11. শিরক
শিরক
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকটে কোন্ গোনাহটি সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর কোন সমকক্ষ সাব্যস্ত করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, তোমার সন্তানকে হত্যা করা এই ভয়ে যে, সে তোমার সাথে খাবে (অর্থাৎ দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা)। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একথারই সত্যায়ন করে আল্লাহ পাক (নেক্কার লোকদের প্রশংসায় আয়াত নাযিল করেন, ‘আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহ্বান করে না এবং যারা অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করে না যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন এবং যারা ব্যভিচার করে না’ (ফুরক্বান ৬৮; বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন যে, ‘কাবীরা গোনাহ সমূহ হল- (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) পিতামাতার অবাধ্য হওয়া (৩) মানুষ হত্যা করা এবং (৪) মিথ্যা শপথ করা’ (বুখারী হা/৬৬৭৫)। কিন্তু আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় ‘মিথ্যা শপথ’-এর বদলে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ শব্দ এসেছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে দূরে থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, সেগুলি কী? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা (২) জাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল (অন্যায়ভাবে) ভক্ষণ করা (৬) জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরলা নির্দোষ মুমিন মহিলাদের নামে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২)। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ১০টি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না। যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় (২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না। যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার ও মাল-সম্পদ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ফরয ছালাত ত্যাগ করবে না। তার পক্ষে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যাবে (৪) কখনোই মাদক সেবন করবে না। কেননা এটিই হল সকল অশ্লীলতার মূল (৫) সর্বদা গোনাহ থেকে দূরে থাকবে। কেননা গোনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয় (৬) সাবধান! জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করবে না। যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়। (৭) যদি কোথাও মহামারী দেখা দেয়, এমতাবস্থায় তুমি যদি সেখানে থাক, তাহলে তুমি সেখানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে (মৃত্যুর ভয়ে পালাবে না)। (৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (অযথা কৃপণতা করে তাদের কষ্ট দিবে না)। (৯) তাদের উপর থেকে শাসনের লাঠি তুলে নিবে না এবং (১০) তাদেরকে সর্বদা আল্লাহর ভয় দেখাবে’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৬১)। জাবির (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করবে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করবে না সে জান্নাতে যাবে’ (মুসলিম, মিশকাত, বাংলা মিশকাত ১ম খণ্ড হা/৩৪, ‘ঈমান’ অধ্যায় হা/৩৮)। আনাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬)। উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তা‘বীয ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না। আর যে কড়ি ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না’ (আহমাদ হা/১৬৭৬৩, হাদীছ ছহীহ)। উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দলটির ৯ জনকে বায়‘আত করালেন এবং একজনকে বায়‘আত করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি ৯ জনকে বায়‘আত করালেন আর একজনকে ছেড়ে দিলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তার সাথে একটি তা‘বীয রয়েছে’। তখন লোকটি হাত ভিতরে ঢুকিয়ে তা‘বীয ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকেও বায়‘আত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তা‘বীয ব্যবহার করল সে শির্ক করল’ (আহমাদ হা/১৬৭৭১, হাদীছ ছহীহ)। রুওয়াইফী‘আ ইবনু ছাবিত (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হে রুওয়াইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেক দিন বেঁচে থাকবে। সুতরাং তুমি লোকদেরকে এ কথা বলে দিও যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিট দিল অথবা তা‘বীয জাতীয় বেল্ট বা সুতা (ছেলে-মেয়ের বা প্রাণীর গলায়) পরাল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইসতেঞ্জা করল, নিশ্চয়ই তার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোন সম্পর্ক নেই’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৩৫১ সনদ ছহীহ, বাংলা মিশকাত ২য় খণ্ড, হা/৩২৪ ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ)। হাফছাহ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করবে ৪০ দিন তার ছালাত কবুল করা হবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩৯৩ ‘জ্যোতিষীর গণনা’ অনুচ্ছেদ)। আবূ হুরাইরা ও হাসান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট আসল এবং তার বলা কথার প্রতি বিশ্বাস করল সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর যা (কুরআন মাজীদ) অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করল’ (আহমাদ ২/৪২৯পৃঃ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাতের রাশি দেখে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা, হাত চালিয়ে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর সংবাদ দেয়া, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা গণকের নিকট হারিয়ে যাওয়া বস্তু জানতে চাওয়া এগুলো সবই শিরক। আবু ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী (রাঃ) আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে হুনাইনের (যুদ্ধের) উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। এক স্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুল গাছ ছিল যার চারপাশে তারা বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা (যাতুল আনওয়াত) বলত। আমরা একদিন একটি কুল গাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের যেমন নির্ধারিত গাছ আছে আমাদের জন্যও তেমনি একটি গাছ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহু আকবার’ তোমাদের এ দাবী পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথা বলেছ যা বনী ইসরাঈলরা মূসা (আঃ)-কে বলেছিল। তারা বলেছিল, হে মূসা! মুশরিকদের যেমন মা‘বূদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা‘বূদ বানিয়ে দাও। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা মূর্খের মত কথাবার্তা বলছ’ (আ‘রাফ ১৩৮)। ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ’ (তিরমিযী হা/২১০৬, হাদীছ ছহীহ)। অত্র কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন কিছুর মাধ্যমে বরকত হাছিল করা শিরক। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মানত করে সে যেন তা পুরা করার মাধ্যমে আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত করে সে যেন আল্লাহর নাফরমানী না করে (মানত পূরণ না করে)’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৪২৭, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড হা/৩২৮১)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নামে বৈধ স্থানে মানত মানা যায় এবং তা পালন করা যরূরী (বাক্বারাহ ২৭)। খাওলাহ বিনতে হাকীম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোন বাড়িতে বা স্থানে অবতীর্ণ হয়ে বলবে, أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‘আমি আল্লাহর পূর্ণ কালামের নিকট তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই’। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ স্থান ত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২২, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৫ম খণ্ড, হা/২৩১০ ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এগুলি হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তিদের নাম, তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলির নামকরণ কর। তখন তারা তাই করল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি, কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করল এবং মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলির ইবাদত শুরু হল’ (বুখারী ২/৭৩২ পৃঃ)। অত্র হাদীছে মূর্তিপূজার সূচনা প্রমাণিত হয়। আয়েশা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষ অসুখে বলেছিলেন, ‘ইহুদী-খৃষ্টানদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭১২ বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২য় খণ্ড হা/৬৫৯ ‘মসজিদসমূহ ও ছালাতের স্থান’ অনুচ্ছেদ)। জুনদুব (রাঃ) আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘মনে রেখ নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী এবং নেককার লোকদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা ক্ববরকে মসজিদ বানাইওনা। আমি তোমাদেরকে ক্ববরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করছি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) (মক্কা বিজয়ের দিন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কা‘বা ঘরের চারপাশে তিনশ’ ষাটটি মূর্তি ছিল। তখন তিনি তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই’ (বানী ইসরাঈল ৮১)। ‘সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে’ (বুখারী হা/৪৭২০)। আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ক্ববরকে মূর্তিতে পরিণত করো না যার ইবাদত করা হবে। আল্লাহ ঐ জাতির উপর রাগান্বিত হয়েছেন যারা তাদের নবীগণের ক্ববরকে মসজিদে পরিণত করেছে’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৭৫০ সনদ ছহীহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২য় খণ্ড হা/৬৯৪)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক; তার একটি হচ্ছে যাদু (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ১ম খণ্ড, হা/৪৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)। বাজালাহ ইবনু আবাদাহ ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় বলেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’ (বুখারী, বায়হাক্বী, আল-কাবায়ির ২৬ পৃঃ)। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, (৩) যাদুর প্রতি বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৩৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড হা/৩৪৮৯ ‘মদের বিবরণ ও মদ্যপায়ীর প্রতি ভীতিপ্রদগণ’ অনুচ্ছেদ)। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘দীন ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, পেঁচা পাখির ডাকের মন্দ প্রতিক্রিয়া, পেটে পীড়াদায়ক সাপ, নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ভুত বা দ্বৈত বলে কিছু নেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৭৮-৪৫৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৪৩৭৬-৭৭ ‘শুভ ও অশুভ লক্ষণ’ অনুচ্ছেদ)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অশুভ বা কুলক্ষণ ফল গ্রহণ করা শির্কী কাজ। কথাটি তিনি তিনবার বললেন (আবূদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩৮২)। ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কুলক্ষণ বা অশুভ ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলত শির্ক করল। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এর কাফ্ফারা কী? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা এ দো‘আ পড়- اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ‘হে আল্লাহ! তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোন মঙ্গল নেই। তোমার অশুভ ছাড়া কোন অশুভ নেই এবং তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই’ (আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫, ৩/৫৪ পৃষ্ঠা)। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি অংশীদারদের অংশীদারিত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আমি ঐ অংশীদারকেও অংশীদারীকে প্রত্যাখ্যান করি’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আমি ঐ ব্যক্তির কর্ম হতে মুক্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩১৫ বঙ্গানুবাদ ৯ম খণ্ড হা/৫০৮৪)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করছিলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না? যে বিষয়টি আমার কাছে দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? ছাহাবীগণ বললেন, জ্বি হাঁ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা হচ্ছে গোপন শির্ক । (আর এর উদাহরণ হচ্ছে) একজন মানুষ ছালাতে দাঁড়িয়ে এই খেয়ালে ছালাত আদায় করে যে, কোন মানুষ তার ছালাত আদায় করা দেখছে’ (ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৫৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড হা/৫১০১)। আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেছেন। মানুষের প্রশংসা এবং সম্মান অর্জনের জন্য কোন আমল করা। অথবা কেবলমাত্র পার্থিব কোন স্বার্থের জন্য কাজ করা, যা মানুষের খুলুছিয়াত এবং তাওহীদকে কলুষিত করে। লোক দেখানো, সুনাম অর্জন, নেতৃত্ব দান, দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়গুলোর কোন একটি আল্লাহর ইবাদতের দ্বারা আশা করা শিরক।