3. জানাযা
মৃত্যুর কথা অধিক মাত্রায় স্বরণ করার নির্দেশ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – সর্বপ্রকার ভোগ – বিলাসের কর্তনকারী মৃত্যুকে অধিক হারে স্বরণ কর। - ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৫৭১]
মৃত্যু কামনা করার বিধান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তা হলে সে যেন বলে : হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যানকর হয়। [৫৭২]
মু’মিনের মৃত্যুর সময় কপাল ঘেমে যায়
বুরাইদাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- মু’মিনের মৃত্যু ঘটে কপালের ঘামের সাথে। - ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৫৭৩]
মরনাপন্ন ব্যক্তিকে (আরবি) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মনে করিয়ে দেয়া শরীয়াতসম্মত
আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমরা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই) কালিমাহর তাল্কীন (স্মরণ করিয়ে) দাও। [৫৭৪]
মরণাপন্ন ব্যক্তির নিকটে সূরা ইয়াসিন পাঠের বিধান
মা‘কাল বিন ইয়াসির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তিদের নিকট সূরা ‘ইয়াসীন’ পড়। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৫৭৫]
উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে মৃত ব্যক্তির জন্য যা করণীয়
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ সালামাহর নিকটে এসে দেখলেন যে, তাঁর (মৃত্যুর পর) চক্ষুদ্বয় উন্মুক্ত রয়েছে, তিনি তা বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন-যখন রূহ ‘কবয’ করে নেয়া হয় তখন চোখ রূহ এর অনুগামী হয়। তার পরিবারের কতক লোক তখন চীৎকার করে কেঁদে উঠল; নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজের জন্য যা কল্যাণকর, শুধু সেটাই চাও। কেননা তোমরা যা বল তার জন্য ফেরেশতাকুল (এ সময়) আমীন আমীন বলতে থাকেন। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দু‘আ করলেন- হে আল্লাহ্! আবূ সালামাকে ক্ষমা কর, হিদায়াত প্রাপ্তদের মধ্যে তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দাও, তাঁর কবরকে সম্প্রসারিত কর, তাঁর কবরকে আলোকোজ্জ্বল কর এবং তার পরবর্তীতে তুমি তার পরিবারে দায়িত্বশীল দান কর। [৫৭৬]
মৃত ব্যক্তিকে কাফন দাফনের পূর্বে ঢেকে দেয়া মুস্তাহাব
আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করলে তাকে হিবারাহ নামক চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। [৫৭৭]
মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা বৈধ
আয়িশা (রাঃ) আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর মৃত্যুর পর (কপাল) চুম্বন করেন। [৫৭৮]
মৃত ব্যক্তির ঋণ দ্রুত পরিশোধ করা আবশ্যক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- মু’মিনের নফস্ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যে পর্যন্ত না তার কৃত ঋণ পরিশোধ করা হয়। - আহমাদ ও তিরমিযী; তিরমিযী একে হাসান বলেছেন। [৫৭৯]
মৃত ব্যক্তি যখন মুহরিম হবে তখন তাকে যা করা হবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যে ব্যক্তি উট হতে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে তার সম্পর্কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও আর দু’খানা কাপড়ে তাকে দাফন কর। [৫৮০]
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় তাকে উলঙ্গ করার বিধান
আয়িশা (রাঃ) যখন তারা (সহাবাগণ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গোসল দেয়ার মনস্থ করেন তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা জানিনা আমরা কি করব। আমরা অন্যান্য মৃতের ন্যায় তাঁর কাপড়-চোপড় খুলে নিয়ে তাঁর গোসল সম্পন্ন করব, নাকি না খুলেই গোসল দেব? (এটি দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ)। [৫৮১]
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার বিধান ও তার বর্ণনা
উম্মু আতিয়্যাহ্ আনসারী (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) ইনতিকাল করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন- আমরা তখন তাঁর কন্যাকে গোসল দিচ্ছিলাম। তিনি বললেন : তোমরা তাকে তিনবার বা পাঁচবার বা প্রয়োজন মনে করলে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পুর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে খবর দাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানি আমাদেরকে দিয়ে বললেন : এটি তাঁর শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে- ডান দিক থেকে উযুর অঙ্গগুলো হতে গোসল শুরু কর। বুখারীতে আছে- আমরা তাঁর চুলগুলোতে তিনটি বেণী করে গেঁথে দিয়ে পেছনের দিকে রেখে দিলাম। [৫৮২]
কয়টি কাপড়ে পুরুষকে কাফন দেয়া যায়
আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনটি ইয়ামানী সাহুলী সাদা সুতী বস্ত্র দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না । [৫৮৩]
কামীস (জামা) দিয়ে কাফন দেয়া বৈধ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই (মুনাফিক সর্দার)-এর মৃত্যু হলে তার পুত্র (যিনি সাহাবী ছিলেন) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, আপনার জামাটি আমাকে দান করুন। আমি সেটা দিয়ে আমার পিতার কাফন পরাতে ইচ্ছা করি। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জামাটি তাঁকে দিয়ে দিলেন। [৫৮৪]
সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর কেননা সেটাই তোমাদের কাপড়গুলোর মধ্যে উত্তম এবং তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের এতেই কাফন দাও। -তিরমিযী এটিকে সহীহ বলেছেন। [৫৮৫]
সুন্দর কাপড়ে কাফন দেয়া মুস্তাহাব
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন তার ভাইকে কাফন দেবে, তখন যেন তাকে ভাল কাফনই দেয়। [৫৮৬]
দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া ও এক কবরে দাফন দেয়া বৈধ
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একই কাপড়ে (ক্ববরে) একত্র করতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু’জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে তাঁকে ক্ববরে পূর্বে রাখতেন। তাঁদেরকে গোসল দেয়া হয়নি ও তিনি তাঁদের জানাযা সলাতও আদায় করেননি। [৫৮৭]
কাফনের কাপড়ে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, তোমরা কাফনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না (অধিক মূল্যে ক্রয় করবে না)। কেননা তা সহসাই ছিনিয়ে নেয়া হবে। [৫৮৮]
স্বামী স্ত্রীকে গোসল করানো বৈধ
আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, তুমি আমার পূর্বে মারা গেলে আমি তোমাকে গোসল দিব। (এটি দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ)। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৫৮৯] আসমা বিনতু ‘উমাইশ (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-কে তার গোসল দেয়ার জন্য ওয়াসিয়াত করেছিলেন। [৫৯০]
দণ্ডে নিহত ব্যক্তির উপর জানাযার সলাত পড়ার বিধান
বুরাইদাহ (রাঃ) গামিদিয়াহ (রমণীর) ঘটনায় বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ব্যভিচারের কারণে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করার নির্দেশ দিলেন। তিনি (রাবী) বলেন, তারপর তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তার জানাযার সলাত আদায় করা হয় ও তাকে দাফন করা হয়। [৫৯১]
আত্মহত্যাকারীর উপর জানাযার সলাত পড়ার বিধান
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন একটি মাইয়্যিতের নিকট আনা হল যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার উপর সলাত আদায় করেননি। [৫৯২]
কাফন-দাফনের পরে মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার সলাত পড়ার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) যে মহিলাটি মাসজিদ ঝাড়ু দিত তার সম্পর্কে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, সাহাবীগণ বললেন, সে মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? সহাবীগণ যেন তার ব্যাপারে তেমন কোন গুরুত্ব দেননি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। তারা কবরটি দেখিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার সলাত আদায় করলেন। মুসলিম এ কথাগুলো বৃদ্ধি করেছেন : তারপর তিনি বললেন-কবরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে, আল্লাহ তায়ালা আমার সলাতের কারণে তাদের কবরগুলোকে আলোকোজ্জ্বল করে দেন। [৫৯৩]
মৃত্যুর সংবাদ প্রচার নিষেধ
হুযায়ফাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু সংবাদ প্রচারে নিষেধ করতেন। - আহমাদ, তিরমিযী, তিরমিযী একে হাসান বলেছেন। [৫৯৪]
অনুস্থিত ব্যক্তির জানাযার বিধান ও তার পদ্ধতি
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাক্বীর আদায় করলেন। [৫৯৫]
জানাযাতে লোকসংখ্যা অধিক হওয়া মুস্তাহাব
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি : যদি কোন মুসলিম মারা যায় আর আল্লাহর সাথে শিরক্ করেনি এমন চল্লিশ জন মুসলিম যদি তার জানাযায় (সলাতের জন্য) দণ্ডায়মান হয়ে তাঁর জন্য শাফা‘আত করে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। [৫৯৬]
মহিলার জানাযার সলাতে ইমামের দাঁড়ানোর বিবরণ
সামুরাহ ইব্নু জুন্দাব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পশ্চাতে আমি এমন এক স্ত্রীলোকের জানাযার সলাত আদায় করেছিলাম, যিনি নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। তিনি তার (স্ত্রীলোকটির) মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। [৫৯৭]
মসজিদে জানাযার সলাত বৈধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়যাআর পুত্রদ্বয়ের (সাহল ও সুহাইল-এর) সলাত মাসজিদে আদায় করেছিলেন। [৫৯৮]
জানাযার সলাতে তাকবীরের সংখ্যা
আবদুর রহমান বিন আবূ লাইলা (রহ.) তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) আমাদের জানাযার সলাতে চার তাকবীর বলতেন। তিনি এক জানাযার সলাতে পাঁচ তাকবীর বলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও বলেছেন। [৫৯৯] ‘আলী (রাঃ) আলী (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফের (জানাযার সলাতে) ছয় তাকবীর উচ্চারণ করলেন এবং বললেন, তিনি (সাহল ইব্নু হুনায়ফ) ছিলেন একজন বাদ্রী সাহাবী। সা‘ঈদ বিন মানসুর এটি বর্ণনা করেছেন আর এর মূল বক্তব্য বুখারীতে রয়েছে। [৬০০] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জানাযায় চার তকবীর বলতেন এবং প্রথম তাকবীরের (পর) ফাতিহাতিল কিতাব (সূরা ফাতিহা) পাঠ করতেন। শাফি‘ঈ দুর্বল সানাদে এটি বর্ণনা করেছেন। [৬০১]
প্রথম তাকবীর পর (জানাযা সালাতে) সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক
ত্বলহাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে জানাযার সলাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন এবং (সলাত শেষে) বললেন, (আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাত। [৬০২]
জানাযা সলাতে যে দু’আগুলো পড়তে হয়
‘আউফ্ বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি জানাযার সলাত আদায় করছিলেন; আমি তাঁর এ দুআটি মুখস্থ করে নিলাম। উচ্চারণঃ আল্লাহুম-মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আফিহি, ওয়া’ফু আন্হু, ওয়া আক্রিম নুযুলাহূ, ওয়া ওয়াস্সি মাদ-খালাহূ, ওয়াগসিলহু বিলমা’ই ওয়াস সাল্জি ওয়াল বারাদি, ওয়া নাক্কিহী মিনাল খাতাইয়া কামা নাক্কায়তাস সাউবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাসি, ওয়া আবদিলহু দারান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খায়রান মিন আহলিহী, ওয়া যাওজান খায়রান মিন যাওজিহি, ওয়া আদ্খিলহুল জান্নাতা, ওয়াকিহী ফিতনাতাল কাবরি ওয়া ‘আযাবান নার] অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর করুণা কর, তাকে শক্তি দাও এবং তাকে রেহাই দাও। তার উপর সহৃদয় হও এবং তার প্রবেশদ্বার প্রশস্ত করে দাও এবং তাকে পানি, বরফ ও তুষার দ্বারা ধৌত করে দাও। তার গুনাহসমূহ পরিস্কার করে দাও, সাদা কাপড় যে ভাবে দাগমুক্ত করে ধৌত করা হয়। সে যে ধরণের আবাসের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে তাকে উত্তম আবাস দাও এবং যে ধরণের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে উত্তম পরিবার দাও এবং তার স্ত্রী হতে উত্তম স্ত্রী দাও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবরের ফিতনা হতে আর জাহা্ন্নামের আগুন হতে তাকে রক্ষা কর। [৬০৩] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে বলতেন : উচ্চারণ : আল্লাহুম-মাগফির লিহাইয়্যিনা, ওয়া মাইয়্যিতিনা, ওয়া শাহিদিনা, ওয়া গায়িবিনা, ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবী-রিনা, ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়ায়তাহূ মিন্না ফা আহইহী ‘আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ্ফায়তাহূ মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু ‘আলাল ঈমানি, আল্লাহুম্মা লা তাহ্রিমনা আজরাহূ ওয়ালা তুযিল্লানা বা’দাহু্। অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখো তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দান করো, তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এর প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদের পথভ্রষ্ট করো না।” [৬০৪]
মৃত ব্যক্তির জন্য আন্তরিকতার সাথে দু‘আ করার নির্দেশ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমরা কোন মৃতের জন্য সলাত আদায় করবে-তখন তার জন্য আন্তুরিকভাবে দু‘আ কর। আবূ দাঊদ। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৬০৫]
জানাযার সলাত দ্রুত করা শরীয়তসম্মত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুন্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাকে এগিয়ে দিচ্ছ, আর যদি সে অন্য কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হতে জলদি নামিয়ে ফেলছ। [৬০৬]
যে ব্যক্তি জানাযায় উপস্থিত হবে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি সলাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তা জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব)। মুসলিমে আছে- “কবরে রাখা পর্যন্ত হাজির থাকল।” বুখারীতে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে-যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও পুণ্যের আশায় কোন মুসলমানের জানাযার অনুগমন করে এবং তার সলাত-ই-জানাযা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দু’ কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। [৬০৭]
জানাযার সাথে চলার পদ্ধতি
সালিম তাঁর পিতা ‘আবদুল্লাহ্ তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র ও ‘উমার (রাঃ)-কে লাশের আগে আগে হেঁটে যেতে দেখেছেন। পাঁচজনে (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)। ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন এবং নাসায়ী একে ত্রুটিযুক্ত গণ্য করেছেন এবং এক জামা‘আত মুহাদ্দিস একে মুরসাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। [৬০৮]
জানাযায় মহিলাদের উপস্থিতি নিষেধ
উম্মু আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, জানাযার পশ্চাদানুগমণ করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তবে আমাদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। [৬০৯]
জানাযার জন্য দাঁড়ানোর বিধান
আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যখন তোমরা কোন জানাযা দেখবে তখন তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আরে যে তার সাথে যাবে সে মাইয়্যেতকে রাখার পূর্বে যেন না বসে। [৬১০]
মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি
আবূ ইসহাক (রাঃ) আবদুল্লাহ্ বিন যায়দ (রাঃ) মুর্দাকে পায়ের দিক দিয়ে কবরে প্রবেশ করিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটাই সুন্নাত (সঠিক পদ্ধতি)। [৬১১]
মৃত ব্যক্তিকে ক্ববরে প্রবেশ করার সময় যা বলতে হয়
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মুর্দাকে যখন তোমরা কবরে রাখবে তখন বলবে- ‘বিস্মিল্লাহি অ-‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহি।’ অর্থ : আল্লাহ্ তা‘আলার নামে ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিধান অনুযায়ী (দাফন করা হলো)। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন আর দারাকুৎনী একে মাওকূফ হিসেবে এর ইল্লত (দোষ) বর্ণনা করেছেন। [৬১২]
মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা হারাম
আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-মুর্দার হাড় ভাঙ্গা জীবিতের হাড়ভাঙ্গার মতই (মন্দ কার্য) । আবূ দাঊদ হাদীসটি মুসলিমের সানাদের শর্তানুযায়ী। [৬১৩] বর্ণনাকারী ইবনু মাজাহ উম্মু সালামাহ্র হাদীস বর্ণনায় একথা বৃদ্ধি করেছেন : (উভয়ই) পাপের কাজ। [৬১৪]
কবর ও দাফনের বিবরণ
সা‘দ বিন্ আবূ ওয়াক্কাস তিনি বলেন, আমার জন্য কবর তৈরী কর এবং এর পাশে কাঁচা ইট খাড়া করে দিবে, যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরে করা হয়েছিল। [৬১৫] বাইহাকীতে জাবির (রাঃ) তিনি বৃদ্ধি করেছেন : তাঁর কবর যমীন হতে এক বিঘৎ পরিমাণ উঁচু করা হয়েছিল। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৬১৬]
কবর পাকা ও তার উপর ঘর নির্মাণ করা এবং সেখানে বসা নিষেধ
বর্ণনাকারী উক্ত রাবী হতে মুসলিমে আছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরকে চুন-সুরকী দিয়ে পাকা করে গাঁথতে এবং কবরের উপর বসতে ও তার উপর কোন কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। [৬১৭]
কবরে মাটি দেয়ার বিধান
‘আমির বিন্ রাবী‘আহ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান বিন্ মায‘উন (রাঃ)-এর জানাযা সলাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর কবরের নিকট এসে দাঁড়ান অবস্থায় তিন মুঠো মাটি দিয়েছিলেন। [৬১৮]
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পরে তার জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব
উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুর্দার দাফন সম্পন্ন করে স্থির হয়ে দাঁড়াতেন ও বলতেন, -তোমরা তোমাদের ভাই-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তার ঠিক (অবিচল) থাকার প্রার্থনা কর। কেননা সে এখনই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। [৬১৯]
মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তালকিন দেয়ার বিধান
যম্রাহ বিন হাবীব যিনি ছিলেন তাবি‘ঈদের একজন, তিনি বলেন, মৃতের কবর ঠিকঠাক হবার পর যখন লোকজন অবসর পায় তখন কবরের নিকট এরুপ বলাকে লোক পছন্দ মনে করতো : হে অমুক, তুমি বল : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) তিনবার। রাব্বিইয়াল্লাহ্ (আল্লাহ্ আমার প্রতিপালক)। দীনিইয়াল্ ইসলাম, (ইসলাম আমার দ্বীন)। নাবীয়্যি মুহাম্মাদ (মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নবী)। সা‘ঈদ বিন মনসুর মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন। [৬২০] বর্ণনাকারী তাবারানীতে আবূ উমামাহ হতে মারফূ‘ সূত্রে একটি দীর্ঘ বর্ণনাতেও অনুরুপ বর্ণিত আছে। [৬২১]
পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব
বুরায়দাহ বিন্ হুসাইব আল-আসলামী তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা যিয়ারত করো। তিরমিযীতে অতিরিক্ত আছে- “এটা পরকালকে স্মরণ করাবে। [৬২২] ইবনু মাজাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)- এর হাদীসে একথা বৃ্দ্ধি করেছেন, “এটা পৃথিবীর ব্যাপারে অনাগ্রহ সৃষ্টি করবে।” [৬২৩]
নারীদের জন্য (অধিক মাত্রায়) কবর যিয়ারত করা হারাম
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতকারী নারীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তিরমিযী, ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [৬২৪]
মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা হারাম
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপ করে ক্রন্দনকারিণী ও তা শ্রবণকারিণীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। [৬২৫] উম্মু আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাই’আত গ্রহণকালে আমাদের কাছ হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, আমরা (কোন মৃতের জন্য) বিলাপ করব না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিলাপ করে কাঁদার ফলে মুর্দাকে কবরে ‘আযাব দেয়া হয়। [৬২৬] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) অনুরূপ হাদীস উক্ত কিতাবদ্বয়ে (বুখারী, মুসলিমে) রয়েছে। [৬২৭]
মৃত ব্যক্তির জন্য আওয়াজ ছাড়া ক্রন্দন করা বৈধ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক কন্যা [উম্মু কুলসুম (রাঃ)]-এর দাফনকালে উপস্থিত হলাম। আল্লাহর রসূল কবরের পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন আমি তাঁর চক্ষু হতে অশ্রু ঝরতে দেখলাম। [৬২৮]
রাত্রে দাফন করার বিধান
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মৃতদেরকে রাতের বেলা দাফন করবে না, তবে উপায় না থাকলে করবে। -ইবনে মাজাহ। এর মূল বক্তব্য মুসলিমে রয়েছে। কিন্তু তিনি (রাবী) বলেন, নাবী এ সম্বদ্ধে কড়াকড়ি করেছেন-রাত্রে কবর দিলে জানাযার সলাত আদায় না করে যেন তা কবরস্থ না করা হয়। [৬২৯]
মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার পাঠানো মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ্ বিন জা’ফর (রাঃ) তিনি বলেন, যখন জা’ফরের নিহত (শহীদ) হবার সংবাদ (মাদীনাহতে) পৌঁছল তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, -জা’ফরের পরিবারবর্গের জন্য তোমরা খাবার তৈরী কর। কারণ তাদের নিকট এমন এক বিপদ এসেছে যা তাদেরকে শোকাভিভূত কিংকর্তব্যবিমূঢ করে ফেলেছে। [৬৩০]
কবরস্থানে প্রবেশ করার সময় যা বলতে হয়
সুলাইমানের পিতা বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদের কবরস্থানে যাবার সময় এ দু’আটি শিক্ষা দিতেন। উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলিদ-দিয়ারী, মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না ইন্শা আল্লাহু বিকুম লাহিকূনা, আস্আলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ। অর্থ : ইমানদার ও মুসলিম কবরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আমি আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য প্রশান্তি চাচ্ছি। [৬৩১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্র কবরস্থান হয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাদের দিকে মুখ করে এই দুয়া বললেন-‘আসসালামু ‘আলাইকুম ইয়া আহ্লাল কবূরি, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা অলাকুম আনতুম্ সালাফুনা অ-নাহনু বিল্ আসারি।’ অর্থ : হে কবরবাসী, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ্ আমাদের ও তোমাদের গুনাহ ক্ষমাহ করে দিন, (পরকালের যাত্রায়) তোমরা আমাদের অগ্রগামী আর আমরা তোমাদের পশ্চাতে গমনকারী। -তিরমিযী একে হাসানরূপে রিওয়ায়াত করেছেন। [৬৩২]
মৃত ব্যক্তিকে গালি দেয়া নিষেধ
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা মৃতদের গালি দিও না। কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। [৬৩৩] বর্ণনাকারী তিরমিযী মুগীরাহ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাতে গালি না দেওয়ার স্থলে : “এতে তোমরা জীবিতদের কষ্ট দিবে” কথাটি উল্লেখ রয়েছে। [৬৩৪]