8. বিবাহ
বিবাহ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান
আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। [১০৬০]
বিবাহ করা নাবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) আল্লাহ্র জন্য স্তূতি বর্ণনা ও প্রশংসা করলেন, আর বললেন- আমি তো সলাত আদায় করি, ঘুমাই, সওম পালন করি, সওম (নফল) রাখি কোন সময়ে ত্যাগও করি, মহিলাদের বিবাহ করি (এসবই আমার আদর্শভুক্ত)। ফলে যে ব্যক্তি আমার তরীকাহ (জীবনযাপন পদ্ধতি) হতে বিমুখ হবে সে আমার উম্মাতের মধ্যে নয়। [১০৬১]
স্নেহপরায়ন, বেশী সন্তান প্রসবিনী নারীদেরকে বিবাহ করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বিবাহের দায়িত্ব নিতে আদেশ করতেন আর অবিবাহিত থাকাকে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। তিনি আরো বলতেন, তোমরা এমন সব মহিলাদেরকে বিবাহ কর যারা প্রেম প্রিয়া ও বেশী সন্তান প্রসবিনী হয়। কেননা তোমাদেরকে নিয়ে আমি কিয়ামাতের দিনে আমার উম্মাতের আধিক্যের গর্ব প্রকাশ করব। -ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন। [১০৬২] ইবনু হিব্বানে মা’কাল বিন ইয়সার শাহিদ বা সমর্থক হাদীস রয়েছে। [১০৬৩]
যে সমস্ত গুনাবলীর কারণে মেয়েদের বিবাহ করা হয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [১০৬৪]
নব দম্পতির জন্য যে দুআ করতে হয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ উপলক্ষে কাউকে মুবারকবাদ জানিয়ে বলতেন : “আল্লাহ্ তোমাদের বরকত দান করুন, তোমাদের উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যণের সাথে তোমাদের একত্র করুন।” –তিরমিযী, ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান এক সহীহ বলেছেন। [১০৬৫]
বিবাহ সংঘটিত হওয়ার সময় খুতবা পাঠ করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রয়োজনের সময় এ তাশাহ্হুদ পড়া শিক্ষা দিতেন- “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও আমাদের কাজের নিকৃষ্টতা থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল” এর পরে তিনি তিনটি আয়াত পড়তেন।* -তিরমিযী ও হাকিম একে হাসান বলেছেন। *আয়াত তিনটি হচ্ছে- সূরা আন-নিসার প্রথম আয়াত, সূরা আল্ ‘ইমরানের ১০২ আয়াত (মুসলেমুন) পর্যন্ত, সূরা আহযাবের (৭০-৭১ নং আয়াত) পর্যন্ত। [১০৬৬]
বিয়ের প্রস্তাবকারীর প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা শরীয়তসম্মত
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিবাহের পয়গাম বা প্রস্তাব দিবে তখন দেখা সম্ভব হলে, যে বিষয় বিবাহের জন্য তাকে আহ্বান করে তা যেন দেখে নেয়। -এ হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১০৬৭] বর্ণনাকারী হাদীসটির শাহিদ (সমর্থক) হাদীস তিরমিযী ও নাসায়ীতে মুগীরাহ্ (রাঃ) থেকে রয়েছে। [১০৬৮] ইবনু হিব্বানে মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ (রাঃ) বর্ণিত হয়েছে। [১০৬৯] আবু হুরাইরা" একজন মহিলাকে বিবাহ করতে যাচ্ছেন এমন একজন সহাবীকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি মেয়েটিকে দেখেছ? সাহাবী বললেন, না। তিনি বললেন, যাও, তাকে গিয়ে দেখ। [১০৭০]
মুসলমান ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের উপর অন্য কারও প্রস্তাব দেওয়া নিষেধ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক মুসলিম ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাবের ওপরে অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে বা তাকে অনুমতি দেবে। -শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [১০৭১]
কি দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয়?
সাহ্ল ইবনু সা'দ তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিয়ে দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। (রাবী) সাহ্ল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হা। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাটিকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম। বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় আছে, আমি তোমাকে তার উপরে অধিকার দিয়ে দিলাম— তোমার জানা কুরআন তাকে শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে। [১০৭২] আবু হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটিকে বললেন, তোমার কি (কুরআনের কিছু) মুখস্থ আছে? সে বললো, সূরা বাকারাহ ও তার পরের সূরা (আল ইমরান)। তিনি বললেন, ওঠ! তাকে বিশটি আয়াত (মোহরানার বিনিময়ে) শিখিয়ে দাও। [১০৭৩]
বিবাহের ঘোষণা দেওয়া আবশ্যক
'আমির বিন আবদুল্লাহ বিন যুবাইর তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিবাহ সংবাদকে ছড়িয়ে দাও। -হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১০৭৪]
বিবাহে অভিভাবক থাকা শর্ত
আবু বুরদাহ ইবনু আবু মূসা (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিবাহ আলী ব্যতীত সিদ্ধ হবে না। -ইবনুল মাদীনী, তিরমিয়ী ও ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন এবং মুরসাল হবার ক্রটি আরোপ করেছেন। [১০৭৫] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক। -আবু আওয়ানাহ, ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১০৭৬]
বিবাহের ক্ষেত্রে বিধবার কাছ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে অনুমতি নেওয়া এবং কুমারীর (চুপ থাকা) অনুমতি নেওয়া আবশ্যক
আবু হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। [১০৭৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিধবা মেয়েরা নিজেদের ব্যাপারে ওয়ালীর থেকে অধিক হকদার আর কুমারী, (সাবলিকার) অনুমতি নিতে হবে- তাদের নীরবতা অনুমতি বলে গণ্য হবে। অন্য শব্দ বিন্যাসে এরূপ আছে- বিধবা মেয়েদের সাথে ওয়ালীর কোন ব্যাপার নেই। আর ইয়াতীম মেয়েদের অনুমতি নিতে হবে। [১০৭৮]
বিবাহের মধ্যে মহিলার অভিভাবকত্ব নেই
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিবাহ দিবে না। -হাদীসটির সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। [১০৭৯]
‘শিগার’ বিবাহ নিশিদ্ধ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেন, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্শিগার নিষিদ্ধ করেছেন। ‘আশ্-শিগার' হলোঃ কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং দু কন্যাই মাহর পাবে না। অন্য সূত্রে বুখারী ও মুসলিম একমত হয়ে বলেছেন শিগার নামক বিবাহের ব্যাখ্যাটি নাফি' (রাঃ)– এর নিজের উক্তি। [১০৮০]
কুমারী মেয়েকে পছন্দ করার স্বাধীনতা দেয়া যখন তার অমতে বিবাহ দেয়া হয়
ইবনু আব্বাস (রাঃ) একটি কুমারী মেয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তাকে জানায় যে, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছে। ফলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েটিকে ঐ বিবাহ বহাল রাখা বা বহাল না রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিলেন। -হাদীসটি মুরসালের দোষে দুষ্ট। [১০৮১]
যে নারীর বিয়ে দুজন অভিভাবক দিবে – এর বিধান
সামূরাহ (রাঃ) নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু'জন অলী যে মহিলার বিবাহ দু'জনের কাছে দিয়ে দিবে-এরূপ অবস্থায় ঐ মহিলা প্রথম স্বামীর হবে। —তিরমিযী একে হাসান বলেছেন। [১০৮২]
মনিবের অনুমতি ব্যতিরেকে দাসের বিবাহের বিধান
জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে দাস তার মুনিবের বা আপনজনের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে সে ব্যভিচার বা যিনাকারী বলে গণ্য হবে। -তিরমিয়ী; তিনি একে সহীহও বলেছেন, ইবনু হিব্বানও তদ্রুপ। [১০৮৩]
স্ত্রীর ফুফু অথবা খালাকে একত্রে বিবাহ করা নিষেধ
আবু হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজিকে এবং খালা এবং তার বোনঝিকে একত্রে বিয়ে না করে। [১০৮৪]
ইহরামরত ব্যক্তির নিজের বিবাহ করা বা অপরকে বিবাহ দেওয়া নিষেধ
'উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হজ্জের ইহরাম বেঁধে আছে এমন (মুহরিম) ব্যক্তি নিজে বিবাহ করতে পারবে না এবং অন্যকে বিয়ে দিতেও পারবে না। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- সে বিবাহের প্রস্তাব দিতে পারবে না; ইবনু হিব্বানের অতিরিক্ত বর্ণনায় আছে- তাকেও বিবাহের প্রস্তাব দেয়া চলবে না। [১০৮৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমুনাকে (রাঃ) মুহরিম্ অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। [১০৮৬] মাইমূনাহ (রাঃ) নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হালাল (ইহরামহীন) অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। [১০৮৭]
বিবাহের শর্তাবলীর বিধান
উক্বাহ বিন ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে শর্তের দ্বারা তোমরা মেয়েদের লজ্জাস্থানকে বৈধ করে নিয়েছ ঐ শর্তসমূহ পূরণের সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। [১০৮৮]
মুতআ বিবাহ নিষিদ্ধ
সালামাহ বিন আল-আক্ওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আওতাস’ (১) অভিযানকালে তিন দিনের জন্য ‘মুত্আহ’ বা সাময়িক বিবাহ-এর অনুমতি দিয়েছিলেন, তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ করে দেন। [১০৮৯] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধাভিযানের সময় ‘মুত্আহ’ (সাময়িক বিবাহ) নিষিদ্ধ করেন। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েদের সাথে মুত্'আহ বিবাহ করা, গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া, খাইবার যুদ্ধে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। [১০৯০] রবী' বিন সাবুরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে মেয়েদের সাথে ‘মুত্আ’ বিবাহ (স্বল্পকালীন বিবাহ) করতে অনুমতি দিয়েছিলাম। অবশ্য আল্লাহ তাআলা এখন কিয়ামাত পর্যন্ত তা হারাম করে দিয়েছেন। যদি ঐরুপ কোন মেয়ে কারো নিকটে এখনও থেকে থাকে তবে তার পথকে উন্মুক্ত করে দিবে অর্থাৎ তাকে বিদায় করে দিবে এবং তাকে তোমাদের দেয়া কিছু ফেরত নেবে না। মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, আহমাদ ও ইবনু হিব্বান। [১০৯১]
“হিল্লা” বিবাহ করা হারাম
ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তিন তালাক প্রাপ্তা) স্ত্রীকে হালালাকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের উপর লানত করেছেন। -তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [১০১২] আলী (রাঃ) এ অনুচ্ছেদে অনুরূপ হাদীসই বর্ণিত হয়েছে। [১০৯৩]
ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা হারাম এবং তাকে ব্যভিচারীর সাথে বিবাহ দেওয়া
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দোর্রা লাগান (যিনার দায়ে শাস্তি প্রাপ্তা) মেয়েকে তার মত (দুশ্চরিত্র) পুরুষ ব্যতীত বিবাহ করবে না। -এর সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। [১০৯৪]
তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা ওপর কাউকে বিবাহ না করা পর্যন্ত তার পূর্বের স্বামীর জন্য বৈধ নয়
'আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিল; ঐ স্ত্রীলোকটিকে কোন ব্যক্তি বিবাহ করে, তারপর তাকে সহবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয়। তারপর তার প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করতে ইচ্ছা করে। এ সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেনঃ না, যতক্ষণ না পরবর্তী স্বামী তার স্বাদ গ্রহণ (সঙ্গম) করবে যেমন তার পূর্বস্বামী গ্রহণ করেছে। -শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [১০৯৫]
বিবাহের ব্যাপারে সমতা ও বিচ্ছেদের স্বাধীনতা
বিবাহে বংশের সমতা রক্ষা প্রসঙ্গ
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরবগণ একে অপরের সমপর্যায়ের, মুক্ত কৃতদাস মুক্ত কৃতদাসের সমতুল্য, তবে জোলা বা তাঁতী ও হাজ্জাম ব্যতীত। - এর সানাদে একজন রাবীর নাম অজ্ঞাত। আবু হাতিম একে মুনকার বলেছেন। [১০৯৬] মুআয বিন জাবাল মুনকাতে (বিচ্ছিন্ন) সানাদে রয়েছে।
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বংশ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়
ফাতিমাহ বিনতু কায়স (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেন, উসামাহ বিন যায়দকে বিবাহ কর। [১০৯৭]
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে পেশা বিবেচ্য বিষয় নয়
আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে বনি বায়াযাহ, তোমরা আবু হিন্দের বিবাহ দিয়ে দাও আর তার সঙ্গে বিবাহের সম্পর্ক কায়িম কর। আবু হিন্দ পেশায় হাজ্জাম ছিলেন- আবু দাউদ ও হাকিম হাসান সানাদে। [১০৯৮]
দাসীকে আযাদ করার পর তার (দাস) স্বামীর সাথে বিয়ের সম্পর্ক স্থায়ী রাখা বা না রাখার অধিকার দেয়া
আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, বারীরাকে তার দাসত্ব মোচনের পর তার (দাস) স্বামীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক বহাল রাখা না রাখার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। (এটা একটা দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ)। মুসলিমে ‘আয়িশা বর্ণিত আছে যে, তার স্বামী দাস ছিলেন [১০৯৯] এবং অন্য বর্ণনায় আছে তার স্বামী স্বাধীন ছিলেন। তবে (অর্থাৎ দাস ছিলেন) প্রথম এ বর্ণনাটি সর্বাপেক্ষা ঠিক। বুখারীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, তিনি দাস ছিলেন। [১১০০]
যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে এমতাবস্থায় তার কাছে আপন দু’বোন স্ত্রী হিসেবে রয়েছে –এর বিধান
যাহ্হাক্ বিন ফাইরুয দায়লামী (রাঃ) তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি ইসলাম গ্রহন করেছি এবং আমার বিবাহে দু’ (সহোদর) বোন রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তোমার ইচ্ছামত এদের মধ্যে একজনকে তালাক দিয়ে পৃথক করে দাও। -ইবনু হিব্বান, দারাকুতনী ও বাইহাকী একে সহীহ বলেছেন; আর বুখারী সানাদের ত্রুটি বর্ণনা করেছেন। [১১০১]
চারের অধিক স্ত্রী থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণকারীর বিধান
সালিম ‘আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, গাইলান বিন সালামাহ (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন, সে সময় তার দোষটি স্ত্রী ছিল- তারা সকলেই তার সাথে ইসলাম গ্রহন করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্যে চারজনকে পছন্দ করে রাখতে হুকুম দিলেন।– ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহিহ বলেছেন আর বুখারী, আবূ যুর’আহ ও আবূ হাতিম এর ইল্লত বর্ণনা করেছেন। [১১০২]
স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন অপরজনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণকরার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কন্যা ‘যায়নাব’ (রাঃ) কে প্রথম বিবাহের সুবাদে ছয় বছর পর আবূল আস ইবনুর রবী (রাঃ) এর নিকট ফেরত পাঠান। নতুনভাবে তার বিবাহ পড়াননি। -আর আহমাদ ও হাকিম একে সহীহ্ বলেছেন। [১১০৩] আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় কন্যা যায়নাব (রাঃ) কে তার স্বামী আবুল ‘আসের নিকটে নতুনভাবে বিবাহ পড়িয়ে ফেরত দিয়েছিলেন। তিরমিযী বলেছেন, ইবনু ‘আব্বাস কর্তিক বর্ণিত হাদিসটি সানাদের দিক দিয়ে জাইয়িদ (উত্তম), তাতে ‘আমর বিন শু’আইবের হাদিসের উপর আমল রয়েছে (কার্যকর করা হচ্ছে)। [১১০৪] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক মহিলা ইসলাম গ্রহণ করে (দ্বিতীয়) বিবাহ করে নিলেন। তারপর তার পূর্ব স্বামী এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমিও ইসলাম গ্রহণ করেছি আর আমার ইসলাম গ্রহনের কথা আমার স্ত্রী জেনেছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ স্ত্রী লোকটিকে তার ২য় স্বামীর নিকট থেকে বিচ্ছেদ করে দিয়ে তার প্রথম স্বামীকে ফিরিয়ে দিলেন। -ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১১০৫]
বিবাহের মধ্যে ত্রুটিসমুহ
যায়দ বিন কা’ব বিন উজরাহ তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানু গিফার গোত্রের ‘আলিয়াহ নামক এক মহিলাকে বিবাহ করেন। তারপর ঐ মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে প্রবেশ করেন ও তার দেহাবরণ উন্মোচন করেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কোমরের কাছাকাছি অঙ্গে সাদা দাগ দেখতে পান এবং তাকে বলেন- কাপড় পড়ে তুমি তোমার পরিবারের নিকটে চলে যাও। তিনি তাকে তার মোহর দিয়ে দেয়ার জন্য আদেশ করেন। (যইফ) হাকিম এটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসের সুত্রে জামিল বিন যায়দ একজন অজ্ঞাত রাবী বা বর্ণনাকারী। তার ওস্তাদ কে ছিলেন এ নিয়ে বিরাট মতভেদ ঘটেছে। সা’ঈদ বিন মুসাইয়িআব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার সাথে মিলন করতে গিয়ে দেখে যে, ঐ নারী শ্বেত কুষ্ঠরোগী বা পাগলী বা কুষ্ঠ রোগগ্রস্তা তাহলে ঐ মহিলার জন্য তার স্বামীর উপর স্পর্শ করা (মিলন) হেতু মোহর আদায় যোগ্য হবে। তবে ঐ ব্যাপারে যদি কেউ ধোঁকা দিয়ে থাকে তাহলে তাকেই মোহরের জন্য দায়ী করা হবে। হাদিসটি সা’ঈদ বিন মানসুর, মালিক, ইবনু আবী শাইবাহ বর্ণনা করেছেন। হাদিসটির রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। উক্ত সাহাবী সা’ঈদ আলী (রাঃ) থেকে অনুরুপ আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন- তাতে আছে আর যে মহিলার গুপ্তাঙ্গে ক্কার্ণ অর্থাৎ গুপ্তাঙ্গে দাঁতের অনুরূপ শক্ত বস্তু উদ্গত হয়ে থাকে তাহলে স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার পাবে। আর ঐ স্ত্রীর সাথে মিলনে গুপ্তাঙ্গ ব্যাবহার হয়ে থাকলে স্ত্রী মোহর প্রাপ্য হবে যা দ্বারা তার গুপ্তাঙ্গ হালাল হবে। এবং সা’ঈদ বিন মুসায়্যিবের সুত্রে আরও আছে তিনি (সা’ঈদ) বলেছেন- উমার (রাঃ) তার খেলাফতকালে ইন্নীন বা পুরুষত্বহীনকে এক বছর অবসর দেয়ার ফয়সালা প্রদান করেছিলেন। -এর বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। [১১০৬]
স্ত্রীলোকদের প্রতি সৎ ব্যবহার
স্ত্রীর পশ্চাৎদ্বার দিয়ে সঙ্গম করা হারাম
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, স্ত্রীর বাহ্যদ্বারে সংগমকারী ব্যক্তি অভিশপ্ত। -শব্দ বিন্যাস নাসায়ীর, এ হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। কিন্তু এর সানাদের উপর ইরসালের দোষারোপ করা হয়েছে। [১১০৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি পুরুষের অথবা স্ত্রীর বাহ্যদ্বারে সঙ্গম করবে তার প্রতি আল্লাহ্ তাকাবেন না। -হাদিসটি মাওকুফ হওয়ার দোষারোপ করা হয়েছে। [১১০৮]
স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে আল্লাহ্ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরার হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাকা হচ্ছে পাঁজরার ওপরের হাড়। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তা যেভাবে আছে সেভাবে রেখে দাও তাহলে বাকাই থাকবে। অতএব, তোমাদেরকে ওসীয়ত করা হলো নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য। শব্দ বিন্যাস বুখারীর আর মুসলিম এ আছে – আর যদি তোমরা তাদের থেকে ফায়দা উঠাতে চাও তাহলে বাকা থাকা অবস্থায়ই তাদের থেকে উপভোগ নিতে থাকবে। আর যদি সোজা করতে চাও তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর ভেঙ্গে ফেলার অর্থ তালাক দেয়া। [১১০৯]
যে ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে বাড়িতে অনুপস্থিত থাকে রাত্রিকালে (হঠাৎকরে) বাড়িতে প্রবেশ করা নিষেধ
জাবির (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে (হুদাইবিয়ার সন্ধিকালে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে ছিলাম। তারপর যখন আমরা মদীনাহ্য় প্রবেশ করব, এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, যেন অনুপস্থিত স্বামীর স্ত্রী নিজের অবিন্যস্ত কেশরাশি বিন্যাস করতে পারে এবং লোম পরিষ্কার করতে পারে। বুখারীর অন্য বর্ণনাতে আছে- যখন তোমাদের কেউ দীর্ঘ সময় বাড়ি থেকে অনুপস্থিত থাকে সে যেন তার বাড়িতে রাত্রিকালে (হঠাৎকরে) প্রবেশ না করে। [১১১০]
স্বামী পক্ষে স্ত্রীর গোপন বিষয় ফাঁস করা হারাম
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পরকালে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর নিকটে ঐ লোকেরা হবে যে স্ত্রীকে উপভোগ করে এবং তার স্ত্রীও তাকে উপভোগ করে তারপর তার স্ত্রীর গুপ্ত রহস্য অন্যের নিকটে ফাস করে দেয়। [১১১১]
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
হাকিম ইবনু মুআবিয়াহ তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের উপর স্ত্রীর হক কি? তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে তোমার স্ত্রীকেও খাওয়াবে, আর যখন তুমি পোষাক পরবে তাকেও পোষাক পরাবে। আর মুখে আঘাত করবে না, তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিবে না, তার সাথে চলাফেরা, কথাবার্তা বর্জন করবে না- তবে বাড়ির মধ্যে রেখে তা করতে পারবে। -বুখারী এ হাদীসের কিছু অংশকে মুয়াল্লাক (সানাদ বিহীন) রূপে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ বলেছেন। [১১১২]
স্ত্রীর সম্মুখভাগ দিয়ে যে কোন পদ্ধতিতে সঙ্গম করা জায়েয
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, ইয়াহুদীরা বলত যে, যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (এর প্রতিবাদে) (আরবী) আয়াত অবতীর্ণ হয়। শব্দবিন্যাস মুসলিমের। [১১১৩]
সঙ্গমের সময় যা বলা মুস্তাহাব
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন সঙ্গম করে, তখন যেন সে বলে, “বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা”-আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। এরপরে যদি তাদের দু'জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। [১১১৪]
স্ত্রীর স্বামীর বিছানায় (মিলনের জন্য) যাওয়ার অস্বীকৃতি জানানো নিষেধ
আবু হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সঙ্গে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর সে আসতে অস্বীকার করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ ঐ মহিলার ওপর লা'নত বর্ষণ করতে থাকে। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। মুসলিমে আছে-আসমানে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকে যতক্ষণ না তার স্বামী তার উপর সম্ভষ্ট হয়। [১১১৫]
কৃত্রিম চুল মাথায় লাগানো হারাম
ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব মহিলাদেরকে লানত করেছেন যেসব মহিলা (কেশ বড় করার জন্য অন্য) কেশ সংযোগ করে আর যে মহিলা কেশ সংযোগ করায়, আর উলকিকারিণী এবং যে উলকি করায় এমন মহিলাদেরকেও। [১১১৬]
‘গীলা’র বৈধতা এবং ‘আযল’ এর নিষেধাজ্ঞা [১১১৭]
জুযামাহ বিনতু ওয়াহাব (রাঃ) তিনি বলেছেন, কিছু লোকের মধ্যে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম, আর তিনি বলছিলেন, ‘আমি অবশ্য তোমাদেরকে ‘গীলা’ করার ব্যাপারে নিষেধ করার ইচ্ছা করেছিলাম। তারপর দেখলাম রোম ও পারস্যের লোকেরা ‘গীলা’ [১১১৮] করে থাকে তাতে তাদের শিশু সন্তানদের কোন ক্ষতি করে না। এরপর তাকে আয্ল সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, -এটাতো গোপন শিশু হত্যা! [১১১৯]
‘আযল’ করার বৈধতা প্রসঙ্গে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) একটি লোক বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি দাসী আছে, আমি তার সাথে আয্ল [১১২০] করে থাকি। আর আমি তার গর্ভ ধারণ চাই না। অথচ পুরুষ যা চায় আমিও তা (যৌন মিলন) চাই। আর ইহুদীগণ বলে থাকে, আযল করা হচ্ছে মিনি শিশু হত্যা। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইহুদীগণ মিথ্যা বলেছে। যদি আল্লাহ সন্তান সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তাহলে তুমি তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। শব্দ বিন্যাস আবূ দাউদের। এর রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। [১১২১] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং কুরআন অবতীর্ণ হওয়াকালে ‘আযল করতাম। যদি তাতে নিষেধ করার মত কিছু থাকতো তাহলে কুরআন সে ব্যাপারে আমাদেরকে নিষেধ করতো। মুসলিমে আরো আছে- এ কথা আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যাওয়ার পরও তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেননি। [১১২২]
এক গোসল দিয়ে স্ত্রীদের সহিত সঙ্গম করা জায়েয
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রীদের সাথে যৌন মিলন শেষে একবার মাত্র গোসল করতেন। শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। [১১২৩]
মাহরানার বিবরণ
দাসীকে মুক্ত করে বিবাহ করাই মাহরানা হিসেবে গন্য হয়
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রী সাফীয়াহ (রাঃ) –এর দাসত্ব মুক্তির বিনিময়কে তাঁর মাহরানা ধার্য করেছিলেন। [১১২৪]
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের মাহরানার পরিমাণ
আবূ সালামা ইবনু ‘আবদুর রহমান তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বিবিদের জন্য) কি পরিমাণ মাহরানা দিয়েছিলেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন –সাড়ে বারো উকিয়াহ্ বা স্বর্ণমুদ্রা পরিমাণ মাহরানা তিনি তাঁর স্ত্রীদের জন্য দিয়েছিলেন এবং নাশ্শ। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাশ্শ কি তা জান? রাবী বলেন, আমি বললাম, না। তিনি বললেন, অর্ধ উকিয়াহ বা স্বর্ণমুদ্রা। এগুলো যা রৌপ্য মুদ্রার পাঁচশত দিরহামের সমান। এটাই ছিল নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবিদের জন্য মাহরানা। [১১২৫]
বিবাহে মোহরানা দেওয়া আবশ্যক
ইব্নে ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘আলী (রাঃ) ফাতিমাহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন- তুমি ফাতিমাহকে (মাহরানা স্বরূপ) কিছু দাও। ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমার নিকটে কিছু নেই। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার হুতামিয়্যাহ বর্মটি কোথায়? আবূ দাঊদ, নাসায়ী, হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [১১২৬]
স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী এবং তার অভিভাবকদের উপঢৌকন দেয়ার বিধান
আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অনুষ্ঠানের পূর্বে যে উপঢৌকন, হাদিয়া (উপহার) ইত্যাদি দেয়া হয় তা নারীর প্রাপ্য এবং বিবাহের পর দেয় বস্তুসমূহ সেই পাবে, যাকে দান করা হয় বা যার জন্য আনা হয়। কোন ব্যক্তির সর্বাধিক অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকারী হল তার বোন অথবা তার কন্যা। [১১২৭]
স্ত্রীর মোহরানা নির্ধারণের পূর্বে স্বামী মারা গেলে
আলকামাহ ইবনে মাস্উদ (রাঃ) যে, তাঁকে এক ব্যাক্তি কোন মহিলাকে মোহর ধার্য না করে বিবাহ করলো আর তাঁর সাথে যৌন মিলন না করে মরে গেল এমন লোক সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলো। ইবনু মাসা’উদ (রাঃ) বললেন, মহিলাটি তার পরিবারের মহিলাদের সমপরিমাণ মোহর পাবে তার কম বা অধিক নয়, আর তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে এবং সে স্বামীর সম্পদের ওয়ারিস হবে। অতঃপর মা’কিল বিন্ সিনান আশজায়ী (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমাদের এক মেয়ে ‘বারওয়া’-বিনতে ওয়াশেক সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার ফায়সালার মতই এরূপ ফায়সালা করেছিলেন। এরূপ শুনে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) অত্যান্ত খুশী হলেন।– তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন, এবং আরো এক জামাআত মুহাদ্দিস হাসান বলেছেন। [১১২৮]
অল্প মোহরানা প্রসঙ্গ এবং তা নগদ টাকার পরিবর্তে অন্য কিছু দ্বারা দেয়ার বৈধতা
জাবির বিন্ ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, - যে ব্যক্তি কোন রমনীকে মহরানায় ছাতু বা খেজুর দিলো সে ঐ মহিলাকে (তার জন্য) হালাল করে নিলো। -আবূ দাঊদ হাদিসটির মাওকূফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। [১১২৯] আমীর বিন রবীয়া (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা (রাবীয়া) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুখানা জুতার বিনিময়ে (মোহর ধার্যে) জনৈকা মহিলার নিকাহ্ বা বিবাহকে জায়িয করেছিলেন। -তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন এবং এ (সহীহ হওয়ার) ব্যাপারে ভিন্ন মতও রয়েছে। [১১৩০] সাহ্ল বিন্ সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লোহার আংটির বিনিময়ে একজন লোকের সাথে এক মহিলার বিবাহ দিয়েছিলেন।– এটা একটি পূর্ববর্তী দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ যা বিবাহ অধ্যায়ের প্রথম দিকে উল্লেখ রয়েছে। [১১৩১] . ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, মোহর (সাধারণত) দশ দিরহামের কমে হয় না। -দারাকুৎনী , মাওকুফ রূপে; এর সানাদে ত্রুটি রয়েছে। [১১৩২]
সামান্য পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা মুস্তাহাব
ওক্বাহ ইবন্ ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, উত্তম মোহর হচ্ছে যা দেয়া সহজ হয়। -আবূ দাঊদ; হাকিম সহীহ্ বলেছেন। [১১৩৩]
তালাকপ্রাপ্তাকে সাধ্যানুযায়ী ভরন-পোষণ প্রদান করা শরীয়তসম্মত
আয়িশা (রাঃ) আল-জাওন কন্যা ‘আমরাহকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পেশ করা হলে সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করে। তিনি বলেনঃ তুমি এক মহান সত্তার নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করেছো। অতঃপর তিনি তাকে তিন তালাক দিলেন এবং উসামাহ (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তদনুযায়ী তিনি তাকে (উপঢৌকনস্বরূপ) তিনখানা সাদা লম্বা কাপড় দেন। ইবনু মাজাহ; এর সানাদে একজন মাত্রূক (পরিত্যাক্ত) রাবী রয়েছে। [১১৩৪] আর আবূ উসাইদ সা’ঈদী কর্তৃক মূল বিবরন সহীহ্ বুখারীর হাদীসে রয়েছে। [১১৩৫]
ওয়ালিমাহ
বিবাহের ওয়ালিমা করা শরীয়তসম্মত
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইব্নু আওফ (রাঃ)-এর দেহে সুফ্রার (হলুদ রঙ) চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এ কী? ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, হে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি এক মহিলাকে একটি খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ বিয়েতে বারাকাত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর। ; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। [১১৩৬]
ওয়ালিমার দাওয়াত কবুল করার বিধান
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করা হলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবে। মুসলিমে আছে- যখন কেউ তার (মুসলিম) ভাইকে বিবাহ উপলক্ষ্যে বা তদনুরূপ কোন ব্যাপারে দা’ওয়াত করবে তখন যেন সে তা গ্রহণ করে। [১১৩৭] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- ওয়ালিমাহর ঐ খানা মন্দ খানা যার আগমনকারীকে নিষেধ করা হয় আর অস্বীকারকারীকে আহবান করা হয়। আর যে ব্যক্তি ওয়ালিমাহর দা’ওয়াত গ্রহণ করেনা সে আল্লাহ্ ও তদীয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাফারমানী করে। [১১৩৮]
রোযাদারের ওয়ালিমার দাওয়াতের সম্মতিদান এবং ভক্ষণ করা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ দা’ওয়াত প্রাপ্ত (আমন্ত্রিত ) হবে , সে যেন তা গ্রহণ করে। যদি আমন্ত্রিত ব্যক্তি রোযাদার হয় তবে সে তার জন্য দু’আ করবে। আর যদি রোযাদার না হয় তবে যেন সে খানা খায়। [১১৩৯] মুসলিমে জাবির (রাঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে; তাতে আছে- ইচ্ছা হলে খাবে নতুবা খাওয়া বর্জন করবে। [১১৪০]
দাওয়াত দেওয়ার একদিন পর দাওয়াত কবুল করার বিধান
ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, প্রথম দিবসের ওয়ালিমাহর খানা ন্যায্য, দ্বিতীয় দিবসের ওয়ালিমাহর খানা সুন্নাত, তৃতীয় দিবসের ওয়ালিমাহর খানা রিযা বা স্বীয় গৌরব জাহির করা। আর যে নিজের নাম ছড়ানোর উদ্দেশে কোন কাজ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামাত দিবসে জনগণের নিকটে প্রকাশ করে লাঞ্ছিত করবেন।– তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন; হাদীসটির রাবী সহীহ্ হাদীসের অনুরূপ। [১১৪১] ইবনু মাজাহতে আনাস (রাঃ) এ হাদীসের শাহেদ বা সমার্থক হাদীস বর্ণিত রয়েছে। [১১৪২]
বিবাহের ওয়ালিমার ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক নির্দেশনা
সাফিয়্যাহ বিনতে শাইবাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন সহধর্মিনীর বিবাহতে দু’ মুদ [১১৪৩] যব-এর খাবার ওয়ালিমাহ দিয়েছিলেন। [১১৪৪] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার এবং মাদীনাহ্র মাঝে তিন দিন অবস্থান করলেন এবং হুয়ায়্যার কন্যা সাফীয়ার সাথে বাসর যাপনের ব্যাবস্থা করলেন। আমি মুসলিমদেরকে তাঁর ওয়ালিমার দাওয়াত দিলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দস্তরখানা বিছানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেখানে গোশত ও রুটি ছিল না। খেজুর, পনির, মাখন ও ঘি রাখা হল।–শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [১১৪৫]
দু’জন নিমন্ত্রণকারী একত্রে দাওয়াত দিলে কার দাওয়াত কবুল করবে – এর বিধান
নাবী (সঃ) তিনি বলেছেন – দু’জন নিমন্ত্রণকারী একত্রে হলে, তোমার দরজার (বাড়ির) নিকটবর্তী ব্যক্তির দাওয়াত গ্রহণ করবে। আর যদি তাদের কেউ পূর্বে আসে তবে প্রথম ব্যক্তির দাওয়াত গ্রহণ করবে। - এর সানাদ দুর্বল। [১১৪৬]
হেলান দিয়ে বসে খাওয়া
আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি হিলান বা ঠেস লাগিয়ে বসে খাবার খাই না। [১১৪৭]
খাওয়ার শিষ্টাচারিতা সমূহ
উমার ইবনু আবি সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন – হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে আহার কর এবং তোমার নিকটবর্তী (স্থানের খাবার) থেকে খাও। [১১৪৮]
থালার চতুর্দিক থেকে খাওয়ার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সমীপে একটি ‘পেয়ালায় করে সারিদ বা সুরুয়াতে ভিজানো রুটি আনা হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন – তোমরা চতুর্দিক থেকে খাও, মধ্য থেকে খেওনা – কেননা বারকাত মধ্যেই অবর্তীণ হয়। - শব্দ বিন্যাস নাসায়ীর; আর এর সানাদ সহীহ। [১১৪৯]
খাবারকে নিন্দা করা অপচ্ছদনীয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভাল লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন। [১১৫০]
বাম হাত দ্বারা খাওয়া নিষেধ
জাবির (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – বাম হাতে খাবেনা, কেননা শয়তান বাম হাতে খেয়ে থাকে। [১১৫১]
পাত্রে ফুঁ দেওয়া অথবা শ্বাস ফেলা নিষেধ
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পান করবে তখন যেন সে পাত্রে শ্বাস ত্যাগ না করে। [১১৫২] আবূ দাউদে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীসটি এরূপই, তবে এতে এ অংশটুকু বেশি আছে – ‘পানীয় পাত্রে ফুঁ দেবে না।’ তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [১১৫৩]
স্ত্রীদের হক বন্টন
স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে পালা বন্টন করা শরীয়তসম্মত
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফের সাথে (সব কিছু) সমানভাবে বন্টন করতেন, অতঃপর বলতেনঃ হে আল্লাহ! এ হলো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমার কাজ। যে বিষয়ে তোমার ক্ষমতা আছে, আমার সামর্থ্য নাই, সে বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করো না। - ইবনু হিব্বান ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন কিন্তু তিরমিযী হাদীসটির মুরসাল হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [১১৫৪]
স্ত্রীদের মাঝে পরিমানমত ন্যায়পরায়ণতা বজায় আবশ্যক
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন – যার দু’জন স্ত্রী আছে, আর সে তাদের একজনের চেয়ে অপরজনের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ে, সে ক্বিয়ামাতের দিন একদিকে বক্রভাবে ঝুঁকে থাকা অবস্থায় উপস্থিত হবে। এর সানাদ সহীহ্। [১১৫৫]
নতুন স্ত্রীর নিকট অবস্থান করার পরিমাণ
আনাস (রাঃ) তিনি বলেছেন – নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত হচ্ছে, যদি কেউ বিধবা স্ত্রী থাকা অবস্থায় কুমারী বিয়ে করে তবে সে যেন তার সঙ্গে সাত দিন অতিবাহিত করে এবং এরপর পালা অনুসারে এবং কেউ যদি কোন বিধবাকে বিয়ে করে এবং তার ঘরে পূর্ব থেকেই কুমারী স্ত্রী থাকে তবে সে যেন তার সঙ্গে তিন দিন কাটায় এবং তারপর পালাক্রমে। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [১১৫৬]
অকুমারী স্ত্রীর তিন বা সাত দিন যে কোন মেয়াদে পালা গ্রহণের স্বাধীনতা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ এটা সুন্নাত বা বিধিসম্মত হবে – যখন মানুষ কোন কুমারীকে অকুমারীর উপর বিয়ে করবে, তার সাথে সাত দিন অবস্থান করার পর তার স্ত্রীদের মধ্যে সমানভাবে পালা বন্টন করবে। আর যখন কোন অকুমারীকে বিয়ে করবে তখন তার সাথে একাধিক্রমে তিন দিন অবস্থান করার পর তাদের পালা সমভাবে বন্টন করবে। [১১৫৭]
কোন স্ত্রী তার সতীনকে তার পালা দান করতে পারে
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, সওদা বিনতে যাম‘আহ (রাঃ) তাঁর পালার রাত ‘আয়িশা (রাঃ) কে দান করেছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ) এর জন্য দু’দিন বরাদ্দ করেন – ‘আয়িশা’র (রাঃ) দিন এবং সওদা (রাঃ)’র দিন।[১১৫৮]
পালা নেই এমন স্ত্রীর নিকট গমন করা বৈধ যখন অন্য স্ত্রীদের সাথে সমতা বহাল থাকবে
উরওয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন – হে আমার বোনের ছেলে, আমাদের নিকটে অবস্থান ব্যাপারে একজনকে অপরের উপরে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনরূপ অধিক প্রাধান্য দিতেন না। এমন দিন খুব কমই যেত – তিনি আমাদের সকলের নিকট আগমন ব্যতীত থাকতেন, অর্থাৎ সকলের নিকটে প্রায়ই আসতেন। আমাদেরকে তিনি স্পর্শ ব্যতীত সকলের নিকটবর্তী হতেন। অবশেষে যার নিকটে রাত্রি যাপনের বারি (পালা) থাকতো তিনি তাঁর নিকটে উপস্থিত হয়ে রাত্রি যাপন করতেন। - শব্দ বিন্যাস আবূ দাউদের; হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [১১৫৯] মুসলিমে ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসর সলাত পড়ে তাঁর সকল স্ত্রীর নিকটে যেতেন, তাতে তিনি সকলের নিকটে উপস্থিত হতেন। (এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ) [১১৬০]
অসুস্থ অবস্থায় স্ত্রীদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করা
আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর যে অসুখে ইন্তিকাল করেছিলেন, সেই অসুখের সময় জিজ্ঞেস করতেন, আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পালা? তিনি আয়িশা (রাঃ) এর পালার জন্য এরূপ বলতেন। সুতরাং উম্মাহাতুল মু’মিনীন (স্ত্রীগণ) তাঁকে যার ঘরে ইচ্ছে থাকার অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) এর গৃহে অবস্থান করেছিলেন। [১১৬১]
স্ত্রীদের কোন একজনকে সফর সঙ্গী করতে হলে সকলের মাঝে লটারী করা
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের মনস্থ করলে স্ত্রীগণের মধ্যে লটারি করতেন। যার নাম আসত তিনি তাঁকে নিয়েই সফরে বের হতেন। [১১৬২]
স্ত্রীকে অধিক প্রহার করা নিষেধ
আবদুল্লাহ বিন যাম’আহ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। [১১৬৩]
খোলা তালাক্বের বিবরণ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সাবিত ইবনু কায়স এর স্ত্রী নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফুরী করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি তাঁর বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বললঃ হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক ত্বালাক্ব দিয়ে দাও। বুখারীর অন্য বর্ণনায় এরূপ আছে – নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে তালাক দেয়ার জন্য আদেশ করলেন। [১১৬৪] আবূ দাউদ এতে আছে যে, অবশ্য সাবিত বিন কায়েসের স্ত্রী সাবিতের নিকট থেকে খোলা তালাক গ্রহণ করেছিলেন। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাত্র এক হায়িয তার ইদ্দতের ব্যবস্থা করেছিলেন। [১১৬৫] আমর (রাঃ) তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, সাবিত বিন কায়েস (রাঃ) কুৎসিত ছিলেন। ফলে তার স্ত্রী বলেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর শপথ আল্লাহর ভয় না থাকলে সাবিত যখন আমার নিকট আসে তখন অবশ্যই আমি তার মুখে খুধু নিক্ষেপ করতাম। সাহল বিন আবূ হাসমাহ সাবিত বিন কায়েসের ঘটনাটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম খোলা তালাক।
তালাক্বের বিবরণ [১১৬৮]
তালাক দেয়া অপছন্দনীয়
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তালাক্ব হচ্ছে হালাল বস্তুর মধ্যে আল্লাহ্র নিকটে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য বস্তু। আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ, হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আৰূ হাতিম হাদীসটির মুরসাল হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন।” [১১৬৯]
হায়েয অবস্থায় তালাকের বিধান
আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমার (রাঃ) তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে স্বীয় স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় ত্বলাক্ব দেন। 'উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রসূলুল্লাহ বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচ্ছে করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে ত্বলাক্ব দেবে। আর এটাই তুলাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ্ তা'আলা স্ত্রীদের ত্বলাক্ব দেয়ার বিধান দিয়েছেন। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে 'আপনি তাকে (ইবনু 'উমারকে) হুকুম দিন তার স্ত্রীকে সে ফেরত নিক তারপর পবিত্র অবস্থায় বা গর্ভাবস্থায় ত্বলাক্ব দিক। বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, এতে তার একটি ত্বলাক্ব হিসাব ধরা হয়েছিল। মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- ইবনু উমর (রাঃ) কোন জিজ্ঞেসকারীকে বললেন, যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে এক বা দু-ত্বলাক্ব দাও তাহলে এক্ষেত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আদেশ করেছিলেন- যেন আমি তাকে ফেরত নিই তারপর তার অন্য একটি হায়িয হওয়া পর্যন্ত তাকে আমি ঐ অবস্থায় রেখে দিই। অতঃপর পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিই। তারপর তাকে স্পর্শ করার পূর্বে ত্বলাক্ব দিই। আর তুমি তাকে তিন ত্বলাক্ব দিয়েছ আর তুমি তোমার প্রভুর যে নির্দেশ তোমার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে ছিল তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেছ। অন্য বর্ণনায় আছে- ‘আবদুল্লাহ বিন 'উমার (রাঃ) বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে স্ত্রী ফেরত দিয়েছিলেন আর হায়িয অবস্থার ঐ ত্বলাক্বটিকে কোন ব্যাপার বলে মনে করেননি এবং তিনি বলেছিলেন যখন সে পবিত্র হবে তখন ত্বলাক্ব দিবে অথবা (ত্বলাক্ব না দিয়ে) রেখে দিবে। [১১৭০]
নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর দুই সাহাবীর যুগে তিন তালাকের বিধান
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বাক্র সিদ্দীকের শাসনামলে ও 'উমার ফারুক (রাঃ)-এর প্রথম দুবছরের খেলাফতকাল পর্যন্ত একসঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাককে একটিমাত্র তালাক গণ্য করা হতো। তারপর 'উমার (রাঃ) বললেন- লোক তো তালাক সম্পাদনের সুযোগ গ্রহণ করে তাড়াহুড়ো করছে, এমতাবস্থায় যদি আমি ওটা (তিন ত্বলাক্বকে) তাদের উপর চালু করেই দিই! ফলে তিনি তিন ত্বলাক্বকে তাদের উপর চালু করেই দিলেন। [১১৭১]
এক শব্দ দ্বারা তিন তালাক দেওয়ার বিধান
মাহমুদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন লোক সম্বন্ধে সংবাদ দেয়া হলো যে, লোকটি তার স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছে। (এরূপ শুনে) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগাম্বিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, অতঃপর বললেন, তোমাদের মধ্যে আমি বিদ্যমান থাকা অবস্থাতেই কুরআন নিয়ে কি খেলা করা হচ্ছে? এমনকি এক ব্যক্তি (সাহাবী) দাড়িয়ে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব না? -হাদীসটির রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। [১১৭২]
তিন তালাক দ্বারা যা সংঘটিত হয়
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, সহাবী আবূ রুকানাহ তার স্ত্রী উম্মু রুকানাহকে তালাক দিয়েছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার স্ত্রীকে তুমি 'রাজায়াত' কর অর্থাৎ ফেরত নাও, উক্ত সহাবী বললেন আমি তো তাকে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা তো আমি জানিই, তুমি তাকে ফিরিয়ে নাও। [১১৭৩] মুসনাদে আহমাদের শব্দে আছে, সাহাবী আবূ রুকানাহ তাঁর স্ত্রীকে একই বৈঠকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তার স্ত্রী বিচ্ছেদ হেতু পেরেশান হয়ে পড়লেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন- এটা তো একটি মাত্র তালাক্ব গণ্য হয়েছে। হাদীস দুটির রাবী ইবনু ইসহাক- এ হাদীসে ক্রটি রয়েছে। আবূ দাউদ অবশ্য আবূ রুকানাহ তার স্ত্রী সুহায়মাহকে 'আল-বাত্তাহ তালাক' দিয়েছিলেন। আর তিনি বলেছিলেন- আল্লাহর শপথ আমি তো এতে একটি মাত্র তালাকেরই ইচ্ছা করেছিলাম। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীকে তার নিকট ফেরত দিয়েছিলেন। [১১৭৪]
রসিকতা করে তালাক দেওয়ার বিধান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে বাস্তবিকই বলা হলেও যথার্থ বিবেচিত হবে অথবা উপহাসচ্ছলে বলা হলেও যথার্থ গণ্য হবেঃ বিবাহ, তালাক ও প্রত্যাহার। নাসায়ী ব্যতীত চারজনে; হাকিম সহীহ বলেছেন। [১১৭৫] ইবনু আদীর একটি দুর্বল বর্ণনায় আছে- (ঐ তিনটি হচ্ছে) তালাক, দাসমুক্তি ও বিবাহ। [১১৭৬] উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) মারফু' সূত্রে হারিস ইবনু আবি উসামাহ হতে বর্ণিত হয়েছে; তিনটি ব্যাপারে খেল-তামাশা চলে না। তালাক, বিবাহ ও দাসমুক্তিতে। এ সম্বন্ধে যে কথা বলবে তার উপর তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এর সানাদ দুর্বল। [১১৭৭]
অন্তরে তালাকের চিন্তা করলেই তালাক্ব কার্যকর হয় না
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে। [১১৭৮]
যাদের তালাক কার্যকর হয় না
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। -আবূ হাতিম বলেনঃ এর সানাদ ঠিক নয়। [১১৭৯]
স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নেয়ার বিধান
ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হারাম বলে ঘোষণা দেয় সে ক্ষেত্রে কিছু (অর্থাৎ ত্বলাক্ব) হয় না। তিনি আরও বলেনঃ "নিশ্চয় তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" মুসলিমে আছে, যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে হারাম বলে ব্যক্ত করে তখন তা শপথ বা কসম বলে গণ্য হয়-তার জন্য তাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে।” [১১৮০]
তালাকের আনুষাঙ্গিক শব্দাবলী
'আয়িশা (রাঃ) জাওনের কন্যাকে যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট (একটি ঘরে) পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও। [১১৮১]
বিবাহের পরেই শুধুমাত্র তালাক দেয়া যায়
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, বিবাহ সম্পাদন হওয়ার পর ব্যতীত তালাক নেই, আর দাস-দাসীর উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ব্যতীত দাসত্ব মুক্তি নেই। -হাকিম সহীহ বলেছেন, এর সানাদটির মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। [১১৮২] ইবনু মাজাহ মিসওয়ার বিন মাখরামাহ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার সানাদটি হাসান, কিন্তু এটাও ক্রটিযুক্ত। [১১৮৩] 'আমর বিন শু'আইব (রাঃ) তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে বিষয়ে মালিকানা নেই, সে বিষয়ে আদম সন্তানের কোন মানৎ মানা চলবে না এবং মালিকানা প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কোন দাসত্ব মুক্তি নেই, বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে স্ত্রীর অধিকার অর্জন ব্যতীত তালাক্ব নেই। -তিরমিয়ী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন, বুখারী (রহঃ) হতে বর্ণিত, এ ব্যাপারে হাদীসের মধ্যে এটি সর্বাধিক সহীহ্। [১১৮৪]
শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য নয় এমন ব্যাক্তির তালাকের হুকুম
'আয়িশা (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছেঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। -হাকিম সহীহ্ বলেছেন, ইবনু হিব্বানও বর্ণনা করেছেন। [১১৮৫]
রাজ'আত বা তালাক্বের পর (স্ত্রী ফেরত) নেয়ার বিবরণ
রাজ'আত করার ব্যাপারে সাক্ষী রাখার বিধান
'ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) তিনি ঐ লোক সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হলেন, যে ব্যক্তি তালাক দিয়ে রাজ’আত বা স্ত্রীকে ফেরত নেয় আর ফেরত নেয়ার কোন সাক্ষী রাখে না। তিনি বললেন, স্ত্রীর তালাকের ও তার রাজা'আতের উপর সাক্ষী রাখবে; আবূ দাউদ এরূপ মাওকুফ সানাদে বর্ণনা করেছেন, এ হাদীসের সানাদ সহীহ্। [১১৮৬] ইমাম বায়হাকী এ শব্দে বর্ণনা করেছেন- 'ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) এমন ব্যক্তি সম্বন্ধে তিনি জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর ফেরত নেয় কিন্তু ফেরত নেয়ার স্বাক্ষী করে রাখে না।' অতঃপর তিনি বলেছিলেন-'এটা সুন্নাত তরীকা নয়। বরং সে এখন তার সাক্ষী করে রাখুক । তাবারানী, অন্য বর্ণনায় অতিরিক্ত করেছেন যে, সে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি যখন তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন- তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর পিতা) ‘উমার (রাঃ) কে বলেছেন, তাকে ('আবদুল্লাহ) হুকুম করুন সে যেন তার স্ত্রীকে ফেরত নেয়। [১১৮৭]
ঈলা, যিহার ও কাফফারার বিবরণ [১১৮৮]
যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর নিকট সহবস্থান না করার শপথ করে
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের সাথে (নিকটবর্তী না হবার জন্য) ‘ঈলা’ বা কসম ও হারাম করেছিলেন। ফলে হালাল কাজকে হারাম করেছিলেন এবং তিনি এরূপ শপথ ভঙ্গ করার জন্য কাফফারা প্রদান করেছিলেন। -রাবীগুলো নির্ভরযোগ্য। [১১৮৯]
ঈ’লার (স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার শপথ করা) বিধানবলী
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেন, চার মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে ত্বলাক্ব দেয়া পর্যন্ত তাকে (ঈলাকারীকে) আটকে রাখা হবে। আর ত্বলাক্ব না দেয়া পর্যন্ত ত্বলাক্ব প্রযোজ্য হবে না। [১১৯০] সুলাইমান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি দশ জনের ও অধিক সহাবীকে দেখেছি তাঁরা (ঈলাকারীদেরকে) বিচারকের নিকট হাজির করেছেন।–শাফেয়ী। [১১৯১] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, জাহিলিয়াতের যুগের ঈলা এক বৎসর ও দু’ বৎসর কাল দীর্ঘ হতো। আল্লাহ ঐ দীর্ঘ সময়কে চার মাস নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অতএব যদি তা চার মাসের কম হয় তাহলে ঈলা বলে গণ্য হবে না। [১১৯২]
যিহারের (স্ত্রী মায়ের সঙ্গে তুলনা করা) বিধানবলী
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কোন এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর সাথে যিহার করে, অতঃপর তার সাথে সহবাস করে ফেলে। তারপর সে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বলল যে, আমি তো কাফ্ফারা দেয়ার পূর্বেই আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,- আল্লাহর আদেশ পালন না করে স্ত্রীর নিকট যেও না। - তিরমিযী সহীহ্ বলেছেন, নাসায়ী এর ইরসাল হওয়া কে প্রাধান্য দিয়েছেন। [১১৯৩] বাযযার অন্য সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তাতে অতিরিক্ত আছে- তুমি তোমারে এ কাজের জন্য (কসম ভঙ্গের জন্যে ) কাফ্ফারা দাও, এরূপ আর করবে না।
যিহারের কাফফারা সমূহ
সালামাহ ইবনু সাখর (রাঃ) তিনি বলেছেন-রামাযান মাস এসে যাবার পর আমার মনে ভয়ের উদ্রেক হল যে, হয়তো আমি আমার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে বসব। অনন্তর আমি তাঁর নিকটবর্তী হলাম এমত অবস্থায় তার একটি অংশ (হাঁটুর নিন্মাংশ) রাত্রে আমার সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল; ফলে আমি তার উপর পতিত হলাম এবং সহবাস করে ফেললাম। রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, একটি দাস মুক্ত করো। আমি বললাম, আমি দাসের মালিক নই- কেবল আমি নিজেরই মালিক। তিনি বললেন, - তবে একাদিক্রমে দুমাস সওম পালন করো। আমি বললাম, আমি সওম পালনের জন্যই তো এ বিপদে পড়েছি । তিনি বললেন,-তবে তুমি ষাট জন দরিদ্রকে এক অরাক বা ফারাক (আনুমানিক ৪৫ কেজি ওজনের) খেজুর খাইয়ে দাও। -ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু জারুদ একে সহীহ্ বলেছেন। [১১৯৪]
লা’আন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান
লি’আনের (স্বামী এবং স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান করা) বৈধতা এবং এর বিবরণ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, অমুক ব্যক্তি (উআইমের ‘আজলানী) জিজ্ঞেস করে বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল ! (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কি মনে করেন, আমাদের কেউ যদি তার স্ত্রীকে ব্যভিচারে লিপ্ত পায় তবে সে কি করবে? যদি সে এ কথা ফাঁস করে দেয় তাহলে তা বিরাট ব্যপার হয়ে যাবে। আর যদি চুপ থেকে যায় তাহলে তাকে এরূপ বিরাট ব্যপারে চুপ থাকতে হবে। (কথা শুনে) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কোন উত্তর দিলেন না। এরপর আর একদিন সে এসে বলল, যে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাতেই আমি আজ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। অতঃপর আল্লাহ্ (এর সমাধানকল্পে) সূরা নূরের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ঐসব আয়াত পড়ে শুনালেন এবং তাকে উপদেশ দিলেন ও জানালেন যে, পরকালের শাস্তি থেকে ইহকালের শাস্তি অনেক হালকা । উআইমের (রাঃ) বললেন – না, আপনাকে যিনি সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ আমি তার উপর মিত্থ্যা বলছি না। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রীকে ডাকলেন, অনুরূপভাবে তাকে উপদেশ দিলেন। সে বলল না- সত্য সহকারে যে আল্লাহ্ আপনাকে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ। তিনি (আমার স্বামী) মিথ্যাবাদী । এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষের চারটি সাক্ষী আল্লাহ্র শপথ যোগে গ্রহন আরম্ভ করলেন তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে মেয়েটির সাক্ষ্য আল্লাহ্র কসম যোগে চারবার গ্রহন করে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিলেন। [১১৯৫]
লি ‘আনকারী স্বামী- স্ত্রীর মাহরানার বিধান
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি‘আনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের হিসাব নিবেন। তোমাদের একজন মিথ্যাবাদী। তার (মহিলার) উপর তোমার কোন অধিকার নেই। সে বললঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মাল ? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি যদি সত্যি কথা বলে থাক, তাহলে এ মাল তার লজ্জাস্থানকে হালাল করার বিনিময়ে হবে। আর যদি মিত্থ্যা বলে থাক, তবে এটা তুমি মোটেই চাইতে পারনা, তুমি তো তার থেকে অনেক দূরে। [১১৯৬]
গর্ভবতী স্ত্রীকে লি'আন করা
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (গর্ভবতী স্ত্রীকে অপবাদ দেয়া হলে) তোমরা মহিলার উপর লক্ষ্য রাখ, যদি সন্তান পূর্ণ সাদা ও সোজা (বাঁকা নয়) হয় তাহলে তা তার স্বামীরই হবে। আর যদি সন্তান সুর্মা মাখা চোখ ও কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট (নিগ্রোদের) হয় তাহলে যার সাথে তার ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া হয়েছে সন্তানটি তার হবে। [১১৯৭]
লি'আনের কসম করার সময় পঞ্চমবারে আল্লাহ্র ভয় দেখান মুস্তাহাব
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ব্যক্তিকে (লি‘আনের কসম করার সময়) ৫ম বার তার হাত তার মুখে রাখবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন এটা (বিচ্ছেদকে ও মিথ্যাবাদীর শাস্তিকে) নিশ্চিতকারী।- এর রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। [১১৯৮]
লি‘আনের মাধ্যমে স্বামী- স্ত্রীর পৃথক হয়ে যাওয়া
সাহ্ল বিন সা’দ (রাঃ) তিনি দু‘জন লি’আন বা পরস্পর অভিশাপকারীর ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, যখন তারা স্বামী–স্ত্রী তাদের লি‘আন কার্য সমাধান করল তখন পুরুষটি বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি তার উপর মিত্থ্যা অপবাদ দিয়েছি বলে সাব্যস্ত হবে-যদি আমি তাকে রেখে দিই। তারপর সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ লাভের পূর্বেই তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। [১১৯৯]
ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করার বিধান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কোন লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকটে এসে বলল, আমার স্ত্রী কোন স্পর্শকারীর হাতকে প্রত্যাখ্যান করে না। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে দূর করে দাও। সে বলল, আমি ভয় করছি আমার অন্তর তার বাসনায় ঝুঁকে থাকবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তাকে উপভোগ করতে থাক। -রাবীগন নির্ভরযোগ্য। ইমাম নাসায়ী অন্য সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এরূপ শব্দে বর্ণনা করেছেন-‘নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি তাকে তালাক দাও, সে বলল, আমি তাকে ছেড়ে ধৈর্য ধারন করতে পারব না, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তাকে রেখে দাও।[১২০০]
নিজ সন্তানকে স্বীকৃতি দানের পর পুনরায় অস্বীকার করার ব্যপারে সতর্কীকরণ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি দু‘জন লি‘আনকারী সম্বন্ধে কুরআনের আয়াত নাযিল হবার সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছেন, যে নারী কোন সম্প্রদায়ের সাথে এমন বাচ্চাকে শামিল করে যে তাদের নয়, তার সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্ক নেই এবং তিনি কখনো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ নিজের সন্তানকে চিনতে পেরেও অস্বীকার করলো, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার থেকে আড়ালে থাকবেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে তাকে অপমান করবেন। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্ বলেছেন। [১২০১] উমার (রাঃ) তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সন্তানের প্রতি তার সন্তান হবার স্বীকৃতি এক মুহূর্তের জন্য দান করবে সে তার ঐ স্বীকৃতিকে আর অস্বীকার করতে পারবে না। -এ হাদিস হাসান ও মাওকূফ। [১২০২]
সন্তান অস্বীকার করার ইঙ্গিত প্রদান
আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার স্ত্রী একটি কাল রং-এর পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কিছু উট আছে কি? সে জবাব দিল হাঁ। তিনি বললেন, সেগুলোর রং কেমন? সে বললঃ লাল। তিনি বললেন, সেগুলোর মধ্যে কোনটি ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে সেটিতে এমন রঙ কোত্থেকে এল? লোকটি বলল, সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারনে এমন হয়েছে। তিনি বললেন, তাহলে হতে পারে তোমার এ সন্তান ও বংশগত কারনে এমন হয়েছে। [১২০৩] মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- সে তার সন্তানের রং কালো বলে অভিযোগ করার পর) সন্তানকে অস্বীকার করার ইঙ্গিত করেছিল। আর রাবী হাদিসের শেষাংশে বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্তানটিকে অস্বীকার করার অবকাশ তাকে দেননি।
ইদ্দত পালন [১২০৪], শোক প্রকাশ, জরায়ু শুদ্ধিকরণ ইত্যাদির বর্ণনা
গর্ভধারিণীর স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দাত পালন করা
মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) সুবায়‘আ আসলামীয়া তার স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর সন্তান প্রসব করে। এরপর সে নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করে, তিনি তাকে অনুমতি দেন। তখন সে বিয়ে করে। [১২০৫] এর মূল হাদিস বুখারী ও মুসলিম –এ রয়েছে ।[১২০৬] তাতে আছে- তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর ৪০ রাত পর সন্তান প্রসব করেছিলেন। আর মুসলিমের শব্দে এসেছে- যুহরী (তাবি‘ঈ) বলেছেন, রক্তস্রাব হওয়া অবস্থায় বিবাহ হওয়াতে আমি ত্রুটি মনে করিনা, কিন্তু না হওয়া পর্যন্ত স্বামী যেন তার নিকটবর্তী না হয়। [১২০৭]
আযাদকৃ্ত দাসীর ইদ্দাত পালন করা
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, বারীরাহ নাম্নী দাসীকে তিন হায়িয ইদ্দত পালনের জন্য হুকুম করা হয়েছিল। -বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য কিন্তু এর সানাদে কিছু সূক্ষ্ম ত্রুটি আছে। [১২০৮] বারীরা আযাদ হয়ার পর তার দাস স্বামী হতে বিবাহ বিচ্ছেদ করার অনুমতি লাভ করে এবং সে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলে তাকে স্বাধীনা মেয়েদের ন্যায় তিন ঋতু ইদ্দত পালনের জন্য আদেশ করা হয়।
তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীর ভরণপোষণের ব্যয় এবং বাসস্থানের বিধান
শা‘বী (রাঃ) তিনি ফাতিমাহ বিনতে কায়েস (রাঃ) থেকে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর জন্য কোন বাসস্থান ও খোর–পোষের ব্যবস্থা নেই। [১২০৯]
স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী শোক প্রকাশের সময় যা করা থেকে বিরত থাকব
উম্মু আতীয়্যাহ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মহিলা যেন কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ না করে। তবে স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক প্রকাশ করতে পারবে এবং রঙ্গিন কাপড় পড়বে না, তবে রঙ্গিন সুতোর কাপড় পরতে পারবে, সুর্মা ব্যবহার করবে না, সুগন্ধি দ্রব্য লাগাবে না। তবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য কিছু কুস্ত বা আযফার সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। এ শব্দ বিন্যাস মুসলিমের। আবূ দাউদ ও নাসায়ীতে অতিরিক্তভাবে আছে-‘খেযাব' (মেহেদী) ব্যবহার করবে না আর নাসায়ীতে আছে চিরুনি লাগাবে না। [১২১০] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমার স্বামী আবূ সালামাহর ইনতিকাল হবার পর আমি আমার চোখে ‘মুসব্বর’ লাগিয়ে ছিলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এতে তো চেহারাকে লাবণ্য দান করে, ফলে তুমি এটা রাত্র ব্যতীত লাগাবে না, আর দিনের বেলায় তাকে অপসারিত করবে, আর সুগন্ধি দ্বারা কেশ বিন্যাস করবে না এবং মেহেদী লাগাবে না। কেননা এটা হচ্ছে খিযাব। উম্মু সালামাহ বলেন, আমি বললাম, তবে আমি কোন্ বস্তু দিয়ে চিরুনী করব? তিনি বললেন, কুলের পাতা দিয়ে। - এর সানাদ হাসান। [১২১১] উম্মু সালামাহ (রাঃ) যে কোন এক মহিলা বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মেয়ের স্বামী মারা গেছে। তার চোখে অসুখ। আমি কি তার চোখে সুরমা লাগাতে পারব? তখন রসূলুল্লাহ (স) বললেন, না। [১২১২]
তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দাত পালনের সময় নিজ প্রয়োজনে বাহিরে হওয়া জায়েয
জাবির (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমার খালাকে তালাক্ব দেয়া হলে তিনি তাঁর খেজুর গাছের ফল নামাবেন বলে ইচ্ছা করেন। কোন লোক তাঁকে বের হবার জন্য ধমকালেন। ফলে তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমীপে আসলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন –হাঁ, তুমি তোমার খেজুর ফল নামাবে। কেননা, তুমি এতে থেকে অচিরেই সাদাকাহ করবে অথবা সৎ কাজও করবে। [১২১৩]
স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর ইদ্দাত শেষ হওয়া পর্যন্ত স্বামীগৃহে অবস্থান করা
ফুরাইয়াহ বিনতে মালিক (রাঃ) স্বামী স্বীয়– পলাতক ক্রীতদাসদের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। ফলে তারা তাকে হত্যা করে ফেলে, তিনি বলেছেন, আমি এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে আমার পিত্রালয়ে ফিরে যাই। কেননা আমার স্বামী আমার জন্য তাঁর মালিকানাধীন বাসগৃহ ও খাদ্যবস্তু রেখে যাননি। তিনি বলেছন- হাঁ রেখে যায়নি, অতঃপর আমি যখন কক্ষে রয়েছি, তিনি আমাকে ডেকে বললেন- তুমি তোমার ঘরেই থেকে যাও–যতক্ষন না তোমার ইদ্দতের ধার্য সময় পূর্ণ না হয়। তিনি (ফুরাইয়াহ) বললেন- আমি চার মাস দশ দিন তথায় অবস্থান করলাম। তিনি বলেছন- এরূপ ফয়সালা তৃতীয় খলিফা ‘উসমান (রাঃ) ও করেছিলেন।– তিরমিযী, যুহালী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও অন্যান্যগণ একে সহীহ বলেছন। [১২১৪]
তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীর প্রয়োজনে জায়গা স্থানান্তর করা জায়েজ
ফাতিমাহ বিনতে কায়স (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার স্বামী আমাকে যথারীতি তিন তালাক দিয়েছেন। আমার ভয় হচ্ছে হয়তো আমার উপর চওড়া হয়ে যেতে পারে। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশের ফলে তিনি ঐ স্থান পরিবর্তন করে ফেলেন। [১২১৫]
উম্মুল ওয়ালাদের (এমন দাসী যার গর্ভে মনিবের সন্তান হয়েছে) ইদ্দাত পালন করা
আমর ইবনু আস্ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা আমাদের সামনে আমাদের নাবী (স) মুহাম্মাদ রসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর সুন্নাতকে বিপর্যস্ত করো না। উম্মুল ওয়ালাদের [১২১৬] মুনিবের মৃত্যুতে ইদ্দত চার মাস দশ দিন। -দারাকুতনী হাদিসটিকে মুনকাতে’ সানাদ হবার দোষারোপ করেছেন। [১২১৭]
“আকরা” শব্দের ব্যাখ্যা
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আকরাআ শব্দের অর্থ হায়িয পরবর্তী পবিত্র কাল। –মালেক, আহদাম এবং নাসায়ী একটি সহীহ্ সানাদে কোন এক ঘটনা উপলক্ষে বর্ণনা করেছেন। [১২১৮]
দাসীর ইদ্দাত পালন করা।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ ক্রীতদাসীর জন্য তালাক্ব মাত্র দু’তালাক্ব আর তার ইদ্দত পালন করতে হবে দু’হায়িযকাল। –দারাকুতনী মারফূ ‘সানাদে, তবে তিনি একে যয়ীফ বলেছেন। [১২১৯] আয়িশা (রাঃ) হাকিম একে সহীহ বলেছেন- অন্যান্য মুহাদ্দিস এতে দ্বিমত করে এর যঈফ হওয়াতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। [১২২০]
অন্যের দ্বারা সঞ্চারিত ভ্রূণ গর্ভে থাকাবস্থায় গর্ভবতীর সঙ্গে সঙ্গম করা হারাম
রুঅয়ফি’ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন পরকালে বিশ্বাসী মুমিন মানুষের জন্য বৈধ হবে না যে সে নিজের পানি অপরের ক্ষেতের ফসলকে পান করাবে। –ইবনু হিব্বান হাদিসটিকে সহীহ্ এবং বায্যার হাসান বলেছেন। [১২২১]
স্বামী নিরুদ্দেশ হলে স্ত্রীর বিধান
উমার (রাঃ) তিনি নিরূদ্দিষ্ট (দীর্ঘদিন অনুপস্থিত) পুরুষের স্ত্রীকে চার বৎসর কাল অপেক্ষা করার জন্য বলেছেন। অতঃপর সে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। –মালেক ও শাফিয়ী। [১২২২] শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিরুদ্দিষ্ট বা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ব্যক্তির সংবাদ তার স্ত্রীর নিকটে না পৌঁছা পর্যন্ত ঐ স্ত্রী তারই থাকবে।– দারাকুতনী দুর্বল সানাদে। [১২২৩]
গায়রে মাহরাম নারীর সাথে একাকী থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিবাহ করেছে এমন পুরুষ অথবা মাহরাম (কখনই বিবাহ বৈধ নয় এমন ব্যক্তি) ব্যতীত কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার নিকটে রাত্রে না থাকে। [১২২৪] ই্ব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাহ্রামের বিনা উপস্থিতিতে কোন পুরুষ কোন নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না। [১২২৫]
যুদ্ধ বন্দীনীর জরায়ু মুক্ত করা আবশ্যক
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওতসের যুদ্ধের যুদ্ধ বন্দিনীরদের সম্বন্ধে বলেছিলেন। গর্ভধারিণীর প্রসব না করা পর্যন্ত এবং গর্ভধারিণী নয় এমন মহিলাদের সাথে এক হায়িয অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত যেন যৌন মিলন করা না হয়।– হাকিম সহীহ বলেছেন। [১২২৬] আব্বাস (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। [১২২৭]
স্ত্রী যার বিছানায় শয়ন করে ঐ স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান তারই হবে, ব্যভিচারীর নয়
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিছানা যার তার সন্তান আর ব্যভিচারির জন্য পাথর। [১২২৮] আয়িশা (রাঃ) একটি ঘটনা সম্বন্ধে বর্ণিত রয়েছে। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) নাসায়ীতেও বর্ণিত হয়েছে । উসমান (রাঃ) আবূ দাঊদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [১২২৯]
সন্তানকে দুধ খাওয়ান প্রসঙ্গ
এক চুমুক অথবা দুই চুমুক দুধ পান করা প্রসঙ্গে
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক ঢোক অথবা দু’ঢোক পান করাতে বৈবাহিক সম্পর্ককে হারাম করে না। [১২৩০]
ক্ষুধা নিবারণের দুধ পান বৈবাহিক সম্পর্ককে হারাম করে
আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নারীগণ, কে তোমার সত্যিকার দুধ ভাই তা যাচাই করে দেখে নিও। কেননা, ক্ষুধার কারণে দুধ পানের ফলেই শুধু দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। [১২৩১]
বড়দেরকে দুধ পান করানোর বিধান
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, সাহলাহ বিনতে সুহাইল এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! হুযাইফার আযাদকৃত দাস সালিম আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতেই রয়েছে এবং সে পুরুষের যোগ্য পুরুষত্ব লাভ করেছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে তোমার দুধ পান করিয়ে দাও তুমি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। [১২৩২]
দুধপানকারিনীর স্বামী এবং তার নিকট আত্মীয়ের বিধান
আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। অতঃপর যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন, তখন আমি যা করেছি তা তাঁকে জানালাম। তিনি তাকে আমার নিকটে প্রবেশের অনুমতি দেবার জন্য আমাকে আদেশ দিলেন। আর বললেন, তিনি তো তোমার দুধ চাচা হচ্ছেন। [১২৩৩]
যতটুকু দুধ পান করলে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হয়
আয়িশা (রাঃ) কুরআন নাযিলকৃত আয়াতে এ বিধান ছিল যে, দশবার দুধ পান করলে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। তারপর পাঁচবার দুধ পান করার বিধান দ্বারা দশবার পান করার বিধান বাতিল করা হয়। এরূপ অবস্থায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকাল ঘটে এবং ঐ বিধানটি কুরআন হিসেবে পড়া হতে থাকে। [১২৩৪]
বংশ সম্পর্কের কারণে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদেরকে বিবাহ করা হারাম
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হামযা (রাঃ) এর কন্যার স্বামী হবেন ভাবা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে তো আমার জন্য হালাল নয়! কারণ সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। দুধ সম্পর্ক ঐগুলো হারাম হবে যেগুলো বংশ সম্পর্কের জন্য হারাম হয়। [১২৩৫]
কী পরিমাণ এবং কত সময় দুধ পান করলে হারাম সাব্যস্ত হবে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুধ পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত তখন হবে, যখন দুধ পান দ্বারা সন্তানদের পেট পূর্ণ হবে, আর তা দুধ পানের উপযুক্ত সময়ে হবে। [১২৩৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ দু'বছর বয়সের মধ্যে দুধ পান করা ব্যতীত দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে না। [১২৩৭] ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দুধ পান দ্বারা হাড় বর্ধিত হয় এবং গোশত বৃদ্ধি পায় এমন দুধ পান করা ব্যতীত সম্পর্ক সাব্যস্ত হয় না। [১২৩৮]
স্তন্যদানকারীনীর সাক্ষ্যদানের বিধান
উক্ববাহ ইবনুল হারিস (রাঃ) তিনি আবূ ইহাবের কন্যা উম্মু ইয়াহইয়াকে বিয়ে করেছিলেন । তারপর কোন এক রমণী এসে বললোঃ আমি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রী) দুজনকে দুধ পান করিয়েছি। অতঃপর তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বললেনঃ এ কথার পর তুমি কিভাবে তার সঙ্গে সংসার করবে? অতঃপর উকবাহ তাঁর স্ত্রীকে আলাদা করে দিলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। [১২৩৯]
নির্বোধ মেয়েদের দুধ পান করানো নিষেধ
যিয়াদ ‘সাহমী(রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কম বুদ্ধির মেয়েদের দুধ পান করাতে নিষেধ করেছেন। [১২৪০]
ভরণপোষণের বিধান
স্বামীকে না জানিয়ে তার মাল স্ত্রীর খরচ করা জায়েয যখন যথেষ্ট পরিমাণে খরচ দিবে না
আয়িশা(রাঃ) তিনি বলেনঃ উতবার কন্যা আবু সুফইয়ানের স্ত্রী হিন্দ্ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বলেনঃ আবূ সুফ্ইয়ান একজন কৃপণ লোক। আমাকে এত পরিমাণ খরচ দেন না, যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হতে পারে যতক্ষণ না আমি তার অজান্তে মাল থেকে কিছু নিই। এমতাবস্থায় তাকে না জানিয়েই আমি তার মাল হতে যা নিয়ে থাকি তাতে কি আমার কোন গুনাহ্ হয়? তখন তিনি বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে যা যথেষ্ট হয় তা তুমি নিতে পার। [১২৪১]
খরচকারীর ফযীলতের বর্ণনা এবং খরচ করার সময় তার যে সমস্ত বিষয় লক্ষ্য করা উচিত
তারিক্ব মুহারিবী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা মাদীনায় আগমন করলাম, আর তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনি তাতে বলছিলেনঃ দাতার হাত উঁচু (মর্যাদাসম্পন্ন)। তোমার পোষ্যদের মধ্যে দানের কাজ আরম্ভ কর। (যেমন) তোমার মা, তোমার বাবা, তোমার বোন, ভাই; এভাবে যে যত তোমার নিকটাত্মীয় (তাকে পর্যায়ক্রমে দানের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দাও)। [১১৪২]
দাসের যাবতীয় ভরণপোষণের জন্য মনিবের ব্যয় করা আবশ্যক
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ দাস আহার ও পরিধেয় বস্ত্রের হকদার, আর তাকে তার সামর্থের বেশি কাজের বোঝা দেয়া যাবে না। [১২৪৩]
স্বামীর উপর স্ত্রীর খরচাদি বহন ওয়াজিব
হাকীম ইবনু মু'আবিয়া আল্ কুশাইরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো স্ত্রীর হক তার উপর কতটুকু? তিনি বললেনঃ তুমি যখন আহার করবে তখন তাকেও আহার করাবে; আর যখন তুমি বস্ত্র পরবে, তখন তাকেও বস্ত্র পরাবে। মুখমণ্ডলে প্রহার করবে না। আর অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবে না। হাদীসটি ইতিপূর্বে ১০১৮ নং বর্ণিত হয়েছে। [১২৪৪] জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাজ্জ সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে মেয়েদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তোমাদের উপর তাঁদের আহার ও পোশাক ন্যায্যভাবে বহন করা ন্যস্ত রয়েছে। [১২৪৫]
দায়িত্বশীলদের গুরু দায়িত্ব হচ্ছে অধীনস্তদের ব্য্যভার বহন করা
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ পাপী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার পোষ্যকে ভরণ-পোষণ না দিয়ে তাকে নষ্ট করে। [১২৪৬]
গর্ভবতী বিধবার ব্যয়ভার প্রসঙ্গ
জাবির (রাঃ) (মারফু সূত্রে) গর্ভবতী বিধবা মেয়েদের প্রসঙ্গে বলেনঃ তাদের জন্য কোন খোর-পোষ হবে না। (কেননা এরূপ ক্ষেত্রে স্বামীর মালের ওয়ারিস হওয়ার সুযোগ বিধবা মেয়েদের জন্য রয়েছে)। [১২৪৭] বর্ণনাকারী খরচ না পাওয়ার ব্যবস্থা ফাতিমাহ বিনতু ক্বাইস এর হাদীস মূলে আগে সাব্যস্ত হয়েছে।[১২৪৮]
সন্তান, দাস এবং স্ত্রীর উপর খরচ করার আবশ্যকীয়তা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উপরের হাত (দাতার হাত) নিচের (গ্রহীতার) হাত হতে উত্তম, তোমাদের প্রত্যেকেই তার দান কার্য তার পোষ্যদের মধ্যে আরম্ভ করবে। এমন যেন না হয় যে, বিবি বলতে বাধ্য হবে আমাকে খেতে তাও, না হয় তালাক দাও'। [১২৪৯]
ভরণ-পোষণে অক্ষম ব্যক্তির বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে
সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব যে তার বিবিকে খেতে-পরতে দেয়ার সঙ্গতি রাখে না, তিনি বলেনঃ তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যাবে। সাঈদ ইবনু মানসুর সুফইয়ান হতে, তিনি আবূ যিনাদ হতে, তিনি বলেনঃ সাঈদকে বললাম (এ ব্যবস্থা কি রাসূলের) সুন্নত মূলে। তিনি বলেলেনঃ সুন্নত মূলে। [১২৫০]
যে স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ভরণ-পোষন দেয় না
উমার (রাঃ) তিনি সৈন্যবাহিনীর পরিচালকবৃন্দের নিকট লিখেছিলেন, যেসব পুরুষ তাদের স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকছে, তাদের ব্যাপারে যেন এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যে, তারা তাদের স্ত্রীদের খোরপোষ আদায় করুক অথবা তালাক দিয়ে দিক যদি তালাকই দিয়ে দেয় তবে তাদের আবদ্ধ রাখাকালীন খরচ বিবিদের নিকটে তারা পাঠিয়ে দিক। [১২৫১]
ভরণপোষণের স্তর এবং কে প্রথম পাওয়ার উপযুক্ত?
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললোঃ আমার কাছে একটা দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) রয়েছে । তিনি বললেনঃ তুমি ওটা তোমার জন্য ব্যবহার কর, লোকটা বললোঃ আরো একটা আছে, তিনি বললেনঃ তুমি ওটা তোমার সন্তানের জন্য খরচ কর। লোকটি বললোঃ আমার কাছে আরো একটা আছে, তিনি বললেনঃ তুমি ওটা তোমার স্ত্রীর জন্য খরচ কর। লোকটি বললোঃ আমার নিকট আরো একটা আছে, তিনি বললেনঃ তুমি সেটা তোমাদের খাদিমের জন্য খরচ কর। লোকটি বললোঃ আমার নিকট আরো আছে, তিনি বললেন, সে প্রসঙ্গে তুমি বেশি জানো। [১২৫২]
মাতা-পিতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার গুরুত্বারোপ
দাদা (রাঃ) আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কল্যাণ সাধন করার ক্ষেত্রে কে উত্তম? তিনি বললেনঃ তোমার মা। তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। তারপর কে? বললেনঃ তোমার মা। তারপরে কে? বললেনঃ তোমার পিতা। তারপর যে তোমার যত নিকটাত্মীয় সে তত তোমার কল্যাণের বেশি হক্বদার । [১২৫৩]
লালন-পালনের দায়িত্ব বহন
মা’ই সন্তান পালনের ব্যাপারে অধিক হাক্বদার যতক্ষণ সে অন্যত্র বিবাহ না করে
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) কোন এক রমণী এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার এ পুত্রের জন্য আমার পেট তার আধার, আমার স্তনদ্বয় তার জন্য মশক, আমার কোলই তাঁর আশ্রয় স্থল ছিল। তার পিতা আমাকে ত্বালাক দিয়েছে এবং আমার নিকট থেকে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার ইচ্ছা করছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ মেয়েটিকে বললেনঃ তুমিই এ সন্তানের (পালনের) অধিক হাক্বদার যতক্ষণ তুমি অন্য স্বামী গ্রহণ না করবে। [১২৫৪]
মাতা-পিতার বিচ্ছেদে সন্তানের যে কোন একজনকে বেছে নেয়া
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কোন এক রমণী বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার পুত্রকে নিয়ে যেতে চান আর ঐ পুত্র আমার উপকার করছে এবং ইনাবার কুয়া থেকে আমাকে পানি এনে পান করাচ্ছে। তারপর তার স্বামী এসে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে বৎস! এটা তোমার পিতা আর এটা তোমার মাতা, তুমি তাদের যে কোন একজনের হাত ধরো বালকটি তার মা-এর হাত ধরলো ফলে তার মা তাকে নিয়ে চলে গেল। [১২৫৫]
স্বামী/স্ত্রীর কেউ কাফির হলে সন্তান লালন-পালনের অধিকারী হওয়ার হুকুম
রাফি’ ইবনু সিনান (রাঃ) তিনি ইসলাম ক্ববুল করলেন আর তার স্ত্রী ইসলাম ক্ববুল করতে অস্বীকার করে। এরূপ অবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কাফিরা) মাকে এক প্রান্তে বসালেন এবং পিতাকে বসালেন এবং বালকটিকে দু’জনের মাঝে বসালেন। বালকটি তার মার দিকে ঝুকেঁ পড়তে আরম্ভ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বলে দু’য়া করলেন, হে আল্লাহ! তাকে সঠিক পথের সন্ধান দাও। তারপর সে তার পিতার দিকে অগ্রসর হলো, ফলে তার পিতা তাকে ধরে নিলো। [১২৫৬]
সন্তান লালন-পালনের ব্যাপারে খালা মায়ের সমতুল্য
বারা ইবনু আযিব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হামযার কন্যা প্রসঙ্গে (দাবী উঠলে) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালার পক্ষে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, ‘খালা মায়ের স্থান অধিকারিণী’। [১২৫৭] আলি (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মেয়ে খালার নিকটে থাকবে, কেননা খালা মাতার সমতুল্য। [১২৫৮]
দাস, কর্মচারীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করার ফযীলত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো খাদিম যখন তার খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকে যদি সাথে না বসায় তাহলে সে যেন তাকে এক লুক্মা বা দু’লুকমা খাবার দেয় । [১২৫৯]
প্রাণীদের শাস্তি দেওয়া নিষেধ
ইবনু উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত। [১২৬০]