9. দোয়া-দুরুদ
অনুচ্ছেদঃ যে কোন ব্যক্তি ভোরে উপনীত হয়ে যা বলবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) ভোরে উপনীত হয়ে বলতেনঃ “আমরা ভোরে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজত্ব (সৃষ্টিকুল) ভোরে উপনীত হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তার কোন শরীক নাই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই এবং পুনরুত্থান তার কাছে। তিনি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলতেনঃ “আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আল্লাহর রাজত্ব ভোরে উপনীত হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং তার কোন শরীক নাই। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হবে”। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়া নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অপরের জন্য দোয়া করে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবানের পুত্র ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (আঃ), যিনি বরকতময় মহান আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ইউসুফ (আঃ) যতো কাল কারাগারে ছিলেন আমি যদি ততো কাল কারাগারে থাকতাম এবং অতঃপর রাজদূত আমার নিকট এসে আহবান জানালে আমি (তার ডাকে) সাড়া দিতাম। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পড়েন (অনুবাদ) : “রাজদূত যখন তার নিকট উপস্থিত হলো তখন সে বললো, তুমি তোমার মনিবের নিকট ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো, যে নারীরা নিজেদের হাত কেটেছিলো তাদের অবস্থা কি” (সূরা ইউসুফ : ৫০)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ লুত (আঃ)-এর উপর আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক। তিনি মজবুত দুর্গে আশ্রয় গ্রহণের আকাঙ্খা করেছিলেন। তিনি তাঁর কাওমকে বললেন, “তোমাদের উপর যদি আমার জোর খাটতো অথবা যদি আমি কোন সুদৃঢ় দুর্গের আশ্রয় নিতে পারতাম” (সূরা হূদ : ৮০)। তার পর থেকে আল্লাহ যে কোন জাতির মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মধ্য থেকেই নবীগণকে পাঠিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ অন্তর নিংড়ানো দোয়া।
আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ (র) রবী (র) প্রতি জুমুআর দিন আলকামা (র)-এর নিকট আসতেন। আমি তথায় উপস্থিত না থাকলে তারা আমার জন্য লোক পাঠিয়ে দিতেন। একদা রবী (র) এলেন। কিন্তু আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম না। তাই আলকামা (র) আমার সাথে সাক্ষাত করে আমাকে বলেন, তুমি কি দেখেছো রবী কি নিয়ে এসেছে? তিনি বলেন, আপনি কি লক্ষ্য করেন নাসাঈ, লোকে প্রচুর দোয়া করে কিন্তু তাদের দোয়া কতো কম কবুল হয়? তার কারণ এই যে, মহামহিম আল্লাহ অন্তর নিঃসৃত দোয়া ছাড়া কবুল করেন না। আমি বললাম, আবদুল্লাহ (রাঃ)-ও কি তাই বলেননি? তিনি জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ এমন লোকের দোয়া কবুল করেন নাসাঈ, যে লোককে শুনাবার জন্য, প্রদর্শনীর জন্য এবং অভিনয়ের ভঙ্গিতে দোয়া করে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করে তিনি তার দোয়া কবুল করেন। রবী বলেন, আলকামা (র)-এর স্মরণ হলে তিনি বলেন, হাঁ (তিনি তাই বলেছেন)।
অনুচ্ছেদঃ প্রত্যয় সহকারে দোয়া করবে। কারণ আল্লাহর জন্য বাধ্যতামূলক করণীয় কিছু নাই।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন সে যেন এরূপ না বলে, যদি তুমি চাও (তবে আমার দোয়া কবুল করো)। বরং সে যেন দৃঢ়তার সাথে এবং পরম আগ্রহভরে দোয়া করে। কেননা কিছু দান করা আল্লাহর কাছে বিরাট কিছু নয়। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আওয়া নাসাঈ) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দোয়া করলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে করবে। দোয়ায় এরূপ বলবে না যে, হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও তবে আমাকে দাও। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নাই। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ)
অনুচ্ছেদঃ হাত তুলে দোয়া করা।
আবু নাঈম ওয়াহব (র) আমি ইবনে উমার (রাঃ) ও ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে দোয়া করে হাতের তালু মুখমণ্ডলে মলতে দেখেছি। আয়েশা (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে তাঁর দুই হাত তুলে দোয়া করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর দোয়ায় বলেনঃ “আমি একজন মানুষই। অতএব তুমি আমাকে শাস্তি দিও না। আমি যদি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে তুমি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিও না (মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) তুফাইল ইবনে আমর আদ-দাওসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাওস গোত্র নাফরমান হয়েছে এবং ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অতএব আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদদোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিবলামুখী হয়ে তাঁর উভয় হাত উপরে তুললেন। লোকজন মনে করলো, নবী (সাঃ) তাদেরকে বদদোয়া করবেন। কিন্তু তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! দাওস গোত্রকে হেদায়াত দান করো এবং তাদেরকে মুসলমানদের সাথে মিলিয়ে দাও।--(বুখারী, মুসলিম) আনাস (রাঃ) এক বছর অনাবৃষ্টি হলো। মুসলমানদের একজন জুমুআর দিন নবী (সাঃ)-এর সামনে দাড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনাবৃষ্টি চলছে, ভূমি শুষ্ক (চৌচির) হয়ে গেছে, সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দুই হাত উর্ধ্বে তুললেন। তখন আকাশে মেঘ ছিলো না। তিনি তাঁর দুই হাত এতো প্রসারিত করলেন যে, আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন। আমরা জুমুআর নামায শেষ না করতেই এমন বৃষ্টি হলো যে, নিকটস্থ বাড়ি-ঘরের যুবকরা ফিরে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। সপ্তাহ ধরে অবিরত বৃষ্টি হতে থাকলো। পরবর্তী জুমুআ উপস্থিত হলে লোকজন বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়ছে। কাফেলার চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আদম সন্তানের এতো তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়ে যাওয়াতে মৃদু হাসলেন এবং হাত তুলে বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের উপর আর নয়”। ফলে মদীনার আকাশ থেকে মেঘ চলে গেলো (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক) আয়েশা (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে তাঁর দুই হাত তুলে দোয়া করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর দোয়ায় বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষই। অতএব তুমি আমাকে শাস্তি দিও না। আমি যদি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়ে থাকি বা গালি দিয়ে থাকি, তবে তুমি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিও না” (মুসলিম, আবু দাউদ)। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) তুফাইল ইবনে আমর (র) নবী (সাঃ)-কে বলেন, আপনার কি দুর্গ ও প্রতিরক্ষার প্রয়োজন আছে? দাওস গোত্রের দুর্গ? রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। এজন্য যে, আল্লাহ আনসারদের জন্যই তাঁর প্রতিরক্ষা (সংক্রান্ত) সওয়াবের ভাণ্ডার সংরক্ষিত করেছেন। অতঃপর তুফাইল (রাঃ) হিজরত করে চলে আসলেন। তার সাথে তার সগোত্রীয় এক ব্যক্তিও আসলো। লোকটি রোগাক্রান্ত হলো এবং (রোগ যাতনায়) জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে গেলো। তাই সে শিং-এর মধ্যে থেকে একটি ছুরি নিয়ে তার ঘাড়ের (দুইবনে মাজাহ) দিকের রগ কেটে ফেললো। তাতে তার মৃত্যু হলো। তুফাইল (রাঃ) তাকে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করা হলো। সে বললো, নবী (সাঃ)-এর কাছে আমার হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করা হয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমার দুই হাতের অবস্থা কি? রাবী বলেন, বলা হলো, তোমার হাতের দ্বারা তুমি যা নষ্ট করেছে তা আমরা আর সংস্কার করবো না। রাবী বলেন, তুফাইল (রাঃ) স্বপ্নের কথা নবী (সাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহ! তার দুই হাতকে ক্ষমা করে দাও এবং (দোয়ায় ) তিনি তাঁর দুই হাত উঠালেন। (মুসলিম, আওয়ানাসাঈ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আশ্রয় প্রার্থনা করে বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই ভীরুতা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে -(বুখারী, মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার বান্দার জন্য সেইরূপ যেরূপ সে আমার সম্পর্কে ধারণা পোষণ করে। আমি তার সাথেই থাকি যখন সে আমাকে ডাকে -(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।
অনুচ্ছেদঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া)
শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, “হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছে এবং আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনে বদ্ধপরিকর। আমি তোমার দেয়া নিয়ামতের কথা স্বীকার করি এবং আমার পাপের কথাও তোমার কাছে স্বীকার করি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফকারী আর কেউ নাই। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এরূপ বলে (ঐ রাতে) মারা গেলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে বা বেহেশতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর সে ভোরে উপনীত হয়ে ঐরুপ বললে এবং সেদিন মারা গেলে বেহেশতে প্রবেশ করবে বা বেহেশতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (বুখারী, তিরমিযী, নাসাঈ) ইবনে উমার (রাঃ) আমরা নবী (সাঃ)-এর মজলিসে অবশ্যই গণনা করে দেখতাম যে, তিনি এক মজলিসে শতবার বলতেনঃ “প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয় তুমিই একমাত্র তওবা কবুলকারী, দয়াময়”।-(আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান) আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চাশতের নামায পড়লেন, অতঃপর বলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়াময়”। এমনকি তিনি তা শতবার বললেন (নাসাঈ, আহমাদ)। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ সায়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, কারো এভাবে বলাঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছে এবং আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার দেয়া ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালনে বদ্ধপরিকর। আমি আমার কৃতকর্মের ক্ষতি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি তোমার কাছে তোমার দেয়া নিয়ামতরাজির স্বীকারোক্তি করছি এবং আমি তোমার কাছে আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফকারী আর কেউ নাই”। নবী (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয়সহ দিনের বেলা তা বললে এবং সেদিনই সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে মারা গেলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর কোন ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয়সহ তা রাতের বেলা বললে এবং ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা গেলে সেও জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (বুখারী, তিরমিযী, নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। আমি দৈনিক শতবার আল্লাহর কাছে তওবা করি। কাব ইবনে উজরা (রাঃ) নামাযের পরে পড়ার কলেমা আছে, যেগুলোর পাঠকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয় নাঃ “আল্লাহ মহাপবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আল্লাহ মহান”। রাবী আবু উনাইস ও আমর ইবনে কায়েস (র) হাদীসটি মারফু সুত্রে বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ সত্বর কবুল হওয়ার মতো দোয়া হলো এক অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অপর অনুপস্থিত ব্যক্তির দোয়া। (তিরমিযী, আবু দাউদ) আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ভাইয়ের দোয়া কবুল হয়। সাফওয়ান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান (র) আবু দারদা (রাঃ)-এর কন্যা দারদা তার স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় আমার শ্বশুরালয়ে আসলাম। আমি বাড়িতে দারদার মাকে (আমার শাশুড়ীকে) পেলাম, কিন্তু দারদার পিতাকে (আমার শ্বশুরকে) পেলাম না। শাশুড়ী বলেন, তুমি কি এ বছর হজ্জ করার ইচ্ছা করেছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তাহলে আমাদের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। কেননা নবী (সাঃ) বলতেনঃ “অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য মুসলমানের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা মোতায়েন থাকেন। যখন সে তার কোন ভাইয়ের কল্যাণের জন্য দোয়া করে, তখন সেই ফেরেশতা বলেন, আমীন এবং তোমারও অনুরূপ কল্যাণ হোক”। রাবী বলেন, বাজারে আবু দারদা (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনিও অনুরূপ বললেন এবং তা নবী (সাঃ)-এর বরাতে বললেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়া নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ! কেবল আমাকে ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে ক্ষমা করুন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি অনেক লোককে দোয়া থেকে বঞ্চিত করলে (বুখারী, আহমাদ, ইবনে হিব্বান) ইবনে উমার (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে এক মজলিসে আল্লাহর কাছে শতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুনেছিঃ “হে প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো, আমার তওবা কবুল করো এবং আমাকে অনুগ্রহ করো। কেননা তুমিই তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” (নাসাঈ)।
অনুচ্ছেদঃ বিবিধ।
ইবনে উমার (রাঃ) আমি আমার প্রতিটি ব্যাপারেই দোয়া করে থাকি, এমনকি আমার জন্তুযানকে দ্রুত গতিসম্পন্ন করে দেওয়ার জন্যও দোয়া করি। তাতে আমি আনন্দদায়ক ফলই লাভ করি। উমার (রাঃ) তার দোয়াসমূহের মধ্যে একটি ছিলোঃ “হে আল্লাহ! সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমার মৃত্যু দান করো, নিকৃষ্ট লোকদের মধ্যে আমাকে জীবিত রেখো না এবং উত্তম লোকদের সাথে আমার মিলন ঘটাও”। শাকীক (র) আবদুল্লাহ (রাঃ) বেশীর ভাগ নিম্নোক্ত বাক্যে দোয়া করতেনঃ “আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের সংশোধন করে দাও, আমাদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত করো, আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে মুক্তি দাও, প্রকাশ্য ও গুপ্ত সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে আমাদের দূরে রাখো, আমাদের শ্রবণেন্দ্রীয়, অন্তরসমূহ ও আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের মধ্যে বরকত দান করো এবং আমাদের তওবা কবুল করো। কেননা তুমিই তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। তুমি আমাদেরকে নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ, এগুলোর প্রশংসাকারী ও আলোচনাকারী বানাও এবং তা আমাদেরকে পূর্ণরূপে দান করে”।-(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তাবারানী) সাবিত (র) আনাস (রাঃ) তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সময় বলতেন, “আল্লাহ তার প্রতি সৎকর্মপরায়ণ লোকদের দোয়া বর্ষণ করুন, যারা যালেম বা পাপাচারী নন, যারা রাত জেগে ইবাদত করেন এবং দিনের বেলা রোযা রাখেন”। আমর ইবনে হুরাইস (রাঃ) আমার মা আমাকে নিয়ে নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি আমার মাথা মলে দিলেন এবং আমার রিযিকের জন্য দোয়া করলেন। -(উসদুল গা বাযযার) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) তিনি যাবিয়ায় অবস্থানকালে তাকে বলা হলো, আপনার ভাই-বন্ধু তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করানোর উদ্দেশ্যে বসরা থেকে আপনার নিকট এসেছে। তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের দয়া করুন, আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন”। তারা আরো অধিক দোয়ার আবেদন করলে তিনি পূর্বোক্ত দোয়া করেন। তিনি বলেন, তোমাদের যদি তা দান করা হয় তাহলে তোমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করা হলো। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) একটি গাছের ডাল ধরে নাড়া দিলেন কিন্তু পাতা ঝরলো না। তিনি পুনরায় তা ধরে নাড়া দিলেন কিন্তু এবারও পাতা ঝরলো না। তিনি পুনরায় ডাল ধরে নাড়া দিলে এবার পাতা ঝরলো। তিনি বলেনঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বাক্য গুনাহ ঝরিয়ে দেয়, যেমন গাছ তার পাতাসমূহ ঝরিয়ে দেয় (তিরমিযী, আহমাদ)। আনাস (রাঃ) এক মহিলা তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য নবী (সাঃ)-এর নিকট আসলো। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়েও উত্তম কিছু বলে দিবো না? তোমার শয়নকালে তুমি তেত্রিশবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, তেত্রিশবার “সুবহানাল্লাহ” এবং চৌত্রিশবার “আলহামদু লিল্লাহ” বলবে, তাতে এক শতবার হবে এবং তা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে উত্তম। (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) আরও বলেনঃ যে ব্যক্তি এক শতবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এক শতবার সুবহানাল্লাহ এবং এক শতবার আল্লাহু আকবার বলবে তার জন্য তা দশটি গোলাম আযাদ করা এবং সাতটি উট কোরবানী করার চেয়ে উত্তম। আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন দোয়া সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। সে পরদিন সকালে তার নিকট এসে আবার বললো, হে আল্লাহর নবী! কোন দোয়া সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো, সুখ-শান্তি প্রার্থনা করো। যদি তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করা হয় তবে তুমি সফলকাম হলে।- (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) আবু যার (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম কথা হচ্ছেঃ “সুবহানাল্লাহ লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” (আল্লাহ মহাপবিত্র, তাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তাঁরইবনে মাজাহ, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। মন্দকে রোধ করা এবং কল্যাণ হাসিল করার শক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নাই । আল্লাহ মহাপবিত্র ও সকল প্রশংসা তাঁরই”) -(মুসলিম) আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি নামায পড়ছিলাম। তার কি একটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি তাতে বিলম্ব করলাম। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তুমি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া করবে। নামায শেষ করে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া কি? তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে, আমার জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সব রকম কল্যাণ কামনা করছি। আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে আমার জানা ও অজানা সব রকম ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি তোমার নিকট বেহেশত এবং যে কথা ও কাজ বেহেশতের নিকটবর্তী করে দেয় তা প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট দোযখ থেকে এবং যে কথা ও কাজ দোযখের নিকটবর্তী করে দেয় তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট সেই জিনিস প্রার্থনা করছি যা মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমার নিকট প্রার্থনা করেছেন। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই জিনিস থেকে যা থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আমার ব্যাপারে তুমি যে ফয়সালা করেছো পরিণামে তাকে (আমার) হেদায়াতের উপায় বানাও” (ইবনে মাজাহ)।
অনুচ্ছেদঃ মহানবী (সাঃ)-এর উপর দুরূদ পাঠ।
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে মুসলমান ব্যক্তির দান-খয়রাত করার সামর্থ্য নাইবনে মাজাহ, সে যেন তার দোয়ায় বলে, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া সাল্লি আলাল-মুমিনীনা ওয়াল-মুমিনাত ওয়াল-মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত” (হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদকে দয়া করো এবং মুমিন নারী-পুরুষ ও মুসলিম নারী-পুরুষ সকলকে দয়া করো)। এটাই তার জন্য যাকাতস্বরূপ।- -(হাকিম, ইবনে হিব্বান) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি বলবে, “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের প্রতি অনুগ্রহ করো এবং তাঁর পরিবারবর্গের প্রতিও অনুগ্রহ করো, যেমন তুমি অনুগ্রহ করেছো ইবরাহীম (আবু দাউদ)-কে, ইবরাহীমের পরিজনের প্রতি। আর তুমি বরকত দান করো মুহাম্মাদকে এবং তাঁর পরিবারবর্গকে, যেমন তুমি বরকত দান করেছো ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিজনকে। আর তুমি রহমাত বর্ষণ করো মুহাম্মাদের উপর এবং তাঁর পরিজনদের উপর, যেমন তুমি রহমাত বর্ষণ করেছে ইবরাহীমের উপর এবং তার পরিজনের উপর”। কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে সাক্ষী দিবো এবং তার জন্য শাফাআত করবো (তাবারীর তাহযীব, ফাতহুল বারী)। আনাস (রাঃ) ও মালেক ইবনে আওস ইবনে হাদাসান (রাঃ) নবী (সাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়তে বের হলেন, কিন্তু সাথে যাওয়ার মতো কাউকে পেলেন না। উমার (রাঃ) মাটির ঘড়া বা পানির পাত্র নিয়ে তাঁর পিছে পিছে গেলেন। তিনি তাঁকে একটি শুষ্ক পাহাড়ী নালার মধ্যে সিজদারত অবস্থায় পেলেন। তিনি সরে গিয়ে তাঁর পিছনে বসলেন। শেষে নবী (সাঃ) তাঁর মাথা তুলে বলেনঃ হে উমার! তুমি আমাকে সিজদারত দেখে একপাশে সরে গিয়ে ভালোই করেছো। জিবরাঈল (আবু দাউদ) এসে আমাকে বলেন, যে ব্যক্তি আপনার প্রতি একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তাঁর প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন এবং তার মর্যাদা দশ গুণ বাড়িয়ে দেন। (আহমাদ, মুসনাদে আবু ইয়ালা, সাখাবী)। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন এবং তার দশটি গুনাহ মুছে দেন। (আহমাদ, মুসনাদ আবু নাঈম ইসফাহানী)
অনুচ্ছেদঃ কারো উপস্থিতিতে মহানবী (সাঃ)-এর নামোল্লেখ হওয়া সত্বেও সে তাঁর প্রতি দুরূদ না পড়লে।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন। তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলতে শুনলাম। তিনি বলেনঃ আমি প্রথম সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল (আবু দাউদ) এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন। (ইবনুস সুন্নী) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন বাক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ, দারিমী, ইবনে হিব্বান) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) মিম্বারে আরোহণ করে বলেনঃ আমীন আমীন, আমীন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনি তো কখনও এরূপ করেননি। তিনি বলেনঃ জিবরাল (আবু দাউদ) বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে জীবিত পেলো, অথচ তারা তার বেহেশতে প্রবেশের কারণ হলো নাসাঈ, সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন (তাই হোক)। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রমযান মাস পেলো, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন। তিনি পুনরায় বলেন, যার সামনে আপনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়লো না সে অপমানিত হোক। আমি বললামঃ আমীন।- (মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমাহ, আবু আওয়া নাসাঈ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) তার নিকট থেকে বের হয়ে গেলেন। তার পূর্বনাম ছিল বাররা। নবী (সাঃ) তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জুয়াইরিয়া। তিনি তার নিকট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তার নাম বাররা থাকা অবস্থায় তিনি ঘরে পুনরায় প্রবেশ করা পছন্দ করলেন না। অতঃপর দিনের বেশ সময় চলে গেলে তিনি ফিরে এলেন, অথচ জুয়াইরিয়া (রাঃ) তখনও সেই বসা অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি সেই এক নাগাড়ে বসে আছো? তোমার এখান থেকে যাওয়ার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার করে বলেছি। যদি তোমার দোয়া-কালামের সাথে সেগুলো ওজন করা হয়, তবে আমার কথিত বাক্যগুলিই অধিক ভারী হবেঃ “আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করছি তাঁর অগণিত সৃষ্টির সমান ও তাঁর নিজের সস্তুষ্টি ও তাঁর আরশের ওজনের সমান এবং তাঁর কলেমাসমূহের সংখ্যার সমপরিমাণ” (মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট দোযখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো কবরের আযাব থেকে। তোমরা মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। তোমরা জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। (তিরমিযী,নাসাঈ, আহমাদ, ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ যালেমের বিরুদ্ধে মযলুমের বদদোয়া।
জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ আমার শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি সংশোধন করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত কার্যক্ষম রাখো। যে ব্যক্তি আমার উপর যুলুম করেছে তার বিরুদ্ধে তুমি আমাকে সাহায্য করো এবং তুমি তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে আমাকে দেখাও”। -(তাবারানীর মুজামুস সাগীর) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার চোখ ও কানের দ্বারা উপকৃত করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ রাখো, আমার শক্রর বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো এবং তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে আমাকে দেখাও”। (তিরমিযী, হাকিম, বাযযার) সাদ ইবনে তারিক ইবনে আশয়াম আল-আশযাঈ (র) আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, আমরা প্রভাতকালে সকাল সকাল নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হতাম। কোন পুরুষ বা নারী উপস্থিত হয়ে বলতো, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমি নামায পড়াকালে কিরূপ দোয়া করবো? তিনি বলতেনঃ তুমি বলবে, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে দয়া করো, আমাকে হেদায়াত করো এবং আমাকে রিফিক দান করো”। তা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতকে একত্র করবে। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু কামনা করে।
উম্মু কায়েস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ উম্মু কায়েস যা বলেছে, সে দীর্ঘজীবি হোক। অধস্তন রাবী বলেন, আমার জানামতে তার মতো দীর্ঘায়ু আর কোন নারীর হয়নি। (নাসাঈ) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাদের আহলে বাইতের এখানে আসতেন। একদিন তিনি এসে আমাদের জন্য দোয়া করলেন। উম্মু সুলাইম (রাঃ) বলেন, আপনার ছোট্ট খাদেমটি, আপনি তার জন্য কি দোয়া করবেন না? তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি তার সম্পদ ও তার সন্তান বৃদ্ধি করো, তাকে দীর্ঘজীবি করো এবং তাকে ক্ষমা করো”। আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি আমার জন্য তিনটি দোয়া করেন। অতএব আমি এক শত তিনটি সন্তানকে দাফন করেছি, আমার বাগানে বছরে দুইবার ফল ধরে এবং আমার আয়ু এতো দীর্ঘ হয়েছে যে, অধিক বয়সের জন্য আমি লোকজনের সামনে লজ্জাবোধ করি। এখন আমি ক্ষমা আশা করছি। (মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বলে, তাড়াহুড়া না করলে বান্দার দোয়া কবুল হয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে। সে বলে, আমি দোয়া তো করলাম কিন্তু আমার দোয়া কবুল হলো না। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী,ইবনে মাজাহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় যতক্ষণ না সে পাপাচারের বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করে এবং তাড়াহুড়া না করে। সে বলে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হয়েছে বলে মনে হয় না। তারপর সে দোয়া করা ত্যাগ করে। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।
আমর ইবনে শুআইব (র) তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা ও ঋণের বোঝা থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই মসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই দোযখের শাস্তি থেকে”।-(নাসাঈ, আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন “জীবন ও মৃত্যুর অনিষ্ট, কবরের শাস্তি ও মসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে” (মুসনাদ আহমাদ, ইবনে হিব্বান)।
অনুচ্ছেদঃ যে লোক আল্লাহর নিকট চায় নাসাঈ, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় নাসাঈ, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন। আবু সালেহ আল-খাওযী (র) আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় নাসাঈ, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন (তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, হাকিম)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। তোমাদের কেউ যেনো এভাবে না বলে, যদি তুমি চাও তবে আমাকে দান করো। কেননা আল্লাহর জন্য কিছুই বাধ্যতামূলক নয় (বুখারী, মুসলিম)। উসমান (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিম্নোক্ত দোয়া তিনবার করে পড়বে, কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে নাঃ “আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান-জমিনের কিছুই ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন”। হাদীসের রাবী আবান (র) পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন। তাই রাবী আবু যিনাদ (র) তার দিকে তাকাতে থাকলেন। আবান (র) তা টের পেয়ে বলেন, হাদীস তো যথাস্থানে ঠিকই আছে, যা আমি তোমাদের নিকট বর্ণনা করলাম। কিন্তু যেদিন আমি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হই সেদিন তা পড়িনি। তাই আল্লাহর লিখন (তাকদীর) কার্যকর হয়েছে (আবু দাউদ,তিরমিযী,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,ইবনে হিব্বান)।
অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর পথে জিহাদে কাতারবাদী হয়ে দেয়া করা।
সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) দুইটি মুহুর্তে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তখন দোয়াকারীদের দোয়া খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়। (১) আযানের সময় এবং (২) যখন (মুজাহিদগণ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কাতারবন্দী হয়।
অনুচ্ছেদঃ মহানবী (সাঃ)-এর দোয়াসমূহ।
আবু সিরমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ঐশ্বর্য প্রার্থনা করি”। তাঁর প্রভু তাঁকে ঐশ্বর্য দান করেন (আবু দাউদ)। শুতাইর ইবনে শাকল ইবনে হুমাইদ (র) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা দ্বারা আমি উপকৃত হবো। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার কান, আমার চোখ, আমার যাবান, আমার অন্তর এবং অসৎ কামনার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখো”। রাবী ওয়াকী (র) বলেন, কামনা-বাসনার অনিষ্ট অর্থ ব্যভিচার ও পাপাচার। (আবু দাউদ,তিরমিযী,নাসাঈ,হাকিম) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে গোপনে সাহায্য করো, আমার বিরুদ্ধে (বিরোধীকে) সাহায্য করো নাসাঈ, আমাকে প্রকাশ্যে সাহায্য করো, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করো না এবং হেদায়াতের পথকে আমার জন্য সুগম করো”। (আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,হাকিম, ইবনে হিব্বান) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এভাবে দোয়া করতেনঃ “হে প্রভু! আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে (কাউকে) সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটে দাও এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে কৌশল এঁটে দিও না। আমার জন্য হেদায়াতের পথ সুগম করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমালংঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। হে প্ৰভু! আমাকে তোমার জন্য কৃতজ্ঞ বান্দা বানাও, তোমার জন্য অনেক যিকিরকারী, তোমাকে অধিক ভয়কারী, তোমার অধিক আনুগত্যকারী, তোমার নিকট অনুনয়-বিনয়কারী ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানাও। হে আমার রব! আমার তওবা কবুল করো, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়েমুছে সাফ করো, আমার যবানকে সোজা রাখো, আমার অন্তরকে হেদায়াত দান করো এবং আমার বক্ষ থেকে সমস্ত হিংসা দূরীভূত করো” (তিরমিযী,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,হাকিম,ইবনে হিব্বান)। মুহাম্মাদ ইবনে কাব আল-কুরাযী (র) মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলেন, “প্ৰভু! তুমি যাকে দান করো তা প্রতিরোধ করার কেউ নাই। আর আল্লাহ যার প্রতিবন্ধক হন তাকে কেউ দান করতে পারে না। কারো বংশমর্যাদা বা সম্পদশালীর সম্পদ তার কাছে কোন উপকারে আসে না। আর আল্লাহ যার কল্যাণ সাধন করতে চান তাকে ধর্মের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন”। অতঃপর তিনি বলেন, আমি এই কথাগুলি নবী (সাঃ)-কে এই মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি -(মুয়াত্তা মালিক)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমার অতীব শক্তিশালী ও কার্যকর দোয়া হলো, তোমার এভাবে বলা, “হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক এবং আমি তোমার বান্দা। আমি আমার উপর যুলুম করেছি এবং আমার অপরাধ স্বীকার করি। তুমি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নাই। হে প্ৰভু! আমাকে ক্ষমা করো” (মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনের ব্যাপারে আমাকে সংশোধন করে দাও, যা আমার সকল কাজের রক্ষাকবচ। তুমি আমার পার্থিব জীবনকে সংশোধন করে দাও, যেখানে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা এবং প্রতিটি অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য আমার মৃত্যুকে আমার জন্য রহমাতের উৎস বানাও” (মুসলিম,আবু আওয়ানা,তাবারানী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) আশ্রয় প্রার্থনা করতেনঃ কঠিন দুর্বিপাক থেকে, পাপের স্পর্শ থেকে, ভাগ্যবিড়ম্বনা থেকে এবং দুশমনের দুশমনি থেকে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ) উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) পাঁচটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেনঃ অলস তাবারানী, কার্পণ্য, চরম বার্ধক্য, অন্তরের বিপর্যয় এবং কবরের আযাব থেকে। (আবু দাউদ,মুসলিম, নাসাঈ) আনাস (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি অপারগতা থেকে, ভীরুতা থেকে এবং বার্ধক্য থেকে। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে। আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে”। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসাঈ,তি) আনাস (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, অস্থির তাবারানী, অপারগ তাবারানী, অলস তাবারানী, ভীরু তাবারানী, কৃপণ তাবারানী, ঋণের বোঝা ও লোকজনের দাপট থেকে”। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর দোয়াসমূহের মধ্যে এটিও ছিলঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে আমার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ, আমার গোপন প্রকাশ্য সকল পাপ এবং যে পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। নিশ্চয় তুমি অগ্রসরকারী ও বিলম্বকারী। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। (বুখারী,মুসলিম,আহমাদ, হাকিম) আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়াত, নিরাপত্তা ও ঐশ্বর্য প্রার্থনা করছি। উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় তাকওয়া (আল্লাহভীতি) প্রার্থনার কথাও উল্লেখ আছে (মুসলিম,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ)। ছুমামা ইবনে হাযন (র) আমি এক প্রবীণ ব্যক্তিকে উচ্চস্বরে ডাক দিতে শুনলাম, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অনিষ্ট থেকে এমন আশ্রয় প্রার্থনা করছি যার মধ্যে কোন কিছু হস্তক্ষেপ করতে পারে না”। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই প্রবীণ শায়েখ কে? বলা হলো, আবু দারদা (রাঃ)। আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র করো বরফ, শিশিরবিন্দু ও ঠাণ্ডা পানি দ্বারা, যেমন অপরিষ্কার কাপড়-চোপড় ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়। হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা আসমান-যমীন ও এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে এবং তুমি যা চাও এসব পূর্ণ পরিমাণ”। (আবু দাউদ) আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) পর্যাপ্ত পরিমাণে নিম্নোক্ত দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ। আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করো, আখেরাতেও কল্যাণ দান করো এবং দোযখের শান্তি থেকে আমাদের রক্ষা করো”। আনাস (রাঃ)-ও এই দোয়া পড়তেন কিন্তু তা নবী (সাঃ)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট করতেন না (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসাঈ,আহমাদ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি দারিদ্র্য, দৈন্যদশা ও লাঞ্ছনা থেকে। আমি তোমার নিকট আরো আশ্রয় প্রার্থনা করি নির্যাতন করা ও নিযাতিত হওয়া থেকে”। (আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,হাকিম) আবু উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি অনেক দোয়া করলেন। কিন্তু আমরা তা স্মরণ রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অনেক দোয়া করেছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই স্মরণ রাখতে পারিনি। তিনি বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিবো নাসাঈ, যা সেই সমস্ত দোয়ার সমষ্টি হবে? তোমরা বলো, “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার নিকট সেই কল্যাণ কামনা করি, যা তোমার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমার নিকট কামনা করেছেন এবং আমরা তোমার নিকট সেই অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি যে অনিষ্ট থেকে তোমার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তুমিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং তুমিই কল্যাণে পৌঁছে দাও। আল্লাহ ভিন্ন ক্ষতি রোধ করার এবং কল্যাণ পৌছানোর আর কোন শক্তি নাই”। অথবা তিনি অনুরূপ কথা বলেছেন (তিরমিযী,তাবারানী)। আমর ইবনে শুআইৰ (র) তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে এবং তোমার নিকট আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি দোযখ থেকে”। সাঈদ (র) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলতেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে রিযিক দান করেছে তাতে সন্তুষ্ট থাকার তৌফিক দাও, আমাকে তাতে বরকত দাও এবং প্রতিটি অদৃশ্য বিষয়ে কল্যাণ সহকারে আমার হেফাযত করো”। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) প্রচুর পরিমাণে এই দোয়া পড়তেনঃ “আমাদের প্রভু! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করো এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করো”। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বেশী পরিমাণে বলতেনঃ “হে আল্লাহ, হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অবিচল রাখো” (তিরমিযী,আহমাদ, হাকিম,ইবনে হিব্বান)। আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) নবী (সাঃ) এরূপ দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা—আসমান ও যমীন পরিপূর্ণ এবং এরপর তুমি যা চাও তা পরিপূর্ণ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র করো শিশির বিন্দু, বরফ ও শীতল পানি দ্বারা। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করো গুনাহ থেকে, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিচ্ছন্ন করা হয়” (মুসলিম,তিরমিযী,নাসাঈ,আহমাদ, আবু আওয়ানা,ইবনে হিব্বান)। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দোয়াসমূহের মধ্যে এই দোয়াও ছিলঃ “হে আল্লাহ। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি তোমার দেয়া নিয়ামতরাজি বিলুপ্ত হওয়া থেকে, তোমার দেয়া শান্তি ও নিরাপত্তা অন্তৰ্হিত হওয়া থেকে, তোমার আকস্মিক প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে এবং তোমার সার্বিক অসন্তুষ্টি থেকে”।(আবু দাউদ,মুসলিম,নাসাঈ,আবু আওয়া নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ ঝড়-বৃষ্টির সময় দেয়া করা।
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আকাশে মেঘমালা দেখলে তার কাজকর্ম ত্যাগ করতেন, এমনকি তিনি নামাযে রত থাকলে তাও। অতঃপর তিনি মেঘমালার দিকে তাকাতেন। আল্লাহ মেঘমালা দূর করলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আর মেঘ বৃষ্টি বর্ষণ করলে তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ মুষলধারে কল্যাণকর বৃষ্টি দাও”। (বুখারী,আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করে দোয়া করা নিষেধ।
কায়েস (র) আমি অসুস্থ বাবা (র)-এর নিকট গেলাম। তিনি তার শরীরে গরম লোহার সাতটি সেঁক দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যদি মৃত্যু কামনা করতে আমাদেরকে নিষেধ না করতেন, তবে আমি অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম।(বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ মহানবী (সাঃ)-এর দোয়াসমূহ।
আবু মূসা (রাঃ) নবী (সাঃ) এই দোয়া পড়তেনঃ “হে প্ৰভু! আমার গুনাহ, অজ্ঞ তাবারানী, আমার প্রতিটি কাজে আমার বাড়াবাড়ি এবং আমার চাইতে তুমিই আমার যে অপরাধসমূহ সম্পর্কে অধিক অবগত সেগুলি ক্ষমা করো। হে আল্লাহ। অছমার প্রতিটি গুনাহ, ইচ্ছাকৃত গুনাহ, অজ্ঞতা প্রসূত গুনাহ, ঠাট্টাচ্ছলে কৃত গুনাহ এবং আমার মধ্যকার সার্বিক গুনাহ ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমার পূর্বাপর গোপন-প্রকাশ্য সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। তুমিই অগ্রসরকারী, তুমিই বিলম্বকারী এবং তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”। (বু মুসলিম,শা) আবু মূসা আশআরী (রাঃ) নবী (সাঃ) দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা করো আমার গুনাহসমূহ, আমার মূর্খ তাবারানী, আমার কাজকর্মে আমার বাড়াবাড়ি এবং তুমি আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক অবগত। হে আল্লাহ! আমায় ক্ষমা করো আমার ঠাট্টাচ্ছলে কৃত গুনাহ, বাস্তবে কৃত গুনাহ, আমার সকল গুনাহ, আমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ এবং আমার মধ্যকার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও”। (আবু দাউদ,নাসাঈ,আহমাদ, ইবনে খুজাইমাহ,হাকিম,ইবনে হিব্বান) মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) নবী (সাঃ) আমার হাত ধরে বললেনঃ হে মুআয! আমি বললাম, আমি আপনার নিকট হাযির। তিনি বলেনঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি বলেনঃ আমি কি তোমাকে কয়েকটি কালেমা শিখিয়ে দিবো না যা তুমি তোমার প্রত্যেক নামাযের পর বলবে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করো তোমার যিকির করতে, তোমার প্রত কৃতজ্ঞ হতে এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করতে”। (আবু দাউদ,নাসাঈ,তাবারানী) আবু আইউব আনসারী (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর সামনে বললো, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর পর্যাপ্ত প্রশংসা পবিত্রতাপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ”। নবী (সাঃ) বলেনঃ এই শব্দগুলি কার? সে নীরব থাকলো। সে মনে করলো যে, সে নবী (সাঃ)-এর সামনে তাঁর অমনোপূত কথা বলেছে। তিনি পুনরায় বলেনঃ কে সে? সে তো যথার্থই বলেছে। এক ব্যক্তি বললো, আমি, এর দ্বারা আমি কল্যাণই আশা করছি। তিনি বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি লক্ষ্য করেছি যে, তেরোজন ফেরেশতা এই শব্দগুলো মহামহিম আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করছে। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) পায়খানায় প্রবেশের সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নিকৃষ্ট (নারী ও পুরুষ) জিনের (অনিষ্ট) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। -(বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পায়খানা থেকে বের হবার সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার নিকট ক্ষমা চাই”। (আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, দার,ইবনে খুজাইমাহ,ইবনে হিব্বান) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) যেভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তদ্রুপ (গুরুত্ব সহকারে) আমাদেরকে এই দোয়াও শিক্ষা দিতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি কবরের আযাব থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি মাসীহ দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমি কবরের ভয়াবহ সংকট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”। (মুসলিম,তিরমিযী,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,মা,আহমাদ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-র ঘরে রাত কাটালাম। নবী (সাঃ) উঠে নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধা করেন, তারপর নিজের হাত-মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পুনরায় উঠে তিনি পানির মশকের কাছে গিয়ে তার বন্ধন খুলেন। তারপর মোটামুটি উযু করলেন, তবে অতিরিক্ত কিছু না করলেও তিনি পূর্ণাঙ্গ উযু করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে নামায শুরু করলেন। আমি জেগে গা মোড়ামুড়ি দিলাম। কারণ আমি যে তাঁর কার্যক্রম দেখেছি তা তিনি টের পান এটা আমি পছন্দ করিনি। এরপর আমি উযু করলাম। তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। আমি তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে ঘুরিয়ে তার ডানপাশে আনলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এই রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায তেরো রাকআত পূর্ণ হলো। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘুমালে তাঁর নাক ডাকতো। বিলাল (রাঃ) এসে নামাযের কথা বললেন। তিনি উঠে পুনরায় উযু না করেই ফজরের (সুন্নাত) নামায পড়লেন। (এ রাতে) তার দোয়ার মধ্যে ছিলঃ “হে আল্লাহ! আমার কলবে নুর পয়দা করুন, আমার দৃষ্টিতে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ডান দিকে নূর, আমার বাম দিকে নূর, আমার উপরে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর এবং বিরাট নূর দান করুন”। ‘রাবী ইয়াকুব (র) বলেন, আরও সাতটি বিষয় যা আমার অন্তরে রয়েছে। সালামা ইবনে কুহায়ল (র) বলেন, এরপর আমি আব্বাস পরিবারের একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি ঐ বিষয়গুলো আমাকে বর্ণনা করলেন। আমার শিরায় আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে এবং আমার ত্বকে---- আরও দু’টি বিষয় বললেন। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) রাতে ঘুম থেকে উঠলে নামায পড়তেন এবং নামাযান্তে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করতেন। অতঃপর তাঁর কথার শেষ অংশ এরূপ হতোঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরে নূর দান করো, আমার কানে নূর দান করো, আমার চোখে নূর দান করো, আমার সামনে নূর দান করো, আমার পিছনে নূর দান করো এবং আমার নূর বাড়িয়ে দাও, আমার নূর বাড়িয়ে দাও, আমার নূর বাড়িয়ে দাও”। (বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাঝরাতে যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা, আপনিই আসমানসমূহ ও জমিনের এবং এতোদুভয়ের মধ্যকার সকলের রক্ষক। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমানসমূহ ও যমীনের এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সে সবের রব। আপনিই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার সাক্ষাত অবধারিত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি। আপনারই উপর ভরসা করেছি, আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি। আপনার জন্য যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হয়েছি, আপনার কাছে ফয়সালা চেয়েছি। অতএব আমার পূর্বাপর এবং গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি আমার ইলাহ! আপনি ব্যতীত আমার কোন ইলাহ নেই”। (বুখারী, মুসলিম) ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি আমার দ্বীন ও আমর পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা। তুমি আমার দোষ গোপন রাখো, আমার ভীত অবস্থায় আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং আমাকে সামনে-পিছনে, ডানে-বামে ও উপরের দিক থেকে হেফাযত করো। আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিচের দিকে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে”। (আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,বাযযার) উবাইদ ইবনে রিফাআ আয-যুরাকী (র) তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন মুশরিকরা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে চলে গেলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা সারিবদ্ধভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াও, যাতে আমি আমার মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের প্রশংসা করতে পারি। অতএব সাহাবীগণ তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকলেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা। হে আল্লাহ! তুমি যা সম্প্রসারিত করো তা কেউ সংকুচিত করতে পারে নাসাঈ, তুমি যাকে দূরে ঠেলে দাও তাকে কেউ কাছে আনতে পারে নাসাঈ, তুমি যাকে কাছে টেনে নাও তাকে কেউ দূরে ঠেলে দিতে পারে নাসাঈ, তুমি যাকে না দাও তাকে কেউ দিতে পারে না এবং তুমি যাকে দান করো তাকে কেউ আটকে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উপর তোমার বরকত, তোমার রহমাত, তোমার অনুগ্রহ এবং তোমার দেয়া রিফিক প্রসারিত করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট স্থায়ী নিয়ামত প্রার্থনা করি যা পরিবর্তন বা বিলীন হয় না। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট দুঃখের দিনে তোমার নিয়ামত ও যুদ্ধের দিনে তোমার নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা দান করেছে তার অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমি যা আমাকে দান করোনি তার অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় বানাও, আমাদের অন্তরকে সৌন্দর্যময় করো এবং কুফর, পাপাচার ও বিদ্রোহকে আমাদের নিকট ঘৃণিত বানাও। তুমি আমাদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুসলমানরূপে মৃত্যু দান করো, মুসলমানরূপে জীবিত রাখো এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে মিলিত করো, অপমানিত ও বিপর্যস্তরূপে নয়। হে আল্লাহ! তুমি কাফেরদের ধ্বংস করো, যারা তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তোমার ক্রোধ ও আযাব তাদের উপর অবতীর্ণ করো। হে আল্লাহ! কিতাবপ্রাপ্ত কাফেরদের ধ্বংস করো। হে সত্য ইলাহ”। (নাসাঈ,হাকিম,ইবনে হিব্বান)
অনুচ্ছেদঃ বিপদাপদের সময় দেয়া করা।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) কঠিন বিপদের সময় দোয়া করতেনঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি রব্বুল আরশিল আযীম” (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি অতি মহান, অতি সহনশীল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীনের রব এবং মহান আরশের মালিক”)। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী,ইবনে মাজাহ, আহমাদ, আবু আওয়া নাসাঈ) আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (র) আবদুর রহমান ইবনে আবু বাকরা (র) তার পিতাকে বলেন, হে পিতা! আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে এই দোয়া করতে শুনিঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার শরীর নিরাপদ রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমার কান নিরাপদ রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমার চোখ নিরাপদ রাখো। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। আপনি বিকালে উপনীত হয়ে তিনবার এবং সকালে উপনীত হয়ে তিনবার তা পড়েন। আপনি আরো বলেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফর ও দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। আপনি বিকালে উপনীত হয়ে এগুলো তিনবার এবং সকালে উপনীত হয়ে তিনবার পড়েন। তিনি বলেন, হাঁ, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এই দোয়াগুলি বলতে শুনেছি এবং আমি তাঁর সুন্নাত অনুসরণ করতে ভালোবাসি। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বিপদগ্ৰস্ত লোকের দোয়া হলোঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমাতের আশা করি। অতএব তুমি মুহুর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর সোপর্দ করো না এবং আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। (আবু দাউদ,আহমাদ, বাযযার, তাবারানী, নাসাঈ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাঃ) বিপদকালে বলতেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাইবনে মাজাহ, যিনি মহান ও পরম সহিষ্ণু। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই যিনি মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই যিনি আকাশমণ্ডলীর প্রভু, পৃথিবীর প্রভু এবং সম্মানিত আরশের প্রতিপালক। হে আল্লাহ! তুমি এর অনিষ্ট দূর করে দাও”। (বুখারী)
অনুচ্ছেদঃ ইস্তিখারার দোয়া।
জাবের (রাঃ) নবী (সাঃ) আমাদেরকে যেমন কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, তেমনি সকল ব্যাপারে আমাদেরকে ইস্তিখারা করা শিক্ষা দিতেন। কেউ কোন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করলে সে যেন দুই রাকআত নামায পড়ে এবং তারপর বলেঃ “আল্লাহুম্মা ইনী আসতাখীরুকা বিইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আযম। ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু ওয়া আনতা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আমরা খাইরুল্লী কী দীনী ওয়া মাআশী ওয়া আকিবাতি আমরা আও ফী আজেলে আমরী ওয়া আজেলিহী ফাকদুরহু লী। ওয়াইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশী ওয়া আকিবাতি আমরা আও ফী আজেলে আমরী ওয়া আজেলিহী ফাসরেফহু আন্নী ওয়াসরিফনী আনহু ওয়াকদুর লিয়াল খাইরা হাইছু কানা সুম্মা রাদ্দিনী বিহী “(হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্যে তোমার কাছে কল্যাণ কামনা করছি। আমি তোমার শক্তির সাহায্যে শক্তি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ কামনা করছি। কেননা তুমিই ক্ষমতাবান এবং আমি অক্ষম। তুমি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং তুমি অদৃশ্য বিষয় সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দীন, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে এবং আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য কল্যাণকর হলে তুমি তা আমার জন্য নিধারিত করে দাও। আর যদি তোমার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দীন, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে অথবা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে তুমি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখো। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করো এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দাও”। আর (আমার এ কাজ এর স্থলে) নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে। (বুখারী) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই মসজিদে অর্থাৎ মসজিদুল ফাতহ (বিজয়ের মসজিদ)-এ সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার দোয়া করলেন এবং বুধবার নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর দোয়া কবুল হলো। জাবের (রাঃ) বলেন, যখনই আমার কোন গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ উপস্থিত হয়েছে তখনই আমি উক্ত সময়ে প্রার্থনার ইচ্ছা করেছি এবং বুধবার এই সময়ে দোয়া করেছি এবং তা যে কবুল হয়েছে তাও বুঝতে পেরেছি। (আবু দাউদ) আনাস (রাঃ) আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার দোয়ায় বললো, “হে আসমানসমূহের সৃষ্টিক তাবারানী, হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সে কোন্ নামে (আল্লাহকে ডেকে) দোয়া করছে তা কি তোমরা জানো? সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! সে আল্লাহর কাছে তাঁর এমন নামের উসীলায় দোয়া করেছে যে, সেই নামে কেউ তাকে ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (আবু দাউদ,তিরমিযী,আহমাদ) আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) তিনি নবী (সাঃ)-কে বলেন, আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন যা আমি আমার নামাযে পড়তে পারি। নবী (সাঃ) বলেনঃ তুমি এ দোয়া পড়বেঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাছীরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফির লী মিন ইনদিকা মাগফিরাতান ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম”(হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নাই। অতএব তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাকারী অতি দয়ালু)। (বুখারী)
অনুচ্ছেদঃ কারো শাসকের যুলুমের ভয় হলে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তোমাদের কেউ নিজের উপর তাদের শাসকের স্বৈরাচার বা অত্যাচারের আশংকা করলে সে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ, সাত আসমানের প্রতিপালক, মহান আরশের অধিপতি! তুমি আমার প্রতিবেশী হও তোমার সৃষ্টিকুলের মধ্যকার অমুকের পুত্র অমুকের বিরুদ্ধে এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে, যাতে তাদের কেউ আমার প্রতি বাড়াবাড়ি বা অবিচার করতে না পারে। তোমার প্রতিবেশী মহিমান্বিত, তোমার প্রশংসা মহিমামণ্ডিত এবং তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই”।(তাবারানী, বাযযার) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তুমি যদি স্বৈরাচারী শাসকের নিকট আসো যার কঠোরতায় তুমি শংকিত, তবে তুমি তিনবার বলবেঃ “আল্লাহ মহান, আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকুলের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান। আমি যার ভয়ে ভীত ও শংকিত আল্লাহ তার চেয়েও অধিক সম্মানিত। আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেইবনে মাজাহ, যিনি সাত আসমানকে তার নির্দেশ ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে সুস্থির রেখেছেন, তাঁর অমুক বান্দার, জিন ও মানুষের মধ্য থেকে তার বাহিনী, তার অনুসারী দলবল থেকে। হে আল্লাহ! তাদের অনিষ্টের মোকাবিলায় তুমি আমার প্রতিবেশী হও। তোমার প্রশংসা মহিমান্বিত, তোমার প্রতিবেশী মহিমান্বিত, তোমার নাম বরকতপূর্ণ এবং তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই”। ( তাবারানী, শা, খু) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কোন ব্যক্তি দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বা বিপদে পতিত হলে অথবা শাসকের অত্যাচারের ভয়ে শংকিত হলে সে যেন নিম্নোক্ত বাক্যে দোয়া করে, তার দোয়া কবুল হবেঃ “আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তুমি সাত আসমান ও মহান আরশের প্রভু। আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তুমিই সাত আসমান ও মহিমান্বিত আরশের প্রভু! আমি তোমার নিকট এই উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং সাত আসমান, সাত যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তুমিই সেগুলোর রব। তুমিই সর্বশক্তিমান”। অতঃপর তুমি আল্লাহর কাছে তোমার প্রয়োজন পেশ করো।
অনুচ্ছেদঃ দোয়াকারীর জন্য যে সওয়াব ও প্রতিদান সঞ্চিত করা হয়।
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ যে কোন মুসলমান ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ব্যতীত যে কোন দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি দান করেনঃ (১) হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা (২) তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা (৩) অনুরূপ কোন ক্ষতি তার থেকে অপসারিত করেন। এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দোয়া করতে পারে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চেয়েও অধিক কবুলকারী। (তিরমিযী,আহমাদ, হাকিম, তহাকিম) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর দিকে মুখ করে তার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে এবং (ফল লাভে) তাড়াহুড়া না করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন। হয় তা তিনি তাকে দুনিয়াতে অবিলম্বে দান করেন অথবা তার আখেরাতের জীবনের জন্য তা সঞ্চিত রাখেন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার তাড়াহুড়া কিরূপ? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি তো দোয়ার পর দোয়া করতে থাকলাম, কিন্তু তা কবুল হতে দেখছি না। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান, আবু আওয়ানা, নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ দোয়ার ফযীলাত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ আমার কাছে দোয়ার চাইতে অধিক সম্মানিত কিছু নাই। (বুখারী,তিরমিযী,আহমাদ, ইবনে মাজাহ,হাকিম) আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দোয়া হলো সবাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। নোমান ইবনে বাশীর (রাঃ) নবী (সাঃ) বলেনঃ দোয়াও একটি ইবাদত। তারপর তিনি পড়লেনঃ (তোমাদের রব বলেন), “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো” (৪০ : ৬০)। (তিরমিযী) আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ইবাদত সর্বোত্তম? তিনি বলেনঃ মানুষের নিজের জন্য কৃত দোয়া। (হাকিম) মাকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) আমি আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বলেনঃ হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নবী (সাঃ) বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো নাসাঈ, তুমি যা বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। (ইবনুস সুনী)
অনুচ্ছেদঃ প্রবল বায়ু প্রবাহের সময় দোয়া করা।
আনাস (রাঃ) প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে নবী (সাঃ) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি যে কল্যাণসহ তা পাঠিয়েছে, তা লাভের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করি এবং যে অনিষ্টসহ তা পাঠিয়েছে সেই অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই”। (আবু ইয়ালা, ইবনুস সুন্নী) সালামা (রাঃ) জোরে হাওয়া প্রবাহিত হলে মহানবী (সাঃ) বলতেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ফলবতী করো, বন্ধ্যা করো না। (তাবারানী, সুন্নী)।
অনুচ্ছেদঃ তোমরা বাতাসকে গালি দিও না।
উবাই ইবনে কাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা বায়ুকে গালি দিও না। তোমরা তাতে অপছন্দনীয় কিছু দেখতে পেলে এই দোয়া পড়বে, “হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে কামনা করি এ বায়ুর কল্যাণ, এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং সে যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে তার কল্যাণ। আমরা তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এ বায়ুর অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যে নিহিত ক্ষতি থেকে এবং সে যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছে তার অকল্যাণ থেকে”। (তিরমিযী, হাকিম) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ বায়ু হলো আল্লাহর রহমাতের অংশ। তা রহমাত ও শাস্তি বয়ে আনে। অতএব তোমরা তাকে গালি দিও না। বরং তোমরা আল্লাহর কাছে তার মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রার্থনা করো এবং তার ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও (আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,নাসাঈ,হাকিম,ইবনে হিব্বান,আবু আওয়া নাসাঈ)।
অনুচ্ছেদঃ বজ্রধ্বনির সময় দোয়া করা।
সালেম ইবনে আবদুল্লাহ (র) তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন শুনলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার বজ্রপাত দ্বারা আমাদের হত্যা করো নাসাঈ, তোমার আযাব দ্বারা আমাদেরকে ধ্বংস করো না এবং তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দাও”। (তিরমিযী,নাসাঈ,আহমাদ, হাকিম,ইলা)
অনুচ্ছেদঃ কেউ বজ্রধ্বনি শুনলে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বজ্রধ্বনি শুনতে পেলে বলতেনঃ “মহাপবিত্র সেই সত্তা বজ্রধ্বনি যাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করলো”। তিনি বলেন, বজ্রধ্বনিকারী হলেন একজন ফেরেশতা। তিনি মেঘমালাকে হাঁকিয়ে নিয়ে যান, যেমন রাখাল তার মেষপালকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বজ্রধ্বনি শুনতে পেলে আলাপ-আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে বলতেনঃ “মহাপবিত্র সেই সত্তা বজ্রধ্বনি যাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাকুল যার ভয়ে শংকিত” (সূরা রাদ : ১৩)। অতঃপর তিনি বলতেন, এটা হলো জগতবাসীর জন্য চরম ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি। -(মুয়াত্তা মালিক)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করে।
আওসাত ইবনে ইসমাঈল (র) আমি আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে নবী (সাঃ)-এর ইনতিকালের পর বলতে শুনেছি, নবী (সাঃ) হিজরতের প্রথম বছর আমার এই স্থানে দাঁড়ালেন। এ কথা বলে আবু বাকর (রাঃ) কাঁদলেন, অতঃপর বলেন, তোমরা অবশ্যই সত্যকে আকড়ে থাকবে। কেননা তা পুণ্যের সাথী এবং এই দু’টি জান্নাতে যাবে। তোমরা অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা তা পাপের সাথী এবং এই দু’টি দোযখে যাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করো। কেননা নিরাপত্তা হচ্ছে ঈমানের পর সর্বাধিক কল্যাণবাহী! তোমরা সম্পর্কচ্ছেদ করো নাসাঈ, একে অপরের পিছনে দুর্নাম করো নাসাঈ, পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও। (তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, তহাকিম,ইবনে হিব্বান) মুআয (রাঃ) নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে তখন বলছিল, “হে আল্লাহ! আমি তোমার সমস্ত নিয়ামত কামনা করি”। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি জানো, সমস্ত নিয়ামত কি? সে বললো, পূর্ণ নিয়ামত হচ্ছে বেহেশতে প্রবেশ লাভ এবং দোযখ থেকে মুক্তি লাভ। অতঃপর তিনি আরেক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গেলেন। সে বলছিলো, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ধৈর্য প্রার্থনা করি”। তিনি বলেনঃ তুমি আমার প্রভুর কাছে বিপদ কামনা করলে। অতএব তুমি তার কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। তিনি আরেক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গেলেন। সে বলছিল, “হে গৌরব ও মহত্বের অধিকারী”। তিনি বলেনঃ তুমি এখনই তার কাছে কিছু প্রার্থনা করো। (তিরমিযী,আহমাদ) আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারি। তিনি বলেনঃ আপনি আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করুন। কিছু দিন গত হওয়ার পর আমি আবার গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে পারি। তিনি আমাকে বলেনঃ হে আব্বাস, হে আল্লাহর রাসূলের চাচা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করুন। (তিরমিযী,তাবারানী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি বিপদ কামনা করে দোয়া করা অপছন্দ করে।
আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর উপস্থিতিতে বললো, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সম্পদ দান করোনি যে, আমি তা দান-খয়রাত করবো। অতএব তুমি আমাকে এমন বিপদে নিক্ষেপ করো যাতে সওয়াব হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা তোমার সামর্থ্যের বাইরে। তুমি বলো না কেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো, আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং আমাদের দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো”। আনাস (রাঃ) নবী (সাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। সে রোগ যাতনায় পালকছিন্ন মুরগীর বাচ্চাবৎ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করো। সে বললো, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আখেরাতে যে শাস্তি দিবে তা এই দুনিয়াতে দাও। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলোঃ সুবহানাল্লাহ! তুমি তা সহ্য করতে পারবে না বা তা সহ্য করার সামর্থ্য তোমাদের নাই। তুমি কেন বলো নাসাঈ, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো, আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো”। অতঃপর তিনি তার জন্য দোয়া করলেন এবং আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করলেন। -(মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, তাহাবী)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি কঠিন বিপদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (র) কোন ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট বিপদের কষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, অতঃপর ক্ষান্ত দেয়। সে উক্তরূপ বললে অবশ্যই যেন আরো বলে, তবে যে বিপদে উন্নতি নিহিত আছে তা ব্যতীত। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কঠিন বিপদ, ধ্বংসের মুখোমুখি হওয়া, শক্রর বিদ্বেষজাত আনন্দ ও দুর্ভাগ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। -(বুখারী, মুসলিম)
অনুচ্ছেদঃ অসন্তোষের সময় যে ব্যক্তি কারো কথার পুনরাবৃত্তি করে।
আবু নাওফাল ইবনে আবু আকরাব (র) তার পিতা নবী (সাঃ)-কে রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ তুমি প্রতি মাসে একদিন রোযা রাখো। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেনঃ আমাকে বাড়িয়ে দিন, আমাকে বাড়িয়ে দিন। যাও, মাসে দুই দিন রোযা রাখো। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন। কেননা আমার সামর্থ্য আছে। তিনি বলেনঃ আমার শক্তি আছে, আমার শক্তি আছে। তিনি আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন, শেষে ভাবলাম যে, তিনি বুঝি আমাকে আর অধিক রোযা রাখার অনুমতি দিবেন না। অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখো। (নাসাঈ)
অনুচ্ছেদঃ (গীবতের দুর্গন্ধময় বায়ু)।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন দুৰ্গন্ধময় দুষিত বায়ু প্রবাহিত হলে তিনি বলেনঃ তোমরা জানো, তা কি? এটা হলো মুমিন লোকদের গীবতকারীদের বায়ু। (আবু দাউদ) জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে দুৰ্গন্ধযুক্ত বায়ু উত্থিত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মোনাফিকদের মধ্যে কতক লোক মুমিনদের মধ্যকার কতক লোকের গীবত করেছে। তাই এই বায়ু প্রবাহিত হয়েছে। -(আহমাদ, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসাঈ) ইবনে উম্মে আবদ (রাঃ) কারো উপস্থিতিতে কোন মুমিন ব্যক্তির গীবত করা হলে এবং সে তার অনুপস্থিত মুমিনের সাহায্য করলে আল্লাহ তাকে এজন্য দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। কারো উপস্থিতিতে কোন মুমিন ব্যক্তির গীবত করা হলে এবং সে তার সাহায্য না করলে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে এর মন্দ ফল (শাস্তি) ভোগ করবেন। মুমিন ব্যক্তির গীবতের চেয়ে মন্দ গ্রাস আর কেউ গ্রহণ করে না। সে যদি তার সম্পর্কে তার জ্ঞাত কথাই বলে তবে সে তার গীবতই করলো। আর সে যদি এমন কথা বলে যা সে জ্ঞাত নয়, তবে সে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটালো।
অনুচ্ছেদঃ গীবত। আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ “তোমাদের কেউ যেন অপরের গীবত না করে” (৪৯ : ১২)।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি দুইটি কবরের নিকট পৌঁছলেন। কবরবাসীদ্বয়কে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি বলেনঃ এই ব্যক্তিদ্বয়কে কোন গুরুতর অপরাধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। হাঁ, তাদের একজন মানুষের গীবত করতো এবং অপরজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতো না। তিনি তাজা একটি খেজুর শাখা বা দুইটি খেজুর শাখা আনতে বললেন। তিনি তা দুই টুকরা করে ভাংলেন, অতঃপর তা দুই কবরের উপর গেড়ে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং বললেনঃ যতক্ষণ এই ডাল দুইটি তাজা থাকবে অথবা শুকিয়ে না যাবে, ততক্ষণ এদের হাল্কা শাস্তি হবে। -(আহমাদ, তাবারানী) কায়েস (র) আমর ইবনুল আস (রাঃ) তার কতক সঙ্গীসহ সফর করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ যদি তা পেট পুরে আহারও করে তবুও সেটা তার কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম।
অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির গীবত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) মায়েয ইবনে মালেক আল-আসলামী এসে চতুর্থবার (যেনার অপরাধের) স্বীকারোক্তি করলে, নবী (সাঃ) তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার নির্দেশ দেন। পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কতক সহচরসহ তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তাদের মধ্যকার একজন বললো, এই বিশ্বাসঘাতক কয়েকবারই নবী (সাঃ)-এর নিকট এলো এবং প্রতিবারই তিনি তাকে ফিরে যেতে বলেন। পরে তাকে কুকুরের ন্যায় হত্যা করা হলো। নবী (সাঃ) তাদের কথায় কোন মন্তব্য না করে নীরব থাকলেন, শেষে একটি মৃত গাধার নিকট এসে উপনীত হলেন, যার পাগুলো উপরের দিকে উত্থিত ছিল। তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এটা থেকে খাও। তারা উভয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মরা গাধার গোশত? তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এইমাত্র তোমাদের ভাইয়ের যে মানহানি করেছো তা এর তুলনায় অধিক গৰ্হিত। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! সে এখন বেহেশতের ঝর্ণাসমূহের মধ্যকার একটি ঝর্ণায় আনন্দে সাতার কাটছে। (আবু দাউদ, নাসাঈ, বুখারীর তারীখ)
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি পিতার সাথে উপস্থিত পুত্রের মাথায় হাত বুলায় এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে।
উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ)-এর পৌত্র উবাদা ইবনুল ওয়ালীদ (র) আমি আমার পিতার সাথে বের হলাম। আমি তখন এক যুবা পুরুষ। আমরা এক প্রবীণ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করলাম। তার পরনে ছিল একটি কারুকার্য খচিত চাদর ও একটি কম্বল এবং তার গোলামের পরনেও ছিল অনুরূপ একখানা কারুকার্য খচিত চাদর ও একটি কম্বল। আমি বললাম, চাচাজান! আপনি তো আপনার কম্বলখানা আপনার গোলামকে দিয়ে তার এই চাদরখানাসহ দু’খানা চাদর পরতে পারতেন এবং তার পরনেও থাকতো কম্বল। এমনটি করতে আপনাকে কিসে বাধা দিলো? তিনি আমার পিতার মুখোমুখি হয়ে বলেন, এ বুঝি তোমার পুত্র? তিনি বলেন, হাঁ। তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আল্লাহ তোমাকে তার মাধ্যমে বরকত দান করুন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যা আহার করবে, তাদেরকেও তাই আহার করাবে এবং তোমরা যা পরবে তাদেরকেও তাই পরাবে। হে ভাতিজা! দুনিয়ার সামগ্ৰী যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে তা আখেরাতের সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমি বললাম, আব্বাজান! ইনি কে? তিনি বলেন, আবুল য়ুসর কাব ইবনে আমর (রাঃ)। -(মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের খাদ্য-পানীয় ও তৈজসপত্র বিনা অনুমতিতে পরস্পরের ব্যবহার।
মুহাম্মাদ ইবনে যিয়াদ (র) আমি আগেকার মহান ব্যক্তিদের (সাহাবীগণের) সাক্ষাত পেয়েছি। তারা একই বাড়িতে বেশ কয়েক পরিবার বাস করতেন। কখনো এমনও হতো যে, তাদের কোন পরিবারে মেহমান এসেছে এবং অপর পরিবারের চুলায় খাবার রান্না হচ্ছে। যে ঘরে মেহমান এসেছে সেই ঘরের মালিক তার মেহামানের জন্য চুলার উপর বসানো সেই খাবার নিয়ে যেতো। আর খাদ্যের মালিক পরিবার এসে দেখতো যে, তার রান্না করা খাদ্য পাতিলসহ উধাও। সে বলতো, পাতিল কে নিয়ে গেলো? মেহমান আপ্যায়নকারীগণ বলতো, আমরা আমাদের মেহমানের জন্য তা নিয়েছি। তখন পাতিল ভর্তি খাদ্যের মালিক বলতো, আল্লাহ তাতে তোমাদের বরকত দান করুন। রাবী বাকিয়্যা (র) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে যিয়াদ (র) বলতেন, সদ্য প্রস্তুত রুটির ব্যাপারেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতো। এই দুই পরিবারের মাঝখানে একটি নল-খাগড়ার বেড়া ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। বাকিয়্যা (র) বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনে যিয়াদ ও তার সাথীদের মধ্যেও এমন অবস্থা লক্ষ্য করেছি।