45. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ক্ৰন্দন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়কালে ক্ৰন্দন করতেন
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তাঁর বক্ষদেশ হতে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেমন চুলার উপর রাখা পাত্র হতে টগবগ শব্দ শোনা যায়।[১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শ্রবণ করেও ক্ৰন্দন করতেন
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে পাঠ করে শুনাব, যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে! তিনি বললেন, আমি তা অপরের কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি। ফলে আমি সূরা নিসা পাঠ করতে শুরু করলাম। অতঃপর যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছলাম- وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاءِ شَهِيدًا অর্থাৎ আপনাকে ডাকব তাদের উপর সাক্ষীরূপে।[১] তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।[2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদাতে গেলেও ক্ৰন্দন করতেন
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সালাতে দণ্ডায়মান হন। এতে তিনি এত বিলম্ব করলেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর রুকূতে যাবেন না। যখন রুকূতে গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল, তিনি যেন আর মাথা তুলবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর তিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠাবেন না। তারপর যখন মাথা উঠালেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর সিজদায় যাবেন না। তারপর যখন সিজদায় গেলেন। তখন মনে হচ্ছিল তিনি যেন আর মাথা উঠবেন না। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন আর ক্ৰন্দন করছিলেন এবং দুআ পাঠ করছিলেন যে, হে আমার রব! তুমি কি এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমার উপস্থিতিতে আমার উম্মতকে শাস্তি দেবে না? আমরা তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। রাসূলুল্লাহ যখন ২ রাক’আত সালাত শেষ করলেন, তখন সূর্যও বের হয়ে আসল। অতঃপর তিনি কিছু বলার জন্য দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর হামদ ও ছানার পর বললেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুর সঙ্গে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। যখন চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণ হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকর-এ লিপ্ত হও।[১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যার মৃত্যুশোকে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর। এক কন্যা মূমুর্ষ অবস্থায় ছিলেন। তিনি তাকে কোলে তুলে সামনে রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তখন উম্মে আয়মান (রাঃ) চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহর রাসূলের সামনেই তুমি ক্ৰন্দন করছ? উম্মে আয়মান বললেন, আমি আপনাকেও কি অশ্রুসিক্ত দেখতে পাচ্ছি না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যে কান্না করছি তা নিষেধ নয়, তা আল্লাহর রহমত। অতঃপর তিনি বললেন, একজন মুমিন সর্বাবস্থায় মঙ্গলজনক অবস্থায় থাকে। এমনকি তাঁর জীবন নিয়ে যাওয়ার সময়ও আল্লাহর প্রশংসা করে।[১]
উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) এর মৃত্যুতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদেছিলেন
আয়েশা (রাঃ) উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কপালে চুম্বন দিলেন। তিনি কাদছিলেন অথবা (রাবী) বলেন, তখন তাঁর চোখ হতে অশ্রু পড়ছিল।[১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যাকে কবরের শোয়োনোর সময়ও কেঁদেছিলেন
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হতে অশ্রু বেরোচ্ছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কবরে অবতরণ করো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে আবু তালহা (রাঃ) কবরে অবতরণ করলেন।[১]