12. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আংটির বিবরণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাঃ) রূপার আংটি ব্যবহার করতেন। আর তার আংটিতে আবিসিনীয় পাথর বসানো ছিল। [৭১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি রৌপ্যের আংটি ছিল
ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সঃ)একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করেছিলেন। তিনি তা দ্বারা (চিঠিপত্রে) সীল মারতেন, তবে তিনি (সচরাচর) তা পরিধান করতেন না। [৭২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সীল মারার জন্য আংটিটি তৈরি করেছিলেন
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ)যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াতপত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা সীল ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তাই তিনি একটি আংটি তৈরি করান। তার হাতের নিচে রাখা আংটিটির ঔজ্জ্বল যেন আজও আমার চোখের সামনে ভাসছে। [৭৩] ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রথমত কোন আংটি তৈরি করেননি। কিন্তু যখন অবগত হলেন রাজা বাদশাহগণ সীল-মোহর ছাড়া চিঠিপত্রের মূল্যায়ন করেন না, তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণের জন্য আংটি তৈরি করেন। হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, চিঠিপত্রের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দেয়াও সুন্নত। সুলায়মান (আঃ) সর্বপ্রথম চিঠির মাধ্যমে সাবার রাণী বিলকীস দাওয়াত দিয়েছিলেন।
আংটিটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল। ‘মুহাম্মাদ’ এক লাইনে, ‘রাসূল’ এক লাইনে এবং ‘আল্লাহ’ এক লাইনে।[১] আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পারস্য সম্রাট কিসরা, রোম সম্রাট কায়সার এবং আবিসিনীয় বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট (ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে) চিঠি লেখার ইচ্ছে পোষণ করেন। তখন তাঁকে জানানো হলো যে, তারা সীল-মোহর ছাড়া চিঠি গ্রহণ করেন না। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আংটি তৈরি করান, যার বৃত্তটি ছিল রৌপ্যের। আর তিনি ঐ আংটিতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত করান।[১] ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ যেসব বাদশাহর নামে চিঠি পাঠিয়েছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেসব রাজা-বাদশাহ ও শাসকদের নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন তাদের কয়েকজনের তালিকা নিমে দেয়া হলো: ১. রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস : সাহাবী দিহইয়া কালবী (রাঃ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের প্রতি তাঁর বিশ্বাস থাকার পরও তিনি ঈমান আনেননি। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চিঠির কোন অবমাননাও করেননি। ২. পারস্যের সম্রাট পারভেজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা আস-সাহমী (রাঃ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। পাপী পারভেজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চিঠি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বদ দু’আর ফলে তাঁর রাজ্যও ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। ৩. আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশী : এ চিঠির বাহক সাহাবী আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ)। যে নাজ্জাশী হাবশায় মুসলমানদেরকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নাম আমবাসা। ষষ্ঠ হিজরী সনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরী সনে মারা যান। মদিনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর গায়েবানা জানাযা আদায় করেন। ৪. মিশরের রাজা মুকাওকিস : তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান হাতিব ইবনে আবী বালতা’আ। তিনি ইসলাম কবুল করেননি। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট হাদিয়া প্রেরণ করেন। ৫. বাহরাইনের রাজা মুনযির ইবনে সাদী : আলা ইবনে হাযরাম (রাঃ) তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে যান। তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং ইসলামী খিলাফাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। ৬. আম্মানের রাজা : সে সময় আম্মানে ছিল দু’জন বাদশাহ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমর ইবনে আস (রাঃ) এর মাধ্যমে তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠি পেয়ে তারা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন।
আংটিটি পর্যায়ক্রমে খলীফাগণ ব্যবহার করেন এবং উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে তা একটি কূপে পড়ে যায়
ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি রূপার আংটি তৈরি করান। সর্বদা তা তাঁর হাতে থাকত। তারপর তা পালাক্রমে আবু বকর (রাঃ) উমার (রাঃ) এর হাতে আসে। এরপর উসমান (রাঃ) এর হাত থেকে (মু’আয়কিবের সাথে লেনদেনের সময়) তা আরীস নামক কূপে পড়ে যায়। তাতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অংকিত ছিল।[১]