9. অপরাধ প্রসঙ্গ
মুসলমানের রক্তের মর্যাদা
ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সত্যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও এর প্রতি স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে এমন কোন মুসলিমের জীবননাশ বৈধ নয়, তবে যদি সে তিনটি অপরাধের কোন একটি করে বসে (১) বিবাহিত হওয়ার পর যিনা (ব্যভিচার) করে (২) অন্যায়ভাবে কারো জীবননাশ করে, (৩) ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতঃ মুসলমানের জামা’আত হতে যে দূরে চলে যায়। [১২৬১] আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সাক্ষ্য দেয় যে , আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রসূল, তবে তিন-তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (যথা) বিবাহিত ব্যভিচারী, জানের বদলে জান, আর নিজের দ্বীন ত্যাগকারী মুসলিম জামাআত তেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যাক্তি। [১২৬২]
রক্তের মর্যাদা
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিবসে মানুষের হক্ব প্রসঙ্গে সবার আগে খুনের বিচার করা হবে। [১২৬৩]
দাসের হত্যার বদলে মনিবকে হত্যা করার বিধান
সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দাসকে হত্যা করবে আমরা তাকে হত্যা করব, যে তার দাসের নাক কান কাটবে আমরা তার নাক কান কেটে নেব। [১২৬৪]
সন্তানকে হত্যার বদলে পিতাকে হত্যা করার বিধান
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, সন্তানের হত্যার বদলে পিতাকে হত্যা করা যাবে না। [১২৬৫]
কাফিরকে হত্যার বদলে মুসলিম হত্যা করা প্রসঙ্গ এবং সকল মুমিনের রক্ত সমমর্যাদা সম্পন্ন
আবু জুহাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি [আবু জুহাইফাহ (রাঃ)] বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, ‘কোন মুসলিমকে কাফির হত্যার বদলে হত্যা করা যাবে না’। [১২৬৬] আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ মু'মিন মুসলিমগণ তাদের রক্তের বদলার ব্যাপারে সমান। একজন অতি সাধারণ মুসলিমের (কোন কাফির শক্রকে) আশ্রয় দান সকল মুসলিমের নিকটে সমান গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিমের হাত অন্য সকল মুসলমানেরও হাত; (অর্থাৎ তারা একটি সংঘবদ্ধ শক্তি) কোন মুমিনকে কাফির হত্যার বদলে হত্যা করা যাবে না, আর কোন চুক্তিবদ্ধ (অমুসলিমকেও) চুক্তি বহাল থাকা পর্যন্ত হত্যা করা যাবে না। [১২৬৭]
ভারী জিনিস দ্বারা হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া এবং মহিলার খুনের দায়ে পুরুষকে হত্যা করা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কোন এক দাসীর মস্তক দুটি পাথরের মধ্যে থেতলানো পাওয়া যায়, তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এরূপ করেছে? অমুক ব্যক্তি, অমুক ব্যক্তি? যখন জনৈক ইয়াহূদীর নাম বলা হল- তখন সে দাসী মাথার দ্বারা হ্যা সূচক ইশারা করল। ইয়াহুদীকে ধরে আনা হল । সে অপরাধ স্বীকার করলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। তখন তার মাথা দুটি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দেয়া হল। [১২৬৮]
গরীব পরিবারের বালকের অপরাধের বিধান
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) গরীব লোকেদের কোন এক ছেলে ধনী লোকেদের কোন এক বালকের কান কেটে ফেলে। তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে বিচার প্রার্থী হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জন্য কোন দিয়াত দেয়ার ব্যবস্থা করেননি। (তাদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ সম্ভব ছিল না বলে)। [১২৬৯]
ক্ষত সেরে উঠার পূর্বে কিসাস বা প্রতিশোধ নেওয়া নিষেধ
শুআইব (রাঃ) তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ কোন এক লোক অন্য এক লোকের হাঁটুতে শিং দ্বারা আঘাত করে । সে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললোঃ আমার বদলা নিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষত সেরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। লোকটি কিন্তু (সেরে যাওয়ার আগেই) আবার এসে বললোঃ আমার জখমের মূল্য বা খেসারত আদায় করে দিন। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার খেসারত আদায় করে দেন। তারপর লোকটি এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো খোড়া হয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম তুমি তা মাননি। ফলে আল্লাহ তোমাকে (তাঁর রহমাত হতে) দূর করে দিয়েছেন এবং তোমার খোড়াত্ব বাতিল হয়ে গেছে। (দিয়াত আদায়ের যোগ্য রাখেননি)। এরপর থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জখম আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত জখমী লোকের পক্ষে কোন বদলা আদায়ের ফয়সালা দিতে নিষেধ করেছেন। [১২৭০]
“শিবহে আমাদ” (ইচ্ছাকৃত হত্যার অনুরূপ হত্যা) হত্যা প্রসঙ্গ এবং ভ্রুণ হত্যার পণ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হুযাইল গোত্রের দু'জন মহিলা উভয়ে মারামারি করেছিল। তাদের একজন অন্যজনের উপর পাথর নিক্ষেপ করে। পাথর গিয়ে তার পেটে লাগে। সে ছিল গর্ভবতী। ফলে তার পেটের বাচ্চাকে সে হত্যা করে। তারপর তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ দায়ের করে। তিনি ফয়সালা দেন যে, এর পেটের সন্তানের বদলে একটি পূর্ণ দাস অথবা দাসী দিতে হবে। আর নিহত মেয়েটির জন্য হত্যাকারিণীর আসাবাগণের (অভিভাবকদের) উপর দিয়াত (একশত উট) দেয়ার নির্দেশ দেন এবং এ দিয়াতের ওয়ারিসদের মধ্যে নিহত মহিলার সন্তান ও তাদের সঙ্গে অন্য যারা অংশীদার রয়েছে তাদের শামিল করেন। এরূপ ফায়সালার জন্য হামাল বিন নাবিগাহ আল-হুযালী বললঃ হে আল্লাহর রসূল! এমন সন্তানের জন্য আমার উপর জরিমানা কেন হবে, যে পান করেনি, খাদ্য খায়নি, কথা বলেনি এবং কান্নাকাটিও করেনি। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছন্দযুক্ত কথার জন্য তাকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ এ তো (দেখছি) গণকদের ভাই। [১২৭১] উমার (রাঃ) উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ভ্রুণ সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফয়সালায় কে উপস্থিত ছিল? বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর হামাল ইবনু নাবিগা দাড়িয়ে বলেনঃ আমি দুটি রমণির মধ্যে ছিলাম তাদের একজন অন্যজনকে মেরেছিল। ঘটনাটি সংক্ষেপে বর্ণনা করলেন। [১২৭২]
দাঁতের মতোই অন্যান্য অঙ্গের কিসাস সাব্যস্ত হবে
আনাস (রাঃ) আনাসের ফুফু রুবাঈ এক বাঁদির সম্মুখ দাত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকজন ক্ষমা চাইলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দিয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু কিসাস ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করতে তারা অস্বীকার করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রুবাঈদের সামনের দাঁত ভাঙ্গা হবে? না, যে সত্তা আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তার শপথ, তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনাস আল্লাহর কিতাব তো কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাদির লোকেরা রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন মানুষও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। [১২৭৩]
লোকেদের মধ্যে পড়ে যে নিহত হয় আর তার হত্যাকারী কে তা জানা যায় না
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অজ্ঞাত অবস্থার মধ্যে নিহত হয় অথবা পাথর ছোড়াছড়ি হচ্ছে এমন সময় পাথরের আঘাতে নিহত হয় অথবা কোড়া বা লাঠির আঘাতে নিহত হয়, তবে অনিচ্ছাকৃভাবে ভুলক্রমে হত্যা করার অনুরূপ দিয়াত বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ লাগবে। আর যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয় সে ক্ষেত্রে কিসাস (জানের বদলে জান) নেয়ার হাক্বদার হবে। আর যে কিসাস কায়িম করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে (সুপারিশ বা অন্য উপায় দ্বারা) তার উপরে আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে। [১২৭৪]
আটককারী এবং হত্যাকারীর শাস্তি
ইবনু উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন কোন লোক কোন লোককে ধরে রাখে ও অন্য লোক তাকে হত্যা করে তখন হত্যাকারীকে হত্যা করা হবে আর যে ধরে রাখে তাকে (যাবৎজীবন) কারাদন্ড দিতে হবে। [১২৭৫]
চুক্তিবদ্ধ কাফিরকে হত্যার অপরাধে মুসলমানকে হত্যা করার বিধান
আব্দুর রহমান ইবনু বাইলামানী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন মুসলিমকে হত্যা করেছিলেন- যিম্মী কাফিরকে হত্যা করার অপরাধে। এবং বলেছিলেন, আমি (অঙ্গিকার) পালনকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। দারাকুত্বনী ইবনু উমারের উল্লেখপূর্বক একে মাওসুল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মাওসূল সনদটি দুর্বল।” [১২৭৬]
একজনকে হত্যার বদলে সকলকে হত্যা করার প্রসঙ্গে
ইবনু উমার (রাঃ) একটি বালককে গোপনে হত্যা করা হয়। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি গোটা সান্’আবাসী এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম।” [১২৭৭]
নিহতের অভিভাবকদের কিসাস এবং দিয়াত-এ দুটোর কোন একটির সুযোগ দেওয়া
আবু শুরাইহ খুযাঈ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার এ ঘোষণার পর কোন খুনের বদলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ (দিয়াত) গ্রহণ করবে, নয় সে প্রাণদন্ডের (কিসাসের) দাবী করবে। [১২৭৮] হুরাইরা (রাঃ) বৃখারী ও মুসলিমে বিদ্যমান আছে। [১২৭৯]
(দিয়াতের) আর্থিক দন্ডের বিধান
দিয়াতের পরিমাণসমূহ
দাদা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামান প্রদেশের অধিবাসীবৃন্দকে লিখেছিলেন ঐ হাদীসে (ঐ পত্রে) এটাও লিখেছিলেন- এটা নিশ্চিত যে, কেউ যদি কোন মুমিন মুসলিমকে বিনা অপরাধে হত্যা করে এবং ঐ হত্যা প্রমাণিত হয় তবে তাতে প্রাণদন্ড হবে; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যদি অন্য কোনভাবে (ক্ষমা করতে বা ক্ষতিপূরণ নিতে) রাজি হয় তবে তার প্রাণদন্ড হবে না। প্রাণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে একশত উট দেয়া হবে। নাক যদি সম্পূর্ণরূপে কেটে ফেলা হয় তবে তাতে একশত উট দেয়া হবে; জিহ্বা কেটে ফেলা হলে পূর্ণ দিয়াত (১০০ উট) দেয়া হবে; উভয় ঠোঁট কেটে ফেলা হলে পূর্ণ দিয়াত দিতে হবে; পুরুষাঙ্গ কাটা হলে পূর্ণ খেসারত (১০০ উট) দেয়া হবে; উভয় অন্ডকোষ নষ্ট করা হলে পূর্ণ দিয়াত লাগবে; এবং মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেললে পূর্ণ দিয়াত লাগবে। (একটা অন্ডকোষের জন্য ৫০ টি উট দেয়া।) উভয় চক্ষু নষ্ট করা হলে একশত উট দেয়া হবে। তারপর এক পায়ের জন্য অর্ধেক এবং অর্ধেক মাথার আঘাত প্রাপ্ত হলে এক তৃতীয়াংশ দিয়াত দিতে হবে; পেটে কিছু বিদ্ধ করা হলে (যদি পেটের ভিতরে গিয়ে পৌছে) তবে এক তৃতীয়াংশ দিয়েত দিতে হবে, হাত পায়ের আঙ্গুলগুলোর যে কোন ১ টির জন্য ১০টি উট, একটি দাতের জন্য ৫টি উট, যে আঘাতের ফলে মাথা ও মুখ ছাড়া হাড় ঠেলে উঠে বা অন্য কোন কারণে দৃশ্যমান হয়ে উঠে তাতে ৫টি উট দেয়া হবে। তারপর এটাও নিশ্চিত যে, (কোন পুরুষ কোন রমণীকে হত্যা করে তবে) নিহত স্ত্রীলোকের কারণে হত্যাকারী অপরাধী পুরুষকে হত্যা করা হবে। হত্যাকারীর যদি স্বর্ণমুদ্রা থাকে তবে সে একহাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) নিহতের ওয়ারিসকে প্রদান করবে। হাদীসটি আবু দাউদ তার মুরসাল সনদের হাদীসগুলোর মধ্যে রিওয়ায়াত করেছেন। নাসাঈ, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনুল হিব্বান, আহমদ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সহীহ হওয়া প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসগণের মতভেদ রয়েছে। (মুরসাল সনদ প্রসঙ্গে এরূপ অভিমত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাদীসটি ফুকাহাগণের নিকটে স্বীকৃতি লাভ করেছে ও এ হাদীসের উপর আমল হয়ে আসছে।) [১২৮০]
অনিচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষতিপূরণে উটের বয়স
ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অনিচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষতিপূরণ (দিয়াত) পাঁচ প্রকার উটে সমান ভাগে বিভক্ত করে আদায় করতে হবে। (যথা) চতুর্থ বছর বয়সে পদার্পণকারিণী উটনি ২০টি, ৫ম বছর বয়সে পদার্পণকারিণী উটনি ২০ টি ২য় বছরে পদার্পণকারিণী উট ২০ টি। সুনানে আরবাআর (৪ জনের) সংকলনের শব্দে বানী লাবুন (৩য় বছরে উপনীত নর উট) এর বদলে বানী মাখায (২য় বছরে উপনীত নর উটের) কথা রয়েছে তবে আগে বর্ণিত দারাকুনতীর সনদটি অধিক মজবুত। অন্যসূত্রে ইবনু আবী শাইবাহ মাওকুফ সনদে বর্ণনা করেছেন, এ সনদটি মারফু সনদের থেকে অধিক সহীহ। [১২৮১]
ইচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষতিপূরণে উটের বয়স
আমর ইবনে শুয়া‘আইব- হাদীসটি আবু দাউদ ও তিরমিযি মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন, তাতে আছে দিয়াত ৪র্থ বছর বয়সে উপনীত উটনী ৩০টি, ৫ম বছরে পদার্পণকারিণী ৩০টি, এবং ৪০টি গর্ভধারিনী উটনী যাদের পেটে বাচ্চা রয়েছে (দিতে হবে)। (২০টি করে ৫ ভাগ আর ৩০ ও ৪০টির তিন ভাগ-গড়ে একই মূল্য দাঁড়াবে।) [১২৮২]
যে সকল অবস্থায় হত্যা করা জঘণ্যতম মহা অপরাধ
ইবনু ‘আমর [১২৮৩] (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর দরবারে তিন প্রকারের লোক সর্বাপেক্ষা অবাধ্য। (ক) যে হত্যাকান্ড ঘটায় হারাম শরীফের (বাইতুল্লাহর) মধ্যে, (খ) এমন লোককে হত্যা করে যে তার হত্যাকারী নয়, (অর্থ্যাৎ যে তাকে হত্যা করার জন্য উদ্যৎ ছিল না।) (গ) যে জাহিলী যুগের সঞ্চিত আক্রোশ ও বিদ্বেষ বশতঃ মানুষকে হত্যা করে। বর্ণনাকারী এ হাদীসের মূল বুখারীতে রয়েছে যা ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত। [১২৮৪]
“শিবহে আমাদ” (ইচ্ছাকৃত হত্যার মত হত্যা) এর দিয়াত কঠিনকরণ করা
আব্দুল্লাহ ‘ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মনে রাখবে, ভূলবশত নরহত্তা আর ইচ্ছাকৃত হত্যার মত হত্যা যেমন ছড়ি বা লাঠির আঘাতে হঠাৎ হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়-এরুপ নরহত্যার অপরাধের জন্য এমন উটের দিয়াত (খুনের বদলা) হবে, একেশত উত-যার মধ্যে চল্লিশটি গর্ভবতী উটনী থাকবে। ইবনু হিব্বান ে হাদীসকে সহীহ বলেছেন। [১২৮৫]
দাঁত এবং আঙ্গুল সমূহের দিয়াত প্রসঙ্গে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা ও এটা অর্থাৎ কনিষ্ঠাংগুলি ও বৃদ্ধাংগুলিদ্বয় সমমূল্যের আংগুল। [১২৮৬] আবূ দাউদ ও তিরমিযীতে আছে, আংগুলসমূহের দিয়াত (নষ্টের ক্ষতিপূরণ) সমান সমান। সব দাঁতের দিয়াত একই সমান, সামনের ও চোয়ালের দাঁত সমান মুল্যের। [১২৮৭] ইবনু হিব্বানে আছে, দু হাত ও দু পায়ের আঙ্গুলসমূহের দিয়াত সমান। প্রত্যেক আঙ্গুলের জন্য দশ্তি করে উট দিয়াত স্বরূপ দিতে হবে। [১২৮৮]
চিকিৎসায় পারদর্শী না হয়ে যদি কোন ব্যক্তি কারও চিকিৎসা করার পর ক্ষতি করে তাহলে এর জন্য তাকে দায়ী হতে হবে
আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) স্বীয় সনদে মারফূ রূপে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি চিকিৎসায় খ্যতিসম্পন্ন না হয়ে চিকিৎসা করতে গিয়ে কোন প্রাণহানি করবে বা তার থেকে কম ক্ষতি করবে তাকে ঐ ক্ষতির জন্য দায়ী হতে হবে। (ক্ষতিপূরণ করতে হবে)। হাদীসটি আবূ দাউদ, নাসায়ী ইত্যাদিতেও আছে, কিন্তু মাওসূল বা যুক্ত সনদ হতে ঐগুলোর মুরসাল সনদই অধিক শক্তিশালী। [১২৮৯]
যে সমস্ত আঘাতের ফলে হাড় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে – এর ক্ষতিপূরণ
আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে সকল আঘাতের ফলে হাড় দৃশ্যমান হয়ে উঠে তার দিয়াত (খেসারত) পাঁচটি উট দিতে হবে। সবগুলো আঙ্গুলের দিয়াত দশটি করে উট। [১২৯০]
যিম্মী কাফির এবং মহিলার দিয়াত প্রসঙ্গে
আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যিম্মী কাফিরের দিয়াত মুসলমানের দিয়াতের অর্ধেক। [১২৯১] আবূ দাউদের শব্দগুলোতে আছে, আশ্রয়ের অঙ্গীকারপ্রাপ্ত অমুসলিমদের হত্যার দিয়াত একজন স্বাধীন মুসলিমের দিয়াতের অর্ধেক। [১২৯২] নাসায়ীতে আছে, স্ত্রীলোকের অঙ্গহানির জন্য দিয়াত, পূর্ণ দিয়াতের (১০০ উটের) এক তৃতীয়াংশের সমপরিমাণ হওয়া অবধি পুরুষের দিয়াতের সমপরিমাণ দিয়াত দিতে হবে। [১২৯৩]
শিবহে আমাদ (ইচ্ছাকৃত হত্যার মত হত্যা) এর বিধান
আমর ইবনু শু’আইব (রাঃ) যে হত্যা ইচ্ছাকৃত হত্যার অনুরূপ, তাতে হত্যাকারীকে হত্যা করা হবে না, তবে দিয়াতের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত হত্যার মতই তা কঠিন হবে। দিয়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ এজন্য যে, কোন প্রকার আক্রোশ ও অস্ত্র ধারন ছাড়াই কেবল শাইতানের প্ররোচনমূলে যাতে মানুষের মধ্যে রক্তপাত না ঘটে। [১২৯৪]
ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে রৌপ্যমুদ্রার পরিমাণ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে একটি লোক অন্য একজনকে হত্যা করে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ খুনের দিয়াত ১২ হাজার রৌপ্যমুদ্রা ধার্য করেন। [১২৯৫]
কোন ব্যক্তির অপরাধের কারণে ওপর কাউকে দায়ী করা যাবে না
আবূ রিমসাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকত হাজির হলাম, আর আমার সঙ্গে ছিল আমার পুত্র। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন “এ কে?” আমি বললাম, “আমার পুত্র” আপনি এ ব্যাপারে সাক্ষী থাকুন।“ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাবধান হও, অবশ্য তার অপরাধের জন্য তোমাকে ও তোমার অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করা হবে না। [১২৯৬]
রক্তপণের দাবী এবং প্রমাণ না থাকলে কসম
ক্বসামার বিধান
সাহ্ল ইব্নু হাসমা (রাঃ) তিইনি ও তাঁর কওমের কতক বড় বড় ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে, ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্নু সাহ্ল ও মুহাইয়াসা ক্ষুধার্ত হয়ে খায়বারে আসেন। একদা মুহাইয়াসা জানতে পারেন যে, ‘আব্দুল্লাহ্ নিহত হয়েছে এবং তাঁর লাশ একটা গরতে অথবা কূপে ফেলে দেয়া হয়েছে। তখন তিনি ইয়াহূদীদের কাছে এসে বললেন, আল্লাহ্র শপথ! নিঃসন্দেহে তোমরাই তাকে মেরে ফেলেছ। তারা বলল, আল্লাহ্র কসম করে বলছি, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তারপর তিনি তার কওমের কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। পরে তিনি, তার বড় ভাই হওয়াইয়াসা এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহ্ল আসলেন। মুহাইয়াসা, যিনি খায়বারে ছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকত এ ঘটনা বলার জন্য এগিয়ে গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বড়কে কথা বলতে দাও, বড়কে কথা বলতে দাও। এ দ্বারা তিনি উদ্দেশ্য করলেন বয়সে বড়কে। তখন হুওয়াইয়াসা প্রথমে ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপর কথা বললেন, মুহাইয়াসা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হয় তারা তোমাদের মৃত সাথীর রক্তপণ আদায় করবে, না হয় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাছে এ ব্যাপারে পত্র লিখলেন। জবাবে লেখা হল যে, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুওয়াইয়াসা, মুহাইয়াসা ও ‘আবদুর রহমানকে বললেন, তোমরা কি কসম করে বলতে পারবে? তাহলে তোমরা তোমাদের সঙ্গীর রক্তপণের অধিকারী হবে। তারা বলল, না। তিনি বললেন, তাহলে ইয়াহূদীরা কি তোমাদের সামনে কসম করবে? তাঁরা বলল, এরা তো মুসলমান না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ হতে একশ’ উট রক্তপণ বাবদ আদায় করে দিলেন। অবশেষে উটগুলোকে ঘরে ঢুকানো হল। সাহ্ল বলেন, ওগুলো থেকে একটা উট আমাকে লাথি মেরেছিল। [১২৯৭]
কাসামাতের বিধান জাহিলিয়্যাতের যুগেও ছিল
আনসারী (সাহাবী) (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাসামা নামক প্রাক-ইসলামিক বিচারপদ্ধতিকে সাব্যস্ত করেছিলেন এবং আনসারী সাহাবীর একটা খুনের দায়ে অভিযুক্ত ইয়াহুদী আসামীদের মধ্যে সে মেত বিচার করেছিলেন। [১২৯৮]
ন্যায়ের সীমালঙ্ঘনকারী বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ
মুসলমানদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করার ব্যাপারে সতর্কীকরণ
ইবনু উমার তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের উপরে (কোন মুসলিমের উপরে) অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমদের দলভুক্ত নয়। [১২৯৯]
ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য ত্যাগ করা এবং দল থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি (ইসলামী রাস্ত্র নায়কের) আনুগত্য ত্যাগ করবে, মুমিন্দের দল থেকে সরে গিয়ে মারা যাবে, সে জাহিলী অবস্থায় মরবে। (অর্থাৎ ইসলাম বর্জিত অবস্থায় তার মৃত্যু হবে)। ]১৩০০]
একটি বিদ্রোহী দল কর্তৃক সাহাবী আম্মার (রাঃ) কে হত্যা করা প্রসঙ্গে
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাহাবী আম্মার (রাঃ)-কে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। [১৩০১]
বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করার সময় যা করা নিষেধ
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে বলেছিলেন – হে উম্মু আব্দের পুত্র! তুমি কি জান এ উম্মতের বিদ্রোহীদের জন্য মহান আল্লাহ্ কি ফয়সালা দিয়েছেন? তিনি ইবনু মাসউদ বলেনঃ আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিদ্রোহী জখমীদের ব্যান্ডেজ (সেবা) করা যাবে না, কয়েদীদের হত্যা করা যাবে না, পলায়নকারীদের অনুসন্ধান করা যাবে না, তাদের গানিমাতের মাল বন্টিত হবে না। [১০৩২] আলী (রাঃ) এটি সহীহ সনদে মাওকূফ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ, হাকিম।
সংঘবদ্ধ থাকাবস্থায় এই উম্মতকে বিচ্ছিন্নকারীর হুকুম
আরফাজাহ ইবনু শুরাইহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছিলেনঃ তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইচ্ছা (চেষ্টা) করে তবে তোমরা তাকে হত্যা কর। [১৩০৩]
অন্যায়কারীর সাথে লড়াই করা ও মুর্তাদকে হত্যা করা
সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হওয়া ব্যক্তি প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হবে সে শহীদ ব্যক্তির সমতূল্য মর্যাদা পাবে। [১৩০৪]
কোন ব্যক্তিকে কামড় দেওয়ার পর দাঁত ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে
ইমরান ইব্নু হুসায়ন (রাঃ) ইউ’লা বিন উমাইয়াহ এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করলো। একে অন্যের হাত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। সে তার হাত ঐ লোকের মুখ থেকে টেনে বের করল। ফলে তার দু’টো দাঁত উপড়ে গেল। তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তাদের মুকাদ্দমা হাজির করল। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে কি কামড়াবে উট যেমন কামড়ায়? তোমার জন্য কোন রক্তপণ নেই। [১৩০৫]
যে ব্যক্তি কারো ঘরে উঁকি দেয় অতপর বাড়ির লোক কর্তৃক তার চোখ উপড়ানোর বিধান
আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন লোক কোন অনুমতি ছাড়াই তোমার দিকে উঁকি মারে আর তুমি তাকে কাঁকর ছুঁড়ে মার ও তার চক্ষু নষ্ট করে ফেল তবে তোমার কোন দোষ হবে না। আহমাদ ও নাসায়ীর শব্দে রয়েছে, এর জন্য কোন দিয়াত বা কিসাস নেই। ইবনু হিব্বান এ বর্ধিত অংশকে সহীহ বলেছেন। [১৩০৬]
রাত্রিবেলায় গৃহপালিত পশুর দ্বারা ক্ষতি হওয়ার বিধান
বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নিম্নরূপ) ফায়সালা প্রদান করেছিলেনঃ বাগ-বাগিচার দেখাশোনার দায়িত্ব দিনের বেলা তার মালিকের উপর (দিনের বেলা লোকসানের জন্য মালিক দায়ী থাকবে)। গৃহপালিত জন্তুর রাতের বেলায় দেখাশোনার দায়িত্ব তার মালিকের উপর ন্যস্ত। রাত্রিবেলায় গৃহপালিত পশুর ক্ষতির জন্য পশুর মালিক দায়ী থাকবে। [১৩০৭]
ধর্মত্যাগীদের হত্যা করা ও তাদের তাওবা করতে বলা প্রসঙ্গে
মুয়ায ইবনু জাবাল (রা:) তিনি একজন নব মুসলিমের পুণঃ ইয়াহুদী হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে বলেছিলেনঃ আল্লাহর ও তার রাসূলের ফায়সালা অনুযায়ী তাকে হত্যা না করিয়ে আমি বসছি না। ফলে তাকে হত্যা করার আদেশ দেয়া হল ও তাকে হত্যা করা হল। [১৩০৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর। [১৩১০]
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিন্দাকারীদেরকে হত্য করা আবশ্যক
ইবনু আব্বাস (রাঃ) কোন এক অন্ধ সাহাবীর একটা সন্তানের মাতা দাসী ছিল, সে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গালি দিত এবং তাঁর প্রসঙ্গে অশোভনীয় মন্তব্য করত। সাহাবী তাকে নিষেধ করতেন কিন্তু সে বিরত হত না। এক রাত্রে অন্ধ সাহাবী (তার এরূপ দূর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে) কুড়ালি জাতীয় এক অস্ত্র দিয়ে ঐ দাসীর পেটে বসিয়ে দেন ও তার উপর বসে যান ও তাকে হত্যা করে ফেললেন। এ সংবাদ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে পৌঁছালে তিনি বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক, এ খুন বাতিল এ জন্য কোন খেসারত দিতে হবে না। [১৩১১]