2. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মোহরে নবুওয়াত
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’কাঁধের মধ্যভাগে মোহরে নবুওয়াত ছিল
خاتم অর্থ- আংটি, মোহর, সীল। মোহরে নবুওয়াত হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুওয়াতের নিদর্শন; আর এ নিদর্শনের কথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও বর্ণিত ছিল। সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর তিনি ওযু করলেন। আমি তার ওযুর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তার পেছনে গিয়ে দাড়ালাম। সহসা তার দু’কাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো। [১২]
তা ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড। [১৩] রুমায়সা (রাঃ) তিনি বলেন, সা'দ ইবনে মুয়ায (রাঃ) এর ওফাতের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তার মৃত্যুতে রহমান (আল্লাহ তা'আলা) এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়ছা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তার এত নিকটে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তার মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করতে পারতাম। [১]
সেটি ছিল এক গুচ্ছ কেশের মত
আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! আমার কাছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তার পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের উপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব (রাঃ) কে বললেন, খাতাম’ (মোহরে নবুওয়াত) কী জিনিস? তিনি বললেন, এক গুচ্ছ কেশ। [১৫]
সালমান ফারসি (রাঃ) মোহরে নবুওয়াত দেখে ঈমান এনেছিলেন
আবু বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসী (রাঃ) একটি পাত্রে কিছু কাচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সামনে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?) তিনি বললেন, এগুলো আপনার ও আপনার সাধীদের জন্য সাদাকা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ বললেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন। পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করেন। তখন তিনি বললেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান (রাঃ) বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা হস্ত প্রসারিত করো (হাদিয়া গ্রহণ করো)। এরপর সালমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) সালমান (রাঃ) জনৈক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে এত এত দিরহামের বিনিময়ে এবং এ শর্তে খরিদ করেন যে, সালমান তার ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবে এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার নিজ হাতে একটি চারা ছাড়া সবগুলো রোপণ করলেন এবং একটি চারা গাছ ওমর (রাঃ) রোপণ করেছিলেন। সে বছরই সকল গাছেই খেজুর আসল কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্ন বললেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি রোপণ করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ চারাটি উপড়িয়ে আবার রোপণ করলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল। [১৬] ব্যাখ্যা : (আরবী) আমরা সাদাকা ভক্ষণ করি না এ বাক্যের মধ্যে আমরা দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তার ঐ সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে বুঝানো হয়েছে, যাদের জন্য সাদাকা খাওয়া হারাম।
এটি ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত
আবু নজর আওয়াকী (রহ.) তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মোহরে নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, তা ছিল তার পৃষ্ঠদেশের উপর এক টুকরো বাড়তি গোশত। [১৭]
এটি ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায়, আর এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক ছিল
আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবীগণের মাঝে ঘুরতেছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তার পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তার দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল। এরপর আমি তার সামনে এসে দাড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি বললেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তখন তিনি বললেন, হ্যা- তিনি তোমাদের জন্যও দু'আ করেছেন। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন - (হে রাসূল) আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১৯)[১৮]