2. সুন্নাত অধ্যায়

【1】

কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের প্রতি উৎসাহ দানঃ

এরবায বিন সারিয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এমন ওয়ায করলেন যে, তাতে অন্তর সমূহ ভীত-সন্ত্রস্ত হল, চক্ষুগুলো অশ্রুসিক্ত হল। আমরা আরয করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি বিদায়ী নসীহত, তাই আমাদেরকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ “আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি তাক্বওয়া তথা আল্লাহ ভীতির এবং নেতার কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার- যদিও একজন কৃতদাস তোমাদের নেতৃত্ব দেয়। নিঃসন্দেহে তাোমাদের মধ্যে থেকে যে আমার পর জীবিত থাকবে অচিরেই সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। (সে সময়) তোমাদের উপর আবশ্যক হল আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা। তোমরা উহা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। দ্বীনের মাঝে নতুনত্ব থেকে তোমরা সাবধান। কেননা প্রত্যেক বিদআতই ভ্ৰষ্টতা।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান। তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।) ‘তোমরা উহা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। একথার অর্থঃ সুন্নাতকে তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে, তা নিয়ে গবেষণা করবে, তার প্রতি সর্বদা আমল করবে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে- যেমন করে হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কোন ব্যক্তি কোন জিনিসকে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকে। আবু শুরাইহ আল খুযায়ী একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেনঃ “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর! তোমরা কি একথার সাক্ষ্য দাও না যে, “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই, এবং আমি আল্লাহর রাসূল?” তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ “নিশ্চয় এ কুরআনের এক দিক আল্লাহর হাতে রয়েছে এবং আর এক দিক তোমাদের হাতে রয়েছে। তোমরা উহা আঁকড়ে ধরে থাক। তাহলে এরপর তোমরা কখনই বিভ্ৰান্ত বা ধ্বংস হবে না।” (উত্তম সনদে ত্বাবরানী {কাবীর} গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। শায়খ আলবানী বলেনঃ হাদীছটি সহীহ সনদে আরো বর্ণনা করেন, ইবনু হিব্বান স্বীয় {সাহীহ} গ্রন্থে এবং ইবনু নছর {ক্লিয়ামুল লাইল} গ্রন্থে) জুবাইর বিন মুতইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘জুহফা’ নামক স্থানে একদা নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ “তোমরা কি সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, আর কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে?” আমরা বললাম, হ্যা। তিনি বললেনঃ “অতএব তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, এই কুরআনের একাংশ আল্লাহর হাতে, আরেকাংশ তোমাদের হাতে। তোমরা উহাকে আঁকড়ে ধর। তাহলে তোমরা তার পরে (কুরআন আঁকড়ে ধরার পরে) কখনই ধ্বংস হবে না, কখনই বিভ্রান্ত হবে না।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বাযযার ও ত্বাবরানী কবীর ও আওসাত গ্রন্থে) ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্জে মানুষের সামনে এ খুতবা প্রদান করেন, তিনি বলেনঃ “নিশ্চয় শয়তান এ মর্মে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এ যমীনে কেউ তার দাসত্ব করবে না। কিন্তু তারপরও সে একথার উপরই সন্তুষ্ট যে, তোমাদের ছোটখাট তুচ্ছ বিষয়ে তার আনুগত্য করা হবে। সুতরাং তোমরা সাবধান থেকো। নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি- তোমরা যদি উহা আঁকড়ে ধরে থাক তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত।” (হাদীছটি হাকেম বর্ণনা করে বলেনঃ সনদ সহীহ) আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ “বিদআত নিয়ে গবেষণা করার চেয়ে সুন্নাতকে যথেষ্ট মনে করা অনেক উত্তম।” (হাকেম মওকুফ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তনুযায়ী সহীহ) আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) তিনি আওফ বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আমাদের নিকট ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এসে বললেনঃ “তোমাদের মাঝে আমি যতক্ষণ আছি, তোমরা আমার আনুগত্য কর। তোমরা আল্লাহর কিতাব আকড়ে ধর। তার মধ্যে হালাল ঘোষিত বিষয়কে হালাল গণ্য কর ও হারাম বিষয়কে হারাম গণ্য কর।” (ত্বাবরানী স্বীয় কাবীর গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) ইবনে মাসউদ মাওকূফ সূত্রে যে হাদীছটি (যঈফ তারগীব গ্রন্থে) উল্লেখ হয়েছে তা উত্তম সনদে জাবের থেকে মারফু' সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। [১] আবেস বিন রাবীআহ তিনি বলেনঃ আমি দেখেছি ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হজরে আসওয়াদকে চুম্বন করছেন আর বলছেনঃ “আমি জানি নিঃসন্দেহে তুমি একটি পাথর। কোন অপকার করতে পারনা, কোন উপকারও করতে ক্ষমতা রাখ না। তোমায় চুম্বন করতে আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে না দেখতাম তবে তোমাকে চুম্বন করতাম না।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিয়ী ও নাসাঈ। হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) ওরওয়া বিন আবদুল্লাহ বিন কুশায়র তিনি বলেনঃ মুআবিয়া বিন কুররা তার পিতার বরাতে হাদীছ বর্ণনা করেন। মুআবিয়ার পিতা কুররা বলেনঃ মুযায়না থেকে আগত একটি দলের সাথে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর দরবারে এলাম। আমরা তার হাতে বায়আত করলাম। সে সময় তাঁর জামার খোলা গলাবন্দ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলাম অতঃপর তাঁর (পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত) মোহরে নবুয়ত স্পর্শ করলাম। ওরাওয়া বলেনঃ এর পর থেকে শীতকাল বা গ্ৰীষ্মকালে মুআবিয়া বা তার পুত্রকে তাদের জামার গলাবন্দ খোলা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় দেখিনি। (ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।) মুজাহিদ (রঃ) একদা কোন এক সফরে আমরা ইবনে ওমার (রাঃ) (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) এর সাথে ছিলাম। তিনি এক জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি একটু সরে গিয়ে ডান দিক বা বাম দিক দিয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করা হল, কেন আপনি এরূপ করলেন? তিনি বললেনঃ আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এরূপ করতে, তাই আমি এরূপ করলাম। (আহমদ ও বাযযার উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) ইবনে ওমর (রাঃ) মক্কা এবং মদীনার মাঝে অবস্থিত একটি বৃক্ষের নিকট যখন তিনি আসতেন তখন তার নীচে শুয়ে বিশ্রাম করতেন। তিনি বলতেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। (বাযযার হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আনাস বিন সীরীন তিনি বলেনঃ আমি একবার আরাফাতের ময়দানে ইবনে ওমার (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি (আরাফাতের উদ্দেশ্যে) গমন করলেন আমিও তার সাথে গমন করলাম। ইমাম এলে তাঁর সাথে তিনি যোহর ও আসরের নামায (একসাথে কসর করে যোহরের সময়েই) আদায় করলেন। অতঃপর তিনি, আমি এবং আমার কতিপয় সাথী আরাফাতে অবস্থান নিলাম। ইমাম যখন আরাফাত ত্যাগ করে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন আমরাও তার সাথে যাত্রা করলাম। ‘মাযেমায়ন' নামক স্থানের পূর্বে এক গিরী পথে পৌঁছে তিনি উট থামালেন ও অবতরণ করলেন। আমরাও উট থামালাম। আমরা ভাবলাম তিনি হয়ত সালাত আদায় করবেন। কিন্তু তার বাহনের রশি ধারণকারী ক্রীতদাস বললেনঃ তিনি এখানে কোন সালাতের ইচ্ছা করেন নি; বরং তিনি স্মরণ করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ স্থানে এসে স্বীয় প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করেছেন। তাই তিনিও পছন্দ করলেন এ স্থানে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করবেন। (ইমাম আহমাদ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) হাফেয মুনযেরী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর অনুসরণ ও তাঁর সুন্নাতের অনুকরণের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে অনেক বেশী আছার বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহই তওফীকদাতা। তিনি ছাড়া সত্য কোন রব নেই।

【2】

সুন্নাত পরিত্যাগ এবং প্ৰবৃত্তির অনুসরণ ও বিদআত চর্চার প্রতি ভীতি প্রদর্শণঃ

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তা প্রত্যাখ্যাত বা অগ্রহণ যোগ্য।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজাহ) আবু দাউদের বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “আমার নিদের্শ ব্যতিরেকে যে ব্যক্তি কোন কর্ম সম্পাদন করবে, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।” মুসলিমের অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমার নির্দেশ নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।” জাবের (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন খুতবা দিতেন তখন তার চক্ষুযুগল লালবর্ণ ধারণ করত। কণ্ঠস্বর উচু হত এবং ক্ৰোধ কঠিন আকার ধারণ করত। দেখে মনে হত তিনি কোন সৈন্য বাহিনীকে সতর্কবানী শুনাচ্ছেন। বলতেনঃ সকালে বা বিকালে শত্রুর আক্রমন থেকে তোমরা সতর্ক হও। আর বলতেনঃ এমন সময় আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে যখন আমি এবং কিয়ামত এরূপ। একথা বলে তিনি স্বীয় তর্জনী ও মধ্যমাকে একত্রিত করতেন। তিনি আরো বলতেনঃ “অতঃপর, সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মাদের হেদায়াত। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপার হল এর মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্ৰষ্টতা। অতঃপর বলতেনঃ প্রত্যেক মুমিনের নিজ প্রাণের চেয়ে আমি তার অধিক নিকটবর্তী বন্ধু। যে ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে মৃত্যু বরণ করবে সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারদের জন্য হবে। আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ বা সন্তান ছেড়ে যাবে, সে ঋণ আমিই পরিশোধ করব, সে সন্তানদের ভরণ-পোষণ আমারই দায়িত্বে।” (মুসলিম, ইবনু মাজাহ প্রমুখ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) মুআবিয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মাঝে দন্ডায়মান হলেন, অতঃপর বললেনঃ “জেনে রেখো! তোমাদের পূর্ব যুগের আহলে কিতাবগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। নিঃসন্দেহে এই উম্মত অচিরেই তেহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে বাহাত্তর দলই জাহান্নামে যাবে, আর একটি মাত্র দল যাবে জান্নাতে, সে দলটি হল জামাআত। [১] (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ ও আবু দাউদ) অন্য বর্ণনায় আবু দাউদ বৃদ্ধি করেছেনঃ "এবং অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে কতিপয় দল বের হবে। কুকুরের দংশনে কালাব [২] নামক একধরণের রোগের জীবানু যেমন রোগীর সমস্ত শরীর প্রবাহিত হয় তেমনি প্রবৃত্তি তাদের মধ্যে প্রবাহিত হবে। তার কোন শিরা-উপশিরা বা কোন জোড়া অবশিষ্ট থাকবে না। আবু বারযাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর যা আশংকা করছি তা হচ্ছে, পেটের ব্যাপারে এবং যৌনাঙ্গের বিষয়ে লোভে পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বিভ্রান্ত হওয়া।" (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমদ, ত্বাবরানী ও বাযযার) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “আর ধ্বংসকারী বিষয় সমূহ হলঃ অনুগত লোভ, অনুসৃত প্রবৃত্তি এবং মানুষের নিজেকে নিয়ে অহংকার বা (আত্মগরিমা)।” (বাযযার, বায়হাকী প্রমুখ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আনাস বিন মালেক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা বিদআতকারীর তওবায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখেন যতক্ষণ না সে তার বিদআত পরিত্যাগ না করে।" (ত্বাবরানী হাসান সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) এরবায বিন সারিয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “(ধর্মের মাঝে) নতুন কিছু সৃষ্টি করা থেকে তোমরা সাবধান! কেননা প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি পথভ্রষ্টতা।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ “প্রতিটি কর্মের একটি উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে। আর সে উদ্দীপনার মধ্যে অবসন্নতা এবং বিরতী আসে। সুতরাং সুন্নাত পর্যন্ত গিয়ে যার বিরতী ঘটে সেই সঠিক পথপ্ৰাপ্ত হয়। আর যার বিরতী হয় অন্য কিছুতে সে নিশ্চিতভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত।" (ইবনু আবী আছেম ও ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।) [১] উক্ত হাদীছটি তিরমিযী এবং ইবনু হিব্বানও আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “প্রতিটি কর্মের একটি উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে। আর সে উদ্দীপনার মধ্যে আসে অবসন্নতা এবং বিরতী। উদ্দোমশীল সেই ব্যক্তি যদি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে এবং বাড়াবাড়ি ও শিথীলতা করে সঠিকভাবে আমল করে, তবে আমি তার সফলতার আশা করতে পারি। আর যদি তার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করা হয়। [১] তবে তাকে সৎ ব্যক্তির মধ্যে গণ্য করিও না।” আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হল, সে আমার (উম্মতের) অন্তর্ভুক্ত নয়।” (মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি আরো বর্ণনা করেছেন বুখারী ও নাসাঈ এরবায বিন সারিয়া (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছেনঃ “আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছি (এমন দ্বীন ও সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর) যার শুভ্রতা ও উজ্জলতা এত স্বচ্ছ, যার রাতও দিনের ন্যায় পরিস্কার।[১] ধ্বংশপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া এ থেকে কেউ বক্রপথে চলে না।” (ইবনু আবী আসেম কিতাবুস সুন্নাহ গ্রন্থে হাসান সনদে বর্ণনা করেন।) (শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি আরো বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, ইবনু মাজাহ ও হাকেম) আমর বিন যারারাহ তিনি বলেনঃ আমি কিচ্ছা কাহিনী বয়ান করছিলাম। এসময় আবদুল্লাহ বিন মাসউদ আমার সামনে দন্ডায়মান হলেন, অতঃপর বললেনঃ হে আমর! অবশ্যই তুমি পথভ্ৰষ্ট বিদআত আবিস্কার করেছ, অথবা তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীদের থেকে অধিক হেদায়াত প্রাপ্ত হয়ে গেছ! তিনি বলেন, আমি দেখলাম (একথা শুনে) শ্রোতারা সবাই আমার সামনে থেকে সরে গেল। এমনকি একজনও রইল না। (ত্বাবরানী কবীর গ্রন্থে এবং দারেমী এ হাদীছটির অনুরূপ আরো পূর্ণরূপে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)

【3】

নেকীর কাজ চালু করার প্রতি উদ্ধৃদ্ধ করণ, যেন তার অনুসরণ করা হয়। আর অনুসৃত হওয়ার আশংকায় পাপের কাজ চালু করার প্রতি ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ

জারীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা দিনের প্রথম ভাগে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর নিকট ছিলাম। এমন সময় একদল লোক তার নিকট আগমন করল, যারা ছিল চাদর এবং আলখিল্লার টুকরা পরিহিত অবস্থায় উলঙ্গ প্রায়। তাদের গলদেশে তরবারী ঝুলছিল। তাদের বেশীরভাগ-বলা যায়- সবাই মুযার গোত্রের লোক। তাদের অভাব ও দারিদ্রতার দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর চেহারা মোবারকের রং পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি (গৃহে) প্রবেশ করলেন। অতঃপর বের হলেন। বেলালকে আদেশ করলেন, তিনি আযান দিলেন ও ইকামত দিলেন। তিনি সবাইকে নিয়ে (যোহর) সালাত আদায় করলেন, অতঃপর বক্তব্য দিতে শুরু করলেন। বললেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا “হে লোক সকল! ভয় কর তোমাদের পালনকর্তকে যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গীনীকে এবং তাদের দুজন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। তোমরা ভয় কর আল্লাহ তা’য়ালাকে, যারঅসীলায় তোমরা পরস্পরে প্রার্থনা কর ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর দৃষ্টি নিবন্ধকারী।” (সূরা নিসা-১) আর পাঠ করলেন সূরা হাশরের আয়াতটিঃ اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ “তোমরা ভয় কর আল্লাহকে, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে কি সে প্রেরণ করেছে আগামী কালের জন্য।” (হাশরঃ ১৮) (বললেনঃ) এক ব্যক্তি দান করে তার দ্বীনার থেকে, তার দিরহাম থেকে, তার বস্ত্র থেকে, তার গমের সা থেকে, তার খেজুরের সা থেকে, এমনকি একটি খেজুরের অংশ হলেও দান করে। জারীর (রাঃ) বলেনঃ বক্তব্য শুনে জনৈক আনসারী ব্যক্তি (খাদ্য ভর্তি) একটি থলে নিয়ে এল। তা বহন করতে তার দুহাত যেন অপারগ হচ্ছিল, বরং অপারগ হয়েই গেছে। তিনি বলেনঃ অতঃপর মানুষ তার অনুসরণ করে একের পর এক দান করতে লাগল। এমনকি দেখলাম খাদ্য ও বস্ত্রের যেন ছোট দুটি স্তুপ জমা হয়ে গেল। দেখলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর মুখমন্ডল প্রফুল্ল হয়ে গেল। যেন খুশিতে তা উজ্জল ও আলোকিত হয়ে উঠল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “যে ব্যক্তি ইসলামে উত্তম রীতি চালু করবে, সে তার প্রতিদান পাবে এবং যারা সে অনুযায়ী আমল করবে তার প্রতিদানও লাভ করবে। অথচ তাদের (অনুসরণকারীদের) প্রতিদান কোন কিছু কম করা হবে না। এবং যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ প্রথা চালু করবে, তার পাপের বোঝা তার উপরই বর্তবে এবং সে অনুযায়ী যে আমল করবে তার পাপও। অথচ তাদের (অনুসরণকারীদের) পাপের অংশ থেকে কোন কিছু কম করা হবে না।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী। তবে তিরমিযী ঘটনাটি সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন) হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর যুগে জনৈক ব্যক্তি ভিক্ষা চাইলে তার জাতির লোকেরা তাকে দান করা বিরত থাকল। অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে কিছু দান করল। তখন কওমের লোকেরাও দান করল। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ চালু করবে, অতঃপর তার অনুসরণ করা হবে, সে তার প্রতিদান পাবে এবং যে তার অনুসরণ করবে। তার অনুরূপও প্রতিদান লাভ করবে। অথচ তাদের প্রতিদান কোন কিছু কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ চালু করবে, অতঃপর তার অনুসরণ করা হবে, সে তার পাপ ভোগ করবে এবং যারা তার অনুসরণ করবে তাদেরও অনুরূপ পাপের ভাগী হবে, অথচ তাদের পাপ কোন অংশে হ্রাস করা হবে না।” (আহমদ ও হাকেম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাকেম বলেন, হাদীছটির সনদ সহীহ) ইবনু মাজাহ ইবনু মাজাহ উক্ত হাদীছটি আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। [১] ইবনু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “নাহকভাবে কোন ব্যক্তি নিহত হলেই তার খুনের (পাপের) একটি অংশ আদমের প্রথম সন্তানের (কাবীল) উপর বর্তাবে। কেননা সেই প্রথম হত্যা চালু করেছে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী) ওয়াছেলা বিন আসক্বা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি উত্তম রীতি চালু করে, যে পর্যন্ত সে অনুযায়ী আমল হবে তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরেও সে অনুযায়ী সে তার প্রতিদান পাবে, যে পর্যন্ত সে কাজ পরিত্যাক্ত না হয়। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ চালু করবে সে উহা পরিত্যাক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পাপের ভাগি হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মুসলিম দেশের সীমানা পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে পাহারারত (জীবিত) মুজাহিদের বরাবর প্রতিদান পেতে থাকবে এবং তা (কিয়ামতের দিন) পূণরুত্থান পর্যন্ত।" (ত্বাবরানী স্বীয় কাবীর গ্রন্থে মোটামোটি গ্রহণযোগ্য সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) সাহল বিন সাদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “এই কল্যাণ বা নেককর্ম সমূহ হচ্ছে ভান্ডার স্বরূপ। প্রতিটি ভান্ডারের রয়েছে চাবি। সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য, যাকে আল্লাহ তা’আলা কল্যাণের চাবি ও অকল্যাণের তালা স্বরূপ করেছেন। আর দুর্ভাগ্য সে বান্দার জন্য আল্লাহ যাকে করেছেন অকল্যাণের চাবি ও কল্যাণের তালা স্বরূপ।" (ইবনু মাজাহ, ইবনু আবী আসেম, হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। একটি ঘটনার বর্ণনাসহ হাদীছটি তিরমিযীতেও আছে।)