7. রোগীর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ

【1】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্নের রোগযাতনা (তার গুনাহর) কাফফারাস্বরূপ।

গুদাইফ ইবনুল হারিস (রাঃ) এক ব্যক্তি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-এর রোগাক্রান্ত অবস্থায় তার নিকট আসলো। সে বললো, আপনি কেমন আছেন? আমীর পুরস্কৃত হোন! তিনি বলেন, তোমরা কি জানো, কিসের বিনিময়ে তোমরা পুরস্কার লাভ করো? সে বললো, আমাদের উপর অবাঞ্ছিত কিছু আপতিত হলে তার বিমিনয়ে। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যা ব্যয় করো এবং তোমাদের জন্য যা ব্যয় করা হয় তোমরা তার বিনিময় পাবে। অতঃপর তিনি হাওদা থেকে শুরু করে ঘোড়ার লাগাম পর্যন্ত অনেক কিছুর উল্লেখ করলেন। অতঃপর বলেন, কিন্তু তোমাদের দেহে যেসব অসুখ-বিসুখ হয় তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করেন -(আহমাদ, তাবারানী)। আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুসলিম বান্দার উপর রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভাবনা যাই আসুক, এমনকি যে কাঁটা তার গায়ে বিধে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)। আবদুর রহমান ইবনে সাঈদ (র) তিনি বলেন, আমি সালমান (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি কিন্দায় এক রোগীকে দেখতে গেলেন। তিনি তার নিকট প্রবেশ করে বলেন, তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা আল্লাহ মুমিন বান্দার রোগকে তার গুনাহসমূহের কাফফারা ও অনুশোচনাস্বরূপ গ্রহণ করেন। আর পাপাচারীর রোগ হলো এমন উটতুল্য যাকে তার মালিক বেঁধে রাখলো, অতঃপর ছেড়ে দিলো। অথচ সে জানে না যে, তারা কেন তাকে বাঁধলো এবং কেনই বা তাকে ছেড়ে দিলো। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ ঈমানদার পুরুষ ও নারীর জান-মাল ও পরিবার-পরিজনের উপর বালা-মুসীবত লেগেই থাকে। অতঃপর সে মহামহিম আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করে যে, তার কোন গুনাহই অবশিষ্ট থাকে না (তিরমিযী, আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) এক বেদুইন নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে বলেনঃ তোমাকে কি উম্মু মিলদাম স্পর্শ করেছে? সে বললো, উম্মু মিলদাম কি? তিনি বলেনঃ দেহের চামড়া ও গোশতের মধ্যবর্তী স্থানের উত্তাপ (জ্বর)। সে বললো, না। তিনি পুনরায় বলেনঃ তুমি কি সুদা আক্রান্ত হয়েছো? সে বললো, সুদা কি? তিনি বলেনঃ একটি বায়ু যা মাথায় অনুভূত হয় এবং তা শিরাসমূহে আঘাত করে। সে বললো, না। অতঃপর সে ব্যক্তি উঠে চলে গেলে তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন দোযখীকে দেখতে আগ্রহী সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয় (হাকিম, ইবনে হিব্বান)।

【2】

অনুচ্ছেদঃ গভীর রাতে রোগীকে দেখতে যাওয়া।

খালিদ ইবনুর রবী (র) হুযায়ফা (রাঃ) মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হলে তা তার পরিবারের লোকজন ও আনসারগণ শুনতে পেলেন। তারা গভীর রাতে বা ভোর রাতের দিকে তার নিকট আসলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, এটা কোন সময়? আমরা বললাম, মধ্যরাত বা ভোরের কাছাকাছি সময়। তিনি বলেন, আমি জাহান্নামের প্রভাত হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। তিনি বলেন, তোমরা কি আমার কাফনের কাপড় নিয়ে এসেছো? আমরা বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, তোমরা কাফনের ব্যাপারে বেশি খরচ করো না। কেননা আল্লাহর কাছে যদি আমার জন্য কল্যাণ থেকে থাকে, তবে তার পরিবর্তে আমি এর চেয়ে উত্তম বস্ত্রই লাভ করবো। আর যদি তা না হয় তবে এই কাফনও অচিরেই ছিনিয়ে নেয়া হবে (হাকেম, সিফাতুস সাফওয়া)। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে আল্লাহ তাকে (গুনাহ থেকে) এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করেন, যেমন হাপড় লোহাকে পরিচ্ছন্ন করে। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন মুসলমান ব্যথা-বেদনা বা রোগ-ব্যাধির দ্বারা বিপদগ্রস্ত হলে তা তার গুনাহর কাফফারা হয়, এমনকি তার দেহে কাঁটা বিধলে বা লাগলে বা সে হোঁচট খেলে তাও। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ) সাদ (রাঃ)-এর কন্যা আয়েশা (রাঃ) তার পিতা বলেছেন, আমি মক্কায় রোগগ্ৰস্ত হলাম। নবী (সাঃ) আমাকে দেখতে এলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অনেক সম্পত্তি এবং একটি মাত্র কন্যা সন্তান রেখে যাচ্ছি। আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ ওসিয়াত করে এক-তৃতীয়াংশ রেখে যেতে পারি? তিনি বলেনঃ না। তিনি (পিতাবারানী) বলেন, তাহলে আমি কি অর্ধেক সম্পত্তি ওসিয়াত করে বাকী অর্ধেক তার জন্য রেখে যেতে পারি? তিনি বলেনঃ না। আমি বললাম, তবে কি আমি এক-তৃতীয়াংশ ওসিয়াত করে দুই-তৃতীয়াংশ তার জন্য রেখে যেতে পারি? তিনি বলেনঃ এক-তৃতীয়াংশ। তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। অতঃপর তিনি তাঁর হাত আমার কপালে রাখলেন, অতঃপর আমার মুখমণ্ডলে ও পেটে হাত বুলালেন। অতঃপর বলেনঃ “হে আল্লাহ! সাদকে রোগমুক্ত করো এবং তার হিজরতকে পূর্ণ করো”। সাদ (রাঃ) বলেন, তিনি আমার এখান থেকে বিদায়ের পর হতে এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তাঁর হাতের শীতলতা আমার হৃদপিণ্ডে অনুভব করছি (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

【3】

অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় যেসব নেক আমল করতো, তার রুগ্ন অবস্থায়ও (তার আমলনামায়) তা লেখা হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হলে সেই অবস্থায় সে তার সুস্থাবস্থায় যেরূপ আমল করতো সেরূপ সওয়াব তার জন্য লেখা হয়। (আহমাদ, বাযযার, হাকিম) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে কোন মুসলমানকে আল্লাহ যখন দৈহিকভাবে পরীক্ষায় ফেলেন, তার সুস্থাবস্থায় সে যেরূপ আমল করতো ঠিক তদ্রুপ সওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে, যতক্ষণ সে রোগাক্রান্ত থাকে। অতঃপর যদি তিনি তাকে রোগমুক্ত করেন তবে তাকে (গুনাহ থেকে) ধৌত করে দেন, আর যদি তাকে মৃত্যু দান করেন তবে তাকে ক্ষমা করে দেন (আহমাদ, মুশকিলুল আছার)। আবু হুরায়রা (র) একদা জ্বর নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আপনি আমাকে আপনার একান্ত প্রিয়জনদের কাছে প্রেরণ করুন। তিনি তাকে আনসারদের বসতিতে পাঠান। তা তাদেরকে ছয় দিন ছয় রাত আক্রান্ত রাখে এবং মারাত্মক পর্যায়ে পৌছে। নবী (সাঃ) তাদের বসতিতে এলে তারা তাঁর নিকট এই ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তাই নবী (সাঃ) তাদের বাড়ি বাড়ি ও ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের রোগমুক্তির জন্য দোয়া করলেন। তিনি ফিরে এলে এক আনসার মহিলা তার অনুসরণ করেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! অবশ্যই আমি একজন আনসার মহিলা এবং আমার পিতাও একজন আনসার। অতএব আপনি আনসারদের জন্য যেরূপ দোয়া করে এসেছেন, আমার জন্যও অনুরূপ দোয়া করুন। তিনি বলেনঃ তুমি কি চাও? তুমি চাইলে আমি তোমার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতে পারি। আর যদি তুমি চাও তবে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, তোমার জন্য হবে জান্নাত। সে বললো, বরং আমি ধৈর্য ধারণ করবো, তবুও জান্নাত প্রাপ্তিকে বিঘ্নিত করবো না। আবু হুরায়রা (রাঃ) আমার কাছে জ্বরের চেয়ে প্রিয়তর কোন রোগ নাই। তা আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবেশ করে এবং আল্লাহ এর বিনিময়ে প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গকে তার প্রাপ্য সওয়াব দান করন (ইবনে আবু শায় বাযযার)। আবু নুহায়লা (র) তাকে বলা হলো, আল্লাহর নিকট দোয়া করুন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! রোগ কমিয়ে দিন, কিন্তু সওয়াব কমাবেন না। তাকে বলা হলো, আরো দোয়া করুন, আরো দোয়া করুন। তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে আপনার নৈকট্য লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমার মাকে আয়তলোচনা হূরদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আতা ইবনে আবু রাবাহ (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে একজন বেহেশতী নারী দেখাবো না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, ঐ কৃষ্ণকায় মহিলা। সে নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত এবং (অচৈতন্য অবস্থায়) আমি বিবস্ত্র হয়ে যাই। আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি বলেনঃ তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো এবং তোমার জন্য হবে জান্নাত। আর যদি চাও তবে আমি তোমার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। সে বললো, আমি ধৈর্য ধারণ করবো। সে পুনরায় বললো, আমি বিবস্ত্র হয়ে যাই। আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, যেন আমি বিবস্ত্র না হই। তিনি তার জন্য দোয়া করলেন। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ) আতা (র) তিনি সেই কৃষ্ণকায় দীর্ঘদেহী উম্মু যুফারকে কাবা ঘরের সিঁড়ির উপর দেখেছেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আবু মুলায়কা আমাকে অবহিত করেছেন যে, কাসেম (র) তাকে অবহিত করেছেন। আয়েশা (রাঃ) তাকে অবহিত করেন যে, নবী (সাঃ) বলতেনঃ মুমিন ব্যক্তির দেহে কাঁটা বিদ্ধ হলে বা ততোধিক বিপদ এলে তাতে তার গুনাহর কাফফারা হয়ে যায় (বুখারী, মুসলিম, মুশকিলুল আছার)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে কোন মুসলমানের গায়ে এই দুনিয়ায় কাঁটা বিদ্ধ হয় এবং সে তাতে সওয়াবের আশা রাখে, তার বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে (আহমাদ, মুশকিলুল আছার)। জাবের (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন মুমিন পুরুষ বা নারী এবং কোন মুসলিম পুরুষ বা নারী রোগগ্রস্ত হলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন (আহমাদ, মুশকিলুল আছার)।

【4】

অনুচ্ছেদঃ রোগীর ‘আমি অসুস্থ’ বলা কি অভিযোগ?

হিশাম (র) তিনি বলেন, আমি এবং আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তার শাহাদাতের দশ দিন পূর্বে (তার মা) আসমা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আসমা (রাঃ) তখন রোগাক্রান্ত। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বলেন, আপনি কেমন বোধ করছেন? তিনি বলেন, অসুস্থ বোধ করছি। তিনি বলেন, আমি তো মৃত্যুর মুখে আছি। আসমা (রাঃ) বলেন, হয়তো তুমি আমার মৃত্যু আশা করছে। তাই তুমি তোমার মৃত্যু কামনা করছো। তুমি তা করো না। আল্লাহর শপথ! তোমার একটা কুল-কিনারা না হওয়া পর্যন্ত আমি মরতে চাই না। হয় তুমি শহীদ হবে এবং আমি তোমার জন্য সওয়াবের আশা করবো অথবা তুমি বিজয়ী হবে এবং তাতে আমার চোখ জুড়াবে। খবরদার মৃত্যুভয়ে তুমি কোন অবাঞ্ছিত প্রস্তাবে সম্মত হয়ো না। ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-র আশংকা ছিল, তিনি শহীদ হলে তাতে তার মা শোকাকুল হয়ে পড়বেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলেন। তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁর শরীরে একটি চাদর জড়ানো ছিল। আবু সাঈদ (রাঃ) তার দেহে হাত রাখলেন এবং চাদরের উপড় দিয়েই উত্তাপ অনুভব করলেন। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনার শরীরে কি ভীষণ জ্বর। তিনি বলেনঃ আমাদের এরূপ হয়ে থাকে। আমাদের উপর কঠিন বিপদ আসে এবং আমাদের দ্বিগুণ সওয়াব দেয়া হয়। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন মানুষের উপর অধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেনঃ নবী-রাসূলগণের উপর, অতঃপর সৎকর্মশীলদের উপর। তাদের কেউ দারিদ্র্যের পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, এমনকি একটি জুব্বা ছাড়া পরার মত কিছুই তাঁর ছিলো না। কেউ উকুনের বিপদে পতিত হয়েছেন। শেষে তা তাঁকে হত্যা করে। নিঃসন্দেহে তোমাদের মধ্যকার কেউ পুরস্কার লাভে যতো খুশি হয়, তাদের কেউ বিপদে পতিত হলে ততোধিক খুশি হতেন (ইবনে মাজাহ, মুশকিলুল আছার)।

【5】

অনুচ্ছেদঃ সংজ্ঞাহীন রোগীকে দেখতে যাওয়া।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি রোগাক্রান্ত হলে নবী (সাঃ) আবু বাকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে পদব্রজে আমাকে দেখতে এলেন। তারা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। নবী (সাঃ) উযু করলেন এবং তার উযুর অবশিষ্ট পানি আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি হুঁশ ফিরে পেলাম। দেখি নবী (সাঃ) উপস্থিত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার সম্পত্তির কি করবো, আমার মাল সম্পর্কে কিরূপ সিদ্ধান্ত নিবো? ওয়ারিসী স্বত্ব সংক্রান্ত আয়াত নাযিল না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমার কথার কোন জবাব দেননি (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)।

【6】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন শিশুদের দেখতে যাওয়া।

উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এক মেয়ের শিশু পুত্র মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হলো। তার মা নবী (সাঃ)-কে বলে পাঠান, আমার সন্তান মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। তিনি বার্তাবাহককে বলেনঃ “তাকে গিয়ে বলো, যা আল্লাহ নিয়ে যান এবং যা তিনি দান করেন সবই তার এবং প্রত্যেক বস্তুর জন্যই তার নিকট মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে”। সুতরাং সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং তার জন্য সওয়াবের আশা করে। বার্তাবাহক ফিরে গিয়ে তাকে তা জানালে তিনি পুনরায় তাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে আসার জন্য বলে পাঠান। নবী (সাঃ) কয়েকজন সঙ্গীসহ রওনা হলেন। সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ)-ও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নবী (সাঃ) মুমূর্ষ শিশুকে তার দুই বাহুর উপর রাখলেন। ছেলেটির বুকে পুরান কলসীর অনুরূপ শব্দ হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হলো। সাদ (রাঃ) বলেন, আপনিও কাঁদছেন, অথচ আপনি আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনঃ আমি তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কাঁদছি। আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে কেবল দয়ার্দ্র হৃদয় বান্দার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।

【7】

অনুচ্ছেদঃ (উম্মু দারদা (রাঃ) রুগ্নার স্বামীকে আহার করাতেন)।

ইবরাহীম ইবনে আবু ইবলা (র) আমার স্ত্রী রোগাক্রান্ত হলে আমি উম্মু দারদা (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, তোমার স্ত্রী কেমন আছে? আমি তাকে বলতাম, অসুস্থ। তিনি আমার জন্য খাবার নিয়ে ডাকতেন। আমি আহার করে ফিরে আসতাম। একবার আমি তার বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, (রুগ্নার) অবস্থা কি? আমি বললাম, অনেকটা সুস্থ। তিনি বলেন, তুমি যদি বলতে তোমার স্ত্রী অসুস্থ, তাহলে আমি তোমার জন্য খাবার আনাতাম। এখন যেহেতু সে সুস্থ, তাই তোমার জন্য আর কিছু আনাচ্ছি না।

【8】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন বেদুইনকে দেখতে যাওয়া।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক রুগ্ন বেদুইনকে দেখতে গেলেন। তিনি বলেনঃ কিছু হবে না। আল্লাহর মর্জি সেরে যাবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বেদুইন বললো, তা তো টগবগে জ্বর। তা এই থুড়থুড়ে বুড়োকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তিনি বলেনঃ তা তো আরো উত্তম (বুখারী)।

【9】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্নদের দেখতে যাওয়া।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ রোযা রেখেছে? আবু বাকর (রাঃ) বলেন, আমি। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ রোগী দেখতে গেছে? আবু বাকর (রাঃ) বলেন, আমি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাযায় অংশগ্রহণ করেছে? আবু বাকর (রাঃ) বলেন, আমি । তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে আহার করিয়েছে? আবু বাকর (রাঃ) বলেন, আমি। মারওয়ান বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, নবী (সাঃ) বলেনঃ এক দিনে যার মধ্যে এতগুলো সৎ কাজের সমাবেশ ঘটে, তাকে আল্লাহ অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মুসলিম, নাসাঈ) জাবের (র) নবী (সাঃ) উম্মু সাইবের বাড়িতে গেলেন। তিনি জ্বরের প্রকোপে কাঁপছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি বলেন, জ্বর। আল্লাহ জ্বরের সর্বনাশ করুন। নবী (সাঃ) বলেনঃ থামো, জ্বরকে গালি দিও না। কেননা তা মুমিন বান্দার গুনাহসমূহ দূরীভূত করে, যেমন হাঁপড় লোহার মরিচ দূর করে (মুসলিম, ইবনে হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ (হাশরের মাঠে) বলবেন, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! তুমি কিভাবে আমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলে, আর আমি তোমাকে আহার করাইনি! অথচ তুমিই তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে আহার করাওনি। তুমি কি জানতে নাসাঈ, যদি তুমি তাকে আহার করাতে তবে তা আমার নিকট পেতে? আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পিপাসার্ত হয়ে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্ৰভু! কেমন করে আমি তোমাকে পানি পান করাতাম, অথচ তুমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে, তবে তা আমার নিকট পেতে? আদম সন্তান! আমি রোগাক্রান্ত হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। বান্দা বলবে, হে প্ৰভু! আমি কিভাবে তোমার সেবা করতে পারি, তুমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে নাসাঈ, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল? তুমি যদি তার সেবা করতে, তবে তা আমার নিকট পেতে অথবা তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। (মুসলিম, মুসনাদ আবু আওয়া নাসাঈ) আবু সাঈদ (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা রুগ্নকে দেখতে যাও এবং জানাযার অনুসরণ করো। তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দিবে (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তিনটি বিষয়, তার প্রতিটিই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য করণীয়। রুগ্নকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা এবং যে ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে তার জবাব দেয়া (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা) (ইবনে হিব্বান)।

【10】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তার রোগমুক্তির জন্য দেয়া করবে।

হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান (র) সাদ (রাঃ)-এর গোত্রের তিনজন নিজ নিজ পিতার সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কায় রোগাক্রান্ত সাদ (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। সাদ (রাঃ) কেঁদে দিলেন। তিনি বলেন, তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? তিনি বলেন, আমার আশংকা যে, আমি যে স্থান থেকে হিজরত করেছি, সাদ ইবনে খাওলার মত সেই স্থানেই বুঝি মারা যাবো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ! সাদকে আরোগ্য দান করুন। তিনি তিনবার দোয়া করলেন। সাদ (রাঃ) বলেন, আমার প্রচুর সম্পদ আছে এবং আমার একমাত্র কন্যা আমার ওয়ারিস। আমি কি আমার সমস্ত সম্পদ ওসিয়াত করতে পারি? তিনি বলেনঃ না। সাদ (রাঃ) বলেন, তবে দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেনঃ না। সাদ (রাঃ) বলেন, তবে অর্ধেক? তিনি বলেনঃ না। সাদ (রাঃ) বলেন, তবে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেনঃ এক-তৃতীয়াংশ, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। নিশ্চয় তোমার মালের যাকাতও দানরূপে গণ্য। তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তুমি যা খরচ করো তাও দানরূপে গণ্য। তোমার স্ত্রী তোমার খাদ্য থেকে যা আহার করে তাও তোমার জন্য দানরূপে গণ্য। তোমার পরিবার-পরিজনকে তোমার সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া, তাদেরকে দ্বারে দ্বারে হাত পেতে বেড়ানোর মত অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম, (একথা বলে) তিনি হাত দ্বারা ইঙ্গিত করেন (মুসলিম)।

【11】

অনুচ্ছেদঃ রোগীকে দেখতে যাওয়ার ফযীলাত।

আবু আসমা (র) যে ব্যক্তি তার রুগ্ন ভাইকে দেখতে যায়, সে বেহেশতের খুরফার মধ্যে থাকে। আমি আবু কিলাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বেহেশতের খুরফা কি? তিনি বলেন, বেহেশতের কুড়ানো ফল। আমি আবু কিলাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু আসমা এই হাদীস কার সূত্রে বর্ণনা করেছেন? তিনি বলেন, সাওবান (রাঃ)-রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সূত্রে। (মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)

【12】

অনুচ্ছেদঃ রোগীর সাথে সাক্ষাতকারীর কথাবার্তা।

আবদুল হামীদ ইবনে জাফর (র) আমার পিতা আমাকে অবহিত করেন যে, আবু বাকর ইবনে হাযম ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (র) মসজিদের কতক লোকসহ অসুস্থ উমার ইবনে হাকাম ইবনে রাফে আনসারীকে দেখতে গেলেন। তারা বলেন, হে আবু হাফস! আমাদেরকে হাদীস শুনান। তিনি বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যায়, সে রহমাতের মধ্যে ডুব দেয়, এমনকি সে যখন সেখানে বসে পড়ে, তখন তো রহমাতের মধ্যেই অবস্থান করে। (মুয়াত্তা মালিক, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, বাযযার)

【13】

অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি রোগীর কাছে নামায পড়ে।

আতা (র) উমার ইবনে সাফওয়ান (র) আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখতে এলেন। নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে ইবনে উমার (রাঃ) তাদেরকে নিয়ে দুই রাকাআত নামায পড়েন এবং বলেন, আমরা সফরে আছি।

【14】

অনুচ্ছেদঃ মুশরিক (পৌত্তলিক) রোগীকে দেখতে যাওয়া।

আনাস (রাঃ) এক ইহুদী বালক নবী (সাঃ)-এর খেদমত করতো। সে অসুস্থ হলে নবী (সাঃ) তাকে দেখতে যান। তিনি তার শিয়রে বসে বলেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। সে তার শিয়রে বসা তার পিতার দিকে তাকালো। সে তাকে বললো, আবুল কাসিমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন”। (বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ)

【15】

অনুচ্ছেদঃ রোগীকে দেখতে গিয়ে কি বলবে?

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (হিজরত করে) মদীনায় আসলে আবু বাকর ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। আবু বাকর (রাঃ) যখনই জ্বরে আক্রান্ত হতেন তখনই একটি কবিতাংশ আবৃত্তি করে বলতেন, “প্রত্যেক ব্যক্তিই তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটবর্তী”। আর বিলালের যখন জ্বর ছেড়ে যেতো তখন উচ্চ স্বরে এ কবিতাংশ আবৃত্তি করতেন, “আহ! কতই না ভালো হতো যদি আমি কবিতা বলতে পারতাম। আহ! যদি আমি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম যেখানে আমার চারিদিকে ইযখির ও জালিল ঘাস থাকতো। আহ! একদিন যদি মুজেন্নার প্রান্তরে ঝর্ণার পানি পান করতে পারতাম এবং শামা ও তাফিল পাহাড়ের পাদদেশে যেতে পারতাম”। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে একথা জানালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দোয়া করলেনঃ “হে আল্লাহ! মক্কার প্রতি আমাদের যেমন মহব্বত, মদীনার প্রতিও তেমন অথবা তার চাইতেও বেশী মহব্বত আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান করো”। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) এক রুগ্ন বেদুইনকে দেখতে গেলেন। রাবী বলেন, নবী (সাঃ) কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেনঃ ক্ষতি হবে নাসাঈ, ইনশাআল্লাহ পাক-পবিত্র হয়ে যাবে। সে বললো, তা কি পবিত্র? কখনো নয়, বরং তা তো এক প্রবীণ বৃদ্ধের উপর আপতিত টগবগে জ্বর। তা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। নবী (সাঃ) বলেনঃ তা তো আরো উত্তম। (বুখারী) নাফে (র) ইবনে উমার (রাঃ) রুগ্ন ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করতেন যে, সে কেমন আছে? আর তিনি তার নিকট থেকে বিদায়কালে বলতেন, আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন। তিনি এর অধিক কিছু বলতেন না।

【16】

অনুচ্ছেদঃ রোগী কি উত্তর দিবে?

ইসহাক ইবনে সাঈদ (র) হাজ্জাজ হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলো। আমি তখন তার নিকট উপস্থিত ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, তিনি কেমন আছেন? তিনি বলেন, ভালো। হাজ্জাজ জিজ্ঞেস করলো, কে আপনাকে কষ্ট দিলো? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এমন দিনে অস্ত্ৰধারণ করতে আদেশ করেছিল, যেদিন অস্ত্ৰধারণ করা নিষিদ্ধ অর্থাৎ স্বয়ং হাজ্জাজ। (বুখারী)

【17】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন পাপাচারীকে দেখতে যাওয়া।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) মদ্যপ রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাকে দেখতে যেও না (বুখারী)।

【18】

অনুচ্ছেদঃ মহিলাদের রুগ্ন পুরুষদের দেখতে যাওয়া।

হারিস ইবনে উবায়দুল্লাহ আনসারী (র) আমি উষ্ণু দারদা (রাঃ)-কে একটি অনাবৃত উটে চড়ে মসজিদবাসী এক অসুস্থ আনসারীকে দেখতে যেতে দেখেছি (বুখারীর তারীখ)।

【19】

অনুচ্ছেদঃ রুগ্নকে দেখতে গিয়ে ঘরের অন্য কিছুর প্রতি তাকানো অবাঞ্ছনীয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আবুল হুযাইল (র) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একদল লোকসহ এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। ঘরের মধ্যে ছিল এক মহিলা। দলের এক ব্যক্তি সেই নারীর দিকে তাকাতে থাকে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বলেন, যদি তোমার চোখ ফুড়ে দেয়া হতো তবে তা তোমার জন্য উত্তম হতো।

【20】

অনুচ্ছেদঃ চক্ষুরোগে আক্রান্তকে দেখতে যাওয়া।

আবু ইসহাক (র) আমি যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমার চক্ষুরোগ হলে নবী (সাঃ) আমাকে দেখতে এলেন, অতঃপর বলেনঃ হে যায়েদ! এভাবে তোমার চক্ষুরোগ অব্যাহত থাকলে তুমি কি করবে? তিনি বলেন, আমি সবর করবো এবং সওয়াবের আশা করবো। তিনি বলেনঃ তোমার চক্ষুরোগ অব্যাহত থাকলে এবং তুমি তাতে সবর করলে ও সওয়াবের আশা করলে তুমি তার বিনিময়ে জান্নাত লাভ করবে (আবু দাউদ, আহমাদ)। কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (র) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর এক সাহাবীর দৃষ্টিশক্তি লোপ পেলে একজন তাকে দেখতে গেলো। তিনি বলেন, আমি তো চেয়েছিলাম যে, এই দুই চোখ ভরে আমি নবী (সাঃ)-কে অবশ্যই দেখবো। এখন যেহেতু নবী (সাঃ)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আল্লাহর শপথ! হরিণসমূহের মধ্যকার সৌন্দর্যময় হরিণ দেখেও আমি আর আনন্দিত হবো না। আনাস (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ মহামহিম আল্লাহ বলেছেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয় বস্তু দুইটির পরীক্ষায় (চক্ষুদ্বয়ের জ্যোতিলোপ) ফেলেছি এবং সে ধৈর্য ধারণ করেছে, বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করলাম। (বুখারী, তিরমিযী, আহমাদ) আবু উমামা (রাঃ) আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! আমি যখন তোমার প্রিয় জিনিস দু’টি নিয়ে নেই (চোখের জ্যোতি হরণ করি) এবং তুমি সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করো ও সওয়াবের আশা করো, আমি তোমাকে সওয়াবের পরিবর্তে জান্নাত না দেয়া পর্যন্ত খুশি হই না। (বুখারী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)

【21】

অনুচ্ছেদঃ রোগীর সাথে সাক্ষাতকারী কোথায় বসবে?

ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার মাথার কাছে বসতেন এবং সাতবার বলতেনঃ “আমি মহান আল্লাহর নিকট মহান আরশের প্রভুর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাকে রোগমুক্ত করেন”। তার মৃত্যু বিলম্বিত হলে সে রোগমুক্ত হয়ে যেতো। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান) রাবী ইবনে আবদুল্লাহ (র) আমি হাসান (রাঃ)-এর সাথে অসুস্থ কাতাদা (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। তিনি তার মাথার নিকট বসে তার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন, অতঃপর তার জন্য দোয়া করেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তার অন্তরাত্মাকে আরোগ্য দান করো এবং তাকে রোগমুক্ত করো”।