16. বিবিধ প্রসঙ্গ

【1】

আদব

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ৬ টি হাক্ব রয়েছে – ১. কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেবে; ২. আমন্ত্রন করলে তা ক্ববূল করবে; ৩. পরামর্শ চাইলে সৎ পরামর্শ দেবে; ৪. হাঁচি দিয়ে আল-হামদুলিল্লাহ পড়লে তার জবাব দেবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে)। [১৫৪৭] ৫. পীড়িত হলে তার কাছে গিয়ে তার খবরাখবর নেবে; ৬. সে ইন্তিকাল করলে তার জানাযা সলাতে অংশগ্রহণ করবে । [১৫৪৮] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : (পার্থিব ব্যাপারে) তুমি তোমার চেয়ে দুর্বলের উপর দৃষ্টি রাখবে, কিন্তু যে ব্যক্তি তোমার চেয়ে উচুঁ তার উপর দৃষ্টি রাখবে না । এরূপ করলে তুমি আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতের প্রতি অবহেলা ও তাচ্ছিল্য প্রকাশ করার অপরাধ হতে বেঁচে যাবে । [১৫৪৯] নাওওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নেকি ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম । তখন তিনি বললেন, নেকি হচ্ছে সুন্দর ব্যবহার, আর পাপ হচ্ছে যা তোমার অন্তরে খটকা জাগায়, আর মানুষ তা জেনে যাক এটা এটা তুমি পছন্দ কর না । [১৫৫০] আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কোথাও তোমরা তিনজনে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে-কানে কথা বলবে না যতক্ষণ না জনগনের সাথে মিশে যাও । এতে তার মনে দুঃখ হবে । [১৫৫১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন লোক যেন কোন লোককে তার বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে না বসে । বরং তোমরা বসার ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত ও সম্প্রসারিত কর । [১৫৫২] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন আহার করে সে যেন তার হাত না মোছে, যতক্ষণ না সে চেটে খায় কিংবা অন্যের দ্বারা চাটিয়ে নেয় । [১৫৫৩] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে । মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, আরোহী পদব্রজে যাওয়া ব্যক্তিকে সালাম দিবে । [১৫৫৪] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাত্রীদের মধ্যে থেকে একজনের সালামের উত্তর দেয়া সকলের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে । এর সমার্থক হাদীস থাকায় এটি হাসান । [১৫৫৫] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে আগে সালাম দিবে না । আর যখন তোমরা তাদের সাথে রাস্তায় মিলবে তখন তাদেরকে রাস্তায় সংকীর্ণতম দিকে যেতে বাধ্য করবে । [১৫৫৬] আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে । আর তার মুসলিম ভাই যেন এর জবাবে বলে । আর যখন সে বলবে, তখন হাচিঁদাতা তাকে বলবেঃ (আরবী) । [১৫৫৭] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনও দাঁড়িয়ে (পানি) পান না করে। [১৫৫৮] ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ জুতা পরে তখন সে যেন ডান দিক থেকে শুরু করে, আর যখন খোলে তখন সে যেন বাম দিকে শুরু করে, যাতে পরার সময় উভয় পায়ের মধ্যে ডান পা প্রথমে হয় এবং খোলার সময় শেষে হয়। [১৫৫৯] ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয় দু’পা-ই খোলা রাখবে অথবা দু’পায়ে পরবে। [১৫৬১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ সে লোকের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে তার (পরিধেয়) পোশাক টেনে চলে। [১৫৬২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবে তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান করবে তখন ডান হাতে পাত্র ধরে পান করবে। কেননা, শাইত্বান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে। [১৫৬৩] আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ব্যয়বাহুল্য ও অহংকার হতে দূর থেকে- খাও, পান কর, পর এবং সাদাক্বাহ কর। [১৫৬৪]

【2】

কল্যাণ সাধন ও আত্নীয়তার হক্ব আদায়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। [১৫৬৫] যুবায়ের ইবনু মুত’ইম (রাঃ) তিনি নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [১৫৬৬] মুগীরাহ বিন সাঈদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, কন্যা সন্তানকে জীবিত ক্ববর দেয়া, সৎ পথে দান বন্ধ করা এবং দাও দাও বলাকে (বেশি বেশি চাওয়া)। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন যে, বলা হয়েছে, বলেছে, (এইরূপ বলা) এবং অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা। [১৫৬৭] আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুটি (লাভ হয়), তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে। [১৫৬৮] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার প্রতিবেশী বা ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। [১৫৬৯] আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কোন্‌গুনাহ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য অংশীদার দাঁড় করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এতো সত্যিই বড় গুনাহ। আমি বললাম, তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে, সে তোমার সঙ্গে আহার করবে। আমি আরয করলাম, এরপর কোন্‌টি? তিনি উত্তর দিলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা। [১৫৭০] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে গাল-মন্দ করা। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহ রসূল! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কিভাবে গাল-মন্দ করতে পারে? তিনি বললেনঃ অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়। [১৫৭১] আবূ আইউব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তাই ভাই-এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখবে যে, দু’জনে দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম লোক। [১৫৭২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: প্রত্যেক সৎকর্ম সাদাক্বাহ সমতুল্য পূণ্য কাজ। [১৫৭৩] আবূ যার্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন সৎ কাজকে কখনও তুচ্ছ মনে করবে না, যদিও সো তোমার কোন (মুসলিম) ভাই-এর সাথে আনন্দের সাথে সাক্ষাৎকার হয়। (এটাকেও সৎকর্মের দিক থেকে তুচ্ছ মনে করা উচিৎ নয়।) [১৫৭৪] আবূ যার্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন তরকারী রান্না করবে তখন তাতে পানি বেশি দিয়ে প্রতিবেশীর খবরগিরি করবে। (অর্থাৎ প্রতিবেশীকে দিয়ে খাওয়ার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন ও সচেষ্ট থাকবে। [১৫৭৫] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন পার্থিব বিপদ দূর করবে আল্লাহ তা’আলা তার পরকালের বিপদ হতে কোন বিপদ দূর করবেন। কেউ যদি কোন অভাবগ্রস্তকে সহযোগিতা দান করে তবে আল্লাহ তার ইহ ও পরকালের উভয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা দান করবে। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই-এর দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ তা’আলা ইহকালে ও পরকালে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে। [১৫৭৬] আবূ মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি কোন কল্যাণকর বস্তুর সন্ধান দান করে, তার জন্য এ কল্যাণ সম্পাদনকারীর অনুরূপ পূণ্য রয়েছে। [১৫৭৭] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে (আল্লাহর নামে) আশ্রয়প্রার্থী হয় তাকে আশ্রয় প্রদান কর। আর যে আল্লাহর নাম নিয়ে (শারী’আত সম্মতভাবে) তোমাদের কাছে সাহায্য চায় তাকে সাহায্য কর। আর যে ব্যক্তি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ করে তাকে তুমি তার প্রতিদান যথারীতি দাও আর তাতে সক্ষম না হলে তার জন্য নেক দু’আ কর। [১৫৭৮]

【3】

দুনিয়া বিমুখীতা ও পরহেযগারীতা

নু’মান ইব্‌নু বশীর (রাঃ) তিনি তাঁর দু’হাতের আঙ্গুলকে তাঁর কানের দিকে ঝুঁকিয়ে (ইঙ্গিত করে) বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্‌সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচির্ সেগুলোর সেখাবে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্‌রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখান খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল অন্তর। [১৫৭৯] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর ও শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হয়ে অসন্তুষ্ট হয়। [১৫৮০] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমার দু’কাঁধ ধরে বললেনঃ তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিজে বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের আর অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার আর অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থান জন্য প্রস্তুতি লও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি লও। [১৫৮১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যাক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে সে এ সম্প্রদায়ের বলেই গণ্য হবে। [১৫৮২] আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে ছিলাম তিনি বললেন, হে বালক! তুমি আল্লাহর হাক্ব রক্ষা কর, আল্লাহর তোমার হিফাযাত করবেন। আল্লাহকে ধ্যানে রাখ, তাঁকে তোমার সামনে পাবে (তোমার সহযোগী থাকবেন)। আর যখন প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকটেই প্রার্থনা করবে। আর যখন সাহায্য চাবে তখন আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চাবে। [১৫৮৩] সাহল ইবনু সাদ-সাইদী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা আমি করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালোবাসবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসস্তি অবলম্বন করো তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের নিকট যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও, তাহলে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে। [১৫৮৪] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ বান্দাকে ভালবাসেন যে বান্দাহ ধর্মভীরু (পাপ কাজ হতে বিরত থাকে,) মুখাপেক্ষীহীন (আল্লাহ ছাড়া কারো উপর নির্ভরশীল নয়) ও আত্মগোপনকারী (নিজের গুণ প্রকাশে অনিচ্ছুক)। [১৫৮৫] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলি ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় বস্তু পরিহার করার মধ্যেই ইসলামের সৌন্দর্য বিরাজ করছে। [১৫৮৬] মিক্বদাম ইবনু মা’দী কারিব (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মানুষ যে পাত্র ভর্তি করে তন্মধ্যে পেট হচ্ছে সবচেয়ে মন্দ পাত্র। [১৫৮৭] আনাস (রাঃ) তিনিবলেন ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মানুষই ভুল- ত্রুটিকারী আর ভুল- ত্রুটিকারীদের মধ্যে যারা তাওবাহ করে তারাই উত্তম । [১৫৮৮] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নীরবতা অবলম্বন বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক কিন্তু এটা পালনকারীর সংখ্যা খুব অল্প। [১৫৮৯]

【4】

মন্দ চরিত্র সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তোমরা নিজেদেরকে হিংসার অনিষ্ট হতে রক্ষা কর। কারন হিংসা সৎ কর্মগুলোকে ঐভাবেই খেয়ে ফেলে ( বিনষ্টকরে) যেভাবে আগুন কাঠ , খড় পুড়িয়ে ধ্বংস করে। [১৫৯০] ইবনু মাজাতে আনাস (রাঃ) এর সনদে একজন মাতরূক রাবী রয়েছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। [১৫৯১] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যুল্‌ম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। [১৫৯২] জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যুলুম করা হতে নিজেকে বাঁচাও, কেননা, ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে যুলুম কঠিন অন্ধকাররূপে আত্মপ্রকাশ করবে। আর কৃপনতা হতেও নিজেকে বাঁচাও, কারণ ওটা আগের জাতিগুলোকে ধ্বংস করেছে। [১৫৯৩] মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের ব্যাপারে আমার সর্বাপেক্ষা ভয়ের বস্তু যা আমি ভয় পাচ্ছি তা হচ্ছে ছোট শির্ক- রিয়া (অর্থাৎ লোক দেখানো ধর্মকর্ম)। [১৫৯৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। [১৫৯৫] আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সহীহ হাদীস গ্রন্থ দু’টিতে আছে, ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। [১৫৯৬] আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী। [১৫৯৭] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। [১৫৯৮] মা’কিল ইব্‌নু ইয়াসার তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করল এবং তাঁর মৃত্যু হল এ হালতে যে, সে তার বিষয়ে ছিল খিয়ানতকারী, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। [১৫৯৯] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের উপর শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়ার পর তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবে, তুমিও তার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর। [১৬০০] আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমন্ডলে আঘাত করা হতে বিরত থাকে। [১৬০১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বললঃ আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেনঃ তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার তা বললেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক বারেই বললেনঃ রাগ করো না। [১৬০২] খাওলাহ্‌ আনসারীয়া (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহ্‌র দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ [১৬০৩] আবূ যার্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাঁর প্রভু আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেনঃ হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুম করাকে নিজের উপর হারাম করেছি! এবং ওটা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। অতএব, তোমরা পরস্পরের প্রতি যুলুম করো না। [১৬০৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কি জান গীবাত কাকে বলে? উপস্থিত সাহাবীগণ বলেচেহ, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ তোমার ভাই যে কথা তার প্রসঙ্গে বলা অপছন্দ মনে করে তার অসাক্ষাতে তা বলার নাম গীবাত। কেউ বললোঃ আপনি কি মনে করেন আমি যা বলছি তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্য থাকে তাহলে তুমি তার গীবাত করলে, আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে তুমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিলে। [১৬০৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, (ক্রয় করার ভান করে) মূল্য বৃদ্ধি করে ধোঁকা দিও না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন (অবজ্ঞা প্রকাশ) করবে না। তোমাদের একজনের সাওদা করা শেষ না হলে ঐ বস্তুর সাওদা বা কেনা-বেচার প্রস্তাব করবে না। হে আল্লাহ্‌র বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, অসম্মান করবে না, তুচ্ছ ভাববে না। ‘ধর্ম ভীরুতা এখানে’-এটা বলার সময় তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের প্রতি তিনবার ইঙ্গিত করেছিলেন। কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাটা মন্দ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট (অর্থাৎ এরূপ তুচ্ছ জ্ঞান প্রদর্শন দ্বারা পাপ কার্য হওয়া সুনিশ্চিত।) এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে খুন করা, তাঁর মাল গ্রাস করা ও সম্মানে আঘাত দেয়া হারাম। [১৬০৬] কুত্ববাহ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে ইসলাম গর্হিত স্বভাব ও মন্দ কাজ হতে, মন্দ কামনা হতে ও ব্যাধি হতে দূর রাখো। [১৬০৭] ইবনু ‘আবাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি তোমার মুসলিম ভাই এর সাথে ঝগড়া করবে না, তাকে ঠাট্টা করবে না ও তার সাথে ওয়াদা করে তা খিলাফ করবে না। [১৬০৮] আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মু’মিনের মধ্যে দুটো চরিত্র একত্রিত হয় না, কৃপনতা ও মন্দ চরিত্র। [১৬০৯] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গালিদাতাদের মধ্যে প্রথম গালিদাতার উপর যাবতীয় গালির পাপ বর্তাকে থাকে, যতক্ষণ অত্যাচারিত দ্বিতীয় ব্যক্তি সীমালংঘন না করে। (গালিদানে প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে না যায়।) [১৬১০] আবূ সিরমাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ক্ষতি করবে প্রতিদানে আল্লাহ তা’আলাও তার ক্ষতি করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কষ্ট দেবে আল্লাহ্‌ তার প্রতিদানে তাকে কষ্ট দেবেন। [১৬১১] আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা অশ্লীলভাষী, নির্লজ্জ ইতরকে ঘৃণা করে থাকেন। [১৬১২] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, মু’মিন তিরস্কারকারী, অভিসম্পাত দানকারী, অশ্লীলভাষী, নির্লজ্জ ইতর প্রকৃতির হয় না। [১৬১৩] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মৃতদের গালি দিও না। কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌছে গেছে। [১৬১৪] হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চোগলখোর কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [১৬১৫] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করে (ক্রোধের বশে কোন অঘটন না ঘটায়) আল্লাহ্‌ তাকে শাস্তি প্রদানে বিরত থাকেন। [১৬১৬] বর্ণনাকারী এ হাদীসের একটা পৃষ্ঠপোষক হাদীস ইবনু আবিদ দুনিয়া সাহাবী ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ধোঁকাবাজ, কৃপণ, কর্তৃত্বের বা ক্ষমতার অপপ্রয়গকারী। [১৬১৭] ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল – অথচ তারা এটা পছন্দ করে না – ক্বিয়ামাতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢলে দেয়া হবে। [১৬১৮] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির জন্য তুবা নামক বিশেষ জান্নাত বা খুশি যে নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যে অন্যের ত্রুটির প্রতি তার কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না। [১৬১৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের মনেই নিজেকে বড় বলে জানে, চলার সময় অহংকার করে চলে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি তাঁর উপর রাগান্বিত অবস্থায় থাকবেন। [১৬২০] সাহেদ ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাড়াহুড়া অর্থাৎ চিন্তাভাবনা না করেই কথা বলা বা কাজ করা শাইতানের প্রভাব থেকে হয়। [১৬২১] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুলক্ষণই মন্দ চরিত্র। [১৬২২] আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অধিক লা’নাতকারীগণ (তিরস্কার ও অভিসম্পাতকারী) পরকালে সুপারিশকারী ও সাক্ষ্য প্রদানকারী হতে পারবে না। (এরূপ দু’টো বিশেষ মর্যাদা লাভ হতে এরা বঞ্চিত হবে। [১৬২৩] ‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে কোন পাপের কথা বলে লজ্জা দেয়, সে ঐ পাপ কাজ না করে মরবে না। (অর্থাৎ তাকে ঐ কাজে লিপ্ত হয়ে লোকচক্ষে হেয় হতে হয়।) [১৬২৪] বাহয ইবনু হাকিম (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বরেন, চরম সর্বনাশ ঐ ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে থাকে, তার জন্য সর্বনাশ, তার জন্য সর্বনাশ। সনদটি শক্তিশালী। [১৬২৫] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: গীবাতের (পরনিন্দার) কাফ্ফারা (গুনাহ্ মাফের উপায়) হচ্ছে যার গীবাত করেছ তার পাপের ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে দু‘আ করতে থাকা। (হারেস বিন উসামা দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। [১৬২৬] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্রাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি হচ্ছে অতি ঝগড়াটে লোক। [১৬২৭]

【5】

উত্তম চরিত্রের প্রতি উৎসাহ প্রদান

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমারা সত্যবাদিতাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকবে। কেননা, সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে সত্য কথা বলার চর্চা চালাতে থাকলে অবশেষে আল্লাহর দরবারে সিদ্দীক-এর দরজা লাভ করে। তোমরা মিথ্যা কথা বলা হতে দূরে থাক। কেননা, মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্‌র কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়। [১৬২৮] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। [১৬২৯] আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি বললেন, যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, তা হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয় এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। [১৬৩০] মু‘আবিযাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইল্ম দান করেন। [১৬৩১] আবূ দ্দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: নেকী-বদী ওজনের সময় উত্তরম চরিত্রের থেকে আর কোন বস্তু বেশি ভারী হবে না। [১৬৩২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: লজ্জা-শরম ঈমানের অংশ বিশেষ। [১৬৩৩] আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পূর্ববর্তী নাবীদের নাসীহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না কর, তবে যা ইচ্ছে তাই কর। [১৬৩৪] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: দুর্বল দেহ, দুর্বল চিত্ত মু’মিন অপেক্ষা শক্তিশালী দৃঢ়চিত্ত মু’মিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে অধিকতর প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই (ঈমানগত) কল্যাণ রয়েছে। যা তোমার পক্ষে উপকারী তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর, দুর্বলতা অনুভব করো না। আর যদি তোমার উপর কোন মুসীবত এসে যায় তবে তুমি এরূপ কথা বলবে না যে, ‘আমি এরূপ করলে আমার এরূপ হতো বরং তুমি বলবে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই এটাই নির্ধারণ করা ছিল, আল্লাহ্ যা চেয়েছেন তা করেছেন। কেননা, ‘যদি’ শব্দ শাইত্বনের কাজের পথ খুলে দেয়।’ (অর্থাৎ আল্লাহর ফায়সালাকে সর্বান্তঃকরণে মেনে নিতে না পারলে ঈমানগত যে দুর্বলতা আসে তার সুযোগ নিয়ে শাইত্বন তার প্রভাবকে কার্যকরী করতে সক্ষম হয়।) [১৬৩৫] ইয়ায্ ইবনু হিমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্ আমার প্রতি ওয়াহী (প্রত্যাদেশ) পাঠিয়েছেন যে, তোমরা আপোষে বিনয়-নম্রতার সাথে চলো। যাতে তোমাদের কেউ কারো উপর অত্যাচার-অনাচার করতে না পারে এবং তোমাদের একজন অপরের উপর ফখর (গর্ব) না করে। [১৬৩৬] আবূ দারদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাই-এর অসাক্ষাতে তার সম্মানহানিকর বস্তুকে প্রতিহত করবে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডল হতে কিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুনকে দূর করে দেবেনে। আসমা বিনতু ইয়াযিদ আহমাদে অনুরূপ একটি হাদীস রয়েছে। [১৬৩৭] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সাদাক্বাহ কোন মাল কমিয়ে দেয় না। মানুষকে ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ্ ক্ষমাকারীর ইয্যাত বৃদ্ধি করে দেন। যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করে আল্লাহ্ তাকে উঁচু করে থাকেন। [১৬৩৮] আব্দুল্লাহ্ ইবনু সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হে লোকগণ! তোমরা সালাম দানের প্রসারতা বাড়াও, আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ় কর, খাদ্য দান কর, লোকের প্রগাড় ঘুমের সময় রাতে তাহাজ্জুদ সলাত পড়, ফলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১৬৩৯] তামীম আদ্দারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দফা বলেছেন: কল্যাণ কামনা করাই ধর্ম। আমরা বললাম: কী ব্যাপারে এটা করতে হবে? তিনি বললেন: আল্লাহ্‌র প্রতি, কুরআনের প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখা ও আনুগত্য দানের ব্যাপারে এবং মুসলিমদের নেতা ও মুসলিম জনসাধারণের সাথে সদ্ব্যবহার ও তাঁদের কল্যাণ কামনায় (আন্তরিকতা রাখবে)। [১৬৪০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যেসব গুণাবলী মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তার অধিকাংশই হল তাক্বওয়া (যথারীতি পুণ্য কাজ করা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকা) ও উত্তম চরিত্র। [১৬৪১] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মাল-ধন (খাইরাত) দ্বারা তোমরা ব্যাপকভাবে লোকেদেরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে না, কিন্তু মুখমণ্ডলের প্রসন্নতা ও প্রফুল্লতা এবং চরিত্র মাধুর্য দ্বারা ব্যাপকভাবে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। [১৬৪২] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: এক মু’মিন অন্য মু’মিন ভাই-এর জন্য আয়না তুল্য (দোষের কথা তাকে ধরিয়ে দেবে কিন্তু অন্যের কাছে তা গোপন রাখবে)। [১৬৪৩] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মু’মিন ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করে সে এমন মু’মিন ব্যক্তির তুলনায় অধিক সওয়াবের অধিকারী হয়, যে জনগণের সাথে মেলমেশা করে না এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করে না। তিরমিযীর সনদে সাহাবীর নাম উল্লেখ নেই।[১৬৪৪] ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ্‌! তুমি আমার গঠন ও আকৃতি যে রকম সুন্দর করেছ, আমার চরিত্রকেও অনুরূপ সুন্দর কর। [১৬৪৫]

【6】

আল্লাহর যিক্‌র ও দু‘আ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ বলেনঃ আমি আমার বান্দার সাথে থাকি যতক্ষণ বান্দা আমাকে স্মরণ করে ও আমার যিকরে তার দু‘টো ঠোঁট নড়তে থাকে। [১৬৪৬] মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন আদম সন্তান আল্লাহর যিকর থেকে এমন কোন বড় ‘আমল করেনি যা আল্লাহর আযাব থেকে অধিক ত্রাণকারী। [১৬৪৭] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মানবমন্ডলী কোন মাজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকর করলে আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদেরকে ছেয়ে ফেলেন ও আল্লাহর রাহমাত তাদেরকে ঢেকে ফেলে, আর আল্লাহ তাঁর নিকটতম ফেরেশতাদের মধ্যে তাদের সুখ্যাতি বর্ণনা করেন। [১৬৪৮] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মানব দল কোন বৈঠকে বসে কিন্তু তাতে আল্লাহর যিকর করে না আর নাবীর উপর দরূদও পাঠ করে না, এদের জন্য ক্বিয়ামাতের দিন আফসোস ও মনোবেদনা রয়েছে। [১৬৪৯] আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ১০ বার এ দু‘আটি পাঠ করবে- উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু বি-ইয়াদিহিল খাইরু ইউহয়ী ওয়া-ইউমীতু ওয়া-হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। (অর্থ) আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর জন্যেই রাজত্ব ও তাঁর জন্য প্রশংসা, তাঁর হাতেই কল্যাণ, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, তিনি সমস্ত জিনিসের উপর ক্ষমতাবান- সে ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের চারজন লোকের দাসত্ব মুক্তির সমপরিমাণ পুণ্য অর্জন করবে। [১৬৫০] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক প্রতিদিন একশ’বার সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও। [১৬৫১] হারিসের কন্যা জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, আমি তোমার দু’আ পাঠের চারটি শব্দযুক্ত যে দু’আটি তিনবার বলেছি তা তোমার আজকের এ পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ দু’আ পাঠের পর থেকে বেশি ওজনের হবে, যদি তা ওজন করা হয়। (দু’আটি হচ্ছে) সুবহানাল্লাহি ওয়া-বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়ারিযা নাফসিহী ওয়াযিনাতা ‘আরশিহী ওয়া-মিদাদা কালিমাতিহী। (অর্থঃ আমি আল্লাহর সৃষ্টিসম, তাঁর সন্তুষ্টিসম, তাঁর আরশের ওজ়নসম, তাঁর অসীম কালিমা (মহত্ব)-সম প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি।) [১৬৫২] আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্থায়ী সৎকাজ বা যে সৎকাজের পুণ্য স্থায়ী হবে, সে দু’আটি হচ্ছে এই লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া-সুবহানাল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্‌। (অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আল্লাহর জন্যই পবিত্রতা, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা, পাপ কাজ হতে দূরে থাকার ও পুণ্য কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো নেই)। [১৬৫৩] সামুরা ইবনু জুন্দুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকটে অধিক প্রিয় হচ্ছে চারটি কালিমা সম্বলিত এ দু’আটি। এর মধ্যে যে কোন একটি দ্বারা তুমি আরম্ভ করবে তাতে তোমার কিছু আসে যায় না। উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি, ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র, আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। [১৬৫৪] আবু মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: হে আব্দুল্লাহ ইবনু কাইস। আমি কি তোমাকে এমন একটি কথার সন্ধান দেব না যে কথাটি জানাতের রত্ন ভাণ্ডার? তাথেকে একটি রত্নভাণ্ডার হলো ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ । নাসায়ীতে আরো আছে, ‘লা মালাযায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি’- ‘আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। [১৬৫৫] নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : বলেন দু'আটাই ইবাদাত। [১৬৫৬] আনাস (রাঃ) এরূপ শব্দেও বর্ণিত হয়েছে, দুআ ইবাদাতের মগজ (মূল বস্তু)। [১৬৫৭] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দুআর থেকে আল্লাহর কাছে আর কোন বস্তু (ইবাদত) অধিক মযাদাসম্পন্ন নয়।” [১৬৫৮] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী দুআ (প্রার্থনা) আল্লাহর দরবার হতে ফিরিয়ে দেয়া হয় না।[১৬৫৯] সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক চিরঞ্জীব, দানশীল। তার কোন বান্দা নিজের দু হাত তুলে তার নিকট দু'আ করলে তিনি তার শূন্যহাত বা তাকে নিরাশ করে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।” [১৬৬০] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দু'আ করার জন্য দু'হাত উঠাতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডলে হাত ফেরানোর আগে তা নামাতেন না।” [১৬৬১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হাদীসটি আবু দাউদে রয়েছে। ঐগুলোর সনদের সমষ্টির অবস্থা দেখে বলা যায় হাদীসটি হাসান। [১৬৬২] ইবনু মাসউদ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার উপর অধিক দরূদ পাঠকারী কিয়ামাতের দিনে আমার বেশি সান্নিধ্য অর্জনকারী হবে। [১৬৬৩] শাদাদ ইবনু আউস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু'আ পড়া- আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলা-হা ইল্লা খালাকৃতানী, আ আন আন্দ্রকা অ আনা আল আহদিকা অ অদিকা মাসতাত্ম", আউয়ুবিকা মিন শারি মা স্বানা'তু, আবৃউ লাকা বিনিমাতিক আলাইয়্যা অ আবৃউ বিযামবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনৃত। "হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা, তুমি ব্যতীত আর কোন ক্ষমাকারী নেই। [১৬৬৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ "আল্লা-হুম্মা ইনী আস্আলুকাল আফওয়া অল আ-ফিয়াত ফী দ্বনী অ দুনয়্যা-য়্যা অ আহলী অ মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর আওরা-তী অ আ-মিন রাওআ-তী, অহফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়্যা অমিন খালফী অঅাই ইয়ামীনী অআন শিমা-লী অমিন ফাউকী, অআউযু বিআযমাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী। "হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্ৰয় প্রার্থনা করি। [১৬৬৫] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন যাওয়ালি নিমাতিক, ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিক, ওয়া ফাজয়াতি নিকুমতিক, ও জামিঈ সাখাতিক। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার দানের অবসান হতে, তোমার দয়া সুখের রদবদল থেকে এবং হঠাৎ করে তোমার শাস্তি হতে আর তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [১৬৬৬] আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (র:) এ দু'আ বলতেন: আল্লা-হুম্মা ইনী আউযু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি অগালাবাতিল আদুউবি অশামা-তাতিল আদা-'। অর্থঃ- হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট ঋণ ও শত্রুর কবল এবং দুশমন-হাসি থেকে রক্ষা চাচ্ছি। [১৬৬৭] বুরাইদা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেনঃ "হে আল্লাহ! অবশ্য আমি তোমার কাছে এ বলে প্রার্থনা করছি যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই ” তখন রাসূলুল্লাহ (র:) বললেন ? নিশ্চয় এ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তার মহান নামের উসীলায় প্রার্থনা করেছে, যার উসীলায় প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই দান করেন এবং যার উসীলায় দু'আ করলে তিনি অবশ্যই কবুল করেন। [১৬৬৮] আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভোরে উপনীত হয়ে বলবে, "হে আল্লাহ! তোমার হুকুমেই আমারা প্রভাতে উপনীত হই এবং তোমার হুকুমেই আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হই, তোমার হুকুমেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং তোমার হুকুমেই আমরা মৃত্যুবরণ করি ”। আর তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলবে, তবে এর সাথে এও বলবে- তোমার নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তন " [১৬৬৯] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময়ই এ দু'আ পড়তেনঃ হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর। [১৬৭০] . আবু মূসা আল-আশয়ারী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) : এরূপ দু'আ করতেনঃ হে আল্লাহ। আপনি ক্ষমা করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আমার যেসব গুনাহ আপনি আমার চেয়ে অধিক জানেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটি, আমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ ও আমার অজ্ঞতা এবং আমার উপহাসমূলক গুনাহ আর এ রকম গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন যেসব গুনাহ আমি আগে করেছি এবং পরের গুনাহ যা হবে। যে গুনাহ আমি গোপনে করেছি আর যে গুনাহ প্রকাশ্যে করেছি। আর যেগুলো আপনি আমার চেয়ে বেশি জ্ঞাত আছেন ঐসবই আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনিই অগ্রবর্তী করেন, আপনিই পশ্চাদবর্তী করেন এবং আপনিই সব বিষয়োপরি সর্বশক্তিমান।” [১৬৭১] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু'আ বলতেন হে আল্লাহ আমার দ্বীন যা সকল ব্যাপারে আমার জন্য রক্ষা কবজ সে দ্বীনকে আমার জন্য দুরন্ত করে দাও, আমার পার্থিব বিষয় যা আমার জীবিকার আধার সে বিষয়টিকেও ঠিক করে দাও । আমার আখিরাত (পাকালের জীবন) যা আমার জন্য সর্বশেষ অবস্থানক্ষেত্র তা দুরন্ত (সহজ) করে দাও। প্রত্যেক কল্যাণময় ব্যাপারে আমার জীবনে আধিক্য দান কর আর মৃত্যুকে যাবতীয় অকল্যাণ হতে আমার জন্য স্বস্তিতে পরিণত কর। [১৬৭২] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু'আটি পড়তেন হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা শিক্ষা দান করেছ তার দ্বারা আমাকে উপকৃত কর, আর যা আমার জন্য উপকারে আসবে তা আমাকে শিক্ষা দান কর, আমার উপকারে আসবে এমন জ্ঞান আমাকে দান কর।” [১৬৭৩] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তার শেষাংশে আছে, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও, সকল অবস্থাতেই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য আর আমি জাহান্নামীদের দূরবস্থা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।" [১৬৭৮] আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে এই দু’আ শিখিয়েছেনঃ "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে যাবতীয় কল্যাণ ভিক্ষা করছি, যা তাড়াতাড়ি আসে, যা দেরিতে আসে, যা জানা আছে, যা জানা নেই। আর আমি যাবতীয় মন্দ হতে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি- যা তাড়াতাড়ি আগমনকারী আর যা দেরিতে আগমনকারী আর যা আমি জানি আর যা অবগত নই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে ঐ মঙ্গলই চাচ্ছি যা চেয়েছেন- তোমার (নেক) বান্দা ও তোমার নাবী, আর তোমার কাছে ঐ মন্দ বস্তু থেকে পানাহ চাচ্ছি যা হতে তোমার বান্দা ও নাবী : আশ্রয় চেয়েছেন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে। আর আমি জাহান্নাম হতে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ হতেও পানাহ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেবে। আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমার জন্য যেসব ফায়সালা করে রেখেছ তা আমার জন্য কল্যাণকর করে দাও। [১৬৭৫] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু'টি কালিমাহ আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, দাড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী। (বাণী দু’টি হচ্ছে), সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহান্নাল্লাহিল আযীম: আমরা আল্লাহর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, মহান আল্লাহ (যাবতীয় ক্রটি-বিচূতি থেকে) অতি পবিত্র। [১৬৭৬]