13. কসম ও মান্নত প্রসঙ্গ

【1】

কসম ও মান্নত প্রসঙ্গ

【2】

আল্লাহর নামে শপথ করাঃর আবশ্যকীয়তা এবং তিনি ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করাঃ নিষেধ

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে বাহনে চলা অবস্থায় পেলেন যখন তিনি তাঁর পিতার নামে কসম করছিলেন। তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন: সাবধান! আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ কসম করতে চাইলে সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, নইলে যেন চুপ থাকে। [১৪৬৮] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তোমরা তোমাদের পিতার নামে কসম করবে না , মাতা বা দেব দেবির নামেও না। কেবল আল্লাহর নামেই কসম করবে। আর আল্লাহর নামে কসম করার ব্যাপারে তোমাদের সত্যবাদী থাকতে হবে।(মিথ্যা কসম খাবে না)। [১৪৬৯]

【3】

কসম প্রার্থনাকারীর নিয়্ত অনুযায়ী কসম প্রযোজ্য হবে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ক্বসম করার জন্য তোমাকে যে ব্যক্তি চাপ দেয় বা দাবী জানায় তার উদ্দেশ্যের অনুকূলে তোমাকে ক্বসম করতে হবে। অন্য রিওয়ায়েতে আছে প্রতিপক্ষের নিয়্যাতের বা উদ্দেশ্যের অনুকূলে (কসম সাব্যস্ত)হবে। [১৪৭০]

【4】

কসম খাওয়া বিষয়ের চেয়ে অন্য বস্তুর মাঝে অধিক কল্যান দেখা গেলে তার বিধান

আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন ব্যাপারে যদি শপথ কর আর তা ছাড়া অন্য কিছুর ভিতর কল্যান দেখতে পাও, তবে নিজ শপথের কাফফারা আদায় করে তা থেকে উত্তমটি গ্রহণ কর। বুখারীর শব্দে আছে, “ভাল কাজটি কর আর শপথ ভঙ্গের কাফফারা দাও”। আবূ দাউদের এক বর্ণনায় আছে, “শপথ ভঙ্গের কাফফারা দাও, তারপর ভাল কাজটি কর। [১৪৭১]

【5】

কসমে ইনশা আল্লাহ বলার বিধান

ইবনু উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যদি কেউ ইনশাআল্লাহ বাক্য জুড়ে দিয়ে কোন ক্বসম করে তবে সে ক্বসম ভঙ্গকারী হবে না।(যদিও সে ক্বসমের বিপরীত কাজ করে বসে।)[১৪৭২]

【6】

নাবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের শপথ প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কসম ছিল (আরবি) বাক্য দ্বারা। অর্থাৎ অন্তরের পরিবর্তনকারীর কসম। [১৪৭৩]

【7】

মিথ্যা শপথ প্রসঙ্গ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক বেদুঈন নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! কবীরা গুনাহ সমূহ কী? এর পর উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তাতে আরো আছে ,আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কী? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়। অথচ সে এ শপথের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারী । [১৪৭৪]

【8】

উদ্দেশ্যহীন শপথ প্রসঙ্গে

আয়িশা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের উদ্দেশ্যবিহীন উক্তি (আরবি) না আল্লাহর শপথ, (আরবি) হ্যাঁ আল্লাহর শপথ ইত্যাদি উপলক্ষে। [১৪৭৫]

【9】

আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশ’টি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

【10】

কল্যাণকারীর উদ্দেশ্যে দুয়া করা প্রসঙ্গে

উসমাহ ইবনু যাইদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার প্রতি কোন কল্যাণ করা হবে আর সে ঐ কল্যাণের বিনিময়ে কল্যাণকারীর ইয়দ্দেসগ্যে বলবে (দু’আ করবে) আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন,তবে সে তার চরম গুন বরণনা করলো। [১৪৭৭]

【11】

মানত মানা নিষেধ প্রসঙ্গ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, মানত কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এর দ্বারা শুধু কৃপণের কিছু মাল বের হয়ে যায়। [১৪৭৮]

【12】

কতক মানত কুফরে লিপ্ত করে

উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানতের (পূরণ না করার) কাফফারা ক্বসম ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। [১৪৭৯]

【13】

মানতের কতিপয় প্রকারের বিধানাবলী

আবূ দাউদে ইবন আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি কোন (বস্তুর) নাম উল্লেখ না করে মানত মানবে তার কাফফারা হবে আল্লাহর নামে ক্বসম করে তা ভেঙ্গে ফেলার কাফফারার অনুরূপ। আর যে পাপ কাজ করার মানত করবে তার কাফফারা হবে আল্লাহর নামে ক্বসম করে তা ভাঙ্গার অনুরূপ কাফফারা। আর যে এমন বস্তুর মানত করবে যা সাধ্যতীত তার কাফফারা হবে ক্বসম ভঙ্গের কাফফারা অনুরূপ। এর সানাদ’ সহীহ কিন্তু হাদীস শাস্ত্রের হাফিযগণ হাদিসটির মাওকূফ হওয়াকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। [১৪৮০] আয়িশা (রাঃ) বুখারীতে আছে, যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করার নযর মানবে সে যেন তাঁর বিরুদ্ধাচরণ না করে। (তথা নযর পূরপণ না করে) [১৪৮১] মুসলিমে ইমরান (রাঃ) পাপ কাজের নযর মানলে তা পূরণ করা যাবে না। [১৪৮২]

【14】

আল্লাহর ঘরে (কা’বা) হেঁটে যাওয়ার মানতের বিধান

উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বোন খালি পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ হাজ্জ করার মানত করেছিল। তিনি (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পায়ে হেঁটে চলুক, সওয়ারও হোক। [১৪৮৩] আহমাদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অবশ্যই তোমার বোনের কোন কষত দ্বারা আল্লাহ কিছু করবেন না। তোমার বোনকে বল সে ওড়না (চাদর) পরে নেয়। সাওয়ার হোক আর তিন দিন রোযা রাখুক। [১৪৮৪]

【15】

মৃত ব্যক্তির মানত পূর্ণ করা প্রসঙ্গ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সাদ্‌ ইব্‌নু ‘উবাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট জানতে চাইলেন যে, আমার মা মারা গেছেন এবং তার উপর মানৎ ছিল, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ কর। [১৪৮৫]

【16】

শরীয়ত বিরোধী না হলে নির্দিষ্ট স্থানে মানত পূর্ণ করার বৈধতা

সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে বুওয়ানা নামক স্থানে একটা উট যবাহ করার জন্য নযর মেরেছিল। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে এসে তাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি তাকে বললেন, ঐ স্থানে কি কোন ঠাকুরের মূর্তি ছিল যার পূজা করা হতো? সে বললো ,না। তিনি বললেন, সেখানে কি মুশরিকদের কোন ঈদের মেলা হত? সে বললো, না; তা হত না। এবারে রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার নযর পূরণ কর, কেননা কোন পাপ কাজের নযর, আত্মীয়তা ছিন্ন করার নযর, মানুষ যার অধিকারী নয় এমন বস্তুর নযর পূরণ করার বিধান নেই। [১৪৮৬] আহমাদে কারদাম বর্ণিত এর একটি শাহিদ( সমার্থবোধক হাদীস আছে) [১৪৮৭]

【17】

কেউ কোন ভাল স্থানে সলাত আদায়ের মান্নত করলে তার চেয়ে উত্তম স্থানে তা আদায় যথেষ্ট

জাবির(রাঃ) কোন এক ব্যক্তি মাক্কা বিজয়ের দিন বললোঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি এরূপ মানৎ মেনেছি যে, যদি মাক্কা আপনার হাতে বিজিত হয় তবে আমি বাইতুল মাক্বদিসের মাসজিদে নামায পড়ব। তিনি বললেনঃ তুমি এখানে (মাক্কায়) নামায পড়; তারপর জিজ্ঞাসা করায় বলেঃ এখানে নামায পড়, তারপর তৃতীয় বার জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেনঃ তবে তোমার যা ইচ্ছা (হয় কর)। [১৪৮৮]

【18】

মানত পূর্ণ করার জন্য তিনটি মাসজিদের কোন একটির জন্য সফরের প্রস্তুতি নেওয়ার বৈধতা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি মাসজিদ ব্যতীত কোন স্থানের যিয়ারাতের জন্য সফরের প্রস্তুতি নেয়া যাবে না। এগুলো হচ্ছে, মাসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ) বাইতুল মাক্বদিস ও আমার এ মাসজিদ ( এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট নিয়্যাতে যাত্রা করা যায়)। উল্লেখিত শব্দ বুখারীর। [১৪৮৯]

【19】

মুশরিক অবস্থায় কৃত ই’তিকাফের মানত পূর্ণ করার বিধান

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি জাহিলিয়্যা যুগে মাসজিদুল হারামে এক রাত ইতি’কাফ করার মানৎ করেছিলাম। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ তোমার মানত পুরা কর। [১৪৯০]