1. পবিত্রতা
পানি
সাগর বা সমুদ্রের পানি পবিত্র
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল। চারজন এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। শব্দ বিন্যাস আবূ শাইবার, ইবনু খুযাইমাহ ও তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ বিন্ হাম্বালও এটি বর্ণনা করেছেন। [১] হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
পানির মূল পবিত্র অবস্থায় বহাল থাকা
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘নিশ্চয়ই পানি পবিত্র জিনিস, কোন কিছুই তাকে অপবিত্র করতে পারে না।’-৩ জনে; [২] আহমাদ একে সহীহ্ বলেছেন। [৩] হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
নাপাক বা ময়লা মিশ্রিত পানির বিধান
আবূ উমামাহ বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয় পানিকে কোন কিছু অপবিত্র করতে পারে না তবে যা তার ঘ্রাণ, স্বাদ ও রঙকে পরিবর্তন করে দেয়।” – ইবনু মাজাহ, [৪] আবূ হাতিম এটিকে য’ঈফ বলেছেন। তবে হাদিসের প্রথম অংশ সহিহ [৫] বর্ণনাকারী বাইহাকীতে রয়েছে “পানি পবিত্র তবে কোন নাজাসাত (অপবিত্র বস্তু) পড়ার কারণে পানির ঘ্রাণ, স্বাদ ও রঙকে নষ্ট ও পরিবর্তন হলে সেই পানি অপবিত্র হয়ে যাবে।” [৬]
কী পরিমাণ পানি অপবিত্র হবে; আর কী পরিমান পানি অপবিত্র হবে না
‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘পানির পরিমাণ যদি দু’কুল্লা (কুল্লা হচ্ছে বড় আকারের মাটির পাত্র বিশেষ যাতে প্রায় একশত তের কেজি পানি আটে।) (মটকা) হয় তবে তার মধ্যে কোন অপবিত্র বস্তু পড়লে তা না-পাক হবে না।’ (চারজনে এটি বর্ণনা করেছেন এবং ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান এক সহীহ বলেছেন।) [৭]
আবদ্ধ বা স্থির পানিতে পেশাব করা এবং তাতে ফরয গোসল করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অপবিত্র (জুনুবী) অবস্থায় কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে (নেমে) গোসল না করে। [৮] বুখারীর বর্ণনায় আছে, “কোন ব্যক্তি যেন স্রোত নেই এমন আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করার পর তাতে নেমে আবার গোসল না করে।” [৯] সহিহ মুসলিমে ফীহি শব্দের পরিবর্তে মিনহু (উক্ত বর্ণনাকারী থেকে) শব্দ রয়েছে। [১০] আর আবূ দাঊদে রয়েছেঃ “অপবিত্র অবস্থায় তাতে যেন (নেমে) গোসল না করে।” [১১]
পুরুষ এবং নারীর একে অপরের গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করা নিষেধ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর জনৈক সহাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুনুবী পুরুষের গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নারীকে আর নারীর অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষের গোসল করতে নিষেধ করেছেন, বরং তারা যেন পাত্র হতে একই সঙ্গে আজলা-আজলা করে পানি উঠিয়ে নিয়ে গোসল করে।‘ -আবূ দাঊদ, নাসায়ী এটি বর্ণনা করেছেন এবং এর সানাদটি সহীহ্। [১২] হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
স্ত্রীর গোসলের অবশিষ্ট দ্বারা পুরুষের গোসল বৈধ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমূনা (রাঃ) এ’র গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করতেন।’ (মুসলিম) [১৩] বর্ণনাকারী সুনান চতুষ্টয় (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ) -র বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছেঃ “গামলার পানিতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জনৈক স্ত্রী গোসল করেছিলেন, অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর (অবশিষ্ট) পানি দিয়ে গোসল করতে এলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, আমি তো (জুনুবী) অপবিত্র ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পানি তো আর অপবিত্র হয় না।‘ তিরমিযী ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। [১৪]
যে পাত্রে কুকুর চাটবে সে পাত্র পবিত্রকরণের পদ্ধতি
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ ‘কুকুর কোন পাত্র চাটলে সেই পাত্রকে পবিত্র করতে সাতবার সেটিকে পরিষ্কার করে ধুতে হবে-তার প্রথম বার মাঠি দিয়ে (মাজতে হবে)।’ [১৫] মুসলিমের আরেক বর্ণনায় “সেটির (চেটে রাখা ) উচ্ছৃষ্ট বস্তু ফেলে দিবে” কথাটি রয়েছে। [১৬] আর তিরমিযীতে আছে, ‘শেষের বার অথবা প্রথমবার মাটি দিয়ে (মেজে নিয়ে ধুবে)। [১৭]
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) আল্লাহ্র রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়াল প্রসঙ্গে বলেছেন, “সে অপবিত্র নয় এবং তোমাদের মাঝে চলাফেরা করতে থাকে” । তিরমিযী ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। [১৮]
জমিনকে পেশাব হতে পবিত্রকরণের পদ্ধতি
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা জনৈক বেদুঈন এসে মাসজিদের এক পাশে পেশাব করে দিল। তা দেখে লোকজন তাকে ধমক দিতে লাগল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিষেধ করলেন। সে তার পেশাব করা শেষ করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আদেশ এর উপর এক বালতি পানি ঢেলে দেয়া হল”। (মুত্তাফাকুন আলাইহ) [১৯]
মাছ ও পঙ্গপাল পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে পানি অপবিত্র হবে না
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্যরূপে ‘দু’প্রকারের মৃত প্রাণী এবং দু’প্রকার রক্তকে আমাদের (মুসলিমদের) জন্য হালাল করা হয়েছে। দু’প্রকার মৃত প্রাণী হচ্ছেঃ টিড্ডি (পঙ্গপাল) ও মাছ। এবং রক্তের দু’প্রকার হচ্ছে- (হালাল প্রাণীর) কলিজা ও হৃৎপিণ্ড।’ [২০]
মাছ পানিতে বা অন্য কিছুতে পতিত হয়ে তাকে অপবিত্র করতে পারে না
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের ‘কারো পানীয় বস্তুর মধ্যে মাছি পড়ে তখন সে যেন তাকে তাঁর মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। তারপর তাকে বাইরে ফেলে দেয়। কেননা ওর এক ডানায় রোগ আর অন্য ডানায় আরোগ্য রয়েছে।’ [২১] আবূ দাঊদে (অতিরিক্ত শব্দ) এসেছে; ‘মাছি তার জীবাণু যুক্ত ডানাটি (প্রথমে পানীয়ের মধ্যে ডুবিয়ে) তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। [২২]
জীবিত প্রাণী হতে কর্তিক অংশ মৃত প্রাণী বলে গণ্য
আবূ ওয়াকিদ আল-লায়সী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জীবিত কোন জন্তুর শরীরের অংশ বিশেষ কেটে নেয়ার পর তা (পশুটি) জীবিত থাকলে সেটা (কাটা অংশ) মৃত গণ্য করা হবে। (অর্থাৎ ঐ অংশটি হারাম) আবূ দাঊদ ও তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন এবং শব্দ বিন্যাস তাঁরই । (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন ) [২৩] হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
পাত্র
স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে খাওয়া বা পান করা হারাম
হুযাইফাহ বিন্ ইয়ামান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সোনা ও রূপার পাত্রে পান করো না এবং এগুলোর বাসনে আহার করো না। কেননা দুনিয়াতে এগুলো কাফিরদের জন্য আর আখিরাতে তোমাদের জন্য। [২৪]
রৌপ্যের পাত্রে পান করা অবৈধ
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে সে যেন তার পেটে জাহান্নামের আগুনই ঢক্ ঢক্ করে ভরে নেয়।”
মৃত প্রাণীর চামড়া দাবাগাত করলে পবিত্র হয়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দাবাগাত (বিষেশ পন্থায় পাকানো) দিলে চামড়া পাক হয়ে যায়।" [২৬] আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহতে আছেঃ “যে কোন চামড়া দাবাগত করলে তা পবিত্র হয়।” [২৭] সালামাহ বিন মুহাব্বিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মৃত পশুর চামড়া দাবাগত করা হলেই পাক হয়) ।’ ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [২৮] মাইমুনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একটি মৃত ছাগলের নিকট দিয়ে গমণের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন যে, লোকেরা সেটিকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, এর চামড়াটা যদি নিতে? তারা বললো, এটা তো মৃত ছাগল। তিনি তাদের বললেন, ‘পানি ও বাবলার ছাল একে পবিত্র করে দিবে।’ [২৯]
আহলে কিতাব (ইহুদী-খ্ৰীস্টান) -দের খাবার পাত্র ব্যবহারের বিধান
আবূ শালাবা আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা তো আহলে কিতাব আধুষিত এলাকায় বসবাস করি। তাহলে কি আমরা তাদের পাত্রে আহার করতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেগুলোতে খাবে না। তবে অন্য বাসনপত্র না পাও তবে খেতে পার; যদি না পাও তবে তা ধুয়ে নিয়ে তাতে খাবে।’ [৩০]
মুশরিকদের পাত্র ব্যবহার বৈধ
ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ জনৈকা মুশরিক (বেদ্বীন) মহিলার মাযাদাহ নামের চামড়ার তৈরি পাত্রে পানি নিয়ে ওযু করেছিলেন। এ হাদীসটি বুখারী, মুসলিমের বড় একটি হাদীসের অংশ বিশেষ। [৩১]
রূপার রিং বা আংটা দিয়ে পাত্রের মেরামত বৈধ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একটি পান পাত্র ফেটে গেলে তিনি ফাটা স্থান রূপোর তার পেচিয়ে বেঁধে দেন। [৩২]
নাজাসাত (অপবিত্রতা) দূরীকরণ ও তার বিবরণ
মদ বা শরাবের অপবিত্রতা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, ‘মদকে কি সিরকায় রূপান্তর করা যায়?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না’। -মুসলিম ও তিরমিযী। তিনি একে হাসান সহীহ বলেছেন। [৩৩]
গৃহপালিত গাধার (গোশত) অপবিত্র
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তালহাকে (রাঃ) -আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার যুদ্ধে (লোকেদের মাঝে) এমর্মে ঘোষণা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা ও তার রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে গাধার গোশত হতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা অপবিত্র। [৩৪]
উটের মুখের লালা পবিত্র
আমর বিন খারিজাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় আমাদের মাঝে আরোহীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় খুৎবাহ প্রদান করছিলেন আর তার উটের (মুখ নিঃসৃত) লালা আমার দুকাধের উপর চুয়ে পড়ছিল। (তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) [৩৫]
কাপড় থেকে বীর্য দূরীকরণের পদ্ধতি
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাপড় হতে শুক্র ধুয়ে ফেলে ঐ কাপড়েই সলাত আদায় করতে চলে যেতেন আর ধোয়ার চিহ্নটা আমি কাপড়ের মধ্যে দেখতে পেতাম। [৩৬] বর্ণনাকারী মুসলিমে রয়েছে- ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় হতে আমি শুক্রকে ভালভাবে ঘষে উঠিয়ে দিতাম। অতঃপর তিনি ঐ কাপড় পরিধান করেই সলাত আদায় করতেন। [৩৭] মুসলিমের অন্য শব্দে এরূপ আছে, “শুক্র শুকনো থাকলে তার কাপড় হতে আমি নিজের নখ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে দিতাম। [৩৮]
শিশু ছেলে ও মেয়ের পেশাব যুক্ত কাপড় পবিত্রকরণের পদ্ধতি
আবুস সাম্হি (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘শিশুকন্যার পেশাব লাগলে ধুয়ে ফেলবে আর দুগ্ধপোষ্য পুত্র সন্তানের পেশাব লাগলে তাতে পানি ছিটা দিবে। হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [৩৯]
(মহিলাদের) ঋতুস্রাব রক্তের কাপড় পবিত্রকরণের পদ্ধতি
আসমা (রাঃ) হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে যাওয়া প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পানি দিয়ে ঘষা দিবে তারপর পানি দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করবে। অতঃপর সলাত আদায় করবে।’ [৪০]
মহিলাদের ঋতুস্রাব ধৌত করার পর (কাপড়ে) এর চিহ্ন মার্জনীয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, খাওয়ালাহ বিনতে ইয়াসার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলেছেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি রক্ত-চিহ্ন দূর না হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘কেবল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট, রক্তচিহ্ন তোমার কোন ক্ষতি করবে না।’ - তিরমিযী দুর্বল সানাদে বর্ণনা করছেন। [৪১]
অযূর বিবরণ
অযূর সময় মেসওয়াক করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (রাঃ) এর এরশাদ করেন, ‘আমি আমার উম্মাতের উপর কঠিন হওয়ার ধারণা না করতাম তবে প্রত্যেক উযুর সঙ্গে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম। মালিক, আহমাদ ও নাসায়ী। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন, বুখারি এটিকে মুআল্লাক রুপে বর্ণনা করেছেন। (ইবনু খুযাইমাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) [৪২]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অযূর পদ্ধতি
হুমরান (রাঃ) একদা ‘উসমান (রাঃ) উযুর পানি নিয়ে ডাকলেন এবং তিনি প্রথমে তিনবার দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন, তারপর তিবার তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করলেন। তারপর তিনবার ডান হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। অত:পর বাম হাতও অনুরূপভাবে ধৌত করলেন। অতঃপর তিনবার ডান পা ‘টাখুনু সহ ধৌত করলেন, তারপর বাম পা একইভাবে ধৌত করলেন। তারপর বললেন, ‘আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার এ উযুর মতই উযু করতে দেখেছি। [৪৩]
মাথা একবার মাসাহ করা
আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উযু করার পদ্ধতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাত্র একবার মাথা মাসহ করেছিলেন। -আবূ দাঊদ। নাসায়ী ও তিরমিযী সহীহ সানাদে; বরং তিরমিযী বলেন, এ বাবে বর্ণিত হাদীসগুলির মধ্যে এটি সর্বাধিক সহীহ। [৪৪]
মাথা মাসাহ করার বিবরণ
আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’হাতকে (মাথা মাসহর সময়) সামনে থেকে পিছনে এবং পিছন থেকে সামনে টেনে নিয়ে এলেন। [৪৫] তাদের উভয়ের অন্য বর্ণনায় আছে, মাথার সম্মুখভাগ হতে মাসহ শুরু করলেন এবং হাতদ্বয়কে মাথার শেষ অবধি নিয়ে গেলেন অতঃপর সেখান থেকে হাতদ্বয়কে শুরু করার স্থানে ফিরিয়ে আনলেন। [৪৬]
দু’কান মাসাহ করার বিবরণ
আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) তিনি ওযুর নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা মাসহ করার জন্য তাঁর দু’হাতের শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয়কে তাঁর দু’কানের ছিদ্রে ঢুকালেন ও বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয় দিয়ে দু’কানের উপরিভাগে মাসহ করলেন। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৪৭]
ঘুম থেকে উঠার সময় নাক পরিষ্কার করা শরীয়ত সম্মত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা হতে জাগ্রত হবে তখন সে যেন তিনবার তার নাক ঝেড়ে নেয়, কেননা শয়তান নাকের ছিদ্রপথে রাত্রি যাপন করে। [৪৮]
ঘুম থেকে জাগ্রত ব্যক্তির দু হাতের তালু কোন পাত্রে প্রবেশ করার পুর্বে ধৌত করা আবশ্যক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) ‘তোমাদের কেউ যেন ঘুম থেকে উঠে তিনবার হাত ধুয়ে না নেয়ার পুর্বে পানির পাত্রে না ডুবিয়ে দেয়। কেননা, সেতো জানেনা যে, ঘুমের অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিল। [৪৯]
অযুর পদ্ধতির বিবরন
লাকীত বিন সাবিরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ভালভাবে উযু কর ও আংগুলের ফাকা স্থানে খিলাল কর, সাওম পালনকারি না হলে নাকে পুর্নভাবে পানি প্রবেশ করাও।“ আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৫০] আবূ দাঊদের অন্য বর্ননায় রয়েছে যখন তুমি উযু করবে তখন কুলি করবে। [৫১]
অযুতে দাড়ি খেলাল (ভেজা আংগুল দিয়ে দাড়ির গোড়া ভিজানো) করার বিধান
‘উসমান (রাঃ) নাবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উযু করার সময় তার দাড়ি খিলাল করতেন। [৫২]
অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো ঘষা শরীয়তসম্মত
আব্দুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে দুই তৃতীয়াংশ মুদ (প্রায় আধা সের) পরিমান পানি পেশ করা হলে তিনি তা দিয়ে তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ঘষে ধুতে লাগলেন।’ [৫৩]
মাথা মাসহ করার জন্য নতুন পানি গ্রহন করা শরীয়তসম্মত
আব্দুল্লাহ (রাঃ) ‘তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মাথা মাসাহ -এর অবশিষ্ট পানি ব্যতীত কান মাসহ করতে নতুনভাবে পানি নিতে দেখেছেন। [৫৪] মুসলিমের সুরক্ষিত শব্দ বিন্যাস এরুপ- ‘এবং তিনি তাঁর মাথা মাসহ করেছিলেন। তাঁর হস্তদ্বয়ের অবশিষ্ট পানি ব্যতীত অন্য পানি দিয়ে।’ [৫৫] [হাদিসের প্রথম অংশ শায ও দ্বিতীয় অংশ মাহফুয, শায প্রত্যাখ্যাত ও মাহফুয গ্রহণীয়]
অযুর ফযিলত এবং তার সওয়াবের বিবরন
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, ‘ক্বিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাত অযুর চিহ্ন বহনকারী গুররান মুহাজ্জালীন (উজ্জ্বল মুখমন্ডল ও হাত পা) সহ হাযির হবে। তাই ওই উজ্জলতা যারা বৃদ্ধি করতে সক্ষম তারা যেন তা বৃদ্ধি করে নেয়। [৫৬]
সকল বিষয় বিশেষ করে অযু ডান দিক থেকে শুরু করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জুতা পরিধান করা, চুল আচঁড়ানো, উযু সহ সকল ভাল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন।’ [৫৭]
অযূতে ডান দিক থেকে শুরু করার নির্দেশ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা যখন উযু করবে তখন ডান দিক থেকে আরম্ভ করবে।’ [৫৮]
পাগড়ি সহকারে মাথার সম্মুখভাগ মাসাহ করা যথেষ্ট
মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযু করা কালে তাঁর কপাল, পাগড়ি ও মুজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেছেন।’ [৫৯]
অযূতে ধারাবাহিকতা রক্ষা আবশ্যক
জাবির বিন্ ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘(কুরআনে) আল্লাহ্ যা দিয়ে শুরু করেছেন তোমরাও (সায়ী) তা দিয়ে শুরু কর।’ নাসায়ী আদেশমূলক শব্দে বর্ণনা করেছেন। [৬০] এবং মুসলিমে (এটা বিবৃতি সূচক শব্দ দ্বারা) বর্ণিত হয়েছে। [৬১]
অযূতে দু’কনুইকে অযূর অঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করা
জাবির (রাঃ) ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযু করার সময় তাঁর দু’ কনুই-এর উপর পানি ফিরাতেন।’ –দারাকুতনী দুর্বল সানাদে এটি বর্ণনা করেছেন। [৬২]
অযূতে বিসমিল্লাহ্ বলার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘(ওযুর শুরুতে) যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ্’ না বলে তার ওযু শুদ্ধ হয় না।’ ইবনু মাজাহ এটি দুর্বল সানাদে বর্ণনা করেছেন। [৬৩] বর্ণনাকারী তিরমিযীতে হাদীসটি সা‘ঈদ বিন্ যায়দ থেকে বর্ণিত হয়েছে। [৬৪] আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [৬৫] আহমাদ বলেন, ‘বিসমিল্লাহ্ বলা প্রসঙ্গে কিছু প্রমাণিত নেই।’ [৬৬]
কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার পদ্ধতি
ত্বালহা বিন মুসরিফ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য করতে দেখেছি। (অর্থাৎ দুই কাজে আলাদা আলাদা পানি ব্যবহার করতেন)। আবূ দাঊদ এটি দুর্বল সানাদে বর্ননা করেছেন। [৬৭] আলী (রাঃ) “অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুলি করলেন ও তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে নিলেন। তিনি কুলি করা এবং নাক ঝাড়ার কাজ একবার নেয়া পানিতেই সমাধা করলেন।” –আবূ দাঊদ ও নাসায়ী। [৬৮] আবদুল্লাহ্ বিন্ যায়দ (রাঃ) ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে হাত প্রবেশ করালেন এবং একবারে নেয়া পানিতেই কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনি অনুরূপ তিনবার করলেন। [৬৯]
অযুর মাঝে বিরতি না দেয়া
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তির পায়ে নখ পরিমাণ জায়গায় ওযুর পানি না পৌঁছা দেখে তাকে বললেন, “তুমি ফিরে গিয়ে তোমার ওযুকে ভালভাবে সমাধা কর।” আবূ দাঊদ নাসায়ী এটি বর্ণনা করেছেন। [৭০]
কতটুকু পরিমাণ পানি দিয়ে অযূ ও গোসল যথেষ্ট হবে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ‘মুদ্দ’ (ছয় শত গ্রাম) পানি দিয়ে ওযু ও এক সা‘ (আড়াই কেজির সামান্য বেশী) থেকে পাঁচ ‘মুদ্দ’ পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করতেন।” (এক সা‘ অর্থাৎ ৪ মুদ বা ২৬৬০ গ্রাম) [৭১]
অযূর পর যা বলতে হয়
উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করবে অতঃপর বলবে- উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আহ্দাহু লা-শারীকালাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান্ আবদুহু অ রসূলুহু; আল্লাহুম্মাজ্ আলনী মিনাত্ তওয়াবীন অজ্ আলনী মিনাল মুতাত্বহহেরীন। অর্থঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই, এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল।” যে্ এই দুয়া পাঠ করবে সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে- মুসলিম [৭২] ও তিরমিযী। তিরমিযীতে অতিরিক্ত আছে, “হে আল্লাহ্ আমাকে তওবাহকারী ও পবিত্রতা হাসিলকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কর।” তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেয়া হবে। [৭৩]
মোজার উপর মাসহ
মোজার উপর মাসাহ করার বিদান
মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, ‘আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে (তাবুকের যুদ্ধে) উপস্থিত ছিলাম। তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য উযু করার সময় আমি তাঁর পায়ের মোজা দুটো খুলে নিতে চাইতাম।’ তখন তিনি আমাকে বলনেন, ‘ও দু’টি থাকতে দাও, আমি ওগুলা ওযুর অবস্থায় পরেছিলাম।’ অতঃপর তিনি ঐগুলোর উপর মাসাহ করলেন। [৭৪]
মোজার উপর মাসাহ করার পরিমান
বর্ণনাকারী নাসায়ী ব্যতীত সুন্নান চতুষ্টয়ে (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ) বর্নিত আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চামড়ার মোজার উপরে ও নীচের দিকে মাসাহ করে নিলেন। এটার সানাদ দুর্বল। [৭৫] আলী (রাঃ) তিনি বলেন- ‘দ্বীন যদি কিয়াস বা বুদ্ধির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতো তবে মাসাহ করার ক্ষেত্রে মোজার উপরি ভাগে মাসহ করার চেয়ে নীচের দিক মাসাহ করাই উত্তম (গন্য) হত অবশ্যই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি মোজার উপরিভাগে মাসহ করতে দেখেছি। –আবূ দাঊদ এটিকে হাসান সানাদে বর্ণনা করেছেন। [৭৬]
মাসাহ এর সময়-সীমা। সেটা ছোট নাপাকীর সাথে নির্দিষ্ট
সাফ্ওয়ান বিন্ ‘আসসাল্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ দিতেন যে, ‘আমরা যেন সফরে থাকাবস্থায় তিন দিন তিন রাত জানাবত (ফরয গোসল কারণ) ব্যতীত মোজা না খুলি; এমনকি প্রস্রাব পায়খানা ও ঘুমের পরও নয়। শব্দগুলো তিরমিযী ও ইবনু খুযাইমাহ্র। দু’জনেই এটাকে সহীহ্ বলেছেন। [৭৭] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফির ব্যক্তির পক্ষে তিন দিন তিন রাত ও মুকিম ব্যক্তির পক্ষে এক দিন এক রাত নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ মোজার উপর মাসাহ করার সময়কাল। [৭৮]
পাগড়ির উপর মাসাহ করা বৈধ
সওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূরুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ছোট্ট সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন। তাদেরকে পাগড়ি ও চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করতে আদেশ করেন। হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। [৭৯]
সময় নির্ধারণ ব্যতীত মোজার উপর মাসাহ করা অস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে
উমার (রাঃ) এবং আনাস (রাঃ) “তোমাদের কেউ যখন উযূ অবস্থায় মোজা পরবে সে ইচ্ছ করলে জানাবাত বা অপবিত্রতা ছাড়া মোজা না খুলে তার উপর মাসাহ করবে ও সলাত আদায় করবে; তবে গোসল করা হলে মোজা খুলতে হবে।” - দারাকুৎনী, হাকিম এটিকে সহীহ্ বলেছেন। [৮০]
মাসাহ করারা জন্য পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করা শর্ত
আবূ বাকরাহ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন; “নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাফির ব্যক্তিকে তিন দিন তিন রাত আর মুকীম (স্থানীয়) ব্যক্তিকে এক দিন এক রাত মোজার উপর মাসাহ করার অনুমতি প্রদান করেছেন, যদি সে উযু অবস্থায় মোজা পরিধান করে থাকে।” - দারাকুৎনী, আর এক ইবনু খুযাইমাহ সহীহ্ বলেছেন। [৮১]
সময় নির্ধারণ ব্যতীত মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা
উবাই বিন্ ‘ইমারাহ (রাঃ) তিনি (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে) আরয করলেন, “হে আল্লাহর রসূল! আমি কি মোজার উপর মাসাহ করতে পারি? তিনি বললেন, ‘হাঁ;’ তিনি (সাহাবী) বললেন, ‘দু দিন পর্যন্ত করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ’ তিনি (সাহাবী) বললেন, ‘তিনদিন পর্যন্ত করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ’ আর তুমি যে কদিন ইচ্ছে কর।” আবূ দাঊদের এ বর্ণনা মজবুত নয়। [৮২]
উযু বিনষ্টকারী বিষয় সমূহ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে তাঁর সাহাবাগন ‘ইশার সলাতের জামা‘আতের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন আর নিদ্রায় তাঁদের মাথা ঝুঁকে ঝুঁকে হেলে পড়ত, তারপরও তাঁরা পুনরায় উযু না করেই সলাত আদায় করতেন।” আবূ দাঊদ এবং দারাকুৎনী একে সহীহ্ বলেছেন; [৮৩] মুসলিমে এর মূল বর্ণনা রয়েছে। [৮৪]
ইস্তিহাযার রক্ত অযূকে ভেঙ্গে দেয়
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতে আবী হুবাইশ একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন রক্ত-প্রদর রোগগ্রস্তা (ইস্তি হাযাহ) মহিলা। আমি এখনো পবিত্র হতে পারি না। এমতবস্থায় আমি কি সলাত পরিত্যাগ করবো?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, এতো শিরা হতে নির্গত রক্ত, হায়য নয়। তাই যখন তোমার হায়য আসবে তখন সলাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সলাত আদায় করবে। [৮৫] বুখারীর ইবারতে আছে- “প্রতি ওয়াক্তের সলাত আদায়ের জন্য উযু কর নিবে”। [৮৬] ইমাম মুসলিম এ অংশটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন বলে আভাস দিয়েছেন।
মযীর হুকুম
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি এমন পুরুষ ছিলাম যে, আমার অত্যন্ত বেশি মাযী নিঃসরণ হতো। তাই সহাবী মিক্দাদ (রাঃ) -কে বললামঃ আপনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ প্রসঙ্গে (মুযী বের হলে কি করতে হবে) জিজ্ঞাসা করে নিবেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য ওযু করতে হবে। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [৮৮]
স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করাতে অযূ ভঙ্গ হয় না
আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এক বিবিকে চুমা খেয়ে সলাত আদায় করতে বের হয়ে গেলেন, এতে তিনি পুনঃ উযু করলেন না। আহমাদ, ইমাম বুখারী এক য‘ঈফ বলেছেন। [৮৯]
পবিত্রতার দৃঢ়তা থাকা সত্ত্বেও নাপাকির ব্যাপারে সংশয়ের বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন মুসল্লী যখন তার পেটের মধ্যে কোন (গোলযোগ) অনুভব করবে এবং এতে মনে সন্দেহের সৃষ্টি হবে যে, পেট হতে কিছু (বায়ু) বের হলো কিনা; এমতবস্থায় যতক্ষণ না সে তার কোন শব্দ শোনে বা গন্ধ পায়। সে যেন মাসজিদ থেকে বের হয়ে না যায়।’ [৯০]
পুরুষাংগ স্পর্শে অযূ বিনষ্ট হয় না
ত্বালক্ বিন্ ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সাহাবী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেন, ‘আমি আমার লিঙ্গ স্পর্শ করে ফেলেছি অথবা বললেন, ‘যদি কেউ সলাতে তা স্পর্শ করে ফেলে, তবে এর কারণে কি তাকে উযু করতে হবে?’ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না, এটা তো তোমারই (শরীরের) একটি অংশ বিশেষ। -৫জন। আর ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন [৯১] এবং ইব্নুল্ মাদানী (বুখারীর উস্তাদ) বলেন, বুস্রার হাদীস হতে এটি অধিক উত্তম।
পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে অযূ ভেংগে যায়
বুস্রাহ বিনতে সাফ্ওয়ান (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করবে যে যেন উযু করে’। ৫ জনে ( আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)। তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৯২] আর ইমাম বুখারী বলেন, ‘এ বিষয়ে অধ্যায়ের হাদীসগুলোর মধ্যে এটিই সর্বাধিক সহীহ্।’
অযূ ভঙ্গের কতিপয় কারণসমুহের বর্ণনা
আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে ও ভক্ষিত খাদ্য বস্তু মুখ পর্যন্ত চলে আসে কিংবা মাযী নির্গত হয় সে যেন (সলাত ছেড়ে ) ওযু করে নেয় এবং (এর মধ্যে কারো সাথে) কোন কথা না বলে; তাহলে সে সলাতের বাকী অংশ সমাধান করে নিবে।’ - ইবনু মাজাহ। [৯৩] আহমদ ও প্রমুখ এক য‘ঈফ বলেছেন।
উট ও বকরীর গোশ্ত ভক্ষণের ফলে অযু ভঙ্গ হওয়া , না হওয়ার বিধান
জাবির বিন্ সামুরাহ (রাঃ) কোন এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, মেষ ছাগলের গোশত খেয়ে কি ওযু করবো?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘যদি তুমি চাও’। জিজ্ঞেস করা হলো, ‘উটের গোশত খেয়ে কি ওযু করবো?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হাঁ, করবে’। [৯৪]
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে গোসল করা ও তাকে বহন করলে অযূর বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মৃতকে গোসল করায় যে নিজেও গোসল করে নিবে। আর যে ব্যক্তি কোন (মাইয়িতকে) বহন করবে সে যেন ওযু করে।’ তিরমিযী একে হাসান বলেছেন। [৯৫] ইমাম আহমাদ বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কোন সহীহ্ হাদীস নেই।’
কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা অর্জন শর্ত
‘আবদুল্লাহ বিন আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আমর বিন হযমকে যে পত্র পাঠিয়েছিলেন তাতে ছিল- পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে। ইমাম মালিক একে মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। নাসায়ী ও ইবনু হিব্বান একে ‘মাওসুল’ বলেছেন। হাদীসটি মা‘লুল (দোষযুক্ত) । [৯৬]
যিকর করার জন্য অযূ শর্ত নয়
আয়িশা (রাঃ) ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবসময় আল্লাহর যিকরে মত্ত থাকতেন।’ বুখারী একে মুআল্লাক বা সানাদবিহীন বর্ণনা করেছেন। [৯৭]
পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা ব্যতীত রক্ত নির্গত হলে অযূ নষ্ট হয় না
আনাস বিন মালিক (রাঃ) ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিঙ্গা লাগিয়ে পুনঃ ওযু না করেই সলাত আদায় করেছেন। দারাকুৎসী বর্ণনা করেছেন এবং তিনি একে দুর্বল বলেছেন। [৯৮]
ঘুম অযূ ভঙ্গের সম্ভাব্য কারণ
মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘চক্ষু মলদ্বারের বন্ধনস্বরূপ। চক্ষুদ্বয় ঘুমিয়ে পড়লে উক্ত বন্ধন খুলে যায়। (যার কারণে উযূ নষ্ট হয়ে যায়) -আহমাদ ও ত্বাবারানী। আর তাবারানী অতিরিক্ত শব্দ যোগ করেছেনঃ “যে ঘুমিয়ে পড়ে সে যেন ওযু করে।” এ অতিরিক্ত অংশটুকু আবূ দাঊদেও ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। “তবে এতে ‘বন্ধন খুলে যায়’ অংশটুকু নেই। উক্ত সানাদ দু’টিই দুর্বল। [৯৯]
চিত হয়ে ঘুমালে অযূ ভেঙ্গে যায়
বর্ণনাকারী আবূ দাঊদে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে আর একটি ‘মারফূ’ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি হাত পা বিছিয়ে শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যাবে তাকে উযু করতে হবে।’ এ সানাদেও দুর্বলতা রয়েছে। [১০০]
বনী আদমের পবিত্রতার ব্যাপারে শয়তানের সন্দেহ সৃষ্টিকরণ প্রসঙ্গ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘শয়তান সলাতে তোমাদের কারও নিকট উপস্থিত হয়ে ওযু আছে কি নেই এ নিয়ে মনের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে। যদি কারো এমন হয় তাহলে যেন সে তার বায়ু নির্গত হওয়ার শব্দ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ছেড়ে না দেয়।’ [১০১] বর্ণনাকারী অত্র হাদীসের মূল বক্তব্য বুখারী ও মুসলিমে ‘আবদুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে। [১০২] বর্ণনাকারী মুসলিমেও আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদীস আছে। বর্ণনাকারী আর হাকিমে আবূ সা‘ঈদ হতে ‘মারফু’ রূপে বর্ণিত আছে, “যখন শয়তান তোমাদের কারো নিকট এসে বলে যে, নিশ্চয় তুমি বায়ু নিঃস্বরণ করেছো তখন সে যেন বলে ‘নিশ্চয়ই তুমি মিথ্যা বলছ।” ইবনু হিব্বানে এই শব্দেঃ ‘তুমি মিথ্যে বললে’ কথাটা মনে মনে বলবে। [১০৩]
কাযায়ে হাযাত বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার (পায়খানা প্রস্রাবের) বর্ণনা
যে বস্তুতে আল্লাহর নাম রয়েছে তা নিয়ে পায়খানাতে প্রবেশ করা মাকরূহ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে (পায়খানায়) যেতেন (আল্লাহর নাম খোদিত) আংটি খুলে রাখতেন।’ -৪ জনে (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)। সানাদটি মা‘লুল (ক্ৰটিযুক্ত)। [১০৪]
টয়লেটে প্রবেশ করার সময় যা বলতে হয়
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় ঢোকার সময় (নিম্নোক্ত দু‘আটি) বলতেনঃ (বিসমিল্লাহ) আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি মন্দ পুরুষ ও মহিলা জ্বিনের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। ৭ জনে। [১০৫]
প্রশ্রাব ও পায়খানা করার পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় যেতেন আমি ও আমার মত একটি ছেলে চামড়ার তৈরি পাত্র ও বর্ষা নিয়ে যেতাম। তিনি সে পানি দিয়ে সৌচ কার্য সমাধা করতেন। [১০৬]
প্রশ্রাব ও পায়খানার সময় নিজেকে আড়াল করা ও দূরর্বর্তী স্থানে যাওয়া মুস্তাহাব
মুগীরাহ বিন্ শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘পানির পাত্রটি নাও, তারপর তিনি সামনে চলতে থাকলেন এবং আমার দৃষ্টির আড়ালে গিয়ে প্রয়োজন পূর্ণ করলেন।’ [১০৭]
যে সকল স্থানে পেশাব-পায়খানা নিষিদ্ধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘দু’টি (লা‘নত) তথা অভিশাপ বর্ষণকারী কাজ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখ- ‘(১) যে মানুষ চলাচলের রাস্তায় বা (২) (বিশ্রাম করার) ছায়াতে পায়খানা করা।’ [১০৮] আবূ দাঊদ মু‘আয (রাঃ) “(পুকুর, নদীর) ‘ঘাটে’ শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। [১০৯] আহমাদ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ‘পানি আবদ্ধ থাকে এমন ক্ষেত্রে (পায়খানা করা নিষেধ)।’ এ দু’টি সানাদের মধ্যেই দুর্বলতা আছে। [১১০] বর্ণনাকারী আর তাবারানী বর্ণনা করেছেনঃ ফলদার গাছ-পালার নিচে ও প্রবাহমান নদী নালার কিনারায় পায়খানা করা নিষেধ। ইবনু ‘উমার (রাঃ)- এর বর্ণিত এ হাদীসটির সানাদ য‘ঈফ। [১১১]
পেশাব বা পায়খানা সম্পাদনের অবস্থায় কথা বলা ও পায়খানার নির্দিষ্ট স্থানে বসার পূর্বে পরিধানের কাপড় খোলা নিষিদ্ধ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘দুব্যক্তি যখন একসঙ্গে পায়খানা করতে বসবে তখন একে অপরকে দেখতে না পাওয়া যায় সে জন্য আড়াল করে বসে। আর যেন তারা পরস্পর বাক্যআলাপ না করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এতে অত্যন্ত নাখোশ হন ।’ আহমাদ আর ইবনু সাকান ও ইবনু কাত্তান একে সহীহ্ বলেছেন। হাদীসটি মা‘লূল (ত্রুটিপূর্ণ)। [১১২]
পেশাব ও পায়খানার আদব
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যেন প্রসাব করার সময় তার লিঙ্গ কখনও ডান হাতে না ধরে। শৌচ করতে সময় যেন ডান হাত ব্যবহার না করে আর পানি পান করার সময় যেন পানপাত্রে শ্বাস না ছাড়ে।” শব্দ মুসলিমের। [১১৩] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেনঃ আমরা পায়খানা বা প্রসাব করার সময় যেন কেবলামুখী না হই, ডান হাতে সৌচ কর্ম না করি, তিন খানা পাথরের কমে ইস্তেঞ্জা না করি, আর গোবর ও হাড়ের ইস্তেঞ্জার কাজে যেন বব্যহার না করি ।’ [১১৪]
পেশাব-পায়খানা করার সময় কেবলার দিকে মুখ করে বসার বিধান
আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) ‘তোমরা কিবলাহকে (কা’বা ঘরকে) পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় সামনে পিছনে রাখবে না বরং পূর্ব বা পশ্চিম (ডান বা বাম) রাখবে।” (মদীনাবাসীদের কিবলাহ দক্ষিণে) । [১১৫]
পেশাব পায়খানা করার সময় নিজেকে আড়াল করা আবশ্যক
আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পায়খানায় যাবে সে নিজকে যেন পর্দা (আড়াল) করে নেয়।’ আবূ দাঊদ। [১১৬]
পেশাব-পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় যা বলতে হবে
আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা করে বের হওয়ার সময় বলতেন, গুফরানাকা (তোমার নিকট ক্ষমা চাইছি) - আবূ হাতিম ও হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১১৭] পাঁচজনে বর্ণনা করেছেন।
কমপক্ষে তিনটি পাথর দ্বারা ইস্তঞ্জা করা আবশ্যক
ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা করার স্থানে এসে আমাকে তিনটি পাথর আনতে বললেন। আমি দুটি পাথর পেলাম, তৃতীয়টি পেলাম না। তাই আমি তাঁকে (তৃতীয়টির স্থলে) এক টুকরো শুকনো গোবর দিলাম। তিনি পাথর দু’খানা নিয়ে গোবরখানা ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘এটি অপবিত্র।’ [১১৮] আহমাদ ও দারাকুৎনীঃ “এর বদলে অন্য কিছু নিয়ে এস।” কথাটি বৃদ্ধি করেছেন [১১৯]
যে বস্তু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবে না
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাড় ও গোবর দ্বারা ইস্তেঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, ‘এ দুটি বস্তু (কোন কিছুকে) পবিত্র করতে পারে না। দারাকুৎনী সহীহ বলেছেন। [১২০]
পেশাবের ছিটা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক, আর এর ছিটা কবরের আযাবের কারণ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা প্রসাবের ছিটা হতে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখো। কেননা, সাধারণতঃ কবরের ‘আযাব এর কারণেই হয়ে থাকে।” [১২১] বর্ণনাকারী হাকিমে আছেঃ “অধিকাংশ কবরের ‘শাস্তি প্রসাবের ছিটা থেকে সতর্ক না থাকার কারণেই হয়।” এর সানাদটি সহীহ। [১২২]
পেশাব পায়খানার সময় বাম পায়ের উপর ভর দেয়া
সুরাকাহ বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন: ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে পায়খানা করতে বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে ও ডান পা খাড়া রেখে বসার শিক্ষা দিয়েছেন।’ বাইহাকী’ য‘ঈফ সানাদে । [১২৩]
পেশাবের পরে পুরুষাঙ্গকে টেনে নিংড়িয়ে নেওয়া মুস্তাহাব
ঈসা বিন ইয়াযদাদ (রাঃ) তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন প্রসাব করবে তখন যেন সে তার লিঙ্গকে ৩ বার নিচড়ে বা ঝেড়ে নেয়। ইবনু মাজাহ দুর্বল সানাদে। [১২৪]
ইস্তিঞ্জা করার সময় পানি ও পাথর একত্রিত করার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবাবাসীকে প্রশ্ন করেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সুনাম করেন কেন? “তারা বললো, আমরা সৌচ করার সময় পাথর ব্যবহার করার পর পানিও ব্যবহার করে থাকি।” বাযযার য‘ঈফ সানাদে। [১২৫] বর্ণনাকারী এর মূল বক্তব্য আবূ দাঊদ ও তিরমিযীতে রয়েছে এবং ইবনু খুযাইমাহ আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু পাথরের কথা সেখানে উল্লেখ নেই। (শুধুমাত্র পানির কথা উল্লেখ আছে)। [১২৬]
গোসল ও যৌন অপবিত্র ব্যক্তির (জুনুবী) হুকুম
বীর্য নির্গত না হলে গোসল ফরয হয় না
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্রাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “পানি নির্গত (শুক্রপাত) হলেই পানির ব্যবহার অবধারিত বা ফরয।” [১২৭] এর মূল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে। [১২৮]
সহবাসের পর গোসল করা আবশ্যক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর চার শাখার (অঙ্গের) মধ্যে বসবে (সঙ্গমে লিপ্ত হবে) তখন তার পক্ষে গোসল ফরয হবে।’ [১২৯] মুসলিম এ কথাটি বর্ধিত করেছেন: “যদিও শুক্রপাত না হয়।” [১৩০]
স্ত্রীর বীর্য বা মনী বের হলে গোসল করা আবশ্যক
উম্মু সালামাহ (রাঃ) আবূ তালহাহ এর স্ত্রী উ্ম্মু সুলাইম বলেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ হক কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না, নারীর উপরও কি গোসল ফরজ হবে যদি তার ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) হয়ে থাকে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, যদি সে পানি (কাপড়ে বা দেহে বীর্যের চিহ্ন) দেখে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মেয়েরাও যদি স্বপ্নে (যৌন মিলন) দেখে যা পুরুষরা দেখে থাকে তাহলে তার সম্বন্ধে বলেছেন, (শুক্রের চিহ্ন দেখতে পেলে) “তাকে গোসল করতে হবে।” (মুত্তাফাকুন আলাইহ) [১৩২] মুসলিমে অতিরিক্ত আছে: “অত:পর উম্মু সালামাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললেন, ‘এটা কি হয়! (অর্থাৎ স্বপ্নে কি মেয়েদের বীর্য নির্গত হয়?’ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হ্যাঁ, হয়। নচেৎ সন্তান কিভাবে (মেয়েদের) সাদৃশ্য হয়ে থাকে?’ [১৩৩]
মৃতকে গোসল দিলে গোসল করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি কারণে গোসল করতেন। জুনুবী (সঙ্গমের ফলে অপবিত্র) হলে, জুমু‘আহর দিবসে, সিঙ্গা লাগালে ও মৃতকে গোসল দিলে।’ আবূ দাঊদ, ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [১৩৪]
ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) সুমামাহ বিন উসাল (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইসলাম আনয়নের সময় গোসল দেয়ার আদেশ করেছিলেন।’ আবদুর রাযযাক [১৩৫] এর মূল বক্তব্য বুখারী ও মুসলিমে আছে। [১৩৬]
জুমুআর সালাতের জন্য গোসল করার বিধান
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক সাবালেগ মুসলমানের পক্ষে জুমু‘আর দিন গোসল করা ওয়াযিব।’ [১৩৭] সামূরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন উযু করবে সে ভালোই করবে। আর যে ব্যক্তি গোসল করবে সে আরও উত্তম কাজ করল।’ তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন। [১৩৮]
অপবিত্র শরীর বিশিষ্ট ব্যক্তির কুরআন পাঠ করার বিধান
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন, জুনুবী হওয়ার আগ পর্যন্ত।’ এ শব্দ বিন্যাস তিরমিযীর আর তিনি একে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন এবং ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন। [১৩৯]
একসাথে একাধিক বার স্ত্রী সহবাসে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য অযু করা শরীয়তসম্মত
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পর পুনরায় সঙ্গমের ইচ্ছা করবে সে যেন উভয় সঙ্গমের মাঝে একবার উযূ করে।’ [১৪০] আর হাকিম এ কথাটি বৃদ্ধি করেছেনঃ “পুনর্মিলনের জন্য এটা (ওযু করা) তৃপ্তিদায়ক।” [১৪১]
জুনুবী ব্যক্তি অযু করার পূর্বে ঘুমানোর তার বিধান
আয়িশা (রাঃ) ‘রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কোন সময় পানি ব্যবহার না করেও জুনুবী (গোসল ফরয) অবস্থায় ঘুমাতেন।’ হাদীসটি মা‘লূল (ত্রুটিযুক্ত) । [১৪২]
জানাবাত তথা ফরয গোসল করার পদ্ধতি
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফরয গোসল করতেন তখন প্রথমে দু’ হাত ধুয়ে নিতেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাতে পানি ঢেলে তাঁর গুপ্তাঙ্গ ধৌত করতেন। তারপর উযূ করতেন। তারপর গোসলের জন্য পানি নিতেন এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ মাথার চুলের গোড়ায় প্রবেশ করাতেন। তারপর তাঁর মাথায় তিন আঁজলা পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীরে পানি বইয়ে ধুতেন, তারপর পা ধুতেন।’ মুত্তাফাকুন আলাইহ। আর শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [১৪৩] মায়মূনাহ (রাঃ) “তারপর (হাত ধোয়ার পর) তার গুপ্তাঙ্গে পানি ঢাললেন ও বাম হাত দিয়ে তা ধুয়ে নিলেন, তারপর মাটিতে হাত ঘষে মেজে নিলেন।” অন্য রিওয়ায়াতে আছে, “মাটিতে হাত মাজলেন।” এই বর্ণনার শেষাংশে আছে, ‘আমি (‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে একখানা রুমাল এগিয়ে দিলাম কিন্তু তিনি তা ফেরত দিয়ে দিলেন।’ এতে আরো আছে, ‘এবং তিনি (তাঁর চুলের পানি) হাত দ্বারা ঝাড়তে লাগলেন।’ [১৪৪]
মহিলাদের গোসল করার সময় চুলের বেনী খোলার বিধান
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ‘আমি এমন নারী যে, মাথার চুল শক্তভাবে বেঁধে রাখি এবং আমি জানাবতের (অন্য বর্ণনায়) হায়িয (থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসলের সময় চুলের বেণী কি খুলে ফেলব? ‘তিনি বললেন, ‘না, বরং মাথায় তিন আজলা পানি ঢালাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ [১৪৫]
ঋতুমতী ও জুনুবীর জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি হায়িযা ও যৌন অপবিত্র ব্যক্তির (জুনুবী পুরুষ হোক বা নারী) জন্য মসজিদে অবস্থান বৈধ করিনি।’ ইবনু খুযাইমাহ সহীহ্ বলেছেন। [১৪৬]
স্বামী-স্ত্রী একই পাত্রে একসাথে গোসল করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি ও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পত্র (এর পানি) থেকে জনবতের (ফরয) গোসল করতাম; তাতে আমাদের পরস্পরের হাত পাত্রের মধ্যে আসা যাওয়া করতো।’ [১৪৭] ইবনু হিব্বানে অতিরিক্ত শব্দ এসেছেঃ আমাদের দু'জনের হাত পরস্পরের হাতকে স্পর্শ করতো।’ [১৪৮]
জুনুবী গোসলের জন্য মনোযোগ আবশ্যক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক চুলের গোড়ায় নাপাকী থাকে। অতএব তোমরা (ফরয গোসলের সময়) চুলসমূহ (ভালভাবে) ধুয়ে নাও ও চামড়া পরিষ্কার করো। আবূ দাঊদ ও তিরমিযী একে বর্ণনা করে য‘ঈফ বলেছেন। [১৪৯] আয়িশা (রাঃ) হাদীসে এইরূপই রয়েছে, ‘কিন্তু তাতে একজন মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী আছে।’ [১৫০]
তায়াম্মুম (মাটির সাহায্যে পবিত্রতা অর্জন)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহই ওয়া সাল্লাম) ও তার উম্মতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য, তন্মধ্যে তায়াম্মুম
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকেও দেওয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়; (২) সমস্ত যমীন আমার জন্য পবিত্র ও সলাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সলাত আদায় করতে পারবে যে কোন স্থানে। অতঃপর রাবী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করলেন। [১৫১]
মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা শর্ত
হুযইফাহ (রাঃ) “পানি না পাওয়া গেলে তদস্থলে মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রকারী করা হয়েছে।” [১৫২] আলী (রাঃ) ‘আমার জন্য মাটিকে পবিত্রকারী করা হয়েছে।’ [১৫৩]
তায়াম্মুমের পদ্ধতিতে ছোট-বড় নাপাকির ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই
‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন প্রয়োজনে (কোন এক স্থানে) পাঠালেন। কিন্তু সেখানে আমি জুনুবী হয়ে পড়ি এবং পানি না পাওয়ায় ধূলার উপর (শুয়ে) গড়াগড়ি দেই যেভাবে চতুশ্পদজন্তু গড়াগড়ি দিয়ে থাকে। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে প্রত্যাবর্তন করে আমি তা বর্ণনা করি। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘ঐ অবস্থায় তোমার পক্ষে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, তুমি তোমার হাত দুটিকে এভাবে করতে (তিনি তা দেখাতে গিয়ে) তাঁর দুহাতের তালুকে এক বার মাটির উপরে মারলেন, তারপর বাম হাতকে ডান হাতের উপর মাসহ করলেন এবং তাঁর দুহাতের বাহির ভাগ ও মুখমণ্ডলও মাস্হ করলেন।’ এ শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [১৫৪] বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, “এবং তাঁর হাত দু’টিকে মাটিতে মারলেন এবং দুহাতে ফূঁক দিলেন; তারপর দু’হাত দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাতের দু’ কবজি মাসহ করলেন।” [১৫৫]
তায়াম্মুমের ভিন্ন পদ্ধতির বিবরণ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে দু’ বার হাত মারতে হয়। এক বার মুখমণ্ডলের জন্য আরেক বার কনুই পর্যন্ত দু’হাতের জন্য।’ হাদীসবেত্তাগণ হাদীসটির মওকুফ হওয়াকেই সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন। [১৫৬]
অযুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে তায়াম্মুম নাপাকী দূর করে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মুমিন মুসলিমের জন্য পবিত্র মাটি উযু বিশেষ (অর্থাৎ-পানির স্থলাভিসিক্ত) যদিও সে দশ বছর ধরে পানি না পায়। তারপর পানি পেলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে ও তার দেহে তা ব্যবহার করে (অর্থাৎ পানি দিয়ে উযু করে) ।’ ইবনুল কাত্তান একে সহীহ বলেছেন। কিন্তু দারাকুৎনী এটি মুরসাল হওয়াকেই সঠিক বলেছেন। [১৫৭] আবূ যার (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি একে সহীহও বলেছেন। [১৫৮]
তায়াম্মুম করে নামায পড়ার পর (নামাযের) সময় থাকতেই কেউ পানি পেলে তার বিধান
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘দু-জন সহাবী সফরে বের হলেন। (পথিমধ্যে) সলাতের সময় উপস্থিত হল, কিন্তু তাদের কাছে কোন পানি ছিল না; ফলে তাঁরা উভয়ে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে সলাত আদায় করলেন। তারপর (সলাতে) ওয়াক্ত থাকতেই তাঁরা পানি পেয়ে গেলেন। তাদের মধ্যে একজন উযু করে পুনরায় সলাত আদায় করলেন আর অপর ব্যক্তি তা করলেন না। তারপর তাঁরা উভয়েই নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে জানালেন। যিনি পুনরায় সলাত আদায় করেননি তাঁকে বললেন, তুমি সুন্নাত (নিয়ম) অনুযায়ী ঠিকই করেছ।’ তোমার জন্য ঐ সলাতই যথেষ্ট হয়েছে আর অপর ব্যক্তিটিকে বললেন, ‘তোমার দ্বিগুণ সওয়াব হয়েছে।’ [১৫৯]
অসুস্থ ব্যক্তির (অযুর সময়) পানি ব্যবহার ক্ষতিকর হলে তার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর বাণী ‘যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাকো [১৬০] - এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে কোন জখম বা আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সে জুনুৰী বা অপবিত্র হয়ে পড়ে আর গোসল করতে মৃত্যুর আশংকা করে, তবে মতাবস্থায় সে তায়াম্মুম করবে।” দারাকুৎনী এটিকে মাওকুফরূপে ও বাযযার মারফূ‘রূপে রিওয়ায়াত করেছেন; এবং ইমাম হাকিম ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [১৬১]
পটির উপর মাসাহ করার বিধান
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমার একটি কবজি ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে (করণীয় সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে পট্টির (ব্যান্ডেজ) উপর মাসহ করার নির্দেশ দিলেন।’ ইবনু মাজাহ অতি দুর্বল সানাদে। [১৬২] জাবির বিন ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) এক সহাবী সম্পর্কে বর্ণিত- যিনি গোসল করার পর মারা গিয়েছিলেন। তাঁর জন্য তায়াম্মুমই যথেষ্ট হতো, সে ক্ষতস্থানে পট্টি বেঁধে নিত। অতঃপর তার উপর মাসহ করে নিত এবং বাকি সমস্ত শরীর ধুয়ে নিত।’ আবূ দাঊদ দূর্বল সানাদে এবং তাতে বর্ণনাকারীর ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। [১৬৩]
এক তায়াম্মুম দ্বারা কেবল মাত্র এক ওয়াক্ত সলাত পড়া যায়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘সুন্নাত (পদ্ধতি) হচ্ছে মানুষ তায়াম্মুম দ্বারা মাত্র এক ওয়াক্তেরই সলাত আদায় করবে তারপর অন্য সালাতের জন্য আবারো তায়াম্মুম করবে।’ দারকুতনী অতি দুর্বল সানাদে। [১৬৪]
হায়িয (ঋতুস্রাব) সংক্রান্ত
যে মহিলার মাসিক নিয়মিত হয় না তার বিধান
আয়িশা (রাঃ) আবূ হুবায়সের কন্যা ফাতিমাহ ‘ইস্তিহাযা’ (প্রদর রোগ) নামক রোগে ভুগতেন। আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘অবশ্য হায়িযের রক্ত কালো বর্ণের, তা (সহজেই) চেনা যায়। যখন এমন রক্ত দেখতে পাবে তখন সলাত বন্ধ করে দিবে। তারপর যখন অন্য রক্ত সেখা দেয় তখন উযু করে সলাত আদায় কর।’ আবূ দাঊদ, নাসায়ী। ইবনু হিব্বান ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন; আবূ হাতিম এটিকে মুন্কার হাদীসের মধ্যে গণ্য করেছেন। [১৬৫]
ইস্তিহাযা নারীর (হায়েযের রোগীর) গোসল করা ও তার সময় সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
‘উমাইস (রাঃ) একটা বড় পানির গামলাতে বসবে। অতঃপর হলদে রং এর রক্ত দেখতে পাও তবে যুহর ও ‘আসরের জন্য একবার এবং মাগরিব ও ‘ইশা সলাতের জন্য একবার গোসল করবে এবং ফজর সলাতের জন্য একবার করে গোসল করবে আর এর মাঝে (প্রত্যেক সলাতের জন্য) উযু করবে। [১৬৬]
ইস্তিহাযা নারী দু’সলাত কে একত্রিত করে আদায় করতে পারবে
হামনাহ বিনতু জাহাশ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমার ‘ইস্তেহাযা’ নামক ব্যধির জন্য অত্যন্ত কঠিনরুপে রক্তস্রাব হতো। আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এ বিষয়ে ফতোয়ার জন্য এলাম।’ তিনি বললেন, ‘এটা শয়তানের আঘাতজনিত কারনেই (হচ্ছে), তুমি ছয় বা সাত দিন হায়িয পালন করবে। তারপর হায়িযের গোসল করে পবিত্র হয়ে প্রতি মাসে চব্বিশ বা তেইশ দিন নিয়মমাফিক সলাত আদায় করবে, সওম পালন করবে ও সলাত আদায় করবে, তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। এভাবে হায়িযা মহিলার মত প্রতি মাসে করতে থাকবে। যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে যুহুরকে পিছিয়ে দিয়ে এবং ‘আসরকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গোসল করে দু’ ওয়াক্তের সলাত একসঙ্গে আদায় করবে। অনুরুপভাবে মাগরিবকে পিছিয়ে ও ‘ইশাকে এগিয়ে নিয়ে গোসল করে উভয় সলাত আদায় করবে এবং ফাজর সালাতের জন্য গোসল করে তা আদায় করবে। (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ) আমার নিকটে এটাই অধিক পছন্দ।’ তিরমিযী একে সহীহ্ বলেছেন আর বুখারী একে হাসান বলেছেন। [১৬৭]
ইস্তিহাযা নারীর গোসল ও প্রত্যেক সলাতের জন্য ওযূ করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) উম্মু হাবিবাহ বিনতু জাহাশ তাঁর রক্তস্রাবের সমস্যার বিষয় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ব্যক্ত করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘তুমি এ সমস্যা দেখা দেয়ার পূর্বে তোমার হায়িযের জন্য যে ক’দিন অপেক্ষা করতে সে ক’দিন তুমি হায়িযের বিধি নিষেধ মেনে চলবে। তারপর গোসল করবে। তারপর থেকে উম্মু হাবিবাহ প্রত্যেক সলাতের জন্যেই গোসল করতেন। [১৬৮] বর্ণনাকারী বুখারীর বর্ণনায় আছে, ‘প্রত্যেক সলাতের জন্য ওযু করবে।’ এ বর্ণনাটি আবূ দাঊদে ও অন্যান্য কিতাবেও এই সানাদে রয়েছে।
(ইস্তিহাযার রক্ত) মেটে ও হলদে রং হলে তার বিধান
উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা হায়িযের পর হলদে ও মেটে রঙের রক্তকে কিছুই মনে করতাম না।’ এ শব্দ বিন্যাস আবূ দাঊদের। [১৬৯]
ঋতুমতী মহিলার যে সকল কাজ বৈধ ও অবৈধ
আনাস (রাঃ) ইয়াহুদী লোকেরা তাদের হায়িযা স্ত্রীর সাথে পানাহার করা পরিত্যাগ করতো। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা (কেবল) যৌন মিলন ছাড়া (যথারীতি) তাদের সঙ্গে সবই করবে।’ [১৭০] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হায়িয চলাকালীন সময়ে আমাকে ইযার (লুঙ্গি বিশেষ) পরতে বলতেন। আমি তাই করতাম তারপর তিনি আমার সাথে হায়িয অবস্থায় (যৌন মিলন ব্যতীত) প্রেমময় আলিঙ্গন করতেন।’ [১৭১]
ঋতুমতী মহিলার সাথে যৌন সঙ্গম করার কাফ্ফারা (প্রায়শ্চিত্ত)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর হায়িয অবস্থায় তার সাথে যৌন মিলন করবে তার বিধান সম্বন্ধে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন , ‘ঐ ব্যক্তি যেন এক দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) বা অর্ধ দিনার খয়রাত (দান) করে।’ ইবনু হিব্বান ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন। আর অন্য মুহাদ্দিসগণ – এর মাওকুফ হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [১৭২]
ঋতুমতী মহিলা নামায, রোযা বর্জন করবে
আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘হায়িয চলাকালীন সময়ে মেয়েরা কি সলাত ও সওম থেকে বিরত থাকে না?’ (অর্থাৎ বিরত থাকতে হয়।) এটি দীর্ঘ একটি হাদীসের খন্ডাংশ। [১৭৩]
ঋতুমতী মহিলার বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ নিষেধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা হজ্জ ব্রত পালন করার উদ্দেশ্যে যখন সারিফা নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম তখন আমার ঋতুস্রাব শুরু হলো।’ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত কা’বা তাওয়াফ্ ব্যতীত হাজীরা যা যা করে তুমিও তাই কর।’ এটি দীর্ঘ একটি হাদীসের খন্ডাংশ। [১৭৪]
হায়েয ওয়ালী মহিলার দেহের যতটুকু বৈধ
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হায়িয অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে কি কি কাজ হালাল বা বৈধ?’ তিনি বললেন, ‘পাজামা বা লুঙ্গির মধ্যে শরীরের যে অংশটুকু থাকে তা বাদে সবকিছু বৈধ।’ আবূ দাঊদ এটিকে য‘ঈফ (দুর্বল) রূপে বর্ণনা করেছেন। [১৭৫]
নিফাস ওয়ালী মহিলা সলাত ও সওম হতে বিরত থাকার সময়সীমা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে নিফাসের (প্রসবোত্তরস্রাব) জন্য (দীর্ঘ মেয়াদ হিসাবে) মেয়েরা চল্লিশ দিন (সলাত ও সওম ইত্যাদি হতে) অপেক্ষমান থাকতেন।’ শব্দ বিন্যাস আবূ দাঊদের। [১৭৬] আবূ দাঊদের শব্দে আরও আছে, ‘নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিফাসের অবস্থায় সলাত কাযা পড়বার আদেশ তাদের করতেন না।’ হাকিম হাদীসটি সহীহ বলেছেন। [১৭৭]