16. সৃষ্টির প্রতি দয়া

【1】

সৃষ্টির প্রতি দয়া

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৭)। আয়েশা (রাঃ) একদা এক বেদুঈন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে আসল (সে দেখল ছাহাবায়ে কেরাম নিজেদের শিশু সন্তানদের চুমু দিয়ে আদর করছেন।) তখন সে বলল, তোমরা কি শিশুদেরকে চুম্বন কর? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার অন্তর হতে স্নেহ-মমতা বের করে ফেলেন তবে আমি কি তা বাধা দিতে সক্ষম হব?’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৮)। আয়েশা (রাঃ) একদা এক মহিলা তার দু’টি কন্যা সাথে নিয়ে আমার কাছে আসল। মহিলাটি আমার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। সে তা দুই ভাগ করে তার দুই কন্যাকে দিলো এবং নিজে তা থেকে কিছু খেল না। তারপর সে উঠে চলে গেলো। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাড়িতে প্রবেশ করলেন। আমি ঘটনাটি তাঁর কাছে পেশ করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে, তাহলে এই কন্যাগণ তার জন্য জাহান্নামের অন্তরাল হবে’ (বুখারী হা/৫৯৯৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৯)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন করবে তাদের পূর্ণ বয়স্কা হওয়া পর্যন্ত, ক্বিয়ামতের দিন সে আমার সাথে এভাবে আসবে। এ বলে তিনি নিজের আঙ্গুলসমূহ একত্রিত করে দেখালেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫০)। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকীনদের সহযোগী আল্লাহর পথে জিহাদকারীর ন্যায় এবং তাহাজ্জুদগুযার ব্যক্তির ন্যায়, যে অলস হয় না এবং এমন ছিয়াম পালনকারীর ন্যায়, যে ইফতার করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫১)। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি ও ইয়াতীম পালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তরজনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৯৫২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন সমস্ত শরীর তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৩)। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সকল মুমিন এক ব্যক্তির মত, যদি তার চক্ষু অসুস্থ হয় তখন তার সর্বাঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার সমস্ত শরীরই ব্যথিত হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৪)। আবু মূসা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘একজন মু‘মিন অপর মুমিনের জন্য এক গৃহের মত, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি এক হাতের অঙ্গুলীগুলি অপর হাতের অঙ্গুলীর মধ্যে প্রবিষ্ট করলেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৫)। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যখন কোন ভিক্ষুক বা অভাবী আসত তখন তিনি ছাহাবীদেরকে বলতেন, ‘তোমরা সুপারিশ কর, এতে তোমাদেরকে নেকী দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের মুখ দিয়ে যে ফায়ছালা চান তা জারি করবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৬)। আনাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি তোমার (মুসলমান) ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! অত্যাচারিতকে তো সাহায্য করব, কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহয্য করব? তিনি বললেন, তাকে যুলুম করা হতে বিরত রাখ। এটাই হল তার প্রতি তোমার সাহায্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৭)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেন না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ- ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৮)।