবায়েদ (র) আমি ইবনে সীরীন (র)-কে বললাম, আমার কাছে এক ইয়াতীম আছে। তিনি বলেন, তুমি তার সাথে তোমার সন্তানের অনুরূপ ব্যবহার করো এবং তাকে প্রহার করো যে কারণে তুমি তোমার সন্তানকে প্রহার করে থাকো (তার সাথে তোমার সন্তানের অনুরূপ ব্যবহার করবে)।

【7】

অনুচ্ছেদঃ সন্তানের কারণে যে নারী ধৈর্য ধারণ করেছে এবং পুনর্বিবাহ থেকে বিরত থেকেছে।

আওফ ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি ও ঝলসানো (বিষন্ন) গালবিশিষ্ট নারী, যার স্বামী মারা গেছে, কিন্তু সে তার সন্তানের কারণে ধৈর্য ধারণ করেছে (পুনর্বিবাহ করেনি) জান্নাতে এই দুই (আঙ্গুল)-এর মত একত্রে বসবাস করবো (আবু দাউদ, মুসনাদ আবু ইয়ালা)।

【8】

অনুচ্ছেদঃ ইয়াতীমদের আদব-কায়দা শিক্ষাদান।

শুমায়সা আতাকিয়া (র) আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট ইয়াতীমকে আদব-কায়দা শিক্ষা দানের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, ইয়াতীমকে আমি অবশ্যই আদব-কায়দা শিখাতে প্রহার করি যাবত না সে সটান হয় (বাযযার)।

【9】

অনুচ্ছেদঃ যার সন্তান মারা গেছে তার মর্যাদা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যায় তাকে দোযখের আগুন স্পর্শ করবে না, অবশ্য শপথ পূর্ণ করার জন্য (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) এক মহিলা একটি শিশুসহ নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এর জন্য দোয়া করুন। আমি ইতিমধ্যে তিনটি সন্তানকে দাফন করেছি। তিনি বলেনঃ তুমি তো দোযখের মোকাবিলায় মযবুত প্রতিবন্ধক গড়ে তুলেছো (মুসলিম)। খালিদ আল-আবসী (র) আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেলে আমি অত্যন্ত শোকাহত হলাম। আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আপনি কি নবী (সাঃ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন যা দ্বারা আমরা আমাদের মৃতদের মৰ্মবেদনায় সান্তুনা লাভ করতে পারি? তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের ছোট শিশুরা বেহেশতের পতঙ্গ (মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যার তিনটি সন্তান মারা গেছে এবং সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করেছে, সে বেহেশতে যাবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আর দুটি সন্তান? তিনি বলেনঃ এবং দুটিও? আমি (মাহমূদ) জাবের (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর শপথ! আমার তো মনে হয় আপনারা যদি এক সন্তানের কথাও বলতেন তবে তিনি তাই বলতেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমার ধারণাও তাই (আবু দাউদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) এক মহিলা একটি শিশুসহ নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এর জন্য দোয়া করুন। আমি ইতিমধ্যে তিনটি সন্তানকে দাফন করেছি। তিনি বলেনঃ তুমি তো দোযখের মোকাবিলায় মযবুত প্রতিবন্ধক গড়ে তুলেছো (মুসলিম)! আবু হুরায়রা (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে আসতে পারি না। আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন। সেদিন আমরা আপনার নিকট হাযির হবো। তিনি বলেনঃ অমুকের ঘরে তোমরা সমবেত হবে। তিনি প্রতিশ্রুত স্থানে তাদের নিকট এলেন। তিনি তাদেরকে যা বললেন তার মধ্যে এ কথাও ছিলোঃ তোমাদের মধ্যে যে নারীর তিনটি সন্তান মারা যায় এবং সে তাদের দ্বারা সওয়াবের আশা করে, সে জান্নাতে যাবে। এক মহিলা বলেন, আর দুটি? তিনি বলেনঃ দুটি সন্তানের মৃত্যু হলেও (বুখারী, মুসলিম)। উম্মু সুলাইম (র) আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেনঃ হে উম্মু সুলাইম! যে দুই মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যায় তাদের দু’জনকেই (পিতা-মাতাকে) আল্লাহ বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, তাদের প্রতি তার দয়ার কল্যাণে। আমি বললাম, দুইজন মারা গেলে? সাসাআ ইবনে মুয়াবিয়া (র) তিনি আবু যার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন। আবু যার (রাঃ) একটি মশক জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, হে আবু যার! আপনার সন্তানের কী প্রয়োজন! তিনি বলেন, আমি তোমাকে হাদীস শুনাবো না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে মুসলমানের তিনটি সন্তান নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাদের প্রতি তার মায়ার কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে দাসত্বমুক্ত করবে, মহামহিম আল্লাহ তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের বিনিময়ে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মুক্তি দিবেন। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যার তিনটি সন্তান অপ্রাপ্ত বয়সে মারা গেছে আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে এবং তাদেরকে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করাবেন (বুখারী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

【10】

অনুচ্ছেদঃ গর্ভপাতে যার সন্তান মারা যায়।

সাহল ইবনুল হানযালিয়া (রাঃ) তার সন্তানাদি হতো না। তিনি বলেন, ইসলামী যুগে যদি আমার একটি সন্তান গর্ভপাত হয়ে মারা যেতো এবং আমি তাতে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করতাম, তাহলে আমি তাকে দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু আমার মালিকানাভুক্ত হওয়ার চেয়েও উত্তম বিবেচনা করতাম। ইবনুল হানযালিয়া (রাঃ) ছিলেন বৃক্ষতলে (হুদায়বিয়ায়) বায়আত গ্রহণকারী সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত। আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যার নিকট নিজ সম্পত্তির চেয়ে তার ওয়ারিসদের সম্পত্তিই অধিক প্রিয়? সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রত্যেকের কাছে তার নিজের সম্পত্তি তার ওয়ারিসদের সম্পত্তির চেয়ে অধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যেনে রেখো! তোমাদের মধ্য এমন কেউ নাই যার কাছে তার নিজ সম্পত্তি অপেক্ষা তার ওয়ারিসদের সম্পত্তি অধিক প্রিয় নয়। তোমার সম্পত্তি হলো যা তুমি অগ্রিম প্রেরণ করেছো। আর তোমার ওয়ারিসদের সম্পত্তি হলো যা তুমি রেখে দিয়েছে (বুখারী, নাসাঈ)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে নিঃসন্তান বলো? সাহাবীগণ বলেন, যার সন্তান হয় না সে নিঃসন্তান। তিনি বলেনঃ নাসাঈ, বরং নিঃসন্তান হলো যে কোন সন্তান অগ্রে প্রেরণ করেনি অর্থাৎ যার কোন সন্তান মারা যায়নি (বুখারী, মুসলিম)। আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে মল্লযোদ্ধা বলো? সাহাবীগণ বলেন, লোকেরা যাকে ভূপাতিত করতে পারে না। তিনি বলেনঃ না, বরং যে ব্যক্তি ক্রোধের সময় আত্মসংবরণ করতে পারে সে-ই হলো মল্লযোদ্ধা (মুসলিম)।

【11】

অনুচ্ছেদঃ (মহানবী (সাঃ)-এর অন্তিম উপদেশ) উত্তম ব্যবহার।

আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর অন্তিম সময় ঘনিয়ে এলে তিনি বলেনঃ হে আলী! আমার নিকট একখানা ফলক নিয়ে আসো। আমি তাতে এমন কিছু লিখে দিবো যাতে আমার উম্মাত পথভ্রষ্ট না হয়। আমার আশঙ্কা যে, হয়তো সে সময় আমি পাবো না। আমি বললাম, নিশ্চয় আমি আমার কাঁধের পাণ্ডুলিপিতে এটা সংরক্ষণ করবো। তখন তাঁর মাথা তার কনুই ও আমার দুই বাহুর মাঝখানে ছিল। তিনি নামায, যাকাত এবং তোমাদের দাসদাসী সম্পর্কে ওসিয়াত করেন। তিনি এরূপ বলতে বলতে ইন্তেকাল করেন। তিনি তাকে আদেশ দেন এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল” এবং বলেনঃ যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিবে, দোযখের জন্য তাকে হারাম করা হবে (আবু দাউদ)। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা দাওয়াত দানকারীর ডাকে সাড়া দিও, উপহারাদি ফেরত দিও না এবং মুসলমানদেরকে প্রহার করো না (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আলী (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর অন্তিম কথা ছিলঃ নামায! নামায! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ)।

【12】

অনুচ্ছেদঃ নীচ ব্যবহার।

আবু দারদা (রাঃ) তিনি লোকদেরকে বলতেন, পশু চিকিৎসকগণ পশুদেরকে যেরূপ চিনতে পারে, আমি তোমাদেরকে তার চেয়েও উত্তমরূপে চিনি। আমি তোমাদের মধ্যকার উত্তম ও নিকৃষ্ট লোকদের চিনি। অতএব তোমাদের মধ্যকার উত্তম লোক হলো, যাদের নিকট কল্যাণ আশা করা যায় এবং যাদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ বোধ করা যায়। আর তোমাদের মধ্যকার মন্দ লোক হলো, যাদের নিকট কল্যাণ আশা করা যায় নাসাঈ, যাদের অনিষ্ট থেকেও নিরাপদ বোধ করা যায় না এবং যাদের প্রতিশ্রুত দাসের মুক্তি দেয়া হয় না। আবু উমামা (রাঃ) ‘কানুদ’ (অকৃতজ্ঞ) সেই ব্যক্তি যে তার দান-খয়রাত বন্ধ রাখে, জনবিচ্ছিন্ন থাকে এবং নিজের দাসকে মারধর করে। হাসান (র) এক ব্যক্তি তার উটে করে তার গোলামকে কূপ থেকে পানি তুলে আনতে নির্দেশ দিলো। কিন্তু গোলামটি ঘুমিয়ে গেলো। তার মনিব অগ্নিশিখাসহ এসে তা তার মুখের উপর নিক্ষেপ করলো। গোলামটি কূপের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো। পরদিন সকালে সে উমার (রাঃ)-র নিকট উপস্থিত হলো। তিনি তার মুখে পোড়া দাগ দেখে তৎক্ষণাৎ তাকে দাসত্বমুক্ত ঘোষণা করেন।

【13】

অনুচ্ছেদঃ বেদুইনের নিকট দাস-দাসী বিক্রয়।

আমরা (র) আয়েশা (রাঃ) তার এক বাঁদীকে তার মৃত্যুর পর মুক্তি প্রদানের কথা ঘোষণা করেন। পরে আয়েশা (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ভ্রাতুষ্পুত্ৰগণ যুক্ত (জাঠ) সম্প্রদায়ের এক চিকিৎসকের সাথে তার ব্যাপারে পরামর্শ করেন। সে বললো, আপনারা আমাকে এমন এক মহিলা সম্পর্কে অবিহত করেছেন যাকে তার দাসী যাদু করেছে। আয়েশা (রাঃ)-কে তা অবহিত করা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি আমাকে যাদু করেছিস? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেন, কেন? কখনও তুই মুক্তি পাবি না। তিনি বলেন, তোমরা তাকে উগ্র মেজাজের অসদাচারী বেদুইনের কাছে বিক্রি করো (আবু দাউদ, হাকিম)।

【14】

অনুচ্ছেদঃ খাদেমের সাথে ক্ষমাসুন্দর ব্যবহার।

আবু উমামা (রাঃ) নবী (সাঃ) দুইটি গোলামসহ আসলেন। এদের একটি আলী (রাঃ)-কে দিয়ে তিনি বলেনঃ তাকে মারধর করো না। কেননা নামাযীকে নির্যাতন করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সে আমাদের নিকট আসার পর থেকে আমি তাকে নামায পড়তে দেখেছি। অপর গোলামটি তিনি আবু যার (রাঃ)-কে দিয়ে বলেনঃ তার সাথে সদয় ব্যবহার করো। তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ সে কি করছে? আবু যার (রাঃ) বলেন, আপনি আমাকে তার সাথে সদয় ব্যবহার করতে বলেছেন। তাই আমি তাকে দাসত্বমুক্ত করে দিয়েছি (আবু দাউদ)। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) মদীনায় আসলেন। তাঁর কোন খাদেম ছিলো না। আবু তালহা (রাঃ) আমার হাত ধরে আমাকে নবী (সাঃ)-এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর নবী! আনাস বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান বালক। সে আপনার খেদমত করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তার মদীনায় আসার সময় থেকে তাঁর ইনতিকাল পর্যন্ত সফরে ও আবাসে তার সেবা করেছি। তিনি আমার কোন কাজের জন্য বলেননিঃ তুমি এটা এভাবে করলে কেন? আবার আমার কোন কাজ না করায় তিনি বলেননিঃ তুমি এটা এভাবে করলে না কেন (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)?

【15】

অনুচ্ছেদঃ ক্রীতদাস চুরির অপরাধ করলে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ক্রীতদাস চুরি করলে একটি ‘নাশ’-এর বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রয় করে ফেলো। ইমাম বুখারী (র) বলেন, ‘নাশ’ হলো বিশ দিরহাম ‘নাওয়াত’ হলো পাঁচ দিরহাম এবং ‘উঁকিয়া’ হলো চল্লিশ দিরহাম (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)।

【16】

অনুচ্ছেদঃ খাদেম অপরাধ করলে।

আসেম ইবনে লাকীত ইবনে সাবুরা (র) তিনি বলেন, আমি (বনু মুনতাফিকের প্রতিনিধি হয়ে) নবী (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে পৌছলাম। রাখাল খোঁয়াড়ে একটি ছাগল ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি ধারণা করো না যে, আমরা এটা তোমার জন্য যবেহ করছি। আমাদের এক শত বকরী আছে। এই সংখ্যা বৰ্দ্ধিত হওয়া আমরা কামনা করি না। অতএব ছাগল ছানাটি নিয়ে এলে আমরা তৎপরিবর্তে একটি বকরী যবেহ করলাম। নবী (সা) তখন যা বলেছেন, তার মধ্যে ছিলঃ তোমার স্ত্রীকে তোমার দাসীর মত মারধর করো না এবং যখন নাক পরিষ্কার করো উত্তমরূপে পরিষ্কার করো, যদি তুমি রোযাদার না হও (আবু দাউদ, আহমাদ)।

【17】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ক্ষতির আশংকায় খাদেমের নিকট সীলমোহর করে মাল সোপর্দ করে।

আবুল আলিয়া (র) আমাদের নির্দেশ দেয়া হতো যে, আমরা যেন কোন বস্তু খাদেমের নিকট দেয়ার সময় সীলমোহর করে, ওজন করে বা গুণে দেইবনে মাজাহ, যাতে তার অভ্যাস খারাপ না হতে পারে বা আমাদের কেউ কুধারণার শিকার না হয়।

【18】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সন্দিহান হওয়া থেকে বাঁচার জন্য নিজ খাদেমের নিকট গণনা করে দেয়।

সালমান (রাঃ) আমি খাদেমের কাছে কোন বস্তু দেওয়ার সময় গণনা করে দেইবনে মাজাহ, যাতে কুধারণা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। হারিসা ইবনে মুদাররিব (র) আমি সালমান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি সন্দেহমুক্ত থাকার জন্য খাদেমের কাছে কোন বস্তু দেওয়ার সময় গণনা করে দেই।

【19】

অনুচ্ছেদঃ খাদেমকে শিষ্টাচার শিক্ষাদান।

ইয়াযীদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসাইত (র) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) তার এক গোলামকে সোনা বা রূপার মুদ্রাসহ পাঠালেন। সে মুদ্রা বিনিময় করে অপর পক্ষকে (তার মুদ্ৰা আনার জন্য) সময় দেয়। সে ফিরে এলে তিনি তাকে বেদম প্রহার করেন এবং বলেন, যাও আমার মুদ্রা ফেরত নিয়ে এসো, তা বিনিময় করো না। আবু মাসউদ (রাঃ) আমি আমার এক গোলামকে প্রহার করছিলাম। আমি আমার পিছন থেকে ডাক শুনলামঃ হে আবু মাসউদ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমার উপর, গোলামের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর ওয়াস্তে সে আযাদ। তিনি বলেনঃ তুমি যদি তা না করতে তবে দোযখ তোমাকে অবশ্যই স্পর্শ করতো অথবা দোযখ তোমাকে অবশ্যই গ্রাস করতো (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)।

【20】

অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ তার মুখমণ্ডল বিকৃত করুন- একথা বলো না।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা বলো নাসাঈ, “আল্লাহ তার মুখমণ্ডল বিকৃত করুন” (ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) অবশ্যই তুমি বলো নাসাঈ, “আল্লাহ তোমার মুখমণ্ডল এবং তোমার সদৃশ ব্যক্তির মুখমণ্ডল বিকৃত করুন”। আল্লাহ আদম (আবু দাউদ)-কে তাঁর নিজ অবয়বে সৃষ্টি করেছেন (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)।

【21】

অনুচ্ছেদঃ মুখমণ্ডলে আঘাত দেয়া পরিহার করবে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার খাদেমকে মারধর করলে সে যেন মুখমণ্ডল পরিহার করে (বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ)। জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) একটি পশুকে অতিক্রম করলেন। এর দুই চিবুকে গরম লোহার দাগ ছিল । নবী (সাঃ) বলেনঃ যে এই কাজ করেছে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করুন। কেউ যেন মুখমণ্ডলে দাগ না দেয় এবং তাতে আঘাত না করে (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ)।

【22】

অনুচ্ছেদঃ কেউ তার গোলামকে চপেটাঘাত করলে সে যেন তাকে স্বেচ্ছায় আযাদ করে দেয়।

হেলাল ইবনে ইয়াসাফ (র) আমরা সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন (রাঃ)-এর বাড়ির সামনে কাপড় বিক্রি করতাম। এক দাসী বের হয়ে এসে এক ব্যক্তিকে কটু কথা বললো। লোকটি তাকে চপেটাঘাত করলো। সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন (রাঃ) বলেন, তুমি কি তার গালে চপেটাঘাত করছো? আমি ছিলাম সাতজনের মধ্যে একজন। আমাদের সাতজনের একজন মাত্র খাদেম ছিল। আমাদের একজন তাকে চপেটাঘাত করলো। নবী (সাঃ) খাদেমটিকে আযাদ করে দিতে তাকে নির্দেশ দিলেন (মুসলিম, তিরমিযী)। ইবনে উমার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে চপেটাঘাত করলো অথবা বিনা অপরাধে হদ্দ-এর শাস্তি দিলো, তার কাফফারা হলো তাকে আযাদ করে দেয়া (মুসলিম, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। মুয়াবিয়া ইবনে সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন (র) আমি আমাদের এক গোলামকে চপেটাঘাত করলে সে পালিয়ে গেলো। আমার পিতা আমাকে ডেকে বলেন, আমি একটা ঘটনা শুনাই। আমরা মুকাররিন (রাঃ)-এর সাত সন্তান ছিলাম। আমাদের একজন মাত্র খাদেম ছিল। আমাদের একজন তাকে চপেটাঘাত করলো। বিষয়টি নবী (সাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বলেনঃ তাদেরকে বলো, তারা যেন তাকে আযাদ করে দেয়। নবী (সাঃ)-কে বলা হলো, সে ছাড়া তাদের কোন খাদেম নাই। তিনি বলেনঃ তাহলে আপাতত তারা তাকে তাদের কাজে রাখুক, তারপর তারা আত্মনির্ভরশীল হলে তাকে আযাদ করে দিবে (মুসলিম, আবু দাউদ)। সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন আল-মুযানী (রাঃ) সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন আল-মুযানী (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তার গোলামকে চপেটাঘাত করতে দেখলেন। তিনি বলেন, তুমি কি জানো না, মুখমণ্ডল সম্মানিত স্থান? রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে আমি ছিলাম সাত ভাইয়ের মধ্যে সপ্তম। আমাদের একজন মাত্র খাদেম ছিল। আমাদের একজন তাকে চপেটাঘাত করলো। নবী (সাঃ) গোলামটিকে আযাদ করে দিতে আমাদের নির্দেশ দিলেন (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)। যাযান আবু উমার (র) আমরা ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি তার এক গোলামকে ডাকলেন। তাকে তিনি প্রহার করেছিলেন। তিনি তার পিঠ উদলা করলেন এবং বললেন, তুমি কি ব্যথা অনুভব করছো? সে বললো, না। তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন। অতঃপর তিনি মাটি থেকে এক খণ্ড কাঠ তুলে নিয়ে বলেন, এর দ্বারা এই কাষ্ঠ খণ্ডের ওজনের পরিমাণ সওয়াবও আমি পাবো না। আমি বললাম, হে আবদুর রহমানের পিতা! আপনি একথা বলেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করলো অথবা তার মুখমণ্ডলে চপেটাঘাত করলো, তার কাফফারা হলো তাকে আযাদ করে দেয়া (মুসলিম, আবু দাউদ)।

【23】

অনুচ্ছেদঃ গোলামের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ।

আম্মার ইবনে ইয়াসার (রাঃ) যে কেউ নিজ গোলামকে নির্যাতকরূপে প্রহার করবে, তাকে কিয়ামতের দিন শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে। আবু লায়লা (র) সালমান (রাঃ) একদা সফরে বের হলেন। তার পশুর ঘাস হাওদা থেকে নিচে পড়ছিল। তিনি গোলামকে বলেন, যদি আমার কিসাসের (প্রতিশোধ গ্রহণের) ভয় না থাকতো, তবে আমি অবশ্যই তোকে শাস্তি দিতাম (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ প্রাপ্যসমূহ অবশ্যই তার প্রাপককে পৌঁছাতে হবে, এমনকি শিংবিহীন ছাগীকেও শিংওয়ালা ছাগীর নিকট থেকে প্রতিশোধ আদায় করে দেয়া হবে (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)। উম্মু সালামা (রাঃ) নবী (সাঃ) তার ঘরে ছিলেন। তিনি তাঁর বা উম্মু সালামার দাসীকে ডাকলেন। সে আসতে বিলম্ব করলো। তাতে নবী (সাঃ)-এর মুখমণ্ডলে অসন্তুষ্টির ভাব দেখা গেলো। উম্মু সালামা (রাঃ) উঠে পর্দার ওপাশে গেলেন এবং তাকে খেলায় রত দেখলেন। তাঁর হাতে ছিল মিসওয়াক। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন প্রতিশোধ গ্রহণের আশংকা না থাকলে অবশ্যই আমি এই মিসওয়াক দিয়ে তোকে প্রহার করতাম। মুহাম্মাদ ইবনুল হায়সামের বর্ণনায় আরো আছেঃ সে একটি ছাগলের বাচ্চা নিয়ে খেলছিল। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে-সহ নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তো শপথ করে বলছে যে, সে আপনার ডাক শুনতে পায়নি। তিনি আরো বলেন, তার হাতে ছিল একটি মিসওয়াক (তাবাকাত ইবনে সাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপরকে প্রহার করলে, কিয়ামতের দিন তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে (বাযযার, তাবারানী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করলে, কিয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে (বাযযার, তাবারানী)।

【24】

অনুচ্ছেদঃ তোমরা যা পরিধান করো দাস-দাসীদেরও তাই পরিধান করাও।

উবাদা ইবনুল ওলীদ ইবনুস সামিত (র) আমি এবং আমার পিতা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে আনসারদের জীবদ্দশায় তাদের এই জনপদে রওয়ানা হলাম। সর্বপ্রথম এই মহল্লায় আমাদের সাথে সাক্ষাত হলো নবী (সাঃ)-এর সহচর আবুল ইয়াসার (রাঃ)-র সাথে। তার সাথে তার একটি গোলামও ছিল। তাদের দু’জনের পরনে ছিলো দামী চাদর ও খাকী সাধারণ চাদর। আমি তাকে বললাম, চাচাজান! আপনি যদি গোলামের চাদরটি নিতেন এবং আপনার খাকী চাদরটি গোলামকে দিতেন অথবা আপনি খাকী চাদর গায়ে দিয়ে তাকে দামী চাদরের সম্পূর্ণটা দিতেন, তবে আপনাদের দু'জনেরই তো একটা করে চাদর হতো। তিনি আমার মাথায় তার হাত বুলিয়ে বলেন, হে আল্লাহ! একে বরকত দান করুন। হে ভাতিজা! আমার এই দু’চোখ দেখেছে, আমার এই দুই কান শুনেছে, আমার এই অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে এবং তিনি তার অন্তরের দিকে ইংগিত করলেন। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা যা খাও তাদেরকেও তাই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরিধান করো, তাদেরকেও তাই পরাবে”। তাকে আমার দুনিয়ার সামগ্ৰী প্রদান করা কিয়ামতের দিন আমার সওয়াবসমূহের অংশবিশেষ তার গ্রহণ করার চাইতে আমার নিকট সহজতর (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) ক্রীতদাসদের সাথে সদয় ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন এবং বলতেনঃ তোমরা যা খাও তাদেরকেও তাই খাওয়াও, তোমরা যা পরিধান করো তাদেরকেও তা পরিধান করাও এবং মহামহিম আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিও না।

【25】

অনুচ্ছেদঃ দাস-দাসীদের গালি দেয়া নিষেধ।

মারূর ইবনে সুয়াইদ (র) আমি আবু যার (রাঃ)-এর পরনে একটি লাল বর্ণের চাদর এবং তার গোলামের পরনেও একই রকম চাদর দেখলাম। আমরা তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম। সে নবী (সাঃ)-এর নিকট আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে নবী (সাঃ) আমাকে বলেনঃ তুমি কি তার মাকে তুলে গালি দিয়েছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমাদের দাসগণ তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই আছে সে যা খায়, তাকেও যেন তা খাওয়ায়, সে যা পরে তাকেও তাই পরায় এবং তাদের উপর তাদের সাধ্যাতীত কাজ চাপাবে না। এরূপ কোন কাজ তাদের করতে দিলে সে যেন তাদের সেই কাজে সাহায্য করে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।

【26】

অনুচ্ছেদঃ লোকে নিজ দাসকে কি সাহায্য করবে ?

নবী (সাঃ)-এর এক সাহাবী নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের দাসগণ তোমাদের ভাই। অতএব তোমরা তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করো, যে কাজ তোমাদের পরাভূত করে তাতে তাদের সাহায্য গ্রহণ করো এবং যে কাজ তাদের পরাভূত করে, তাতে তোমরাও তাদের সাহায্য করো (আবু দাউদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) তোমরা কর্মচারীকে তার কর্ম সম্পাদনে সাহায্য করো। কেননা আল্লাহর কর্মচারী (খাদেম) ব্যর্থ হয় না।

【27】

অনুচ্ছেদঃ দাসের উপর তার মাধ্যতীত কাজের বোঝা চাপানো নিষেধ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দাস তার আহারাদি ও পরিধেয় পাবে এবং তার উপর তার সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপানো যাবে না (মুসলিম, মুওয়াত্তা মালিক, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দাস তার আহারাদি ও পরিধেয় পাবে এবং তার উপর তার সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপানো যাবে না (পূর্বোক্ত হাদীসের বরাত)। মারূর (র) আমরা আবু যার (রাঃ)-র সাক্ষাত পেলাম। তার পরনে ছিল একটি সূতিবস্ত্র এবং তার গোলামের পরনে ছিল একটি রেশমী চাদর। আমরা বললাম, আপনি যদি এটা গ্রহণ করতেন এবং তাকে যদি এই রেশমী চাদর ছাড়া অন্যটি দিতেন। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের এসব ভাইবনে মাজাহ, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। অতএব তোমাদের কারো অধীনে তার ভাই থাকলে সে যা খায় তাকেও যেন তা খাওয়ায়, সে যা পরিধান করে, তাকেও যেন তাই পরিধান করায় এবং তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজের বোঝা যেন তার উপর না চাপায়। যদি সে তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজের বোঝা তার উপর অর্পণ করে, তাহলে সে যেন তাকে সহায়তা করে।

【28】

অনুচ্ছেদঃ নিজ গোলাম ও খাদেমের জন্য কোন ব্যক্তির খরচ দানরূপে গণ্য।

মিকদাম (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ তুমি নিজে যা খাও তাও সদাকা, তুমি তোমার স্ত্রী, পুত্র ও খাদেমকে যা খাওয়াও তাও সদাকা (নাসাঈ, আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ উত্তম সদাকা হলো সচ্ছলতা বজায় রেখে যা করা হয়। উপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাতের চেয়ে উত্তম। পোষ্যদের থেকে (দান-খয়রাত) শুরু করো। অন্যথায় তোমার স্ত্রী বলবে, আমার ভরণপোষণ দাও নতুবা আমাকে তালাক দাও। তোমার দাস বলবে, আমাকে ভরণপোষণ দাও অন্যথায় আমাকে বিক্রয় করো। তোমার সন্তান বলবে, আমাকে কার দায়িত্বে ছেড়ে যাচ্ছেন (বুখারী, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) দান-খয়রাত করার নির্দেশ দিলেন। এক ব্যক্তি বললো, আমার কাছে একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তুমি নিজের জন্য ব্যয় করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তোমার স্ত্রীর জন্য ব্যয় করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তোমার খাদেমের জন্য ব্যয় করো। তারপর তোমার বিবেক-বুদ্ধি খাটাও (নাসাঈ, আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ)।

【29】

অনুচ্ছেদঃ কেউ তার দাসের সাথে একত্রে আহার করা অপছন্দ করলে।

ইবনুয যুবাইর (রাঃ) এক ব্যক্তি জাবির (রাঃ)-কে তার খাদেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। সে তার (জন্য আহার তৈরি করতে) পরিশ্রম ও তাপ সহ্য করেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কি আহারের সময় তাকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বলেন, হাঁ, তোমাদের কেউ যদি তার সাথে আহার করতে অনিচ্ছুক হয়, তবে সে যেন নিজ হাতে তার মুখে এক গ্রাস খাবার তুলে দেয় (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।

【30】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি নিজে যা খাবে তার দাসকেও তা খাওয়াবে।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) দাসদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন এবং বলতেনঃ তোমরা যা খাও তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা পরিধান করো তাদেরকেও তা পরিধান করাও এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিও না।

【31】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি আহারের সময় তার খাদেমকেও কি তার সাথে বসাবে?

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কারো খাদেম তার আহারাদি নিয়ে তার কাছে আসলে সে যেন তাকেও সাথে বসায়। সে যদি তাতে সম্মত না হয়, তবে তাকে (তার মুখে) তা থেকে কিছু তুলে দেয় (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। আবু মাহযূরা (রাঃ) আমি উমার (রাঃ)-এর দরবারে বসা ছিলাম। তখন সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রাঃ) একটি বিরাট পাত্রসহ সেখানে আসেন। পাত্রটি একটি পশমী আবায় করে কয়েক ব্যক্তি বহন করে আনে। তারা তা উমার (রাঃ)-এর সামনে রাখে। উমার (রাঃ) দরিদ্র লোকজনকে এবং তার নিকট উপস্থিত লোকজনের দাসদেরকে ডাকলেন। তারা তার সাথে একত্রে আহার করলো। তিনি বলেন, আল্লাহ এমন একটি সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন অথবা আল্লাহ এমন সম্প্রদায়কে অপদস্থ করেছেন, যারা নিজেদের দাসদের সাথে আহার করতে অপছন্দ করতো। সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা তাদের ঘৃণা করি নাসাঈ, বরং আমরা তাদেরকে আমাদের উপর অগ্রাধিকার দেই। আল্লাহর শপথ! আমরা উত্তম খাবার পেলেই তা নিজেরাও খাই এবং তাদেরকেও খাওয়াই।

【32】

অনুচ্ছেদঃ গোলাম তার মালিকের কল্যাণ কামনা করলে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে গোলাম তার মনিবের কল্যাণ কামনা করে এবং উত্তমরূপে তার প্রতিপালকের ইবাদত করে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। বর্ণনাকারী এক ব্যক্তি আমের আশ-শাবী (র)-কে বললো, হে আমরের পিতা! আমরা পরস্পর বলাবলি করি যে, কোন ব্যক্তি তার সন্তানদাত্রী দাসীকে দাসত্বমুক্ত করার পর বিবাহ করলে সে যেন তার কোরবানীর পশুকে বাহনরূপে ব্যবহার করলো। আমের (র) বলেন, আবু বুরদা (র) তার পিতার সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির জন্য দুটি করে পুরস্কার রয়েছে। (১) আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি তার নবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপরও ঈমান এনেছে তার জন্য দুইটি পুরস্কার। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক এবং তার মনিবের হক আদায় করে (৩) যে ব্যক্তির কাছে একটি দাসী ছিল, সে তাকে শয্যাসঙ্গিনী করেছে, তাকে উত্তমরূপে শিষ্টাচার শিখিয়েছে এবং উত্তমরূপে শিক্ষাদীক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে দাসত্বমুক্ত করে বিবাহ করেছে, তার জন্য দুইটি পুরস্কার রয়েছে। আমের (রাঃ) বলেন, আমি তোমাকে তা (জ্ঞান) বিনিময় ছাড়াই দান করলাম। এর চাইতে ক্ষুদ্র কথা শেখার জন্যও মানুষকে ইতিপূর্বে মদীনা পর্যন্ত সফর করতে হতো (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ক্রীতদাস উত্তমরূপে তার প্রভুর ইবাদত করে এবং তার মনিবের আনুগত্য ও কল্যাণ কামনার যে কর্তব্য তার উপর রয়েছে তাও পালন করে, তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার (বুখারী)। আবু বুরদা (র) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ক্রীতদাসের জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। সে যখন উত্তমরূপে আল্লাহর ইবাদতের হক আদায় করে এবং মনিবের প্রতি তার কর্তব্যও পালন করে (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)।

【33】

অনুচ্ছেদঃ গোলামও একজন দায়িত্বশীল।

ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শাসক জনগণের রাখাল, তাকে তার জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যে কোন ব্যক্তি তার পরিবারের রাখাল। তাকে তাঁর পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দাস তার মনিবের সম্পদরাজির রাখাল, তাকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে (বুখারী, মুসলিম, দারিমী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) দাস তার মনিবের আনুগত্য করলে সে মহামহিম আল্লাহরই আনুগত্য করলো এবং সে মনিবের অবাধ্যাচারী হলে মহামহিমান্বিত আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো।

【34】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি গোলাম হওয়া পছন্দ করে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন মুসলিম গোলাম যখন আল্লাহর হক ও তার মনিবের হক আদায় করে, তখন সে দু’টি পুরস্কার পাবার অধিকারী হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আবু হুরায়রার জীবন! যদি আল্লাহর পথে জিহাদ ও হজ্জ না থাকতো এবং আমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকতো তাহলে আমি গোলামী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা অধিক পছন্দ করতাম (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)।

【35】

অনুচ্ছেদঃ গোলামকে “আমার দাস” বলে সম্বোধন করবে না।

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ ‘আমার বান্দা’ ‘আমার বান্দী’ বলবে না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা এবং তোমাদের সব মহিলা আল্লাহর বান্দী। বরং সে যেন বলে, আমার ছেলে, আমার মেয়ে, আমার যুবক, আমার যুবতী (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান)।

【36】

অনুচ্ছেদঃ গোলাম কি বলবে, ‘আমার মনিব’?

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী না বলে। ক্রীতদাসও যেন আমার প্রভু না বলে। সে বলবে, আমার যুবক, আমার যুবতী, আমার নেতা। তোমাদের প্রত্যেকেই দাস, কেবল মহামহিম আল্লাহই হচ্ছেন রব (প্রভু) (আবু দাউদ, নাসাঈ)। মুতাররিফ (র) তিনি বলেন, আমার পিতা বললেন, আমি আমের গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে নবী (সাঃ)-এর কাছে গেলাম। লোকেরা (রাসূলকে) বললো, আপনি আমাদের সাইয়েদ (নেতাবারানী)। তিনি বললেনঃ সাইয়েদ তো হচ্ছেন আল্লাহ। লোকেরা বললো, আপনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বড়। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা নিজেদের কথা বলো এবং শয়তান যেন তোমাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ না করতে পারে (আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ)।

【37】

অনুচ্ছেদঃ পুরুষলোক তার পরিবার বা সংসারের পৃষ্ঠপোষক।

ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা সকলেই অভিভাবক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমীর (শাসক, অধিনায়ক) একজন পৃষ্ঠপোষক। তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। পুরুষলোক তার পরিবারের অভিভাবক। তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের পৃষ্ঠপোষক, তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক এবং প্রত্যেককেই তার অভিভাবকত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। আবু সুলায়মান মালেক ইবনুল হুয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন নবী (সাঃ)-এর কাছে হাযির হলাম। আমরা ছিলাম সমবয়স্ক যুবক। আমরা একাধারে বিশ রাত তাঁর কাছে অবস্থান করলাম। তিনি অনুভব করলেন, আমরা আমাদের পরিবারে ফিরে যেতে আগ্রহী। তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, আমরা বাড়িতে কাকে কাকে রেখে এসেছি। আমরা এ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বাস্তবিকই অত্যন্ত সদয় এবং দয়াশীল ছিলেন। তিনি বলেনঃ তোমরা নিজেদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাও, তাদের দ্বীনের জ্ঞান দান করো এবং ভালো কাজ করার নির্দেশ দাও। আর তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছো ঠিক সেভাবে নামায পড়ো। নামাযের ওয়াক্ত হলে তোমাদের মধ্যে একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তোমাদের নামাযে ইমামতি করবে (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

【38】

অনুচ্ছেদঃ স্ত্রীলোক পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালক।

ইবনে উমার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমাদের সবাই রাখাল (অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, পরিচালক, দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের সবাইকে নিজ নিজ রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম একজন রাখাল এবং তাকে নিজের রাখালী সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। ব্যক্তি তার পরিবারবর্গের রাখাল, স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসারের রাখাল এবং খাদেম তার মনিবের সম্পদের রাখাল। আমি নবী (সাঃ)-এর কাছ থেকে এ কথাগুলো শুনেছি। আমার অনুমান নবী (সাঃ) আরো বলেছেনঃ ব্যক্তি তার পিতার সম্পদের রাখাল (বুখারী)।

【39】

অনুচ্ছেদঃ যার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় সে যেন তার উত্তম বিনিময় দেয়।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ যার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় সে যেন তাকে তার অনুরূপ বিনিময় দান করে। যদি বিনিময় দান করার সামথ্য না থাকে তাহলে সে তার প্রশংসা করবে। কেননা সে যখন তার প্রশংসা করলো তখন সে যেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। যে ব্যক্তি তা (ভালো ব্যবহার) গোপন রাখলে সে যেন তার প্রতি অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করলো। যে ব্যক্তি কোন কিছু না পেয়েও বলে, পেয়েছি, সে দ্বিগুণ মিথ্যাবাদী (তিরমিযী, আবু দাউদ, আহমাদ)। ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আশ্রয় প্রার্থনা করে তাকে আশ্রয় দাও। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কিছু প্রার্থনা করে তাকে দান করো। যে ব্যক্তি তোমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে তোমরা তার প্রতিদান দাও। প্রতিদান দেয়ার মত কিছু না থাকলে তার জন্য দোয়া করো, যাতে সে অনুভব করতে পারে যে, তোমরা তার ভালো কাজের প্রতিদান দিয়েছে (আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ)।

【40】

অনুচ্ছেদঃ কারো ভালো ব্যবহারের প্রতিদান দেয়া সম্ভব না হলে তার জন্য দোয়া করবে।

আনাস (রাঃ) মুহাজির সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সমস্ত সওয়াব তো আনসারগণ নিয়ে গেলো। তিনি বলেনঃ নাসাঈ, যতক্ষণ তোমরা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং তাদের ভালো ব্যবহারের বা উপকারের প্রশংসা করতে থাকবে তোমরাও তাদের সাথে সমান সওয়াব পাবে (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)।

【41】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ নয় (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা রূহকে বললেন, বের হয়ে আসো। রূহ বললো, আমি অনিচ্ছায় বের হয়ে আসবো।

【42】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির তার ভাইকে সাহায্য করা।

আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে বলা হলো, সর্বোত্তম আমল কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাঁর পথে জিহাদ। বলা হলো, আযাদ করার জন্য সর্বোত্তম গোলাম কে? তিনি বলেনঃ যার মূল্য সর্বাধিক এবং যে নিজ পরিবারের নিকট অধিক প্রিয়। প্রশ্নকারী বললো, আপনার কি মত, আমি যদি কোন কোন কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বলেনঃ তাহলে কোন কারিগরের কাজে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞ লোকের কাজ করে দাও। সে বললো, আপনি কি মনে করেন, যদি তা করতে আমি অপরাগ হই? তিনি বলেনঃ তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ থাকতে দাও। কেননা তা সদাকা যা তোমার নিজের জন্য তুমি করতে পারো (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে হিব্বান)।