6. যিক্র ও দুআ
বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা
আবূ উমামা বাহেলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমরা কুরআন পড়ো, কারণ তা কিয়ামতের দিন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আগমন করবে।” (মুসলিম ৮০৪)
সুন্দর সুরে কুরআন পড়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ মধুর সুরে কুরআন তেলাওয়াত করার অনুমতি দিয়েছেন অন্য কোন জিনিসকে ঐরূপ পড়ার অনুমতি দেন নাই। তিনি উচ্চঃস্বরে সুন্দর সুরে তেলাওয়াত করতেন।” (বুখারী ৭৫৪৪, মুসলিম ৭৯২)
সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র যিক্র করা
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র যিক্র করতেন।” (মুসলিম ৩৭৩)
তাসবীহ পাঠ করা
জুয়াইরিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সকালের নামায পড়ে তাঁর কাছ থেকে উঠে বাইরে গেলেন। তিনি তখন তাঁর মসজিদ (নামাযের স্থানে) বসে ছিলেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাশ্তের সময় ফিরে এলেন । তখনও তিনি (জুয়াইরিয়া) বসে ছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম সেই অবস্থাতেই তুমি তখন থেকে বসে রয়েছ? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজ এ পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করেছো তার সাথে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজনই বেশী। কালেমা গুলো হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিযা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহ্র প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর অগণিত সৃষ্টির সমান, তাঁর সন্তুষ্টি সমান, তাঁর আরশের ওজনের পরিমাণ ও তাঁর কালেমা লিখতে যত কালির প্রয়োজন হয় সেই পরিমাণ। (মুসলিম ২৭২৬)
হাচির উত্তর দেওয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং তার ভাই অথবা সাথী যেন (উত্তরে) বলে, ‘ইয়ারহামু কাল্লাহ’ অতঃপর সে যেন বলে, ‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউস্লিহ বালাকুম’।” (বুখারী ৬২২৪)
রোগীর জন্য দুআ করা
ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বলতেন, “লা বাসা ত্বহুর ইনশাআল্লাহ্” (চিন্তার কোন কারণ নেই আল্লাহ্ চাহেতো পাপ মোচন হবে)। (বুখারী ৫৬৬২)
ব্যথার স্থানে হাত রেখে দুআ পড়া
উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সেই ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর শরীরে অনুভব করে আসছেন। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বললেন, “শরীরে যেখানে ব্যথা অনুভব করছো সেখানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলো এবং সাতবার ‘আউযু বিল্লাহি ওয়া ক্বুদরতিহি মিন শার্রি মা আজিদু ওয়া উহাযির’ (আমি আল্লাহ্র মর্যাদা এবং তাঁর ক্বুদরতের মাধ্যমে সেই ব্যাথা থেকে আশ্রয় কামনা করছি, যা আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশঙ্কা করছি) পড়ো।” (মুসলিম ২২০২)
মোরগের ডাক শুনে দুআ এবং গাধার আওয়ায শুনে শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন আল্লাহ্র অনুগ্রহ চাইবে। কারণ, সে ফেরেশতা দেখেছে। আর যখন গাধার আওয়ায শুনবে, তখন আল্লাহ্র নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করবে। কারণ, সে শয়তান দেখেছে।’ (বুখারী ৩৩০৩, মুসলিম ২৭২৯)
বৃষ্টি হওয়ার সময় দুআ করা
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বৃষ্টি হতে দেখতেন, তখন বলতেন, “আল্লাহুম্মা সাইয়েবান নাফিআ” (হে আল্লাহ্ মুষলধারে উপকারী বৃষ্টি বর্ষাও)। (বুখারী ১০৩২)
বাড়িতে প্রবেশ করার সময় আল্লাহ্র যিক্র করা
জাবির (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “যখন মানুষ স্বীয় বাড়িতে প্রবেশ করার সময় মহান আল্লাহ্র যিক্র করে নেয়, তখন শয়তান (তার সহচরদের) বলে, না তোমরা রাত্রিবাস করতে পারবে, আর না রাতের খাবার পাবে। কিন্তু প্রবেশ করার সময় যদি আল্লাহ্র যিক্র না করে, তবে বলে, রাত্রিবাসও করতে পারবে এবং রাতের খাবারও পাবে।” (মুসলিম ২০১৮)
মজলিসে আল্লাহ্র যিক্র করা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “লোকেরা যখন এমন কোন মজলিসে বসে যেখানে তারা না আল্লাহ্র যিক্র করে, আর না তাদের নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করে, তখন এই মজলিস তাদের অনুতাপের কারণ হয়। এখন আল্লাহ্ চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন আবার ক্ষমা করেও দিতে পারেন।” (তিরমিযী ৩৩৮০)
পায়খানায় প্রবেশ কালে দুআ করা
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় প্রবেশ করার ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল খুবুসী ওয়াল খাবাইস’ (হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট খবিস জ্বিন নরনারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় কামনা করছি)। (বুখারী ৬৩২২, মুসলিম ৩৫৭)
ঝড়-তুফানের সময় দু’আ পড়া
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝড়-তুফানের সময় বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা-ফীহা ওয়া খায়রা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযু বিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি মা-ফিহা ওয়া শার্রি মা-উরসিলাত বিহি’ (হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট উহার (ঝড়-তুফানের) কল্যাণ কামনা করছি এবং আমি উহার ভিতরে নিহিত কল্যাণ চাচ্ছি, আর সেই কল্যাণ যা উহার সাথে প্রেরিত হয়েছে। আর আমি উহার অনিষ্ট হতে, উহার ভিতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যে ক্ষতি উহার সাথে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) (মুসলিম ৮৯৯)
অনুপস্থিত মুসলিমদের জন্য দুআ করা
আবু দারদা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দুআ করে, তার সাথে নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন, আমীন, তোমার জন্যও অনুরুপ।” (মুসলিম ২৭৩২)
মুসীবতের সময় দু’আ করা
উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে মুসলিমই বিপদে পতিত হলে আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন, আল্লাহুম্মা জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফলী খায়রাম মিনহা’ (আমরা আল্লাহ্র জন্য এবং আমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ্! আমার বিপদে আমাকে নেকী দান করো এবং যা হারিয়ে গেছে তার বদলে তার চাইতে ভাল জিনিস দান করো।) তাহলে আল্লাহ্ তাকে তার চাইতে উত্তম জিনিস দান করেন।’ (মুসলিম ৯১৮)
বেশী বেশী সালাম প্রচার করা
বারা ইবনে ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি জিনিস করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীদের দেখতে যাওয়ার--- এবং সালামের ব্যাপক প্রচলন করার। (বুখারী ৫১৭৫, মুসলিম ২০৬৬)