12. খাদ্য
প্রত্যেক দাঁতযুক্ত হিংস্র জন্তু এবং নখরযুক্ত পাখি ভক্ষন করা হারাম
আবু হুরাইরা (রাঃ) নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কর্তন বিশিষ্ট সকল হিংস্র পশুর গোশত খাওয়া হারাম। [১৪২৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হাদীসের শব্দ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষিদ্ধ করেছেন, তাতে আরো আছে বড় নখবিশিষ্ট পাখির গোশত খাওয়া হারাম। [১৪২৭]
গৃহপালিত গাধা হারাম ও ঘোড়া খাওয়া বৈধ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার যুদ্ধের সময় গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। বুখারীর শব্দে আছে, ওয়া-রাখ্খাসা (ঘোড়ার গোশত খাবার রুখসাত দিয়েছিলেন)। [১৪২৮]
পঙ্গপাল খাওয়ার বৈধতা
ইবনু আবু আওফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি কিংবা ছয়টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমরা তাঁর সঙ্গে ফড়িংও খাই। [১৪২৯]
খরগোশ খাওয়ার বৈধতা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, তা যবেহ করে তার একটি রান রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। [১৪৩০]
যে সমস্ত জন্তু হত্যা করা নিষেধ তা ভক্ষন করাও হারাম
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি জন্তু হত্যা করতে নিষেধ করেছেনঃ পিপীলিকা, মৌমাছি, হুদহুদ পাখি ও সূরাদ (এক প্রকার শিকারী পাখি)। [১৪৩১]
হায়েনা খাওয়ার বিধান
ইবনু আবী আম্মার (রাঃ) তিনি বলেন; আমি জাবির (রাঃ) কে বললাম, হায়েনা কি হালাল শিকার? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তা বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। [১৪৩২]
শজারু খাওয়ার বিধান
ইবন উমার (রাঃ) তাকে শজারু (কন্টকাকীর্ণ পাখাবিশিষ্ট জীব) প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তার উত্তরে একটা আয়াতের উদ্ধৃতি দিলেন যার সারমর্ম-এটাতো আহার গ্রহণকারীর জন্য হারামকৃত বস্তুর অন্তর্গত বলে পাচ্ছি না। তার নিকটে উপস্থিত একজন বৃদ্ধ সাহাবী বলেন, আমি আবু হুরাইরা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে এ কুনফু্য প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ায় তিনি বলেনঃ অবশ্য এটা নাপাক বস্তুর মধ্যে একটা। [১৪৩৩]
নাপাক বস্তু ভক্ষনকারী জন্তুর গোশত খাওয়া এবং এর দুধ পান করা হারাম
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক বস্তু ভক্ষণকারী জন্তুর গোশত খেতে ও তার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন। [১৪৩৪]
বন্য গাধার গোস্তের বৈধতা
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বন্য গাধার ঘটনায় আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওটার গোশত খেয়েছেন। [১৪৩৫]
ঘোড়ার গোস্তের বৈধতা
আসমা বিনতু আবী বাকর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ঘোড়া নাহর (যাবাহ) করেছিলাম ও এর গোশত খেয়েছিলাম। [১৪৩৬]
গুইসাপের গোশতের বৈধতা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) এ দস্তর খানের উপর গুইসাপ (গোহ্) খাওয়া হয়েছে। [১৪৩৭]
ব্যাঙ হত্যা করা নিষেধ
আব্দুর রহমান ইবনু উসমান (রাঃ) কোন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? তিনি ওটা হত্যা করতে নিষেধ করলেন। [১৪৩৮]
শিকার ও যবহকৃত জন্তু
শিকারী কুকুর পালনের বৈধতা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি গৃহপালিত পশুর রক্ষণাবেক্ষণ বা শিকার করণার্থে অথবা শস্য ক্ষেতের পাহারার উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হতে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে। [১৪৩৯]
ধারালো এবং জখম করা যায় এমন অস্ত্র দ্বারা শিকার করা
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার কুকুরকে শিকার ধরার জন্য পাঠাবে বিসমিল্লাহ বলে পাঠাবে, যদি সে শিকারকে তোমার জন্য রেখে দেয় এবং তুমি তা জীবিত পাও তবে জবাই করবে। আর যদি তুমি দেখ যে, কুকুর তার শিকারকে মেরে ফেলেছে কিন্তু সে তা হতে কিছু খায়নি, তবে তুমি তা খেতে পার। আর যদি তুমি তোমার কুকুরের সাথে অন্য কুকুর দেখতে পাও এবং সেগুলো শিকার ধরে মেরে ফেলে, তা হলে তা খাবে না। কেননা, তুমি তো জান না যে, কোন্ কুকুরটি হত্যা করেছে? আর যদি তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ কর তখন বিসমিল্লাহ বলবে। এরপর তা একদিন বা দু’দিন পর এমন অবস্থায় হাতে পাও যে, তার গায়ে তোমার তীরের আঘাত ব্যতীত অন্য কিছু নেই, তাহলে খাও। আর যদি তা পানির মধ্যে পড়ে থাকে, তাহলে তা খাবে না। [১৪৪০]
পালকবিহীন তীর দ্বারা শিকার করা
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তীরের ধারালো অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও, আর যদি ফলার আঘাত লেগে থাকে এবং শিকারটি মারা যায় তাহলে খেও না। কেননা, সেটি ওয়াকীয বা থেতলে মরার মধ্যে গণ্য। [১৪৪১]
শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপের পর তা অদৃশ্য হয়ে গেলে, অতপর তা পেলে খাওয়ার বিধান
আবূ সা’লাবাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (আল্লাহর নাম নিয়ে) তুমি শিকারের প্রতি তোমার তীর নিক্ষেপ করার পর যদি ঐ শিকার তোমার হস্তগত না হয়ে অদৃশ্য থাকে, তারপর তুমি ওটা পেলে এবারে তুমি তা খাও যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা দুর্গন্ধযুক্ত না হয়। [১৪৪২]
জবেহের সময় বিসমিল্লাহ বলার বিধান
আয়িশা (রাঃ) একদল লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল কতক লোক আমাদের নিকট গোশ্ত নিয়ে আসে। আমরা জানি না যে, পশু যবহের সময় বিসমিল্লাহ বলা হয়েছিল কিনা। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরাই এর উপর বিসমিল্লাহ পড় এবং তা খাও। [১৪৪৩]
খাযফ করা নিষেধ এবং এর মাধ্যমে শিকারকৃত জন্তু খাওয়া হারাম [১৪৪৪]
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল মুজানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছোট পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেনঃ এর দ্বারা কোন প্রাণী শিকার করা হয় না এবং কোন শত্রুকেও ঘায়েল করা হয় না। তবে এটি কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে। -শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [১৪৪৫]
কোন জীব জন্তুকে (তীর মারার জন্য) নিশানা রুপে গ্রহণ করা নিষেধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন জীবন্ত জন্তুকে তীর মারার জন্য নিশানারূপে গ্রহণ করবে না। [১৪৪৬]
মহিলার জবেহ করার বিধান
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) এক নারী পাথরের সাহায্যে একটি বক্রী যবহ্ করেছিল। এ ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সেটি খাওয়ার নির্দেশ দেন। [১৪৪৭]
জবেহ করার শরীয়ত সম্মত এবং নিষিদ্ধ যন্ত্রসমূহ
রাফি‘ বিন খাদীজ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে জিনিস রক্ত প্রবাহিত করে এবং যার উপর আল্লাহ্র নাম নেয়া হয়, তা খাও। তবে দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। দাঁত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি। [১৪৪৮]
প্রানীকে বেঁধে রেখে হত্য করা নিষেধ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জন্তুকে বেধে রেখে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। [১৪৪৯]
জবেহ করার শিষ্টাচারিতা সমূহ
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি জীবের উপর ইহসান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন (কোন ন্যায্য কারণে) যদি হত্যা কর তবে ভালভাবে হত্যা করবে, (যথা সম্ভব কষ্টের লাঘব করবে) যবাহ করলে ভালভাবে যবাহ করবে-ছুরি ভাল করে ধার দেবে, যবাহকৃত জন্তুর কষ্টের লাঘব করবে। [১৪৫০]
ভ্রুনের যাবহ করা প্রসঙ্গে
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভ্রুণের যবাহ কাজ তার মায়ের যবাহ দ্বারা সম্পন্ন হয়। [১৪৫১]
জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ না বললে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুসলিমের জন্য (আল্লাহ্র) নামই যথেষ্ট, যদি যাবাহ করার সময় আল্লাহর নাম দিতে ভুলে যায় তবে আল্লাহর নাম নেবে (বিসমিল্লাহ বলবে) তারপর খাবে। আব্দুর রায্যাক সহীস সনদে, ইবনু আব্বাস হতে মাওকূফরূপে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [১৪৫২] ইমাম আবূ দাঊদের মারাসিল গ্রন্থে এর একটা শাহিদ (সম অর্থবাহী) হাদীস রয়েছে-তাতে আছে, মুসলিমের যবাহ্কৃত জন্তু হালাল, সে তাতে বিসমিল্লাহ্ বলুক বা না বলুক। এর বর্ণনাকারী রাবীগণ মাজবূত (নির্ভরযোগ্য)। [১৪৫৩]
কুরবানীর বিধান
কুরবানীর বৈধতা এবং এর কিছু বিবরণ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম) দু’টি সাদা-কালো রং এর শিং ওয়ালা দুম্বা কুরবানী করতেন। আর এতে আল্লাহর নাম নিতেন, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতেন এবং তিনি স্বীয় পা তাদের পাঁজরে রাখতেন। আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি স্বহস্তে সে দু’টিকে যবহ্ করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, সামীনাইনে (দুটো মোটা তাজা), হাসানঃ ইবনু মাজাহ (৩১২২) আর আবূ আওয়ানাহ সহীহ সংকলনে আছে, (ছামীনাইনে) দুটো মূল্যবান দুম্বা-অর্থাৎ সীন-এর বদলে ছা’ রয়েছে। আর মুসলিমের শব্দে আছে, তিনি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতেন। [১৪৫৪]
কুরবানীর পশু জবেহ করার সময় দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব
আয়িশা (রাঃ তিনি কুরবানী করার জন্য শিং বিশিষ্ট একটি দুম্বা নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন-যার পা, পেট, চোখের পার্শ্বদেশ কাল রংয়ের ছিল। তিনি (আয়িশা) (রাঃ) কে বলেনঃ ছুরিখানা পাথরে ঘষে ধার দাও। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছুরিটি নিলেন ও দুম্বাটি ধরলেন, তারপর দুম্বাটিকে মাটিতে ফেলে ধরে যবাহ করলেন, যবাহ করার সময় বললেনঃ বাংলা উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন। অর্থঃ আল্লাহর নামে-হে আল্লাহ! তুমি এটা মুহাম্মাদ; মুহাম্মাদের স্বজন ও তার উম্মতগণের তরফ থেকে ক্ববূল কর। [১৪৫৫]
খাদ্য
কুরবানীর বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কুরবানী করার সামর্থ্য রয়েছে তবুও কুরবানী করল না তবে যেন সে আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। [১৪৫৬]
কুরবানীর পশু জবেহ করার সময়
জুনদুব ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি কুরবানীর দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাজির ছিলাম। লোকেদের সাথে সালাত আদায় শেষে দেখলেন যে, একটি বকরী যবহ করা হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের আগে যবহ্ করেছে, সে যেন এর স্থলে আরেকটি বকরী যবহ্ করে। আর যে ব্যক্তি যবহ্ করেনি, সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে যবহ্ করে। [১৪৫৭]
যে সমস্ত জন্তু কুরবানী করা জায়েয নয়
বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, চার প্রকার জন্তুর কুরবানী করা বৈধ হবে নাঃ কানা, যার কানা হওয়া পরিষ্কার (নিশ্চিত) রয়েছে; রুগ্ন যার রুগ্নতা প্রকট; খোঁড়া যার খঞ্জত্ব সন্দেহাতীত ও মেদ শূন্য, বয়ঃবৃদ্ধ। [১৪৫৮]
কুরবানীর পশুর বিবেচ্য বয়স
জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মুসিন্না জন্তু ছাড়া কুরবানী করবেনা। যদি তা তোমাদের জন্য সহজসাধ্য না হয় তবে জাযা’ (ছয় মাসের ভেড়া) কুরবানী করবে। [১৪৫৯]
কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে যা অপছন্দনীয়
আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কুরবানীর জন্তু (কেনার সময়) চোখ, কান ভালভাবে দেখে নিতে হুকুম দিয়েছেন। আর কানা, কানের অগ্রভাগ কাটা, পেছনের অংশ কাটা, ছিদ্র কান, বা কান ফাড়া জন্তু কুরবানী করতে নিষেধ করছেন। [১৪৬০]
কুরবানীর পশু যবাই ও বন্টনে দায়িত্বশীল নিয়োগ
আলী (রাঃ) তাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোশত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং তা হতে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুই না দেয়া হয়। [১৪৬১]
উট এবং গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা প্রসঙ্গে
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা হদাইবিয়ার (ঐতিহাসিক) সন্ধির সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থেকে একটা উট সাতজনের পক্ষ থেকে ও একটা গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছিলাম। [১৪৬২]
আক্বীকাহ
আকীকা করার বৈধতা
ইবুন আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর জন্য একটা করে দুম্বা আক্বীকাহ করেছেন। [১৪৬৩] আনাস (রাঃ) অনুরূপ একটা হাদীস ইমাম ইবনু হিব্বান সংকলন করেছেন। [১৪৬৪]
আকীকার পরিমাণ
আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবাদেরকে পুত্র সন্তানের জন্য দু’টো সমজুটি ছাগল ও কন্যা সন্তানের জন্য একটা ছাগল আক্বীকাহ করার আদেশ করেছেন।–তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [১৪৬৫] সাহাবীয়াহ (রাঃ) অনুরুপ একটা হাদীস বর্ণনা করেছেন। [১৪৬৬]
জন্মগ্রহন করার পর কতিপয় বিধান
সামুরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক শিশুকে তার আক্বীকা্র বিনিময়ে রেহেন রাখা হয়, ফলে তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীকাহ যাবাহ করতে হবে, তার মাথার চুল কামান (মুন্ডানো) হবে ও তার নামকরণ করতে হবে। ইমাম তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন। [১৪৬৭]