4. পবিত্রতা
চলাচলের রাস্তা, ছায়া বা পানির ঘাটে শৌচকাৰ্য করার প্রতি ভীতি প্ৰদৰ্শন। আর কিবলাকে সামনে বা পিছনে না করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করনঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা অভিশাপ আনয়নকারী দুটি কাজ থেকে বেঁচে থাক। তাঁরা বললেনঃ সে কাজ দু’টি কী হে আল্লাহর রাসূল! যা লা'নত ডেকে নিয়ে আসে? তিনি বললেনঃ মানুষের চলাচলের রাস্তায় অথবা তাদের ছায়ায় [১] পেশাব-পায়খানা করা।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম, আবু দাউদ প্রমূখ) মুআয বিন যাবাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা তিনটি লা’নতের স্থান থেকে বেঁচে থাক। (১) পানির ঘাট, (২) চলাচলের রাস্তা ও (৩) মানুষ যে স্থানের ছায়ায় আশ্রয় নেয় সেখানে পেশাব-পায়খানা করা।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা তিনটি অভিশাপের স্থান থেকে বেঁচে থাক। বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল সে তিনটি অভিশাপের স্থান কি? তিনি বললেনঃ “তোমাদের কেহ (পেশাব-পায়খানার জন্য) বসবেঃ (১) মানুষ ছায়া গ্রহণ করে এধরণের স্থানে অথবা (২) রাস্তায় বা (৩) যেখানে পানি জমে থাকে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ) হুযায়ফা ইবনে উসায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলাচলের রাস্তায় তাদেরকে কষ্ট দিল, তার উপর তাদের লা'নত আবশ্যক হয়ে গেল।” (হাদীছটি ত্বাবরানী স্বীয় [কবীর গ্রন্থে] হাসান সনদে বর্ণনা করেন) জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা রাতের বেলায় রাস্তার মধ্যভাগে অবস্থান নেয়া থেকে সাবধান। কেননা উহা হল, সাপ ও হিংস্র প্রাণীদের আশ্রয় স্থল। এবং ঐ স্থানে প্রয়োজন পূরণ তথা শৌচকার্য থেকেও সাবধান। কেননা উহা অভিশাপের কাজ।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ, তাঁর বর্ণনা কারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য) মাকহূল তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদের দরজার (আশে-পাশে) প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউদ [মারাসীল গ্রন্থে] বৰ্ণনা করেছেন) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্ৰস্ৰাব-পায়খানার সময় কিবলাকে সামনে বা পিছনে না রাখবে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হবে এবং তার একটি পাপ মোচন করা হবে।" (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ত্বাবরানী) হাফেয মুনযেরী বলেন, খোলা মাঠে কিবলাকে সামনে বা পিছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা অসংখ্য প্ৰসিদ্ধ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছগুলো অধিক প্ৰসিদ্ধ হওয়ার কারণে এবং তা সাধারণ নিষিদ্ধ বিষয় হওয়ার কারণে এখানে উল্লেখ করা হল না। (আল্লাহই সকল বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন)
পানি, গোসলের স্থান ও গর্তে পেশাব করার ব্যাপারে ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ
জাবের (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্থীর পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসাঈ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) বাকর ইবনে মায়েয আমি শুনেছি আবদুল্লাহ বিন ইয়াযিদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ “ঘরের মধ্যে কোন পাত্রে পেশাব জমা রাখা উচিৎ নয়। কেননা যে ঘরে পেশাবা জমা থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আর তোমরা গোসলখানায় কখনই পেশাব করবে না।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ত্বাবরানী ও হাকেম। হাকেম বলেন হাদীছটির সনদ সহীহ) [১] হুমায়দ বিন আবদুর রহমান আমি এমন একজন লোকের সাথে সাক্ষাত করেছি যিনি নবী (সাঃ)এর সাহাবী ছিলেন, যেমন ছিলেন আবু হুরায়রা (রাঃ)। তিনি বলেছেন, “আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে বা গোসল খানায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।” (আবু দাউদ ও নাসাঈ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
শৌচকার্য অবস্থায় কথাবার্তা বলার প্রতি ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “দু'জন মানুষ যেন একত্রে শৌচকার্যে বসে পরস্পরে গোপনে কথাবার্তা না বলে এবং একজন অপরজনের লজ্জাস্থান না দেখে। কেননা আল্লাহ তা ঘৃণা করেন।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও ইবনে খুযায়মা) এ হাদীছের বাক্য ইবনে মাজাহ থেকে চয়ন করা হয়েছে। ইবনে খুযায়মার বর্ণনা আবু দাউদের মতই। তাঁদের বর্ণনায়ঃ তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একথা বলতেঃ لَا يَخْرُجْ الرَّجُلَانِ يَضْرِبَانِ الْغَائِطَ كَاشِفَيْنِ عَنْ عَوْرَاتِهِمَا يَتَحَدَّثَانِ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَمْقُتُ عَلَى ذَلِكَ “দু'জন লোক যেন শৌচকার্যে বের হয়ে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে পরস্পরের সাথে কথা না বলে। কেননা আল্লাহ তা ঘৃণা করেন।” আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “দুজন শৌচকার্যে বের হয়ে একত্রে বসে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে পরস্পরের সাথে যেন কথা না বলে। কেননা আল্লাহ তা ঘৃণা করেন।” (ত্বাবরানী [আওসাত গ্রন্থে] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
কাপড় ইত্যাদিতে পেশাব লেগে যাওয়া এবং তা থেকে মুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি বললেন, এদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে। খুব বড় কোন পাপের কারণে আযাব হচ্ছে না; বরং তা বড় পাপই তো। তাদের একজন চুগোলখোরি [১] করত। অন্যজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ) বুখারীর অপর বর্ণনায় ও ইবনে খুযায়মার (সহীহ) গ্রন্থে এসেছেঃ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ مَكَّةَ أَوْ الْمَدِينَةِ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنهما ليُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ وَكَانَ الْآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বা মদীনার কোন একটি গোরস্থানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি দু’জন মানুষের কবর থেকে আযাবের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “এদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে। খুব বড় কারণে তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হাঁ, তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক হত না, অপরজন চুগোলখেরি করত।” (ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন ‘পেশাব থেকে সতর্ক না থাকা কবীরা গুনাহের অন্তৰ্গত’) ইমাম খাত্তাবী বলেন, অর্থাৎ- যে কারণে তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে সেগুলো তাদের দৃষ্টিতে খুব বড় মনে হয়নি। অথবা একাজগুলো এমন বড় ধরণের নয় যে, তা থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন ছিল। আর তা হচ্ছে পেশাব থেকে সতর্ক থাকা ও চুগোলখোরী ছেড়ে দেয়া। ধর্মীয় দৃষ্টিতে কাজগুলো বড় পাপ নয়, এমন নয়; বরং মুলতঃ তা বড় পাপের কাজ। হাফেয মুনযেরী বলেন, এজন্যেই নবী (সাঃ) পরক্ষণেই বলেছেন “বরং তা বড় পাপই তো।” (আল্লাহই অধিক জানেন) ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “অধিকাংশ কবরের আযাব পেশাবের কারণে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা পেশাব থেকে সতর্ক থাক।” (বাযযার, ত্বাবরানী [কাবীর গ্রন্থে], হাকেম ও দারাকুতনী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা পেশাব থকে পবিত্র থাক। কেননা পেশাবের কারণেই অধিকাংশ কবরের আযাব হয়ে থাকে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী) আবু বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা জনৈক ব্যক্তি ও আমার মাঝখান দিয়ে হাটছিলেন। এমন সময় তিনি আসলেন দু’টি কবরের নিকট। অতঃপর বললেন, এ দু’কবরের অধিবাসীকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তোমরা আমাকে একটি খেজুরের ডাল এনে দাও। আবু বাকরা (রাঃ) বলেন, ডাল আনার জন্য আমি এবং আমার সাখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলাম। শেষে আমিই একটি ডাল নিয়ে এলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ডালটিকে দু’ভাগে ভাগ করলেন। অতঃপর একভাগ রাখলেন এই কবরে আর এক ভাগ রাখলেন ঐ কবরে। আর বললেনঃ “ডাল দু’টি যতক্ষণ তাজা থাকবে ততক্ষণ আশা করা যায় তাদের কবর আযাব হালকা করা হবে। খুব বড় কারণে তাদের আযাব হচ্ছে না। কারণ হল, একজন গীবত করত ও অপরজনের পেশাব (থেকে সতর্ক থাকত না)।” (আহমাদ, ত্বাবরানী আওসাত গ্রন্থে ও ইবনে মাজহ সংক্ষিপ্তভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, এ হাদীছের বাক্য ত্বাবরানীর) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “বেশীরভাগ কবরের আযাব পেশাবের কারণে হয়ে থাকে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ, ইবনে মাজাহ ও হাকেম। হাদীছের বাক্য ইবনে মাজাহর এবং হাকেম বলেন, শায়খানের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ) আবদুর রহমান বিন হাসানাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন। তার হাতে ছিল চামড়া নির্মিত একটি ঢাল। তিনি মানুষ থেকে পর্দা করার জন্য উহা তার সামনে রাখলেন এবং তার আড়ালে পেশাব করলেন। কোন এক লোক বললঃ তাকে দেখা মহিলা যেভাবে পেশাব করে সেভাবে পেশাব করছে। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “আফসোস তোমার জন্য!, তুমি কি জাননা বনী-ইসরাঈলের সেই লোকটির কথা? (নিয়ম ছিল) তাদের শরীরে যখন পেশাবা লাগত, তখন পবিত্র হওয়ার জন্য শরীরের ঐ অংশটুকু তারা কেঁচি দিয়ে কেটে ফেলত। তাদেরকে ঐ লোকটি একাজ করতে নিষেধ করল। একারণে কবরে তাকে আযাব দেয়া হয়েছে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বান) [১] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চলছিলাম। এসময় আমরা দু’টি কবরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর সাথে দাঁড়ালাম। তাঁর চেহারার রং পাল্টে যেতে লাগল এমনকি তাঁর জামার আস্তিন কেঁপে উঠল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেন, “আমি যা শুনতে পাচ্ছি তোমরা কি তা শুনতে পাচ্ছ না?” আমরা বললাম, কি তা হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, এখানে দু’জন ব্যক্তিকে তাদের কবরে খুব কঠিন আযাব দেয়া হচ্ছে (তাদের ধারণানুযায়ী) পাপ দু’টি খুবই সাধারণ।” আমরা আরয করলাম, কি সে পাপ? তিনি বললেন, তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক হত না, অপরজন যবান দ্বারা মানুষকে কষ্ট দিত, মানুষের মাঝে চুগোলখোরি করত। তিনি খেজুরের দু’টি ডাল নিয়ে আসতে বললেন, অতঃপর প্রত্যেক কবরে একটি করে ডাল রেখে দিলেন। আমরা বললাম, এটা কি তাদের কোন উপকারে আসবে? তিনি বললেন, “হাঁ, যতক্ষণ ডাল দু’টি তাজা থাকবে, তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে।” (ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
লুঙ্গি ছাড়া পুরুষদের এবং নেফাসযুক্ত বা রুগ্ন মহিলা ব্যতীত অন্যান্য মহিলাদের লুঙ্গিসহ গণগোসলখানায় প্রবেশের ব্যাপারে ভীতি প্ৰদৰ্শন। এক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার বর্ণনাঃ
জাবের (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গণগোসলখানায় প্রবেশ না করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার স্ত্রীকে গণগোসলখানায় প্রবেশ না করায়।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নাসাঈ, তিরমিযী ও হাকেম। হাকেম বলেন, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছিঃ “আমার উম্মতের নারীদের জন্যে হাম্মামে (জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত গোসলখানায়) প্রবেশ করা হারাম।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন হাকেম। তিনি বলেন, হাদীছটির সনদ সহীহ) আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গণগোসলখানায় প্রবেশ না করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। আর তোমাদের মহিলাদের মধ্যে যে আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন গণগোসলখানায় প্রবেশ না করে।” আবু আইয়ুব বলেনঃ ওমার বিন আবদুল আয়ীয্যের খেলাফত কালে হাদীছটি আমি তাঁর সামনে উত্থাপন করলাম। তিনি এর সত্যতা জানার জন্য আবু বকর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হাযমের নিকট এই মর্মে চিঠি লিখেন যে, তিনি যেন হাদীছটি সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন ছাবেতকে জিজ্ঞেস করেন। কেননা তাঁর কথাতে সন্তুষ্ট হওয়া যায়। তিনি তাকে প্রশ্ন করে হাদীছের সত্যতা সম্পর্কে ওমারকে লিখে পাঠালেন। তখন তিনি গণগোসলখানায় প্রবেশের ব্যাপারে মহিলাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিলেন। (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনে হিব্বান [স্বীয় সহীহ গ্রন্থে], হাকেম, ত্বাবরানী [কাবীর ও আওসাত গ্রন্থে]) কৃাস আল আজনাদ (তিনি কুসতুনতুনিয়ায় অবস্থান করতেন)। তিনি হাদীছ বর্ণনা করেন যে, ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেন, হে লোক সকল! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছিঃ "যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন এমন দস্তরখানায় না বসে যেখানে মদ বিতরণ করা হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গণগোসলখানায় প্রবেশ না করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার স্ত্রীকে গণগোসলখানায় প্রবেশ না করায়।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) ইমাম আহমাদ হাদীছের শেষাংশটুকু আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেও বর্ণনা করেছেন। [১] উম্মু দারদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি গোসলখানা থেকে বের হলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল, তিনি বললেন, কোথেকে হে উম্মু দারদা? আমি বললাম, গোসলখানা থেকে। তিনি বললেনঃ “শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, যে মহিলা স্বীয় মাতৃকুলের বাড়ী ছাড়া অন্যের বাড়ীতে নিজের বস্ত্র খুলবে, সে দয়াময় আল্লাহ তা’আলা এবং তার মাঝের পর্দাকে ধ্বংস করে দিবে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ, ত্বাবরানী [কাবীর গ্রন্থে]) আবু মুলায়হ আল হুযালী [১] (রাঃ) তিনি বলেন, হিমস অথবা শামের কয়েকজন মহিলা হযরত আয়েশা (রাঃ)এর নিকট এলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা সেই জাতি, যাদের মহিলাগণ গোসলখানা সমূহে প্ৰবেশ করে?! আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ "যে নারী তার স্বামীর গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে স্বীয় পোষাক খুলবে, সে তার এবং তার প্রভূর মাঝে পর্দা ধ্বংস করে দিবে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযি, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও হাকেম। হাদীছের বাক্য তিরমিযীর, তিনি বলেন হাদীছটি হাসান। হাকেম বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ) সায়েব (রাঃ) ইমাম আহমদ, আবু ইয়ালা, ত্বাবরানী ও হাকেম আবুস সামাহ দাররাজের সূত্রে সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ কতিপয় মহিলা উন্মু সালামা (রাঃ)এর নিকট এলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তোমরা? তারা বললঃ আমরা হেমসের অধিবাসী। তিনি বললেনঃ গোসলখানায় প্রবেশকারীদের মধ্যে থেকে? তারা বললঃ এতে কোন অসুবিধা আছে? তিনি বললেনঃ আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে মহিলা নিজের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে স্বীয় পোষাক খুলবে, আল্লাহ তার পর্দাকে ছিন্ন করে দিবেন।” ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন লুঙ্গি ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার স্ত্রীকে গণগোসলখানায় প্রবেশ না করায়। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন মদ পান না করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন এমন দস্তরখানায় না বসে যেখানে মদ বিতরণ করা হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন এমন নারীর সাথে নির্জন না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে।” (ত্বাবরানী স্বীয় [কাবীর] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)
ওযর ছাড়া ফরয গোসলে দেরী করার প্রতি ভীতি প্ৰদৰ্শনঃ
আম্মার বিন ইয়াসের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তিন ব্যক্তির নিকট (রহমাত ও বরকতের) ফেরেশতা নিকটবর্তী হয় না। (১) কাফেরের লাশ, (২) খালুক (বা রঙ্গিন খশবু) ব্যবহারকারী ব্যক্তি, (৩) নাপাক ব্যক্তি, অবশ্য যদি সে ওযু করে নেয় তবে কোন অসুবিধা নেই।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ) হাফেয মুনযেরী (রহঃ) বলেন, এখানে ফেরেশতা বলতে রহমত ও বরকতের ফেরেশতা উদ্দেশ্য। হেফাযত বা সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত ফেরেশতা উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাঁরা কোন সময়ই মানুষ থেকে আলাদা থাকেন না। অতঃপর বলা হয়েছেঃ এই হাদীছ তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যারা বিনা ওযরে ফরয গোসল করতে দেরী করে। ওযর থাকলে যদি ওযু করা সম্ভব থাকে। তবে ওযু না করলেও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কেউ বলেছেনঃ এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা সর্বদা উদাসীনতা ও অলসতা করে গোসল করতে দেরী করে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বাযযার সহীহ সনদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “তিন ব্যক্তির নিকট (রহমতের) ফেরেশতা নিকটবর্তী হয় না। (১) নাপাক, (২) নেশাগ্ৰস্ত এবং (৩) খালুক (বা রঙ্গিন খশবু) ব্যবহারকারী ব্যক্তি।”
ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করণঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ওমার আবদুল্লাহ ইবনু ওমার তাঁর পিতা ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ ইসলাম সম্পর্কে জিবরাল (আঃ) এর প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “ইসলাম হল- তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করবে, জানাবাত (নাপাকী) থেকে গোসল করবে, পরিপূর্ণরূপে ওযু করবে এবং রামাযান মাসে সিয়াম পালন করবে।” তিনি (জিবৱীল আঃ) বললেন, তা যদি বাস্তবায়ন করি তবে আমি মুসলিম? তিনি বললেনঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ আপনি সত্য বলেছেন। (ইবনু খুযায়মা স্বীয় [সহীহ] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সহীহায়ন তথা বুখারী ও মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদীছটির বর্ণনারূপ অন্যভাবে এসেছে।) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছিঃ “নিশ্চয় কিয়ামত দিবসে ওযুর প্রভাবের কারণে মুখমন্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় উজ্জল ও সুন্দর অবস্থায় আমার উম্মতকে আহবান করা হবে।” সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বীয় উজ্জলতা বাড়াতে পারে সে যেন তা করে। (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম) শায়খ আলবানী (রঃ) বলেন, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়েম, হাফেয ইবনু হাজার ও তাঁর ছাত্র নাজী বলেনঃ “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি..." বাক্যটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিজস্ব কথা তথা মাওকূফ। আবু হাযেমের রেওয়ায়াতে সহীহ মুসলিমে রয়েছে, তিনি বলেনঃ كُنْتُ خَلْفَ أبِيْ هُرَيْرَةَ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ فكان يمد يده حَتَّى يَبْلُغَ إِبْطَهُ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا هَذَا الْوُضُوءُ فَقَالَ لِي يَا بَنِي فَرُّوخَ أَنْتُمْ هَاهُنَا لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ هَاهُنَا مَا تَوَضَّأْتُ هَذَا الْوُضُوءَ سَمِعْتُ خَلِيلِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تَبْلُغُ حِلْيَةُ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوُضُوءُ আমি একদা আবু হুরায়রার পিছনে ছিলাম। তিনি সে সময় নামাযের জন্য ওযু করছিলেন। তিনি হাত ধোয়ার সময় (নির্দিষ্ট স্থান থেকে) বাড়িয়ে বগল পর্যন্ত ধৌত করলেন। আমি তাঁকে লক্ষ্য করে বললামঃ কেমন এ ওযু হে আবু হুরায়রা? তিনি বললেনঃ হে বানু ফাররুখ তোমরা এখানে? তোমরা এখানে আছ জানলে আমি এরূপ ওযু করতাম না। আমি শুনেছি আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “মুমিন ব্যক্তির ওযু যে পর্যন্ত পৌঁছবে সে পর্যন্ত তার উজ্জলতা ও সৌন্দর্য পৌঁছাবে।” ইবনু খুযায়মা স্বীয় (সহীহ) গ্রন্থে এরূপই হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (আবু হুরায়রা) বলেনঃ আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ إن الحلية تبلغ مواضع الطهور “পবিত্রতা অর্জনের স্থান সমূহ পর্যন্ত উজ্জলতা ও সৌন্দর্য পৌঁছবে।” আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা কবরস্থানে এলেন, অতঃপর বললেনঃ (আরবি) হে কবরবাসী মুমিন কওম! তোমাদের উপর সালাম-শান্তি নাযিল হোক। আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব।” আমার হৃদয়ের একান্ত ইচ্ছে, আমরা যদি আমাদের ভাইদেরকে দেখতে পেতাম! তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেনঃ আমরা কি আপনার ভাই নই হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “তোমরা আমার সাহাবী তথা সাথী। আমাদের ভাই যারা তারা এখনও আসেনি।” তারা বললেনঃ আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনও আসেনি, তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর এক ব্যক্তির কাল মিশমিশে একপাল ঘোড়ার মধ্যে যদি সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট একটি ঘোড়া থাকে, তবে উক্ত ঘোড়াটি চিনতে পারবে না?” তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ “তারা (কিয়ামত দিবসে) ওযুর কারণে মুখমন্ডল ও হাত-পা উজ্জল ও চমকিত অবস্থায় আসবে। আর হাওযে কাওছারে আমি হব তাদের অগ্রগামী।" (হাদীছটি ইমাম মুসলিম ও অন্যরা বর্ণনা করেন) যিরর তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখেননি তাদেরকে কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেনঃ “ওযুর প্রভাবে তাদের মুখমন্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় উজ্জল হবে, তাদেরকে সাদা-কাল অবস্থায় দেখা যাবে।” (ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আবু উমামা (রাঃ) উল্লেখিত হাদীছটি প্রায় একই ভাবে আহমাদ ও ত্বাবরানী উত্তম সনদে আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আবু দারদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “কিয়ামত দিবসে আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যাকে সেজদার জন্য অনুমতি দেয়া হবে। আমিই প্রথম ব্যক্তি যে সেজদা থেকে মাথা উঠাবে। অতঃপর আমি আমার সম্মুখে দৃষ্টিপাত করব, তখন সমস্ত জাতির মধ্যে আমার উম্মতকে চিনে নিতে পারব। এমনিভাবে আমার পিছন দিকে ঐরূপ হবে, ডান দিকে ঐরূপ হবে, বাম দিকেও ঐরূপ হবে। তখন এক ব্যক্তি বললঃ নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মত পর্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে কিভাবে আপনি আপনার উম্মতকে চিনবেন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “তারা হবে ওযুর প্রভাবে মুখমন্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় সাদা উজ্জলতা বিশিষ্ট। অন্য কোন জাতির এ বৈশিষ্ট হবে না। তাদেরকে আরো আমি চিনতে পারব এইভাবে যে, আমল নামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে এবং তাদের সন্তানগণ তাদের সম্মুখে দৌড়াদৌড়ি করবে।” শায়খ আলবানী বলেন, সঠিক রেওয়ায়াত হল, “আলো তাদের সামনে ও ডানে-বামে খেলা করতে দেখে আমি তাদেরকে চিনতে পারব।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ) আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযু করার সময় যখন মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে তার মুখমন্ডল থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা সে চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে করেছিল। যখন সে হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে হস্তদ্বয় থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা সে হস্তদ্বয় দ্বারা ধরার মাধ্যমে করেছিল। যখন সে পদদ্বয় ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার পদদ্বয় থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা তার পদদ্বয় চলার মাধ্যমে করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে পাপ থেকে স্বচ্ছ ও পরিস্কার হয়ে বের হয়ে যায়। (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুয়াত্বা মালেক, মুসলিম ও তিরমিযী। তবে মালেক ও তিরমিযীর রেওয়ায়াতে পা ধোয়ার কথা উল্লেখ নেই) উছমান বিন আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করে, তার পাপ সমূহ তার শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার নখের নীচে থেকেও বের হয়।” অন্য এক বর্ণনায় আছে- উছমান (রাঃ) একদা ওযু করলেন, অতঃপর বললেনঃ আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার এই ওযুর মতই ওযু করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এইভাবে ওযু সম্পাদন করবে, তার পূর্বকৃত পাপরাশি ক্ষমা করা হবে এবং তার সালাত ও মসজিদে গমণ নফল বা অতিরিক্ত হবে।" (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম এবং সংক্ষিপ্তভাবে নাসাঈ) তবে নাসাঈর শব্দরূপ এইভাবে- তিনি (উছমান (রাঃ) বলেনঃ আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ مَا مِنْ امْرِئٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ الْأُخْرَى حَتَّى يُصَلِّيَهَا যে ব্যক্তি ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করে, তবে উক্ত সালাত এবং পরবর্তী সালাত আদায় করা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের পাপ তাকে ক্ষমা করা হয়।” (হাদীছটির সনদ শাইখাইন তথা বুখারী ও মুসলিমের শর্তনুযায়ী। আর নাসাঈর বর্ণনার ন্যায় সংক্ষিপ্তভাবে ইবনু খুযায়মা স্বীয় (সহীহ) গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাজাহও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করে শেষে উল্লেখ করেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “এবং এতে যেন কেউ ধোকা না খায়।” নাসাঈর আর এক বর্ণনায় আছে- তিনি বলেনঃ مَنْ أَتَمَّ الْوُضُوءَ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَالصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ كَفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ “আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে যে ব্যক্তি ওযু সম্পাদন করবে, তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে।” [১] (শায়খ আলবানী বলেনঃ হাদীছটি এ শব্দে ইমাম মুসলিমও রেওয়ায়েত করেন।) উছমান (রাঃ) তিনি তথা উছমান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববীর পার্শ্বে এক স্থানে বসেছিলেন, তার কাছে পানি নিয়ে আসা হল। তিনি ওযু করলেন, এবং সুন্দরভাবে তা সম্পাদন করলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি দেখেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই স্থানে বসে ওযু করেছেন, এবং সুন্দরভাবে ওযুকে সম্পন্ন করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এই ওযুর মত করে ওযু সম্পাদন করে, অতঃপর মসজিদে এসে দু’রাকাআত সালাত আদায় করে, তারপর বসে, তবে পূর্বের পাপরাশি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।” তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেনঃ “তোমরা ধোকায় পড় না।” [১] (বুখারী ও অন্যরা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) উছমান (রাঃ) তিনি তথা উছমান (রাঃ) থেকেই বর্ণিত। তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর ওযু করলেন আবার হাসলেন। অতঃপর তার সাথীদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে না কেন আমি হাসলাম? তাঁরা বললেনঃ কোন বিষয় আপনাকে হাসাল হে আমীরুল মুমেনীন? তিনি বললেনঃ আমি যেভাবে ওযু করলাম সেভাবে ওযু করতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখেছি। অতঃপর তিনি হেসেছেন। বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে না কেন আমি হাসলাম। তাঁরা বললেনঃ কোন বিষয় আপনাকে হাসাল হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “নিশ্চয় বান্দা যখন ওযুর পানি আনতে বলে, অতঃপর স্বীয় মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন আল্লাহ তা’আলা মুখমন্ডলের মাধ্যমে কৃত প্রতিটি পাপ মোচন করে দেন। যখন কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করে, তখন ঐরূপ হয়। যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে, তখনও ঐরূপ হয়।” (আহমাদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেন। আরো বর্ণনা করেন আবু ইয়ালা। সহীহ সনদে বাযযার বর্ণনা করার পর তিনি আরো বেশী উল্লেখ করেনঃ “যখন মাথা মাসেহ করে তখন ঐরূপ হয়।” আবদুল্লাহ সুনাবেহী (রাঃ) নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “বান্দা ওযু করতে গিয়ে যখন কুলি করে, তখন তার মুখের মধ্যে থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। যখন নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়ে, তখন তার নাক থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। যখন মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমন্ডল থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি চোখের পাতার প্রান্তদেশ থেকেও। যখন হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় হাতের পাপরাশি ঝরে পড়ে, এমনকি তার উভয় হাতের নখের নীচ থেকেও। যখন মাথা মাসেহ করে, তখন তার মাথা থেকে পাপসমূহ বেরিয়ে যায়, এমনকি তার উভয় কান থেকেও। যখন পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় পা থেকে পাপসমূহ ঝরে পড়ে, এমনকি তার উভয় পায়ের নখের নীচ থেকেও। অতঃপর মসজিদে গমন ও সালাত আদায় তার জন্য নফল বা অতিরিক্ত হয়।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুয়াত্বা মালেক, নাসাঈ, ইবনু মাজহ ও হাকেম। হাকেম বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ) আমর ইবনু আনবাসা আসসুলামী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাহেলী যুগে যখন ছিলাম, ধারণা করতাম- সব মানুষই প্রথভ্ৰষ্টতায় নিমজ্জিত। তারা কোন হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। সে সময় মানুষ মুর্তি পুজা করত। অতঃপর মক্কার এক ব্যক্তি সম্পর্কে শুনতে পেলাম, তিনি বিভিন্ন ধরণের সংবাদ দিচ্ছেন। (তাঁর সাক্ষাতের উদ্দেশ্য) আমি বাহনে আরোহন করলাম এবং তাঁর কাছে আগমণ করলাম। দেখলাম তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। (এ ভাবে তিনি হাদীছ উল্লেখ করে বললেন) অতঃপর আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী! ওযু সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন? তিনি বললেনঃ “তোমাদের কোন ব্যক্তি ওযুর পানি নিকটে নিয়ে আসে, অতঃপর যখন কুলি করে, নাকে পানি দেয় ও নাক ঝাড়ে, তখন তার মুখের ভিতর থেকে ও নাকের ছিদ্র থেকে সকল পাপ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে যখন মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার মুখমন্ডলের দাড়ির শেষ প্রান্ত থেকে পাপ সমূহ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর যখন হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহের শেষ প্রান্ত থেকে পাপ সমূহ পড়ে যায়। অতঃপর মাথা মাসেহ করে, তখন পানির সাথে তার মাথার চুলের শেষ ভাগ থেকে পাপ সমূহ খসে পড়ে। অতঃপর পদদ্বয় টাখনুসহ ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার উভয় পায়ের আঙ্গুল সমূহের শেষ প্রান্ত থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। অতঃপর সে ব্যক্তি যদি দন্ডায়মান হয়ে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করে ও গুণকীর্তন করে, তিনি যে সকল গুণের অধিকারী তা দ্বারা তার গুণগান বর্ণনা করে এবং একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য তার অন্তরকে অন্য চিন্তা মুক্ত করে। তবে সে তার গুণাহ থেকে এমন দিনের ন্যায় নিস্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে, যে দিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় জন্ম দিয়েছিল।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম) আবু উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে কোন ব্যক্তি সালাতের ইচ্ছায় ওযুর পানি নেয়, অতঃপর উভয় হাতের কজি ধৌত করে, তখন পানির প্রথম বিন্দুর সাথে তার উভয় কব্জির প্রতিটি পাপ নেমে যায়। অতঃপর যখন কুলি করে, নাকে পানি দেয় ও নাক ঝাড়ে তখন পানির প্রথম ফোঁটার সাথে তার জিহ্বা ও উভয় ঠোঁটের পাপ ঝরে পড়ে যায়। যখন মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন পানির প্রথম ফোঁটার সাথে তার কান ও চোখের প্রতিটি পাপ ঝরে পড়ে যায়। যখন উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করে, তখন সে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে এমন দিনের ন্যায় পবিত্র হয়, যে দিন তার মাতা তাকে (নিস্পাপাবস্থায়) ভূমিষ্ট করেছিল। তিনি বলেনঃ যখন সে সালাতে দন্ডায়মান হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।যখন সে নামায শেষ করে বসে তখন পাপ মুক্ত অবস্থায় বসে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ) (সহীহ লি গাইরিহী) ইমাম আহমাদ অন্য একটি সহীহ সনদে হাদীছটি এরূপই বর্ণনা করেন। তবে সেখানে আরো বেশী উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ الوضوء يُكفر ما قبله ثم تصير الصلاة نافلة “ওযু পূর্বের পাপরাশি মোচন করে দেয়। অতঃপর নামায হয়ে যায় নফল বা অতিরিক্ত।” (সহীহ লি গাইরিহী) ইমাম আহমাদ অন্য সনদে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ إِذَا تَوَضَّأَ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ خَرَجَتْ ذُنُوبُهُ مِنْ سَمْعِهِ وَبَصَرِهِ وَيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ، فَإِنْ قَعَدَ قَعَدَ مَغْفُورًا لَهُ “যখন মুসলিম ব্যক্তি ওযু করে, তখন তার চোখ, কান, উভয় হাত ও উভয় পায়ের পাপসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে (সালাত শেষ করে) বসে, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (হাদীছটির সনদ হাসান) (সহীহ লি গাইরিহী) আহমাদের অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ إذا توضأ المسلم فغسل يديه كفر عنه ما عملت يداه فإذا غسل وجهه كفر عنه ما نظرت إليه عيناه وإذا مسح برأسه كفر به ما سمعت أذناه فإذا غسل رجليه كفر عنه ما مشت إليه قدماه ثم يقوم إلى الصلاة فهي فضيلة “যখন মুসলিম ব্যক্তি ওযু করে, অতঃপর তার হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় হাত দ্বারা কৃত কর্মের কাফফারা হয়ে যায়। যখন সে মুখমন্ডল ধৌত করে, তখন উভয় চোখ দিয়ে সে যে দিকে দৃষ্টিপাত করেছে তার কাফফারা হয়ে যায়। যখন সে মাথা মাসেহ করে, তখন তার উভয় কান যা শুনেছে তার কাফফারা হয়ে যায়। যখন সে পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় পা যে দিকে চলেছে তার কাফফারা হয়ে যায়। অতঃপর সে ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার ছালাত হয় অতিরিক্ত।” (এ হাদীছটির সনদও হাসান) ত্বাবরানীর {কাবীর} গ্রন্থে একটি রেওয়ায়াতে রয়েছে। আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীছটি সাতবার না শুনতাম, তবে তা বর্ণনা করতাম না। তিনি বলেনঃ إذا توضأ الرجل كما أمر ذهب الإثم من سمعه وبصره ويديه ورجليه “যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবে যদি কোন ব্যক্তি ওযু করে, তবে তার কান, চোখ, উভয় হাত ও উভয় পায়ের পাপসমূহ দূর হয়ে যাবে।” (এ হাদীছটির সনদও হাসান) ছালাবা বিন আব্বাদ ছালাবা বিন আব্বাদ তাঁর পিতা আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি জানি না কয়বার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এককভাবে বা অন্যের উপস্থিতিতে হাদীছটি আমার সামনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ “যখনই কোন বান্দা ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পাদন করে (ওযু অবস্থায়) চিবুকে পানি বইয়ে মুখমন্ডল ধৌত করে, অতঃপর কনুইর উপর পানি বইয়ে উভয় হাত ধৌত করে, টাখনুর উপর পানি বইয়ে উভয় পা ধৌত করে। অতঃপর দন্ডায়মান হয়ে সালাত আদায় করে, তবে তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (ত্বাবরানী [কাবীর গ্রন্থে] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আবু মালিক আলি আশআরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [১] ‘আলহামদু লিল্লাহ’ মীযান বা (হিসাবের) পাল্লাকে ভারী করে দিবে। সুবহানাল্লা ও আলহামদু লিল্লাহ আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণ করে দেয়। [২] সালাত নূর বা আলোকবর্তিকা। [৩] দান-সাদকা দলীল। [৪] ধৈর্য উজ্জলতা। [৫] কুরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে দলীল। [৬] প্রতিটি মানুষ সকাল করে, অতঃপর সে নিজেকে বিক্রয় করে, তাতে সে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় অথবা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। [৭]” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ) তবে ইবনু মাজাহর রেওয়ায়াতে বলা হয়েছেঃ “পরিপূর্ণরূপে ওযু করা ঈমানের অর্ধেক।” ইমাম নাসাঈও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায়, প্রতিটি মানুষ সকাল করে... কথাটি নেই। উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যে কোন মুসলিম ব্যক্তি ওযু করে এবং পরিপূর্ণরূপে তা সম্পাদন করে, অতঃপর সালাতে দন্ডায়মান হয়। সে জানে কি সে বলছে স্বীয় সালাতে, তবে সালাত থেকে সে ফিরে আসে এমন নিস্পাপ অবস্থায় যে দিন তার মাতা তাকে ভূমিষ্ট করেছিল।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম, হাদীছের বাক্য হাকেমের। তিনি বলেন, সনদ সহীহ) আলী বিন আবী তালেব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “প্রচন্ড ঠান্ডার কষ্ট স্বীকার করে পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, পদযুগলকে মসজিদের দিকে ব্যবহার করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা— (এসব কাজ) পাপ সমূহকে ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু ইয়ালা, বাযযার ও হাকেম। হাকেম বলেন, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, কোন কাজ পাপসমূহ মিটিয়ে দেয় ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়?” তারা বললেন, হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ “প্রচন্ড ঠান্ডার কষ্ট স্বীকার করে পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা [১] – এগুলোই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য, এটিই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য, এগুলোই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য।” [২] (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুআত্বা মালেক, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ ও একই অর্থে ইবনু মাজাহ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) উক্ত হাদীছটি ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বানও বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে। তবে তাদের বর্ণনাভঙ্গি এইভাবেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, কোন কাজ দ্বারা আল্লাহ পাপসমূহকে মোচন করেন, নেকীর পাল্লা ভারী করেন ও গুণাহ সমুহের কাফফারা করেন?” তাঁরা বললেন, হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ “কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা- এগুলোই হলো তোমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সীমান্তে জিহাদে লিপ্ত থাকার সমতুল্য।” (ইবনু হিব্ববান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীছটি শুরাহবীল বিন সাদ এর বরাতে আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আজ রাতে স্বপ্নযোগে আমার পালনকর্তা সবেত্তম আকৃতিতে আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ কি বিষয় নিয়ে পরস্পর বির্তক করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তা হচ্ছে মর্যাদা উন্নীত করণ, পাপ মোচন, জামাআতে নামায আদায় করার জন্য পা উঠিয়ে মসজিদে যাওয়া, কঠিন ঠান্ডার সময় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, এক নামায আদায় করার পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। যে ব্যক্তি এগুলোর প্রতি যত্নবান হবে সে কল্যাণের সাথে জীবন-যাপন করবে এবং কল্যাণের মাঝে তার মৃত্যু হবে। আর সে তার পাপ থেকে এমনভাবে মুক্ত হবে যেমন তার মাতা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ট করেছিল।” (ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) [১] উছমান বিন আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে যে ব্যক্তি ওযু করবে, তার ফরয সালাত সমূহ একটি অপরটির মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা স্বরূপ হবে।” (নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ সহীহ সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) আবু আইয়ুব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে যে ব্যক্তি ওযু সম্পাদন করবে, যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবে সালাত আদায় করবে, তার পূর্বকৃত আমলের পাপ ক্ষমা করা হবে।” (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, দারেমী, আহমাদ ও ইবনু হিব্বান) [১] তবে ইবনু হিব্বান বলেনঃ “তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।”
ওযুর প্রতি যত্নশীল হওয়া ও নতুনভাবে ওযু করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করণঃ
ছাওবান (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা সত্য ও সঠিক পথের উপর অটল ও অবিচল থাক। আমলের ছোয়াব গণনা করে রেখো না। জেনে রেখো তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল, সালাত। আর মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ ওযুর প্রতি যত্নশীল হয় না।” (ইবনু মাজাহ সহীহ সনদে এবং হাকেম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন) সহীহ ইবনু হিব্বানের বর্ণনায় হাদীসের প্রথমাংশে উল্লেখিত হয়েছেঃ سددوا وقاربوا واعلموا أن خير أعمالكم الصلاة “তোমরা সঠিক পথ অনুসন্ধান করে তদানুযায়ী আমল কর এবং তার নিকটবর্তী থাকার চেষ্টা কর। বাড়াবাড়ী ও শিথীলতা পরিহার কর। আর জেনে রেখো তোমাদের সর্বোত্তম আমল হল সালাত…।” লাইছ বিন আবু সুলাইমের বরাতে মুজাহিদ ইবনু মাজাহ হাদীছটি লাইছ বিন আবু সুলাইমের বরাতে মুজাহিদ থেকে, তিনি আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী এমনিভাবে তিনি (ইবনু মাজাহ) আবু হাফছের (তিনি মাজহুল বা অজ্ঞাত রাবী) বরাতে আবু উমামাহ থেকে মারফূ’ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “আমার উম্মতের উপর আমি যদি কঠিন মনে না করতাম, তবে তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় ওযু করার আদেশ করতাম এবং প্রত্যেক ওযুর সাথে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” (হাসান সনদে আহমাদ হাদীছটি রেওয়ায়াত করেন)