6. হজ্জ প্রসঙ্গ

【1】

হাজ্জের ফাযীলাত ও যাদের উপর হাজ্জ ফরয তার বিবরণ

【2】

হজ্ব এবং উমরার ফযীলত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ‘উমরাহ’র পর আর এক ‘উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের প্রতিদান। [৭৫৪]

【3】

‘উমরার বিধান

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের উপর কি জিহাদ বাধ্যতামূলক? তিনি বলেনঃ হাঁ, তাদের উপরও জিহাদ ফরয, তবে তাতে অস্ত্রবাজি নাই। তা হচ্ছে হাজ্জ ও উমরা। -শব্দ বিন্যাস ইবনু মাজাহর, সহীহ্‌ সানাদে। এর মূল রয়েছে বুখারীতে। [৭৫৫] জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ্‌ তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লা্‌হ্‌র রাসূল! আপনি আমাকে জানান যে ‘উমরাহ’ পালন আমার উপর কি ওয়াজিব (আবশ্যক)? তিনি বললেন- না, তবে যদি তুমি কর তা তোমার জন্য কল্যাণের কাজ হবে। –এর মাওকুফ হওয়াটা বেশি যুক্তিযুক্ত। ইবনু ‘আদী অন্য একটি দুর্বল সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। [৭৫৬] . জাবির (রাঃ) মারফু’রূপে, তাতে আছে, “হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয় ফরয কাজ।” [৭৫৭]

【4】

হজ্ব ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হলঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সাবীল কি জিনিস? তিনি বললেন, পাথেয় ও বাহন। –হাকিম একে সহীহ্‌ বলেছেন। এর সানাদের মুরসাল হওয়াই যুক্তিযুক্ত। [৭৫৮] বর্ণনাকারী তিরমিযীও ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন- কিন্তু তাঁর সানাদ য’ঈফ। [৭৫৯]

【5】

বাচ্চার হজ্বের বিধান

ইবনু ‘‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রাওহা [৭৬০] নামক স্থানে একদল যাত্রীর সাক্ষাত হলে তাদেরকে বললেন, তোমরা কে? তারা বললো, (আমরা) মুসলিম। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বললেন- (আমি) আল্লাহ্‌র রাসূল! এ সময় জনৈকা মহিলা তার বাচ্চা তুলে ধরে বললো, এর কি হাজ্জ আছে? তিনি বললেন, হাঁ, তবে তার নেকী তুমি পাবে। [৭৬১]

【6】

কুরবানী করতে অপারগ ব্যক্তির হজ্বের বিধান

ইব্‌নু ‘‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ফযল ইব্‌নু ‘‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ’আম গোত্রের জনৈকা মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর বান্দার উপর ফরযকৃত হাজ্জ আমার বয়োঃবৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ (আদায় কর)। ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়ের। শব্দ বুখারীর। [৭৬২]

【7】

হজ্জের মান্নত করে আদায় করার পূর্বেই মৃত্যুবরণকারীর বিধান

ইব্‌নু ‘‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের মান্নত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ আদায় না করেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ হতে হাজ্জ করতে পারি? আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ আদায় কর। তুমি এ ব্যাপারে কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহ্‌র হকই সবচেয়ে বেশী আদায়যোগ্য। [৭৬৩]

【8】

নাবালেগ ছেলে এবং দাসের কৃত হজ্ব “ফরজ হজ্ব” হবে না

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে হাজ্ব করল অতঃপর বয়োঃপ্রাপ্ত হলে (সামর্থবান থাকলে) অন্য আরো একটি হাজ্ব তাকে করতে হবে। কোন দাস তার দাসত্বকালে হাজ্ব করলে তাকে স্বাধীন হবার পর আবার একটি হাজ্ব করতে হবে। ইবনু আবূ শাইবাহ, বায়হাকী, এর সবগুলো বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, তবে তার মারফূ হওয়ার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে এবং মাওকুফ হওয়াটাই নিরাপদ। [৭৬৪]

【9】

মাহরাম পুরুষ ব্যতিত মহিলার সফরের বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর খুৎবাহতে বলতে শুনেছিঃ কোন পুরুষ কোন স্ত্রীলোকের একাকী সঙ্গী হবে না, তবে তার সঙ্গে যদি তার মাহরাম (স্বামী ও যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ এমন লোক) থাকে। আর কোন মহিলা যেন তার মাহরাম ব্যতীত একাকী সফরে না যায়। এটি শুনে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সহধর্মিনী হাজ্বের সফরে বেরিয়ে গেছে আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য লিপিবদ্ধ (নির্বাচিত) হয়েছি। তিন বললেন- যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্ব পালন কর। -শব্দ মুসলিমের। [৭৬৫]

【10】

কারও পক্ষ থেকে হজ্ব করার শর্ত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেনঃ “শুবরুমার পক্ষ থেকে আমি তোমার কাছে হাযির হয়েছি।“ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ শুবরুমা কে? সে বললো, আমার ভাই, অথবা বলো, আমার এক নিকটাত্মীয়। তিনি বলেনঃ তুমি কি কখনও নিজের পক্ষ হতে হাজ্ব করেছো? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমার নিজের পক্ষ থেকে আগে হাজ্ব করো, অতঃপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হাজ্ব করো। আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, ইবনু হিব্বান একে সহীহ্‌ বলেছেন। আর আহমাদের নিকট হাদীসটির মাককূফ হওয়াটাই অধিক সাব্যস্ত। [৭৬৬]

【11】

জীবনে একবার হজ্ব করা আবশ্যক

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খেতাব করলেন (খুতবাহ দিলেন): আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হাজ্ব ফরয করেছেন। (একথা শুনে) আকরা বিন হাবিস দাঁড়িয়ে গেল আর বলল, প্রতিবছরই কি (ফরয) হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন- আমি তা বললেই তোমাদের উপর ওয়াজিব (ফরয) হয়ে যেত। হাজ্ব একবারই ফরয। আর যা বাড়তি করবে সেটা নফল হিসেবে পরিগণিত। [৭৬৭] বর্ণনাকারী মুসলিমে আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এর মূল হাদীস রয়েছে। [৭৬৮]

【12】

মীকাত (ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থানসমূহ)

【13】

যে সমস্ত মীকাত (হজ্বের ইহরাম বাঁধার জন্য নির্বাচিত স্থানসমূহ) দলীল দ্বারা সাব্যস্ত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মাদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্‌ফা, নজ্‌দবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। হাজ্ব ও উমরাহর নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ মাক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হাজ্বের নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে)। এমন কি মক্কাবাসী মক্কা হতেই (হাজ্বের) ইহরাম বাঁধবে। [৭৬৯]

【14】

“যাতুইরক” মীকাত প্রসঙ্গে

আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরাকীদের জন্য ‘যাতু ইরক’ কে ইহরাম বাঁধার স্থান মনোনীত করেছেন। [৭৭০] জাবির (রাঃ) এ হাদীসের মূল বর্ণিত আছে কিন্তু এর রাবীর হাদীসটি মারফু হবার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন। [৭৭১] বর্ণনাকারী এবং বুখারীতে আছে, ২য় খলিফা উমার (রাঃ) ‘যাতু ইরক’ কে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। [৭৭২] আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাক্কার) পূর্বদিকের লোকদের জন্য ‘আকীক’ নামক স্থানকে মীকাতরূপে নির্ধারণ করেছেন। [৭৭৩]

【15】

ইহরামের প্রকারভেদ ও তার গুণ পরিচয়

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, হাজ্জাতুল বিদার বছর আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হই। আমাদের মধ্যে কেউ কেবল উমরাহর ইহরাম বাঁধলেন, আর কেউ হাজ্জ ও উমরাহ উভয়টির ইহরাম বাঁধলেন। আর কেউ শুধু হাজ্জ-এর ইহরাম বাধলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলেন। ফলে যারা কেবল উমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা (উমরাহ সমাধা করে) হালাল হলেন আর যারা হাজ্জ বা হাজ্জ ও উমরাহ উভয়ের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন না আসা পর্যন্ত হালাল হতে পারলেন না। [৭৭৪]

【16】

ইহ্‌রাম ও তার সংশ্লিষ্ট কার্যাদি

【17】

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইহরাম বাঁধার স্থান

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল-হুলাইফার মসজিদের নিকট হতে ইহরাম বেঁধেছেন। [৭৭৫]

【18】

উচ্চৈস্বরে তালবিয়া পাঠ করা অপরিহার্য

খাল্লাদ ইবনুস সাইব (র) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ; আমার নিকট জিবরাল (আ) এসে আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠের আদেশ দেই। -তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৭৭৬]

【19】

ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা শরীয়তসম্মত

যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের কাপড় খুলে গোসল করেছেন। তিরমিয়ী এটিকে হাসান বলেছেন। [৭৭৭]

【20】

ইহরামরত ব্যক্তির যা পরিধান করা হারাম

'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হলেন, মুহরিম ব্যক্তি কী প্রকারের কাপড় পরবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করবে না। তবে কারো জুতা না থাকলে সে টাখনুর নিচ পর্যন্ত মোজা কেটে (জুতার ন্যায়) পরবে। তোমরা জাফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার খুশবু) রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। -শব্দ মুসলিমের । [৭৭৮]

【21】

ইহরাম বাঁধার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার সময় আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে ইহরাম খুলে ফেলার সময়ও। [৭৭৯]

【22】

ইহরামরত ব্যক্তির বিবাহ করা এবং বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার বিধান

উসমান বিন আফফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুহরিম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না ও কারো বিবাহ দিবে না এবং বিয়ের প্রস্তাবও দিবে না। [৭৮০]

【23】

ইহরামকারীর ইহরাম থেকে মুক্ত ব্যক্তির শিকার খাওয়ার বিধান

আবূ কাতাদাহ আনসারী (রাঃ) তিনি গাইর মুহরিম ( ইহরাম বিহীন ) অবস্থায় একটি জংলী গাধা শিকারের ঘটনা সম্বন্ধে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইহরামে থাকা সাহাবীদের বললেন, তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমণ করতে তাকে আদেশ বা ইঙ্গিত করেছ? তাঁরা বললেন, না, আমরা তা করিনি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে বাকী গোশত তোমরা খেয়ে নাও। [৭৮১]

【24】

মুহরিম ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শিকারকৃত জীবজন্তু খাওয়ার বিধান

সব বিন জাসসামাহ আললায়সী (রাঃ) আল-আবওয়া কিংবা 'ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি একটি জংলী গাধা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য উপটৌকন দিয়েছিলেন। তাঁর উপঢৌকন এসেছিল। সেটা তিনি গ্রহণ না করে বললেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় না থাকলে এটি ফেরত দিতাম না, কিন্তু আছি বলেই ফেরত দিলাম। [৭৮২]

【25】

যে সকল জীবজন্তু হারাম সীমানার মধ্যে এবং এর বাইরে হত্যা করা যায়

আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী এত ক্ষতিকর যে, এগুলোকে (হালাল) ও হারামের মধ্যেও হত্যা করা যাবে। (যেমন) কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর। [৭৮৩]

【26】

ইহরামরত ব্যক্তি শিঙ্গা লাগানোর বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় সিঙ্গা লাগিয়েছেন। [৭৮৪]

【27】

মুহরিম ব্যক্তির মাথা মুগুনের ফিদইইয়া ( জরিমানা )

কা'ব বিন উজরাহ তিনি বলেন, আমাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হল তখন আমার চেহারায় উকুন বেয়ে পড়ছে। তিনি (তা দেখে) বললেন, তোমার কষ্ট কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আমি দেখিনি! আর তিনি বললেন-তুমি কি একটি ছাগল পাবে? আমি বললাম-না, তিনি বললেন, তবে তুমি তিন দিন সওম পালন করবে বা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে অর্ধ সা' (প্রায় ১২৫০ গ্রাম) পরিমাণ খাদ্য খাওয়াবে (উকুনের উপদ্রবে চুল কর্তনের জন্য)। [৭৮৫]

【28】

মক্কার মর্যদা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা যখন তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হাম্‌দ ও সানা (প্রশংসা) বর্ণনা করলেন। এরপর বললেন, আল্লাহ তা'আলা মক্কায় (আবরাহার) হস্তি বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেননি এবং তিনি তার রাসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে মাক্কার উপর আধিপত্য দান করেছেন। আমার আগে অন্য কারোর জন্য মাক্কায় যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না, তবে আমার পক্ষে দিনের সামান্য সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিল, আর তা আমার পরেও কারোর জন্য বৈধ হবে না। কাজেই এখানকার শিকার তাড়ানো যাবে না, এখানকার গাছ কাটা ও উপড়ানো যাবে না, ঘোষণার নিয়ককারী ব্যক্তি ব্যতীত এখানকার পড়ে থাকা জিনিস তুলে নিতে পারবে না। যার কোন লোক এখানে নিহত হয় সে দুটির মধ্যে তার কাছে যা ভাল বলে বিবেচিত হবে, তা গ্রহণ করবে (খুনীর মৃত্যুদণ্ডের জন্য বিচারপ্রার্থী হবে কিংবা এর বদলে অর্থ গ্রহণ করবে)। ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তবে ইযখিরের অনুমতি দিন। কেননা, আমরা এগুলো আমাদের কবরের উপর এবং ঘরের কাজে ব্যবহার করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইযখির ব্যতীত (অর্থাৎ তা কাটা ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হল)। [৭৮৬]

【29】

মদীনার মর্যদা

আবদুল্লাহ বিন যায়দ বিন আসিম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবরাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন ও তার জন্য দু'আ করেছেন। আমি মাদীনাহকে হারাম ঘোষণা করেছি, যেমন ইবরাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং আমি মাদীনাহর মুদ ও সা’ এর জন্য (বরকতের) দু’আ করেছি। যেমন ইবরাহীম (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার জন্য দু'আ করেছিলেন। [৭৮৭]

【30】

মদীনার হারামের সীমানা

আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-মদীনাহর হারাম ‘আইর ও সাওর স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী এলাকা জুড়ে। [৭৮৮]

【31】

হাজ্জের বিবরণ ও মক্কায় প্রবেশ

【32】

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্বের বর্ণনা

জাবির বিন আবদুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ (যাত্রা) করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে হাজ্জ ব্রত পালনে বের হই। তারপর আমরা ‘যুলহুলাইফাহ’ নামক স্থানে এলাম। এখানে আসার পর আসমা বিনতু উমাইস (আবূ বাকর (রাঃ)-এর স্ত্রী) সন্তান প্রসব করলেন। ফলে নাবী তাঁকে বললেন গোসল কর, কাপড়কে লেঙ্গুটার মত পরিধান কর আর হাজের ইহরাম বাঁধো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে সলাত সমাধান করে তাঁর কাসওয়া নামী উটনীতে আরোহণ করলেন। উটটি যখন তাঁকে নিয়ে ‘বাইদাহ’ বরাবর পৌঁছল তখন তিনি তাওহীদ বাণী ঘোষণা (তালবিয়াহ পাঠ) করতে লাগলেনঃ উচ্চারণঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাকা। অর্থঃ আমি তোমার খেদমতে হাজির হয়েছি, ইয়া আল্লাহ, আমি তোমার খেদমতে হাযির হয়েছি। আমি তোমার খিদমাতে হাযির হয়েছি, তোমার কোন শরীক নেই। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা, নেয়ামত ও রাজত্ব তোমারই। তোমার কোন শরীক নেই। এভাবেই আমরা চলতে চলতে বায়তুল্লায় পৌঁছে গেলাম, তিনি হাজারে আসওয়াদে চুম্বন দিলেন, তারপর তিনবার রামল করলেন এবং চার বার সাধারণ গতিতে চললেন। তারপর মাকামে ইবরাহীমের নিকট এসে সলাত আদায় করলেন। পুনরায় রুকনে (হাজারে আসওয়াদে) ফিরে গিয়ে তাতে চুম্বন করলেন। তারপর দরজা দিয়ে বের হয়ে 'সাফা’ পাহাড়ের দিকে বের হলেন। তারপর সাফার কাছাকাছি পৌঁছে পাঠ করলেনঃ ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম।’ তারপর বললেন- আল্লাহ যেখান থেকে প্রথমে শুরু করেছেন আমিও সেখান থেকেই শুরু করছি। এ বলে তিনি সাফা পাহাড়ে উঠলেন যেখান থেকে তিনি বায়তুল্লাহ দেখতে পেলেন- কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর তাওহীদের ঘোষণা দিলেন ও তাকবীর পাঠ করলেন অতঃপর বললেনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু। লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ, আযাযা ওয়া’দাহূ, ওয়া নাসারা আব্‌দাহূ, ওয়া হযামাল আযহাবা ওয়াহদাহু। অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর এবং প্রশংসা তাঁর, তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন। তিনি একাই ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজিত করেন। অতঃপর তিনি তার মধ্যে প্রার্থনা বা দুআ করলেন তিনবার। তারপর তিনি সাফা পাহাড় থেকে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে নামলেন এবং যখন বাতনে ওয়াদিতে (দুই সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থান) গিয়ে পা দুটি রাখলেন তখন তিনি মৃদু দৌড়ালেন। উপরে উঠে যাওয়ার পর মারওয়া পর্যন্ত সাধারণভাবে চললেন। এবং সাফার ন্যায়ই সবকিছু ‘মারওয়াতে’ও করলেন। এখানে জাবির (রাঃ) পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে এরূপও আছে, যখন তারবিয়া দিবস (৮ই যিলহিজ্জা) আসলো, তিনি সওয়ারীতে চড়ে ‘মিনা’ অভিমুখী হলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে যুহর, ‘আসর, মাগরিব, ইশা ও ফাজরের সলাত আদায় করলেন। তারপর অল্প কিছুকাল অবস্থান করলেন যতক্ষণে সূর্যোদয় হল। তারপর (মুযদালিফাহ) অতিক্রম করে আরাফাহ পর্যন্ত আসলেন। দেখলেন তার জন্য পূর্ব থেকেই নামিরাহ [৭৮৯] (বর্তমান মাসজিদে নামিরাহ) নামক স্থানে একটি তাঁবু পেলেন। তিনি তাতে স্থান নিলেন। তারপর যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তাঁর কাসওয়া নাম্নী উটনীকে তৈরি করার আদেশ করলেন, তার উপর পালান বসান হল তারপর তিনি বাতনে ওয়াদী-তে পৌঁছে গেলেন। এখানে জনগণের উদ্দেশ্যে খুতবাহ প্রদান করলেন। তারপর আযান ও ইকামাত দেয়ালেন ও যুহরের সলাত আদায় করলেন। তারপর সেখানেই আসরের সময় হলে আসরের আযান, ইকামাত দেয়ালেন ও আসরের সলাত আদায় করলেন। এ দুই সলাতের মধ্যে আর কোন সলাত আদায় করেননি, তারপর সওয়ার হয়ে মাওকেফে (অবস্থানক্ষেত্রে) এলেন তার উটনী কাসওয়ার পেট সাখরাতের দিকে এবং পথিকের চলার পথকে তাঁর সম্মুখে রেখে কিবলামুখী হয়ে সূর্যস্ত পর্যন্ত অবস্থান করলেন। হলুদ রং কিছু কেটে গেল, সূর্যের গোলাই ভালভাবে ডুবে গেল, (তখন) তিনি এমন অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেন যে, কাসওয়ার লাগাম এমনভাবে টেনে ধরা হয়েছিল যে, তার মাথা নাবীর পালানের ‘মাওরিকে’ এসে ঠেকে যাচ্ছিল। এবং তিনি ডান হাতে ইশারা করে ঘোষণা করছিলেন-হে জনগণ ধীর ও শান্ত থাকুন। যখনই কোন পাহাড়ের কাছাকাছি এসে যাচ্ছিলেন কাসওয়ার লাগাম কিছুটা ঢিল দিচ্ছিলেন, যেন সে উপরে উঠতে পারে। অবশেষে মুযদালিফাহ এসে পৌঁছলেন এবং সেখানে একটি আযান ও দুটি ইকামাতে মাগরিব ও ইশা উভয় সলাত সম্পদান করলেন। এ দুই সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে অন্য কোন নফল সলাত আদায় করেননি। তারপর ফাজর উদিত হওয়া পর্যন্ত শুয়ে থাকলেন। তারপর ফাজর সুস্পষ্ট (সুবহি সাদিক) হয়ে গেলে আযান ও ইকামাত দিয়ে ফাজরের সলাত আদায় করলেন। তার পর সওয়ার হয়ে মাশ'আরুল হারাম পর্যন্ত এলেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে দু’আ করলেন, তাকবীর ও তাহলীল ঘোষণাসহ-আকাশ বেশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেন। তারপর সূর্যদয়ের পূর্বেই বাতনে মুহাসসিরে আসলেন। এখানে সওয়ারীকে একটু জোরে চালালেন। তারপর মাঝামাঝি পথটি ধরে চললেন যেটি জামরাতুল কুবরা বরাবর বেরিয়ে গেছে। তারপর এসে পৌঁছলেন গাছের নিকটস্থ জামরার নিকট এবং বাতনে ওয়াদী হতে সাতবার কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন এবং প্রত্যেক বার নিক্ষেপের সময় "আল্লাহু আকবার” ধ্বনি করলেন। তারপর কুরবানীর মাঠে এসে কুরবানী করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটে সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহ পৌঁছলেন (তাওয়াফে ইফাযাহ সম্পন্ন করার জন্য) ও মক্কায় যুহরের সলাত আদায় করলেন। মুসলিম সুদীর্ঘভাবে। [৭৯০]

【33】

তালবীয়া পাঠের পর দোয়া করার বিধান

খুযাইমাহ বিন সাবিত (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাজ্জ বা উমরাহর তালবিয়া (লাব্বাইকা ঘোষণা) পাঠ করতেন তখন আল্লাহ্ তা'আলার কাছে তিনি তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করতেন এবং আল্লাহ তা'আলার দয়ার ওয়াসীলাহতে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইতেন। শাফি’ঈ দুর্বল সানাদে। [৭৯১]

【34】

মিনার যে কোন অংশে কুরবানী বৈধ এবং আরাফা ও মুযদালিফার যে কোন অংশে অবস্থান বৈধ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি এখানে কুরবানী করলাম। মিনার সমস্ত স্থানই কুরবানী করার স্থান। অতএব, তোমরা তোমাদের অবস্থানক্ষেত্রে কুরবানী কর, আর আমি এখানে দাঁড়িয়েছি-আরাফাহর সমস্ত অংশ জুড়েই অবস্থান ক্ষেত্র। আর আমি এখানে অবস্থান করেছি, আর জামাউন বা মুযদালফার সমস্ত এলাকাই অবস্থান ক্ষেত্র। [৭৯২]

【35】

কোন দিক হতে মক্কায় প্রবেশ এবং বাহির হবে ?

আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কায় আসেন তখন এর উচ্চ স্থান দিয়ে প্রবেশ করেন এবং নীচু স্থান দিয়ে ফিরার পথে বের হন। [৭৯৩]

【36】

মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি (ইবনু উমর) মক্কায় প্রবেশ করার পূর্বে যূতুওয়া নামক স্থানে পৌঁছে ভোর পর্যন্ত রাত যাপন করতেন এবং অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করে গোসল করতেন এবং বলতেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করেছিলেন। [৭৯৪]

【37】

হাজরে আসোওয়াদের ( কালো পাথর ) উপর সাজদা করার বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি 'হাজরে আসওয়াদ’কে চুম্বন করতেন এবং তার উপর মাথা রাখতেন। হাকিম মারফুরূপে এবং বায়হাকী মাওকুফরূপে। [৭৯৫]

【38】

তাওয়াফের মধ্যে “রমল” করা শরীয়তসম্মত এবং এর স্থানসমূহ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দুটি রুকনের (ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ) মধ্যবর্তী স্থানে (তওয়াফ কালে) প্রথম তিন চক্রে রামল করতে ও পরের চারবার স্বাভাবিক চলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন । [৭৯৬]

【39】

কাবার স্তম্ভ সমূহকে স্পর্শ করার বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কে দিকের দুটো ইয়ামানী কোণ ( ইয়ামানী ও হাজারে আল-আসওয়াদ) ব্যতীত বাইতুল্লাহর আর কোন কোণ স্পর্শ করতে দেখিনি। [৭৯৭]

【40】

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার বিধান

উমর (রাঃ) তিনি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। [৭৯৮]

【41】

লাঠি অথবা এর সদৃশ অন্য কিছু দ্বারা হাজরকে স্পর্শ করার বৈধতা

আবূ আত্তূফাইল তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কে তার ছড়ির সাহায্যে কালো পাথরকে স্পর্শ করে পরে ঐ ছড়িটিতে চুম্বন করতে দেখেছি। [৭৯৯]

【42】

তাওয়াফে ‘ইযতিবা’ করার বিধান

ইয়ালা বিন উমাইয়াহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) সবুজ চাদরে ইযতিবা ( ডান বাহুকে চাদরের বাইরে দিকে বের করে ) করে তাওয়াফ করেছেন।--তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন। [৮০০]

【43】

আরাফায় গমনকালে তালবিয়া এবং তাকবীর পাঠ করার বৈধতা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়া পড়তে চাইত তারা পড়ত, তাতে বাধা দেয়া হতো না। এবং যারা তাকবীর পড়তে চাইত তারা তাকবীর পড়ত, এতেও বাধা দেয়া হতো না। [৮০১]

【44】

রাত্রিবেলায় দুর্বল ব্যক্তিদের মুযদালিফা থেকে চলে যাওয়ার বৈধতা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁকে সামানপত্র নিয়ে অথবা দুর্বল (হাজী) দের সঙ্গে করে রাতের বেলাতেই মুযদালিফাহ থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। [৮০২] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, সওদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে তাঁর পূর্বে মুযদালিফাহ ত্যাগের অনুমতি চেয়েছিলেন। কারণ তাঁর শরীর ভারি হয়েছিল, ফলে নবী ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁকে অনুমতি দিয়েছিলেন। [৮০৩]

【45】

ফজরের পূর্বে জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করার বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আমাদেরকে বললেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে জামরাহতে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে না। -এর সানাদতি ইনকিতা’ ( সুত্র ছিন্ন )। [৮০৪] আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর রাতে, উম্মু সালামাহকে (কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য) পাঠিয়েছিলেন। ফলে তিনি ফজরের পূর্বে জামরাহতে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। তারপর মক্কা গিয়ে ‘তওয়াফে ইফাযা’ সম্পন্ন করেন। মুসলিমের শর্তানুযায়ী এর সানাদ (সহীহ)। [৮০৫]

【46】

মুযদালিফায় রাত্রিযাপন এবং আরাফায় অবস্থানের বিধানাবলী

উরওয়াহ বিন মুযার্‌রাস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে আমাদের এ (মুযদালফায় অবস্থানকালীন) ফজরের সলাতে হাজির হবে ও আমরা সেখান হতে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে অবস্থান করবে, আর যে ‘আরাফাহ'র ময়দানেও রাতে বা দিনে যে কোন সময় এর পূর্বে অবস্থান করল-তার হাজ্জ পূর্ণ হয়ে গেল ও অতঃপর সে যাবতীয় (হাজামতের) প্রয়োজন মেটাল (চুল নখ কাটার সময়ে পৌঁছে গেল)। -তিরমিযী, ইবনু খুযাইমাহ একে সহীহ বলেছেন। [৮০৬]

【47】

মুযদালিফা থেকে ফিরার সময়

উমার (রাঃ) মুশরিকরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত রওয়ানা হত না। তারা বলত, হে সাবীর! [৮০৭] আলোকিত হও। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিপরীত করলেন এবং তিনি সূর্য উঠার আগেই রওয়ানা হলেন। [৮০৮]

【48】

হজ্ব আদায়কারী কখন তালবিহা পাঠ করা শেষ করবে ?

ইবনু ‘আব্বাস ও উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল ‘আকাবাহতে পাথর ছোঁড়া পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকতেন। [৮০৯]

【49】

যে স্থান হতে জামরা আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করতে হয়

'আবদুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (রাঃ) তিনি বাইতুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে। [৮১০]

【50】

জামরায় কংকর নিক্ষেপের সময়

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী দিবসে যুহার (চাশতের) সময় (‘আকাবাহ) জামরাহতে কংকর ছুঁড়েছিলেন। আর তার পরে (দিবসগুলোতে) সূর্য চলে যাবার পর। [৮১১]

【51】

জামরায় কংকর নিক্ষেপ পদ্ধতি

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দু'আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বা দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ‘আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। [৮১২]

【52】

ন্যাড়া করা কিংবা চুল খাট করার ফযিলতের তারতম্য

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় বার বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। [৮১৩]

【53】

ঈদের দিন হজ্জের কাজসমূহের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিধান

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জের দিবসে মিনায় লোকেদের সম্মুখে (বাহনের উপর) দাঁড়ালেন। লোকেরা তাকে বিভিন্ন মাসআলা জিজ্ঞেস করছিল। জনৈক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, আমি ভুলক্রমে কুরবানীর পূর্বেই মাথা কমিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ কর, কোন ক্ষতি নেই। আর এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি ভুলক্রমে কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কঙ্কর ছুঁড়ো, কোন অসুবিধে নেই। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিন পূর্বে বা পরে করা যে কোন কাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হচ্ছিলেন, তিনি এ কথাই বলেছিলেনঃ কর, কোন ক্ষতি নেই। [৮১৪]

【54】

মাথা মুন্ডন করার পূর্বে কুরবানী করার বৈধতা

মিসওয়ার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা কামানোর আগেই কুরবানী করেন এবং সাহাবাদের অনুরূপ করার নির্দেশ দেন। [৮১৫]

【55】

প্রথম হালাল হওয়া কিভাবে অর্জিত হয়

আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-তোমাদের কঙ্কর নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডন শেষ হলে নারী (যৌন সম্ভোগ) ব্যতীত সুগন্ধি ও অন্যসব (নিষিদ্ধ) বস্তু তোমাদের জন্য বৈধ। আহমাদ ও আবূ দাঊদ; এর সানাদ দুর্বল। [৮১৬]

【56】

মহিলাদের বেলায় মাথা মুন্ডন না করে চুল ( সামান্য ) ছোট করাই শরীয়তসম্মত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মেয়েরা মাথা মুণ্ডন করবে না তারা (চুলের অগ্রভাগ) সামান্য পরিমাণ ছাঁটবে। -আবূ দাঊদ উত্তম সানাদে। [৮১৭]

【57】

মিনায় রাত্রি যাপন পরিত্যাগ করার বিধান

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাজীদের পানি পান করানোর উদ্দেশে মিনায় অবস্থানের রাতগুলো মক্কায় কাটানোর অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দেন। [৮১৮] আসিম বিন আদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের চালকদের হাজীদের মিনার বাইরে রাত কাটানোর জন্য অনুমতি দান করেছিলেন। তারা কুরবানীর দিন কঙ্কর মারবে। অতঃপর তার পরের পরের দিন (১৩ তারিখে) দুইদিনের (১২ ও ১৩ তারিখের) একত্রে কঙ্কর মারবে। তারপর ইয়াউমুন নাফরের দিন (১৪ই তারিখে দিনে যদি মিনায় অবস্থান করে তবে তিনটি জামরাকে ৭টি করে) কঙ্কর মারবে। -তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। [৮১৯]

【58】

মিনায় খুতবা দেয়ার বৈধতা

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন আমাদের খুত্ববাহ প্রদান করেছেন। (দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ) [৮২০] সাররায়া বিনতু নাব্‌হা-ন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াউমি রু’উসের দিন আমাদেরকে খুতবাহতে বললেন, এটা কি আইয়ামু তাশরীকের দিবসগুলোর মধ্যে মধ্যবর্তী সময় নয়? অর্থাৎ ১১ তারিখও তাশরীকের দিন। (দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ)। আবূ দাঊদ উত্তম সানাদে। [৮২১]

【59】

কিরান হজ্বকারীদের জন্য এক তাওয়াফ এবং এক সায়ীই যথেষ্ট

আয়িশা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেন- বাইতুল্লাহর তওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা’ঈ তোমার হাজ্জ ও উমরাহ সম্পাদন করার জন্য যথেষ্ট । [৮২২]

【60】

তাওয়াফের ইফাযায় রমল না করা শরীয়তসম্মত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাত চক্করের একটি চক্করেও তাওয়াফে ইফাযায় রামল করেননি -তিরমিযী ব্যতীত পাঁচজনে (আহমদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, হাকিম, ইবনু মাজাহ)। হাকিম একে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। (রামল হচ্ছে দুবাহু দুলিয়ে দুলিয়ে বীরত্বের সাথে চলা)। [৮২৩]

【61】

আবতাহ নামক স্থানে অবতরণের বিধান

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায়ের পর মুহাস্‌সাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন, পরে সওয়ার হয়ে বাইতুল্লাহর দিকে গেলেন এবং বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। [৮২৪] আয়িশা (রাঃ) তিনি আবতহ নামক স্থানে অবতরণ করলেন না। তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে এ জন্যই অবতরণ করেছিলেন যে, এটা এমন এটা সহজতর বিরতির স্থান ছিল যেখান থেকে সহজে (মাদীনার দিকে) বের হওয়া যেত। [৮২৫]

【62】

বিদায়ী তাওয়াফের বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেদের আদেশ দেয়া হয় যে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ। তবে এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে। [৮২৬]

【63】

মক্কা এবং মাদীনার মাসজিদে সালাত আদায়ে অধিক সাওয়াব

ইবনু যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-আমার এ (মদীনার) মসজিদে আদায়কৃত সলাত মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে আদায়কৃত সলাতের চেয়ে এক হাজার সলাত অপেক্ষা উত্তম। আর মসজিদুল হারামে আদায়কৃত সলাত আমার মসজিদে আদায়কৃত সলাত হতে শতগুণ শ্রেয়তর। -ইবনুহিব্বান একে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। [৮২৭]

【64】

হাজ্জ সম্পাদনে কোন কিছু ছুটে যাওয়া ও শত্রু দ্বারা বাধাগ্রস্ত হওয়া

【65】

উমরাহ করা থেকে বাধাগ্রস্ত ব্যক্তির বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হুদাইবিয়াতে) বাধাপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি মাথা ন্যাড়া করে নেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং প্রেরিত জানোয়ার কুরবানী করেন। অবশেষে পরবতী বছর ‘উমরাহ আদায় করেন। [৮২৮]

【66】

ইহরাম বাঁধার সময় শর্তারোপ করার বিধান

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবা'আ বিনতে যুবায়র বিন আব্দুল মুত্বালিব-এর নিকট গেলেন। তখন সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি হজ্জ্বে যাবার ইচ্ছে করছি। অথচ আমি অসুস্থবোধ করছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি হাজ্জের নিয়্যতে বেরিয়ে যাও এবং আল্লাহর কাছে এই শর্তারোপ করে বল, হে আল্লাহ! যেখানেই আমি বাধাগ্রস্ত হব, সেখানেই আমি আমার ইহরাম শেষ করে হালাল হয়ে যাব। [৮২৯]

【67】

হজ্ব পূর্ণ করতে গিয়ে কারও কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে

আল-হাজ্জাজ ইবনে আমর আল-আনসারী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যার হাড় ভেঙ্গে গেলো অথবা যে লেংড়া হয়ে গেলো (ইহরাম বাঁধার পর), সে ইহরামমুক্ত হয়ে গেলো। সে পরবর্তী বছর হজ্জ করবে। (ইকরিমা বলেন), আমি এ হাদীস ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ)-র নিকট বর্ণনা করলে তারা উভয়ে বলেন, তিনি (হাজ্জাজ) সত্য বলেছেন। -তিরমিযী একে হাসান সাব্যস্ত করেছেন। [৮৩০]