2. সলাত
সলাতের সময়সমূহ
সলাতের সময়সমূহ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যুহরের সময় হচ্ছে, যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে, আর মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত, তথা ‘আসরের সময় উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত। ‘আসরের সময় হচ্ছে, (কোন বস্তুর ছায়া তার সমান হবার পর হতে) সূর্যের রঙ হালকা বা ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। মাগরিবের সময় সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিমকাশে লালিমা নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত। ইশার সলাতের সময় হলো, (মাগরিবের সময় শেষ হওয়া থেকে শুরু হয়ে) মধ্যরাত অবধি বিদ্যমান থাকে। ফাজ্রের সময়, সুবহ্ সাদিক থেকে আরম্ভ হয়ে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত।’ [১৭৮] বর্ণনাকারী মুসলিমে বুরাইদাহ (রাঃ) -এর হাদীসে আসর সম্পর্কে রয়েছে (সূর্য আলোক উজ্জ্বল থাকা পর্যন্ত)। [১৭৯] বর্ণনাকারী আর আবূ মূসা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে, ‘এবং সূর্য উঁচুতে থাকা পর্যন্ত’ (‘আসরের সময় থাকে)। [১৮০]
কখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাত আদায় করতেন তার বিবরণ
আবূ বার্যাহ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন তার পর আমাদের কোন ব্যক্তি রওয়ানা হয়ে মদীনার দূর প্রান্তের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরও সূর্য জীবিত তথা সূর্যের উজ্জ্বলতা বাকী থাকতো। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সলাত দেরিতে আদায় করা পছন্দ করতেন এবং ‘ইশা সলাতের পূর্বে ঘুমান ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন। আর তিনি ফাজ্রের সলাত আদায় করে এমন সময় ফিরতেন যখন লোক তার পাশে বসে থাকা সঙ্গীকে চিনতে পারত। আর ষাট আয়াত থেকে একশো আয়াত তিলাওয়াত করতেন। [১৮১] জাবির (রাঃ) ইশার সলাত কখনও দ্রুত কখনও দেরিতে পড়তেন। যখন দেখতেন লোক একত্রিত হয়ে গেছে তখন তাড়াতাড়ি করতেন। আর তারা বিলম্বে উপস্থিত হলে বিলম্বেই আদায় করতেন। আর তিনি ফাজ্রের সলাত খানিকটা অন্ধকারে আদায় করতেন। [১৮২] আবূ মূসা (রাঃ) ঐ সময় ফাজ্রের সলাত আদায় করতেন যখন ফজর প্রকাশ অর্থাৎ সুবহি সাদিক হতো। কিন্তু লোকেরা পরস্পরকে তখনও ভালভাবে চিনতে সক্ষম হতো না।
মাগরিবের সলাত ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আদায় করার বিধান
রাফি‘ বিন্ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে আমরা মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। অতঃপর সেখান থেকে ফিরার পরও আমাদের লোক তার ‘নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হবার দূরবর্তী স্থানটি’ দেখতে পেতেন। [১৮৩]
এশার সলাতকে প্রথম ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক রাতে ‘ইশার সলাত আদায় করতে অনেক বিলম্ব করেছিলেন। এমন কি রাতের বেশ কিছু সময় গত হয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি বের হয়ে সলাত আদায় করে বললেন, এটাই হচ্ছে ‘ইশা সলাত আদায়ের উপযুক্ত সময়, যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্ট মনে না করতাম তবে এসময়টাকেই নির্ধারণ করতাম। [১৮৪]
যুহরের সলাতকে সূর্যের প্রখরতা ঠাণ্ডা হলে পড়ার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন দিনের উত্তাপ খুব বেড়ে যাবে তখন উত্তাপ কমে (আবহাওয়া) ঠাণ্ডা হলে (যুহরের) সলাত পরবে। কেননা কঠিন উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা থেকে হয়। [১৮৫]
ফযরের সলাত স্পষ্ট সুবহে সাদিক ও আলোকজ্জল ভোরে পরা মুস্তাহাব
রাফি‘ বিন্ খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফযরের সলাত স্পষ্ট সুবহি সাদিক হলে আদায় কর। কেননা তা তোমাদের জন্য আধিক পুণ্যের কারন। তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [১৮৬]
কিভাবে নিদিষ্ট ওয়াক্তের সলাত পাওয়া যায়?
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফযরের সলাতের এক রাক‘আত সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে আদায় করতে পারলো সে পূর্ণ সলাতই পেলে, আর যে ব্যক্তি ‘আসরের সলাতের এক রাক‘আত সূর্যাস্তের পূর্বে আদায় করলো, সে ‘আসরের পূর্ণ সলাতই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেলে। [১৮৭] আয়িশা (রাঃ) অনুরূপ কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে রাক‘আতের পরিবর্তে সাজদাহ শব্দ রয়েছে এবং পরে তিনি বলেন, এখানে সাজদাহর অর্থ রাক‘আত হবে। [১৮৮]
সলাতের নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট শুনেছি তিনি বলেন; ফযরের সলাতের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফযরের সালাত ব্যতীত অন্য কোন সলাত (আদায় জায়েজ) নেই। আর ‘আসর সলাতের পরেও সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সলাত নেই। [১৮৯]
সলাত ও মৃত দাফনের নিষিদ্ধ সময় সূচি
উক্বাহ বিন ‘আমির (রাঃ) এমন তিনটি সময় রয়েছে যে সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে, মৃতকে কবর দিতে নিষেধ করেছেনঃ (১) সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠা হতে কিছুটা উপরে উঠা পর্যন্ত, (২) এবং ঠিক দুপুর হলে যে পর্যন্ত না সূর্য (পশ্চিম আকাসে) ঝুঁকে পড়ে। (৩) আর যখন সূর্য ঝুঁকে পড়ে অস্ত যাবার উপক্রম হয়। [১৯০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) ‘ঈফ সানাদে বর্ণনা করে তাতে বৃদ্ধি করেছেনঃ “জুমু‘আহর দিন ব্যতিত”। [১৯১] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) অনুরূপ হাদীস রয়েছে। [১৯২]
সব সময় (বাইতুল্লাহ শরীফ) তাওয়াফ করা বৈধ
যুবাইর বিন মুত’ঈম (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে ‘আবদি মানাফ এর বংশধরগণ, তোমরা কাউকে এ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এবং সালাত আদায় করতে নিষেধ করবে না যে কোন সময় যে কেউ তা করতে চায়। তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন।” [১৯৩]
শাফাক্ব (সূর্যাস্তের পরে পশ্চিম আকাশের লাল আভা) যার কারণে মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যায় তার ব্যাখ্যা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, ‘শাফাক্ব' এর অর্থ হুমরা (সূর্যাস্তের পরবর্তী পশ্চিমাকাশে দৃশ্যমান লাল আভা)। ইমাম দারাকুতনী এটিকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু খুজাইমাহ একে সহীহ বলেছেন এবং অন্যান্যরা একে মাওকৃফ বলেছেন।” [১৯৪]
ফজর দু'প্রকার এবং উভয়ের মাঝে গুণগত ও হুকুমগত পার্থক্যের বর্ণনা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ফজর দু প্রকার- প্রথমতঃ ঐ ফজর (যাতে সওম-এর নিয়্যাতে) পানাহার করা হারাম করে দেয় আর তাতে সালাত আদায় করা হালাল, আর দ্বিতীয়তঃ সেই ফজর (সুবহি কাযিব) যাতে ফজরের সালাত আদায় করা হারাম এবং খাদ্য খাওয়া হালাল। ইবনু খুযাইমাহ এবং হাকিম এটিকে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁরা উভয়ে একে সহীহ বলেছেন। [১৯৫] হাকিমে জাবির (রাঃ) যে ফজরে (সওমের নিয়াতে) পানাহার করা হারাম তার আলোক রশ্মি পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে (যাকে সুবহি সাদিক্ব বলা হয়)। আর অন্য ফজরের আলোক রেখা নেকড়ে বাঘের লেজের মতো উৰ্দ্ধমুখী থাকে (যাকে সুবহি কাযিব বলা হয়)। [১৯৬]
সলাতকে প্রথম ওয়াক্তে পড়ার ফযীলত
ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন সবচেয়ে উৎকৃষ্টতর পুণ্য কাজ হচ্ছে ওয়াক্তের প্রথম ভাগে সালাত আদায় করা। তিরমিযী এবং হাকিম একে বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়েই এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। [১৯৭] আর এ হাদীসের মূল রয়েছে বুখারী ও মুসলিমে)
সময়ের স্তর অনুযায়ী ফযীলত কম-বেশি হয়
আৰূ মাহযুরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সলাতের সময়ের প্রথমাংশ সালাত কায়িম করা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, মধ্যমাংশে ক্বায়িম করা তাঁর অনুগ্রহ এবং শেষাংশে আল্লাহর ক্ষমা লাভের কারণ। (ইমাম দারাকুতনী অত্যন্ত দুর্বল সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।) [১৯৮] বর্ণনাকারী তিরমিযীতে ইবনু উমার হতে এরূপ একটি হাদীস রয়েছে। তাতে মধ্যমাংশ শব্দ নেই। এটির সনদও দুর্বল। [১৯৯]
ফজর উদয়ের পর দুরাকয়াত সুন্নাত ব্যতীত অন্য সলাত আদায় করা নিষেধ
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ফজর সালাতের সময় সমাগত হলে ফজরের দুরাকা‘আত (সুন্নাত) ব্যতীত অন্য কোন নফল সালাত (আদায় বৈধ) নেই।” [২০০] আব্দুর রাজ্জাকের বর্ণনায় রয়েছে: ফজর উদিত হওয়ার পর ফজরের দু রাকা‘আত (সুন্নাত) ছাড়া অন্য কোন সলাত নেই। [২০১] বর্ণনাকারী আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর পুত্র (‘আব্দুল্লাহ) হতে দারাকুত্বনীতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। [২০২]
আসর সলাতের পর যুহরের সুন্নাত আদায়ের বিধান
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সলাত আদায় করার পর আমার ঘরে প্রবেশ তাশরীফ আনলেন। অতঃপর দুরাকা‘আত সলাত আদায় করলেন। আমি তাঁকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: “যুহরের পরের দুরাকাআত সুন্নাত সলাত সময়ের অভাবে পড়া হয় নি তাই এখন তা পড়ে নিলাম" আমি তাকে বললাম: "আমরাও কি তা ছুটে গেলে (এভাবে কাযা হিসেবে) পড়ে নিব?” নাবী : উত্তরে বললেনঃ “না (তা করবে না)"। [২০৩] আয়িশা (রাঃ) উক্ত মর্মে হাদিস বর্ণিত আছে। [২০৪]
আযান (সালাতের জন্য আহ্বান)
আযানের বিবরণ
আবদুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন স্বপ্নযোগে দেখলাম, কোন বাক্তি আমার নিকট এসে বলছে- তুমি বল, ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহু আকবার’ অতঃপর তিনি পূর্ণ আযান বর্ণনা করলেন। এতে ‘আল্লাহু আকবার’ চার বার ছিল কিন্তু ‘তারজী’ ছিল না। আর ইকাময়তের সব বাক্যই একবার করে ছিল কিন্তু ‘ক্বাদাকামাতিস সালাহ’ বাক্যটি ছিল দু’বার। বর্ণনাকারী বলেছেন- সকাল হলে আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট (এসে স্বপ্নটির বর্ণনা দিলাম)। তিনি এই স্বপ্ন সম্বন্ধে বললেন- স্বপ্নটি অবশ্যই সত্য। আহমাদ ও আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [২০৫] আহমাদ এ হাদীসের শেষাংশে- ফাজরের সালাতের আযান সম্পর্কীয় বিলাল (রাঃ) এর ঘটনাটিতে ‘ঘুম থেকে সালাত উত্তম’ অংশটি বাড়িয়েছেন। [২০৬] ইবনু খুযাইমাহতে আনাস (রাঃ) যখন মুয়াজ্জিন ফাজরের আজানে ‘হায়্ইয়া আলাল ফালাহ্’ বলেন তারপর ‘আস্ সালাতু খাইরুম্ মি্নান্নাওম’ বলা সুন্নাত। [২০৭]
আবু মাহজুরার আযানের পদ্ধতি
আবূ মাহূযূরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আযান শিখিয়েছিলেন। তিনি সেই আযানে ‘তারজী’ এর উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ হাদীসের প্রথমে মাত্র দুবার তাকবীর [২০৮] বলার কথা উল্লেখ করেছেন। আর (বুখারী, মুসলিম ব্যাতীত) অন্য পাঁচ জনে বর্ণনা করে চার তাকবীর বলার কথা উল্লেখ করেছেন। [২০৯]
আযানের শব্দ দুবার করে আর ইকামাতের শব্দ একবার করে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন বিলাল (রাঃ) যেন জোড়া বা্ক্যে ‘আযান’ ও বিজোড় বা্ক্যে ‘ইকামাত’ দেন (কাদাকামাতিস সালাহ) দু’বার। এভাবে (আযান- ইকামাত) দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছিল। তবে মুসলিমে ইল্লাল ইকক্বামাত তথা ‘ক্বাদা কামাতিস সালাত’ দু’বার বলতে হয়- কথার উল্লেখ করেননি। [২১০] নাসয়ীতে আছে, নাবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ) কে এরূপ আদেশ করেছিলেন। [২১১]
আযান অবস্থায় মুয়াজ্জিনের বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা
আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন- আমি বিলাল (রাঃ) কে তার দু’কানে আঙ্গুল দিয়ে আযান দিতে এবং আযানে এধার ওধার অর্থাৎ ডানে-বামে মুখ ফেরাতে দেখেছি। [২১২] ইবনু মাজাহতে আছে- ‘এবং তিনি তাঁর আঙ্গুলদ্বয় তাঁর দু’কানে ঢুকিয়েছিলেন। [২১৩] আবূ দাউদে আছে- তিনি ‘হাইয়া আলাস সালাহ্’ বলার সময়ে তাঁর গলাকে ডানে ও বামে ঘুরাতেন, তবে তিনি সম্পূর্ণরুপে ঘুরে যেতেন না। [২১৪] এর মূল বক্তব্য বুখারী, মুসলিমে রয়েছে। [২১৫]
মুয়াজ্জিন উচ্চকণ্ঠের অধিকারী হওয়া মুস্তাহাব
আবূ মাহ্যূয়ার (রাঃ) তাঁর কণ্ঠস্বর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পছন্দনীয় হওয়ায় তিনি তাঁকে আযন শিখিয়ে দেন। [২১৬]
ঈদের সালাতের জন্য আযান ও ইকামত নেই
জাবির বিন সামূরাহ (রাঃ) তিনি বলেন- আমি নাবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে দু’ঈদের- (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার) একাধিকবার সলাত আযান ও ইকামাত ছাড়াই আদায় করেছি। [২১৭] বর্ণনাকারী এবং অনুরুপ হাদীস ইবনু “আব্বাস ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতেও বুখারী এবং মুসলিমে বিদ্যমান।
ছুটে যাওয়া সলাতের জন্য আযান ও ইকামত শরীফত সম্মত
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীগণের ফাজরের সালাতের সময় ঘুমিয়ে পড়া সম্বন্ধে বর্ণিত- “অতঃপর বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন ও তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন, যেভাবে প্রতিদিন আদায় করতেন। [২১৮]
এক আযানে দু’সলাতকে একত্রিত করা যথেষ্ট
জাবির (রাঃ) (হাজ্বের সময় আরাফাহ থেকে মিনা ফেরার পথে) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালফায় আগমন করলেন। অতঃপর এসে মাগরিব ও ‘ইশা সলাত একই আযানে ও দু' ইকামাতে সমাধা করলেন। [২১৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব ও ইশার সলাত এক ইকামাতে জমা (একত্রিত) করে আদায় করলেন।” [২২০] কিন্তু আবূ দাউদ প্রত্যেক সলাতের জন্য কথাটি বৃদ্ধি করেছেন এবং আবু দাউদের অন্য এক বর্ণনায় আছে, "দু’ সলাতের মধ্যে কোন একটিতে (দ্বীতীয় সলাতে) আযান দেয়া হয়নি"।
ফজরের পূর্বে আযানের বিধান
ইবনু 'উমার ও আয়িশা (রাঃ) তারা বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিলাল তো বস্তুতঃপক্ষে রাতে (সুবহি সাদিকের পূর্বে) আযান দেয়। অতএব তোমরা পানাহার (সাহারী খাও) করতে থাকো যতক্ষণ না ইবনু উম্মু মাকতুম্ ফাজরের সলাতের আযান দেয়। তিনি ছিলেন অন্ধ তাই আসবাহতা, আসবাহতা (সকাল করে ফেললেন, সকাল করে ফেললেন) না বলা পর্যন্ত তিনি (ফাজরের) আযান দিতেন না।” [২২১] এ হাদীসের শেষাংশে কিছু ইদরাজ বা রাবীর কিছু বক্তব্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথার সাথে সন্নিবেশিত হয়েছে।” [২২২] ইবনু 'উমার ও আয়িশা (রাঃ) তারা বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিলাল তো বস্তুতঃপক্ষে রাতে (সুবহি সাদিকের পূর্বে) আযান দেয়। অতএব তোমরা পানাহার (সাহারী খাও) করতে থাকো যতক্ষণ না ইবনু উম্মু মাকতুম্ ফাজরের সলাতের আযান দেয়। তিনি ছিলেন অন্ধ তাই আসবাহতা, আসবাহতা (সকাল করে ফেললেন, সকাল করে ফেললেন) না বলা পর্যন্ত তিনি (ফাজরের) আযান দিতেন না।” [২২১] এ হাদীসের শেষাংশে কিছু ইদরাজ বা রাবীর কিছু বক্তব্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথার সাথে সন্নিবেশিত হয়েছে।” [২২২]
সময় আগমন নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে আযানের বিধান
ইবনু ‘উমার (রাঃ) বিলাল ঐ ফজরের (সময়ের অল্প) পূর্বে আযান দিয়েছিলেন। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে- ‘এ বান্দা অবশ্য ঘুমিয়ে গিয়েছিল বলে’ ঘোষণা দিতে নির্দেশ করলেন। আবু দাউদ একে য'ঈফ (দুর্বল) রূপে বর্ণনা করেছেন।” [২২৩]
আযানের জওয়াব দেয়া
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যখন আযান শুনবে তখন মুয়াযযিন যা বলেন তোমরা তাই বলবে।” [২২৪] মু'আবিয়াহ (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বুখারীতে বর্ণিত আছে।" [২২৫] ইবনু উমার (রাঃ) আযানের জবাবের ফাযীলাত সম্বন্ধে বর্ণিত রয়েছে মুয়াযযিন যা বলবেন শ্রোতা সেসব বাক্যই বলবেন। তবে "হায়ইআ আলাস্ সালাহ, হায়ইআ আলাল ফালাহ’ দু'টির জবাবে বলবে- ‘লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।" [২২৬]
আযান দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা অপছন্দনীয়
উসমান বিন আবিল ‘আস (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার গোত্রের (সলাতের) ইমাম করে দিন। তিনি বললেন, তুমি তাদের ইমাম হলে, তাদের দুর্বল লোকের প্রতি খেয়াল রাখবে এবং এমন ব্যক্তিকে মুয়াযযিন নিয়োগ করবে যে বিনিময়ে কোন মজুরী নেবে না। তিরমিয়ী একে হাসান বলেছেন, আর হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [২২৭]
সফরে থাকা অবস্থায় আযান দেওয়া শরীয়তসম্মত
মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ যখন সালাত (এর সময়) উপস্থিত হবে তখন তোমাদের একজন আযান দিবে (এটা একটা বড় হাদীসের খণ্ডাংশ)।” [২২৮]
আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দেরী করা শরীয়তসম্মত
জাবির (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ) -কে বললেন- যখন আযান দিবে থেমে থেমে দিবে আর ইকামাত অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি বলবে। আযান ও ইকামাতের মধ্যে একটা লোক খানা খেয়ে উঠতে পারে ঐ পরিমাণ সময়ের ব্যবধান রাখবে। (হাদীসটির আরো অংশ আছে।)| তিরমিয়ী একে য'ঈফ (দুর্বল) বলেছেন।” [২২৯]
আযানের জন্য অযু করা শরীয়তসম্মত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাতে আছে- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- উযু আছে এরূপ ব্যক্তি ব্যতীত যেন আযান না দেয়।" [২৩০] এটাকেও তিনি য’ঈফ (দুর্বল) বলেছেন। [২৩১]
যখন কোন লোক আযান আর অপরজন ইকামত দিবে তার বিধান
যিয়াদ বিন হারিস তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান দেবে সে ইকামাত দেবে। এটাকেও তিরমিয়ী য'ঈফ (দুর্বল) বলেছেন।” [২৩২] আবদুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আযান (স্বপ্নে) দেখেছি। আর আমি তা দিতেও চাই। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমিই ইকামাত দেবে। এর সানাদেও দুর্বলতা আছে।” [২৩৩]
আযান মুয়াযযিনের দায়িত্বে আর ইক্বামত নির্ভরশীল ইমামের উপর
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আযানের অধিক কর্তৃত্ব মুআযযিনের উপর ন্যস্ত আর ইকামাত ইমাম সাহেবের কর্তৃত্বাধীন। ইবনু আদী, তিনি হাদীসটিকে য'ঈফ (দুর্বল)ও বলেছেন। [২৩৪] বর্ণনাকারী বাইহাকীতে অনুরূপ একটি হাদীস ‘আলী (রাঃ) -এর বচন বলে বর্ণিত। [২৩৫]
আযান ও ইকামতের মাঝে দু'আ করা মুস্তাহাব
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু‘আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন।” [২৩৬]
আযানের পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য ওসীলা মর্যাদার দু'আ করা মুস্তাহাব
জাবির (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে (নিম্ন বর্ণিত দু'আটি) বলবে- উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কা’ইমাতি, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলতা, ওয়াব-আসহু মাকামাম মাহমূদা নিল্লাষী ওয়া আদতাহু। অর্থঃ হে আল্লাহ। পরিপূর্ণ আহবান এবং আসন্ন সালাতের তুমিই প্রভু। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দান কর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, সুমহান মর্যাদা এবং বেহেশতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান মাকামে মাহমুদ-এ তাকে অধিষ্ঠিত কর, যার প্রতিশ্রুতি তুমিই তাকে দিয়েছ। -তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [২৩৭]
সলাতের শর্তসমূহ
সলাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত
আলী বিন ত্বলক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সলাতে বাতকর্ম করবে, (সলাত ছেড়ে) সরে গিয়ে উযু করবে ও সলাত পুনরায় সলাত আদায় করবে। ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন।” [২৩৮] আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তির বমি, নাকের রক্ত বা মযি বের হবে সে যেন সলাত ছেড়ে দিয়ে অযু করে, আর (এর মাঝে) কোন কথা না বলে সলাতের বাকী অংশ আদায় করে নেয়। ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন এবং আহমাদ একে যঈফ বলেছেন। [২৩৯]
বালেগা মহিলা উড়না ব্যতীত সলাত আদায় করবে না
আয়িশা (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- হায়িযা (সাবালিকা) মেয়েদের ওড়না (মস্তকাবরণ) ব্যতিত আল্লাহ্ সলাত কবুল করবেন না। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ্ বলেছেন। [২৪০]
এক কাপড়ে সলাত আদায় করা বৈধ ও তা পরিধানের পদ্ধতি
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। মুসলিমে আছে, (বড়) চাদর হলে তার কিনারাদ্বয়কে দু-কাঁধের উপর বিপরীতমুখী করে রেখে নেবে। (অর্থাৎ বড় প্রশস্ত একটি কাপড়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে সলাত আদায় করা চলবে)। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করবে। [২৪১] আবূ হুরাইরা (রাঃ) (বড় কাপড় থাকলে) ঘাড়ের উপর কিছু না দিয়ে যেন কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় না করে । [২৪২]
সলাতে মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্র
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মেয়েরা কি জামা ও দোপাট্টা (ওড়না) পরে সলাত আদায় করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে- যদি জামা দ্বারা পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা যায়। মুহাদ্দিসগণ এর মাওকুফ (সাহাবীর বক্তব্য) হওয়াকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। [২৪৩]
যে ব্যক্তি মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় কেবলা ব্যতীত সলাত আদায় করবে তার বিধান
আমির বিন রাবি’আহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে কোন এক অন্ধকার রাত্রে ছিলাম। সলাতের সময় কিবলার দিক নির্ণয় করা আমাদের উপর কঠিন হয়ে পড়লো। আমরা সলাত সমাধান করলাম। কিন্তু ভোরে যখন সূর্যোদয় হল তখন জানা গেল যে, আমরা কিবলামুখী হয়ে সলাত আদায় করিনি। অতঃপর আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “তোমরা যেদিকেই মুখ কর না কেন, সেই দিকেই আল্লাহ্র চেহারা রয়েছে।” –তিরমিযী একে য‘ঈফ (দুর্বল) রূপে বর্ণনা করেছেন। [২৪৪]
কেবলা থেকে সামান্য পরিমাণ সরে গেলে তার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলবাসীদের জন্যে) পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে কিবলাহ রয়েছে। তিরমিযী; - বুখারী (রহঃ) একে কাবী (মজবুত) সানাদের হাদীসের মধ্যে গণ্য করেছেন। [২৪৫]
সফর অবস্থায় মুসাফিরের পক্ষে নফল সলাত আদায়ের বর্ণনা
আমির বিন রাবি’আহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যে কোন দিকে গমনকারী সওয়ারী (জন্তুর) উপর সলাত আদায় করতে দেখেছি। [২৪৬] বুখারি বৃদ্ধি করেছেনঃ (রুকূ‘ সাজদাহর সময়) তিনি তাঁর মাথা নুইয়ে ইঙ্গিত করতেন। আর তিনি ফারয সলাতে এরূপ করতেন না। [২৪৭] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের অবস্থায় যখন নফল সলাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি সওয়ারী জন্তুটিকে কিবলামুখী করে নিয়ে আল্লাহু আকবার (তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে) বলে সলাত আরম্ভ করতেন, তারপর তাঁর সওয়ারীর মুখ যে কোন দিকে যেতো। এর সানাদটি হাসান। [২৪৮]
যে সকল স্থানে সলাত আদায় নিষিদ্ধ
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতিত পৃথিবীর সব জায়গাই সলাত আদায়ের স্থান। এ হাদীসের সানাদে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে। [২৪৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতটি জায়গায় সলাত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন- (১) ময়লা ফেলার স্থানে, (২) পশু যবহ করার স্থানে, (৩) কবরস্থানে, (৪) চলাচলের রাস্তায়, (৫) হাম্মামে (গোসল খানায়), (৬) উট বাঁধবার স্থানে, (৭) বাইতুল্লাহর ছাদের উপর। -তিরমিযী বর্ণনা করে একে য’ঈফ (দুর্বল) বলেছেন । [২৫০]
সলাতে কবরকে সামনে রাখা নিষেধ
আবু মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, তোমরা কবরকে সামনে রেখে সলাত আদায় করবে না ও তার উপর বসো না।” [২৫১]
জুতা জোড়া পবিত্র হলে তাতে সলাত আদায় করা বৈধ
আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম মাসজিদে আসলে সে যেন তার জুতার প্রতি লক্ষ্য করে, যদি তাতে কোন নাপাকি বা ময়লা বস্তু দেখে তবে যেন তা মুছে পরিষ্কার করার পর তা পরে সলাত আদায় করে। ইবনু মাজাহ একে সহীহ বলেছেন। [২৫২]
মোজাকে নাপাকী থেকে পবিত্র করার পদ্ধতি
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ তার চামড়ার মোজায় কোন নাপাক বস্তু পাড়ায় তবে ঐ মোজাদ্বয়ের পবিত্রতাকারী হচ্ছে মাটি। (অর্থাৎ মাটিতে ঘসে পাক ও সাফ করে নেবে)- ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [২৫৩]
সলাতে কথা-বার্তা বলা নিষেধ এবং এ বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির হুকুম
মু'আবিয়াহ বিন হাকাম (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই সলাত মানুষের কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্র নয়, এটা তো কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্যই সুনির্দিষ্ট। [২৫৪]
সলাতে কথা-বার্তা বলার বিধান
যায়দ ইবনু আরক্বাম তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে সলাতের মধ্যে কথা বলতাম। আমাদের যে কেউ তার সঙ্গীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে কথা বলত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল- "তোমরা তোমাদের সলাতসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ানুমবর্তিতা রক্ষা কর; বিশেষ মধ্যবর্তী (আসর) সলাতে, আর তোমরা (সলাতে) আল্লাহর উদ্দেশে একাগ্রচিত্ত হও"- (সূরাহ আল-বাকারাহ ২/২৩৮)। অতঃপর আমরা সলাতে নীরব থাকতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [২৫৫]
সলাতে কম-বেশি হলে মুক্তাদী যা করবে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ (ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবীহ-সুবহানাল্লাহ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় তাসফীক’ (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা)। মুসলিমে সলাতের মধ্যে শব্দটি অতিরিক্ত আছে। [২৫৬]
সলাতে ক্ৰন্দন করায় (সলাত) বিনষ্ট হয় না
মুতাররিফ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর তার পিতা আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাত (এমন বিনয়ের সহিত) আদায় করতে দেখেছি যে, সলাতের মধ্যে তার কান্নার ফলে হাড়ির মধ্যে টগবগ করে ফুটা পানির শব্দের ন্যায় তার বক্ষদেশে শব্দ বিরাজ করত। ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [২৫৭]
সলাতে গলা-খাকড়ানি দেয়াতে সলাত নষ্ট হয় না
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমীপে, দিনে দুটি সময় আমার উপস্থিতি ছিল। ফলে, যখন তাঁর (নফল) সলাত আদায় করার সময় আমি যেতাম তখন তিনি (অনুমতি জ্ঞাপক) গলা খোকড় (কাশির ন্যায় শব্দ) দিতেন। [২৫৮]
মুসল্লী ব্যক্তি ইঙ্গিতের মাধ্যম সলামের উত্তর দিবে
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বিলাল (রাঃ) -কে বললাম, কেমন করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করার সময় তাদের (সহাবীগণের) সালামের জবাব দিতেন? রাবী বলেন, বিলাল (রাঃ) বললেন, তিনি এভাবে হাত উঠাতেন, (অর্থাৎ হাতের ইশারায় জবাব দিতেন)। তিরমিয়ী একে সহীহ বলেছেন। [২৫৯]
সলাতে ছোট বাচ্চা কোলে নেয়া ও কোল থেকে নামানোর বিধান
আবু কাতাদাহ্ আনসারী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত কন্যা উমামাহ (রাঃ) -কে কাধে নিয়ে সলাত আদায় করতেন। তিনি যখন সাজদাহয় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। [260] মুসলিমে আছে- তিনি তখন মাসজিদে লোকেদের সলাতে ইমামতি করছিলেন।
সলাতে সাপ ও বিচ্ছু হত্যা করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- দুটি কালো জন্তুকে সলাত আদায়ের সময়েও হত্যা করবে, সাপ ও বিচ্ছু। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [২৬১]
সালাত আদায়কারী ব্যাক্তির সুতরা বা আড়
মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিধান
আবূ জুহাইম বিন্ হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায় কারী ব্যক্তির সন্মুখে দিয়ে অতিক্রম করার পাপ সম্বন্ধে যদি অতিক্রমকারী জানতো তবে সে তার সন্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ (বছর) দাঁড়িয়ে থাকাকেই তার জন্য শ্রেয় মনে করতো। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [২৬২] বায্যারে ভিন্ন সানাদে ‘চল্লিশ বছর’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। [২৬]
সলাতে সুতরাহ – এর উচ্চতার পরিমাণ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘তাবুক যুদ্ধে’ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়কারীর সুত্রা (আড়) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেনঃ তা উটের পালানের পেছনের কাঠির সমপরিমাণ হবে। [২৬৪]
সুতরাহ গ্রহনের নির্দেশ ও তার প্রশস্ততার কোন সীমারেখা নেই
সাবরাহ বিন্ মা’বাদ আল জুহ্নী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায় করার সময় সুত্রা করে নেবে যদিও একখানা তীর দিয়ে তা করা হয়। হাকিম। [২৬৫]
সলাত বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের বর্ণনা
আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায় করার সময় যদি উটের পালানের শেষাংশের কাঠির পরিমাণ একটা সুত্রাহ দেয়া না হয় আর উক্ত মুসল্লীর সন্মুখ দিয়ে (প্রাপ্ত বয়স্কা) স্ত্রীলোক, গাধা ও কালো কুকুর অতিক্রম করলে সলাত (এর-একাগ্রতা) নষ্ট হয়ে যাবে। এটা একটা দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ।’ তাতে একস্থানে আছেঃ কাল কুকুর হচ্ছে শয়তান। [২৬৬] বর্ণনাকারী সহিহ মুসলিমে কুকুরের কথা ব্যতীত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [২৬৭] আব্বাস (রাঃ) তবে তাতে উক্ত হাদীসের শেষাংশ (কুকুরের উল্লেখ) নাই এবং তাতে নারীকে ‘হায়িযা (হায়িয শুরু হয়েছে এমন বয়সের) বিশেষণের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। [২৬৮]
মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর সাথে কেমন আচরণ করা হবে
আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি লোকেদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সলাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে সে যেন তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান। [২৬৯] বর্ণনাকারী ভিন্ন এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তির সঙ্গে শয়তান তার সাথী রয়েছে।’ [২৭০]
কোন কিছু না থাকলে রেখা টেনে সুতরাহ দেয়া বৈধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ সলাত আদায় করতে যাবে তখন যেন তার সন্মুখে কিছু স্থাপন করে, না পেলে লাঠি খাড়া করে দেয়, তাও যদি না হয় তাহলে একটা রেখা টেনে দিবে। এর ফলে সুত্রার বাইরে সামনে দিয়ে কেউ গেলে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আহমাদ, ইবনু মাজাহ। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। যিনি এটিকে ‘মুযতারিব্’ (শব্দ বিন্যাসে ত্রুটি) বলে ধারনা করেছেন তিনি ভুল করেছেন। বরং হাদিসটি হাসান। [২৭১]
সলাতকে কোন কিছু বিনষ্ট করতে পারে না
আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কিছুই সলাতকে বিনষ্ট করতে পারবে না; তবে তোমরা সাধ্যানুযায়ী প্রতিহত করতে (বাধা দিতে) থাকবে। এর সানাদ দুর্বল। [২৭২]
সলাতে খুশূ‘ বা বিনয় নম্রতার প্রতি উৎসাহ প্রদান
সলাতে কোমরে হাত দেয়া নিষেধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুখতাসির’ বা কোমরে হাত রেখে সলাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। [২৭৩] শব্দ বিন্যাস মুসলিমের এবং মুখতাসির অর্থ হলো সে তার হাতকে কোমরে রাখে। আয়িশা (রাঃ) মুখতাসির বা কোমরে হাত রাখা অবস্থায় সলাতে দাঁড়ান’ হচ্ছে ইয়াহূদ জাতির কাজ। [২৭৪]
রাতের খাবার উপস্থিত হলে সলাতে বিলম্ব করার বিধান
আনাস (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-রাতের খাবার সামনে এসে গেলে মাগ্রিবের সলাত আদায়ের পূর্বেই খানা শুরু করবে। [২৭৫]
সলাতে কংকর সরানোর বিধান
আবূ যার গিফারী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতে দাঁড়িয়ে কেউ যেন সামনের কঙ্কর অপসারণ না করে। কেননা, সলাত আদায়কারী ব্যক্তির সম্মুখে আল্লাহ্র রহমত সমাগত হয়। সহীহ্ সানাদ সহকারে ৫ জনে [২৭৬] আহমাদ অতিরিক্ত শব্দ বৃদ্ধি করেছেনঃ “একবার কর নাহলে বিরত থাকবে।” [২৭৭] মু‘আইকিব্ (রাঃ) এর কারণ দর্শান বলেন, ব্যতীত পূর্বানুরূপ আরো একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [২৭৮]
সলাতে এদিক সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করা নিষেধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সলাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়। [২৭৯] আনাস (রাঃ) তিনি একে হহীহ্ বলেছেন। তাতে আছে- ‘সলাতে এদিক ওদিক দৃষ্টি দেয়া হতে অবশ্য বিরত থাকবে; কেননা এটা একটা সর্বনাশকর কর্ম। তবে আবশ্যক হলে তা নফল সলাতে (বৈধ)। [২৮০]
সলাত অবস্থায় থুথু ফেলা নিষেধ তবে বিশেষ প্রয়োজনে বৈধ ও তার পদ্ধতি
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে থাকে, তখন তো সে তার রবের সাথে নিবিড় আলাপে মশগুল থাকে। কাজেই সে যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে; তবে (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। [২৮১] ভিন্ন এক বর্ণনায় রয়েছে অথবা তার পায়ের নীচে। [২৮২]
মুসল্লী এমন বস্ত থেকে দূরে থাকবে যা তাকে অমনোযোগী করে দেয়
আনাস (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের এক দিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সলাত আদায়ের সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে। [২৮৩] আয়িশা (রাঃ) পর্দাখানির চিত্র (ছবি) -গুলো আমাকে সলাত হতে অমনযোগী বা উদাসীন করে দিচ্ছিল।’ [২৮৪
সলাতের সময় আসমানের দিকে দৃষ্টি উঠানো নিষেধ
জাবির বিন্ সামূরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের অবস্থায় লোকেরা যেন তাদের দৃষ্টিকে আকাশের দিকে দেয়া থেকে বিরত থাকে নতুবা তাদের চক্ষু (দৃষ্টিশক্তি) তাদের পানে ফিরে না আসতেও পারে। [২৮৫]
খাবার উপস্থিত রেখে ও পেশাব-পায়খানার যন্ত্রনা আটকিয়ে সলাত আদায়ের বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, খাবার উপস্থিত রেখে সলাত আদায় করা যায় না আর প্রসাব পায়খানায় বেগ চেপে রেখেও সলাত করা যায় না। [২৮৬]
সলাতে হাই উঠা অপছন্দনীয় কাজ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হাইতোলা শয়তানের পক্ষ থেকে, তাই যদি কারো তা আসে তবে সে যেন সাধ্যানুসারে তা প্রতিহত করে। [২৮৭] আর তিরমিযী ‘সলাতের মধ্যে’ কথাটি বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেছেন। [২৮৮]
মাসজিদ প্রসঙ্গ
মাসজিদ তৈরি ও পরিষ্কার করার নির্দেশ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকালয়ে (পাড়া মহল্লায়) মাসজিদ তৈরি করতে এবং তা পরিষ্কার ও সুবাসিত করে রাখতে আদেশ করেছেন। তিরমিযী এটির মুরসাল হওয়াকে সঠিক বলেছেন। [২৮৯]
কবরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; আল্লাহ তা’আলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। কেননা তারা তাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। মুসলিম ‘খ্রিস্টান’ শব্দটি বর্ধিত করেছেন। [২৯০] আয়িশা (রাঃ) তাদের মধ্যে কোন সৎ লোক মারা গেলে তাঁরা তাঁর কবরের উপর মাসজিদ বানাতো। এতে আরো আছে- “এরা সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম। [২৯১]
কাফির ব্যক্তির মাসজিদে প্রবেশ করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু সৈন্য (নজদে) পাঠিয়েছিলেন- তাঁরা একজনকে ধরে নিয়ে এসে মাসজিদের কোন একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখল। [২৯২]
মাসজিদে কবিতা পাঠ করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) উমার (রাঃ) হাস্সান (রাঃ) -কে মাসজিদে কবিতা পাঠরত অবস্থায় পেয়ে তার দিকে অসন্তুষ্টি ভাব নিয়ে দৃষ্টি করলেন। ফলে হাস্সান (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ এখানে আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির উপস্থিতিতেও আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। (অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপস্থিতিতে)। [২৯৩]
মাসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়ার বিধান
আবূ হুরাইরা (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – যে শুনতে পাবে কেউ মাসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা করছে শ্রবণকারী যেন বলে – ‘আল্লাহ্ যেন তোমাকে তা আর ফিরিয়ে না দেন।‘ কেননা মাসজিদ এরূপ (ঘোষণার) কাজের জন্য তৈরী করা হয়নি। [২৯৪]
মাসজিদে ক্রয়- বিক্রয় করার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কোন ব্যক্তিকে মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে দেখলে তাকে বলবে, আল্লাহ্ তোমার ব্যবসাকে যেন লাভজনক না করেন। তিরমিযী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। [২৯৫]
মাসজিদে হাদ্দ (শরীয়াত কর্তৃক শাস্তি) প্রতিষ্ঠা করা নিষেধ
হাকিম বিন্ হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে ‘হদ্দ’ কার্যকর করা ও ‘কিসাস’ (হত্যার বদলে হত্যা) নেয়া যায় না। - আহমাদ ও আবূ দাঊদ, দুর্বল সানাদে। [২৯৬]
প্রয়োজনে মসজিদে তাঁবু স্থাপন করা বৈধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সা’দ (রাঃ) -এর (হাতের শিরা) যখম হয়েছল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে (তাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করলেন, যাতে নিকট হতে তাঁর দেখাশুনা করতে পারেন। [২৯৭]
মাসজিদে বর্শা বা বল্লম দিয়ে খেলা-ধুলা করা বৈধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি তিনি আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন, এর আমি (তাঁর পিছন থেকে) মাসজিদে হাবশার লোকেদের খেলা অবলোকন করছিলাম। (দীর্ঘ হাদীস) [২৯৮]
মাসজিদে মহিলার অবস্থান ও সেখানে ঘুমানো বৈধ
আয়িশা (রাঃ) একজন কৃষ্ণবর্ণা নারীর জন্যে মাসজিদে (নাবাবীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ সে (দাসীটি) আমার নিকট আসতো আর আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। (দীর্ঘ হাদীস)। [২৯৯]
মাসজিদে থুথু ফেলার হুকুম
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফ্ফারাহ (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেয়া (মুছে ফেলা)। [৩০০]
মাসজিদে চাকচিক্য নিয়ে গর্ব করা নিন্দনীয় ও তা কিয়ামতের আলামত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা মাসজিদের সৌন্দর্য ও সুসজ্জিতকরণ নিয়ে পরস্পর গর্ব না করবে ততক্ষণ ক্বিয়ামাত সংঘঠিত হবে না। ইবনু খুযাইমাহ এটিকে সহীহ বলেছেন। [৩০১]
মাসজিদকে জাঁকজমকপূর্ণ করা শরীয়তসম্মত কাজ নয়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘জাঁকজমকভাবেপূর্ণ মাসজিদ তৈরির নির্দেশ আমি পাইনি।’ ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৩০২]
মাসজিদ থেকে ময়লা- আবর্জনা দূর করার ফযীলত
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কল্যাণজনক কাজগুলো আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। এমনকি ক্ষুদ্র খড়কুটোগুলো কোন ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বাইরে নিক্ষেপ করে এমন কাজও। আবূ দাঊদ ও তিরমিযী, তিরমিযী এটিকে গরীব বলে সাব্যস্ত করেছেন, ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৩০৩]
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সলাত আদায় করার বিধান
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে দু’ রাক’আত সলাত (তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ) আদায় করার পূর্বে যেন না বসে। [৩০৪]
সলাত সম্পাদনের পদ্ধতি
বাণীর মাধ্যমে সলাতের বিবরণ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি সলাতে দাড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযু করবে। তারপর কিলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ’ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সলাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে। শব্দ বিন্যাস বুখারীর এবং ইবনু মাজাহতে মুসলিমের সানাদে রয়েছে (তা‘তাদিলা কায়িমান এর বদলে তাতময়িন্না কায়িমান) শব্দ রয়েছে যার অর্থও হচ্ছে ধীর-স্থির হয়ে দাড়াবে।' [১] আর আহমদে রয়েছে, তুমি তোমার পিঠকে এমনভাবে সোজা করবে যেন সকল হাড় যার যার স্থানে পৌছে যায়। [২] আহমদে ও ইবনু হিব্বানেও রিফাআ বিন রফি (রাঃ) নাসায়ী ও আবু দাউদে উক্ত সহাবী রিফা'আহ থেকে আছে- ‘তোমাদের কারও সলাত অবশ্য ততক্ষণ পূর্ণভাবে সমাধান হবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী ঠিকভাবে উযু করে, তারপর ‘আল্লাহু আকবার বলে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করে। এতে আরো আছে- ‘যদি তোমার কুরআন জানা থাকে তবে তা পড়বে অন্যথায় "আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে। আবু দাউদে আছে- তারপর উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে, তারপর আল্লাহ যা পড়ার তাওফিক দেন তা পড়বে। (হাদিসের মান - হাসান) ইবনু হিব্বানে আছে- ‘ফাতিহার পর ‘তুমি যা পড়ার ইচ্ছা (কুরআন থেকে পড়বে)।(হাদিসের মান - সহিহ)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাতের বিবরণ
আবু হুমাইদ আস-সা‘য়িদী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি (সালাত শুরু করার সময়) তিনি তাকবীর বলে দু' হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ করতেন তখন দু হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। অতঃপর রুকু হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাড়াতেন যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসতো। অতঃপর যখন সাজদাহ করতেন তখন দু হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন না, আবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তার উভয় পায়ের অঙ্গুলির মাথা কিবলাহুমুখী করে দিতেন। যখন দুরাকআতের পর বসতেন তখন বাম পা-এর উপর বসতেন আর ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাকাআতে বসতেন তখন বা পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।
সলাত শুরু করার দু'আসমূহ
‘আলী বিন আবী ত্বলিব (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন (রাতের বেলা) সলাতে দাড়াতেন তখন (তাকবীরে তাহরীমার পর) বলতেন- উচ্চারণঃ ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরযা হানিফাঁও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সালাতী, ওয়া নুসুকী, ওয়া মাহইয়ায়া, ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, লা শরীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাব্বী ওয়া আনা আবদুকা, যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনুবী জামী'আন ইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা। ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলাকি লা ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা, ওয়াসরিফ আন্নী সাইয়িয়াহা, লা ইয়াসরিফু আন্নী সাইয়িয়াহা ইল্লা আনতা, লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা, ওয়ালখায়রু কুল্লুহূ বিয়াদায়কা, ওয়াশ-শাররু লাইসা ইলায়কা, আনা বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবারাকতা ওয়া তা‘য়ালায়তা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলায়কা। একজন সত্যিকার ঈমানদার হিসাবে আমি মুখ ফিরাচ্ছি তাঁর দিকে যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আমি আল্লাহর সঙ্গে কারো শরীক করি না। যথার্থই আমার সালাত (সলাত) এবং আমার ইবাদত, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তার কোন শরীক নেই। আমাকে এরূপ হুকুম করা হয়েছে এবং যারা আজ্ঞানুবর্তী হয়েছে আমি তাদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমি সৃষ্টি জগতের রব। তুমি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার বান্দা। আমার নিজের আত্মার উপর অন্যায় করেছি এবং আমার গুনাহ শনাক্ত করতে পেরেছি। আমার সকল সীমালংঘন মাফ করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত আর কেউ আমার গুনাহ মাফ করতে পারে না। আমার চরিত্রের উৎকর্ষতার পথ নির্দেশ দাও, কারণ তুমি ব্যতীত অন্য কেউ উৎকর্ষের পথ নির্দেশ দিতে পারে না। আমার চরিত্রের পাপসমূহ থেকে আমাকে রক্ষা কর, কারণ, যথার্থই তুমি ব্যতীত আর কেউ আমাকে পাপ থেকে রক্ষা করতে পারে না। আমি তোমার সামনে দাড়িয়ে মিনতি করি। সকল ভাল তোমার হাতে, মন্দ তোমাকে ছুঁতে পারে না। আমি নিজেকে তোমার সামনে উপস্থাপন করছি, সম্পূর্ণভাবে তোমার কাছে। তুমি অতি পবিত্র অতি-মহিমাম্বিত। আমি তোমার কাছে মার্জনা চাই এবং তোমার নিকট অনুতপ্ত। - এর অন্য রিওয়ায়েতে আছে- রাত্রের সলাতে এ দুআটি পাঠ করতেন।” [৩০৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি তাঁকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন- এ সময় আমি বলি- "হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। [৩০৬] 'উমার (রাঃ) তিনি সলাতে তাকবীর তাহরীমার পর বলতেন, উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা। অর্থঃ মহিমা তোমার হে আল্লাহ এবং প্রশংসাও। মর্যাদাসম্পন্ন রাজাধিরাজ, তুমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। —মুসলিম মুনকাতি‘ সানাদে এবং দারাকুৎনী মাওসুল (সংযুক্ত) ও মাওকুফ-উভয়রপ সানাদে বর্ণনা করেছেন।প্রকৃতপক্ষে হাদিসটি মাওকূফ। [৩০৭]
সলাতে আশ্রয় প্রার্থনা করা শরীয়তসম্মত
ৰু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (আহমদ, আৰু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিয়ী, ইবনু মাজাহ) আর তাতে আছে -তাকবীর তাহরীমার পর (সানার শেষাংশে) এ অংশটুকুও বলতেন, উচ্চারণঃ আ‘উযু বিল্লাহিস সামী‘য়িল ‘আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম মিন হামযিহী ওয়া নাফখিহী ওয়া নাফসিহী। অর্থঃ সর্ব শ্রোতা ও সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট বিতাড়িত ও ধিকৃত শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার তন্ত্রমন্ত্রের ফুঁকফাক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [৩০৮]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাতের বৈশিষ্ট্য
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) দ্বারা সলাত ও ‘আলহামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন’ দ্বারা কিরাআত আরম্ভ করতেন। আর যখন রুকু‘ করতেন তখন মাথা না উচু রাখতেন, না নিচু- বরং সোজা সমতল করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন সোজা হয়ে না দাড়িয়ে সাজদাহতে যেতেন না; পুনরায় যখন সাজদাহ থেকে মস্তক উঠাতেন তখন সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সাজদাহতে যেতেন না। আর প্রত্যেক দুরাকাআতের শেষে আত্তাহিয়াতু পাঠ করতেন ও বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর (ভর করে) বসতেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখতেন। আর ‘উক্বাতুশ শায়তান’ [৩০৯] নামক আসনে বসতে নিষেধ করতেন। আর হিংস্র জম্ভর ন্যায় কনুই পর্যন্ত দু' হাতকে মাটিতে স্থাপন করতে নিষেধ করতেন, আর সালামের মাধ্যমে সলাত সমাপ্ত করতেন। এর সানাদে কিছু দূর্বলতা রয়েছে।” [৩১০]
সলাতে দু’হাত উত্তোলন ও হাত উত্তোলনের স্থানসমূহ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তার কাধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ’তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ’ হতে মাথা উঠাতেন তখনও দু'হাত উঠাতেন।” [৩১১] বর্ণনাকারী আবু হুমাইদ থেকে আবু দাউদে আছে- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উভয় কাঁধ বরাবর দু’ হাত ওঠাতেন তারপর আল্লাহু আকবার বলতেন।” [৩১২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীসে আরো আছেঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ হাত দু’ কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতেন। [৩১৩]
সলাতে দণ্ডায়মান অবস্থায় দু’হাত রাখার স্থান
ওয়ায়িল বিন্ হুজ্র তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সলাত আদায় করেছিলাম, তিনি স্বীয় ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে তাঁর সিনার উপর [৩১৪] স্থাপন করলেন। ইবনু খুযাইমাহ। [৩১৫]
সলাতে সূরা-ফাতিহা পড়ার বিধান
উবাদাহ ইব্নু সমিত (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সলাতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পড়ল না তার সলাত হলো না। দারাকুৎনী ও ইবনু হিব্বানের সংকলিত হাদীসে আছে- যে সলাতে সূরা ফাতিহা পঠিত হয় না সে সলাত আদায় হয় না। (হাদিসের মানঃ সহিহ) ২৭৯ নং হাদিসটি অনুবাদ বইয়ে ২ বার এসেছে। প্রথমটি উপরে দ্বিতীয়টি নিচে দেয়া হল - ২৭৯. আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু হিব্বানে আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমরা হয়তো ইমামের পিছনে (কুরআন) পড়। আমরা বললাম, হাঁ পড়ি, তিনি বললেন, সূরা ফাতিহা ব্যতীত তা করবে না (পড়বে না)। কেননা, যে এটা পড়েনা তার সলাত হয় না। (হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস)
সলাতে বিসমিল্লাহ্ জোরে বা প্রকাশ্যে পড়ার বিধান
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র (রাঃ) এবং ‘উমার (রাঃ) (আরবী) দিয়ে সলাত শুরু করতেন। [৩১৭] মুসলিমে (এ সম্বন্ধে) আরো আছে- কিরাআতের প্রথমেও ‘বিস্মিল্লাহির রহমানির রহীম’ (প্রকাশ্যে) বলতেন না, শেষেও না। আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনু খুযাইমাহতে আছে- ‘তাঁরা বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ সশব্দে পাঠ করতেন না।’ ইবনু খুযাইমাহ এর অন্য বর্ণনায় আরো আছে, তাঁরা বিসমিল্লাহ চুপিসারে পড়তেন। মুসলিমের বর্ণনা দ্বারা বিসমিল্লাহ উচ্চৈঃস্বরে না পড়ার প্রমাণ বহন করে, তবে যারা এ বর্ণনাকে দুর্বল বলেছেন তাদের বিরোধিতার কথা স্বতন্ত্র। নু’আইম আলমুজ্মির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছি, তিনি ‘বিসমিল্লা-হি্র রহমা-নির রহীম’ পড়লেন তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন, তারপর ‘অলায্ যা-ল্লীন’ পর্যন্ত পড়ে ‘আমিন’ বললেন এবং প্রত্যেক সাজদাহ যাবার সময় ও সাজদাহ থেকে ওঠার সময় ‘আল্লাহ্ আকবার’ বলতেন। তারপর তিনি সালাম ফিরাবার পর বলতেন- ঐ সত্ত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি তোমাদের মধ্যে সলাতের দিক দিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্য রক্ষাকারী। [৩১৮]
বিসমিল্লাহ সূরা ফাতেহার আয়াতের অন্তর্ভুক্ত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমরা সূরা ফাতিহা পাঠের সময় ‘বিস্মিল্লাহির রহমানির রহীম’ পাঠ করবে। কেননা ওটা তারই একটা আয়াত। দারাকুৎনী হাদীসটির মওকুফ হওয়াকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। [৩১৯]
ইমামের আমীন উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা শরীয়তসম্মত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উম্মুল কুরআন বা সূরা ফাতিহা পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন তাঁর কন্ঠস্বর উঁচু করে ‘আমীন’ বলতেন। দারাকুৎনী একে হাসান বলেছেন; হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। [৩২০] বর্ণনাকারী আবূ দাঊদ ও তিরমিযীতে ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [৩২১]
যে মুসল্লী কুরআন ভালভাবে পড়তে জানে না তার বিধান
আবদুল্লাহ্ বিন আবূ ‘আউফাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বলল- ‘আমি কুরআনের কোন অংশ গ্রহণে (মুখস্ত করতে) সক্ষম নই, তাই আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেন যা আমার জন্য যথেষ্ঠ হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বলবে, ‘সুব্হানাল্লাহ্’ ‘আল্হামদুলিল্লাহ্’ অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, অলা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম্। (সংক্ষিপ্ত) ইবনু হিব্বান, দারাকুৎনী ও হাকিম এটিকে সহীহ্ বলেছেন। [৩২২] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সলাত পড়তেন, তাতে তিনি যুহর ও ‘আসরের প্রথম দু’ রাক’আতে সূরাহ্ ফাতিহার সঙ্গে আরও দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। কখনো কোন আয়াত শুনিয়ে পড়তেন। প্রথম রাক’আত দীর্ঘ করতেন। আর শেষের দু’রাক’য়াতে তিনি (কেবল) সূরাহ্ ফাতিহা পড়তেন। [৩২৩]
সলাতে কিরাত পাঠ করার পরিমাণ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন-আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুহর ও আসরের কিয়াম' -কে (কিরাআতকালে দাঁড়ান অবস্থাকে) অনুমান করতাম। তার যুহরের প্রথম দুরাকাআতের কিয়াম সাজদাহ সূরা পাঠের সময়ের পরিমাণ হত, আর শেষের দুরাকাআতের কিয়ামকে এর অর্ধেক পরিমাণ, আর আসরের প্রথম দুরাকাআতের কিয়ামকে যুহরের শেষের দুরাকাআতের কিয়ামের অনুরূপ আর শেষের দুরাকাআতের কিয়ামকে এর অর্ধেক সময়ের মত অনুমান করতাম।” [৩২৪] সুলাইমান বিন ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন- অমুক সহাবী যুহরের ফার্য সলাতের প্রথম দু‘রাকা‘আতকে লম্বা করতেন ও ‘আসরকে হালকা করতেন এবং মাগরিবের সলাতে কুরআনের কিসারে মুফাস্সাল, ইশার সলাতে ওয়াসাতে মুফাস্সাল ও ফাজরের সলাতে তিওয়ালে মুফাসসালের সূরা পাঠ করতেন। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেন- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের সঙ্গে এর থেকে বেশী সাদৃশ্য পূর্ণ সলাত এ ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পিছনে পড়ি নাই। -নাসায়ী সহীহ সানাদে। [৩২৫]
মাগবির সলাতের ক্বেরাত
জুবার ইবনু মুতা‘ইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে মাগবিরের সলাতে সূরাহ আত-তুর পড়তে শুনেছি। [৩২৬]
জুমু‘আর দিনে ফযর সলাতে যে (সূরা) পাঠ করতে হয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আহর দিন ফাজরের সলাতে (আরবী) এবং (সূরা সাজদাহ)এবং (আরবী) (সূরা দাহর) দু‘টি সূরাহ তিলাওয়াত করতেন।” [৩২৭] ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি ফাজরে এ সূরা দুটি সব সময়ই পাঠ করতেন। [৩২৮]
নফল সলাতে রহমতের আয়াত পাঠ করার সময় (আল্লাহর নিকট) চাওয়া শরীয়তসম্মত
হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন- আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সলাত আদায় করেছি (সলাতে) কুরআন পড়ে রহমতের আয়াতে পৌঁছে রহমত কামনা করতেন এবং আযাবের আয়াতে পৌছে আযাব থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। [৩২৯]
রুকূ’ ও সাজদাতে কুরআন পাঠ করা নিষেধ
ইবনু "আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এ ব্যাপারে সজাগ হয়ে যাও যে, আমাকে রুকূ’ ও সাজদাহর অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব তোমরা রুকু’তে তোমাদের প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব বর্ণনা কর এবং সাজদাহতে গিয়ে আকুল প্রার্থনা কর, তাতে তোমাদের দু'আ যথার্থ কবুল করা হবে।” [৩৩০]
রুকূ’ ও সাজদার দু'আসমূহ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার রুকূ’ ও সাজদাহয় (আরবী) “হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি আপনি আমাকে ক্ষমা করুন” পাঠ করতেন। [৩৩১]
সলাতে তাকবীর বলা ও তাকবীর বলার স্থানসমূহের বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আরম্ভ করার সময় দাড়িয়ে় তাকবীর বলতেন। অতঃপর রুকূ’তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন, আবার যখন রুকূ’ হতে পিঠ সোজা করে উঠতেন তখন (আরবী) বলতেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে (আরবী) বলতেন। অতঃপর সাজদাহয় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। এবং যখন মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবার (দ্বিতীয়) সাজদাহয় যেতে তাকবীর বলতেন এবং পুনরায় মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। এভাবেই তিনি পুরো সলাত শেষ করতেন। আর দ্বিতীয় রাকাআতের বৈঠক শেষে যখন (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) দাড়াতেন তখনও তাকবীর বলতেন।” [৩৩২]
রুকূ’ থেকে উঠার পর যা বলতে হবে
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে বলতেন- উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বনা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা শি‘তা মিন শাইয়িম বা’দু। আহলাস সানা‘য়ী ওয়ালমাজদি, আহাক্কু মা ক'লাল ‘আবদু, ওয়া কুলুনা লাকা আবদুন। আল্লাহুম্মা লা মানি‘ আ লিমা আ‘তায়তা, ওয়ালা ম‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়া লা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। হে আল্লাহ! তোমার জন্য আসমান যমীন পরিপূর্ণ প্রশংসা আর এর ব্যতীত আরো অন্য বস্তু পরিপূর্ণ প্রশংসাও-যা তুমি চাও। তুমি প্রশংসা ও মর্যাদার একমাত্র অধিকারী, এটা বড়ই ন্যায্য কথা যা তোমার বান্দা বলল, আমরা সকলেই তোমারই বান্দা। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের যা দেবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই এবং তুমি যা দেবে না তা দেবারও কেউ নেই। কোন শক্তিমানই সাহায্য করতে পারে না কারণ সকল শক্তিই তোমারই করায়ত্তে। [৩৩৩]
যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর সিজদা করতে হবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সাজদাহ করতে নির্দেশিত হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অর্ন্তভূক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাটু এবং দু‘ পায়ের আঙ্গুল সমূহ দ্বারা। [৩৩৪]
সাজদার সময় দু’ হাত যেভাবে রাখতে হবে
ইবনু বুহাইনা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতেন, তখন উভয় হাত এমন ফাঁক করতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। বুখারী-মুসলিম [৩৩৫] বারাআ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি যখন সাজদাহ করবে তখন তোমার দু-হাতের তালু মাটিতে রাখবে ও কনুইদ্বয় উঁচু করে রাখবে। [৩৩৬]
রুকু‘ ও সাজদায় দু’হাতের আঙ্গুল সমূহের অবস্হা
ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ করার সময় আঙ্গুলগুলো (হাঁটুর ঊপর) ফাঁক-ফাঁক করে রাখতেন, আর যখন সাজদাহতে যেতেন তখন তাঁর আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখতেন। [৩৩৭]
বসে সালাত আদায়ের বিবরণ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে চার জানুর উপর বসে (অসুস্হাবস্হায়) সালাত আদায় করতে দেখেছি। ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৩৩৮]
মুসল্লী দু’সাজদার মাঝে যা পড়বে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’সাজদার মাঝখানে (বসে) বলতেনঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া আফিনী, ওয়ারযুকনী। (হে প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুখী করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।) হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [৩৩৯]
দ্বিতীয় অথবা চতূর্থ রাকায়াতে দাঁড়ানোর পূর্বে সিজদার পরে বসার বিধান
মালিক ইবনু হুয়াইরিস লাইসী (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর সালাতের বেজোড় রাক’আতে (সিজদাহ হতে) উঠে না বসে দাঁড়াতেন না। [৩৪০]
দুর্ঘটনা বা বিপদে দু’আয়ে কুনূত পাঠ করা শরীয়তসম্মত
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাসব্যাপী আরবের কতিপয় গোত্রের প্রতি বদদু’আ করার জন্য সালাতে রুকুর পর দু’আ কুনূত পাঠ করেছেন । [৩৪১] বর্ণনাকারী আহমাদ ও দারাকুৎনীতে অনুরুপ রয়েছে তবে ভিন্ন একটি সানাদে কিছু অতিরিক্ত কথা রয়েছেঃ “কিন্তু ফজরের সালাতে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় না নেয়া পর্যন্ত ‘কুনূত’ করা ছাড়েননি”। [৩৪২] আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল কোন সম্প্রদায়ের পক্ষে দু’আ বা বিপক্ষে বদদু’আ (অভিসম্পাত) করার জন্য ‘কুনূত’ করতেন। ইবনু খুযাইমা একে সহীহ বলেছেন। [৩৪৩] সা'দ ইবনু তারেক আল-আশজাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বাকর, ‘উমার, উসমান ও ‘আলী (রাঃ) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছেন। তারা কি ফজরের সলাতে দু'আ কুনৃত পড়তেন? তিনি বলেন, হে বৎস! এটা তো বিদআত। [৩৪৪]
বিতরের কুনুতে যা পড়তে হয়
হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিতর সলাতের কুনৃতে পড়ার জন্য কতগুলো বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন যা আমি বিতর সলাতের কুনুতে পড়ে থাকি। উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাহদিনী কীমান হাদায়তা, ওয়া আফিনী ফীমান আফায়তা, ওয়া তাওয়াল-লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বারিক লী ফীমা আ‘তায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা কাদায়তা, ফাইন্নাকা তাকদী ওয়া লা ইয়ুকদা আলায়কা ইন্নাহু লা ইয়াদিল্লু মান ওয়ালায়তা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তা'আলায়তা। "হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান কর, যাদের তুমি হিদায়াত করেছ তাদের সাথে। আমাকে মাফ করে দাও, যাদের মাফ করেছ তাদের সাথে। আমার অভিভাবক হও, যাদের অভিভাবক হয়েছে তাদের সাথে। তুমি আমাকে যা দান করেছ তাতে বরকত দাও। আর আমাকে ঐ অনিষ্ট হ’তে বাচাও, যা তুমি নির্ধারণ করেছ। তুমি ফায়সালা কর কিন্তু তোমার উপরে কেউ ফায়সালা করতে পারে না। তুমি যার সাথে শক্ৰতা রাখ, সে সম্মান লাভ করতে পারে না। নিশ্চয়ই অপমান হয়না সেই যাকে তুমি মিত্র হিসাবে গ্রহণ করেছ। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময়, তুমি উচ্চ এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর রহমত অবতীর্ণ হোক'। তাবারানী ও বাইহাকী বৃদ্ধি করেছেনঃ উচ্চারণঃ ওয়ালা ইয়া‘উযযু মান ‘আদাইতা’ "তুমি যার সাথে শক্ৰতা পোষণ কর সে কখনো ইজ্জত লাভ করতে পারে না।" নাসায়ীতে ভিন্ন সূত্রে আরো রয়েছেঃ উচ্চারণঃ ওয়া সল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি “আর নবীর প্রতি আল্লাহর সলাত (দরুদ) বর্ষিত হোক। [৩৪৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন- নাবী (: আমাদেরকে দুআ শিখিয়ে দিতেন, যার দ্বারা আমরা ফাজরের কুনুতের সময় দুআ করতাম। এর সানাদে দুর্বলতা রয়েছে। [৩৪৬]
সাজদায় গমনের পদ্ধতি
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সলাতে সাজদায় যাবে তখন যেন উটের মত না বসে এবং সে যেন হাটুদ্বয় রাখার পূর্বে তার দু'হাত মাটিতে রাখে। এ হাদীসটি ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস থেকে শক্তিশালী। [৩৪৭] বর্ণনাকারী উক্ত হাদীসে আছেঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সাজদাহর সময় তাঁর দু’হাতের পূর্বে দু' হাঁটু মাটিতে রাখতে দেখেছি। প্রথম হাদীসটি অধিক শক্তিশালী কারণ, ইবনু উমর (রাঃ) হাদীসে উক্ত হাদীসের শাহিদ (অনুরূপ) [৩৪৮] বর্ণনাকারী আর ইবনু খুযাইমাহ একে (ইবনু উমারের হাদীসকে) সহীহ বলেছেন, এবং বুখারীও এটাকে মুআল্লাক-মাওকুফরুপে বর্ণনা করেছেন। [৩৪৯]
তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দু'হাত রাখার পদ্ধতি
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহহুদে (আত্তাহিয়াতু পড়ার জন্য) বসতেন তখন বাম হাত বাম হাঁটুর উপর ও ডান হাত ডান হাটুর উপর রাখতেন এবং (আরাবীয় পদ্ধতিতে) তিল্পান্ন গণনার ন্যায় (ডান) হাতের শাহাদাত ব্যতীত আঙ্গুলগুলোকে গুটিয়ে নিতেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। মুসলিমের ভিন্ন একটি রিওয়ায়াতে রয়েছেঃ আঙ্গুলগুলোকে ভাঁজ করে নিয়ে কেবল বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম শাহদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন। [৩৫০]
তাশাহহুদ
আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘উদ) (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তাই যখন তোমরা কেউ সলাত আদায় করবে, তখন সে যেন বলে (আরবী) উচ্চারণঃ আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান-নাবিইউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহ ওয়া রসূলুল্লাহু। "সকল মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর বর্ষিত হোক।" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা'বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দা ও রসূল) -ও পড়বে।; শব্দ বিন্যাস বুখারীর।” [৩৫১] নাসায়ীতে আছে, আমাদের উপর তাশাহহুদ ফার্য হবার পূর্বে আমরা উপরোক্ত তাশাহহুদ পড়তাম। আহমাদে আছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (ইবনু মাস‘উদকে) তাশাহহুদ শিখিয়েছিলেন আর এ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, লোকেদেরকেও তিনি যেন তা শিখিয়ে দেন। [৩৫২] আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহহুদ শিখিয়েছিলেন তা নিম্নরূপ ছিলঃ ‘সকল বরকতসমৃদ্ধ মান মর্যাদা আর পবিত্র ‘ইবাদাত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ,............ শেষ পর্যন্ত। [৩৫৩]
তাশাহহুদে দু'আর আদবসমূহ
ফুযালাহ বিন ‘উবাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির সলাত আদায় করার সময় শুনলেন যে, সে দু'আ করল বটে কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করল না ও নাবীর প্রতি সলাত (দরুদ) পাঠ করল না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, লোকটি তাড়াতাড়ি করেছে। তারপর তিনি তাকে ডেকে বললেন-যখন তোমাদের কেউ সলাত আদায় করবে তখন সে প্রথমে আল্লাহর হামদ ও গুণগান পাঠ করবে, তারপর নাবীর উপর সলাত (দরূদ) পাঠ করবে, তারপর স্বীয় পছন্দমত দু'আ (নির্বাচন করে) পাঠ করবে। তিরমিয়ী, ইবনু হিব্বান ও হাকীম এটিকে সহীহ বলেছেন। [৩৫৪]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নিয়ম
আবূ মাস’উদ (‘উকবাহ বিন্ ‘আমির) তিনি বলেন, বাশীর বিন্ সা’দ বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্ আপনার উপর আমাদের সলাত (দরূদ) পাঠের আদেশ করেছেন, তবে আমরা কিরূপে আপনার উপর সলাত (দরূদ) পাঠ করব? তিনি একটু নীরবতা পালন করলেন, তারপর বললেন, উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বারাক্তা, ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। অর্থঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল কর, যেমন তুমি ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর করেছিলে। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত, অতি মহান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর বংশধরদের উপর বরকত নাযিল কর, যেমন তুমি ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর নাযিল করেছিলে। তুমি প্রশংসিত, অতি মহান। ইবনু খুযাইমাহ তাতে বৃদ্ধি করেছেনঃ “আমরা আমাদের সলাতে যখন আপনার প্রতি সলাত পাঠ করব তখন কিরূপে আপনার উপর সলাত (দরূদ) পাঠ করব?” [৩৫৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যখন তোমাদের কেউ তাশাহ্হুদ পড়ে শেষ করবে তখন যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ্র নিকট পানাহ চায়- (তা হলো) উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন ‘আযাবিল কাব্রি ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাহয়া ওয়াল মামাতি, অয়া মিন শার্রি ফিত্নাতিল মাসীহিদ-দাজ্জাল। অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি জাহান্নামের শাস্তি হতে, কবরের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের ফিত্না হতে এবং মাসীহ্ দাজ্জালের ফিত্না হতে। [৩৫৬] মুসলিমের বর্ণনায় আছেঃ “যখন তোমাদের কেউ শেষের বৈঠকের তাশাহ্হ্যদ শেষ করে” (তারপর উপরোক্ত দু’আটি পড়বে)। [৩৫৭]
সলাতের দু‘আসমূহের বিবরণ
আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) একদা তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সলাতে পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু’আটি বলবে- (আরবি) উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছিরাঁও, ওয়া লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতান মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রাহীম। “হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অধিক যুল্ম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।” [৩৫৮]
সলাত শেষে সলাম ফিরানোর পদ্ধতি
ওয়ায়িল বিন্ হুজর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে সলাত আদায় করেছিলাম। তিনি (সলাত সমাপ্তকালে) ডান দিকে আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু (আল্লাহ্র শান্তি, করুণা ও আশিষ আপনাদের উপর বর্ষিত হোক) এবং বাম দিকে আস্সালামু আলাইকুম অ-রাহ্মাতুল্লাহি অবারাকাতুহু বলে সালাম ফেরালেন। আবূ দাঊদ সহীহ্ সানাদে। [৩৫৯]
সলাতের পর যিক্রসমূহ
মুগীরাহ ইব্নু শু’বাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ফার্য সলাতের পর বলতেনঃ (আরবী) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানি’আ লিমা আ’তায়া, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়া লা ইয়ান্ফা’উ যাল জাদ্দি মিন্কাল জাদ্দু। “এক আল্লাহ্ ব্যাতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সবকিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।” [৩৬০]
ফরয সলাতের পরে দু’আসমূহের ধরণের বর্ণনা
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসমস্ত বাক্য দিয়ে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াআ’উযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়াআ’উযুবিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল ‘উমরি, ওয়াআ’উযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুনইয়া ওয়াআ’উযুবিকা মিন ‘আযাবিল কাবরি।” হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে, আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি বার্ধক্যের অসহায়ত্ব থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আর আমি দুনিয়ার ফিত্না ও ক্ববরের ‘আযাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [৩৬১] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত হতে সালাম ফিরাতেন তখন তিনবার আস্তাগ্ফিরুল্লাহ (আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাইছি) বলতেন এবং আরো বলতেন- উচ্চারণঃ আলাহুম্মা আন্তাস সালামু ওয়া মিনকাস-সালামু, তাবারাক্তা ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম। অর্থঃ আমি ক্ষমা চাই (তিন বার)। হে আল্লাহ! তুমি সালাম বা শান্তিময় এবং তোমার কাছ থেকেই শান্তি আসে। হে মহান, মহিমাময় ও মহানুভব। [৩৬২]
ফরয সলাতের পরে যিকরসমূহের বিবরণ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের (ফার্য) সলাতের পরে ৩৩ বার সুব্হানাল্লাহ, ৩৩ বার আল হ’মদুলিল্লাহ্ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে- এটা মোট ৯৯ বার হলে একশো পূরণ করার জন্য বলবে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর। অর্থঃ এক মাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন স্রষ্টা নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আধিপত্য তাঁর, প্রশংসা তাঁর এবং তিনি সকল শক্তির অধিকারী। যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার পাপরাশি ক্ষমা করা হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়ে থাকে। অন্য বর্ণনায় আছে- “আল্লাহু আকবার” চৌত্রিশ বার বলবে। [৩৬৩] মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি অবশ্যই প্রত্যেক ফরয সলাতের পরে এ দুআটি বলতে ছাড়বে না- আল্লাহুম্মা আ-ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা। অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার নিকটে তোমার স্মরণের, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার ও তোমার উত্তম বন্দেগী করার সহযোগীতা চাই)। আহমাদ, আবূ দাঊদ, আর নাসায়ী-একটি মজবুত সানাদে। [৩৬৪]
ফরয সলাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ফযীলত
আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ আয়াতুল কুর্সী প্রত্যেক ফরয সলাতের পরে পাঠ করলে তার মৃত্যুই তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য বাধা হয়ে আছে। নাসায়ী; ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৩৬৫] তাবারানী বৃদ্ধি করেছেনঃ এবং “কুল্হু আল্লাহু আহাদ”। [৩৬৬]
সলাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করা আবশ্যক
মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন – রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সলাত আদায় করবে। [৩৬৭]
অসুস্থ ব্যক্তির সলাতের বিবরণ
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে; যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে। [৩৬৮]
সাজদাতে অক্ষম অসুস্থ ব্যক্তির বিধান
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক রোগীকে বালিশের উপর (সাজদাহ দিয়ে) সলাত আদায় করতে দেখে ওটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, যদি পার যমীনে বা সমতল স্থানে সলাত আদায় করবে। তা না হলে এমনভাবে ইশারা ইঙ্গিতে সলাত আদায় করবে যাতে তোমার সাজদাহর ইশারা রুকুর ইশারা অপেক্ষা নীচু হয়। বাইহাকী এটি কাবি (শক্তিশালী) সানাদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আবূ হাতিম বর্ণনাটি মওকুফ হওয়াকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। [৩৬৯]
সাহউ সাজদাহ ও অন্যান্য সাজদাহ প্রসঙ্গ
সলাতে যে ব্যক্তি প্রথম তাশাহহুদ ভুলে যাবে তার বিধান
আবদুল্লাহ্ ইব্নু বুহাইনাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিয়ে যুহরের সলাত আদায় করলেন। তিনি প্রথমে দু’রাকাআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগন তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে সলাতের শেষভাগে মুক্তাদীগন সালামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসাবস্থায় তাকবীর বললেন এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’বার সাজদাহ্ করলেন, এরপর সালাম ফিরালেন। -৭ জনে (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) এবং শব্দ বিন্যাস বুখারীর। মুসলিমের ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে- প্রত্যেক সাহু সাজদাহর জন্য উপবিষ্ট অবস্থায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন ও সাজদাহ করতেন এবং মুক্তাদীগনও তাঁর সঙ্গে সাজদাহ করতেন, প্রথম তাশাহহুদে ভুল করে না বসার কারণে এ সাজদাহ দু’টি দিতেন। [৩৭০]
যে ব্যক্তি ভুলবশত সলাত সম্পূর্ণ করার পূর্বে সালাম ফিরাবে তার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিকালের কোন এক সালাত দু’রাক’আত [৩৭১] আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর মাসজিদের একটি কাষ্ঠ খণ্ডের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার উপর হাত রাখলেন। মুসল্লীগণের ভিতরে সামনের দিকে আবূ বাক্র (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ)ও ছিলেন। তাঁরা উভয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাড়াহুড়াকারী মুসল্লীগণ বেড়িয়ে পড়লেন। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, সলাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? কিন্তু এক ব্যক্তি যাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যূল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞেস করল আপনি কি ভুলে গেছেন, না কি সলাত কমিয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেন : আমি ভুলিনি আর সলাতও কম করা হয়নি। তখন তাঁকে বলা হল যে, আপনি ভুলে গেছেন। তখন তিনি দু’রাক’আত সলাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তাকবীর বলে সাজদাহ করলেন, স্বাভাবিক সাজদাহর ন্যায় বা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ্। অতঃপর মাথা উঠিয়ে আবার তাকবীর বলে মাথা রাখলেন অর্থাৎ তাক্বীর বলে সাজদাহ্ গিয়ে স্বাভাবিক সাজদাহ্র মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে তাক্বীর বললেন। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। মুসলিমের ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে, “ঐটি আসরের সলাত ছিল।” আবূ দাউদে আছে, তিনি লোকেদের জিজ্ঞেস করলেন- যুলইয়াদাইন কি ঠিক বলছেন? লোকেরা ইশারাতে হ্যাঁ বললো। এটা বুখারী মুসলিমেও আছে, কিন্তু তাতে একবচন শব্দের স্থলে বহুবচন শব্দ রয়েছে। তাঁর অন্য বর্ণনায় আছে- তিনি সাহউ সাজদাহ করেননি যতক্ষন না আল্লাহ্ তাঁকে (অন্তরে) এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম দিয়েছেন। [৩৭২]
সাজদায়ে সাহুর পর তাশাহহুদ পড়ার বিধান
ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সলাতে ইমামতি করতে গিয়ে একদিন ভুল করলেন। ফলে তিনি দুটি সাহউ সাজদাহ করলেন- তারপর তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরালেন। তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন। হাকিম এটিকে সহীহ্ বলেছেন। [৩৭৩]
যে ব্যক্তি সন্দেহ করে কিন্তু কোনটিই তার নিকট প্রাধান্য পায়নি তার বিধান
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রা) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ সলাতে এই বলে সন্দেহ পোষণ করে যে সে তিন রাক’আত আদায় করেছে না চার রাক’আত, তবে সে যেন সন্দেহকে পরিত্যাগ করে এবং যার প্রতি নিশ্চিত মনে হবে তার উপর ভিত্তি করে সলাত আদায় করবে। অতঃপর শেষ সালাম ফিরার পূর্বে দু’টো সাহউ সাজদাহ করবে। ফলতঃ যদি সে পাঁচ রাক’আত আদায় করে তাহলে সাহউ সাজদাহর ফলে তার সলাত জোড়া বানিয়ে দিবে অর্থাৎ ৬ রাকআত পূর্ণ হবে। আর যদি সলাত পূর্ণ হয়ে থাকে তবে সাহউ সাজদাহ দু’টি শয়তানের জন্য নাক ধূলায় ধূসরিত বা অপমানের কারণ হবে। [৩৭৪]
যে ব্যক্তি বৃদ্ধি বা সংশয় করছে ও দুটি বিষয়ের কোন একটি তার প্রাধান্য পাচ্ছে তার বিধান
আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সলাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন : তা কী? তাঁরা বললেন : আপনি তো এরূপ এরূপ সলাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে ক্বিবলামুখী হলেন। আর দুটি সাজদাহ আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সলাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সলাত সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সলাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দুটি সাজদাহ দেয়। বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় আছে- সলাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে তারপর সাহউ সাজদাহ করবে। মুসলিমে আছে – নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি সাহউ সাজদাহ করেছেন- সালাম ও কথা বলার পরও। [৩৭৫]
সালাম ফিরানোর পর সন্দেহকারীর সাজদাহ এর প্রসঙ্গ
আবদুল্লাহ বিন জাফর (রাঃ) মারফূ’ হাদীসে রয়েছে, “যে ব্যক্তি সলাতে সন্দেহ পোষণ করবে সে যেন সালামের পর দুটি সাজদাহ করে।” ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন । [৩৭৬] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সলাতে সন্দেহ বশতঃ দু’রাকআতের পর না বসে পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে যায়- তাহলে সে সলাত পূর্ণ করে নিবে এবং সলাত শেষ করে দুটি সাহউ সাজদাহ করবে। আর যদি পূর্ণভাবে না দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে বসে পড়বে; এর ফলে তাকে কোন সাহউ সাজদাহ করতে হবে না। শব্দ বিন্যাস দারাকুতনির দুর্বল সানাদে। [৩৭৭] উমার (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমামের পিছনের লোকেদের (মুক্তাদীর) জন্য কোন সাহ্উ সাজদাহ নাই, ইমাম ভুল করলে তাঁকে ও মুক্তাদীর সকলকেই সাহ্উ সাজদাহ করতে হবে। বায্যার ও বাইহাকী এটিকে দুর্বল সানাদে রিওয়ায়াত করেছেন। [৩৭৮]
ভুল বারংবার হলে সিজদাহও বারংবার করতে হবে
সওবান (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি ভুলের জন্য সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাজদাহ করতে হবে। আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ দুর্বল সানাদে। [৩৭৯]
মুফাস্সাল সূরাগুলোতে তিলাওয়াতে সাজদাহ রয়েছে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা “ইযাস্-সামা-উন্-শাক্কাত” ও “ইক্রা বিস্মে রাব্বেকা” সূরা দ্বয়ে সাজদাহ করেছি। [৩৮০]
সূরা সোয়াদ-এ তিলাওতে সাজদার বিধান
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূরাহ্ স-দ এর সাজদাহ্ অত্যাবশ্যক সাজদাহ্ সমূহের মধ্যে গণ্য নয়। তবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি তা তিলাওয়াতের পর সাজদাহ্ করতে দেখেছি। (বুখারী) [৩৮১]
সূরা আন্-নাজম এর সাজদাহ এর বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা “আন্-নাজম”-এর সাজদাহ করেছিলেন। [৩৮২] যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন- আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সূরা “আন্-নাজ্ম” পড়ে শুনিয়েছিলাম- তিনি তাতে সাজদাহ করেননি। [৩৮৩]
সূরা আল-হাজ্জ্ব এর দু‘সাজদাহ এর বিধান
খালিদ বিন মা’দান (রাঃ) তিনি বলেন, সূরা “হাজ্জ”-কে দু’টি সাজদার আয়াত দ্বারা বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আবূ দাঊদ তাঁর মারাসিল গ্রন্থে। [৩৮৪] উক্বাহ বিন‘আমির (রাঃ) “যে ব্যক্তি সাজদাহ দু’টি না করবে সে যেন তা (সূরা হাজ্জ) পাঠ না করে। এটির সানাদ য‘ঈফ্ (দুর্বল)। [৩৮৫]
তিলাওয়াতের সাজদাহ এর বিধান
‘উমার (রাঃ) তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমরা যখন সাজদাহ্র আয়াত তিলাওয়াত করি, তখন যে সাজদাহ্ করবে সে ঠিকই করবে, যে সাজদাহ্ করবে না তার কোন গুনাহ নেই। [৩৮৬] তাতে আরো আছে- “আল্লাহ অবশ্য তিলাওয়াতের সাজদাহকে ফার্য করেন নি; তবে যদি আমরা করতে চাই করতে পারি। হাদীসটি মুআত্তা গ্রন্থে আছে।
তিলাওয়াতের সাজদাহর জন্য তাকবীর দেয়ার বিধান
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুরআন মাজীদ পড়ে শুনাতেন, যখন তিনি সাজদাহর আয়াত অতিক্রম করতেন তখন আল্লাহ আকবার বলতেন ও সাজদাহ করতেন, আর আমরাও তাঁর সঙ্গে সাজদাহ করতাম। আবূ দাঊদ এর সানাদে দুর্বলতা আছে। [৩৮৭]
খুশির সংবাদ পেয়ে কৃতজ্ঞতার সিজদাহ দেওয়া শরীয়তসম্মত
আবু বাকরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যখন কোন খুশীর খবর পৌঁছত তখন তিনি আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশে সাজদা করতেন।” [৩৮৮] আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ করেছিলেন এবং তা দীর্ঘ করেছিলেন- তারপর তার মাথা উঠিয়ে বলেছিলেন- আমার নিকট জিবরাইল 'আলাইহিস সালাম এসেছিলেন ও আমাকে শুভ সংবাদ দান করেছিলেন, ফলে আমি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে সাজদাহ করলাম। হাকিম একে সহীহ বলেছেন।” [৩৮৯] বারাআ বিন আযিব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন, ‘আলী (রাঃ) নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পত্রদ্বারা ইয়ামেনবাসীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সংবাদ জানিয়েছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত পত্র পাঠান্তে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশে সাজদাহ করলেন-বাইহাকী। এর মূল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে।[৩৯০]
নফল সলাত-এর বিবরণ
নফল সলাতের ফযীলত
রাবি'আহ বিন মালিক আসলামী (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, তুমি (কিছু) চাও, আমি বললাম- আমি জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই।" তিনি বললেন এছাড়া আর কিছু? আমি বললাম, এটিই। তখন তিনি বললেন- তবে তুমি (এর জন্য) অধিক পরিমাণে সাজদাহ দ্বারা (বেশি নফল সলাত আদায় করে) এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর। [৩৯১]
ফরয সলাতের আগে-পরে সুন্নাতের বর্ণনা
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমি দশ রাকা’আত সলাত আমার স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যুহরের পূর্বে দু’রাকা’আত পরে দু’রাকা’আত, মাগরিবের পরে দু’রাকা’আত তার ঘরে, ‘ইশার পরে দু’রাকা’আত তার ঘরে এবং দু’রাকা’আত সকালের (ফজরের) সলাতের পূর্বে। উভয়েরই ভিন্ন এক বর্ণনায় আছে- আর দু’রাকা’আত জুমু’আহর পর তার বাড়িতে।[৩৯২] বর্ণনাকারী মুসলিমে আছে- ফাজ্র হয়ে গেলে হালকাভাবে তিনি দু’রাকা’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করতেন। [৩৯৩] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের পূর্বে চার রাকা’আত এবং (ফাজ্রের পূর্বে) দু’রাকা’আত সুন্নাত সলাত ছাড়তেন না। [৩৯৪]
ফজরের সুন্নাতের বিশেষত্ব
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নফল সলাতকে ফাজরের দুরাকাআত সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতেন না। [৩৯৫] বর্ণনাকারী মুসলিমে আছে- ফাজ্রের দু’রাকা’আত (সুন্নাত) সলাত দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সকল বস্তুর চেয়ে উত্তম। [৩৯৬
যে ব্যক্তি দিবা-রাতে ১২ রাকয়াত নফল সলাত আদায় করবে তার প্রতিদান
মুসলিম জননী উম্মু হাবিবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যে ব্যক্তি দিন রাতে বারো রাকা’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করবে তার বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একখানা অট্টালিকা নির্মাণ করা হবে। অন্য বর্ণনায় ঐ বারো রাকাআতকে “নফল সলাত" (একই অর্থ) বলা হয়েছে। [৩৯৭] বর্ণনাকারী তিরমিযীতে অনুরূপই আছে, তবে যা বৃদ্ধি করেছেন (তা হলো) : যুহরের পুর্বে চার রাক’আত ও পরে দু’রাক’আত, মাগরিবের পরে দু’রাক’আত, ‘ইশার পরে দু’রাক’আত, ফজরের পুর্বে দু’রাক’আত। [৩৯৮]
যুহরের ফরয সলাতের পুর্বে ও পরে চার রাক’আত নফল সলাতের ফযীলত
উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যে ব্যক্তি যুহরের ফরযের পুর্বে চার রাক’আত ও পরে চার রাক’আত (সুন্নাত সলাত) এর প্রতি যত্নবান হবে তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। [৩৯৯]
আসর সলাতের পুর্বে চার রাক’আত নফল পড়ার বিধান
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন যে ‘আসরের (ফরয) সলাতের পুর্বে চার রাক’আত (নফল) সলাত আদায় করে থাকে। তিরমিযী একে হাসান বলেছেন, ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৪০০]
মাগরিব সলাতের পুর্বে দু’ রাক’আত নফলের বিধান
আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল আল মুযান্নী (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হতে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ তোমরা মাগরীবের (ফরযের) পুর্বে (নফল) সলাত আদায় করো, তোমরা মাগরীবের (ফরযের) পুর্বে (নফল) সলাত আদায় করো। লোকেরা এ ‘আমলকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহন করতে পারে, এ কারনে তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ এ হুকুম তার জন্য যে ইচ্ছা করে। যেন তিনি নিয়মিত আদায় করা অপছন্দ করলেন। ইবনু হিব্বানের একটি বর্ননায় আছে, নাবী (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরীবের পুর্বে দু রাক’আত সলাত আদায় করেছিলেন। [৪০১] মুসলিমে আছে ‘আনাস (রাঃ) আমরা সুর্যাস্তের পর দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতাম। নাবী (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দেখতেন এবং আমাদের সেটা করার জন্য হুকুমও করতেন না, নিষেধ ও করতেন না। [৪০২]
ফজরের সুন্নাতকে হালকা করা ও তাতে যা পাঠ করা হয়
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতের পুর্বের দু’ রাক’আত (সুন্নাত) এত সংক্ষিপ্ত করতেন এমন কি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি (শুধু) উম্মুল কিতাব (সুরাহ্ ফাতিহা) তিলাওয়াত করলেন? [৪০৩] আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু‘ রাক’আত সুন্নত সলাতে “ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন” ও “ক্বুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। [৪০৪]
ফজরের দু রাক’আত সুন্নাতের পর শয়ন করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাক’আত সুন্নাত সলাত আদায় করার পর ডান কাতে শয়ন করতেন। [৪০৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন ফজরের ফরয সলাতের পুর্বে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করবে সে যেন ডান কাতে শয়ন করে। তিরমিযী একে সহীহ্ বলেছেন। [৪০৬]
রাত্রি বেলা (তাহাজ্জুদ) সলাত আদায়ের পদ্ধতি
ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- রাতের সলাত দু’ দু’ (রাক’আত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজ্র হবার আশংকা করে, তাহলে সে যেন এক রাক’আত সলাত আদায় করে নেয়। আর সে যে সলাত আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে । [৪০৭] বর্ণনাকারী এবং পাঁচ জনে (আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন এ শব্দ বিন্যাস এনেঃ “ রাতের ও দিনের সলাত সলাত দু’ দু’ রাক’আত।” নাসায়ী বলেছেন এর মধ্যে ত্রুটি বিদ্যমান । [৪০৮]
রাতের সলাতের ফাযীলাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - ফরয সলাত ব্যতীত নফল সলাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সলাত হচ্ছে – রাতের সলাত । [৪০৯]
বিতর (সলাতের) বিধান
আবূ আইঊব আল আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিতর সলাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী । যদি কেউ পাঁচ রাক’আত বিতর সলাত আদায় করা পছন্দ মনে করে, সে সেটাই করবে; আর যে তিন রাক’আত বিতর পড়া পছন্দ মনে করবে সেও সেটাই করবে; আর যে এক রাক’আত বিতর পড়া পছন্দ মনে করবে সেও সেটাই করবে । আর ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন, নাসায়ী এর মওকুফ হওয়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন । [৪১০] আলী বিন আবী তলিব (রাঃ) তিনি বলেন – বিতর সলাত ফরয সলাতের ন্যায় জরুরী নয়, বরং এটা একটি সুন্নাত, যা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চালু করেছেন । তিরমিযী একে হাসান বলেছেন আর হাকিম একে সহীহ বলেছেন । [৪১১] জাবির বিন ‘আব্দিল্লাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযানে কিয়াম বা রাতের সলাতে জামা’য়াত করে (তিন দিন পর পর) সম্পাদন করলেন । তারপর পরবর্তী রাতে লোকেরা তাঁর অপেক্ষায় থাকলেন; তিনি আর মাসজিদে এলেন না । তিনি বললেন - আমি রাতের এ (তারাবীহ সহ) বিতর সলাত তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাবার আশংকা করছি । [৪১২]
বিতর (সলাতের) সময়
খারিজাহ বিন হুযাফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – আল্লাহ একটি সলাত দান করে তোমাদেরকে একটি বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন তা তোমাদের জন্য লাল রঙের উট অপেহ্মা উত্তম । আমরা বললাম – হে আল্লাহর রাসুল! সেটা কি? তিনি বললেন, ‘বিতর সলাত’, যা পড়া হয় ‘ইশা সলাতের পর থেকে ফজর উদয় হবার পূর্ব পর্যন্ত । হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন । [৪১৩] ইমাম আহমাদ ‘আম্র বিন শু’আইব থেকে বর্ণনা করেছে তিনি তাঁর পিতা তিনি তাঁর দাদা থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন । [৪১৪]
যে বিতর সলাত পড়ে না তার বিধান
‘আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – বিতর সলাত জরুরী বা অবধারিত । অতএব যে তা আদায় না করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয় (অর্থাৎ আমাদের অনুসারী নয়)। আবূ দাঊদ দূর্বল সানাদে; হাকীম একে সহীহ বলেছেন । [৪১৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) দূর্বল হাদীসটি রয়েছে সেটি উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক বা শাহিদ । [৪১৬]
রাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সলাত আদায়ের পদ্ধতি
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক’আতের অধিক সলাত আদায় করতেন না । তিনি চার রাক’আত সলাত আদায় করতেন । তুমি সেই সলাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না । তারপর চার রাক’আত সলাত আদায় করতেন । এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না । অতঃপর তিনি তিন রাক’আত (বিতর) সলাত আদায় করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন ? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দুটি ঘুমায়, কিন্তু হৃদয় ঘুমায় না । [৪১৭] বর্ণনাকারী উক্ত কিতাবদ্বয়ে (বুখারী ও মুসলিমে) উক্ত রাবী বর্ণিত ভিন্ন এক হাদীসে রয়েছেঃ তিনি রাতে ১০ রাক’আত তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সলাত আদায় করতেন, আর ১ রাক’আত বিতর আদায় করতেন, তারপর ফজরের দু’রাক’আত সুন্নাত আদায় করতেন, এভাবে মোট তের রাক’আত সলাত হতো। [৪১৮] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সালাত তের রাক’আত আদায় করতেন। তার মধ্যে ৫ রাক’আত বিতর সলাত আদায় করতেন এবং তাতে শেষ রাক’আতে গিয়ে একটি মাত্র বৈঠক করতেন। [৪১৯] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ বিভিন্ন রাতে বিভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহ্রীর সময় তিনি বিত্র আদায় করতেন। [৪২০]
তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত ব্যক্তির তাহাজ্জুদ সলাত ছেড়ে দেয়া অপছন্দনীয়
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আমর ইব্নুল আ’স (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ্! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ‘ইবাদাত করত, পরে রাত জেগে ‘ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে। [৪২১]
সলাতুল বিতর মুস্তাহাব
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- হে আহলুল কুরআন (কুরআনের অনুসারী)! তোমরা বিতর (বিজোড়) সলাত আদায় কর। কেননা আল্লাহ বিতর আর তিনি বিজোড় (বিতর) ভালবাসেন। - ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৪২২]
রাতের সলাত বিতর দ্বারা শেষ করা মুস্তাহাব
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সলাত করবে। [৪২৩]
এক রাত্রে বিতর সলাতকে বারংবার পড়া যাবেনা
ত্বলক বিন ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে শুনেছি এক রাতে দু’রার বিতর সলাত নেই। - ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৪২৪]
বিতর সলাতে যা পড়তে হয়
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর সলাতে– “সাব্বি হিসমা রাব্বিকাল আ’লা” ও “ক্বুল ইয়া-আইয়্যুহাল কাফিরূন” এবং “ক্বুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ্” (সূরা তিনটি পাঠ করতেন)। নাসায়ী “কেবল শেষ রাক’আতেই সালাম ফিরাতেন” এ কথাটি বৃদ্ধি করেছেন। [৪২৫] আয়িশা (রাঃ) তাতে আছে, প্রত্যেক রাক’আতে ১টি করে সূরা পাঠ করতেন। অবশেষে সূরা “কুল হু ওয়াল্লাহু আহাদ” ও মু’আব্বিযাতাইন বা সূরা “ফালাক্ব” ও “নাস” পাঠ করতেন। [৪২৬]
ফজর সলাতের পর বিতর পড়া শরীয়তসম্মত নয়
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-সকাল (ফায্র) করার পূর্বেই তোমরা বিতর সালাত আদায় করো। [৪২৭] বর্ণনাকারী ইবনু হিব্বানে রয়েছে- যে ব্যক্তি বিতর সালাত আদায় করল না অথচ সকাল করে ফেলল, তার বিতর সালাত নাই। [৪২৮]
বিতর সালাত ক্বাযা করার বিধান
আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিতর না পড়িয়া ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। [৪২৯]
রাতের শেষ ভাগে বিতর পড়ার ফযিলত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগতে না পারার আশঙ্কা করবে সে যেন রাতের প্রথমাংশেই বিতর সালাত আদায় করে নেয়। আর যে ব্যক্তি শেষ রাতে জাগ্রত হবার আস্থা রাখবে- সে শেষ রাতেই তা পড়বে । কেননা শেষ রাতের সালাত আল্লাহর দরবারে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। এবং এটাই উত্তম। [৪৩০]
বিতর (সালাতের) শেষ সময়
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- ফজর হয়ে গেলে রাতের রাতের সালাতের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব তোমরা ফজর উদিত হবার পূর্বেই বিতর সালাত আদায় করবে। [৪৩১]
দ্বিপ্রহরে চাশতের সালাত মুস্তাহাব
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাশতের সালাত ৪ রাকাত আদায় করতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু বেশিও আদায় করতেন। [৪৩২] আয়িশা (রাঃ) তিনি জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন- আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি যোহা বা চাশতের সালাত আদায় করতেন? তিনি বলেন- না; তবে তিনি কোন সফর থেকে বাড়ি ফিরলে তা আদায় করতেন। [৪৩৩] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চাশতের সালাত আদায় করতে দেখিনি। অবশ্য আমি তা পড়ে থাকি। [৪৩৪]
চাশতের সালাতের উত্তম সময়
যায়িদ বিন আরকাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- আল্লাহ্র প্রতি আনুরাগী ব্যক্তিদের নফল সলাত তখন (পড়া হয়) যখন উটের বাচ্চা পা গরম বালুতে দগ্ধ হয় অর্থাৎ মরুভুমিতে সূর্যের প্রখরতায় উটের বাচ্চা মাকে ছেড়ে যখন ছায়ায় চলে আসে। [৪৩৫]
রাক’আত সংখ্যা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-যে ব্যক্তি বার রাক’আত চাশ্তের সালাত আদায় করবে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একখানা অট্টালিকা নির্মাণ করবেন। তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব (একক সানাদ বিশিষ্ট) বলেছেন। [৪৩৬] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করে চাশ্তের ৮ রাক’আত সলাত আদায় করেছিলেন। - ইবনু হিব্বান তাঁর সহীহ্ গ্রন্থে। [৪৩৭]
জামা'আতে সলাত সম্পাদন ও ইমামতি
জামা'আতে সলাত আদায়ের ফাযীলাত
'আবদুল্লাহ্ ইব্নু 'উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা'আতে সলাতের ফাযীলাত একাকী আদায়কৃত সলাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশী । [৪৩৮] আবূ হুরাইরা (রাঃ) পঁচিশ গুণ অধিক সওয়াব রাখে।" [৪৩৯] আবূ সা'ঈদ (রাঃ) বুখারীতেও অনুরূপ হাদীস বর্ণিত । কিন্তু তাতে জুয-এর স্থলে দার্জাহ শব্দ আছে । [৪৪০]
জামা'আতে সলাত আদায়ের বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, অতঃপর সলাত কায়েমের আদেশ দেই, অতঃপর সলাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই । অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং (যারা সলাতে শামিল হয়নি) তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই । যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দু'টি পা পাবে তাহলে সে অবশ্যই 'ইশা সলাতের জামা'আতেও হাযির হতো । শব্দ বিন্যাস বুখারীর । [৪৪১]
ইশা ও ফজরের জামায়াত থেকে দূরে অবস্থানকারীর জন্য সতর্কবাণী
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকদের জন্য ফাজর ও 'ইশার সলাত অধিক ভারী । এ দু' সলাতের কি ফাযীলাত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো । [৪৪২]
আযান শুনতে পায় এমন ব্যক্তির জামা'আতে উপস্থিতি ওয়াজিব
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, একজন অন্ধলোক (‘আবদুল্লাহ বিন উম্মু মাক্তুম) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন - হে আল্লাহর রাসূল! মাসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত আমার কোন লোক নেই । এটা শুনে তিনি তাকে (জামা'আতে হাজির হওয়া হতে) অব্যাহতি দিলেন । যখন লোকটি ফিরে গেল তখন তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি সলাতের আযান শুনতে পাও ? লোকটি বললেন হ্যাঁ, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "তবে তুমি আযানে সাড়া দাও ।" (অর্থাৎ আযানের ডাকে জামা'আতে হাজির হও) । [৪৪৩]
আযান শ্রবণ করা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি জামা'আতে উপস্থিত না হয় তার বিধান
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযান শুনার পরও যে জামা'আতে হাজির হয় না তার সলাত (শুদ্ধ) হয় না তবে যদি ওযর (শারিয়াত সম্মত কোন কারণ) থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার হবে । ইবনু মাজা, দারাকুৎনী, ইবনু হিব্বান, হাকিম; এর সানাদ মুসলিমের সানাদের শর্তানুযায়ী । কিন্তু মুহাদ্দিসীনের কেউ কেউ ''মউকুফ" হাদীস বলেছেন । [৪৪৪]
ফরয সলাত আদায়ের পর মাসজিদে প্রবেশ করলে তার বিধান
ইয়াযিদ্ বিন আসওয়াদ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে (মিনার খায়েফ নামক মাসজিদে) ফাজরের সলাত আদায় করেছিলেন যখন তিনি সলাত সমাধান করলেন তখন দেখলেন যে, দু'টি লোক (জামা'আতে) সলাত আদায় করে নাই। তাদের কে তিনি ডাকলেন । ফলে ঐ দু'জনকে যখন তাঁর নিকটে নিয়ে আসা হলো তাদের বাহুদ্বয়ের মাংশপেশী (ভয়ে) কাঁপছিল । তারপর তাদের তিনি বললেন, আমাদের সঙ্গে জামা'আতে সলাত পড়তে কিসে বাধা দিলো? তারা বললো আমরা আমাদের বাড়ীতে সলাত সমাধান করেছিলাম । তিনি তাদের বললেন, এরূপ করবে না । যখন তোমরা বাড়িতে সলাত আদায় করার পর ইমামকে সলাত সমাধান করার পূর্বেই পাবে তখন তোমরা তার সঙ্গেও সলাত আদায় করবে। এ সলাত তোমার জন্য নফল বলে গণ্য হবে -"আহমাদ", শব্দ বিন্যাস তারই -আর তিন জনে। তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান্ সহীহ্ বলেছেন । [৪৪৫]
ইমাম নির্ধারণের মহত্ত্ব ও তাকে অনুসরণ পদ্ধতি
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর অনুসরনের জন্য । তাই যখন তিনি তাকবীর্ বলেন, তোমরাও তাকবীর্ বলবে, আর ইমাম তাকবীর না বলা পর্যন্ত তোমরা বলবে না । যখন তিনি রুকূ’ করেন তখন তোমরাও রুকূ' করবে । তিনি রুকূ' না করা পর্যন্ত তোমার রুকূ'তে যাবে না। যখন (আরবী) বলেন তখন তোমরা (আরবী) বলবে । আর তিনি যখন সাজদাহ্ করেন তখন তোমরাও সাজদাহ্ করবে । আর সাজদায় তোমরা ততক্ষণ যাবে না , যতক্ষণ না তিনি সাজদাহ্তে যান । যখন তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করেন তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় কর। আর যখন তিনি বসে সলাত আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সলাত আদায় করবে । আবূ দাঊদ : এটা তারই শব্দ । এ হাদীসের মূল বিষয় বুখারী, মুসলিমে রয়েছে । [৪৪৬]
ইমামের নিকটবর্তী হওয়া মুস্তাআব (পছন্দনীয়)
আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে তাঁর নিকট থেকে দূরে দাঁড়াতে দেখে বললেন, তোমরা আমার নিকট অগ্রসর হও এবং তোমরা আমার অনুসরণ কর আর তোমাদের পেছনে যারা থাকবে তারা তোমাদের অনুসরণ করবে। [৪৪৭]
নফল সালাতে জামা’আত করা বৈধ
যায়ন বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাটি দিয়ে একটি ছোট কক্ষ তৈরী করেছিলেন আর সেখানে তিনি (নফল) সালাত আদায় করতে লাগলেন। ফলে কিছু লোক (কামরার বাইরে) তাঁরই সলাতের অনুসরণ করতে এসে তাঁর সলাতের সাথে সলাত পড়তে লাগল। হাদীসটি দীর্ঘ। ফরয সলাত ব্যতীত অন্য সব সলাত বাড়িতে আদায় করা উত্তম। [৪৪৮] জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন- সাহাবী মূ’আয্ (রাঃ) তাঁর অধীনস্থ লোকেদের নিয়ে ‘ইশা সালাত আদায় করলেন এবং ঐ সালাত তাদের পক্ষে খুব দীর্ঘ (কষ্টকর) হয়ে গেল। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এটা জানতে পেরে) তাঁকে বললেনঃ হে মূ’আয্! তুমি কি ফিতনাহ সৃষ্টি করতে চাও? যখন তুমি লোকেদের ইমামতি করবে তখন অশ্শাসমসি ওয়াযুহা’হা; সাব্বিহিসমা রব্বিকাল্ আ’লা, ইকরা বিসমি রব্বিকা ও ওয়াললাইলি ইযা ইয়াগশা (সূরাগুলো) পাঠ করবে। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [৪৪৯]
দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় করার বিধান ও পদ্ধতি
আয়িশা (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- রোগাক্রান্ত অবস্থায় লোকেদের ইমামতি করার ঘটনা সম্বন্ধে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আবূ বাক্রের বাম দিকে বসে গেলেন, বসে বসেই লোকদের সালাত আদায় করাতে লাগলেন আর আবু বাক্র দাঁড়িয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইকতিদা (অনুসরণ) করতে লাগলেন আর লোকেরা আবূ বাক্রের ইকতিদা (অনুসরণ) করতে লাগল। [৪৫০]
ইমামকে সালাত হালকা করার নির্দেশ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায়করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। [৪৫১]
নাবালেগ বালেগের ইমামতি করতে পারে
আমর বিন সালিমাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন- আমার পিতা বলেছেন, সত্যই আমি তোমাদের নিকট নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে এসেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের কেউ একজন আযান দিবে আর যে ব্যক্তি তেমাদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে অধিক অবগত সে তোমাদের ইমামতি করবে। তিনি (রাবী আমর) বলেন, লোকেরা তাকাল কিন্তু আমার থেকে অধিক কুরআন পাঠকারী অনুসন্ধান করে পেল না। তখন তারা ইমামতি করার জন্য আমাকেই আগে বাড়িয়ে দিল। অথচ তখন আমার বয়স মাত্র ৬-৮ বছর। [৪৫২]
ইমামতির অধিক হক্বদার যিনি?
আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক কুরআন আয়ত্তকারী ব্যক্তি তোমাদের (সলাতে) ইমামতি করবে। যদি তাদের মধ্যে একাধিক জন কুরআন পাঠে সমতুল্য হয় তবে যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অধিক জানে (সে ইমামতি করবে); সুন্নাতে সমতুল্য হলে যে হিজরতে অগ্রগামী, (সে ইমামতি করবে) হিজরতে সমতুল্য হলে ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী, (সে ইমামতি করবে) ভিন্ন একটি সিলমান এর স্থলে সিন্নান (শব্দটি) আছে-যার অর্থ হবে বয়সে প্রবীণ ব্যক্তি। কেউ যেন কোন ব্যক্তির অধিকার স্থলে তার অনুমতি ব্যতীত ইমামতি না করে ও তার (কোন ব্যক্তির) বিছানায় তাঁর অনুমতি ব্যতীত না বসে। [৪৫৩]
যে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য ইমামতি বৈধ নয়
ইবনু মাজাহতে জাবির (রাঃ) কোন স্ত্রীলোক পুরুষের ইমামতি করবে না এবং কোন অজ্ঞ লোক কোন মুহাজিরের এবং ফাজির (দুরাচারী) মুমিনের ইমামতি করবে না। এর সানাদ অত্যন্ত দুর্বল (ওয়াহ)। [৪৫৪]
কাতার সোজা করার নির্দেশ এবং এর পদ্ধতি
আনাস (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমাদের কাতার গুলোকে খুব ভালভাবে একে অপরের সাথে মিশিয়ে নাও এবং এক কাতারকে অন্য কাতারের কাছাকাছি করো এবং কাঁধগুলোকে পরস্পরের বরাবর রাখ। ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন। [৪৫৫]
পুরুষ ও মেয়েদের জন্য উত্তম কাতারের বর্ণনা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পুরূষদের উত্তম সারি (কাতার) হলো প্রথম সারি, আর নিকৃষ্ট সারি হচ্ছে পিছনের সারি এবং মেয়েদের সর্বোত্তম কাতার শেষেরটি আর নিকৃষ্ট হচ্ছে প্রথমটি। [৪৫৬]
মুক্তাদী একজন হলে সে কোথায় দাঁড়াবে?
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক রাতে আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করতে গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পিছনের দিক ধরে তাঁর ডান পাশে নিয়ে আসলেন। [৪৫৭]
একাধিক মুসল্লি হলে মুক্তাদী কোথায় দাঁড়াবে?
আনাস (ইবনু মালিক) (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মু সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [৪৫৮]
কাতারের পিছনে একাকী সলাত আদায়াকারীর বিধান
আবূ বাক্রাহ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন অবস্থায় পৌঁছলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন রুকূ’তে ছিলেন। তখন কাতার পর্যন্ত পৌছার পূর্বেই তিনি রুকূ’তে চলে যান। (এ ঘটনা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ব্যক্ত করা হলে) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আল্লাহ তা'আলা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এ রকম আর করবে না। আবূ দাউদ বৃদ্ধি করেছেনঃ তিনি সলাতের সারি পর্যন্ত না পৌঁছে রুকূ করেন, অতঃপর রুকূর অবস্থায় এগিয়ে গিয়ে সারিতে সামিল হন। [৪৫৯] ওয়াসিবাহ বিন মা’বাদ জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন লোককে একাকী সারির পেছনে সলাত আদায় করতে দেখেছিলেন, ফলে তাকে তিনি পুনরায় সলাত আদায় করার আদেশ দিলেন। আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী (তিনি হাদীসটিকে হাসানও বলেছেন) এবং ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন। [৪৬০] বর্ণনাকারী তুবারানীতে উক্ত ওয়াবিসাহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আরও আছে, কোন সারিতে ঢুকে যাওনি কেন বা একজন সলাত আদায়কারীকে (পূর্বের সারি হতে) পেছনে টেনে নেওনি কেন? [৪৬১] বর্ণনাকারী ইবনু হিব্বান ত্বল্ক্ হতে অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করেছেন, “সারির পেছনে একাকী দাড়ানো ব্যক্তির সলাত হয় না। [৪৬২]
সলাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার আদবসমূহ
আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যখন তোমরা ইকামাত শুনতে পাবে, তখন সলাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। -(শব্দ বিন্যাস বুখারী)। [৪৬৩]
জামা'আতে লোকসংখ্যা বেশি হওয়ার ফযীলত
উবাই বিন কা'ব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-একা একা সলাত আদায়ের চেয়ে অপর এক ব্যক্তির সাথে সলাত আদায় করা উত্তম। আর দু জনের সঙ্গে জামা’আত করে সলাত আদায় করা একাকী সলাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তারপর যত অধিক (জামা’আত বড়) হবে ততোধিক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট তা প্রিয়। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৪৬৪]
মহিলাদের জন্য মহিলার ইমামতির বিধান
উম্মু ওয়ারাকাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (ওয়ারকার মাতাকে) হুকুম করেছিলেন যে, সে তার মহল্লাবাসীনীর ইমামতি করবে। -ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৪৬৫]
অন্ধ ব্যক্তির ইমামতির বিধান
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু উম্মু মাকতুম অন্ধ সাহাবীকে লোকেদের ইমামতি করার জন্য (মাদীনায়) তার স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। [৪৬৬] বর্ণনাকারী ইবনু হিব্বানেও আয়িশা (রাঃ) হতে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত আছে। [৪৬৭]
ফাসিক ব্যক্তির ইমামতি বৈধ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” কালিমা পাঠ করেছে তার জানাযার সলাত আদায় কর। আর যে ব্যক্তি “লা-ইলাহা ইল্লাহ্লাহু” কালিমা পাঠ করছে তার পেছনে (মুক্তাদী হয়ে) সলাত আদায় করবে।– দারাকুৎনী দুর্বল সানাদে। [৪৬৮]
ইমাম যে অবস্থায় থাকবে সে অবস্থায় ইমামের সাথে জামা’আতে অংশগ্রহণ করা শরীয়তসম্মত
‘আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন , নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে আসে তখন ইমাম যে অবস্থায় থাকে তাঁর সঙ্গে সে অবস্থাতেই জামা’আতে শরীক হবে ও তিনি যা করেন মুক্তাদীও তাই করবে । তিরমিযী দুর্বল সানাদে। [৪৬৯]
মুসাফির ও পীড়িত ব্যক্তির সলাত
সফরে সলাত ক্বসর করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় সলাত দু’রাক’আত করে ফরয করা হয় অতঃপর সফরে সলাত সেভাবেই স্থায়ী থাকে এবং মুকীম অবস্থায় সলাত পূর্ণ (চার রাক’আত) করা হয়েছে। বুখারীতে আছে, অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হিজরাত করলেন, ঐ সময় সলাত চার রাক’আত করে দেয়া হয়। এবং সফর কালে আগের অবস্থা অর্থাৎ দু’ রাক’আত বহাল রাখা হয়। [৪৭০] বর্ণনাকারী ইমাম আহমাদ বৃদ্ধি করেছেনঃ “মাগরিবের সলাত ব্যতীত কেননা সেটা দিনের সলাতের বিত্র (বিজোড়), আর সকালের (ফজরের) সলাত ব্যতীত কেননা তাতে কিরাআত লম্বা হয়”।
বিভিন্ন প্রকার জনগণের উপস্থিতিতে সফরে সলাত পূর্ণ ও ক্বসর করা বৈধ
‘আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে সলাত ক্বসর করতেন ও পুরোও আদায় করতেন, সওম পালন করতেন, আবার তা কাযাও করতেন। দারাকূৎনী; এর সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য) তবে এটি মা’লূল (ত্রুটিযুক্ত)। ‘আয়িশা (রাঃ) –এর এটা নিজস্ব কাজ; তিনি বলেন, (সফরে পুরো সলাত আদায় করা, সওম পালন করা) এটা আমার জন্য কঠিন কাজ নয়”। [৪৭১]
শরীয়তসম্মত সুযোগ গ্রহণ করা মুস্তাহাব বিশেষ করে ক্বসর সলাত
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর অবকাশ দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন। যেমন তিনি তাঁর অবাধ্যতাকে অপছন্দ করেন।–আহ্মাদ । ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন, ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছেঃ যেমন তিনি তাঁর বিশেষ নির্দেশগুলো কার্যকর হওয়াকে পছন্দ করেন। [৪৭২]
যতটুক দূরত্বে গেলে ক্বসর করা যাবে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ দূরবর্তী স্থানে যেতেন তখন তিনি দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন (অর্থাৎ সলাত কসর আদায় করতেন)। [৪৭৩]
মুসাফির ব্যক্তি নির্ধারিত সময় অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্বসর করতে পারবে
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মাদীনা হতে মক্কার দিকে বের হয়েছিলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনা ফিরে আসা পর্যন্ত দু’ রাক’আত, দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। - শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [৪৭৪]
যে ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে সফরে আছে, কিন্তু তার সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে পারছে না তা বিধান
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সফরে ঊনিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান কালে সলাত ক্বাসর করেন। অন্য শব্দেঃ ‘মক্কায় ঊনিশ দিন’ (অবস্থানকালে) । আবূ দাউদের বর্ণনায় আছে সতের দিন’। অন্য বর্ণনায় আছে – পনের দিন’। [৪৭৫] বর্ণনাকারী আবূ দাঊদ ‘ইম্রান্ বিন্ হুসাইনের বর্ণনায় আছে-‘আঠারো দিন’। [৪৭৬] জাবির (রাঃ) তাবূকে তিনি বিশ দিন অবস্থান করেছেন এবং সলাত কসর আদায় করেছেন। হাদীসটির সকল রাবী সিকা (নির্ভরযোগ্য)। তবে এর মাওসুল হবার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। [৪৭৭]
সফর অবস্থায় যুহর ও আসর সলাত জমা (একত্র) করে আদায় করার বিধান
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে পড়ার পূর্বে সফর শুরু করলে আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত যুহর বিলম্বিত করতেন এবং উভয় সলাত একত্রে আদায় করতেন। আর সফর শুরুর আগেই সূর্য ঢলে গেলে যুহর আদায় করে নিতেন। অতঃপর সওয়ারীতে উঠতেন। আর হাকিমে আরবা‘ঈন গ্রন্থে সহীহ সানাদে বর্ণিত আছে, তিনি [নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] যুহর ও আসরের ঊভয় সলাত আদায় করে (স্থান ত্যাগের জন্য) বাহনে আরোহণ করতেন। আবূ নু’আইম-এর ‘মুস্তাখ্রাজি মুসলিম’-এ আছেঃ তিনি [নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সফরে থাকা কালীন যখন সূর্য পশ্চিমে ঢলে যেত তখন তিনি যুহর ও ‘আসরের সলাত একত্রে আদায় করতেন, তারপর রওয়ানা হতেন। [৪৭৮]
মুসাফিরের চলন্ত ও অবস্থানরত অবস্থায় সলাত জমা করে আদায় করার বিধান
মু’আয (রাঃ) তিনি বলেন, আমারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তিনি ঐ সফরে যুহর ও ‘আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে পড়াতে থাকেন। [৪৭৯]
ক্বসর (সলাতের) দূরত্বের সীমারেখা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-চার‘বারিদ্’-এর কম দূরবর্তী স্থানের সফরে কসর করবে না। যেমন মাক্কা হতে ‘উসফান পর্যন্ত। -দারাকুৎনী দুর্বল সানাদে। হাদীসটির মাওকুফ হওয়াই সঠিক, ইবনু খুযাইমাহ এটি এভাবেই সংকলন করেছেন। [৪৮০]
সফরে সলাত পূর্ণ করার চেয়ে ক্বসর করা উত্তম
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-আমার উম্মাতের মধ্যে উত্তম তারাই যারা মন্দ কাজ করে ফেললে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর যখন সফর করে তখন সলাত ক্বসর করে ও রোযা মুক্ত অবস্থায় থাকে। -ত্ববারানী এটি আওসাত নামক গ্রন্থে দুর্বল সানাদে বর্ণনা করেছেন এবং সাঈদ বিন মুসাইয়্যিবের মুরসাল হাদীসরূপে বাইহাকীতে এটা সংক্ষিপ্তাকারে সঙ্কলিত হয়েছে।[৪৮১]
অসুস্থ ব্যক্তির সলাত আদায়ের বিধান
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে সলাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে; যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে। [৪৮২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক রুগ্ন ব্যক্তির খবরাখবর নিতে যান। ইত্যবসরে বালিশের উপর তাকে সলাতের সাজদাহ করতে দেখে তা টেনে ফেলে দিয়ে বললেনঃ মাটির উপর সাজদাহ করতে সক্ষম হলে মাটির উপর সাজদাহ করে সলাত আদায় করবে। নতুবা এমনভাবে ইশারা করে সলাত আদায় করবে, তাতে রুকুর ইশারা হতে সাজদাহর ইশারায় মাথা অপেক্ষাকৃত বেশি নীচু করবে।-বাইহাকী, আবূ হাতিম এটির মাওকুফ হওয়াকেই সঠিক বলেছেন। আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেছেন-নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘চার জানু’ পেতে বসে সলাত আদায় করতে দেখেছি। -হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন।
জুমু‘আর সলাত
জুমা‘আর সলাত পরিত্যাগকারীকে ভীতি প্রদর্শন
আবদুল্লাহ বিন ‘উমার ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছেন যে, জুমু‘আহ বর্জনের পাপ হতে লোক অবশ্য বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ্ তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেবেন, এরপর তারা গাফিল (ধর্মবিমুখ) হয়ে যাবে। [৪৮৩]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে জুমু‘আর সলাত আদায়ের সময়
সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু‘আহ্র সলাত আদায় করে যখন বাড়ি ফিরতাম তখনও প্রাচীরের ছায়া পড়ত না, যে ছায়ায় আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। মুসলিমের শব্দ বিন্যাসে আছেঃ আমরা সূর্য পশ্চিমে ঢলে যাবার পর তাঁর সঙ্গে জুমু‘আহ্র সলাত আদায় করতাম। তারপর ফিরার সময় ছায়া খুঁজতাম। [৪৮৪] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি আরো বলেছেন, জুমু‘আহ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হালকা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম। (শব্দ বিন্যাস মুসলিমের) ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় (এরূপ করতাম)। [৪৮৫]
১২ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে জুমু’আর সলাত বৈধ
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। এমন সময় শাম (সিরিয়া) হতে খাদ্যদ্রব্যবাহী উটের দল এসে পৌঁছল। এর ফলে মুসল্লীগণের মাত্র বারোজন ব্যতীত সকলেই সেখানে চলে গেল। [৪৮৬]
যে ব্যক্তি জুমু’আর সলাত এক রাক’আত পাবে তার বিধান
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আহ বা অন্য সলাতের এক রাক’আত জামা’আতের সঙ্গে পাবে, সে যেন অন্য এক রাকআত তার সঙ্গে মিলিয়ে নেয়, এতে তার সলাত পূর্ণ হয়ে যাবে। -শব্দ বিন্যাস দারাকুৎনীর। এর সানাদ সহীহ, তবে আবূ হাতিম এ হাদীসের সানাদের মুরসাল হওয়াটাকে শক্তিশালী করেছেন। [৪৮৭]
খতীবের দাঁড়ানো ও দুই খুতবাহ এর মাঝে বসা শরীয়তসম্মত
জাবির বিন সামূরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবাহ্ দেয়ার পর (মিম্বারের) উপরেই বসতেন, তারপর পুন: দাঁড়িয়ে খুত্বাহ দিতেন। অতএব যে সংবাদ দিবে তিনি বসে খুতবাহ্ দিতেন সে অবশ্যই মিথ্যা বলল। [৪৮৮]
খুতবা ও খতীবের কিছু বৈশিষ্ট্য
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খুতবাহ দিতেন তখন তাঁর চোখ দু’টি রক্তিম বর্ণ ধারণ করত ও আওয়াজ উঁচু হত, আর তাঁর ক্রোধ বেড়ে যেত; এমনকি মনে হত তিনি যে কোন শত্রু সৈন্য সম্বন্ধে আমাদেরকে সতর্ক করছেন। আর বলতেন সকাল-সন্ধ্যায় তোমরা আক্রান্ত হবে আর বলতেন-আম্মা বা’দু, উত্তম হাদীস আল্লাহর কিতাব; উত্তম হিদায়াত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিদায়াত; নিকৃষ্টতর কাজ হচ্ছে বিদ‘আত, প্রত্যেক বিদ‘আতই হচ্ছে ভ্রষ্টতা। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহর দিনে (খুতবায়), আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠের পর পরই উচ্চকন্ঠে বক্তব্য রাখতেন। মুসলিমের ভিন্ন একটি রিওয়ায়াতে আছে-“যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন তাকে গুমরাহ করার কেউ নেই, আর যাকে গুমরাহ করেন তাকে হিদায়াত করার কেউ নেই। আর নাসায়ীতে আছে: প্রত্যেক গুমরাহী হচ্ছে জাহান্নামে যাবার কারণ। [৪৮৯]
খুতবা সংক্ষিপ্ত ও সলাত লম্বা করা মুস্তাহাব
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: “জুম’আহর সলাত লম্বা করা ও খুতবাহ সংক্ষিপ্ত করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক”। [৪৯০]
জুমু’আর খুতবাতে সূরা (আরবী) (ক্বাফ) পড়া মুস্তাহাব
উম্মু হিশাম বিনতু হারিসাহ তিনি বলেন-আমি সূরা (ক্বাফ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যবান থেকে শিক্ষা করেছি। তিনি সূরাটি প্রতিটি জুমু’আহর খুতবায় মিম্বরে উঠে পাঠ করতেনে যখন লোকেদের মাঝে তিনি খুতবাহ দিতেন। [৪৯১]
জুমু'আর দুই খুতবাতে চুপ থাকা ওয়াজিব
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-ইমামের খুতবাহ দেয়ার সময় যে মুসুল্লী কথা বলবে সে ভারবাহী গাধার মত; আর যে তাকে ‘চুপ থাক’ বলে তার জুমুআর হক আদায় হল না। -আহমাদ দোষমুক্ত সানাদে। [৪৯২] আবূ হুরাইরা (রাঃ) হাদীসটি হচ্ছে-জুমু‘আহর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্বাহ দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে। [৪৯৩]
খুতবা চলাকলীন সময়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের বিধান
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক জুমু‘আহর দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সলাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দু’রাক’আত সলাত আদায় কর। [৪৯৪]
জুমু’আর সলাতে কোন সূরা পড়তে হয়
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র সলাতে সূরা আল-জুমু‘আহ ও সূরা আল্ মুনাফিকূন পাঠ করতেন। [৪৯৫] নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) দু ‘ঈদের সলাতে ও জুমুআহর সলাতে ‘সাব্বি হিস্মা রাব্বিাকাল আ’লা’ ও ‘হাল আতাকা হাদিসুল গ্বাশিয়্যাহ’ সূরা দু’টি তিলাওয়াত করতেন। [৪৯৬]
যখন ঈদের ও জুমু’আর সলাত একদিনে হবে তখন কেউ যদি ঈদের সলাত পড়ে নেয় তাহলে তাকে জুমু’আর সলাত পড়তে হবে না।
যায়দ ইবন আর্কাম্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাত আদায় করে (ঐ দিনের) জুমআহর সলাতের ছাড় দিয়ে বললেন, যার ইচ্ছা হয় সে জুমু’আহ আদায় করবে। - ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৪৯৭]
জুমু‘আর পরের সলাত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যখন তোমাদের কেউ জুমু’আহর সলাত আদায় করবে সে যেন জুমু’আহর সলাত আদায়ের পর চার রাক’আত সুন্নাত সলাত আদায় করে। [৪৯৮]
ফরয ও নফল সলাতের মাঝে পার্থক্য করা শরীয়তসম্মত
সায়িব্ বিন্ ইয়াযিদ (রাঃ) মু’আবিয়াহ (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যখন তুমি জুমু’আহর সলাত আদায় করবে তখন অন্য কোন (নফল) সলাতকে তার সঙ্গে মিলাবে না; যতক্ষণ না কথা বল বা বের হও। একথা নিশ্চিত যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এক সলাতকে অন্য সলাতের সঙ্গে সংযোগ না করেত নির্দেশ দিয়েছেন। যতক্ষন না আমরা কথা বলি বা (সলাতের) স্থান ত্যাগ করে। [৪৯৯]
জুমু’আ দিবসের ফযীলত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমু’আর সলাতে হাজির হয় আর তার জন্য যতটা নির্দিষ্ট (বিধিবদ্ধ) থাকে ততটা সুন্নাত সলাত আদায় করে। তারপর খুত্বাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকে। তারপর ইমাম সাহেবের সঙ্গে সলাত আদায় করে, তাকে এক জুমু’আহ হতে অন্য জুমু’আহ পর্যন্ত কৃত গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়- এর অতিরিক্ত আরো তিন দিন। [৫০০]
জুমু’আর দিনে একটি সময় দু’আ কবুল করা হয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আহ্র দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সলাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। মুসলিমের রিওয়ায়াতে রয়েছে: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা অতি স্বল্প সময় মাত্র। [৫০১] আবূ বুরদাহ (রাঃ) তাঁর পিতা তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি দু’আ কবুল হবার উক্ত সময়টি হচ্ছে খুত্বাহ্র জন্য ইমামের মিম্বারে বসার সময় হতে সলাত সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত। দারাকুৎনী এটাকে আবূ বুরদাহর নিজস্ব কথা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। [৫০২] বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ্ বিন্ সালাম কর্তৃক ইবনু মাজাহ্তে বর্ণিত হয়েছে। জাবির (রাঃ) উক্ত সময়টি হচ্ছে ‘আসরের সময় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ সময়ের ব্যাপারে চল্লিশটিরও অধিক কওল (অভিমত) ব্যক্ত করা হয়েছে। বুখারীর টীকায় আমি এগুলো লিপিবদ্ধ করেছি। [৫০৪]
জুমুআর জন্য (মুসল্লীর) সংখ্যা ( অধিক হওয়া) শর্ত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, চল্লিশ বা ততোধিক মুসল্লির জন্য জুমু’আহর সলাত (জামা‘আতে) পড়া সিদ্ধ। -দারাকুৎনী দুর্বল সানাদে। [৫০৫]
জুমু’আর সলাতে দু’আ করা শরীয়তসম্মত
সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’মিন ও মু’মিনাহ সকলের জন্য প্রতি জুমু‘আহতে ক্ষমা চাইতেন। -বাযযার দুর্বল সানাদে। [৫০৬]
জুমু‘আর খুতবাতে কুরআন পাঠ ও নসীহত করা বৈধ
জাবির বিন সামুরাহ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবাতে কুরআন হতে আয়াত পাঠ করে জনগণকে নসীহত করতেন। আবূ দাঊদ আর মুসলিমে এর মূল বক্তব্য রয়েছে। [৫০৭]
জুমু’‘আর সলাত যাদের উপর আবশ্যক নয় তাদের বর্ণনা
ত্বরিক বিন শিহাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, চার প্রকার লোক ব্যতীত জুমু‘আহ প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাআতে আদায় করা ফরয। [৫০৮] (চার প্রকার হচ্ছে) : ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, বালক, পীড়িত। -আবূ দাঊদ। তিনি বলেছেন, ত্বরিক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট থেকে শোনেননি। হাকিম এটি উক্ত ত্বরিকের মাধ্যমে আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অতএব, হাদীসটি মাওসুল। ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসাফিরের জন্য জুমু‘আহ ওয়াজিব নয়। -ত্ববারানী দুর্বল সানাদে। [৫০৯]
খুতবা অবস্থায় ইমামের দিকে মুখ করে বসা
আবদুল্লাহ বিন মাস‘উদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বরাবর হয়ে মিম্বারে উঠতেন, তখন আমরা তাঁকে আমাদের সম্মুখে করে নিতাম। -তিরমিযী দুর্বল সানাদে। [৫১০] ইবনু খুযাইমাহ কর্তৃক সংকলিত বারাআ (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসটি উক্ত হাদীসের শাহিদ সমার্থক।
খুতবা দেয়া অবস্থায় লাঠি বা ধনুকের উপর ভর করার বিধান
হাকাম বিন হাযন তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে জুমু‘আহর সলাতে উপস্থিত হলাম। তিনি লাঠি বা ধনুকের উপর ভর দিয়ে (খুত্বাহতে) দাঁড়ালেন। [৫১১]
ভীতিকর অবস্থার সময় সলাত
যখন শত্রুরা কিবলা ব্যতিত অন্য দিকে হবে তখন সলাতুল খাওফ বা ভইয়-ভীতি অবস্থার সলাত পাঠের পদ্ধতি
সালিহ ইবনু খাওয়াত (রাঃ) এমন একজন সাহাবী যিনি যাতুর রিকা’র যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে সলাতুল খাওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গ কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাক’আত সলাত আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুক্তাদীগণ তাদের সলাত পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাক’আত আদায় করে স্থির হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদীগন তাদের নিজেদের সলাত সম্পূর্ণ করলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। ইবনু মানদাহ –এর ‘মা’রিফা’ নামক গ্রন্থে ‘সালিহর পিতা (খাওয়াত) হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। [৫১২] আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে নাজ্দ এলাকায় যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে আমরা শত্রুর মুখোমুখি কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। একদল তাঁর সঙ্গে সলাতে দাঁড়ালেন এবং অন্য একটি দল শত্রুর মুখোমুখি অবস্থান করলেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন তাঁদের নিয়ে এক রুকু’ ও দু’টি সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর এ দলটি যারা সলাত আদায় করেনি, তাঁদের স্থানে চলে গেলেন এবং তাঁরা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পিছনে এগিয়ে এলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের সঙ্গে এক রুকু’ ও দু’ সাজদাহ্ করলেন এবং পরে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তাঁদের প্রত্যেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজে নিজে একটি রুকু’ ও দু’টি সাজদাহ্ (সহ সলাত) শেষ করলেন। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [৫১৩]
যখন শত্রুরা কিবলামুখী থাকবে তখন সালাতুল খাওফ বা ভয়-ভীতি অবস্থার সালাত পাঠের পদ্ধতি
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ভীতিকর অবস্থার সালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমরা দুটি সারিতে সারিবদ্ধ হলাম, একটি সারি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে থাকলো, আর শত্রুসেনা দল আমাদের ও কিবলার মধ্যে রইলো। এ অবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। আমরাও সকলেই আল্লাহু আকবার বললাম। তারপর তিনি রুকূ করলেন, আমরাও রুকূ করলাম। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালেন, আমরাও একই সঙ্গে সকলেই মাথা ওঠালাম। তারপর তিনি তার নিকটতম সারিটিসহ সেজদায় অবনমিত হয়ে পড়লেন আর পেছনের সারিটি সেজদায় না গিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য দাড়িয়ে রইল। তারপর তার সেজদাহ পূর্ণ হলে তার নিকটের সারিটি দাঁড়াল। অতঃপর রাবী পূর্ণ হাদীস উল্লেখ করেন। তারপর তিনি সেজদাহ করলেন ও তার সঙ্গে প্রথম সারিও সেজদাহ করল। তারপর যখন তারা দাড়ালেন তখন দ্বিতীয় সারি সেজদাহ করল। তারপর প্রথম সারি পিছিয়ে গেল ও দ্বিতীয় সারি অগ্রসর হল- এরপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ এতেও বর্ণিত হয়েছে। এরই বর্ণনার শেষাংশে আছে- তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালে আমরাও সকলেই সালাম ফিরালাম। [৫১৪] আবূ আয়্য়াশ যুরাকী (রাঃ) হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে তাতে আছেঃ এ ঘটনাটি ‘উসফান’ নামক স্থানে সংঘঠিত হয়েছিল’। [৫১৫]
প্রত্যেক দলের সাথে ইমামের দু’ রাক’আত সলাত প্রত্যেকের দলের জন্য স্বতন্ত্র সলাত হিসেবে গণ্য হবে
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের একদলকে দু’রাক’আত সালাত পড়িয়েছিলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর অন্যদলকে দু’রাক’আত সালাত আদায় করালেন, তারপর সালাম ফিরালেন। [৫১৬] বর্ণনাকারী আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে দাউদে অনুরূপ আরও একটা হাদিস রয়েছে।
প্রত্যেক দলের জন্য এক রাক’আত করে ভয়ের সালাত সীমাবদ্ধ করা বৈধ
হুযাইফাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভয়ের অবস্থায় (দু’দলের মধ্যে) একদলকে এক রাক’আত ও অপর দলকে এক রাক’আত পড়িয়েছিলেন। তারা ঐ সালাত (আর) পূর্ণ করেননি। - আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী, ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৫১৭] বর্ণনাকারী ইবনু খুযাইমাহ হতে ইবনু ‘আব্বাস হতে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত আছে। [৫১৮] ইবনু ‘উমার(রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- যে কোন পদ্ধতিতে হোক না কেন ভয়ের সময়ের সালাত হচ্ছে এক রাক’আত। - বাযযার দুর্বল সানাদে। [৫১৯]
ভয়ের সালাতে সাহউ সেজদাহ নেই
ইবনু ‘উমার(রাঃ) ভয়ের সালাতে সাহউ সেজদাহ নেই। দারাকুৎনী দুর্বল সানাদে। [৫২০]
দু ‘ঈদের সালাত
রোযার শুরু ও শেষ দলবদ্ধ হতে হবে
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,- ঈদুল ফিতর ঐটি যেটিতে জনগণ (রমাজানের সাওম পালনের পর) সওমবিহীন কাটাবে আর ‘ঈদুল আযহা হচ্ছে, যেদিন লোকেরা কুরবানী করে সেদিন। [৫২১]
সূর্য ঢলে যাওয়ার পরে ঈদের (চাঁদের খবর আবগত হলে) সলাত আদায়ের বিধান
আবূ ‘উমাইর বিন আনাস(রাঃ) তাঁর চাচাদের(সাহাবীদের)(রাঃ) একদল আরোহী এসে সাক্ষ্য দিল যে, গতকাল সন্ধায় তারা আকাশে চাঁদ দেখেছে। ফলে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ইফতার করতে বললেন ও পরদিন সকালে ‘ঈদের ময়দানে যেতে নির্দেশ দিলেন। -এ শব্দ বিন্যাস আবূ দাউদের এবং তাঁর সানাদ সহীহ। [৫২২]
ঈদুল ফিত্বরের দিন (ঈদগাহে) যাওয়ার পূর্বে পানাহার করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। বুখারী ভিন্ন একটি মু’আল্লাক (বিচ্ছিন্ন) সূত্রে যেটি আহমাদ সংযুক্ত সূত্রে বর্ণনা করেছেন (সেখানে আছে এভাবে) “ঐ খেজুরগুলো তিনি একটি একটি করে খেতেন। [৫২৩]
ঈদুল আযহার দিবসে (ঈদগাহে) বের হওয়ার পূর্বে পানাহারের বিধান
আবদুল্লাহ্ বিন বুরায়দাহ তাঁর পিতা বুরায়দাহ তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্র-এর দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না। আর ‘ঈদুল আযহার দিন সলাতের পূর্বে কিছু খেতেন না। - ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৫২৪]
ঈদের সলাতের জন্য মহিলাদের বের হওয়ার বিধান
উম্মু আতীয়াহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আদিষ্ট হতাম সাবালিকা, যুবতী ও হায়িযা মেয়েদেরকে ‘ঈদগাহে নিয়ে যাবার জন্য। তারা হাজির হবে পুণ্য কাজে এবং মুসলিমদের দু’আয় সামিল হবে, তবে হায়িযা নারীরা সলাত আদায়ের স্থান হতে দূরে অবস্থান করবে। [৫২৫]
ঈদের দিন খুতবার পূর্বে সলাত আদায় করতে হবে
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র এবং ‘উমার (রাঃ) উভয় ‘ঈদের সলাত খুতবার আগে আদায় করতেন। [৫২৬]
ঈদের সলাতের পূর্বে ও পরে নফল সলাত পড়ার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরে দু’ রাকা‘আত সলাত আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সলাত আদায় করেন নি। [৫২৭]
ঈদের সলাত আযান ও ইক্বামত হীন
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাত আযান ও ইকামাত ব্যতীতই আদায় করেছেন। -এর মূল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে। [৫২৮]
ঈদগাহ থেকে (বাড়িতে) প্রত্যাবর্তন করার পর দু’ রাক‘আত নফল পড়া বৈধ
আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতের আগে কোন সলাত আদায় করতেন না। তবে তিনি তাঁর বাড়িতে ফিরে আসার পর দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। -ইবনু মাজাহ হাসান সানাদে। [৫২৯]
ঈদগাহে ঈদের সলাত ও জনগণকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দেয়া শরীয়তসম্মত
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতর ও ‘ঈদুল আযহার দিন ‘ঈদমাঠে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সলাত। আর সলাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নাসীহাত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। [৫৩০]
ঈদের সলাতে তাকবীর ও তার সংখ্যা
আমর বিন্ শুয়াইব তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতর-এর সলাতে অতিরিক্ত তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাক‘আতে সাত ও পরবর্তী রাক‘আতে পাঁচ আর কিরআত পাঠ উভয় ক্ষেত্রেই তাকবীরের পর। -আবূ দাঊদ [৫৩১] তিরমিযী হাদীসটি বুখারী থেকে নকল করেছেন, বুখারী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন। [৫৩২]
ঈদের সলাতে যা পড়তে হবে
আবূ ওয়াকিদ আল-লাইসী তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতর ও ‘ঈদুল আযহার সলাতে সূরা ‘ক্কাফ’ ও সূরা ‘ইক্তারাবাত (সূরা ক্বামার)’ পাঠ করতেন। [৫৩৩]
ঈদের সলাতের জন্য বের হলে রাস্তা পরিবর্তন শরিয়ত সম্মত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদমাঠে আসা যাওয়ার সময় রাস্তা পরিবর্তন করতেন। [৫৩৪] বর্ণনাকারী আবূ দাঊদ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতেও অনুরূপ হাদীস বর্ননা করেছেন। [৫৩৫]
দু’ ঈদে আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনাহতে আগমন করেন সে সময় তারা (মদীনাহ্ বাসীগণ) দু’টো দিনে খেলাধূলা করত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে এ দু’টোর পরিবর্তে উত্তম দু’টো দিন দিয়েছেন। আযহার দিন, ফিত্রের দিন। আবূ দাঊদ, নাসায়ী উত্তম সানাদ সহকারে। [৫৩৬]
ঈদের মাঠে হেঁটে যাওয়া শরীয়তসম্মত
আলী (রাঃ) তিনি বলেন,- সুন্নাত হচ্ছে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া-তিরমিযী একে হাসানরূপে বর্ননা করেছেন। [৫৩৭]
কোন সমস্যার কারণে ঈদের সলাত মসজিদে পড়া বৈধ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) ঈদের দিনে বৃষ্টি নামায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে তাঁদের নিয়ে ঈদের সলাত আদায় করেছিলেন। - আবূ দাঊদ দুর্বল সানাদে। [৫৩৮]
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সলাত
চন্দ্র সূর্যগ্রহণের রহস্য ও যখন তা সংঘটিত হবে তখনকার করণীয়
মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইবরাহীম (রাঃ) ইনতিকাল করেন, সেদিন সুর্যগ্রহন হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগল, ইবরাহীম (রাঃ) এর মৃত্যুর কারনেই সুর্যগ্রহন হয়েছে। তখন আল্লাহর রসুল (সাঃ) বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারনে সুর্য বা চন্দ্রগ্রহন হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন গ্রহনমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু’আ করবে এবং সলাত আদায় করবে। [৫৩৯]। বুখারীর ভিন্ন একটি বর্ননায় আছে – (গ্রহণমুক্ত হয়ে) ‘পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত। [৫৪০] আবূ বাক্র (রাঃ)- এ অবস্থা দূর না হওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় করবে এবং দু’আ করতে থাকবে। [৫৪১]
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সলাতের জন্য আযান ও তাতে উচ্চঃস্বরে কিরাত পাঠ করা শরীয়তসম্মত
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহনের সলাতে [৫৪২] তাঁর কিরাআত সশব্দে পাঠ করেন এবং চার রুকু’ ও চার সাজদাহসহ দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন। এটা মুসলিমের শব্দ বিন্যাস। মুসলিমেরই অন্য বর্ননায় আছেঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সলাতের জামা’আতের ঘোষনার জন্য ঘোষনাকারী পাঠাতেনঃ (এই বলার জন্য) ‘আসসালাতু জামি’আহ (অর্থঃ) জামা’আতের সাথে সলাতের আদায়ের জন্য (হাজির হও)। [৫৪৩]
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সলাতের পদ্ধতি
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময় সুর্যগ্রহন হল। আল্লাহর রসূল (সাঃ) তখন সলাত আদায় করেন এবং তিনি সূরাহ আল-বাক্বারাহ পাঠ করতে যত সময় লাগে সে পরিমান দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর দীর্ঘ রুকু’ করেন। অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু’ করলেন। তবে তা প্রথম রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ করেন। আবার দাঁড়ালেন এং দীর্ঘ কিয়াম করলন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকু’ করেন, তবে তা পূর্বের রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করলেন, তবে তা প্রথম কিয়াম অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকু’ করেন, তবে তা প্রথম রুকু’র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ করেন এবং সলাত শেষ করেন। ততক্ষনে সূর্যগ্রহন মুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকেদের জন্য একটি ভাষন দিলেন। [৫৪৪] –শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [৫৪৫] বর্ণনাকারী মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে-সূর্যগ্রহন লাগলে তিনি আট রুকু’ ও চার সাজদাহতে (দু-রাক্আত) সলাত আদায় করলেন। [৫৪৬] আলী (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৬টি রুকূ’ ও চারটি সাজদাহতে (দু’রাকআত) সলাত আদায় করেছিলেন। উবাই বিন কা’ব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-পাঁচ রুকূ’ ও দু’ সাজদাহতে এ সলাত আদায় করলেন। দ্বিতীয় রাক্আতেও তাই করলেন। [৫৪৭]
বাতাস জোরে প্রবাহিত হলে বা ঝড়ের অবস্থায় যা বলতে হয়
ইবনু ‘আব্বাস (রা.) তিনি বলেন, প্রবল ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাঁটু পেতে বসে পড়তেন আর এই বলে দু’আ করতেন – হে আল্লাহ! তুমি একে আমাদের জন্য রহমত (কল্যাণপ্রসূ) কর আর তাকে তুমি ‘আযাবে পরিণত করো না। - শাফি’ঈ ও ত্ববারানী। [৫৪৮]
ভূমিকম্পের সময় সলাত পড়ার বিধান ও তার বর্ণনা
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভূমিকম্পের সময় ছ’টি রুকূ’ ও চারটি সাজদাহ তে (দু’রাকআত) সলাত আদায় করলেন, এবং তিনি বললেন, এরূপ হচ্ছে-আল্লাহর বিশেষ নিদর্শন প্রকাশকালের সলাত। শাফি’ঈ ‘আলী (রাঃ) অনুরূপ একটি হাদীস উধৃত করেছেন উক্ত হাদীসের শেষাংশ ব্যতীত।
সলাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টির জন্য সলাত
বৃষ্টি প্রার্থনার সলাত শরীয়তসম্মত ও সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পদ্ধতি
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিনয়ী ও নম্রভাবে, সাধারণ পোশাক পরে, ভীত বিহ্বল হয়ে রওয়ানা করে ধীরপদে (মাঠে) পৌঁছে দু’ রাক‘আত সলাত পড়লেন, যেভাবে তিনি ঈদের সলাত পড়েন। কিন্তু তিনি তোমাদের এই খুতবাহ্র ন্যায় খুতবাহ দেননি।–তিরমিযী, আবূ ‘আউয়ানাহ ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৫৪৯]
বৃষ্টি প্রার্থনার সলাতের পদ্ধতি ও তার খুতবা
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন- লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে অনাবৃষ্টির অভিযোগ জানালে তিনি মিম্বার আনার আদেশ দিলেন-যেটি তার জন্য মুসল্লায় (মাঠে) পাতা হয়েছিল, তিনি লোকদিগকে সলাতের উদ্দেশে বের হবার জন্য একটি ধার্য দিনের ওয়াদাও করলেন। তারপর তিনি সূর্যের একাংশ প্রকাশিত হবার সময় বেরিয়ে পড়লেন। এবং মিম্বারের উপর বসলেন, তারপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও তার মহিমা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, তোমরা তোমাদের অঞ্চলে খরা-পীড়িত হবার কথা বলেছ, আর আল্লাহও (বিপদ মুক্তির জন্য) তার নিকট প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। এ বলে তিনি দুয়া আরম্ভ করলেন- উচ্চারণ ঃ আলহামদু লিল্লাহ রব্বিল ‘আলামীন। আররহমানির রহীম। মালিকি ইয়াউমিদীন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। ইয়াফ'আলু মা ইউরীদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতাল গানী। ওয়া নাহনুল ফুকারাউ । আনযিল 'আলাইনাল গাইসা। ওয়াজ'আল মা আনযালতা ‘আলাইনা কুওওয়াতান ওয়া বালাগান ইলা হীন। অর্থ ৪ “সকল প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্তে যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক। তিনি করুণাময় অত্যন্ত দয়ালু। বিচার দিনের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। হে আল্লাহ! তুমিই আল্লাহ, তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তুমি ধনাঢ্য আর আমরা অভাবগ্ৰস্ত, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর, তুমি যা আমাদের জন্য বর্ষণ করবে তাকে আমাদের জন্য শক্তির আধার কর ও এটাকে বিশেষ সময়ের জন্য উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী কর।” তারপর তিনি তার দুহাত উঠালেন ও তার বগলের শুভ্রতা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তা উচু করতেই থাকলেন। তারপর তিনি লোকেদের দিকে পিঠ করলেন ও হাত উত্তোলন অবস্থায় তার চাদরকে উলটিয়ে নিলেন। এবারে আবার তিনি লোকেদের দিকে পুনঃ মুখ ফিরালেন ও মিম্বার হতে নামলেন। তারপর দু’রাকাআত সলাত আদায় করলেন। এরপরে আল্লাহ একখণ্ড মেঘের উদ্ভাবন করলেন- মেঘ গর্জন করতে লাগল, বিদ্যুৎ চমকাল তারপর বৃষ্টি বর্ষিত হলো। -আবু দাউদ গরীব বলেছেন, এর সানাদ জাইয়্যিদ (উত্তম)। [৫৫০] বর্ণনাকারী চাদর উল্টানোর ঘটনাটি সহীহ বুখারীতেও আবদুল্লাহ বিন যায়দ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তাতে আরও আছে- অতঃপর ক্বিবলাহ্মুখী হয়ে দু'আ করলেন তারপর দুরাকাআত সলাত আদায় করলেন। তিনি উভয় রাকাআতে সশব্দে কিরাআত পাঠ করলেন। [৫৫১] বর্ণনাকারী এবং দারাকুতনিতে আৰূ জা’ফর বাকেরের মুরসাল হাদীস থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি তার চাদরকে উল্টালেন যেন দুর্ভিক্ষও উল্টে গিয়ে সচ্ছলতা আসে। [৫৫২]
জুমু’আর খুতবায় বৃষ্টি প্রার্থনার বিধান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি জুমু’আর দিন মাসজিদে প্রবেশ করল। এ সময় আল্লাহর নাবী ( সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন । লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল । আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন । তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) দু’হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন । হে আল্লাহ ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। (তারপর রাবী হাদীসের বাকী অংশ উল্লেখ করেছেন) তাতে বৃষ্টি বন্ধ করার দু’আও উল্লেখ আছে । [৫৫৩]
সৎ ব্যক্তিদের দু’আর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করার বিধান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনাবৃষ্টির সময় ‘আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব ( সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর ওয়াসীলাহ দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন , হে আল্লাহ ! (আগে) আমরা আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওয়াসীলাহ দিয়ে দু’আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন । এখন আমরা আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাচার ওয়াসীলাহ দিয়ে দু’আ করছি , আপনি আমাদে্রকে বৃষ্টি দান করুন । এর ফলে বৃষ্টি বর্ষিত হত । এর ফলে বৃষ্টি বর্ষণ হতো । বুখারী । [৫৫৪]
বৃষ্টির পানি গ্রহণ করা
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা বৃষ্টিতে পড়লাম, তখন আমরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গেই ছিলাম । তিনি তাঁর (শরীরের কিছু অংশ হতে) কাপড় হটিয়ে নিলেন ফলে বৃষ্টির পানি তাঁর শরীরে পড়লো । তিনি বললেনঃ এটা তাঁর প্রতিপালকের তরফ থেকে (রহম স্বরূপ) প্রথম বৃষ্টি হিসাবে আসলো (সেই মৌসুমের ) । [৫৫৫]
বৃষ্টি বর্ষণের সময় দু’আ করা মুস্তাহাব
আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি দেখলে বলতেন, হে আল্লাহ! মুষলধারায় কল্যাণকর বৃষ্টি দাও । [৫৫৬]
সলাত ব্যতীত বৃষ্টি প্রার্থনার বিধান ।
সা’দ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি চাওয়ার (ইসতিকার) সময় এই বলে দু’আ করেছিলেনঃ হে আল্লাহ ! আমাদের এমন মেঘ দাও –যা ঘন , গর্জনকারী , বিদ্যুৎ চমকান মেঘ হয় যা থেকে তুমি আমাদের উপর মুষলধারায় বর্ষণকারী ছোট ও সূক্ষ্ম-ঘন ফোঁটাবিশিষ্ট পর্যাপ্ত বৃষ্টি দিবে–হে প্রবল প্রতাপশালী মহা সন্মানিত । আবু ‘আউওয়ানাহ তাঁর সহীহ গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । [৫৫৭]
পূর্ববর্তী উন্মতের মাঝে বৃষ্টি প্রার্থনায় প্রচলন ছিল
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন , ইসতিকার সলাত আদায়ের জন্য সুলাইমান (আঃ) বের হয়ে এসে দেখলেন যে, একটি পিঁপড়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পা-গুলাকে আকাশের দিকে করে এই বলে প্রার্থনা করছে , হে আল্লাহ ! আমরা তোমার সৃষ্টির মধ্যে এক প্রকার সৃষ্ট জীব –আমরা তোমার পানির পূর্ণ মুখাপেক্ষী রয়েছি । এটা শুনে সুলাইমান (আঃ) তাঁর সঙ্গিদের বললেন, তোমরা ফিরে চলো—অন্যর প্রার্থনার ফলে তোমরাও পানি পেয়ে গেলে । হাকিম একে সহীহ বলেছেন । [৫৫৮]
বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আ করার সময় দু’ হাত উত্তোলন করা শরীয়তসন্মত
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসতিকার সলাতে আকাশের দিকে হাতের পৃষ্ঠদেশ দ্বারা ইশারা করেছিলেন । [৫৫৯]
পরিচ্ছদ
পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান হারাম
আবু ‘আমির আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন , রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন , আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতোগুলা দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যাভিচার [৫৬০] ও রেশমি কাপড় হালাল মনে করবে,--এর মুল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে । [৫৬১] হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন , নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি মোটা ও চিকন রেশমী বস্ত্র পরিধান করতে ও তাতে উপবেশন করতে নিষেধ করেছেন। [৫৬২]
(পুরুষের যতটুকু রেশমি কাপড় বৈধ)
উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন । তবে দুই বা তিন বা চার আঙ্গুল পরিমান কাপড় হলে তা ব্যবহার করতে পারে । শব্দ বিন্যাস মুসলিমের । [৫৬৩]
চিকিৎসার জন্য রেশমী কাপড় পরিধান বৈধ
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ) কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকায় রেশমী জামা পরিধান করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। [৫৬৪]
মহিলাদের জন্য রেশমী কাপড় বৈধ
আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এক জোড়া রেশমী কাপড় পরতে দেন। আমি তা পরে বের হই। কিন্তু তাঁর [নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] মুখমন্ডলে রাগের ভাব আমি লক্ষ্য করি। কাজেই আমি তা আমার পরিবারের মহিলাদের মধ্যে বন্টন করে দেই। -শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [৫৬৫]
স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় মহিলাদের বৈধ আর পুরুষদের জন্য হারাম
আবূ মুসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – আমার উম্মাতের নারীদের জন্য সোনা ও রেশম ব্যবহার হালাল করা হয়েছে, এবং পুরুষদের উপর হারাম করা হয়েছে। - তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন। [৫৬৬]
পোশাকসহ অন্য সকল ক্ষেত্রে কিছু দিয়ে আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশ মুস্তাহাব
ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর বান্দাকে কোন নি‘মাত দান করেন তখন তার নিদর্শন তার মধ্যে দেখতে পছন্দ করেন। [৫৬৭]
রেশমী কাপড় ও হলুদ কাপড় পরিধান নিষেধ
আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসমী (এক জাতীয় রেশমী কাপড় যা মিসরে তৈরী হয়) ও মু‘আসফার (গাঢ় হলুদ রঙের কাপড় ) কাপড়দ্বয় পরিধান নিষেধ করেছেন। [৫৬৮] আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দু’খানা মুয়াসফার কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে বলেছিলেন, তোমার মা তোমাকে কি এগুলো পরিধান করতে হুকুম করেছেন? [৫৬৯]
যে কাপড়ে সামান্য পরিমাণ রেশমী রয়েছে তা পরিধান করা বৈধ
আসমা বিন্তু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি জুব্বা (লম্বা জামা) বের করে দিলেন, যার সামনের দিক, দু আস্তিন, নীচের অংশে দিবাজ (মোটা রেশমের সঞ্জার) লাগান ছিল – আবু দাউদ। মূল বক্তব্য মুসলিমে রয়েছে। মুসলিমের অতিরিক্ত বর্ণনায় আছেঃ এটা ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর নিকট তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিল। তারপর আমি (আসমা) সেটি হস্তগত করলাম। ঐটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরতেন। ফলে আমরা সেটি ধুয়ে (তার পানি) আমাদের রুগ্ন ব্যক্তিদের আরোগ্য কামনা করতাম। বুখারী স্বীয় আদাবুল মুফরাদ নামক গ্রন্থে অতিরিক্ত বর্ণনা করেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন প্রতিনিধি দল এলে ও জুমু‘আয় এটা পরিধান করতেন। [৫৭০]